মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ১৯,২০

0
394

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ,পর্ব ১৯,২০
সায়লা সুলতানা লাকী
১৯

দরজাটা আটকিয়ে লাবন্য ওর মায়ের আলমারিটা খুলল। ভেতর থেকে একটা ফাইল বের করে আবার আলমারির দরজাটা আটকালো।
লিখন রুমের দরজা আটকানোর শব্দতেই বেশ অবাক হল তাই কোন কিছু না বলে লাবন্যের কাজ কর্ম চুপচাপ দেখতে লাগল। কিন্তু হাতে ফাইল দেখে আর চুপ থাকতে পারল না।
“এটা কি? আগেতো কখনও দেখেনি এই ফাইল। কোথায় পেলি?”
“বলব বলেইতো বের করেছি, এত তাড়া কিসের? অপেক্ষা কর।বলছিতো!”
“এখনই বলা দরকার? বাহিরে…….”
“হুমম, এখনই বলতে হবে, বাহিরে সব জাহান্নামে যাক তা দিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই।”
“আচ্ছা বল”
“সেদিন আসলে কি হয়েছিল?”
“কেনদিন?”
“যে রাতে আম্মু মারা যায়।”
“মানে?”
“মানে রাতে কি হয়েছিল তাই আমি জানতে চাচ্ছি, তুমি বুঝতেছো না?” কথাটা বলতে গিয়ে একটু উত্তেজিত হয়ে গেল।
“আমার সাথে চিৎকার করছিস কেন? তুই জানিস না ? ঘুমের মধ্যে তোর মা স্ট্রোক করেছিল…”
“হুমম এসবতো সাজানো, আসল ঘটনাটা বল?
আম্মুর মৃত্যুটা কি স্বাভাবিক ছিলো নাকি অস্বাভাবিক ছিল? কারো হাত ছিলো কি এই মৃত্যুতে?”
“দেখ লাবু তুই একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস? ”
“সত্য সামনে আসলে সবাই এমন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পাশাপাশি শুয়েছিলা, আম্মু বুকের ব্যথায় কাতরাচ্ছিলো, শ্বাসকষ্টে হাত পা নাড়ছিলো তুমি বুঝি তা টের পাওনাই? তাই কি সবাইকে বিশ্বাস করাতে চাও? সবাই এত বোকা? আমি তো নিজেকে বোকা ভাবি না?”
“এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে। খুব বেশি বেড়ে গেছিস ইদানিং। যা মুখে আসে তাই বলতে শুরু করেছিস। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছিস না কি?”
“ভুলেও এই কাজ করো না। আমাকে জন্ম দিছো তাই এতটুকু ফেবারতো করতেই পারি তোমার জন্য । তাই বলছি আমার গায়ে হাত তোলার সাহসও করো না। দেখোনাই এই রুমে ঢোকার আগে মোবাইলে কাজ সেরে এসেছি। বোঝোনাই কিছু? থানায় জি ডি আমি আগেই করেছি। একেবারে নিজের মা সহ জেল হাজতে গিয়ে পৌছাতে সময় লাগবে না একটুও! চিন্তা করোতো দৃশ্যটা তুমি আর তোমার মা চৌদ্দ শিকের ভেতরে আর তোমার নতুন সঙ্গী শিকের বাহিরে বসে আসে। কি দারুন একটা রাত কাটাবা ভাবোতো?”
“মানে? লাবু তুই এসব কি বলছিস? আমার মেয়ে হয়ে তুই এইসব করতে পারলি? ছি ছি ছি কি লজ্জা।”
“হুমম, তোমারই মেয়ে, তাতে কোন সন্দেহ এনে আমার আম্মুর চরিত্রকে কলংকিত করো না। আর তোমার মেয়ে বলেই নিজের ভালোটা বুঝতে শিখেছি। আম্মুর মতো হতে পারিনি। তোমার মতো ধূর্ত হয়েছি বলতে পারো।তাইতো অনেক আগেই জিডি করেছি থানায়, কারন তুমি যেকোন সময় আমাকে আর রুশকে মেরে ফেলতে পারো। যেমনটা আমাদের আম্মুকে মেরেছো।”

“ইন্না-লিল্লাহ, আমি রেশমাকে মেরেছি? কি বলছিস এগুলো?”

