#মায়াবন্দী
লেখিকা- তাসনিম তামান্না
পর্ব-৯
☆☆☆
কিছুক্ষণ আগে রাতের খাবার খেয়ে ওরা সবাই বাসে উঠছে সিলেটের উদ্দেশ্যে সিয়া আর সাদমান পাশাপাশি বসেছে। সিয়া প্রথমে অবাক হয়ে গেছিলো সাদমান ওর পাশে বসেছে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো সাদমানের দিকে তখন সাদমান বলেছিলো
-এভাবে চোখ দিয়ে আমাকে না গিলে অন্য দিকে তাকা নাহলে আমার নজর লেগে যাবে (সাদমান)
তখন থেকে আর ভুলেও সাদমানের দিকে তাকাইনি বাইরের প্রকৃতিতে ডুবে গেছে আকাশে অর্ধচন্দ্র তার চারিদিকে মুক্তর মতো তারারা মিটমিট করে জলছে করছে। মনে হচ্ছে গাছ গুলো গাড়ির পিছনে দৌড়ে আসছে কিন্তু আসলে তারা স্থির তারা চাইলেও একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবে না। সিয়া সিটে হেলান দিয়ে মনযোগ দিয়ে বাইরের প্রকৃতি বিলাস করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়েছে। সাদমান সিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো সিয়ার মুগ্ধ চোখ মুখ দেখছিলো ওর মায়াপরিকে স্নীগ্ধ লাগছিলো। সিয়া ঘুমিয়ে গেলে সাদমান সিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে নিয়ে আসলো সিয়া ঘুমের মধ্যে মৃদু কেঁপে উঠল সাদমান সেটা বুঝতে পেরে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো। গাড়ির ভিতরে লাইট ওফ করা অন্ধকারে বেশি কিছু বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু চলন্ত বাস হওয়ায় গাড়ির জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে কৃত্রিম আলো আসছে আবার চলে যাচ্ছে। সাদমানরা বাড়ির গাড়ি আনতে চাইছিলো কিন্তু সাদমানের বাবা বারণ করে দিয়েছে সিলেটের আঁকাবাকা রাস্তার কারণে দূর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না তাই আর কেউ সাহস পাই নি।
.
.
সিয়ার ঘুম ভাঙ্গলো সাইমার ডাকে পিটপিট করে চোখ খুলে সাইমার দিয়ে তাকিয়ে দেখলো সাইমা মিটমিট করে মুখে হাত দিয়ে হাসছে। সিয়া এখনো ঘুমের ঘোরে থাকায় কিছু বুঝতে পারছে না সাইমা হাসছে কেনো? সিয়া নিজেকে কারোর বুকে অদ্ভুত ভাবে আবিষ্কার করে সাদমানের দিকে তাকিয়ে একঝটকাই ছাড়িয়ে নিয়ে সরে বসলো। সাদমান নড়েচড়ে চোখ ডলতে ডলতে ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। সিয়া ভয়ে ঢোক গিলছে বার বার সাদমান যদি যানতে পরে ওকে ঠাস ঠাস করে চড় মারে ভাবতেই সিয়া গালে হাত দিয়ে চোখ বড় করে বলল
-আমি কিছু করি নি সত্যি আমি বুঝতে পারি নি (সিয়া)
সাদমান সিয়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
-পাগল হয়ে গেছিস নাকি কি বলছিস কথার কোনো আগা মাথা নাই (সাদমান)
সিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ভয়ের চোটে উল্টো পাল্টা বলে ফেলছে বলে ফেলছে ও বুঝতেও পারে নি সিয়া আবুলমার্কা হাসি দিয়ে বলল
-কই কিছু না তো কিছু বলি নি আমি (সিয়া)
সাদমান সিয়াকে স্ক্যান করে সাইমার দিকে তাকালো সাইমাও মেকি হাসি দিয়ে বলল
-আমি কিছু দেখি নি তোমাদের ডাকতে এসেছিলাম আর একটু পর গাড়ী থামবে (সাইমা)
তাড়াহুড়ো করে বলে চলে গেলো। সাদমান সন্ধিহান চোখে সিয়ার দিকে তাকালো সিয়া সাথে সাথে চোখ সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গেলো ওরা। বাড়িতে এসে দেখলো ফুপা, ফুপি, সুমা, রুমা ওদের আগেই চলে আসছে। ওরা সবার সাথে কুশল বিনিময় করে রুমে গেলো।
★
আজ টাইয়াড থাকায় কেউ বেড়াতে যায় নি কাজ সাবাই মিলে বেড়াতে যাবে বলে ঠিক হয়েছে। রাতে সিয়া আর নিরা রান্নাঘরে সবার জন্য পকোড়া, চা, পিঁয়াজু বানাছে। বসার ঘরে বড়রা সবাই মিলে গল্প করছে। সাদমান, আয়মান, রুমি, সুমি ওরা ছাদে। সব গুছিয়ে নিয়ে নিরা নাস্তা নিয়ে ছাদে গেলো। সিয়া বড়দের জন্য নাস্তা নিয়ে ড্রাইংরুমে আসতেই সিয়াকে দেখে সবাই কথা থেমে গেলো সিয়া বুঝতে পেরে বড়দের কথা ভেবে আর কিছু বললো না নাস্তা রেখে ছাদে চলে আসলো। ছাদে এসে দেখলো সবাই পাটিতে গোল হয়ে বসে গল্প করছে আর খাচ্ছে। আর সাদমান দূরে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। সিয়া গিয়ে ফাঁকা জায়গাটায় বসে ওদের সাথে যোগ দিয়ে গল্প করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর সাদমান এসে সিয়ার পাশে বসে ও ও যোগ দিলো।
