মায়াবন্দী
লেখিকা- তাসনিম তামান্না
পর্ব- ১১
☆☆☆
রুমা হসপিটালের বেডে শুয়ে চোখের পানি ফেলছে। আর বাসার সবাই রুমার কথা শুনে অবাক হয়ে রুমার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না রুমা এমন কাজ করতে পারে। রুমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
-বিশ্বাস করো আমি কখনো ভাবতেই পারি নি ও আমাকে ঠকাতে পারে আমি ওকে বিশ্বাস করে ওর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গেছিলাম আমি…(রুমা)
আর কিছু বলার আগে রুমার মা সিয়ার ফুপি এসে ঠাস করে রুমার গালে চড় মারে বলল
-তোকে জন্ম দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে আমি ভাবতে পারি নাই তুই এমন করবি আগে জানলে বিষ দিয়ে মেরে ফেলতাম নষ্টা মেয়ে তুই এখনো বেঁচে আছিস কেনো মরতে পারিস না (ফুপি)
রুমা চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। কেউ কিছু বলছে না কিই বা বলবে একজন অবিবাহিত মেয়ে বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট বাইরের কেউ জানলে ছিঃ ছিঃ পড়ে জাবে এতো দিনে মান সম্মান একদিনেই শেষ হয়ে যাবে।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে সিয়ার ফুপা বুক চেপে ধরলো ওনার হার্টের সমস্যা সুমা বাবা বলে সিয়ার ফুপাকে ধরলো। সবাই সিয়ার ফুপাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। রুমা বেড থেকে উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যাথ হলো রুমার শরীর দূর্বল হওয়ায় তাই বেডে শুয়ে আব্বু আব্বু করছে আর কান্না করছে। সাদমান গিয়ে ডক্টরকে ডেকে আনলো। ডক্টর দেখে বলল
-এনারকে একটু সাবধানে রাখবেন আর টেনশন ফ্রী রাখার চেষ্টা করবেন ওনি প্রচুর টেনশন করে বলে এমনটা হয়েছে আর ওনার রেস্টের প্রয়োজন বাসায় নিয়ে জান আর কিছু মেডিসিন দিচ্ছি এগুলো ঠিক মতো দিবেন
-ওকে ডক্টর আমাকে দিন (সাদমান)
ডক্টর মেডিসিনের প্রেসক্রিপশন দিয়ে চলে গেলো।
-ওকে এখানে রাখা ঠিক হবে না ওকে নিয়ে বাসায় চলো সবাই (বড়ব্বু)
-হ্যাঁ কিন্তু রুমার এখানে তো একজন থাকতে হবে (বড়ম্মু)
-আমি থাকছি বড়ম্মু তোমরা যাও (সিয়া)
-না কারোর ওর সাথে থাকার দরকার নাই ও মরুক একা মান সম্মান তো কিছুই রাখলো না (ফুপি)
-ফুপি কি বলছো এসব ওর মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করো তোমরা যাও আমি আছি (সিয়া)
-কিন্তু তোরা দুটা মেয়ে কি ভাবে….. (মেজম্মু)
-আম্মু আমি আছি ওদের সাথে টেনশন করো না (সাদমান)
-আচ্ছা তাহলে সাবধানে থাকিস তোরা কোনো সমস্যা হলে ফোন দিস (মেজম্মু)
-আচ্ছা (সাদমান)
ওরা সবাই বাসার দিকে রওনা দিলো। সাদমান ওদের নিচ পর্যন্ত দিয়ে কেবিনে এসে ছোফায় বসলো চোখ বন্ধ করে। রুমার কেবিনে এখন মাত্র ওরা তিনজন। রুমা এখনো কাঁদছে চোখের পানি বাঁধ মানছে না।
মানুষকে এতটা বিশ্বাস করা উচিত নয় যতটা সে যোগ্য নয়। তোমার সামনে যে মানুষটা আছে সে মুখশে আবৃত হতেও পারে। মুখশ পরা মানুষ গুলো বেশি নেকা টাইপ হয় তারা সহজে রাগে না ঠান্ডা মাথায় কাজ করে যেই কার্যসিধি হয়ে যায় ওমনি নিজের আসল রূপে ফিরে আসে। যে তোমার রূপের মোহে পরবে আকৃষ্ট হবে তোমার শরীরের সে কখনোই তোমাকে নয় বরং তোমার সৌন্দর্যকে ভালোবাসবে তোমাকে কাছে পেতে চাইবে অপবিত্র ভাবে ছুবে আর যে সত্যি কারের ভালোবাসবে সে কখনোই তোমাকে অপবিত্র ভাবে ছোঁয়ার বাহানা খুঁজবে না তোমাকে পবিত্র ভাবে পেতে চাইবে, আজীবন আগলে রাখবে। ❤️