“হুমম তুমিই হত্যা করেছো আমার মা’কে, তবে তুমি একা না তোমার মা-ও সাথে ছিল। তোমার বোন আর বোন জামাইরা পেছন থেকে বুদ্ধি জুগিয়েছে।এমনভাবেই কেইসটা সাঁজানো হয়েছে। ”
“কেইস?”
“হুমম, থানা থেকে এখনই পুলিশ আসবে তোমাদের নিয়ে যাবে। রেশমা হত্যা মামলার আসামি তোমরা।”

“অসম্ভব, আমি কোনভাবেই মানতে পারছি না, তুই নিজে এগুলো করেছিস? নাকি কেউ বুদ্ধি দিছে? আমি রেশমাকে মেরেছি তা মোটেও সত্য না।”

“কোর্টে এসব প্রমান করতে কয় বছর লাগবে তা ঠিক করে বলতে পারব না। ততদিন ঝুলে থাকো। ধরে নাও এটা রেশমার সাথে প্রতারনার শাস্তি। ”

“লাবন্য তুই এসব করতে পারিস না মা। তুই কখন কীভাবে এমন হলি? মাগো একটু শান্ত হ, বিষয়টা আগে একটু বোঝার চেষ্টা কর। বুঝতে পারছি আমার উপর প্রচন্ড রাগ করেছিস।আজ আমি যা করেছি সব তোদের ভালোর জন্য। তোরা এখন বুঝতে পারছিস না। কিন্তু এটাই এক মাত্র পথ সংসারটাকে আবার আগের মতো সচল রাখার।”

“হুমম জেলে বসে বসে মা ছেলে মিলে আরও কিছু পরিকল্পনা করে সব সচল করার। অসুবিধা নাই। ”

“মারে কেন তুই এসব করছিস?”

“কারন আমি আর রুশ আমাদের ন্যয অধিকার চাই। জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমাদের মতো বাঁচতে চাই।”

“আমি বেঁচে থাকতে তোদের জীবনে অনিরাপত্তার কথা আসছে কেন? নিরাপত্তাহীনতার কি দেখলি তুই?”

“তুমি এখন আমাদের কাছে…….
থাক এসব কথা বলে লাভ নেই এখন আসল কথা বলি। তোমাকে চিনতে রেশমা ভুল করেছিল, হিমেলও করেছে, আমিও করেছি কিন্তু এডভোকেট লায়লা বশির করেননি। তিনি ঠিক যেমনটা বলেছিলেন তুমি ঠিক তেমনটাই করেছো। কি আজব না বলোতো?”

“উনি আবার কে? এসব কোর্ট কাচারি মামলায় জড়াইস না মা। এগুলা ভালো জিনিস না।”

“ও কে ডান, তবে সওদা হোক তোমার আর আমাদের মাঝে। কি রাজি? ভেবে দেখো সওদা করবে নাকি জেলের ভেতর তুমি আর বাহিরে তোমার সঙ্গী বসে বসে এ সুইট নাইট যাপন করবে?”

“বাবাকে এসব বলতে তোর একটুও বাঁধছে না?লাবন্য এসবের মধ্যে ঝুমুরকে টানছিস কেন? আম্মাই বা কি করছে, বলতো?”

“সেসব জেনে আমার লাভ কি? ওসব তোমার ব্যাপার। এখন জলদি বল। আমার সাথে সওদা করবে নাকি নিজে নিজের মা আর সঙ্গী নিয়ে… ”

“কি সওদা করতে চাস বাপের সাথে, শুনিতো?”

“এই পেপারগুলো সাইন করে দাও। ”

“কিসের পেপার?”

“আমার মায়ের হাতের সাজানো বাসাটা আমাদের দুই ভাইবোনের নামে দিয়ে দিচ্ছো আর আমাদের মাসের খরচ বাবদ প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট মাসের শুরুতেই আমার একাউন্টে জমা করে দিবে। ব্যাস আপাতত এইএুকুই আর বিশেষ কিছু চাই না।”

