#এক_কাপ_চা
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৫
(৪৩)
আশেপাশে তাশদীদ কোথাও নেই।সাগরিকা জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইখুমকে ঘেঁষে। মৌসুমি সাগরিকা দিকে এগিয়ে আসতেই হিংস্র চাহনি ফিরিয়ে দিলো ইখুম।যে চাহনিতে স্পষ্ট ছিল ভুলেও সাগরিকাকে যেন স্পর্শ না করে।
নোংরা শেয়ালের খ্যাকখ্যাক গলার হাসির হেসে মৌসুমি বলল,
“বিয়ে তো হবেই ছোটো মামী।আটকাবে কী দিয়ে?তোমার বাবা? তাশদীদ?সে তো ঘন্টা খানেক পূর্বেই বেরিয়ে গেছে বাসর সাজাতে। হায়! তাশদীদ যদি জানতো, কার বাসর সাজাচ্ছে সে।”
একটা বদ্ধ ঘরের এ মাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করছে মৌসুমির বাবা।
তাশদীদের বাবা তার সামনে বসে আছেন৷ সাগরিকার বাবা আসেনি আজ। দুই পরিবারের মোটামুটি সবাই উপস্থিত, শুধু তাশদীদ, তাজবীদ এবং মুনির বাদে। নীরবতা ভেঙে মৌসুমির বাবা বলল,
“তোমার বাপের বাড়ির মেয়ে বৌ পালাতে সাহায্য করেছে।”
উচ্চস্বরে নীলুফার বেগমকে কথাটা বলতেই রাশেদ এগিয়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনি প্রমাণ দিতে পারবেন?আর ভুলেও আমার সামনে আমার বোনের গায়ে হাত তুলবেন না।”
“মৌসুমি বলেছে।আমরা যেতে না দিলে মেয়ে নিয়ে ফিরতে পারবে?”
“মৌসুমির কথা আপনি বিশ্বাস করতে পারেন আমি না।”
“আশ্চর্য রাশেদ!নিজের ঘর আগে সামলাও নিজেই তো!”
“আমি যা ইচ্ছা তাই। আমার ঘরের প্রতিটা মেয়েই আমাদের কাছে সম্পদ। এক বোন জোড় করে নিয়েছেন। তখন ছোটো ছিলাম আজ না আমরা ছোট, না ভীতু।আজ দেশে আইন বলেও কিছু আছে।”
“আইন?হাসালে। কার নাম্বার নিবে?বলো আমিই কল ধরিয়ে দিচ্ছি।”
“আচ্ছা তবে বেশ। আমি না হয় আইনি সহায়তাই নিবো এখান থেকে বের হতে।”
রাশেদ ফোন হাতে নিতেই মৌসুমি বুঝতে পারলো পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তাই সে দ্রুত সামাল দিতে বলল,
“ছোটো মামা।আমি ওভাবে বলিনি।বৌ পাওয়া যাচ্ছে না আর ওরা ওই ঘরে ছিল তাই ভেবেছিলাম।”
“তোমার ভাবা তে কিছু যায় আসে না। তুমি এভাবে কাউকে এলিগেশন দিতে পারো না।”
মৌসুমির বাবা মেয়ের কথায় কিছুটা নিভলেন।এরপর তার স্ত্রীর পাশে বসে বললেন,
“সাগরিকার সাথে মুনিরের বিয়ে ছাড়া আমি কোনো উপায় দেখছি না।কারণ বৌ ছাড়া আমি বাড়ি যেতে পারবো না।আমার মান- সম্মানের দিকটা এখন তোমার হাতে নীলুফার। তোমার ছেলের অপমান তোমার ভাতিজীর সাথে বিয়ে দিয়েই আটকানো সম্ভব। না হলে প্রেস, মিডিয়া এদের সামনে তোমার নাজুক ছেলে টিকতে পারবে না।মানুষের সমালোচনা ও নিতে পারবে না।তুমি তোমার ভাইকে বুঝাও।”
নীলুফার বেগম জবাব দেওয়ার পূর্বেই তাশদীদের বাবা জবাব দিলেন,
“আমরা রাজি নই।আমার মেয়ের সারা জীবনের সুখের সওদা আমি করতে পারবো না।এটা কোনো পণ্য না যে পছন্দ হলো না আর বদলে ফেললাম।তাছাড়া সাগরিকার বাবা এখানে নেই। ”
