#সুখের_নেশায় পর্ব৫২

0
697

#সুখের_নেশায় পর্ব৫২
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

শক্তপোক্ত হাতের তিন তিনটে থা’প্প’ড় লাল টসটসে কপোলে মাখিয়ে ফাইয়াদের বক্ষে পড়ে আছে জাইফা। অতর্কিতে এমন এক কান্ডে মুখে হাত চৈত্রিকার। অন্যদিকে বুকে একটা মেয়ে পড়ে আছে এতে ফাইয়াদ হতভম্ব,বাকরুদ্ধ। দু’ হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণের ন্যায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সে। কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা। সাফারাত, চৈত্রিকা দু’জনে বাহিরে আসছিল না অনেকক্ষণ সময় অতিক্রম হয়ে যাওয়ার পরও। তাই ফাইয়াদ ডাকতে আসে,ঠিক সেই মুহুর্তে তুলোর মতো উড়ে এসে ওর বুকে হামলে পড়ে লাল চুলের,সাদা চামড়ার এক মেয়ে।

চৈত্রিকা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাফারাতের কপালের শিরা উপশিরা ভেসে উঠেছে। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ। মেয়েটা তখন ওকে ঠেলে সাফারাতের সমুখে আসতেই ‘ জাইফা ‘ নামে চাপা গর্জন করে উঠে সাফারাত। সঙ্গে সঙ্গে চৈত্রিকার সমস্ত দেহ কেঁপে উঠে,ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মেয়েটার দিকে চাইতেই পলকেই সপাটে চড় বসিয়ে দেয় সাফারাত। চৈত্রিকা জাইফা কে ধরতে যাবে তার পূর্বেই মেয়েটা ফাইয়াদের বুকে ঠাঁই পায়। ফাইয়াদের চলাচল আয়ান ও সাফারাতের সঙ্গে হওয়ার সুবাদে ছোট খাটো গেট টুগেদারে তাকেও শামিল করা হয়।

ফাইয়াদ গিয়ে কি হাওয়া হয়ে গেল?সিনথিয়া উঠতে নিলে প্রিয়ন্তী চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ আমি যাচ্ছি ভাবী। আপনি এখানে থাকুন। ‘
এটা বলে প্রিয়ন্তী দরজার কাছে আসতেই ওর চক্ষু চড়কগাছ। অন্তস্থল কেমন যেন নড়ে উঠল। মনে এক সেকেন্ডের ঝড় বয়ে গেল। দীর্ঘ হলো না। তবে ঝড়ের বেশ বেগ ছিল,হৃদপিণ্ড কেমন নাড়িয়ে দিয়ে গেল। ফাইয়াদের বুকে জাইফা!কিন্তু কেন?ফাইয়াদ জাইফাকে কেন বুকে নিল?নানা প্রশ্নে অভ্যন্তর হাস ফাঁস করতে আরম্ভ হয় প্রিয়ন্তীর। আকস্মিক লোহার মতোন ভারী হয়ে যাওয়া পা দু’টো টেনে টেনে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। দেখল,জাইফা অতীব স্বাচ্ছন্দ্যে নাক টেনে টেনে বন্যা বইয়ে দিচ্ছে ফাইয়াদের বুকে। অপরদিকে ফাইয়াদ নির্বিকার। মাথা উচিয়ে দেখতে চাইল প্রিয়ন্তী ফাইয়াদের মুখে বিরক্তি আছে কি-না। না নেই, আছে কেবল অবিশ্বাস্য ভাব। প্রিয়ন্তী ঝটপট নজর সরিয়ে আনল। জাইফার এতো নিশ্চিন্তে অশ্রুপাত, ফাইয়াদের কোনো প্রকার অভিব্যক্তি না করায় প্রিয়ন্তীর মন বলছে এরা পূর্ব পরিচিত ও দু’জন হয়ত প্রেমিক -প্রেমিকা। কিন্তু সাফারাত ও চৈত্রিকার সামনে এভাবে আলিঙ্গন? প্রিয়ন্তী লজ্জা অনুভব করল। হতে পারে এদের দেশে এসব চলে,কিন্তু ওরা তো ভিন্ন দেশের। একটুও চোখ সরমভরম নেই! যে দেশে প্রকাশ্যে ওষ্ঠাধরের মিলন হয়,তাতে আলিঙ্গন তো খুবই তুচ্ছ এক বিষয়। প্রিয়ন্তীর মনে ফাইয়াদের জন্য যে ভালো লাগার জায়গা টা তৈরি হয়েছিল তা নিমেষে খন্ড দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। গলা ধরে আসছে,কন্ঠনালিতে শব্দমালা আঁটকে যাচ্ছে, তবুও ঢোক গিলে সাফারাতকে ডাকল,

