বিবি পর্ব (৭)

0
411

বিবি পর্ব (৭)
#রোকসানা_রাহমান

” সুপারি গাছটা এ বাড়িতে কী করছিল, বুবু? ”

কোমল নামাজ শেষ করে জায়নামাজ ভাঁজ করছিল। অনড়ার প্রশ্নে দরজার দিকে ফিরল। সে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলেও দৃষ্টি বাইরের দিকে। মনোযোগ সহকারে কিছু একটা দেখছে বোধ হয়।

” সুপারি গাছ? আমাদের বাড়িতে এ গাছ নেই। ”

বুবুর দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল দ্রুত। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” গাছ না মানুষের কথা বলছি। লম্বা, চিকন করে যে ছেলেটা বেরিয়ে গেল সে। ”

কিছুক্ষণ আগে বেরিয়ে গেছে নিবিড়। অনড়ার বর্ণনাসহিত মিলেছেও অনেকটা। নিবিড় বেশ লম্বা হলেও রোগাটে। রোদে পুড়ে উজ্জ্বল রঙটা তামাটের রূপ ধরেছে।

” মুখটা বেশ দুঃখী ছিল, কান্নাভাব। চাচা আবার মেরেছে?
” আবার মেরেছে মানে? আগেও মেরেছিল নাকি? ”

অনড়া খাটে বসল আয়েস করে। পা দুটো দুলাতে দুলাতে বলল,
” হ্যাঁ, তোমার মনে নেই? ”

কোমল মাথা নাড়ল দু’দিকে। অনড়া মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল,
” ঐ যে, একদিন স্কুল যাওয়ার পথে একটা বদ ছেলে আমার মাথায় কালি গুলানো পানি ঢেলে দিয়েছিল? আমি কাঁদতে কাঁদতে স্কুলে না গিয়ে তোমার কাছে আসলাম। তোমার খারাপ লাগল। আমাকে গোসল করিয়ে দেওয়ার আগে চাচাকে দেখালে। নালিশ করলে। ”

কোমলের মনে পড়েছে। এই ঘটনাটা ঘটেছিল প্রায় দুই বৎসর আগে। তখন অনড়া পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।। সেই বদ ছেলেটি নিবিড় হওয়ায় যেমন খারাপ লাগল তেমন মার খেয়েছে শুনে মায়াও হলো। খানিকটা উৎকণ্ঠা নিয়ে সুধাল,
” বাবা কি খুব মেরেছিল? ”
” হ্যাঁ। ”
” তুই দেখেছিলি? ”
” না। ”
” তাহলে জানলি কী করে? বাবা বলেছে? ”
” না, চাচাও বলেনি। কিন্তু ঐদিনের পর সুপারি গাছকে আর দেখিনি। তাই অনুমান করেছি। ”

কোমলের উৎকণ্ঠা কমল না। কেমন একটা উদাসভাব ছড়িয়ে পড়ল মুখমণ্ডলে। খানিক্ষণ চুপচাপ থেকে জানালার দিকে এগিয়ে গেল। কাঠের পাল্লাদুটো ধাক্কা দিয়ে খুলল। সঙ্গে সঙ্গে একফালি উষ্ণ রোদ এসে পড়ল উদাস মুখটায়। নরম হাওয়া শিরশির জাগিয়ে দিল বুকটায়। গভীর নিশ্বাস টেনে বলল,
” ওর নাম নিবিড়। আর কখনও সুপারি গাছ বলবি না। ”

অনড়া পা দুলানো বন্ধ করল। নামটা তার মনে ধরলেও সুপারি গাছ বলাটা বন্ধ করতে চাইল না। বলল,
” কেন? দেখতে তো সুপারি গাছের মতোই। বাতাস এলেই এদিক-ওদিক বাড়ি খেতে খেতে পড়ে যাবে। ”

