#এক_কাপ_চা পর্ব ২৭
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৭৯)
গতকাল ওরা যখন বাড়ি ফিরেছিল তখন আসরের আজান হচ্ছে।
বাড়ি ফিরেই সাগরিকা,স্নেহাকে দেখা শোনা করার জন্য ডক্টর নিয়ে এসেছিল শুভ্র। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর স্নেহার পায়ের অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ডক্টর৷
রাশেদ, ইখুম তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে মৌসুমি এসে তাশদীদ কে বলল,
“ঘরের সবার মনের অবস্থা ভালো নয়। কিছু করা দরকার।”
“কী করবি?”
“কিছু খাবার বানিয়ে নিয়ে আসি?সবাই মিলে একটু গল্প করলেও অনেক ভালো লাগবে।”
“দেখ কী করতে পারিস।”
তাশদীদকে খুশী করার জন্য হলেও মৌসুমি পা বাড়ালো রান্না ঘরের দিকে। রান্না ঘরে ঢুকেই সে বলল,
“আলুর চপ বানাবো। সব রেডি করে দাও।”
কাজের মেয়ে হাতে হাতে সব করলে মৌসুমি চিন্তা করলো আজ নতুন কিছু করা যাক। তাই সে ডিম ফাটিয়ে না নিয়ে ডিম তেলে ভেজে মাখিয়ে নিলো। ভাজা মাখানো ডিমের মধ্যে চপ গুলো এপিঠ ওপিঠ করে বিস্কিটের গুড়ো দিয়ে ডুবো তেলে ছেড়ে দিলো।ডুবো তেলে ছেড়ে দিতেই চপগুলো ছড়িয়ে পুরো তেল নষ্ট হয়ে গেল।
কোনো মতে যখন সে দুটো চপ ভেজে তুলেছে তখন জুলি এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“এইন্না কি করতাছেন?সরেন আমি কইরা দেই। আপনি তাশদীদ ভাইয়ের কাছে যান।আপনার লগে বিয়া ঠিক হইছে আর ঘুমাইতাছে সাগরিকার লগে?আগে ঘর ঠিক করেন। এসব করার দরকার নাই।”
“তাশদীদ সাগরিকার সাথে?”
“হু। দেখেন যাইয়া।আগে এই মাইয়ার ব্যবস্থা করেন।”
“কী করবো?আদৌও কী কিছু করার আছে? ”
“শুনেন মাইয়া মাইনষের জানের থেইকা মান বড়। আপনি কিছু করেন।”
“কী করবো?”
“আপনি দেখি কিছুই জানেন না।সাহস দিলে কিছু কইতে পারি।”
“কী?”
“সাগরিকার খাওনের মধ্যে মাল পানি মিশাই দেন।আপনারা তো বিদেশিডা আনেন। ওইডা এত গন্ধ না।বাংলাডার মতোন। ওইডা খাওয়াই দেন ওরে৷ আর খাওয়ানোর দায়িত্ব কিন্তু আফনের।ওইডা খাওয়াই দিয়া ওরে টিক কইরা শুভ্রর ঘরে ঢুকাই দিবেন।রাইত ভর থাকলে বাকী কাম আপনার নান্নান তো আছেই। আপনি বুঝছেন তো?”
মৌসুমি এক মুহুর্ত কিছু ভাবলো।এরপর জুলিকে বলল আপনি চপ ভাজেন আমি আসতেছি।
সন্ধ্যের পর সবাই যখন নাস্তা করছিল তখন সাগরিকা একবার মুখে দিয়ে খাবার নামিয়ে রেখে বলেছিল সে খাবে না।খাবার তার কাছে বিস্বাদ এবং গন্ধ লাগছে।
কিন্তু সবাই বলল ব্যথার কারণে হয়তো তার জ্বর এসেছে বলে এমন লাগছে।
মৌসুমি টমেটো সস দিয়ে হলেও সাগরিকাকে খাইয়ে দিলো।
প্রথমে এসব সাগরিকার বেশ খটকা লাগলেও শরীর ভালো না তাই সে খুব একটা কথা না বলে খেয়ে নিলো।
খাওয়ার পর যখন মৌসুমি তাকে কোল্ড ড্রিংক দিলো সেটা বেশ ঝাঁজালো ছিলো। কিন্তু ঘরে ফেরার তাড়ায় সাগরিকা কয়েক চুমুক খেয়ে ফিরে এলো ঘরে। ঘরে ফিরেই বিছানায় শুয়ে ছিল।
আর জুলি সাগরিকার প্লেট সহ সবটা বাইরে ফেলে দিয়ে এলো।
সবার থেকে সাগরিকাকে আলাদা বসাতে আজ তার বেশ কায়দা করতে হয়েছে।
(৮০)
রাত যখন গভীর হয়েছে তাশদীদ সাগরিকার ঘরেই ছিল।মৌসুমি তখন এসে তাশদীদকে বলল তার ঘরে ফিরে যেতে। সাগরিকা তখন গভীর ঘুমে।
মৌসুমির চাপাস্বরেও তার ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে চিৎকার করে বলল,
“তুমি আমার ঘরে কী করো?বেরিয়ে যাও।”
সাগরিকার এমন ব্যবহারে অবাক হয়ে তাশদীদ জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে? সাগরিকা অনবরত চিৎকার করেই যাচ্ছে। সে মৌসুমি কে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইছে। তাশদীদ তার দিকে এগিয়ে যেতেই প্রথম এবার সাগরিকার থেকে ওয়াইনের স্মেল পেলো।
তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“তুই কী খেয়েছিস?”
