বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ_১

0
1065

#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ_১
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

১ মাস পর বাড়িতে এসে দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখে দরজার সামনে ঠায় দাড়িয়ে আছে রুদ্র চৌধুরি। রুদ্রকে দেখেই চাদর দিয়ে নিজের শরির ঢেকে নিলো সামিয়া। রুদ্রকে দেখেই অবাকের চরম সীমানায় সে। কারণ রুদ্র বলেছিলো তার আসতে আরো দু,একদিন লাগবে।
স্কুল বেগ কাধে নিয়ে মা মা বাবা এসেছে বাবা এসেছে বলে বলে রুমে প্রবেশ করলো তাদের একমাত্র ছেলে রাত। ভেতরে প্রবেশ করে এই অবস্থা দেখে সেও অবাক। কারণ এই পরিস্থিতিতে ক্লাস নাইনে পড়ুয়া রাত মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে এখানে কি হয়েছে। কারণ নাইনে পড়ুয়া ছেলে কিছুতেই এই ব্যপারে অবুজ নয়।
সামিয়া চাদর দিয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে আর রাতের হোম টিচার নিজের জামা কাপর পড়তে ব্যাস্ত।
ব্যাবসার কাজে একমাসের জন্য বাইরে ছিলো রাতের বাবা রুদ্র চৌধুরি। যদিও আরো কয়েকদিন পরে আসার কথা ছিলো তবে কাজ কমপ্লিট হওয়ায় আগেই চলে এসেছে সে। আর এসেই এমন একটা কান্ড দেখবে তা ভাবতেও পারেনি রুদ্র।
পাসে অর্ধোলঙ্গ ভাবে দাড়িয়ে থাকা লোকটা প্রায় দু,বছর ধরেই রাতকে টিওশনি করার। নিজের স্ত্রীর মতো তাকেও খুব বিশ্বাস করেছিলো রুদ্র।
রুদ্র চৌধুরি খুব সান্ত সভাবের একটা লোক। রাতের হোম টিচার জামা কাপর পড়ে বেড়িয়ে গেলো তাদের সামনে দিকে। তবুও কিছু বললো না রুদ্র চৌধুরি।
সারা রুম ফিন ফিনে নিরবতায় বিরাজ করছে। মায়ের প্রতি একরাশ ঘৃনা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় রাত। সামিয়া দৌড়ে এসে জরিয়ে দরে রুদ্রের পা দুটি। এতেও শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে সে। কোনো সিনক্রেইট করতে চায় না রুদ্র, কারণ সিনক্রেইট করা মানেই লোক জানাজানি হওয়া। এতে তার ফেমিলির মান সম্মান দিয়েই টানাটানি পরবে।

দু,দিন পরই তাদের ডিবোর্স হয়ে যায়। মানুষ ডিবোর্সের ব্যপারটা জানে কিন্তু কারণটা সকলেরই অজানা।
সামিয়া কেদেকেটে অনেক অনুরুধ করলো রুদ্রকে। কিন্তু রুদ্র বরাবরই বলে দিলো, বিশ্বাস ঘাতকের সাথে সে কোনো সম্পর্ক রাখতে চায় না।
ডিবোর্সের সময় শুরু হলো রাতকে নিয়ে দন্দ। সামিয়া রাতকে তার সাথে নিয়ে যেতে চায়। আর রাতকে দিতে নারাজ রুদ্র চৌধুরি।
এর সমাধানও হলো খুব সহজ ভালো। রাত যার সাথে থাকতে চায় তার কাছেই থাকবে সে।
প্রতি উত্তরে রাত সোজাসুজি ভাবে বলে দেয় সে তার মায়ের মুখও দেখতে চায় না কোনো দিন।

ডিবোর্সের তিনমাস পেরিয়ে গেলো। এর মাঝে রাতকে অনেকবার নিয়ে যাওয়ার চেষ্ট করেছে সামিয়া। কিন্তু প্রতিবারই ব্যার্থ হলো।
ওইদিনের পর থেকে রাতও কেমন বদলে গেলো। প্রয়োজন ছারা কোনো কথা বলে না আর। চুপচাপ প্রকৃতির হয়ে গেছে সেও।
রাতের বাবা রাতকে হাসি খুশি রাখতে রাতের সকল পছন্দের কাজগুলোই করে। কিন্তু এতেও মন বসেনা রাতের। জম্মাতে থাকে মেয়ে জাতির প্রতি একরাশ ঘৃনা।
দাদির সাথেও তেমন একটা সময় কাটানো হয় না রাতের। ছোটবেলার মতো নানান গল্প শুনা হয়না আর।
কেটে গেলো অনেকদিন। দেখতে দেখতে এস,এস,সি পরিক্ষা চলে আসে রাতের। পড়াশুনায় বরাবরই ভালো ছিলো রাত। কিন্তু মানসিক চাপ একটু একটু করে শেষ করে দিচ্ছে তাকে।
এস,এস,সি তে পূর্বের মতো ভালো রেজাল্ট না করলেও। অতটাও কারাপ করেনি সে। মোটামুটি ভালোই করেছে।

