#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-৬
ঘুমন্ত নগরী রাত কয়টা বাজে ঠিক নাই। জাকি কেবল মিলির সাথে চ্যাট শেষ করে বসেছে। ওমনি দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে জুলি বেগম জাকিকে ডাকলে
-‘জাকি বাবা ঘুমিয়ে গিয়েছিস না-কি?’
জাকি দরজা খুলে বলল
-‘না আম্মু কিছু বলবে?’
জুলি বেগম ঘরে ডুকে বিছানায় বসে গম্ভীর হয়ে বলল
-‘হ্যাঁ বলার তো অনেক কিছুই আছে। তুই আগে থেকে সব জানতিস তাই না?’
জাকি ভরকে গিয়ে বলল
-‘কোন ব্যপারে আম্মু?’
তখনি সামি দরজা দিয়ে উঁকি মেরে বলল
-‘আমাকে ছাড়ায় তোমরা গল্প করছো?’
জাকি ঘার ঘুড়িয়ে বলল
-‘কেবলি আম্মু এসে বসলো। সাথে সাথে তুইও হাজির’
সামি দাঁত কেলিয়ে রুমে ডুকতে ডুকতে বলল
-‘যাক তাহলে তো ভালোই তা কি নিয়ে কথা হচ্ছিল শুনি’
-‘ও হ্যাঁ আম্মু বলো কোন ব্যাপারে আমি জানতাম?’
-‘এই যে মিলির বোন আছে আর এ ব্যপারটা আমাদের থেকে লুকিয়েছে’
-‘হ্যাঁ জানতাম তোমার কাছে ফোন দেওয়ার আগে আমাকে সব বলছে আর জানতাম এতে তুমি বিশেষ রিয়াক্ট করবে না’
-‘জিমি মেয়েটা অনেক মিষ্টি মুখে মায়া আছে মেয়েটার।’
সামি ছোফা থেকে লাফিয়ে উঠে বলল
-‘জিমি ভাবির বোন!’
-‘হ্যাঁ কেনো? তুই চিনিস না-কি জিমিকে?’
সামি থতমত খেয়ে বলল
-‘না তেমন কিছুই না ভাবির বোন আছে আগে জানতাম না তো।’
-‘হ্যাঁ আমরাও জানতাম না আজ মিলি নিজে বলছে। দেখে মনে হলো বোনকে বড্ড ভালোবাসে তাছাড়া জিমি মেয়েটাও মিষ্টি মুখে মায়ায় ভরপুর ইশ এইটুকু বয়সে না-কি পুরোসংসারের খরচ একা চালায় সাথে নিজেও পড়াশোনা করে’
সামি ভ্রু কুচকে বলল
-‘আম্মু এতো প্রসংশা করছো কেনো বলো তো?’
-‘যে প্রসংশা করার যোগ্য তার নামে প্রসংশা করবো না কেনো? কিন্তু মেয়েটার একটা জিনিস খারাপ কি তার ছেলেদের মতো চলাফেরা মেয়েটার চুলগুলা যদি একটু বড় হতো তাহলে সামির জন্য মেয়েটাকে বউ করে নিয়ে আসতাম’
জুলির কথা শুনে সামির কাশি উঠে গেলো। জাকি হাসতে হাসতে বলল
-‘আম্মু আমার মনে হচ্ছে সামির জন্য আমাদের মেয়ে দেখতে হবে না তেনার বোধ হয় পছন্দ করা আছে’
জুলি বেগম কথাটা সিরিয়াসলি নিয়ে বলল
-‘মেয়েটা কে সামি? আমাদেরকে বললে কি আমরা মানা করতাম কখনো? আমাদেরকে এতোটা খারাপ ভাবিস তুই’
সামি বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল
-‘না আম্মু তোমার ছেলে মিথ্যা কথা বলছে ওর কথা একদম বিশ্বাস করো না আর আমি যদি কিছু করি তাহলে তোমাকে সবার আগে বলবো’
জুলি বেগম কথাটা বিশ্বাস করলেন কি না বোঝা গেলো না তিনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
-‘আর কোনো কথা না ঘুমিয়ে পড় সবাই অনেক রাত হয়েছে কাল আবার শপিংয়ে যেতে হবে’
কথাটা বলে চলে গেলো জুলি। সামি জাকির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
-‘আমি প্রেম করি এসব আউল ফাউল কথা কে বলেছে তোকে? তুই জানিস না আমি প্রেম করি না তা?’