কথাটা শেষ করতে পারল না অনড়া। মাঝপথেই হেসে ফেলল। হাসির জন্যে বাক্যের শেষ শব্দগুলো অস্পষ্ট শোনা গেলেও কোমল বুঝতে পারল। ঘাড় ফিরে তাকালে অনড়া চুপ হয়ে গেল। একটু থেমে বলল,
” তাহলে বদ ছেলে বলব। ”
” না। ”
” কেন? ”
” আমার খারাপ লাগবে। ”

অনড়া মুখভার করল। অনিচ্ছায় বলল,
” আচ্ছা। বদও বলব না। ”

অনড়া মুখ কালো করে মাথা নুয়িয়ে থাকলে কোমল হালকা হাসল। জমিয়ে রাখা জানালার পর্দাটা ছড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে আসল অনড়ার সামনে। হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে বলল,
” আমাকে কেউ কালো বললে, খোঁড়া বললে তোর খারাপ লাগে না? ”
” লাগে তো। ”
” তাহলে তুই অন্যকে বললে খারাপ লাগবে না? ”

অনড়া পূর্ণ চোখে দেখল কোমলকে। বুঝার চেষ্টা করছে কিছু। কয়েক সেকেন্ত পর বলল,
” আমি তোমাকে পছন্দ করি, ভালোবাসি। তাই খারাপ লাগে। তোমার কেন লাগবে? তুমিও তাকে পছন্দ করো? ভালোবাসো? ”

কোমলের হাত থেকে অনড়ার থুতনি ছুটে গেল। চোখের দৃষ্টি নামিয়ে নিল চট করে। ইতস্তত ভাব ছড়িয়ে পড়ল মুখটায়। বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বলল,
” বই-খাতা নিয়ে বস। আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি। ”

পড়ালেখায় তেমন একটা আগ্রহ নেই অনড়ার। বুবুর মন রাখতেই বই মেলে বসে। অংক কষে। আজ মন রাখায়ও উৎসাহ পেল না। তার চোখ-মুখে অন্যকিছুর উত্তেজনা, আনন্দ। ঠোঁট কামড়ে বুকে জড়ানো ওড়নার এক কোণের গিট্টু খুলে বলল,
” তেঁতুল খাবে, বুবু? ”

কোমল ভ্রূ কুঁচকে ফেলল। তেঁতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুই আবার গাছে উঠেছিস? ”

অনড়ার হাসি হাসি ভাবটা মুছে গেল। অবনত হয়ে বলল,
” তেতুলগুলো পেকে ছিল। ”
” পাকলেই গাছে উঠতে হবে? বলেছি না, মায়ের রুমে তেঁতুল থাকে সবসময়। ইচ্ছে হলে চেয়ে নিতে? ”
” রাখা তেঁতুল আর গাছের তেঁতুল খেতে কি এক? ”

প্রশ্নটা করে কোমলের দিকে তাকাল সে। কোনো জবাব না পেয়ে অনুবর্তন করে বলল,
” এরপর থেকে চেয়ে খাব। ”
” কথা দিচ্ছিস? ”

অনড়া কথা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। সে জানে, এ কথা রাখতে পারবে না। বাড়ির পেছনে গেলেই ভুলেভালে তেঁতুল গাছে উঠে পড়বে। অনড়ার দুর্বলতা ধরতে পারল কোমল। বলল,
” বাবাকে বলে, আজই বাড়ির পেছনের রাস্তাটা বন্ধ করব। ”

অনড়া মুখ গোমড়া করে বসে থাকল। কোমল বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
” নাস্তার সাথে লবণ-মরিচও বানিয়ে আনছি। ”

________________
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছে। নিবিড় ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই খুশিতে সে চিঠি লিখতে বসেছিল। সেসময় তার মুখের সামনে মিষ্টি ধরল দুলাল। নিবিড় লেখা বন্ধ করে দুলালের দিকে তাকালে তিনি বললেন,
” চেয়ে না থেকে হাঁ কর। ”