রুদ্রের একাকিত্তের বিষয়টা ভেবে তার মা নয়নতারা বেগম সিদ্ধান্ত নেয় রুদ্রের দ্বিতীয় বিয়ের কথা। রাতের কথা ভেবে রুদ্র রাজি না হলেও নানান ভাবে ব্লেকমেইল করতে থাকে তার মা।
রাতের বেলায় খোলা আকাশের নিচে হালকা বাতাসে ছাদে হাটাহাটি করছে রুদ্র চৌধুরি।
বাবার পাসে এসে দাড়ায় রাত।
– বাবা একটা কথা জানার ছিলো। বলবো?
– হ্যা বল বাবা।
– তুমি কি আবার বিয়ে করবে?

ছেলের প্রশ্নের উত্তরটা কি হবে তা জানা নেই রুদ্রর। ওদিকে তার মা নানান ভাবে ব্লকমেইল করছে তাকে। মাকেও যে সে খুব বেশি ভালোবাসে।
রুদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,
– তুমি বিয়ে করো না বাবা। দরকার নেই বিয়ের। আমরা ভালোই আছি।

অবশেষে ছেলের কথা রাখতে ব্যার্থ হলো রুদ্র চৌধুরি। রাতও দ্বিতীয় বার অনুরুধ করলোনা তার বাবাকে। চুপচাপ সব দেখে গেলো। আজ তেকে তার বাবাও তার থেকে দুরে সরে গেলো। অন্য কেও নিয়ে নিয়েছে তার বাবাকে।
তীব্র একাকিত্বয় ঘিরে পেলেছে রাতকে। বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো তার জীবন।
কিন্তু কে জানতো রাতের জীবনেও ঘটতে চলছে অন্য কারো আগমন। মেয়েদের প্রতি তীব্র ঘৃনা থালেও। একজনকে ভালো লাগতে শুরু করবে তার।

পূর্বের কথা মনে পরতেই বুকটা কেপে উঠে তার। একটা ঘটনাই এলোমেলো করে দিলো তার জীবনটা। এখনো চোখের সামনে বারবার ভেষে উঠে তার হোম টিচার আনিসের মুখটা।

এইচ,এস,সি পাশ করে নতুন কলেজে পা রাকলো সে। নতুন কলেজ, নতুন বন্ধু বান্দব তাতেও যেনো রাত ভিন্ন একটা জগতে বন্দি। মেয়েদের কাছ থেকে নিজেকে সব সময় দুরে দুরে রাখে রাত। ওসব প্রেম ভালোবাসায় সে বিশ্বাসি নয়, সব হলো অভিনয়, আর দিন শেষে সবাই অভিনেতা।

একটা মেয়ের হাত ধরে টানতে টানতে বন্ধু মহলে নিয়ে গেলো রাত। ছোটার আপ্রান চেস্টা করছে মেয়েটা।
– আরে কে আপনি ছারুন আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?
কিন্তু রাতের কোনো রেসপন্স নেই।

রাতের বন্ধু রাফি কে একটা মেয়ে থাপ্পর মারবে বলেছিলো সকলের সামনে। তাই রাতের এমন রি-একশান। রাফি হা করে তাকিয়ে আছে।
– এই মেয়ে, তোমাকে একটা ছেলের ভালো লাগতেই পারে তাই বলে তুমি তাকে অপমান করতে হবে? সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললে কি হতোনা।

– আজব কি বলছেন আপনি? আমি তো আজই নতুন আসলাম। তাছারা আমি তো তেমন কাওকে চিনিও না।

এর মাঝে রাফি বলে উঠে,
– আরে ভাই কি করছিস তোরা। আর এ তো রাফিয়া না। কাকে নিয়ে এলি তুই।

রাত একটু অবাক হলো, তাহলে কাকে নিয়ে এলো সে?
– কি? এই মেয়েটার কথা না বললি, আরো হাত দিয়েও দেখিয়ে দিলি।

– আরে ও এটা না। আর আমার পুরু কথাটা শুনার আগেই তো তুই চলে গেলি।

রাত একটু বিরক্তিকর ভাবে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে,
– স্টুপিড।

রাপি মেয়েটাকে বলে উঠে,
– সরি আপু, একটু মিস্টেক হয়ে গেছে। প্লিজ মনে কিচু নিবেন না।

ওরা চলে যাওয়ার পরই দুটা ছেলে এসে মেয়েটার পাশে দাড়ায়।
– কি হয়েছে মেম, এনি প্রব্লেম?

