#মনের_কোণে পর্ব৩৩
#আফনান_লারা
.
‘আমায় কি এতটাই খারাপ লাগছে দেখতে?’
লিখির অভিমানের সুরে বলা কথাটা নাবিল বুঝতে পারলো।সে হাসি তামাশা বন্ধ করে বললো,’আচ্ছা আমি পরিয়ে দেই??’
লিখি তখন পিছিয়ে চলে গেছিলো।
‘এই মেয়ের রাগ সারাদিন নাকের ডগায় থাকে।কিছু হলেই রাগ করে চলে যাবে।সামান্য মজাও কি করা যাবেনা?’
———-
লিখি বের হতেই মায়ের সামনে গিয়ে পড়েছিল।মা তো নিজের শাড়ীর এমন বেহাল অবস্থা দেখে প্রথমে রাগ দেখালেন তারপর রুমে যেতে বলেছেন ঠিক ভাবে শাড়ী পরিয়ে দেবেন বলে। লিখি ভয়ে ছিল।বাবার কানে গেলে আরও বকা খেতো।
—
ওসমান নাবিলকে পছন্দ করত না কিন্তু বাবার চাপে পড়ে সে এখন নিরব।বাবা যদি রাজি না হতো তাহলে নাবিলকে ইচ্ছামত টাইট দিতো।সেবার কত দৌড়িয়েছিল ওকে এটা কি ভোলার মতন?এই গলি থেকে ঐ গলি কত গলি যে ঘুরিয়েছে নাবিল।ওদের জন্য সারারাত পাহারা দিতে হয়েছে ঐ এলাকার চায়ের দোকানে বসে।কত শত মশার কামড় খেয়েছে সে জানে আর তার রাত জানে।নাবিলকে একটা টাইট না দিলে তার মশার কামড়ের দাগ যাবেনা।এখন সারাদিন চোখের সামনে নাবিলকে দেখে তার একটুও সহ্য হচ্ছেনা।মন চাইছে ওরে কিছু একটা করে ফেলতে।
—
নাবিল রুম থেকে বেরিয়ে দেখছিল লিখিকে কোন রুমে দেখা যায়।
তার সামনে ডাইনিং।ডান পাশে দুইটা রুম।একটাতে ওসমানের বাচ্চাকে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে হাত পা নাড়ছে।মনে হয় এক/ দুবছর হবে।আর অন্য রুমে রুহুল আমিন পানের বাটুয়া নিয়ে বসেছেন।এবার সে বাম পাশে তাকালো।ওখানে রান্নাঘর আর আরেকটা রুম।সেটার দরজা বন্ধ।সে ভাবলো হয়ত ওখানেই লিখি আছে।সে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো ওসমান তার বউকে নিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থায়।
তবে বাচ্চাটা যে রুমে ঐ রুমটা কার?নাবিলের মাথা ফুটবলের মতন ঘুরে গেলো।
লিখি আসলে বাচ্চা যে রুমে ঐ রুমেই ছিল।আয়না দেখতে সামনে ঐ রুম পেয়ে ঢুকে গেছিলো।নাবিলকে এই কান্ড ঘটাতে সে দেখেছে আয়নায়।হাসতে হাসতে একটু কাছে এসে বললো,’আমি ওখানে না এখানে’
নাবিল জিভে কামড় দিয়ে ঐ জায়গা থেকে সরে এসে বললো,’কি লজ্জায় পড়ে গেলাম’
নাবিল আরও কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু লিখিকে পরিপূর্ণ ঠিকঠাক ভাবে শাড়ী পরতে দেখে সে কথা হারিয়ে ফেলেছে।
লিখি ওর চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো,’কি?কোথায় হারিয়ে গেলেন?সুন্দর লাগছে?’
‘হ্যাঁ এখন ঠিক আছে।শাড়ী পরলে সবাই সুন্দর’
‘তার মানে শাড়ী ছাড়া আমি সুন্দর না?’