‘ ভাই?বাহিরে সবাই ডাকছে। ‘

মেয়েটার কথার সুর ঝংকার তুলে ফাইয়াদের কর্ণকুহর হলো। কোকিলের মতো বেজে উঠল যেন। মুহুর্তেই জাইফাকে বুক থেকে এক প্রকার ছিটকে ফেলে দিল। জাইফা এতক্ষণে সম্বিৎ ফিরে পায়। থা’প্প’র খেয়ে সমস্ত দেহ অসাড়তা লাভ করেছিল। থরথর করে কাঁপছিল মেয়েটা। সাফারাত বিরক্তিসূচক কন্ঠে বলে উঠল,

‘ তোরা যা,আমি চৈত্রকে নিয়ে আসছি। আর সাথে এই উন্মাদ মেয়েটাকে নিয়ে যাবি। আমার চোখের সামনে যেন না পড়ে। বিবাহিত পুরুষের গায়ে লেপ্টে পড়ে। আমি এক বাচ্চার বাপ হতে যাচ্ছি এবার পিছু ছাড় বোন। ‘

শেষের কথাগুলো শুনে চক্ষুদ্বয় পিটপিট করে তাকালো জাইফা। এক তো থা’প্প”ড়ে ভীষণ আহত সে, তার উপর সাফারাতের রাগমিশ্রিত বাংলা শব্দাংশ,বাক্য। সে বাংলা পারে কিন্তু ঠিকঠাক নয়। সাফারাত এক বাচ্চার বাপ হতে যাচ্ছে শুনেই হুড়মুড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল জাইফা। সেদিকে চেয়ে চৈত্রিকা সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছাড়ল। সাফারাত এভাবে জাইফাকে আ*ঘাত করবে ঘূনাক্ষরেও কল্পনা করে নি ও। এত ক্রোধ,জেদ এই লোকটার! আর মেয়েটাও বাচ্চামো স্বভাবের। জাইফা নামটা সাফারাতের মুখে শুনেই চৈত্রিকার চট করে মনে পড়ে যায় বাংলাদেশে থাকাকালীন আলো বলেছিলেন জাইফা নামের একটা মেয়ের সাথে উনি সাফারাতের বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছিলেন কিন্তু সাফারাত রাজি হয় নি। চৈত্রিকা মনে মনে বলল, ‘ এই মেয়েই তাহলে জাইফা যে সারাক্ষণ সাফারাতের কাছ ঘেষঁতে চাইত!’

ভাবী-ভাইকে একান্তে ছেড়ে প্রিয়ন্তী বেরিয়ে আসে। এখানে কি হয়েছে কিছুই ওর বোধগম্য হচ্ছে না। কিন্তু মনটা অতিশয় বেই’মানি শুরু করেছে ওর সঙ্গে। বারংবার চক্ষে ভাসছে ফাইয়াদের বুকে জাইফার অবস্থানের দৃশ্য খানা। জাইফা আয়ানদের পাশের বাসার। প্রতিবেশী। মিসেস তিয়ানার একমাত্র কন্যা। বাগানের দিক টায় যেতে নিলে বিচলিত একটা স্বর ডেকে উঠল ওকে–‘ প্রিয়ন। ‘
পা জোড়া থেমে গেল। ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল ফাইয়াদকে। ফাইয়াদ তড়িৎ বেগে উপস্থিত হলো ওর সম্মুখে। জিজ্ঞেস করলো,
‘ ওই মেয়েটা কে টুমি চিনো?আমার বুকে পড়েছিল। ‘
প্রিয়ন্তীর ভ্রুঁ যুগল কপাল ছুঁয়ে দিল তৎক্ষনাৎ। রুক্ষ কন্ঠে,গলায় তেজ ঢেলে বলে উঠল,
‘ আপনার গার্লফ্রেন্ডকে আপনি চিনেন না?জার্মানির বাচ্চা ন্যাকামি তো ভালোই পারেন। মিথ্যুক একটা। আরেকবার প্রিয়ন ডাকলে শরীরের ছাল তুলে ফেলব। ছোট হতে পারি,বেক্কল না। ‘

