#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৬
জিমি অবাক হয়ে তাকালো সামির দিকে। সে-তো ভুলেই গেছিলো এই ছেলে সুধরাবার নয়। সব কথার উল্টো পাল্টা মানে বের করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ওস্তাদ। জিমি নিজেও বুঝতে পারলো সামিকে এই প্রশ্নটা করা মটেও ঠিক হয়নি সে-তো শুধু কৌতুহল মিটাতে প্রশ্নটা করছিলো এখন উল্টো ফ্যাসাদে পড়ে গেলো। যদি-ও সন্ধেয় ছিল উত্তর পাবে কি। উত্তর তো পেলোই না উল্টো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে এখন। জিমি শান্ত মেজাজে বলল
-‘ আমি জাস্ট আস্ক করছি নাথিং এলস্’
-‘ বাট আই নৌউ সামথিং সামথিং’
-‘ ওফ্ফ মহাবিরক্তি কর মানুষ আপনি। আপনার সাথে ফালতু বকে আমার এখন মাথা ব্যাথা করছে’
জিমির মাথা ব্যাথার কথা শুনে সামি ব্যস্ত হয়ে বলল
-‘ এখনি তো ঠিক ছিলে। মেডিসিন নিবে, মাথা টিপে দিবো? দাঁড়াও আন্টিকে চা কিংবা কফি আনতে বলছে’
-‘ কিছু লাগবে না আপাততঃ আপনি আমার সামনে থেকে গেলেই হবে’
সামি নিরবে কিছুক্ষণ জিমির মুখোপানে তাকিয়ে রইলো। যাবার আগে শুধু বলে গেলো।
-‘ নিজের খেয়াল রেখো কিছু লাগলে আন্টিকে ডাক দিও আমাকেও ডাকতে পারো মাইন্ড করবো না’
সামি যেতেই জিমি মাথা ব্যন্ডেজ খুলে সাওয়ার নিতে গেলো। এখন এটাই একমাত্র মাথা ঠান্ডা করার মেডিসিন। সাওয়ার নিয়ে রুমে এসে চিল্লিয়ে জিমি লিলিকে বলল ‘আম্মু আমি ঘুমাবো আমাকে ডাকবে না প্লিজ’ কথাটা বলে জিমি দরজা লাগিয়ে দিয়ে জানালাও বন্ধ করে দিলো ফ্যানটা ফুল স্প্রিডে দিয়ে শুয়ে পড়লো। শুয়ে যেনো একটু আরাম পাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গলো দুপুর ৩টার দিকে। রুম থেকে লিলি আর জুলি গল্প করছে। লিমন সামির ফোনে গেম খেলছে দাদি রুমে রেস্ট নিচ্ছে। মিলি জাকিও রুমে। জিমিকে দেখে লিলি বলল
-‘ জিমি তোর না-কি মাথা ব্যাথা করছিলো সামি বলল এখন কমেছে?’
জিমি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বলল
-‘ হ্যাঁ খেতে দাও খুদা লাগছে’
-‘ ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি’
-‘ তোমরা খেয়েছো?’
-‘ হ্যাঁ’
জিমি আর কথা না বলে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসতেই লিলি জিমিকে হাতে তুলে খাইয়ে দেয়। জিমি জুলি আর লিলির সাথে এটা ওটা নিয়ে গল্প করতে লাগলো। সামি তাকিয়ে ছিলো জিমির দিকে জিমি একবারও সামির দিকে তাকাই নি। সামির মনে মনে অভিমান জমতে লাগলো আদেও কি এ অভিমানে তার প্রিয়মত’র কোনো যায় আসে না-কি সে বুঝতে পারলো?
সামি আর ওদিন জিমিদের বাসায় থাকে নি বিকালেই বাসায় রওনা দিয়েছে। এর মধ্যে আর জিমির সাথে কথা হয় নি জিমিই সে সুযোগটা আর দেয় নি।
____________________________________________
গভীর রাত চারিদিকে আধার গ্রাস করে আছে। সামি নিজের রুমের বারান্দায় ডিভানে বসে আছে। আকাশটায় আজ চাঁদের দেখা মেলি নি তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে। সামির কাঁধে কারোর হাতে স্পর্শ পেতেই চমকালো। পাশ ফিরে জুলিকে দেখতে পেয়ে বলল
-‘ আম্মু তুমি এখন? এতো রাতে? ঘুমাও নি কেনো এখনো?’
-‘ একই প্রশ্ন তো আমারও’
-‘ এমনি আম্মু আমার ঘুম আসছে না’
জুলি বেগম সামির পাশে বসলেন সামি তার মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে বলল
-‘ মাথায় বিলি কেটে দাও’
জুলি বেগম বিলি কেটে দিতে দিতে বলল
-‘ তুই কি কাউকে ভালোবাসিস আব্বু?’