নাবিল জিভ দিয়ে নিচের ঠোঁট টা ভিজিয়ে মুচকি হেসে যেতে যেতে বললো,’ওভাবে তো দেখিনি’
কথাটা এত জোরে গিয়ে কানে লাগলো লিখির লজ্জায় সে চোখের পলক ফেলার সাহসটা খোয়া দিয়ে ফেলেছে।কি বললো নাবিল এটা??সে বুঝাতে চাইলো জামা,সেলোয়ার সুটে সে সুন্দর না কেবল শাড়ীতেই সুন্দর নাকি।কিন্তু নাবিল যেভাবে উত্তর দিল সেটাই তো আশ্চর্যকথা!!
এরকম মিনিং বের করবে সে একেবারে কল্পনাও করতে পারেনি।লজ্জা শেষ করে ছুটে নাবিলের পিছু এসে বললো,’আপনি একটা খারাপ লোক’
‘সঠিক’
‘আপনি ডাবল মিনিং বের করেন সবসময়’
‘এটাও সঠিক ‘
‘আপনি একটা!!!আর কিছু বলবোনা আমি”
—-
জনাব অনাবিল আসতে আসতে অনেক রাত হবে অথচ বাড়িতে এমন আয়োজন চলছে যেন তিনি গেটের বাহিরে।
রুহুল আমিন বড্ড খুশি ওনার আসার কথা শুনে।তার মতে তিনি একজন নিরহংকারী মানুষ।এত বড় লোক হয়েও অহংকার করেননি এতে তিনি সন্তুষ্ট হলেন।তাই লোক লাগিয়ে দিলেন বিশাল আয়োজনের জন্য।
লিখি নাবিলকে চোখে চোখে রাখছে।নাবিল নিজেও প্রেমে পড়েছে অথচ সেটা বুঝতে দিচ্ছেনা।উল্টে লিখির মুখ দিয়ে কথা বের করার জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে।
কিন্তু সে তো জানেনা,লিখির চালাকির কাছে তার চালাকি সাদা পানি।
লিখি বুদ্ধি করে সত্যি সত্যি আসিফকে কল করে বাসায় আসতে বললো।আসিফ লিখির চেয়ে দু বছরের ছোট,এ কথা নাবিল জানেনা আর ওকে দেখে বোঝাও যায়না সে এত ছোট।নাবিলের মামাতো ভাই বাবুর বয়সী।
আসিফকে দিয়েই কাজ করে নাবিলের মুখ দিয়ে কথা বের করবে লিখি।আসিফদের বাসা একেবারে কাছে।আসতে সময় লাগবেনা।
লিখিকে কোণায় দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসতে দেখে নাবিলের মনে ঘটকা লাগলো।কারণ লিখি যখন এমন করে হাসে তখন আসল ঘটনা ঘটে।নাবিল টিভি অন করে সোফায় বসে বললো,’তোমায় শাড়ীতে দেখে যে দিওয়ানা হয়ে যায় তোমার সেই খালাতো ভাই কোথায়?’
—–
‘আমার কথা বলছেন নাকি দুলাভাই?’
আসিফকে দেখে নাবিল একটুও খুশি হয়নি।ওর স্বাস্থ্য বলে দিচ্ছে তার বয়স লিখির চেয়ে অনেক বেশি।নাবিল তো ভাবলো,, না জানি কোন কালের প্রেমিক।
আসিফ নাবিলের পাশে বসে ওর ঘাঁড়ে হাত রেখে বললো,’আমি হলাম আসিফ মায়ান।লিখির খালাতো ভাই’
‘ওর থেকে নাম শুনেছি ।তা তোমার বউ বাচ্চা কোথায়?’
‘আরেহ আমি সিঙ্গেল।’
‘ওহ’
আসিফ সিঙ্গেল এটা শুনে নাবিল মুখটা আরও কালো করে ফেলেছে।লিখি আসিফকে ইশারা করে চলে গেছে সামনে ঘেকে।ইশারা পেয়ে আসিফ নাবিলের দিকে ফিরে বসে বললো,’তো লিখিকে কেমন রাখছেন?ভাল রাখছেন তো?হুট করে বিয়ে করে ফেললেন, আমাদের তো সুযোগ দিলেননা’
নাবিল চমকে গেলো।কিসের সুযোগ,কার সুুযোগ??লিখির ব্যাপারে সুযোগ?আশ্চর্যবোধ করে সে আসিফের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো কিসের সুযোগের কথা বলছে।
আসিফ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,’আরে এত ভাবার কিছু নেই,আমি বিয়োর দাওয়াতের সুযোগের কথা বললাম,আপনি তো বেশি ভেবে ফেললেন’
লিখি আসিফকে সব বুঝিয়েই এনেছে।নাবিলের মুখ থেকে কথা বের করাতে সে লিখিকে সাহায্য করতে এখানে আসলো আজ।ইতিমধ্যে নাবিল জ্বলাও শুরু করেছে।
আসিফের সামনে লিখি বিসকুট আর চানাচুর রেখে ওর পাশে বসে বললো,’বলো আমায় কেমন লাগছে?’
