#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৯
সূর্য মামা ধীরে ধীরে অর্স্ত যাচ্ছে। দুই বাড়িতে বিয়ের দুম পড়ছে। আজ মিলিদের বাসায় গায়ে হলুদ আর সাংগীত একসাথে হবে। জাকিরাও ওবাসা থেকে আসবে। জিমি সকালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে বিয়ে বাড়িতে কাজের শেষ নাই। আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছে। জিমিদের আত্মীয় স্বজন বলতে জিমির দুই মামা, আর জিমির একমাত্র ছোট চাচা তারা আলাদা থাকে ঠিকি কিন্তু চাচার সাথে ভালো সম্পর্ক না থাকলের চাচির সাথে গলায় গলায় ভাব। কারণটা হচ্ছে জিমির চাচা খুব চালাকচতুর মানুষ আর জিমি চাচি সহজসরল মানুষ ওদের ২টা জমজ ছেলে আছে নাম রাকিব-সাকিব তারা লিমনের সমসয়সী একসাথেই পড়ে। যখন জিমির বাবা মারা যায় তখন তারা একবাসাতেই চট্টগ্রামে থাকতো। জিমির বাবা বেঁচে থাকতে জিমির চাচা ওদের খুব ভালোবাসতো যেই না জিমির বাবা মারা গেলো সেই থেকে জিমির চাচার ব্যবহার ক্রমশ খারাপ হতে লাগলো। বাদ্ধ্য হয়ে চট্টগ্রাম থেকে জিমিরা চলে আসলো ঢাকা শহরের ভাড়া বাড়িতে তখন অবশ্য চাচি অনেক মানা করে ছিলো আসতে কান্না কাটিও করে ছিলো তখন। কিন্তু এতো অপমানের পর আর ওরা ওখানে থাকতে পারে নি ওদের সাথে জিমির দাদি ও চলে আসে। ঢাকা শহরে যখন আসছে সব কিছু নতুন লাগতো। সব কিছু আগুন দাম হাতে চলার মতো টাকাও নাই। তখন জিমির দুই মামা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এখনো অব্দি জিমির মামারা সাহায্য করে যাচ্ছে।
জিমিদের ভাড়া বাড়ির ছাদটা অনেক বড়। মহলের বিয়ে গুলা এই ছাদেই হয়। পুরো এগারো তারা বাড়িটা মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো। গেটটা ফুল দিয়ে সাজানো। জিমি ঘেমে একাকার এতো কাজ করার ফলে প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তার মা’কে এই ভরা বাড়িতে খুঁজে পাচ্ছে না মেজাজটাও বিগড়ে আছে ওর ছোট চাচাকে দেখে চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হয়। এদিকে বরের বাসা থেকেও লোকজন চলে আসছে। জিমি ছাদে এসে মা’কে খুঁজতে লাগলো খোঁজাখুজির মাঝে জিমির সামনে হুট করে সামি এসে বলল
-‘কি বিয়ানসাব কি অবস্থা?’
-‘মেজাজ কিন্তু বিগড়ে আছে ঝ/গ/ড়া করার মুড নাই সামনে থেকে সরেন’
-‘আজব তো ঝ/গ/ড়া করার মতো কি বললাম শুধু শুনলাম কি অবস্থা’
-‘আপনার সাথে কথা বলা মানেই ঝ/গ/ড়া’
সামি জিমির মাথা থেকে পা অব্দি দেখে বলল
-‘আপনি জানেন আপনি মেয়ে?’
জিমির মেজাজ এমনিই খারাপ ছিলো এখন সামির কথা শুনে মেজাজ মঙ্গলগ্রহে চলে গেলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-‘হ্যাঁ আমি জানি মেয়ে আপনাকে ওতো বলতে হবে না’
কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে আসতে নিলেই সামি বলে উঠলো
-‘তাহলে কেনো এমন ড্রেস পড়েন?’
জিমি সামির চোখের দিকে তাকালো চোখে কিছু একটা আছে অদ্ভুত কিছু কিন্তু কি? জিমি গম্ভীর হয়ে বলল
-‘এটা আমার পারসোনাল ম্যাটার’
কথাটা বলে আর দাঁড়ালো না জিমি বড়বড় কদম ফেলে চলে গেলো। সামি তাকিয়ে রইলো জিমির যাওয়ার পানে। রানা এতোক্ষণ জিমি আর সামির ব্যপারটা দেখছিলো সাথে অবাক ও হয়েছে এ মেয়ে এখানে কি করছে? জিমি চলে যেতে রানা সামির পাশে দাঁড়িয়ে বলল
-‘এই মেয়েটা এখানে কেনো? তুই চিনিস ও কে?’
-‘হ্যাঁ ভাইয়ার শালী, মিলি আপুর বোন, আর আমার বিয়ানসাব’
-‘ওএমজি সত্যি?’
