#এক_কাপ_চা পর্ব ২৪

0
599

#এক_কাপ_চা পর্ব ২৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

(৭০)

ইখুম মুখের সামনে চায়ের মগ ধরতেই রাশেদ জোড় করে তার সামনে থেকে নিয়ে নিলো রাশেদ।
ইখুমকে জ্বালানোর অভিনব কায়দা মাত্র রাশেদের।
বিছানায় বসে বেশ আয়েশ করে চায়ের কাপে চুমুক দিলো রাশেদ।পর মুহুর্তেই মুখ থেকে ফেলে দিলো সব।

“কী খাচ্ছিলে এটা?”

“বিষ।”

“ইখুম হাসি তামাশা করছি না।বলো কী এটা?”

“চা আর কী?”

“এত তেঁতো কেনো?”

“চিনি দেইনি।”

রাশেদ এবার উঠে এলো।গরম পানির ফ্লাক্স হাতে নিয়ে ঢাকনা খোলার সময় গভীর কন্ঠে ইখুম কে বলল,

“এটা চায়ের স্বাদ নয় ইখুম।তোমাকে গরম পানি কে করে দিয়েছে?”

কথা বলতে বলতে পুরো পানি কাচের গ্লাসে ঢালতেই রাশেদ খেয়াল করলো
সাদা রঙের গুড়ো জাতীয় কিছু একটা জমেছে ফ্লাক্সের নিচে।
রাশেদের অস্থিরতা প্রকাশ করলো না ইখুমের সামনে। হাসি মুখে বলল,

“আর বলো না, হয়তো পানির কিছু একটা।আর শোনো আমি তোমাকে গরম পানি করে এনে দিবো।কারণ ফ্লাক্সের পানিতে আমার বিশ্বাস নেই।”

“কেন?যে সন্তানকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে তার জন্য এত দরদ?”

ইখুমের কথার খোঁচাটা বেশ বুঝেও রাশেদ চুপ রইল।চোখ বন্ধ করে কথাটা হজম করে নিয়ে বলল,

“চা খাবে?”

“না মাথায় ঢালবো।”

“তাহলে তো এক কাপে হচ্ছে না।বালতি লাগবে।”

“আশ্চর্য মানুষ তো আপনি।”

“চলো একটু বাহিরে হেঁটে আসি। সামনের বাজারের কাছে চা’য়ের দোকান থেকে চা খাওয়া যাবে।”

“এক শর্তে।”

“কী?”

“সাথে গরম গরম জিলাপি, সমুচা চাই।”

রাশেদ ইখুমের মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলল,

“আচ্ছা বেশ তবে।”

রাশেদ, ইখুম যখন বেরিয়ে এলো তখন জুলি বাহিরেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার ধারণা ইখুম চা খেয়েছে। সে হাসিমুখে চলে গেল রাশেদের মায়ের কাছে। কথাটা তাকে বলতেই সে জুলিকে একশ টাকার নোট বের করে দিয়ে বলল,

“যা তুই কিছু খেয়ে নিস।”

জুলি টাকাটা খুশি মুখেই হাতে নিলো।কোমরের দিকটায় টাকা গুজে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।রাশেদের মা ওযু করে নামাজ পড়তে বসলেন।দুনিয়াবি কাজ আর কত দিন?আর যাই করি না কেন নামাজ পড়া বাদ দেওয়া যাবে না।
মোনাজাতে সে তার সন্তানদের সুস্থতা কামনা করলেন।

(৭১)