– না তেমন কিছু না। আর আপনারা সব সময় এভাবে আমার পিছে পরে থাকেন কেনো? আমার কি স্বাধিন ভাবে চলতে দিবেন না আপনারা।

– সরি ম্যাম জানেন ই তো আপনাকে দেখে রাথাটা আমাদের ডিউটি। আর এটাই স্যারের অর্ডার।
,
,
,
ছোট বেলা থেকে গিটার বাজানোতে অভ্যস্ত রাত।
ভার্সিটির একটা কর্নারে বসে সেই গিটারের শুর তুলতে ব্যস্ত সে। কিছুক্ষন পর একটা মেয়ে এসে দাড়ায় তার পাশে। বেশি লম্বাও নয় আবার খাটো ও নায়, মাঝামাঝি। একেবারে পার্ফেক্ট সাইজ যাকে বলে। বেশ সুন্দর মেয়েটা মুখটাও মায়াময়ি। মায়াবি চোখ গুলো যেনো চোখ নয় একটা মায়াজাল। ওই চোখে তাকিয়ে মায়াজালে আবদ্ধ হবেনা এমন ছেলে খুব কমই।
রাতের পাশে দাড়িয়ে হাই দিতেই কোনো রেসপন্স দিলোনা রাত। এতে একটু অপমানিত হয় মেয়েটা। কতো ছেলে তার দিকে তাকিয়ে তাকে আর এই ছেলের কোনো পাত্তাই নেই। সেদে সেদে কতা বলতে এলাম তাও কতো ভাব। রাতের পাশে বসে পরে মেয়েটা।
– বাহ্ আপনি তো দেখছি খুব সুন্দর করে গিটার বাজান,,,

এবার রাত একটু আড় চোখে তাকায় মেয়েটার দিকে। দেখে কালকের ওই মেয়েটা। রাত মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠে,
– সরি,,,,,
– কেনো?
– কালকের ঘটনার জন্য।
– ইটস ওকে। আপনি কি সব সময়ই এমন চুপচাপ থাকেন?
কোনো উত্ত দিলো না রাত।
হাত বাড়িয়ে মেয়েটা বলে উঠে,
– আমি বৃষ্টি।
একটু বিরক্তিকর ভাব নিয়ে উঠে চলে যাচ্ছে রাত। পেছন থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– আপনার নাম টা?
রাত কোনো উত্তর না দিয়েই সোজা হেটে চলে গেলো।
এবার রাগে মাথায় রক্ত উঠে গেলো বৃষ্টির,,,
” এতো ভাব? কতো সাহস আমার প্রশ্নকেই এড়িয়ে চলে। নামটা জিজ্ঞেস করে কি মোহাভারত অসুদ্ধ করে ফেললাম নাকি?
রাগে কটমট করছে বৃষ্টি।

রাত হাটতে হাটতে কিছুদুর এসেি দেকলো, একটা মেয়ে ও একটা ছেলের মাঝে কতা কাটাকাটি চলছে। কাথা শুনে মনে হলো ব্রেকআপের কথা চলছে তাদের মাঝে।
সেদিকে কোনো কান না দিয়ে সোজা হেটে চলে গেলো রাত।
” এগুলোি আজ কাল কার ভালোবাসা। কিছু সম্পর্কের যে কোনো একজন হয় পাক্কা অভিনেতা। আরেকজন না বুঝেই অন্ধের মতো ভালোবেসে ফেলে। এগুলো ভাবতে ভাবতেই হেটে যাচ্ছে রাত।
ওসব প্রেম ভালোবাসা সম্পর্ক এগুলো সব মিথ্যা।

গাড়ি করে বাড়ির পথে রওনা দিলো বৃষ্টি। নিজস্ব গারিতেই আসা যাওয়া করে সে।
রাতকে দেখার পর থেকে কেমন একটা আকর্ষন কাজ করছে তার মাঝে। রাতের এক্সট্রা এটিটিউট গুলো ধিরে ধিরে ভালো লাগতে শুরু করে তার মাঝে। কিন্তু দু,একদিনের পরিচয়ে এটাও কি সম্ভব?

