#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১০
রাত গভীরতা বাড়ছে ততই যেনো সবাই ক্লান্তিতে নিঃতেজ হয়ে পড়ছে। জমজমাট পরিবেশ স্টেজে নাচছে বর-কণে সাথে মিলি আর জাকির কাজিন সার্কেল। জিমি তার চাচার সাথে যায় নি। জিমি দূর থেকে বোনের হাস্যউজ্জ্বল মুখটা দেখছে। কাল বোন চলে যাবে ভাবলেই বুকের ভিতর ভিষন কষ্ট। দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্তগুলা চোখের সামনে ভেসে উঠছে মনে মনে বলল ‘তোকে ছাড়া কেমন করে থাকবো রে আপু খুব যে কষ্ট হচ্ছে’
কাঁধে কারোর স্পর্শ পেতেই চমকালো জিমি। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু গুলো অতি সাবধানে লুকিয়ে মুছে হাসি মুখে পিছনে ঘুরে নিজের মা’কে দেখতে পেয়ে বলল
-‘আম্মু তুমি। খাইছো তুমি, দাদি, লিমন?’
-‘তুই খাইছিস?’
জিমি চুপ করে থেকে বলে উঠলো
-‘হ্যাঁ খেয়েছি খুব খুদা লাগছিলো তাই খেয়ে নিয়েছি’
-‘তাই না-কি এখন মিথ্যা বলাও শিখে গেছিস দেখছি’
জিমির মুখ ছোট করে বলল
-‘সরি আম্মু আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না’
-‘এমন করলে হবে? না খেয়ে খেয়ে কি অবস্থা করছিস নিজের দেখেছিস একবার আয়নায়?’
জিমি লিলিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল
-‘উফফ ওতো আয়নায় দেখতে পারতেছি না আম্মু তোমার মেয়ে কত হাসিখুশি দেখো ও বিয়ের পর খুব সুখি হবে। ওকে আর এই গরিবের ঘরে কষ্ট করে থাকতে হবে না একটু শান্তি পাবে এতোদিন তো গাধারখাটুনি খাটলো আমাদের জন্য এবার নাহয় পৃথিবীর সমস্ত সুখী ব্যক্তিটি আমার বোন হোক’
-‘হ্যাঁ ওদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো আমার মেয়েটা সুখি হলেই আমি খুশি তারপর তোকে একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিনত’
জিমি চুপ রইলো যতই মাকে বলুক বিয়ে করবে না। মায়েরা চিন্তা থামাবে না মা’রা চাই তার মেয়ের বিয়ে করে সুখি হোক ভালো স্বামী পাক নিজের হাতে জামাই দের ভালো ভালো রান্না করে খাওয়াবে। মেয়েদের ছেলেমেয়েদের কোলে নিবে কত ইচ্ছে তাদের।
জিমি নিজের মনেই ভাবে মায়ের ইচ্ছে সে কখনোই পূরণ করতে পারবে না ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর পরিবারকে কে দেখবে। শশুর বাড়ির থেকে যে চাকরি করে পরিবারকে দিবে তারা যদি না মানে আর মানবেই বা কেনো এই যুগে কেই-বা চাই বাড়ির বউ বাপের বাড়ির জন্য চাকরি করে টাকা পাঠাবে।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত ২টা বেজে গেলো। বরপক্ষরা সবাই চলে গেছে। সামি তারপর আর জিমির সাথে কথা বলে নি। বলতে গেলে জিমিই সুযোগ দেয় নি। ঘুমাতে ঘুমাতে তিনটা বেজে গেলো।
জিমির সারারাত ঘুম হলো না। আজান দেওয়ার সাথে সাথে উঠে গেলো নামাজ পড়ে বাইরে চলে আসলো এখনো সবাই ঘুমাচ্ছে। জিমির মা-ও তার কিছুক্ষণ পরে উঠলো। উঠে দেখলো জিমি চা বানিয়ে খাচ্ছে। জিমির চোখ মুখ দেখেই তিনি চট করে ধরে ফেললেন এই মেয়ে সারারাত দু’চোখের পাতা এক করে নি। জিমি লিলিকে দেখে বলল
-‘আম্মু চা দিবো এখনো গরম আছে পাতিলে’
-‘না থাক তোর দিতে হবে না আমি নিচ্ছি সারারাত না ঘুমিয়ে যে তুই অসুস্থ হয়ে যাবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে’
জিমি কিছু বলল না চা-টা শেষ করে বাইরের দিকে গেলো। আজ মিলির বিয়ে কাজ অনেক। শুয়ে বসে কাটালে চলবে কি করে?