কথাগুলো বলে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে প্রিয়ন্তী হনহনিয়ে ত্যাগ করল স্থান। ফাইয়াদ আহাম্মকের মতো চাইল। চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসবার উপক্রম। প্রিয়ন্তী এত দ্রুত বাংলা বলেছে ছেলেটার মাথায় কিছুই ধরে নি। বিড়বিড় করতে থাকে,
‘ ইশ!প্রিয়ন কি বলে গেল?মোবাইলে রেকর্ড করে রাকলে তো পরে আসতে আসতে সুনে বুঝতে পারতাম। ‘
.
.
সাফারাত মাথার কয়েক গাছি চুল টেনে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। রাগ জিনিসটা নিজের উপর চওড়া হতে দেয় না সহজে। যথেষ্ট চেষ্টা করে সংবরণের। জাইফার কুরুচিপূর্ণ আচরণের ক্ষেত্রে পারল না। মেয়েটা আগে থেকেই উড়নচণ্ডী দশার। বছরে কয়েকবার বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানো তার স্বভাব। সাথে অভিনব, নতুন বিএফ তো আছেই। এ ধরনের মেয়ে একদমই পছন্দ না তার। দেখলেই মস্তিষ্কে রক্ত চাপে। খু*ন করার নেশা জাগ্রত হয়। চৈত্রিকাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নিয়ে সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলো,
‘ ঠিক আছেন আপনি চৈত্র?’
‘ জ্বি। ‘
‘ চলুন তাহলে। ‘

কেউ চেয়ারে,কেউ ঘাসের উপর আবার কেউ কেউ দোলনায় বসে আছে। বাগানের একপাশে পাতানো বেঞ্চে খালুর পাশাপাশি একটা অপরিচিত বয়স্ক লোক কে দেখতে পেল চৈত্রিকা। আলো বেগমের পাশাপাশিও একটা অপরিচিত মহিলা বসে খুশগল্প করছেন। আলো চৈত্রিকাকে সাফারাতের পাশে দেখতে পেয়ে এক গাল হাসি হাসলেন। বিদেশি মহিলা টার দিকে চেয়ে ইংরেজি ভাষায় বলে উঠলেন,
‘ লুক তিয়ানা শি ইজ চৈত্র। সাফারাতের ওয়াইফ। তোমাকে ওর কথা-ই বলেছিলাম। ‘

মিসেস তিয়ানা হাসোজ্জল মুখে তাকালেন। চোখ দুটো বেশ টানা টানা। পুরো চেহারা জুড়ে যেন আলোর ছটা। অতীব সুন্দর নারী। চৈত্রিকার অনেক পছন্দ হলো ওনার মনোমুগ্ধকর হাসি টুকু। অতঃপর শুনতে পেল ওনার সাবলীল কন্ঠস্বর,
‘ হাউ আর ইউ কিউট গার্ল?ইউ আর সো প্রিটি। ‘

চৈত্রিকা লজ্জা পেল অল্পসল্প। রূপে সে পিছিয়ে নয়। বেশ ফর্সা ও সুন্দর। বরং এতকাল মানসিক অশান্তি, পরিবারের টানাপোড়েন, বাবার দেওয়া কষ্ট সব মিলিয়ে ফুলের ন্যায় মূর্ছে গিয়েছিল। প্রেগন্যান্ট হবার পর রূপ,সৌন্দর্য দ্বিগুণ হলো। সাফারাতের মতো জীবনসঙ্গী পেলে বোধহয় কোনো মানসিক অশান্তি জীবনে ভর করতে পারে না। প্রতি মুহুর্ত,প্রতিক্ষণ সুখের হয়। তবে যেই মানুষ টা মুঠো ভরে আঁজলা তে সুখ ঢেলে দিচ্ছে সে কি সুখী?মানসিক কষ্ট তার হৃদয় রক্তাক্ত করছে না তো?চৈত্রিকা নম্রতার সহিত জবাব দিল,
‘ ফাইন মিসেস তিয়ানা। হাউ আর ইউ? ‘
‘ ফাইন,প্রিটি গার্ল।’

