#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৮
-‘মিস জিমি সেলিব্রিটি হয়ে আপনার এটিটিউড, ইগো বেড়ে গেছে দেখছি মানুষকে মানুষ বলে মনে করেন না না-কি?’
কাল শপিং শেষ করতে না পারায় আজ আবারও শপিংয়ে এসেছে সবাই। জিমি থাইগ্লাস দেওয়া বড় জানালা দিয়ে মানুষের ডেলি ব্যস্ত জীবন গল্প দেখছিলো। হুট করে চিরচেনা ঝ’গ’রু’টে পুরুষালীর কন্ঠ শুনে একটু চমকালো কিন্তু সেটা সামনের ব্যক্তিটাকে বুঝতে না দিয়ে সামির সোজাসোজি দাড়িয়ে বলল
-‘কেনো আপনার জ্ব*লে?’
সামি ভরকে গিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
-‘মানে? আমার জ্ব*ল*বে কেনো?’
-‘এই যে আমি সেলিব্রিটি হয়ে গেছি বলে আপনার হিং*সা হচ্ছে’
সামি অবাক হয়ে বলল
-‘মানে কি? আমার কেনো হি/ং/সা হবে?’
-‘বলা তো যায় না হতেই পারে। আজ কালর মানুষের বিশ্বাস নাই’
সামি বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে বলল
-‘আপনি আসলেই একটা ডিজগাস্টিং মেয়ে সবসময় আউল ফাউল কথা বলে মেজাজটা চটিয়ে দেন’
-‘হ্যাঁ আর আপনি তো খুব ভালোমানুষ যেচে আমার সাথে সবসময় পায়ে পা লাগিয়ে ঝা/মে/লা বাঁধাতে আসেন’
-‘আমি মোটেও ঝা/মে/লা বাঁধাতে আসি না আপনাকে কোনো কথা বললেই আপনি সেটা ঝ/গ/ড়ার মুডে নিয়ে চলে যায়’
-‘এই শুনেন একদম শাক দিয়ে মাছ ডাকার চেষ্টা করবেন না আপনি সবসময় গা জ্বা/লা/নো কথা বলবে আর আমি কিছু বলবো না-কি?’
-‘আমি কি এমন খারাপ কথা বললাম বলুন তো?’
জিমি সামির মতো মুখো ভংগী করে বলতে শুরু করলো
-‘মিস জিমি সেলিব্রিটি হয়ে আপনার এটিটিউড, ইগো বেড়ে গেছে দেখছি মানুষকে মানুষ বলে মনে করেন না না-কি? হুহ্ নিজের ভাবওয়ালা, ফেরিওয়ালা আবার আমাকে বলতে আসে’
-‘এই আপনি আমাকে কপি করলেন?’
-‘হ্যাঁ করলাম তো কি করবেন? যা করেছি বেশ করেছি! কি ক্ষ*তিটা করেছি বলুন তো আপনার? শুধু শুধু সবসময়টা আমার সাথে কেনো ঝ/গ/ড়া লাগাতে আসেন?’
-‘শুধু শুধু? মোটেও না। কোনো কারণ ছাড়া আপনার সাথে আমার কথা বলতে বয়েই গেছে। আপনি আমার পায়ের ওপর চা’প দিলেন কেনো তখন?’
জিমি এবার নিজের অবাক হওয়াটা আর দমাতে না পেড়ে বলল
-‘আপনার পায়ে কখন কি করলাম? আজব তো?’
-‘হ্যাঁ হ্যাঁ জানি তো এখন এমন একটা ভাব করবেন জেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে পারেন না’
জিমির প্রচন্ড বেগে হাসি পাচ্ছে সামির কথা শুনে কিন্তু মুখ গম্ভীর করে বলল
-‘অসাবধানতায় সামান্য পায়ে পাড়া লাগছে বলে আমি ঝগড়া করতে আসছেন?
জিমির কথায় সামির টনক নড়ে বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলল ‘অসাবধানতায় সামান্য লেগে যেতেই পারে এতে এতো বাড়াবাড়ি করার কি আছে সত্যি তো!’
সামি কথাটা আস্তে বললেও জিমি শুনতে পেয়ে বলল
-‘বাড়াবাড়ি বলে বাড়াবাড়ি যাকে বলে ম’হা’ভ’য়ং’ক’র বাড়াবাড়ি? একে বারে যাচ্ছে তাই অবস্থা।’
সামি নিজের অবস্থান ঠিক রাখার জন্য গলা ঝেড়ে বলল
-‘কেনো আপনার চোখ নাই আপনি কানা না-কি? অসাবধানতা হয় কেমন করে?’
-‘আজব পাবলিক তো মশাই! ওয়ান, টু’র বাচ্চাদের মতো ঝ/গ/ড়া করছেন।’
সামি চুপ নিজেই বুঝতে পারছে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছে। কিন্তু কি করতে আসছিলো ও? চট করে মনে পড়লো মেয়ে’টার মুখে মায়া খুঁজতে হবে। সামি তাকালো জিমির দিকে কি এমন মায়া আছে?