বাসায় প্রবেশ করে দেখে বাবা এখনো ফিরেনি। রাজনৈতিক কাজে জড়িতো তার বাবা। দুই দুই বার নির্বাচিত রানিং এন,পি।

দেখে তার মা সোফায় বসে বসে কার সাথে কথা বলছে আর হাসছে।
– আরে তুই কোনো চিন্তাি করিস না, বৃষ্টিকে আমি ভালো করেই চিনি। ওর সব কিছুই আমি জানি। তুই আগে পড়াশুনা শেষ করে দেশে আয়। সব চিন্তা ভাবনা তার পর।
বৃষ্টিকে দেখেই বলে উঠলো,
– এইতো বৃষ্টিও এসে গেছে নে কথা বল তার সাথে।

এতে একটু বিরক্ত হলো বৃষ্টি,,
– মা আমার এখন টায়ার্ড লাগছে, ফ্রেস হতে হবে। কলেজ থেকে আসলাম মাত্র।

বলেই বৃষ্টি উপরে চলে গেলো। ফোনের ভিতর সব শুনছে সাজিদ। নিরবতা ভেঙে সাজিদ বলে উঠে,
– দেখো ফুফি, বৃষ্টির এখন ভালো মন্দ বোঝার বয়স হইছে তাই ও যেমন চায় তেমনই চলুক। কিন্তু তোমরা ওকে ছার দিয়েছো তাই বলে ছেরে দিবে না। তুমি বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চাইছি।

– আরে তুই কোনো টেনশন নিস না তো।

উপরে গিয়ে নিজের রুমে ঢুকে যায় বৃষ্টি। বুঝতেই পারছে ওই সাজিদই ফোন দিয়েছে। নিজের ফেন থেকে নাম্বার ব্লক করে দিলাম এখন মায়ের ফোন দিয়ে কথা বলতে চাইছে। অসহ্য লোক একটা, এতো এবোএট করি তাও ছেচরামি কমে নি।
সাজিদ হলো তার মামাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই নাকি সে বৃষ্টিকে পছন্দ করে। মাকেও রাজি করিয়ে পেলেছে সে। কিন্তু বৃষ্টির কোনো ইন্টারেস্ট নেই সাজিদের প্রতি।
মনের উপর জোর করে যাই হোক কখনো ভালোবাসা হয় না।

রাত করে বাসায় ফিরে আসে রাত। ঘরে প্রবেশ করতেই সামনে এগিয়ে আসে তার দ্বিতীয় মা পলি। এই বংশে এসে নামের সাথে চৌধুরিটাও যোগ হয়েছে। – সারাদিন কোথায় থাকো তুমি? আর এতো রাত করেই বা বাসায় ফিরো কেনো?
– যেখানেই থাকি বেচেইতো ফিরে আসি তাই না।
– বেচে পিরবেনাইবা কেনো? সারাদিন তো পারো শুধু বাবার টাকা উড়াতে। কষ্ট বুঝবেই বা কি করে।
– আমার বাবার টাকা আমি কি করবো না করবো সেটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার। বাইরের কোনো মানুষের এই ব্যপারে নাক গলানো আমার পছন্দ নয়।
এই বলেই হাটা ধরলো রাত। কথাগুলো একসময় গায়ে লাগতো রাতের। এখন শুনতে শুনতে অভ্যস্ত।
সোজা উপরে চলে গেলো সে। কারন সে নিজেই জানে কে কতোটা কষ্টে আছে।
ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরার রাত। এই সিগারেটই এখন তার নিত্য দিনের সঙ্গি।

চোখে ঘুম নেই বৃষ্টির। ফেসবুকে একের পর এক আইডি সার্চ দিয়ে যাচ্ছে রাতের আইডির খোজে। কিন্তু ওই নামে ওর কোনো আইডিই খুজে পেলো না সে।
“ও এতোটা গম্ভির কেনো সব সময়? একধম সবার থেকে আলাদা। এটা কি ওর এটিটিউট নাকি গম্ভিরতা?
ভাবনার সমাপ্তি ঘটে তার মায়ের চেচামেচি শুনে। চেচাতে চেচাতে তার রুমের দিকে এগিয়ে আসছে তার মা। কারণ কি?

To be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here