‘অসাধারণ।এই রঙে তোমায় এত মানায় আমি তো জানতামই না, জানলে তোমায় হাজারটা শাড়ী গিফট করতাম এ রঙের।’
নাবিল গাল ফুলিয়ে চ্যানেল পাল্টাচ্ছে।লিখি দাঁত কেলিয়ে বললো,’মিষ্টি কালারে তো আমায় মিষ্টি লাগে,কথাটা তো তুমিই বলেছিলে’
নাবিল সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো চ্যানেলের।লিখি আর আসিফ মিটমিট করে হাসছে শুধু।
মা সেসময়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে বললেন,’লিখি একটু মাংসটা দেখ তো।আমার হাতে একটা কাজ পড়েছে।বানু লবণ বেশি দিয়ে ফেলবে তাই তোকে দেখতে বলছি’
মায়ের কথা মতন লিখি উঠে চলে যাওয়ার সময় কি ভেবে আসিফের দিকে ফিরে বললো,’মাংসের লবণ আমিও বুঝিনা,একটু দেখে দিবা?আসো আমার সাথে’
আসিফ উঠা ধরতেই নাবিল উঠে বললো,’শালাবাবু তুমি টিভি দেখো, আমি যাচ্ছি।আমি আবার লবণ ঠিকঠাক বুঝি’
লিখি তখন চলে গিয়েছিল।সে জানেনা আসিফকে নাবিল আসতে দেয়নি।সে মাংস নাড়তে নাড়তে বললো,’আসিফ কেমন হলো আমার……’
কথাটা শেষ করার আগেই নাবিলকে দেখে কথা আটকে ফেললো সে।
‘কেমন হলো তোমার শাড়ী? আসিফ আর কয়বার বললে তোমার শান্তি লাগবে?’
‘আপনি আসলেন যে?আমি তো আসিফকে ডেকেছিলাম’
নাবিল তাকের সাথে হেলান দিয়ে বললো,’কেন?আমি আসায় ক্ষতি হলো?’
‘লাভ ও তো হলোনা’
‘আমি ভাল লবণ টেস্ট করতে জানি তাই আমি এলাম।দাও তো’
লিখি চামচ এগিয়ে দিয়ে নাবিলের মুখের অবস্থা দেখে জোরেশোরে হেসে ফেললো। এত সহজে স্বীকার করা যাবেনা সব,এখন হাসির কারণ তো বলতে হবে।
কিন্তু সে কিছু বলার আগেই নাবিল বললো,’হাসতে হবেনা, আমি মোটেও জেলাস হচ্ছিনা।কাজিনরা এমনই করে’
‘কেমন করে?’
‘যেমন দেখতেছি’
‘যদি আরও বেশি কিছু দেখেন?’
‘আর কি দেখবো?’
‘আসিফ লুডু খেলবি?’
কথাটা বলে লিখি নাবিলের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে।কিন্তু নাবিল ওকে রান্নাঘরের বাইরেই যেতে দেয়নি।হাত ধরে ফেললো।খুব শক্ত করেই ধরেছিল।লিখির হাত লাল হয়ে আসছিল একেবারে।ওর চোখের পলক পড়তে না দেখে নাবিল ধীর স্বরে বললো,’লবণ দিতে হবে, কম হয়েছে’
লিখি হাত ছাড়িয়ে বললো,’আর একদিন হাত ধরলে ধরে নিবো আপনি আমায় ভালবাসেন’
চলবে♥