-চল না সবাই মিলে আমরা গেম খেলি (সুমা)
-কি গেম খেলবা (নিরা)
-ওহুমমম ট্রুথ ওর ডিয়ার (সাইমা)
-রাইট গুড আইডিয়া চলো খেলি প্লিজ (সুমা)
-হুম খেলাই যায় যা বোতল নিয়ে আই (আয়মান)
-আমি আনছি (সুমা)
বলে ছুটে চলে গেলো ওর ছুট দেখে সবাই হেসে দিলো। সিয়া রুমাকে খেয়াল করলো রুমা কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে+ভয়ে আছে তেমন কোনো কথা বলছে। সবার দিকে চোরের মতো তাকাছে সিয়া রুমার মতি গতি বুঝতে পারছে না সিয়ার আসার পর থেকে একবারও খারাপ ব্যাবহার করে নি আবার ঠিক মতো খাচ্ছেও না সিয়ার খটকা লাগলেও এটা নিয়ে মাথা ঘামালো না। সুমা এর মধ্যে বোতল নিয়ে আসছে। সবাই ঠিক ঠাক হয়ে বসেছে সাদমান খেলতে না চাইলে জোর করে বসিয়ে দিয়েছে। আয়মান বোতল ঘোরালে প্রথমে সাইমার দিকে যায়।
-এটা কোনো কথা হলো প্রথমেই আমি (সাইমা)
-বেশি কথা না বলে বল ট্রুথ ওর ডেয়ার (সুমা)
-ট্রুথ (সাইমা)
-আমি প্রশ্ন করবো (আয়মান)
-ওকে (সুমা)
-বিএফের নাম কি বল? (আয়মান)
সাদমান ছোট ছোট করে সাইমার দিকে তাকালো সাইমা ভয়ে ঢোক গিলে বলল
-আমার BF কেনো A থেকে Z পযন্ত কিছু নাই সত্যি ভাইয়া এমন ভাবে তাকাস কেন (সাইমা)
-না থাকলেই ভালো (সাদমান)
সবাই মুখ টিপে হাসলো। আয়মান বোতল ঘুরালে সিয়ার দিকে যায় সিয়াকে জিজ্ঞেসা করলে কোনটা নিবে সিয়া বলল
-ট্রুথ (সিয়া)
-তুইও বল তোর BF এর নাম কি? (অায়মান)
-ইমন (সিয়া)
-কিহহ! (সবাই চিল্লিয়ে উঠলো)
সাদমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সিয়ার দিকে
-ওফফ এভাবে চিল্লাও কেন? (সিয়া)
-তোমার বয়ফেন্ডের নাম ইমন? (সুমা)
-হ্যাঁ ও আমার শুধু ছেলেফেন্ড না বেস্টফেন্ড ও (সিয়া)
-ওহ তাই বল আমি তো ভাবলাম (আয়মান)
-তুমি কি ভাবলে (সিয়া)
-কিছু না (আয়মান)
আয়মান বোতল ঘোরালে সাদমানের দিকে যায়
-কি নিবি বল (আয়মান)
-ডেয়ার (সাদমান)
-গান গা (আয়মান)
-ইয়ে আমি গিটার আনছি (সাইমা)
বলে গিটার আনতে গেলো। সাইমা গিটার এনে সাদমানের হাতে দিতেই গান গাইতে লাগলো
-ওহে কি করিলে বলো পাইব তোমারে
রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে (২)♥️
[বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
সাদমান পুরো গানটা সিয়ার দিকে তাকিয়ে গেয়েছিলো কিন্তু সিয়া চোখ বন্ধ করে গানটা শুনছিলো করে বুঝতে পারলো না। গান শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিলো।
-সুন্দর হইছে ভাইয়া (সুমা)
আয়মান আবার বোতল ঘোরালে আয়মানের দিকেই পড়ে সাদমান দাঁত কেলিয়ে বলল
-বল কোনটা নিবি? (সাদমান)
আয়মান ভাব নিয়ে বলল
-ডিয়ার (আয়মান)
-ভাবিকে প্রপোজ করে দেখা (সাদমান)
নিরার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। আয়মান দাড়িয়ে নিরার হাত ধরে দাড় করিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলল
-কাউকে কখনো সেভাবে ভালোবাসি বলে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় না ভালোবাসা বুঝে নিতে হয় অনুভব করতে হয় তবুও বলবো ভালোবাসি তোমাকে। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে পাশে রাখতে চাই আজীবন। ❤️🥀থাকবে কি আমার সাথে মৃত্যু আগ পর্যন্ত? (আয়মান)
নিরার খুশিতে চোখে জল এসে গেলো পারিবারিক ভাবে বিয়েটা হয়ে ওদের কিন্তু এই তিনমাসে অায়মান নিরার সাথে বন্ধুর মতো মিশেছে ভালোবাসি কথাটা কখনো বলে নি কিন্তু নিরা অপেক্ষা থাকতো ভালোবাসি কথা শুনার জন্য আজ যে ও অপেক্ষার অবসান ঘটবে ও ভাবতেই পারেনি। নিরার চোখ পানি দেখে আয়মান নিরার হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছোয়ালো। নিরা লজ্জা পেয়ে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। ওরাও আয়মানকে পচিয়ে নিচে চলে আসলো। রাতের খাবার খেয়ে সিয়া ফোন টিপছিলো তখন ওর মা আসলো কিন্তু মায়ের কথা শুনে কি রিয়াকশন দিবে সেটাই ভুলে গেছে….
#চলবে
#Tasnim_Tamanna
[ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। রি-চেক করি নাই]