“আমার সন্তান হিসেবে আমার সম্পত্তিতো তোদেরই পাওনা। তাহলে সেটা পেতে এত কিছু করার কি দরকার ছিল?”
“তোমার সম্পত্তি নিয়েতো কোন কথা বলছি না। বলছি শুধু মায়ের হাতে গড়া এই ফ্ল্যাটটার কথা। এটা এখন তুমি এখানে বসে সাইন করবে না হলে এডভোকেট আন্টি পুলিশ পাঠাবেন বলছেন।”
কি আশ্চর্য, এসব করিস না লাবন্য, সমাজে মান সম্মান বলে আর কিছু থাকবে না। এতটা নাজেহাল… ”
“আব্বু সময় কম, আন্টি আর্জেন্ট এটাতে সাইন করাতে বলছে। সাইনের পর ছবি তুলে দিলে পরে আন্টি পুলিশকে কল দিয়ে আসতে মানা করবেন।”
“লাবন্য কাজটা কি তুই ঠিক করছিস?”
“আব্বু জলদি কর।”
“আমি এই পেপার না পড়ে সাইন করতে পারব না। সময় লাগবে।”
“পড়, পড়তে দশ মিনিট লাগবে। আমি পঞ্চাশবার পড়ছি তাই আরও কম সময় লাগছে।”
“ফ্ল্যাটের পেপার কোথায় পেলি?”
“আম্মুর ড্রয়ারে ছিল ও গুলো আন্টিকে দিতেই তিনি এতটা উপকার করলেন আমাদের দুই এতিম ভাই বোনের জন্য । যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। কথাটা পুরোপুরি সত্য। ”
“যদি সাইন না করি…..”
“তাহলে সকালে পেপারে হেড লাইন হবে “অভিজাত এলাকায় গৃহবধু খুন।” ভিতরে বিস্তারিত থাকবে, “অমুক এলাকার বাসিন্দা লিখন প্রেমের ফাঁদে ফেলে রেশমা নামক এক তরুনীকে ঘর ছাড়া করে……. ”
“এতে তোর আর রুশের ভবিষ্যৎ কি হবে তা ভেবেছিস?”
“আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নাই। আমরা বর্তমান নিয়ে বাঁচি। তুমি তোমার ভবিষ্যত দেখো। নতুন বৌ নিয়ে জেলে যেতে চাও নাকি…. ”
“লাবন্য?” এবার লিখন জোরে চিৎকার করে উঠল।
“সত্য সবসময়ই তিতা হয়। তুমি ভেবেছিলে তোমার ধমকে আমি ভয় পাবো? না, আমি লাবন্য, আমি রেশমা না। ” কথাটা শেষ করেই ও মোবাইলটা হাতে নিয়ে কল দিতে লাগল।
“কি করছিস? কোন ঝামেলা করিস না। দে সাইন করে দিচ্ছি। তবুও তুই শান্ত থাক। একবার মান সম্মান গেলে আর পাওয়া যাবে না।”
“গুড, নাও এখানে এখানে এখানে সাইন দাও। বলে কলম এগিয়ে দিল। লিখনের সাইন করা হলে পরে। লাবন্য কাগজ গুলোর ছবি তুলে এডভোকেটের আইডিতে পাঠিয়ে দিল।একটু পরেই এডভোকেট কল দিল লাবন্যের মোবাইলে
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি”
“গুড জব, মেয়ে, তুমিতো সত্যি সত্যিই অনেক শক্ত। কাজ হয়েছে, এবার তোমার আব্বুকে দাও।”
“জি আন্টি দিচ্ছি, একটু হোল্ড করেন প্লিজ।”
লাবন্য এবার মোবাইলটা লিখনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
“আমার এডভোকেট আন্টি তোমার সাথে কথা বলবে, নাও কথা বল।”
লিখন কোন উপায় না দেখে মোবাইলটা হাতে নিল।

“হ্যালো”
“হ্যালো, আমি এডভোকেট লায়লা বশির বলছি।”
“জি শুনছি। আপনি আমার মেয়েটার মাথাটা এভাবে নষ্ট করলেন কেন তার কারন বুঝতেছি না।”
“ভালো বলছেন। এখন শুনেন, আমার ক্লায়েন্টের সেফটির জন্য আমি পুলিশ প্রোটেকশন নিতে যাচ্ছি। তার আগে একটু আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।”
“সবতো আপনি নিজের মতো করেই করেছেন, এখন আবার নতুন করে আমার সাথে কথা বলার কি দরকার পড়ল?”
“হুমম, দরকারতো পড়লই, আফটার অল নিউ মেরিড কাপল আপনারা। সব কিছুর একটা সৌন্দর্য আছে বৈকি! ”
“ফাজলামো রাখেন, কি বলবেন বলেন?”
“এই মুহুর্তে আপনারা আমার ক্লায়েন্টের বাসা ছেড়ে বের হয়ে যাবেন। ঠিক এই মুহুর্তের মধ্যে। আর নয়ত আমি পুলিশ ফোর্স পাঠাতে বাধ্য হব। ভেবে দেখেন পুলিশের ঘাড় ধাক্কায় যাবেন না কি নিজ ইচ্ছায় যাবেন। এখনই যাবেন। বুঝাতে পেরেছি। ”
লিখন কিছুক্ষণ চুপ করে বসল এরপর বলল।
“আমি এখনই যাচ্ছি।” বলে মোবাইলটা লাবন্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। লাবণ্য মোবাইলটা হাতে নিতেই লিখন রুম থেকে বের হয়ে গেল।
লাবন্য আস্তে আস্তে ফাইলটা বুকে নিয়ে রুমের বাহিরে আসল। রৌশন এতক্ষণ রুমের বাহিরেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। ভিতরে কি হচ্ছে তা বুঝতে পারছিল না ভয় ভয় মনে বুয়া খালার হাতটা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। ওর দাদি নতুন বৌ নিয়ে নিজের রুমে ঢুকেছিল। ওরা কাউকে কিছু বলতে সাহসও পাচ্ছিলো না। একটু পর ওর দাদির চিৎকার কানে আসতে লাগল৷ লাবন্য ভাইকে কাছে টেনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
চোখের সামনে দিয়ে নিজের আব্বুকে তার নতুন বৌ আর মা’কে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখল দুই এতিম ভাইবোন।
যাওয়ার সময় লিখন কোন কথাই বলল না। ব্যাগ লাগেজগুলো টেনে টেনে নিয়ে বের হয়ে গেল শুধু ।