তাশদীদ, মুনির যখন ফিরেছে তখন মুনিরের থেকে তাশদীদের অবস্থা বেশি খারাপ।মারাত্মক ব্যথা না পেলেও কেটেছে দুজনের অনেকটাই। তাশদীদের কপালে সেলাই পড়েছে, হাতেও বেশ লেগেছে। ডান হাত নাড়াতে নিষেধ করে দিয়েছে ডক্টর। এদিকে মুনিরের গালে, বুকে বেশ কেটেছে। ট্রাক চালক সময় মতো কিছুটা সাইড দিতে পেরেছিলেন বলেই ওরা এ যাত্রায় বেঁচে গেছে।ট্রাক চালক তাদের সাইড দেওয়ায় তাশদীদ গাড়িটা সামনের দিকে এগুতেই গাছের সাথে ধাক্কা লাগে। শুধু তাই নয় বয়স্ক ড্রাইভার নিজে গাড়ি সাইড করে নেমে এসেছে। তাদের গাড়ি থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
তার ব্যবহারে মুগ্ধ মুনির এবং তাশদীদ। শুধু তাই নয় যে অবধি তাশদীদের বাবা এবং সাগরিকার বাবা না পৌঁছেছে সে অবধি লোকটা ওখান থেকে যায়নি।নিজের টাকা খরচ করে যা যা প্রয়োজন করেছে।

তাশদীদের বাবা ফিরে আসার সময় তার হাত ধরে বলেছেন,

“ভাই আজ আপনি আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন।যদি কোনো উপকারে আসতে পারি তবে আমাকে অবশ্যই বলবেন।”

তাশদীদকে দেখে তার মা কান্নাকাটি করে অস্থির। তার ব্লাড প্রেশার বেড়েছে অনেক।ছেলেকে ধরে সে অনবরত কেঁদে চলেছে।সাগরিকা চুপচাপ লুকিয়ে তাজবীদের পিছনে।তাশদীদকে এভাবে দেখতে তার ভালো লাগছে না।কপালে ব্যান্ডেজ,শার্টে রক্ত লেগে আছে। ঘুমিয়ে আছে সে।
তাশদীদের মা ছেলের পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছিল।রাতে সে ছেলের কাছে থাকতে চাইলে কেউ রাজি হলো না।তখন মৌসুমি বলল,

“নান্নান,আমি থাকি।তোমরা যাও ঘুমাও। আমি এমনিতেও রাত জাগি তাই সমস্যা হবে না।”

না চাইতেও মৌসুমিই রইল কারণ বাড়ির কারোর মানসিক অবস্থা তর্ক করার মতোন নেই।সাগরিকা মায়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।নিজের ঘরে ফিরেও তার যেন শান্তি হচ্ছে না এদিকে তুলি বসে বসে ফোনে টিকটক ভিডিও দেখতে ব্যস্ত। এতটাই ব্যস্ত যে সাগরিকার অস্থিরতা তার চোখে লাগছে না।
সাগরিকা বার কয়েক তাশদীদের ঘরের সামনে থেকে ফিরে এলো। ঘরের বাইরে থেকে মৌসুমির হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।সাগরিকা কী ভেবে ঘরে ঢুকলো সে নিজেও জানে না।ঘরে ঢুকেই দেখতে পেলো এক চেয়ারে বসে অন্য চেয়ারে পা তুলে ফোনে ব্যস্ত মৌসুমি।তাশদীদের গা থেকে কম্বল সরে গিয়েছে। তার পা পুরোটা বেরিয়ে আছে। অথচ মৌসুমি ব্যস্ত নিজের মধ্যেই।

“আপু বেরিয়ে যাও ঘর থেকে।”

“মানে?”

“মানে তোমার ঘরে চলে যাও।”

“তো এখানে কে থাকবে?”

“আমি আছি।”

“তুই কি ভুলে যাচ্ছিস? তাশদীদ তোর ভাই,প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। তার ওয়াশরুমের প্রয়োজন হলে?তাছাড়া তুই চিন্তা করলি কী করে?”