সিয়া রুমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। রুমা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকালো সিয়ার দিকে। সিয়া সেটা দেখে বলল
-ঘুমিয়ে পড় এতো কাঁদিস না অসুস্থ হয়ে যাবি তো আরও দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে কিছু খাবি (সিয়া)
-আপু তু তুমি আমাকে বিশ্বাস করো ও আমাকে বলেছিলো কখনো ছেড়ে যাবে না আমাকে বিয়ে করবে আমি ওকে বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু কিন্তু ও আমাকে ঠকালো ও ঠকিয়েছ আমাকে ও আমার সাথে কেন এমনটা করলো আমি তো ওকে ভালোবেসে বিশ্বাস করেছিলাম কেনো করলো এমন কেনো কেনো (রুমা)
-আরে কাঁদছিস কেনো সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস (সিয়া)
-না না আপু কিছু ঠিক হবে না ও বলছে ও এ বাচ্চা মানে না আমি নাকি অন্য ছেলের সাথে…. (রুমা)
রুমা হু হু করে কেঁদে উঠলো।
-আচ্ছা কান্না থামা আর ঔ ছেলের নাম্বার আর বাসার ঠিকানা দে কথা বলে দেখি (সিয়া)
-না আপু ওরা রাজনীতি করে ওর মার সাথে আমি কথা বলছি ওনি অবিশ্বাস অপমান করে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে আমাকে ওর সাথে কথা বলতে যেও না কোনো লাভ হবে না উল্টো তোমাকে অপমান করবে বাজে কথা বলবে (রুমা)
সাদমান ওদের কথা শুনছিলো রুমার কথায় রেগে বলল
-এসব করার আগে মনে ছিল না যে বাপ মা তোকে এতো কষ্ট করে মানুষ করলো তার প্রতিদান এই দিলি একটুও বিবেকে বাঁধলো না তোর (সাদমান)
-ভাইয়া বিশ্বাস করো আমি….(রুমা)
-তোর কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না (সাদমান)
সিয়া ভয়ে ভয়ে বলল
-ভাইয়া আপনি ওর জন্য সুপ নিয়ে আসেন নিজেও খেয়ে আসেন অনেক রাত হয়েছে (সিয়া)
সাদমান সিয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো।
-চিন্তা করিস না দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে বাসার সবাইর রাগ অভিমান হয়েছে ঠিক হয়ে যাবে কোনো বাবা মা তার মেয়ের এমন অবস্থা সহ্য করতে পারে না ফুপা, ফুপি পারি নাই সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবি (সিয়া)
কিছুক্ষন পর সাদমান সুপ আর খাবার নিয়ে আসলো। সেগুলো রেখে আবার বাইরে চলে গেলো। সিয়া রুমাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিলো। তার মধ্যে সাদমান এসে সোফায় বসে বাসার সবাই ঠিক মতো পৌঁছেছে কি না ফোন করে শুনে নিলো।
-ভাইয়া আপনি খাইছেন (সিয়া)
সাদমান একপলক সিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে মনযোগ দিয়ে বলল
-সেটা জেনে তোর কি কাজ (সাদমান)
-না মানে এমনি শুনছিলাম (সিয়া)
সিয়া আর কিছু না বলে রুমার বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসলো। রুমার ইতি মধ্যে ঘুম চলে আসছে। সাদমান দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-তোর জন্য খাবার গুলা আনছি রেখে দেওয়ার জন্য আনি নাই (সাদমান)
-আসলে হসপিটালে খেতে পারি না বমি আসে আর আপনাকে তো আমার জন্য খাবার আনতে বলি নাই আনলেন কেনো ফালতু (সিয়া)
-ফাইজলামি করিস (সাদমান)
-সত্যি বলছি রিয়ার ওখানে যখন ছিলাম ৪বার বমি করছিলাম বিশ্বাস না হলে আম্মুর কাছে শুনে দেখেন (সিয়া)
-সারাদিন খাস নাই অসুস্থ হয়ে যাবি তো (সাদমান)
-কিছু হবে না আমার অভ্যস আছে (সিয়া)
সাদমান ফোঁস করে একটা শ্বাস নিলো।
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন রি চেক করি নাই ]