খালা বুয়া দরজাটা লাগিয়ে দিতেই লাবন্য হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, বিলাপের সুরে বলতে লাগল
“এ কেমন ভালেবাসা ছিল আম্মু, যার টানে তুমি তোমার সব ছেড়ে এর কাছে চলে এসেছিলে।সেতো তুমি যাওয়ার এক মাস পরই আরেকজন নিয়ে আসল জীবনকে সাজাতে নতুন করে। এ কেমন ভালোবাসা? যদি ভসলোবাসা এমনই হয় তবে এমন ভালোবাসা আমি চাই না। এমন ভালোবাসাকে আমি ঘৃণা করি। কি করে একটা মানুষ এত দ্রুত কারো এত দিনের ত্যাগ, আদর, ভালোবাসা, স্মৃতি ভুলে যেতে পারে? এতই টুনকো বাঁধনে আটকা ছিলো আমার আম্মু? ও আম্মু তুমি চলে গিয়ে ভালো করেছো তুমিতো সার্বক্ষণিক প্রতারিত হচ্ছিলে, আমি বলেছিলাম তখন তুমি মানতে পারোনি। না কি পেরেছিলে কিন্তু আমাকে বুঝতে দাওনি। আম্মু, আম্মুগো আমরা দুই ভাইবোনতো বড় একা হয়ে গেলাম, বড় একা। এত বড় পৃথিবীতে একা একা কীভাবে থাকব? কত যুদ্ধ আছে সামনে তুমি তা বলে যাও।”
লাবন্যের বিলাপে বাসার বাতাস বেশ ভারি হয়ে উঠল। বুয়া খালা পাশে বসে লাবন্যের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর একটু পর পর আঁচল দিয়ে নিজের চোখ মুছতে লাগল।
রৌশন হাটুতে মাথা গুঁজে বসে রইল। ঠিক কত রাত পর্যন্ত এভাবে বসে রইল তা জানা নাই।

সকালে মোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভাঙল লাবন্যের। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল আটটা মিসড কল। এর মধ্যে দুই ফুপুর কলও আছে। বড় খালার কল একটা সর্বশেষ হিমেলের কল চারটা। কারো কল ব্যাক করার ইচ্ছে করছিল না। এরই মধ্যে আবার রিং বেজে উঠল। হিমেলের কলটা রিসিভ করল

“হ্যালো।”
“কল রিসিভ করিস না কেন?”
“ঘুমায় ছিলাম।”
“নিজের বাপ দাদিকে ওই রাতে রাস্তায় নামাইয়া নিজে আরামে ঘুমালি কীভাবে?”
“মানে?”
“মানে কি তুই জানিস না? সকালে আম্মু জানালো তুই গতরাতে কি করছোস? কীভাবে এমন করলি? ওই ফ্ল্যাটটাই কি তার কারন?”

“শুধু বাপ দাদির কথা বলছো কেন? আরেকজনের কথা বললা না?”
“আরেকজন মানে?”
“তোমার আইকনতো বিয়ে করছে আবার। গতরাতে নতুন বৌ নিয়া আসছিলো।”
“মানে? কি বলিস এগুলো?”
“হুমম, যা বলি সত্য বলি। আর হ্যা শোনো আমি রেশমা না, তাই ত্যাগ করতে শিখিনি। যা আমার তা ছিনিয়ে নিতে জানি। আমি লাবন্য কথাটা মনে রেখো।”
“সত্যি বলছিস খালুজি বিয়ে করছেন? ”
“হুমম, গতরাতে এসেছিলেন নতুন বৌ নিয়া আমার মায়ের সাজানো গোছানো রুমে বাসর করতে। আমি তা হতে দেইনি। একপ্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিছি। বের করে দিছি আমাদের জীবন থেকে। আমাদের বিশ্বাস থেকে, ভালোবাসা থেকে আমাদের মন থেকে।আমি লাবন্য কখনোই সহ্য করতে পারতাম না যে বিছাবায় আমার মায়ের লাশ পড়ে ছিল সেখানে তার জায়গায় অন্য কেউ……….” বলে কেঁদে ফেলল।
“ভালো করেছিস। আমি হলেও তাই করতাম। কে কি বলল তার চেয়ে বড় আমার মনের শান্তি। আমিও একই কাজ করে মনের শান্তি খুঁজতাম। ”
“শান্তি? শান্তি কোথায়? যেখানে বিশ্বাস হারিয়ে যায় সেখানে শান্তি বলে কেউ থাকে না। ”
“এখন কীভাবে চলবি? ”
“সে চিন্তা কাউকে করতে হবে না। আমরা শিখে নিব। যখন তোমার দরকার ছিলো তখন তোমাকেও পাইনি, কিন্তু তাতে কি? থেমেতো থাকিনি। আমরা পারব পারতেই হবে।” বলে কলটা কেটে দিল।
হিমেল হ্যালো হ্যালো করছিল কিন্তু তা লাবন্যের হৃদয় ছুঁতে পারলো না।