“বড় মামা আপনার সিদ্ধান্তের উপরে কেউ সিদ্ধান্ত নিবে না তাছাড়া নান্নানকে কল দিয়ে তার অনুমতি নিলেই হয়।”
নীলুফার বেগম মুখ তুলে ভাইয়ের দিকে তাকালেন।সে মনে প্রাণে চাইছেন যেন তার মায়ের সাথে যোগাযোগ না করা হয়। কারণ তার মা বিয়েতে মত দিয়ে দিবেন এটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।কিন্তু সে চায় না সাগরিকা তার মতোন নরক যন্ত্রণা ভোগ করে পুরো জীবন পোড়া লাশের মতোন কাটিয়ে দিক।যার না থাকবে কোনো ইচ্ছে না সম্মান৷ যা থাকবে শুধুই মাংস্পিন্ড।
(৪৪)
তাশদীদ ফিরতে আরো ঘন্টা খানিক সময় লেগেছে। কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গাড়ি রেখে দৌড়ে ভিতরে প্রবেশ করলো সে। তুলি তাকে ম্যাসেজ দিয়েছিল সব’টা বলে। ফিরে এসেই দৌড়ে রুমে প্রবেশ করলো সে। ফুপিয়ে কাঁদতে থাকা
সাগরিকা মুখ তুলে তাশদীদকে দেখেই জোড়ে কান্না করে ফেলেছে।
তাশদীদ কোনো কথা না বলে মৌসুমির বাবার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনার সমস্যা আপনাদের পরিবারের সমস্যা আপনারা ম্যানেজ করুন। ভুলেও আমার পরিবারের দিকে তাকাবেন না।”
সাগরিকার কাছে এগিয়ে যেতেই ইখুমের হাত ছেড়ে সাগরিকা তাশদীদের বুকের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিলো।দুহাতে তাকে আঁকড়ে ধরেছে। এতটা শক্ত করে ধরেছিল যে তাশদীদের পিঠে তার নখ ডেবে যাচ্ছে। তাশদীদ সাগরিকার পিঠে আলতোভাবে হাত রেখে বলল,
“ভয় পেয়েছিস?”
মাথা দুলিয়ে সাগরিকা সায় দিতেই মৌসুমি বলল,
“কিন্তু নান্নান মানে তোমার দাদু বিয়ের অনুমতি দিয়েছে।”
তাশদীদ ফিরে আসার পর সাগরিকা নিজেকে সামলে নিয়েছে। তার বুকেই মাথা রেখে কাঠকাঠ গলায় সে জবাব দিলো,
“যাও না যাও। তোমার নান্নানকে এনেই বিয়ে দিয়ে দাও। খাইস্টা বুড়ি। কবরে এক পা আছে তবুও বুড়ির কুটচাল কমেনি।যাও তো যাও।”
তাশদীদ মুচকি হেসে সাগরিকাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কমিউনিটি সেন্টার থেকে।গাড়িতে বসিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো সেখান থেকে।অন্ধকার ভেদ করে তাদের গাড়ি শা শা শব্দে এগিয়ে চলেছে অজানা গন্তব্যে।
কিছু দূর যাওয়ার পর অন্ধকারে গাড়ি থেমে গেল।সাগরিকা তখন প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সে অনুভব করলো এক পশলা বৃষ্টির মতোন তার চোখ মুখে এসে ঝাপটা দিচ্ছে কারো অধরের স্পর্শ।
উষ্ণ পুরুষালী পেশিতে নিজেকে আবদ্ধ হওয়ার অনুভূতিতে দৃঢ় হাতে খামছে ধরলো নিজের হাত।
(৪৫)
রাশেদ যখন ইখুমকে নিয়ে ফিরছিল তখন সামিনা বলল,
“আমি কাদের সাথে যাবো?”
“আপনি বড় ভাবীদের সাথে যাবেন।”
“ওদের সাথে?তোমাদের গাড়িতে?”
“ইখুমকে নিয়ে আমি আলাদা যাবো।”
“কেন?”
