#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১১
চারিদিকে আত্মীয় স্বজনে ভরপুর মিলি তার পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছে কখন দেখা হবে ভেবে প্রহর গুনছে। ধীরে ধীরে কাৎক্ষীত সময় এসে গেলো। জিমিকে দেখে মিলি সহ সামি, জাকি, জুলি, শহিদ খান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কেননা জুলি দেওয়া পিংক শাড়িটা জিমি পড়েছে। হলদেটে মুখে কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই এ যেনো এক মায়াবীকন্যা যার মুখের অন্যন্ত মায়া ডুবে থাকা যায় শত সহস্র বছর। মিলির সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিমি গেজ দাঁতের হাসি দিয়ে বলল
-‘মিসেস. মিলি বলেন তো আমাকে কেমন লাগছে?’
মিলি খুশিতে জিমিকে জড়িয়ে ধরে দু-হাতে মুখ ধরে বলল
-‘খুব সুন্দর লাগছে আমার বোনটাকে তোকে যে কখনো এমন ভাবে দেখবো কখনো ভাবি নাই’
-‘এটাই তো ম্যাজিক তোরা যেটা ভাববি তার উল্টোটাই আমি করবো বুঝলি এটাই ম্যাজিক্যাল ওফ সাইন্স’
মিলি ওর মা, ভাই, দাদি, মামা, মামি, চাচা, চাচি সকলের সাথে কুশল বিনিময় করলো। সামির মা জুলি বেগমকে হা করে জিমির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিমি মুখ টিপে হেসে বলল
-‘কি গো আন্টি বললে না তো আমাকে কেমন লাগছে? এস্পেশালি তোমার থুক্কু আপনার কথায় শাড়ি পড়লাম আর আপনি রেটিং দিলেন না?’
জুলি বেগম অবাকের রেশ কাটিয়ে হেসে বলল
-‘তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে মামনি। আর তুমিটাই তো ঠিক ছিলো আবার আপনি কেনো? হ্যাঁ শুনি?’
জিমি দাঁত কেলিয়ে বলল
-‘ওটা তো টকিং মিস্টেক আন্টি যাই হোক তুমি হয়েছে’
জুলি জিমির মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
-‘হ্যাঁ পুরা রাজকন্যাদের মতো লাগছে এতো মায়া তোর মুখে’
-‘ওফ্ফ আন্টি কি যে বলো না কোথায় রাজকন্যা আর কোথায় আমি। পামটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না’
-‘জানি তো সত্যি কথা বললে সবাই পাম লাগবে একটু আগেই না শুনলি কেমন লাগছে আর যে-ই না আমি প্রসংশা করলাম ওমনি পাম হয়ে গেলো?’
-‘আরে আন্টি চোটছো কেনো বুঝোনা আমার ও লজ্জা লাগে’
জিমির কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো।
•
ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল অবস্থা। একজায়গায় চুপ করে দাড়িয়ে আছে বন্ধুগুলা সাথে আনছিলো তারা এখন কব্জি ডুবিয়ে মনপ্রাণ উজাড় করে দিয়ে খাচ্ছে। জিমি অস্থিতে হাঁশপাস করছে। একেতে শাড়ি পড়া অভাস না তার ওপরে আবার গরম হুট করে সামি জিমির সামনে এসে শরবতের গ্লাস ধরলো মুখে বলল
-‘খান ভালো লাগবে’
জিমি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো সামি ইশারায় জিজ্ঞেসা করলো ‘কি’?
-‘আপনাকে না আমার সুবিধার লাগে না’
সামি ভ্রু কুচকে বলল
-‘কেনো? সুবিধার না লাগার কি আছে?’
-‘এই যে শরবত দিচ্ছেন এতে কিছু মিশান নি তো?’
সামি যেনো আকাশ থেকে টপ করে পড়লো এমন মুখ ভঙ্গি করে বলল
-‘মানে? আমাকে আপনার এমন মনে হয়?’
-‘মনে না হওয়ার কি আছে। আপনি যে ভাবে সবসময় আমার সাথে ঝ*গ*ড়া করতে আছেন আমার মনে হয় আপনি আমাকে দু-চোখ সহ্য করতে পারেন আমাকে জাতশ*ত্রু ভাবেন তাই ডাউট ডাউট লাগতেছে’
-‘আমি কি শুধু আপনার সাথে ঝ*গ*ড়াই করি?’
-‘হ্যাঁ নিজেই একটু ভেবে দেখুন তো’
-‘হ্যাঁ আর আপনি তো ধোঁয়া তুলশী পাতা’
-‘সেটা কখন বললাম আমার সাথে যে যেমন বিহেভিয়ার করে আমি তাকে রিটার্ন ফেরত দি আমার তো আবার দয়ার শরীর ঋণ বাকি রাখি না’
-‘হাহ্ আইছে দয়ার শরীর বললেই পারেন আমি শরবত আনছি বলে আপনি খাবেন না এতো প্যাচান কেন?’