চলবে

#মেঘে_ঢাকা_চাঁদ (পর্ব ২০)
সায়লা সুলতানা লাকী

লাবন্য রুশকে নিয়ে সকালে স্কুলের জন্য বের হয়ে গেল। ভাইকে স্কুলে দিয়েই এডভোকেট আন্টির বাসায় চলে গেল৷ কাগজপত্রগুলো তাকে দেখিয়ে আবার ফিরে আসল স্কুলে। সকাল থেকে অনেকেই কল দিচ্ছে কিন্তু ও কারো কলই ধরছে না। মনে মনে নিজেকে বোঝাতে লাগল “পুরো পৃথিবীর চোখে এখন আমি স্বার্থপর, কিন্তু আমি জানি আমি ভুল করিনি। আমি যা করেছি তা সম্পুর্নই আমাদের ভালোর জন্য করেছি। আমার ভাইটার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই করেছি। এই কাজের জন্য আমার একটুও অনুশোচনা নাই। যার যা খুশি বলুক তাতে কিছু যায় আসে না আমার, আমি আমাদেরটাই নিয়েছি অন্যেরটায় হাত দেয়নি। নিজের ভালো চাওয়ার অধিকার আমার আছে।”

স্কুল থেকে ফিরতেই সামনে পড়ল দোতলার আংকেল। লোকটার সাথে কখনও তেমন কোনো কথা হয়নি। এই এক দুইবার সালাম দিয়েছিলো ঠিক এত টুকুই। সে আজ নিজ থেকেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন
“কি লাবন্য ইয়াং লেডি, তুমি কেমন আছো?”

“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। জি ভালো আছি।”

“বেশ বেশ, তা এখনতো দেখি তুমি হুট করেই অনেক বড় হয়ে উঠলে। ভাইয়ের দায়িত্ব বুঝি এখন তুমি ই নিয়েছো বুঝে?”

“এইতো আংকেল, অনেকটা সেরকমই।”

“তা তোমার আব্বু কি এখন আর এখানে থাকেন না? তাকেতো আর ইদানীং এখানে দেখছি না।”

“দেখবেন না কেন? গতকালওতো এসেছিল। ফ্ল্যাটে যেহেতু ভাড়ায় থাকি না সেহেতু দেখাতো হবেই আংকেল, টেনশন কিসের ?”

“না মানে এখন শুনলাম তুমি একাই থাকো এখানে। তোমার আব্বু তার নতুন ওয়াইফ নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেন নাকি! এতবড় ফ্ল্যাটে একা একটা মেয়ে মানুষ….”

“একা কোথায় আমার ভাই আছে সাথে আর….. ”

“আরে রৌশনতো ছোট বাচ্চা ও কি আর তেমন কেউ নাকি? বাবা মা হীন মেয়ে তুমি, কোন রকম গার্জিয়ান ছাড়া……..”
“আংকেল আমার আব্বু কিন্তু এখনও বেঁচে আছেন। আমার আম্মু মারা গেছেন আব্বু না। উনি এখনও আছেন আমাদের মাথার উপর, আমি এবং আমরা কিন্তু একা না। আপনি অযথা আমাদের নিয়ে এত টেনশন করছেন। আমাদের নিয়ে টেনশনের কোন কারন নাই। আচ্ছা আংকেল আসি। ” বলে লাবন্য আর দাঁড়ালো না, রুশের হাত ধরে এগিয়ে যেতে যেতে শুনল ভদ্রলোক বলছেন।

“শোনো লাবন্য কখনও কিছু প্রয়োজন হলে দ্বিধা করো না সরাসরি আমকে নক দিও।ও কে! আমি আছি তোমার জন্য। ”

লাবন্যের কেন জানি কোন উত্তর দিতে ইচ্ছে করল না। এর আগে যখন দেখা হত তখন সালামের উত্তর দিতো মামনি বলে, অথচ আজ একবারের জন্যও মামনি বলেনি লোকটা। এটা মনে হতেই মেজাজ প্রচন্ড রকমের খারাপ হয়ে গেল। উত্তররে জায়গায় একবার রুশের ব্যাগটা দিয়ে ব্যাটার মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা বাড়ি মারতে ইচ্ছে করছিল। খুব কষ্টে নিজেকে সংবরন করে। উপরে উঠতে লাগল। আর ভাবলো আম্মু মারা যাওয়ার পরওতো এই বদের সাথে দেখা হয়েছিল তখনতো এত খাতির দেখায় নাই তাহলে আজ কেন এত দরদ উতলায় উঠল ?
ভাবনার ছেদ পড়ল পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির ডাকে।তিনিও যেনো কেথায় যাবেন, ব্যাগ হাতে নিচে নামছিলেন। মাঝঘে আটকে জিজ্ঞেস করলেন