“স্বামী স্ত্রীর কিছুটা ব্যক্তিগত জীবনে রয়েছে।”
রাশেদের এহেন কথায় মুখ চুপসে গেল সামিনার। সে কোনো জবাব দেয়নি। অথচ রাশেদ তখনো জানতো না সামিনা তাদের জন্য কতটা জঘন্য প্ল্যান করেছে।
ক্ষত বিক্ষত সিংহী যখন নিজ সন্তানের জন্য যা যা করা প্রয়োজন সে করবে।
ইখুম পুরো রাস্তা কোনো কথা বলেনি।মাঝে শুধু তাশদীদের সাথে ফোনে একবার কথা বলেছিল।
রাশেদের দেওয়া আঘাতের চিহ্ন এখনো তার শরীরে। মাফ করা এতটা সহজ নয় কিন্তু তাকে ছেড়ে দিয়েও সামিনা কিংবা শাশুড়িকে শান্তির ঘুম ঘুমাতে দিতে পারে না সে।
কিন্তু সামিনা?তাকে নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তার মাথায় চলছে।
রাত-বিরেতে সামিনার ঘরে কেন যেত রাশেদ?
আগে কেন এসব তাকে জানায় নি?আর নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য কেন রাজী হয়েছিল সে?
এসব প্রশ্নে অস্থির ইখুমের কিছুই ভালো লাগছে।গাড়ি কোন দিকের রাস্তা ধরেছে খেয়াল করেনি ইখুম।গাড়ি থামাতে খেয়াল হলো তারা বাসার সামনে চলে এসেছে।
গাড়ি থেকে নেমে রাশেদ নিজের ফোন ইখুমের হাতে দিয়ে তাকে বলল,
“ভিতরে যাও। আমি গাড়ি পার্ক করব।”
ইখুম কোনো জবাব না দিয়ে চলে গেল।দরজার সামনে আসতেই টুং করে শব্দ হলো রাশেদের ফোনে। ম্যাসেজ এসেছে। ফোনের লক ছাড়িয়ে ইখুম দেখতে পেল সামিনার ম্যাসেজ।
“আমি জানতাম তুমি ঠান্ডা মাথায় সব করবে।তবে ইখুমকে সরানোর জন্য সবার সামনে আমাকে এতটা কষ্ট না দিলেও হতো।যাইহোক প্ল্যান মতোন সিড়িতে তেল ফেলা হয়েছে। বাড়িতে আর কেউ নেই।ইখুমকে পাঠিয়ে দিয়ো।ও না ওর পেটের বাচ্চা কেউ আর বাড়ির ভিতর আসতে পারবে না।কারণ সিড়িতে পা দিতেই ও হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবে।ঠান্ডা মাথায় করা আমাদের প্ল্যান ইখুমকে সরিয়ে দিবে।”
সব’টা বুঝতে পেরেও কিছু করার রইল না ইখুমের কারণ ততক্ষণে তার হাত থেকে ফোন পড়ে গিয়েছে। সিড়িতে থাকা তেলে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিলো সে। দুই হাত দিয়ে নিজের তলপেট ধরেও শেষ রক্ষা হলো কী?
চলবে (এডিট ছাড়া পর্ব)
#ছবিয়ালঃভিটামিনটি
#এক_কাপ_চা পর্ব ১৬
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৪৬)
সকালের প্রথম আলো এসে জানালার কাঁচ ভেদ করে পড়েছে সাগরিকার মুখে। গাড়ি চলছে না। তার গায়ে জড়ানো তাশদীদ এর জ্যাকেট। মুখ উঁচু করে দেখতে পেল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে তাদের গাড়ি। সিট বেল খুলে নিচে নামতেই দেখতে পেল তাশদীদ দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ের একদম কিনারা ঘেঁষে। শীত কালে নদী প্রায় নিজের যৌবন হারাতে বসেছে। পায়ের উঁচু হিল গুলো নদীর পাড়ের বালিতে ডেবে যাচ্ছে। কিছুটা হেটে তাশদীদের পাশে দাঁড়াতেই তাকে বা হাতে আকড়ে ধরেছে তাশদীদ।সাগরিকা তাশদীদের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখতে পেল সে তাকিয়ে আছে নদীর পানির দিকে।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে সাগরিকা বলল,
“আমরা রাতে ফিরিনি?”