নিবিড় মিষ্টি খেয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কিসের মিষ্টি, দুলাল ভাই? ”
” খুশির মিষ্টি। তুই পাশ করেছিস তো সে খুশিতে মিষ্টি আনলাম। ”

নিবিড় একটুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আমার পাশের খবর তো আপনার জানার কথা না। বাইরে ছিলেন সারাদিন। ”

দুলাল বোকা হাসলেন। নিবিড় তাকিয়ে থাকলে তিনি হাসি বন্ধ করলেন। ফিসফিস গলায় বললেন,
” আমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছি আজ। ”
” আমরা বলতে কারা? ”
” আমি আর তুলি। ”

নিবিড় চমকাল একটু। সে জানত, দুলাল ভাই প্রেম করে। মাঝরাতে প্রেম আলাপে বিভোর হয়ে যেমন ফিসফাস করত তেমন ভরদুপুরে গলা ফাটিয়ে ঝগড়াও করত। বেশি চটে গেলে ফোন আছাড় মারত। সেই ভাঙা ফোন সারতে দুলালের সঙ্গে নিবিড়ও গিয়েছে অসংখ্যবার।

” অল্প বেতনের চাকরি আমার। রুম শেয়ার করে চলি। ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিলে মানবে না। এদিকে আমার মনও আর মানছে না। এক হাত দূরত্বে থেকে আর কত প্রেম করব? বিশ্বাস দিতেই বিয়েটা করা। ঠকাব এমনটা যাতে ভাবতে না পারে। ”
” ঠকানোর কথা ভাববে কেন? ”

দুলাল উত্তর দিতে গেয়েও থেমে গেলেন। মিষ্টির প্যাকেট রেখে বললেন,
” তুই বুঝবি না। ”
” কী বুঝব না? ”

তিনি শব্দ করে হাসলেন। গামছা প্যাচিয়ে প্যান্ট বদলালেন। নিবিড়ের প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে গোসলখানায় ঢুকলেন। বেশ কয়েক মিনিট পর বেরিয়ে দেখলেন নিবিড় আগের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ভ্রূ বাঁকিয়ে বললেন,
” তোর চিঠি লেখা শেষ? ”
” না, একটু বাকি। ”
” তাহলে শেষ কর। ”

নিবিড় চিঠি লিখতে বসল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে দুলাল ভাইয়ের সাজগোজ দেখছে। তিনি মানিব্যাগ আর মোবাইল নিয়ে বললেন,
” আজ রাতে আমি ফিরব না। আমার ভাগের তরকারিটা তুই খেয়ে নিস। ”
” বাড়ি যাচ্ছেন? ”
” না। ”
” তাহলে? ”

দুলাল ভাই ইষৎ হাসলেন। নিবিড়ের গালে আলতো থাপ্পড় মেরে বললেন,
” বউয়ের কাছে যাচ্ছি। ”
” এখন? উনার বাবা-মা কিছু বলবে না? ”
” তারা বাসায় নেই। ”

নিবিড় আবার প্রশ্ন করতে চাইল। তিনি সুযোগ না দিয়ে বললেন,
” তুই তো বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করে চলেছিস। মা-বাবার আদর খেয়ে আরও ছোট হয়ে এসেছিস নাকি? ”

জবাবে কিছুই বলতে পারল না নিবিড়। দুলাল ভাই বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বে দুষ্টুভঙ্গিতে বললেন,
” আরেকটু বড় হও। প্রশ্ন করতে হবে না, এমনি এমনি সব বুঝে যাবে। ”

কথা শেষে চোখ টিপ মারলেন তিনি। ঠোঁটে গুণগুণ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন আমুদে চালে। নিবিড় ছোট্ট শ্বাস ফেলে চেয়ারে বসল। সোনার দুলটি বের করে বিড়বিড় করল, ‘ আমরাও লুকিয়ে বিয়ে করেছি, দুলাল ভাই। কিন্তু আপনার মতো বলার অনুমতি নেই। ‘