“এই লাবন্য, কেমন আছো?”
“জি আন্টি ভালো আছি।”
“আহা ভালো আর থাকো কীভাবে তাতো বুঝিই! তবুও জিজ্ঞেস করতে হয় বলেই করলাম। আহা বড় দুঃখ লাগল শুনে। সকালে সিকিউরিটি গার্ডটা যখন জানালো তখন একেকজনের একেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখলাম। কি আজব মানুষ বলোতো এরা? আমিতো তোমার কোন দোষ দেখছি না। তুমি একেবারে ঠিক কাজটাই করছো। আমি তোমার পক্ষে আছি। আমি হলেও তাই করতাম বুঝছো!”

“জি আন্টি মানে আপনি কি বলছেন আমি ঠিক —–”

“ইশশশ কি শয়তান ব্যাটা একটা তোমার আব্বু, আগে দেখে একটুও বোঝা যায়নি। বৌটা মরছে মাস পার না হতেই আরেকটা বৌ নিয়ে আসছে ঘরে, এটা কি কেউ সহ্য করতে পারে? যে পারে সে মহান, আমি অত মহান না। তুমি ঠিক আমার মন মতোই কাজ করেছো।”

“আন্টি আসলে আমি এ বিষয়ে ঠিক……”
” এই মেয়ে তুমি ওই রাতে তাদের ঘরে ঢুকতে দিলা কেন? সে যে এমন কাজ করবে তা আগে আন্দাজ করতে পারো নাই? কত্তবড় সাহস নতুন বিয়ে করে বাসায় বৌ নিয়ে আসে। ব্যাটা শয়তান বদের হাড্ডি একটা। শুধু এই ব্যাটা না! আশেপাশে যা দেখো তাদের অধিকাংশ একই রকম। শোনো মেয়ে এখন তুমি একলা একা থাকবা এই ফ্ল্যাটে। খুব সাবধানে থাকবা। দিনে কিংবা রাতে কোন পুরুষ মানুষ নক করলে দরজা খুলবা না। তোমার একা থাকার সুযোগ নিতে কত কতজন আসবে শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে দেখবা! সবধান মেয়ে একটুও পাত্তা দিবা না কাউকে। আমি তোমার মায়ের খুব প্রিয় ছিলাম। কোন অসুবিধা হলে আমাকে জানাইও। আচ্ছা মেয়ে আমি যাই আমার একটু তাড়া আছে অনেক দেরি হয়ে গেল। বাই।” বলেই তিনি হনহন করে নিচে নামতে শুরু করলেন।

লাবন্য পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গেল ওনার এমন আচরনে। উনি আসলে কি এত কথা বলে গেল তা মনে হয় সব একসাথে হজমও করতে পারল না ও। লাবন্যের কোন উত্তরও তিনি শোনার চেষ্টা করলেন না।বেশ আজব বলে মনে হল ওর হটাৎ করেই প্রতিবেশীদের এমন আচরন। দেরি না করে জলদি রুশকে নিয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেল, মনে হল বাহিরে থাকাটাই এখন বিপদ।

গোসল করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে চোখ পড়ল পাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দার দিকে। মনে হল ওই বাসার আন্টিও ওকে কিছু বলতে চায়, ও আর দাঁড়াতে পারল দ্রুত রুমে ঢুকে গেল তার উৎসুক চোখ আর দাঁড়াতে দিলো না। গতরাতের ঘটনাটা সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে মনে হল আশেপাশে বেশ ভালোই ছড়িয়েছে, কিন্তু গার্ড ব্যাটা এত কিছু জানলো কীভাবে তাই ভাবতে ভাবতে
ডাইনিংএ এসে খুব বিরক্ত হয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল। তখনই বুয়া খালা ভাতের বোলটা টেবিলে রেখে বলল

“সকাল থেকে আশেপাশের কতজনের যে কত প্রশ্নের উত্তর দিলাম, ওরে আল্লাহ মাইনসের আর কোনো কাম নাই।অন্যের ঘরের খবর জানোনের লেইগ্যা মনে হয় কইলজাড ফাইট্যা যাইতাছে।”

“তাই নাকি খালা, তোমাকেও জ্বালাচ্ছে নাকি এরা?”