“না।”
“পুরো রাত গাড়িতে ঘুমিয়েছি?আশ্চর্য!”
“আয় আমার সাথে।”
নদীর পাড় পেরিয়ে তারা ধীরে ধীরে হাঁটছে পাকা রাস্তার দিকে। রাস্তা কিছুটা সিক্ত।তাশদীদ সাগরিকাকে বলল জুতো খুলে ফেলতে। হিল পায়ে সে হাটতে পারছে না। জুতো খুলতেই তাশদীদ সাগরিকার জুতো হাতে নিচ্ছিলো কিন্তু সাগরিকা না করলো।কারণ আর যাই হোক তার জুতো তাশদীদ নিয়ে হাঁটবে এমন হতে পারে না।
“গাড়িতে রেখে আসি?”
“অনেক দূর এসে পড়েছি।তাছাড়া বাক ঘুরেই গাড়িতে যাবো।”
“কোথায় যাচ্ছি?”
“দেখা যাক।”
চারপাশে নানান ধরনের ফুলের গাছ।মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে পাইন গাছ। পাম ওয়েল গাছ গুলো দেখতে দৈত্যের মতোন।কিন্তু সামনে থাকা শিউলি ফুলের গাছ গুলো যেন নিজ থেকে উপহার দিচ্ছে শুভ্র সাদা রঙের গালিচা।খালি পায়ে হাঁটতে ভালো লাগছিল। বিশেষ করে ঘাসের ডগায় লেগে থাকা শিশিরের কারণে।
তাশদীদ চুপচাপ হেটে যাচ্ছিলো পাশাপাশি। হুট করে সাগরিকা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমায় মেরে ফেলতে এনেছেন?এত যত্ন কেন করছেন?”
দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাশদীদ জবাব দিলো,
“হ্যাঁ,মেরে বালি চাপা দিয়ে দিবো।”
ভয়ে চুপসে গেল সাগরিকা।তাশদীদ কিছুটা পথ এগিয়ে গিয়ে দেখলো সাগরিকা সাথে নেই।পিছনে ফিরে তার কাছাকাছি গিয়ে ডান হাত ধরে সাগরিকাকে কাছে নিয়ে এলো।কপালে উষ্ণ আর্দ্র অধরের স্পর্শে শিউরে উঠেছে সাগরিকা।বা হাতে খামছে ধরেছে তাশদীদের পিঠের দিকের শার্ট।
তার দিকে তাকিয়ে তাশদীদ বলল,
“ছোট্ট একটা হাওয়া কী নদীর গতিপথ পাল্টে দিতে পারে?তুই তো আমার ভিতরে বইতে থাকা এক ধ্বংসাত্নক নদী।তার অস্তিত্ব ফিরিয়ে দিবো কী করে?
(৪৭)
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গার পর তাজবীদ তার মায়ের কাছে চায়ের কথা বলেছে। সকালের ওয়ার্ক
আউট করে ফিরে এসে নিজ ঘরে বসতেই তুলি তার জন্য চা নিয়ে এলো।সম্পর্কে তুলি তার ছোটো ফুপুর মেয়ে।ফুপা কৃষি কাজ করে।তাদের অনেক সহায় সম্পত্তি কিন্তু তার পেটে বিদ্যে খুব কম। কিন্তু তুলির বড়ভাই এপ্লাইড ফিজিক্স নিয়ে লেখাপড়া করছে দেশের বাহিরে। যেহেতু তুলির বাবা-মা গ্রামে থাকে তাই সেখানে তার লেখাপড়ার তেমন কোন একটা সুব্যবস্থা নেই এজন্যই সে তাশদীদের বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করছে।
কিন্তু সকাল সকাল সাগরিকার বদলে তুলির হাতে চাঁদ দেখে তাজবীদ কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু তার বিরক্তি চোখ মুখ প্রকাশ করলেও মুখে কিছু বলল না।
একটু রুক্ষ কন্ঠে সেতুলী কে জিজ্ঞেস করল
“সাগরিকা কোথায়? তুই কেন জানি এসেছে।”
“সাগরিকা আপু বাসায় নেই?”
“কোথায় গেছে?”