______________
বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও একটা প্রশ্নের উত্তর পাননি রাবেয়া খাতুন। বুকের ভেতরের খচখচ ভাবটা কাটাতে স্বামীর পাশে বসলেন। এক ফাঁকে বললেন,
” তুমি কিন্তু বললে না নিবিড়ের মধ্যে কী দেখেছিলে। ”

স্ত্রীর কণ্ঠে হালকা অভিমান অনুভব করলেন আনিস মোল্লা। মুচকি হেসে সুধালেন,
” শুনতেই হবে? ”

রাবেয়া খাতুন উত্তর দেওয়ার বদলে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আনিস মোল্লার হাসি চওড়া হলো। স্মৃতিচারণ শুরু করলেন,
” চার-পাঁচ বছর আগের কথা। আমি জমির ব্যাপারে আলোচনা করতে ভূমি অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, রাস্তার ধারের বিলের কাঁদায় নেমে তিন-চারটে ছেলে ঝগড়া করছে। আমি ধমক দেওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে একটা ছোকরার গলা পেলাম। চিৎকার করে বলছে, ‘ কোমলকে খুঁড়া কইবি? ক, আর কইবি? ‘ একটা বাচ্চা ছেলের মুখে আমার মেয়ের নাম শুনে আমি চমকে গেছিলাম। চিৎকার করা ছেলেটির সারা শরীর কাদায় মেখেছিল। উপুত হয়ে দুই হাত দিয়ে দুইটা ছেলেকে এমনভাবে চেপে ধরেছে যে, শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। আমার উচিত ছিল ছেলে দুটোকে ছাড়িয়ে আনা। কিন্তু মন সায় দিল না। দেখতে ইচ্ছে হলো শেষ পরিণতি কী হয়। ঠিক তখনই দুটো ছেলেই হার মেনে বলল, ‘ কমু না। এই কাদা ছুঁইয়া কইতাছি, আর কোনোদিন খোঁড়া কমু না। ‘ সেই প্রথম আমি অনুধাবন করলাম, কোমলের খুঁড়িয়ে চলা নিয়ে অনেকেই আগেপিছে কথা বলে কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে পারিনি কখনও। আমার সম্মান, বিবেক, বয়স বাঁধা দিয়েছে সবসময়। তারও কয়েক মাস পর সেই ছেলেটিকে আমাদের বাড়ির আশপাশে ঘুরতে দেখলাম। ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে খুব কিন্তু পারছে না। আমার সাথে দেখা করতে চাইলে তো গেইট দিয়ে সরাসরিই ঢুকতে পারে। লুকিয়ে ঢোকার প্রয়োজন নেই। তারমানে সে আমার সাথে না, অন্য কারও সাথে দেখা করবে। তখনই মনে পড়ল আগের ঘটনা। তাহলে কি কোমলের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে? কোমল কি চিনে ছেলেটাকে? কোনো সম্পর্ক আছে ওদের মধ্যে? যদিও ছেলেটি অনেকটাই ছোট তবুও মনের মধ্যে সন্দেহ এসেই গেল। আমি কোমলের সাথে কথা বললাম। ছেলেটির ব্যাপারে সে কিছুই জানে না। এতে সন্দেহ দূর হলেও কৌতূহল গেল না। জমিলাকে পাঠালাম। শিখিয়ে দিলাম কোমলকে নিয়ে খারাপ কথা বলতে। সে তাই করল। ছেলেটার চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছিল জমিলাকে কামড়ে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু তেমন কিছু করল না। ফিরে গেল। কেটে গেল প্রায় এক বছর। ছেলেটিকে আর চোখে পড়েনি। ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। হঠাৎ একদিন কোমল নালিশ করল একটা ছেলে নাকি অনড়াকে কালি মাখিয়ে দিছে সারা শরীরে। আমি তার খোঁজ করতে গিয়ে হাজির হলাম মতিন মিয়ার বাড়ি। উঠান থেকেই দেখলাম, বাঁশের কুঞ্চি দিয়ে মারছে কাউকে। তাকে থামাতে গিয়ে দেখি সেই ছেলেটি। পরে জানতে পারি, এ মতিন মিয়ার ছেলে। নাম নিবিড়। আমি বিচার করা বাদ দিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম। জমিলাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, সেদিন নিবিড়ের সামনে বলেছিল, কোমল কালো। দেখতে অসুন্দর। তার থেকে অনড়া অনেক সুন্দর। পরির মতো গায়ের রঙ। ”
” তুমি বলতে চাচ্ছ, জমিলার উপর করা রাগ তার নাতনির উপর ঝাড়ছে? এত সময় পর? ”