-‘কখন বললাম খাবো না দিন খাই। যদি কিছু মিশানো থাকে তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে সেটা ডাবল ভাবে রিটার্ন ফেরত দিবো মাইট ইট’
সামির হাত থেকে শরবত নিয়ে খেতে শুরু করলো। সামি রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
-‘আপনি আমাকে থ্রে*ট দিলেন নাকি?’
জিমি খেতে খেতে বলল
-‘সেরকম কিছুই’
সামি সবসময় এই মেয়ে ওপরে প্রচন্ড রকমের অবাক হয়। যা বললার একে বারে ডিরেক্টর বলে দেয় কোনো লুকোচুরি থাকে না। এখন-ও ঠিক এমনটাই হলো। সামি চোখ মুখ শীতল হয়ে এলো শান্ত কন্ঠে বলল
-‘আপনাকে কিন্তু আজ সুন্দর লাগছে’
-‘থ্যাংকিউ বাট আপনার কাছ থেকে এডভাইস চাই নি’
সামি ভ্রু কুচকে বলল
-‘সবসময় ঘাড় ত্যাড়ামো করেন কেন? একটু ভালোভাবে কথা বলা যায় না?’
জিমি শরবতের গ্লাসটা সামির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
-‘আজ্ঞে জী না আপনার সাথে আমার ভালো করে কথা বলার সম্পর্ক না যে আপনার সাথে ভালো করে কথা বলবো আর আমার ইচ্ছেও নাই আপনার মতো ষাঁড়ের সাথে ভালো ভাবে কথা বলার যে না বুঝেই চিল্লাই’
কথাটা বলে জিমি আর দাঁড়ালো না বোনের কাছে চলে গেলো। সামি তখন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিড়বিড়িয়ে বলল
-‘আমাকে ষাঁড়ের সাথে তুলনা করে আবার অপমান করে চলে গেলো?’
সামি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জিমির দিকে জিমি সেটা পাত্তা দিলো। সামি রাগে গজগজ করতে করতে অন্য দিকে চলে গেলো। জিমি মিলিকে বলল
-‘তুই আর ভাইয়া আমাদের সাথে যাবি তো?’
-‘হ্যাঁ তার আগে এটা বল তুই কাল কোথায় হওয়া হয়ে গেছিলি?’
-‘আরে একটা কাজ পড়ে গেছিলো তাই আর থাকতে পারি নাই চলে গেছিলাম বাসায় এসে শুনি তুই চলে গেছিস’
মিলি চোখ ছোট ছোট করে বলল
-‘আমাকে বোকা ভাবিস? কিছু বুঝি না মনে করিস?’
-‘সেটা কখন ভাবলাম আর বললাম? তুই তো নিজেই বললি’
-‘তুই তোর হাবভাবে বুঝিয়ে দিস তুই একাই ট্যালেন্টেড গার্ল আর বাকি সবাই গাধা’
তখনি সামি এখান থেকে যাচ্ছিল কথাটা শুনে বলল
-‘আসলেই ভাবি তোমার বোন নিজেকে কি না কি মনে করে আর বাকি সবাইকে গাধা মনে করে আসলে ব্যাপারটা যে উল্টো সেটা সে জানে না ভালো করে জানিয়ে দিও তো’
সামি কথাটা বলে হেলতে দুলতে চলে গেলো জিমি তখনও সামির যাওয়ার পানে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিলি অবাক হয়ে বসে আছে সে বেশ বুঝতে পারছে বোন আর দেবরের মাঝে কমপিটিশন চলছে। দুজনের একজনও তো ভালো না কেউ কারোর থেকে কম যায় না। মিলি জিমিকে জিজ্ঞেসা করে বলল
-‘কি হয়েছে রে?’
জিমি রেগে বলল
-‘কি আবার হবে তোমার ষাঁড়ের মতো দেবর সবসময় আমার সাথে যেচে ঝগড়া লাগাতে আসে’
মিলি চুপ আর কিছু বলল না এখন কিছু জিজ্ঞেসা করতে গেলে আরও হিতেবিপরিত হবে। এখন আর কিছু জিজ্ঞেসা না করাই ভালো পরে না হয় ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেসা করে নিবে।
চলবে।
আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠন মূলক কমেন্ট করবেন। সকলে রেসপন্স করবেন। দুদিন গল্প না দেওয়ার জন্য সরি। সারা দিনের ক্লান্তি আর পড়াশোনার চাপে হয়ে উঠছে না। আশা করি আমার ব্যাপারটা বুঝবেন।