“আমার ভাই হলে তোমার কী? নানা? তোমারো ভাই। আর শোনো চিৎকার করলে এখনি তোমার খবর করে ফেলবো। যে দায়িত্ব পালন করতে পারো না নাও কেন?বের হও এখনি।”

মৌসুমি কোনো জবাব দিলো না।সে রাগে গটগট করতে করতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
সাগরিকা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো তাশদীদের দিকে। তার গায়ে ভালো ভাবে কম্বল টেনে দিয়ে বসে রইল মাথার দিকটায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে দিকে। কানের দিকটায় রক্ত লেগে আছে। ওয়াশরুম থেকে গামছা ভিজিয়ে এনে মুছিয়ে দিচ্ছিলো।
হঠাৎ মৌসুমি ফিরে এসে তাকে দেখে বলল,

“কী করছো?”

“তান্ডব নাঁচছি। নাঁঁচবা?তুমি এখানে কেন?”

“ইয়ারফোন নিতে এসেছি।”

মৌসুমি বেরিয়ে যেতেই সাগরিকা দরজা আটকে দিয়ে চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসে রইল।একটু পর পর সে উঁকি দিয়ে তাশদীদের মুখের দিকে তাকাচ্ছে আবার বইয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

তাশদীদের যখন ঘুমটা হালকা হয়েছে তখন সে অনুভব করলো তার হাতের কাছে তুলতুলে কিছু রয়েছে। লোম স্পষ্ট। প্রথমে সে মনে করেছিল বিড়াল শুয়ে আছে তার পাশে কিন্তু ভালোভাবে হাত দিতেই নাক মুখ বুঝতে পারলো।বেড সাইডের ল্যাম্প জ্বালিয়ে দেখলো সাগরিকা গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে তার পাশে।হাতে ভর দিয়ে সে কিছুটা উঠে বসলো।অন্য হাতে আস্তেধীরে সাগরিকাকে ব্ল্যান্কেট এর নিচে এনে তার পুরো গা ঢেকে দিলো।সাগরিকাকে পাশে দেখে যেন তার অসুস্থতা আশি শতাংশ ভালো হয়ে গেছে।তার চুলে হাত ভুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“পুরো দুনিয়া রেখে আমার অনুভূতি কেনো তোর উপরেই আছড়ে পড়লো?”

(৭২)

সাগরিকা সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলো সে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে আর তাশদীদ কাউচে বসে।
ঘুম ঘুম চোখেই সে বলল,

“গুড মর্ণিং সন্দেশ মশাই।আপনাকে দেখলেই কেন মনে হয় কামড়ে কামড়ে খেয়ে ফেলি?”

সাগরিকার কথা শুনে তাশদীদ তার চোখের চশমা খুলে পাশে রাখলো।ল্যাপটপ বন্ধ করে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল।
সাগরিকার ঘুম এখনো ছাড়েনি কিন্তু যখন সে তাশদীদকে এগিয়ে আসতে দেখলো তখন সে হুড়মুড়িয়ে উঠে বলল,

“আপনি জেগেছেন কখন?আর জেগেছেন তো উঠেছেন ক্যান?”

“বিছানায় জায়গা দিয়েছিস?পুরো বিছানা দেখি একাই তোর লাগে।”

“কী করলাম?আমি কিছু করিনি।আপনি এখানে বসুন।আমি এক্ষুণি আপনার জন্য খাবার কিছু নিয়ে আসবো।আর হ্যাঁ উঠবেন না।নইলে না ভেঙে দিবো।”

“কাকে হুমকি দিচ্ছিস?আমাকে?”

“হুমকি দুই একদিন খেয়ে দেখুন কেমন লাগে।”

সাগরিকা ফ্রেশ হয়ে যখন তার দাদীর ঘরের পাশ দিয়ে আসছিল তখন শুনতে পেল তাশদীদ এবং মৌসুমির বিয়ের কথা।সবাই চাইছে এখন চিনি পানিটা হয়ে যাক পরে অনুষ্ঠান হবে। তাশদীদ -মৌসুমি দুজনেই যখন সম্মতি দিয়েছে আজ সকালে তখন আর দেরি কীসের?

চলবে(এডিট ছাড়া)

#ছবিয়ালঃসাদিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here