-‘জানতাম তো কিন্তু আজ-কাল ভাইয়ের চেঞ্জ দেখে মনে হয়’
-‘আমার মধ্যে কি এমন চেঞ্জ দেখলি যে তোর মনে হলো আমি প্রেম করছি’
-‘এই যে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের সাথে ঝ’গ’ড়া করিস তাও আবার একটা মেয়ের সাথেই’
-‘ওফ্ফ ভাইয়া তোর এই সব ভালো লাগে না ঘোড়ার ডিম ঝ’গ’ড়া করছি মানে প্রেমে পড়েছে লেইম এক্সিউস দাও কেনো বুঝি না তুই আসলে আমাকে আম্মুর সামনে ফাঁ’সা’তে চাইছিলি আমি বুঝি না মনে করিস? বাই দ্যা ওয়ে তোকে এসব নিউজ লিক করে কে’
জাকি ভাব নিয়ে বলল
-‘আমার সব দিকে চোখ থাকে বুঝলি আমাকে ফাঁকি দেওয়া ওতো সহজ না’
সামি জাকির বাহুতে ঘু/ষি মেরে বলল
-‘থাক তুই তোর চোখ নিয়ে’
_________________________
আজ দিনটা মেঘলা সূর্য আর মেঘ লুকোচুরি খেলায় ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে। আজ সকাল থেকে জিমি লাপাত্তা আজ সকাল থেকে কেউ দেখে নি জিমিকে। জিমি এমনই করে কেউ আর এটা নিয়ে ভাবলো না কিন্তু মিলিকে এটা নিয়ে ভিষণ ভাবাচ্ছে। কাল রাতে যে জিমি ঠিক মতো ঘুমাই নি সেটা মিলি জিমির পাশে শুয়ে সারারাত টের পেয়েছে। মিলি কয়েক বার ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞাসা করলে-ও জিমির উত্তর ছিলো ‘কিছু না তুই ঘুমা’। আজ ফোন দিলেও জিমি ফোন ধরে নি এসএমএস দিয়ে বললেছে ‘আমি একটা কাজে ব্যস্ত আছি কাজটা শেষ হতে রাত হবে আমাকে নিয়ে টেনশন করিস না লিমনকে নিয়ে জাকি ভাইয়ার সাথে শপিংয়ে যাস নিজের সহ বাসার সবার খেয়াল রাখিস’
তারপর মিলি ফোন দিলেও জিমি ধরে নি এমনকি সুইসটপও করে নি। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো জিমির দেখা নেই জাকি এসে মিলি আর লিমন কে নিয়ে গেলো বিয়ের শপিং করতে। শপিংয়ে এসে দেখলো জাকির মা ভাই সহ আরও অনেকে আছে যাদের কে মিলি চিনে না কেমন নার্ভাস লাগছে মিলির জুলি সকালে সাথে মিলির পরিচয় করিয়ে দিলো। জুলি বেগম মিলিকে প্রশ্ন করলো
-‘মিলি জিমি কোথায়? ওকে আনো নি কেনো?’
মিলি বিব্রতবোধ করে বলল
-‘আসলে আন্টি জিমি সকাল থেকে উধাও কোথায় গেছে বলে যায় নি শুধু বলল আসতে দেরি হবে’
-‘ওমা সেকি ফোন দিয়েছিলে?’
-‘হ্যাঁ ধরে নি ম্যাসেজ দিয়ে বলল শুধু আসতে দেরি হবে। ও এমনই করে পাগলাটে’
মিলির কথা শুনে সামি মনে মনে বলল ‘পাগল মানে মহাপাগল একেবারে তার ছেঁড়া পাগল। ইশ কত মনে করলাম আজ জিমির মুখে মায়া খুজবো আম্মুর এতো প্রসংশার মানে খুঁজবো কিছুই হলো না’
একে একে সকলে শপিং করতে শুরু করলো।
________________________
জিমি নিজেই নিজেকে বারবার প্রশ্ন করছে -‘জিমি তুই যতটা নিজেকে স্ট্রং দেখাস ততটা কি তুই স্ট্রং? না-কি সেটা লোক দেখানো মাত্র?’
আজ জিমির প্রতিযোগিতার প্রথমদিন আশার পর থেকে নিজের মধ্যে একরাশ ভয়, নার্ভাসনেস কাজ করছে। নিজেকে সাহস দিতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ছে বারবার। নিজে সাহসে কুলাতে পারছে না। প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে দুপুর তিনটা থেকে। ছেলেমেয়ে উভয়ই এ প্রতিযোগিতায় আছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা এসেছে। প্রথম রাউন্ডের ফার্স্ট স্ট্রেপ (রেস) হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে ১৮ জনকে বেছে নিয়েছে। জিমিও তার মধ্যে আছে। এখন সন্ধ্যা ৬টা বাজে প্রথম রাউন্ডের সেকেন্ড স্ট্রেপ (স্ট্যান্ড) কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে। এর মধ্যে থেকে ১২ জনকে বাছাই করে নিবে। জিমি বন্ধুরা জিমিকে টেনশন করতে বারণ করছে বার বার মাথা ঠান্ডা করে কাজ করে বলছে।
মিলি শপিং করতে করতে শপিংমলের টিভির স্কিনে চোখ যেতেই যেনো মাথার নিউরনগুলো নড়ে উঠলো। এলোমেলো কথা বুলি আওড়াতে লাগলো। সে কি সত্যি দেখছে নাকি স্বপ্ন?
চলবে