ধীরে ধীরে সকলে ঘুম থেকে উঠে গেলো মিলি কে ডাকতে নিলে জিমি বারণ করে বলল
-‘আপুকে ডেকো না এখন ওঘুমাক রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছে তার ওপর আজ আবার ওর ওপরে অনেক ধকল যাবে পার্লারের মেয়েরা আশার আগে আমি ওকে ডেকে দিবো এখন আর আপুকে ডেকো না কেউ’
জিমি কথা মেনে নিলো সবাই। কাজগুছাতে গুছাতে হাত ঘড়িতে সময় দেখলো জিমি ১০:২৩ বাজে ১১ টার দিকে পার্লারের মেয়েরা আসবে জিমি দৌড়ে রুমে এসে মিলিকে ডাকতে লাগলো
-‘এই আপু, আপু ওঠ আর কত ঘুমাবি? আজ না তোর বিয়ে’
মিলি নড়েচড়ে আরাম আয়েস করে শুয়ে ঘুমু কন্ঠে বলল
-‘যা তো ঘুমাতে দে ডিস্টার্ব করিস না’
জিমি মিলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দুষ্টুমি করে বলল
-‘বরপক্ষের সকলে চলে এসেছে কণে ঘুমাচ্ছে দেখে তারা চলে যাবার জন্য গাড়িতে উঠছে’
জিমির কথাটা কানে যেতেই মিলি ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে বলল
-‘কই? কই?’
জিমি হেসে উঠে বলল
-‘বেশ হয়েছে’
মিলি রেগে জিমির কান মুলে দিলো।
-‘আহ! আপু! দেখ ১০:৩০ বেজে গেছে ১১ টাই পার্লারের লোক আসবে যা গোসল করে নে’
-‘ওমা সে-কি আমাকে এতো দেরি করে ডাকলি কেনো?’
-‘ইশশ আইছে। এখন ডাকছিলাম তাই উঠছিলি না আর আগে ডাকলে খুব উঠতিস?’
মিলি কথা না বাড়িয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।
★
বরপক্ষ চলে এসেছে অনেকক্ষণ হলো। জাকি আর মিলিকে এক জায়গায় বসালো হয়েছে। কাজী বারবার মিলিকে ‘কবুল’ বলতে বলছে। মিলির এই তিন অক্ষরের আজ খুব কঠিন লাগছে। চোখ ছলছল করে উঠেছে। ঝাপসা চোখে এলোমেলো দৃষ্টি দিয়ে মা আর বোনকে খুঁজে কিন্তু কই তারা?
মিলির মনে ভয় জমছে খুব কষ্ট হচ্ছে হাত-পা কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে।
হঠাৎ কোথা থেকে জিমি এসে মিলির পাশে দাঁড়িয়ে বলল
-‘কি রে আপু তারাতাড়ি বলে দে’
মিলি চোখ তুলে জিমির দিকে তাকালো জিমির লাল চোখ দেখে বুঝতে পারলো জিমি কেঁদেছে। জিমি হাঁটু গেড়ে বসে চোখ দিয়ে ইশারাই বলতে বলল
মিলি কান্না পাচ্ছে। কঠিন শব্দটি বলে মিলি জিমিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। জিমি কাঁদছে না চোখ ক্রমশ লাল হয়ে উঠছে। জিমি মিলিকে বুঝিয়ে কান্না থামালো। সামি জিমির দিকে তাকিয়ে ছিলো সামি আজ একটি বারের জন্য কথা বলি নি জিমির সাথে।
•
বিদায়ের সময় মিলি কাঁদছ কান্না যেনো আজ বাঁধা মানছে না। মিলির বিদায়ের সময় জিমি উধাও জিমিকে কেউ খুঁজে পেলো না। জিমির মা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা। লিমন বাচ্চাদের মতো মিলিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললছে ‘আপুকে কোথাও যেতে দিবো না আপু এখানেই থাকবে’
মিলির দাদিও কাঁদছে একটুতেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাই ওনাকে ধরে সবাই বাসার ভিতরে নিয়ে গেছে।
মিলির মামারা সবসামলে নিয়ে মিলিকে গাড়িতে তুলে দিলো।
_____________________________
জিমি নদীর পাড়ে বসে আছে। আশে-পাশে জনমানবের চিহ্ন টুকু দেখা মিলছে না। জিমির চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বেয়ে চলছে। জিমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আব্বু বলে জোরে চিৎকার দিয়ে হাওমাও করে কেঁদে উঠলো। ফাঁকা জায়গায় কথাটা বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।
-‘আব্বু আপুকে ছাড়া কিভাবে থাকবো৷ আব্বু ও আব্বু আমাকে আপুর মতো শাসন, আদর, বকবে কে? কাকে রাগাবো? কিভাবে থাকবো গো?
চলবে