-‘হ্যাঁ’
-‘তাহলে কি তুই সেদিন ওকে জানতি জেনেশুনে ঝামেলা বাঁধালি?’
-‘না আগে জানতাম না ক’দিন আগে জানছি’
কিছুক্ষণ নিরবতা চললো নিরবতা ভেংগে রানা বলল
-‘তুই কি মেয়েটার প্রেমে পড়লি না-কি’
সামি থমকালো। চমকালো। বিষ্ময় নিয়ে তাকালো রানার দিকে। বুকের ধুকপুক বেড়ে গেলো। সামি নিজেই অবাক হলো নিজের অস্থিরতা দেখে গলা ঝেড়ে বলল
-‘পাগল তুই? এমন মেয়েকে আমি ভালোবাসবো? ওকে দেখে কোন দিক দিয়ে মেয়ে লাগলে শার্ট প্যান্ট ছাড়া কিছুই পড়তে দেখি না। চুলগুলো দেখছিস একদম ছেলেদের মতো করে কাটা। মেয়ে মানুষ চুল লম্বা হবে, শাড়ি পড়বে সালোয়ার পড়বে সেটাই তো আসলো মেয়ে মানুষ। কেমনে যে আজব আজব প্রশ্ন করিস তুই’
জিমি তখনই ওখান থেকে ক্রস করছিলো সামি রানা কেউই খেয়াল করি নাই। সামি যে কথাগুলো জিমিকে মিন করে বলছে জিমি সেটা বুঝতে পারলো কেননা জিমি ছাড়া এখানে কেউ ছেলেদের মতো চলাফেরা করে না। সামির কথাগুলা জিমির মনে কোথাও কিছু হলো কি? জিমি চলে গেলো।
•
জিমি রুমে গিয়ে দরজা আটকে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাথায় থাকা ফলস্ হেয়ার খুলে নিজের কোমর সমান চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার তাকালো আয়নার দিকে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল
-‘একটা মানুষের দুইরকম রূপ যাকে বহুরূপী বলে ওয়াও। ইশ আমারও সাজতে ইশে করে। চুল ছেড়ে শুভ্র রংয়ের শাড়ি পড়ে জনমানবহীন রাস্তায় হাঁটবো তখন দমকা হাওয়া এসে আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিবে। তখন আমি বিরক্তি নিয়ে চুলগুলা কানের পিছে গুচ্ছে দিয়ে বলবো’তোরা মুক্ত হয়ে বড্ড অবাদ্ধ্য হয়ে গেছিস’ চুল গুলা আবার অবাদ্ধ্য ন্যয় এলোমেলো হয়ে যাবে আমি হেঁসে উঠবো পাগলাটে হাসি সে হাসিতে কোনো কষ্ট থাকবে না থাকবে না কোনো বাঁধা’
জিমি হেসে নিজের মাথায় নিজেই টুয়ো মেরে আবার বলল
-‘ওফফ্ জিমি তোর আবার কি হলো হ্যাঁ এসব কি পাগলামি শুরু করলি হ্যাঁ তুই কি এখনো ছোট? আবেগে ভেসে বেড়াচ্ছিস কেন বলতো? চল এসব বাদ দিয়ে রেডি হয়ে যা’
জিমি হেসে আবার আগে ছন্দবেশি রূপে ফিরে আসলো। আসলো রূপটা গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না জানতে দেয় না জিমি।
ড্রাইংরুমে জিমির চাচাকে দেখে পাত্তা না দিয়ে চলে যেতে নিলে। জিমির চাচা বলে উঠলো
-‘জিমি তোর সাথে আমার কথা আছে’
জিমির পা থেমে গেলো। কঠিন কয়েকটি কথা শোনাতে ইচ্ছে করলো।
-‘আমার সাথে আপনার আবার কি কথা থাকবে পাবে জমির ব্যপারে ওটা নিয়ে চিন্তা করার কারণ নাই ওটা আপনিই নিয়েন আমার বা আমার পরিবারে কারোর ওসবের দিকে কোনো ইন্টারেস্ট নাই’
-‘জিমি শোন তুই ভুল বুঝছিস আমাকে’
-‘ভুল বুঝার কি আছে যেটা সত্যি সেটাই বলছি এছাড়া আপনার সাথে আমার কি-ই বা ইনপটেন কথা থাকতে পারে বলুন তো?’
-‘জিমি তোর সাথে আমার খুব ইনপটেন কথা আছে কিন্তু এখানে বলা যাবে না যখন তখন যে কেউ এসে শুনে ফেলতে পারে আমার সাথে চল আমি তোকে সব বলছি’
চলবে।
নোটঃ রেসপন্স করবেন সবাই। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। আর আপনারা বলেন না প্রতিদিন গল্প দি না কেনো। বোনাস দিতে বলেন আসলে রোজা থেকে লেখার ইন্টারেস্ট পাই।