” গতকাল রাতে আপু কিংবা ভাইয়া দুজনের একজনও বাসায় ফেরেনি।”
“ভাইয়া সাগরিকাকে নিয়ে রাতে ফিরেনি?”
মুহূর্তের মধ্যেই চোখ মুখ কাঠকাঠ হয়ে এলো তাজবীদের। সে আর যাই হোক নিজের ভাইয়ের থেকে এমন আশা করেনি। দ্রুত কাপড় বদলে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। আপাতত সে জানে না কোথায় যাচ্ছে শুধু জানে তাকে সাগরিকাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। কোনো বিপদ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই।
(৪৮)
ইখুম ঘুমে বিভোর। তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশেদ। ইখুমের হাতে গতকাল তার নখের আঁচড় লেগেছে।চুড়িতেও খানিকটা কেটেছে। কিন্তু এসবের কারণেই কাল বড় দূর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে পার পেয়েছে।
কাল রাশেদ গাড়ি পার্ক করতে যাবে তখন সিকিউরিটি গার্ড বলেছিল সে করে দিবে।তাই রাশেদ চলে এসেছিল ইখুমের পিছন পিছন।কাছাকাছি আসতেই দেখতে পেল ইখুম পড়ে যাচ্ছিলো।বেঁচে থাকার জন্য ভরা নদীতে এক টুকরো কাঠের মতোন আগলে ধরেছিল রাশেদ তাকে।কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সে ইখুমকে নিজের দিকে টেনে নিতে পেরেছিল।
ঘরে ফিরে ইখুম রাশেদকে ফোনের ম্যাসেজ দেখিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফোন হাতে নিয়ে বিহ্বল হয়ে বসেছিল রাশেদ। বিশ্বাস করা না করা সম্পূর্ণ এখন ইখুমের উপর। কারণ সে নির্দোষ এমন কোনো কথা সে বলবে না।কিন্তু ইখুম ফিরে আসার পর তাকে সে জিজ্ঞেস করেছিল,
“কিছু জানার নেই তোমার?”
“কোন সম্পর্কে? ”
“ম্যাসেজ।”
“না।”
“বিশ্বাস করেছো এসব?”
“পরের ব্যাপার। সত্যি হলেও কিছু যায় আসে কী?”
“এতটা খারাপ আমি?”
“নিজের সন্তান কে খুন করতে চেয়েছিলেন।”
“আমি নিরুপায়।ছেড়ে যাবে আমায়?”
“জানি না।”
“সোজাসাপ্টা জবাব দাও। বিশ্বাস করেছো ম্যাসেজ?”
“না।”
ইখুমের কথায় মুখে হাসির দ্যুতি খেলে যায়
রাশেদের।মৃদু হেসে সে উঠে এসে ইখুমের পাশে বসে বলে,
“ভালোবাসো আমায়?”
ইখুম কাঠকাঠ গলায় বলল
“আমি আপনাকে মাপ করতে পারবো না।আমার কাছে আপনি অন্তত কোনো দাবী আপাতত রাখবেন না।আপনি পাপ করেছেন যত দিন অবধি আপনার পাপের প্রায়শ্চিত্ত নিয়ে আমি সন্তুষ্ট না হবো তত দিন আমাদের সংসার জীবন হবে মাক্কাল ফলের মতোন।বাহিরে খুব সুন্দর ভিতরের খবর কেউ জানবে না।এটাই আপনার শাস্তি।”
ইখুম তখনো ঘুমে রাশেদ গতকালের কথা ভাবছিল। হঠাৎ দরজায় শব্দ হয়। সাগরিকার মা এসে রাশেদ কে বলল,
“আম্মা স্ট্রোক রাশেদ। তাকে হাসপাতালে নিচ্ছে। সে হাসপাতালে যাবে না। সে বার বার করে বলছে তুই যদি সামিনাকে বিয়ে না করিস সে হাসপাতালে যাবে না। এখন কী হবে?”
রাশেদ একবার ঘুমন্ত ইখুমের দিকে তাকালো এরপর ফ্লোরের দিকে।তার দুচোখে জমেছে পানি।পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই।সত্যি কি তাদের অনুভূতি থাকতে নেই?
চলবে(এডিট ছাড়া পর্ব)
আজ একটু কম।এজন্য দুঃখিত।
#ছবিয়ালঃ ইস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া