“তোমার মাথা খেয়েছি।”
“জেদ করে না। তুমি কী কিছু উদ্ভট খেয়েছো?বিস্বাদ কিছু?”
“রাতের সব খাবার বিস্বাদ ছিল।গন্ধ ছিল।”
“আমায় কেন ডাকোনি?”
“সব্বাই বলল আমার জ্বর। তাই এত বিস্বাদ।”
এই কাজটা কার বুঝতে বাকী রইল না তাশদীদের, সে মৌসুমিকে কিছু বলার আগেই তার দাদী এসে বলল,
“চিল্লাইতাসোস কেন?”
সাগরিকা আরো দ্বিগুণ জোড়ে বলল,
“একশ বার। ওই মেয়েকে বের করো না হলে আরো করবো?”
“ও থাকবে। তুই কী করবি?”
“এই কুটনি বুড়িটা, বদমাইশের নানী
সহ বের করে দিবো আমি,দাঁড়াও। এই ছাড়ো আমায়। এই বুড়ি তার ছেলের জীবন ত্যানা ত্যানা করে দিয়েছে।
ফাজিল বুড়ি।”
“এত সাহস। আমার ঘরে দাঁড়িয়ে? ”
“এই ঘর ও আমার, এই বর ও আমার।”
সাগরিকা তাশদীদের বুকে আংগুল ঠেকিয়ে বলল।ততক্ষণে সবাই এসে হাজির হয়েছে।
সাগরিকা তার বড় চাচার সামনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে বলল,
“আমাকে বিয়ে দাও।”
এমন ভাবে সে তার চাচার সামনে হাত পেতেছে যেন বিয়ে হাতে দেওয়ার কোনো একটা বস্তু।চাচাকে চুপ থাকতে দেখে সে তার বাবাকে একই কথা বলল,
তার বাবা তাকে জবাব দিলো,
“এত রাতে বিয়ে?পাত্র লাগবে না বুঝি?”
তাশদীদ সাগরিকাকে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে নিতে নিতে বলল,
“ওর নেশা হয়েছে। বাদ দাও ওর কথা।কাল সকালে যে এমন করেছে তার বিচার আমি করবো।”
“আগে আমাকে বিয়ে দাও।”
“কাকে বিয়ে করবি?এই ছেরি রাত বিরাতে তামাশা পাইছোস?”
সাগরিকা পুনরায় তাশদীদের বুকে তর্জনী রেখে বলল,
“এই যে। বিয়ে করবো।”
এবার মৌসুমি রেগে বলল,
“তামাশা না কী? বিয়ের ধান্দা?তাশদীদের সাথে আমার বিয়ে তুই জানিস না?”
তাশদীদ ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলল
“রিয়েলি?কবে ঠিক হলো?”
সাগরিকা তাশদীদের হাত থেকে ছুটে টেবিলের উপর থেকে ফল কাটার ছুড়ি নিয়ে বলল,
“বিয়ে দিবে কী না?না দিলে তাশদীদ কে মেরে ফেলবো।”
সে সত্যি তাশদীদের গলায় ছুড়ি ধরে বিছানার উপর দাঁড়িয়ে রইল।
এই অবস্থায় বাড়ির মানুষ হাসবে না কী করবে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না।এদিকে কেউ হাসলেও সাগরিকা ক্ষেপে যাচ্ছে।
সাগরিকার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তাশদীদ বলল,
“কাকা, আমি সাগরিকার সব দায়িত্ব নিতে চাই।যদি তুমি আমাকে তোমার মেয়ের যোগ্য মনে কপ্রে থাকো তবে বিয়ের অনুমতি দাও।বাবা,আমি সাগরিকাকে বিয়ে করার জন্য অনুমতি চাইছি।”
সাগরিকা এবার ছুটে এসে তার চাচাকে বলল,
“আমি তোমার এই কুটনি মায়ের থেকে ভালো মা তাই না?দাও না অনুমতি!”
সবার অনুমতি নিয়ে রাত বারোটার সময় তাশদীদ, সাগরিকার বিয়ে হলো।রাশেদ,মুনির কোথা থেকে কাজীও তুলে এনেছিল রাত করেই।
কবুল বলার আগ থেকেই সাগরিকা প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিল।কবুল বলার পর সে পুরোপুরি ঘুমে।
তার ঘুমানো দেখে তাশদীদ নিশ্চিত হলো সন্ধ্যে থেকে সে ঘুমে নয়, নেশায় অবচেতন ছিল।
(৮১)
তুলির থেকে সব শুনে সাগরিকা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।সে সত্যি এসব করেছে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু অবশ্যই এসব কথা বানানো নয়। না হলে তাশদীদ ঘরে দরজা দিয়ে তার সাথে থাকতো না।হাতের নখ কামড়ে সে বলল,
“আমার মাথায় পানি দে তুলি।আমি শেষ। আমি এসব করেছি?”
দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সাগরিকা ঘরে ফেরার সময় শুনতে পেল তাশদীদের বাবা কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছে তার স্ত্রীর সাথে। এই প্রথম তাদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে দেখলো সাগরিকা।
জানালার কাছে যেতেই সে শুনতে পেল তার বড় চাচা বলছে,
“সাগরিকাকে তাশদীদের বৌ হিসেবে আমি কোনো দিন মেনে নিতে পারবো না।আমার ছেলে সব জানার পরেও ওই আমার বিশ্বাসের সাথে এমন করতে পারলো?আমি কোনো দিন ওদের মন থেকে মানতে পারবো না।তাই মায়ের মতোন আমিও চাই ওদের ছাড়াছাড়ি হোক।”
চলবে(এডিট ছাড়া)
#ছবিয়ালঃইন্সটাগ্রাম