“হুমম, তাও কথার কি ধরন? ওগুলি শুনলে তোমার মাথা নষ্ট হইয়া যাইব।”
“তাইলে আর শোনার দরকার নাই। এসময়ে মাথাটা ঠিক রাখাই বেশি জরুরি। ”
“ভাইয়ের বড় বইনে ফোন দিছিলো, তোমারে চাইছিলো কথা কইতে। কইছি তুমি বাসায় নাই। হেয় তোমার উপর অনেক রাগ। হের ভাইয়ের বাড়ি তুমি বলে তোমগো নামে লেখাইয়া নিছো?”
“তার ভাইয়েরটা না, আমরা আমাদের আব্বুরটা যার ওয়ারিশ আমরা দুই ভাইবোন তাই লিখিয়ে নিয়েছি। উঁহু তাও নয় আব্বুই আমাদেরকে লিখে দিয়েছেন। কিন্তু বুঝলাম না তাতে তার সমস্যাটা কোথায়? তাদেরটাতো আর দেয়নাই। আশ্চর্য মানুষ। বাদ দাও খালা আসো খাই, ক্ষুধা লাগছে রুশও চলে আসছে আসো খাবার সামনে নিয়ে এসব আবোল তাবোল কথা বলে সময় নষ্ট নাই করি।”
বলে খাবার প্লেটে বাড়তে লাগল। রুশকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিতেই খেয়াল করল ও চুপচাপ প্লেটটা নিয়ে খাবারে হাত দিল। ইদানীং ভাইটা একবারের জন্যও বায়না করে না খাওয়ায় দিতে। নিজে নিজেই খেয়ে নিতে চেষ্টা করে। লাবন্য মনে মনে বলল “এভাবেই নিজেকে তৈরি করতে হবেরে ভাই। কারউ উপর নির্ভর হওয়ার মতে মানুষ আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে রাখেন নাই আমাদের জন্য। আমরা বড় একারে ভাই বড় একা।”

রাতে রুশকে পাশে বসিয়ে পড়াচ্ছিল তখনই কল দিল হিমেল। লাবন্য ইচ্ছে করেই ধরল না। কেন জানি ইদানীং হিমেলকেও ওর ভালো লাগে না। মনে হয় ও বুঝি লাবন্যকে পুরোপুরি বুঝে না। এই কঠিন সময়টাতে যতটুকু দায়িত্ব ওর নেওয়ার কথা ছিল ও ততটাই যেন গা বাঁচিয়ে চলেছে। এমনটাও কখনোই করেনি আগে। একটা সময় ওকে বিশ্বাস করে ওর হাতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে পথ চলতে পারতো। এখন কেন জানি বিশ্বাসটাকে একটু নড়বড়ে লাগে। রুশ কে পড়াতে পড়াতেই বুয়া খালা এসে পাশে দাঁড়িলো

“খালা কিছু বলবা?”
“হুমম, খালাম্মা মাসের বাজার সদাইতো কিছু কিছু শেষ।আগেতো ভাবিসাব আমারে নিয়া যাইতো মোড়ের ওই বড় দোকানে। ওইখান থাইক্যাই আনতাম যা যা দরকার। কিন্তু এহন কি করবা?”

“আমি আনবো।এত টেনশন করছো কেন? কি কি লাগবে তা বলো আমি লিস্ট করে নিচ্ছি। ”

“এহন কয়ডা কমু, আবার দুইদিন পর কয়ডা কমু, তারচেয়ে একলগই পুরা মাসের বাজার আনোনডাই সুবিধা। ”

“কিন্তু সব বাজার আনা….. “বলে থেমে গেল। এরপর বলল “আচ্ছা খালা তুমি যাও দেখি কি কর যায়।” বলে নিজের হাতে যে টাকা আছে তা দেখল একবার বের করে। এরপর পড়ে গেল চিন্তায়। হাতে যা আছে তা দিয়েতো এসব হবে না। আর এই মুহুর্তে ওর আব্বুও দিবে বলে মনে হয় না। ঠিক এই সময়টা চলবে কীভাবে? কোর্ট থেকে আদেশ আসগে যে সময়টা লাগবে সে সময়টা চলতে হবে। কিন্তু কীভাবে? কার কাছেইবা চাইবে? কি করবে ভাবতে ভাবতে মায়ের রুমে ঢুকে গেল।

লাবন্য রুম থেকে বের হতেই আবার হিমেল কল দিল আর সাথেই সাথেই রুশ কলটা রিসিভ করল
“হ্যালো, ভাইয়া।”
“হুমম রুশ, কেমন আছিস ভাই?”

“ভালো না। একেবারেই ভালো না।” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।

“রুশ ভাই আমার কাঁদিস না। মন খারাপ করিস না। আল্লাহ মাঝে মাঝে আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন।
আমাদের ইমানের পরীক্ষা নেন। তখন নজেকে শক্ত রাখতে হয়।”
“ভাইয়া জানো নাতো আমাদের সাথে কি হয়েছে?”
“হুমম জানি, খালুজি বিয়ে করেছেন। কিন্তু তাতে তোদের কি? তারাতো আর তোদের সাথে থাকছে না! তারা করুক যা খুশি তাই…”
“আরে ভাইয়া শোনো, জানো আজ আমরা যখন স্কুল থেকে ফিরছিলাম তখন… ”

“কি হয়েছে কোন সমস্যা? ”

হুমম, বলে রুশ ওই আংকেল আর পাশের ফ্ল্যাটের আন্টির বলা কথাগুলো সব বলল। হিমেল চুপচাপ সবটা শুনে তারপর বলল
“তা এখন তোর আপু কোথায়? সে এখন কি করে?”