সামি একদম চমকালো না। সে জানে তার মা কেমন কেমন করে যেনো সব জেনে যায়। এখন জিমির নামও বলে দিবে তাতেও সামি একটুও অবাক হবে না। সামি বলল
-‘ তুমি তো সব জানোই তাহলে কেনো শুনছো?’
-‘ তাহলে তোর আর জিমির বিয়ের কথাটা পাকা করে ফেলি?’
-‘ ও আমাকে ভালোবাসে না আম্মু আমার ভালোবাসা ওর কাছে ফান মনে হয়। আমি যে ওকে ভালোবাসতে পারি এটা না-কি ওর ধারণার ও বাইরে’
-‘ জিমিকে কেউ কখনো ভালোবাসি বলে দাবি করে নি সেজন্য হয়তো’
-‘ তুমি জানলে কিভাবে আমি জিমিকে ভালোবাসি?’
জুলি বেগম হেসে বললেন
-‘ জাকি মিলির বিয়ের দিন তোদের ঝগড়া করতে দেখে আমিও মনে মনে চেয়েছিলাম তোদের মধ্যে কিছু হোক। আজ ক্লিয়ার হয়ে গেছিল যখন আমি জিমির রুমে গেছিলাম তোদের কথা শুনে যতটুকু বুঝলাম তুই জিমিকে ভালোবাসিস জিমি বাসে না তাই তো?’
-‘ হ্যাঁ’
-‘ এতো মন খারাপ করতে হয় না বাবা জিমিকে সময় দে দেখবি তোকেও একদিন ও ভালোবাসবে এখন না বাসুক তোর আর ওর বিয়ের পর তো বাসবে!’
____________________________________________
লিলি জিমির মাথায় বিলি কেটে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছিল। হঠাৎ জিমি লিলিকে প্রশ্ন করলো
-‘ আম্মু প্রেম আর ভালোবাসা কি এক?’
লিলি জিমির প্রশ্নে প্রথমে অবাক হয়। ভ্রু কুচকে যায়। পালটা প্রশ্ন না করে উত্তর দেয়
-‘ না। প্রেম আর ভালোবাসা দুইটা হলো আদালা। প্রথম দেখায় ভালোলাগা হলো প্রেম যা সহজেই ভুলে যাওয়া যায়। আর ধীরে ধীরে ভালোলাগা হলো ভালোবাসা যা সহজে ভুলতে পারা যায় না। দুইটাই আলাদা আদালা অনুভূতি।’
-‘ তুমি আব্বুকে খুব ভালোবাসো তাই না?’
-‘ হ্যাঁ সে আমার স্বামী পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আমরা আমাদের ভালোবাসা তো থাকবে আমাদের ভালোবাসাটা হচ্ছে আল্লাহ ঠিক করে দিয়েছে তা না হলে কি আমরা এক হতে পারতাম আমি কই থাকতাম আর তোর আব্বু কই থাকতো’
-‘ বিয়ের আগে আব্বুর সাথে তোমার দেখা হয় নি?’
-‘ হ্যাঁ হয়েছিল তো আমি তো লজ্জায় কথা বলতে পারতেছিলাম না আর তোর আব্বু আমার লজ্জা দেখে সে কি হাসি লোকটার মন অনেক ভালো ছিলো বড্ড রসিকতা করে আমাকে রাগিয়ে দিতো।’
লিলি কথাগুলো বলতে গিয়ে গলা কাঁপলো চোখে অশ্রু গুলো ভীর জমালো। টুপ করে জিমির কপালে কয়েক ফোটা পানি পড়লো জিমি বুঝলো লিলি কাঁদছে। জিমি লিলির কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
-‘ ও আম্মু কাঁদছ কেন তুমি? জানো না আব্বু সবসময় আমাদের সাথে থাকে আমাদেরকে দেখে তুমি কাঁদলে তো আব্বু কষ্ট পাবে কেঁদো না প্লিজ আমার লক্ষি আম্মু’
-‘ হ্যাঁ রে মা আমি আর কাঁদব না তুই ঘুমিয়ে পড়। রাত জাগিস না আর কড়া ডোজের ঔষধ খাচ্ছিস ঘুমা তাড়াতাড়ি’
জিমি চোখ বন্ধ করতেই সামির মুখ ভেসে উঠলো। সাথে সাথে চোখ খুলে বিড়বিড় করে বলল ‘আজব! আমি কি উনাকে মিস করছি? ওনাকে দেখলাম কেন? আমাকে না জালানে তো আবার ওনার শান্তি লাগে না বিয়া*দপ ছে’ম’ড়া একটা কবে জানি মাথা ফা’টি’য়ে দি সবসময় আমাকে ডিস্টার্ব করা’
চলবে