আলো বেগম সবাইকে কফি দিয়ে, আরেক কাপ কফি হাসিমুখে সাফারাতের দিকে বাড়িয়ে দিল। সাফারাত কফি কাপের দিকে এক পলক চেয়ে ওনাকে পাশ কাটিয়ে ফাইয়াদ ও আয়ানের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। তিয়ানা,সিনথিয়া,চৈত্রিকা বিস্মায়াবিষ্ট হয়ে পড়ে সাফারাতের আলো বেগমকে করা উপেক্ষা অবলোকন করে। চৈত্রিকা তীররেখা নজরে সাফারাতের দিকে তাকাল। সকল যোগ,বিয়োগের সমাধান তো হলো কিন্তু কোথাও আলোর দোষ খুঁজে পেল না ও। হুট করে একটা মানুষের এত ঘৃ’ণার কারণ কি? আলো বেগম কি সাফারাতের মা’য়ের মৃ/ত্যুর কারণ? দ্বিতীয় খু*নি?নয়ত সাফারাত কেন ঘৃ’ণার দৃষ্টিতে তাকায়!হুট করেই চৈত্রিকার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। ভুল ভাবছে সে। মা’য়ের মত স্নেহ,স্বার্থবিহীন উজার করে ভালোবাসা,সাফারাতকে শক্ত করে গড়ে তোলা সেই নারী বেই*মান কি করে হতে পারে!এ ভাবনা টাই যেন তুচ্ছ, নিরর্থক।
________________

বার্লিন শহরজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত। প্রভাতে এত বর্ষণ ভীষণ মন সতেজ করা অনুভূতির জন্ম দেয়। পরিবেশ রোমাঞ্চকর করে তুলে। বিশাল কাঁচের প্রাচীর টা বেয়ে পানির ধারা নেমে যাচ্ছে নিম্নদিকে। বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে এমন এক সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য ক’জনের হয়!চৈত্রিকা দেয়ালে টার দিকে মুখ করে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। চক্ষু মুদে আবারও দৃষ্টি মেলে দিল স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল টায়। বার্লিনের বৃষ্টির কি অপরুপ দৃশ্য!

ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে সৌন্দর্য দেখায় বাঁধা পড়ল চৈত্রিকার। অনুভূতিরা ভয়ংকর, মারা/ত্মক,বেসামাল হয়ে উঠল। সাফারাত হাতের তোয়ালে টা রেখে ওর অনাবৃত দেহে একটা শুভ্র রঙের পাতলা শার্ট জড়িয়ে নিল। অধিক সুন্দর হওয়ার দরুন শার্ট টা বেশ মানিয়েছে তাকে। চৈত্রিকা নিষ্পলক, নির্নিমেষ চেয়ে রইল অনেকক্ষণ,বেশ দীর্ঘ সময়। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করে,
‘ এত সকাল সকাল শাওয়ার নিলেন যে?কোথাও যাচ্ছেন?’

‘ সকাল সকাল শাওয়ার নিয়েছি বলেই এই প্রশ্ন নাকি সন্দেহ? মধুর রাত পাড় করা ছাড়াও প্রভাতে শাওয়ার নেওয়া যায় চৈত্র মাস। রিলেক্স থাকেন। ‘ সুখ ‘ আসুক তারপর নাহয় আপনি ও আমি দু’জন একসাথে শাওয়ার নিব,একদম সক্কালে। ‘

সাফারাতের দুষ্টমির স্বর শুনে চৈত্রিকার দু’গাল টুকটুকে লাল বর্ণ ধারণ করল। উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজতে নিলে কানে আসে সাফারাতের কঠিন কন্ঠের কড়া নিষেধাজ্ঞা,

‘ ভুলেও উপুড় হবেন না চৈত্র। সুখ ব্যাথা পাবে এবং আপনিও। ‘

উপুড় হলে তো পেটে চাপা পড়বে তা মাথায় ছিল না চৈত্রিকার। পা দু’টো সোজা করে শুইয়ে রইল। রুমের এক কোণায় বড় বড় টলি ব্যাগগুলো দেখে বলল,
‘ আমরা সত্যিই চলে যাবো?খালামণি কষ্ট পাবেন। আয়ান,সিনথিয়া কাউকেই বলা হলো না। না গেলে হয় না সাফারাত?’