সামি কথা বলছে না দেখে জিমি মজা নেওয়ার জন্য বলল
-‘আচ্ছা আপনি কি শুধুই এই ছোট কারণে আমার সাথে ঝ/গ/ড়া করতে আসছে না-কি আমি সেলিব্রিটি হয়ে গেছি বলে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে?’
কথাটা বলে জিমি হেঁসে উঠলো। সাথে সাথে গেজ দাঁত ওয়ালা রমনীর হাসি দেখে সামনে থাকা ছেলেটির হার্ট বিট বেড়ে গেলো অজানতেই অদ্ভুত অনুভূতির সাথে পরিচয় ঘটলো। সামি ডান হাত দিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিলো। জিমি তখনো হেঁসে যাচ্ছে এতোক্ষণের চেপে রাখা হাসিগুলা সব এখন বেরিয়ে আসছে। জিমির সামির দিকে খেয়াল হতেই হাসি বন্ধ করে কৌতুহলে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
-‘আপনার কি বুকে ব্যথা করছে?’
সামির মুখোভঙ্গি এমন এখনই মঙ্গল গ্রহ থেকে টুপ করে পড়লো সাথে সাথে হাত নামিয়ে গম্ভীর মুখোভঙ্গি করে ‘না’ বলে গটগট করে চলে গেলো। জিমি তখনো সামির যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে। সেও আর কিছু না ভেবে সামির পিছনে পিছনে সবাই যেখানে সেখানে গেলো দেখলো মোটামুটি সবার শপিং কমপ্লিট জিমি আসতেই জিমিকে দেখে জুলি বেগম বলেন
-‘মামনি তুমি তো কিছু নিলে না বলো কি নিবে?’
-‘না আন্টি আমি কিছু নিবো না’
জুলি বেগম জিমির কথা শুনলেন না বেছে বেছে সুন্দর দেখে দুইটা শাড়ি দিলেন একটা কালো আর একটা পিংক কালারে। জিমি বলল
-‘আন্টি আমি শাড়ি-টাড়ি পড়ি না’
-‘পড়ো না তো কি হয়েছে পড়বে। বোনের বিয়ে দিন শাড়ি পড়বে শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগবে দেখো কি পড়বে তো?’
জিমি কিছু বলল না ভদ্রতার খাতিরে হাসি দিয়ে চুপ রইলো। সামি জিমির দিকে আড় চোখে তাকালো।
•
বাসায় এসে সোফায় চুপচাপ নিরবে বসে আছে জিমি মাথা ঝিম ধরে আছে। মাথার মধ্যে শাড়ি পড়ার বিষয় ঘুরছে। জুলি বেগম এমন ভাবে কথাটা বললেন যে জিমি না-ও করতে পারলো না আবার হ্যাঁ-ও বলতে পারলো না। মুখের ওপর না বললে ওনাকে অপমান করা হবে আবার হ্যাঁ বলতেও কোথায় জানি একটা বাঁধছিলো। এমনিতেই কখনো শাড়ি পড়ি নাই এখন থেকেই কেমন আনইজি লাগছে জিমির নিজেকে।
জিমিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিলি চা বানিয়ে এনে বলল
-‘কি-গো বাইকার কুইন আরজে তুই দেখি দুই দিক দিয়ে সেলিব্রিটি তা আপনার কি হয়েছে শুনি এভাবে ভম্বল টাকের মতো বসে আছিস কেনো?’
জিমি চা তে চুমুক দিয়ে বলল
-‘কি আবার হবে? কিছু হয় নি!’
-‘শাড়ি পড়া নিয়ে ভাবছিস? এতো ভাবতে হবে না আর শাড়িও পড়তে হবে না তুই যেটাতে কমফোর্টেবল ফিল করবি সেটাই পড়বি আমি শাশুড়ি আম্মুকে বুঝিয়ে বলবো উনি নিশ্চয়ই বুঝবেন এতোটাও অবুঝ নয় ওনি’
-‘আমি কি একবারও শাড়ি পরবো না একথা বলছি?’
-‘তার মানে তুই শাড়ি পড়বি?’
-‘সেটাই বা কখন বললাম?’
-‘তুই বড্ড শ*য়*তা*ন বুঝলি?’
-‘বুঝালাম কিন্তু এটা বুঝলাম না কোন বিয়ের কোণে এ-তো বকবক করে’
-‘আমি ডিজিটাল কোণে সেজন্য এতো কথা বলছি তোর কি সমস্যা’
-‘না আমার কোনো সমস্যা না কিন্তু তোর বিয়ে হয়ে গেলে আমার শান্তি আহ্ পুরো রুম আমার দখলে’
লিমন এসে বলল
-‘ঠিক আমার ও কত ভালো হবে আর কথায় কথায় কেউ ঝপাং ঝপাং করে মা’র’বে না আহারে আহারে আকাশে বাতাসে কত মজা রেএএএএএএএ’
জিমি দাদি হাতে থাকা লাঠি দিয়ে জিমি আর লিমনকে দুইটা বাড়ি দিলো। ওরা তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে দৌড় লাগালো। ততক্ষণে মিলি ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিসে।
চলবে।
গল্প টা কেমন লাগছে জানাবে। সকলে রেসপন্স করবেন।