“আপু এখন আম্মুর রুমে গিয়েছে। বাসায় বাজার নাই। বুয়াখালা একটু আগে বলে গেল। আপু এখন বাজার নিয়ে বেশি ব্যস্ত।”

“বাজার? বন্য করবে বাজার? ইন্না-লিল্লাহ। শোন রুশ তুই মোবাইলটা তোর আপুকে দে। এখুনি দে।”

“আচ্ছা দিচ্ছি, বলে রুশ ওর আম্মুর রুমে গিয়ে লাবন্যকে মোবাইলটা ধরিয়ে দিল। বলল “কথা বল”।

“হ্যালো”
“হুমম, একা থাকাটা যে কতটা বিপদজনক তা বুঝতে পারছিস একদিনে কিছু?”
“কে বলল বিপদজনক? আমিতো তা মনে করছি না?”
“জেদ করিস না বন্য। সব কিছুতে জেদ চলে না। একটা বিপদ হলে পরে বুঝবি।”
“যা বোঝার তা আমি বুঝেই করি। আমাকে কিছু বোঝানোর দরকার নাই।”
“এখন কি তুই বাজার করবি?”
“হুমম।দরকার হলেতো করতেই হবে।”
“তুই বন্য বাজার করবি? তুই এসব কিছু বুঝিস?”

“মানুষ কিছু শিক্ষা লাভ করে জীবনে ঠেকে। আমিও না হয় ঠেকে ঠেকে শিখে নিব জীবন চালানো সব পদক্ষেপ ।”

“হইছে তোকে বোঝানো আমার সাধ্যে নাই। তুই আগামীকাল কিচ্ছু করবি না। আমি এসে বাজার করে দিয়ে যাব।”

“উঁহু, আমাদের বাসায় এখন থেকে তুমি আর আসবে না, আসলে প্রতিবেশীদের মুখরোচক গল্প বানাতে সুবিধা হবে।”
“তোর এত কিছু চিন্তা করতে হবে না। একটু মাথাটাকে শান্তি দে। আচ্ছা রাখি।” বলে কলটা কেটে দিল।

লাবন্য মোবাইলটা নামিয়ে রাখল বিছানার উপর। মনটা এখন এমনিতেই একটা ঘোরের মধ্যে আছে তার মধ্যে এখন এই সব বিষয় নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। মায়ের আলমারি এই পার্টটা খুললেই মনটা কেমন জানি হয়ে যায়। কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে মায়ের গায়ের সুন্দর মিষ্টি ঘ্রানটা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। কি সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো রয়েছে মায়ের শাড়িগুলো যা এতদিন ওর ধারনা দিতো মায়ের সুখের পরিমান, কিন্তু আজ সেই শাড়ি গুলোই মনে হয় ওর মায়ের প্রতিদিনকার একটু একটু প্রতারিত হওয়ার কষ্টটাই জানান দিতে চাইছে। নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়েই প্রথম পেলে শাড়ির ভাঁজে টাকার উপস্থিতি। অবাক হয়েগেল এক মুহুর্তের জন্য । মনে মনে বলল আম্মু তুমি এত এত ড্রয়ার থাকতে গোপনে শাড়ির ভাঁজে টাকা রাখতে? কিন্তু কেনো?
এর কেন উত্তর পাওয়া যাবে না। কে দিবে এমন রহস্যের উত্তর। আর ভেবে কি হবে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন যে উদ্দেশ্যে আলমারি খোলা হয়েছে সেই হদিসে নামলো। তন্নতন্ন করে আলমারি চিপাচাপা সব জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা পাওয়া গেল। ওর আব্বুর ড্রয়ারের চাবিটা এখানে নাই। ওটা আটকানো। তারপরও ও পাশটা খুলে কোট, ব্লেজারগুলো সরিয়ে সরিয়ে একবার দেখে নিল কোথাও কিছু আছে কি না। কিন্তু তেমন কিছুই পেলো না। ড্রয়ারটা চাবি ছাড়া খোলা যাবে না। তাই বন্ধ করে দিল।
টাকাগুলো পেয়ে মনে একটু সাহস ফিরে এল। এই মুহুর্তে মনের সাহসটাই এক মাত্র হাতিয়ার জীবন যুদ্ধ চালানোর। খালা বুয়াকে ডেকে নিয়ে বসল বাজারের লিস্ট বানাতে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here