চৈত্রিকার শেষের কথাটা করুন শোনাল। সাফারাত আয়নার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে একবার তাকালো। পরক্ষণেই শার্টের হাতা গুটিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে এল ওর দিকে। বিছানায় শুইয়ে চমকিত নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখছে চৈত্রিকা। ধীরস্থির ভঙ্গিতে সাফারাত ওর কাছাকাছি এলো। খুবই সন্নিকটে। ওর তৈলাক্ত মুখশ্রীর পানে ঝুঁকে চেয়ে থাকল অনিমেষ নেত্রে। চৈত্রিকা নির্বাক। চোখ বুঁজতেই সাফারাত উষ্ম ঠোঁট চেপে ধরল ওর ললাটে। মুহুর্তেই কোমল দেহখানির রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ বয়ে গেল। বিছানায় দু ‘ হাত ভর দিয়ে সাফারাত ছুঁয়ে দিল চৈত্রিকার কম্পনরত অধর। সাথে সাথে সরে এলো না। বরঞ্চ মিনিট খানেক ব্যয় করে দীর্ঘ এক চুম্বনে লিপ্ত হয়। চৈত্রিকার শ্বাস ক্রমাগত ভারী হয়ে আসে। সাফারাত তুখোড় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে ওর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অবস্থা। বুকের উঠানামা, ঢেউ খেলানো। গালে এক হাত রেখে স্থির করলো ওকে। ডাকল,
‘ চৈত্র মাস!’
চৈত্রিকার মুহুর্তেই সাড়া–‘ হু!’
সাফারাত আদুরে গলায় বলে উঠল,

‘ আমি একটা সুন্দর, সুস্থ, সুখের জীবন চাই চৈত্র। সকল বেই’মান দের থেকে দূরে গিয়ে আপনাকে,সুখ কে নিয়ে,প্রিয়ন্তীকে নিয়ে সুখের সংসার চাই। প্লিজ আমাকে বাঁধা দিবেন না। কারো প্রতি এতটাও বিশ্বাস রাখবেন না যার আসল রূপ প্রকাশিত হলে আপনি মানসিক ভাবে ধ্বংস হয়ে যাবেন। ‘

সাফারাত সরে গেল। পুনর্বার তাড়া দিয়ে বলে,
‘ উঠুন। আমরা একটু পরেই বেরিয়ে যাব। আয়ানকে গত রাতে বলেছি আমি আলাদা থাকব। ও একটু কষ্ট পেয়েছে কিন্তু আমাকে বুঝে খুব। ‘
________

প্রিয়ন্তী, চৈত্রিকা রেডি হয়ে নিচে আসল। ক্যাথরিন ব্যাগগুলো বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে। সাফারাত খালুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। আয়ানও বেরিয়ে পড়ল ওর সাথে। সিনথিয়াকে জড়িয়ে ধরল চৈত্রিকা। আয়মানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ও জানায় যদি আয়মান জানে ওরা অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে এখানে থাকবে না তাহলে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিবে ছেলেটা। কখনই যেতে দিবে না। এটা শুনে চৈত্রিকার খারাপ লাগল। ছেলেটার সারাক্ষণ সুখ সুখ বলে মামী মণির যত্ন নেওয়াটা ভীষণ মিস করবে ও। সবাইকে ড্রইং রুমে দেখলেও আলো কে কোথাও দেখল না। সিনথিয়া ওর চোখের দৃষ্টি দেখে বললো,
‘ আম্মু তোদের বিদায় দিতে পারবেন না তাই রুমের দরজা লক করে বসে আছেন। সাফারাত এখানে আসার পর আম্মুর সাথে ঠিকঠাক কথা বলছেন না। এমনকি এ বাড়ি ছেড়ে ভিন্ন জায়গায় থাকার সিদ্ধান্ত নিল। তুই কি জানিস ওর এমন করার কারণ?’

মাথা নাড়িয়ে না বললো চৈত্রিকা। সিনথিয়া ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে চৈত্রিকাকে আলো বেগমের রুমের সামনে নিয়ে গেল। অনেক ডাকাডাকির পরও দরজা মেললেন না তিনি। বাধ্য হয়ে ওনাকে বিদায় না জানিয়েই বেরিয়ে আসতে হলো। গাড়িতে উঠে যখন সাফারাতের পাশে বসল অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই দেখতে পেল আলো বেগম মুখে ওড়না চেপে ধরে কাঁদছেন খোলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। চৈত্রিকার বুক টা থরথর করে কাঁপল। ধীরে ধীরে চলন্ত গাড়ি থেকে জানালা দিয়ে আবারও তাকালো বারান্দার দিকে। সাফারাতের উদ্দেশ্যে তড়তড় করে ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,

‘ খালা মণি কাঁদছেন সাফারাত। গাড়ি থামান। একটা বার কথা বলে আসুন ওনার সাথে। ‘

চৈত্রিকার সেই স্বর আমলে নিল না সাফারাত। উল্টো চোয়াল শক্ত করে গাড়ির গতি বাড়িয়ে ছুটে চলল বার্লিন নগরীর অপর এক প্রান্তে।

# চলবে,,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here