আনিস মোল্লা উত্তর দিলেন না। মিটিমিটি হাসলেন। কয়েক সেকেন্ড পর বললেন,
” তুমি বলছিলে না, নিবিড়ের বয়স কম। সংসারের কিছুই বুঝবে না? ”
” ঠিকই তো বলেছি। ”
” সংসার বুঝার জন্য তোমার মেয়ে আছে। নিবিড় শুধু ভালোবাসতে পারলেই হবে। ঐ পারবে, আমার মেয়েকে সম্মানে রাখতে। ওর ত্রুটি, অসুন্দরকে ভুলিয়ে রাখতে। ”

রাবেয়া খাতুন চুপ থাকলেন। মনে মনে চাইলেন, স্বামীর ভাবনাগুলো যেন বাস্তব হয়।

” আমারে ডাকছিলেন, মালিক? ”

মতিন মিয়ার কণ্ঠ পেয়ে বিছানা ছাড়লেন রাবেয়া খাতুন। মাথায় ঘোমটা টেনে বেরিয়ে গেলে আনিস মোল্লা তাকে ভেতরে ডাকলেন। বললেন,
” একটা মিলাদের আয়োজন করতে হবে। বসো, হিসাব-নিকাশ করি। ”

মতিন মিয়া নিচে বসলে আনিস মোল্লা ধমকে উঠলেন,
” মাটিতে বসছ কেন? চেয়ার টেনে বসো। ”

ধমক খেয়ে মতিন মিয়া চেয়ার টেনে বসলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর বললেন,
” মিলাদের কথা কি কোমলমা কইছে? ”

আনিস মোল্লা খেয়াল করলেন তার কণ্ঠ কাঁপছে। চোখে অশ্রু জমছে। তিনি উত্তর দেওয়ার সময় পেলেন না। মতিন মিয়া দাঁড়িয়ে পড়লেন। আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললেন,
” নিবিড়ের মা হুনলে খুব খুশি হইব। আমি খবরটা দিয়া আসি। ”

_________________
অনড়া হঠাৎ খেয়াল করল তার বুবু স্কুলে যায় না। কলেজে যায় না। পরীক্ষা দেয় না। পড়ার জন্য কেউ বকে না। তবুও সে সারাক্ষণ বই পড়ে। ঘরভর্তি বই আর বই। তার মনে হলো, বুবু যে বই পড়ে এগুলো খুব মজার। মুখস্ত করে লিখতে হয় না। তার ইচ্ছে হলো নিজের বই ফেলে মজার বই পড়ার।

কোমল বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ায় মগ্ন। সে সুযোগে অনড়া বিশাল বুকশেল্ফের দিকে গেল। পড়ার জন্য একটা বই বাছাই করতে গিয়ে একটি সুন্দর বাক্স দেখল। ভীষণ কৌতূহল হয়ে প্রশ্ন করে বসল,
” বুবু, এই বাক্সটার ভেতর কী? ”

কোমল বইয়ে মুখ গুঁজে থেকে বলে ফেলল,
” ভালোবাসা। ”

চলবে

[ কাল দিতে পারিনি, তাই আজ বড় পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here