#সুখের_নেশায় পর্ব৪৯

0
714

#সুখের_নেশায় পর্ব ৪৯
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

আয়ানদের বাড়িটা দু’তলা। বাড়ির একপাশে ছোট খাটো একটা প্রাচীর। উচ্চতায় অনেক কম। প্রাচীরের অপর পাশে আরেকটা দু’তলা বাড়ি। এখান থেকে স্বল্প উচ্চতার সেই দেয়াল ডিঙিয়ে চলে যাওয়া যাবে অনায়সে। এমনকি দু’টো মানুষ মাথা উঁচিয়ে কথা বলতে পারবে একে অপরের সাথে। চৈত্রিকা সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাগানের দিকে তাকালো। বড় একটা দোলনা টানানো বাগানে,যা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে। তারই উপর ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা চেরি গাছ। আপাতত পুষ্পহীনতায় ভুগছে গাছ টা। মূলত গাছের পাতা বেয়ে পানি এসে ঝরে পড়ছে শূণ্য দোলনা টায়। চৈত্রিকার বেশ মন কাড়লো দৃশ্য টা। মনপাজর জুড়িয়ে গেল। জার্মানির এই বৃষ্টি যেন চৈত্র মাসের খরা কাটিয়ে তুমুল সুখের বন্যা সৃষ্টি করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সাফারাতের এক হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ চৈত্রিকার এক হাত। দু’জনে এগিয়ে চলেছে সমান তালে। ক্ষীণ সময় পর পর চৈত্রিকা সাফারাতের বুকের কাছ থেকে সরে দৃষ্টি বুলাচ্ছে আশেপাশে। এই মুহুর্তের পরিবেশ টা ভয়ংকর, মারাত্মক।

সবার সাথে বাড়ির মধ্যে ঢুকল ওরা। প্রথমেই চৈত্রিকার নজর গিয়ে ঠেকে ড্রইং রুমের বিশাল দেয়ালের একাংশ জুড়ে বড় এক ফ্রেমে বন্দী সুঠাম দেহের, সুদর্শন এক যুবকের ছবির দিকে। চৈত্রিকার বুক টা তরতর করে কাঁপলো। হৃদয় নাড়ানো অনুভূতি হলো বুঝি!ছবিতে সাফারাত যেন ঠিক ওর দিকেই চেয়ে আছে। কে বলবে এটা ওর খালামণির বাড়ি?এ যেন সাফারাতেরই নিজস্ব বাড়ি৷ সত্যি অনুভূতি টা বেশ আপন আপন। চৈত্রিকার কোনো খালা নেই, আলোকে দেখলে ওর মনে হয় সাফারাত এদিক থেকে লাকি। ভীষণ লাকি। আলো বেগমের মাঝে সিয়ার প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় চৈত্রিকা,যদিও সে সিয়াকে দেখে নি। আচ্ছা সাফারাতও কি ওর মতো করে মা’য়ের প্রতিচ্ছবি, মা মা গন্ধ খুঁজে পায় ওদের সামনে চোখ আনন্দপূর্ণ অশ্রু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আধবয়স্ক মহিলাটা কে দেখে?হয়ত পায়।

দীর্ঘ ভ্রমণ প্রেগ্ন্যাসি অবস্থায় বেশ কষ্টজনক ছিল চৈত্রিকার ক্ষেত্রে। সাফারাত ওকে সোফায় বসিয়ে দিল। বছর খানেক আগে যখন সিনথিয়াকে নিয়ে আসে এখানে তখন তার জন্য একটা রুম নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যে রুমের প্রত্যেক টা আসবাব, জিনিস আলো নিজ হাতে সাজিয়েছেন। নির্দিষ্ট সেই রুমে জীবনের অনেকগুলো বছর কেটেছে সাফারাতের। পার্থক্য এতকাল সেই কক্ষে একা থাকত,এখন থেকে ওর জীবনের দ্বিতীয় নারী থাকবে। রুমের অর্ধাংশ দখল করে রাজত্ব চালাবে। একটা মেয়ে সার্ভেন্ট এগিয়ে এলো। চোখ তুলে মেয়েটার দিকে তাকালো চৈত্রিকা। পড়নে হাটুর নিচ অব্দি স্কার্ট,উপরের অংশে শার্ট। সাদা ধবধবে পায়ের উন্মুক্ত অংশ। চেহারার আকৃতিও বেশ সুন্দর। চুলগুলো কালো রঙের। চৈত্রিকা বুঝতে পারে অপরুপ সুন্দর মেয়েটা জার্মানির স্থায়ী বাসিন্দা। আলো বেগম আদেশ করলেন মেয়েটা কে লাগেজ গুলো রুমে পাঠাতে। মেয়েটা ইয়েস ম্যাম বলে লাগেজ গুলো টেনে নিয়ে যায়। অতি সূক্ষ্ম এবং মিহি ছিল সেই কন্ঠস্বর। মেয়েটার নাম টা স্পষ্ট শুনে নি চৈত্রিকা। হয়ত শুনেছে কিন্তু এরকম নাম শুনতে কিংবা উচ্চারণ করতে অভ্যস্ত নয় বলে ঠিক মনে করতে পারছে না। ‘ ক্যাথরিন’ ছিল বোধ হয় নাম টা।

ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত হওয়ার কারণে চৈত্রিকাকে নিয়ে রুমে এলো সিনথিয়া। ফ্রেশ হয়ে নিতে বলল। বার্লিন শহরে সন্ধ্যে নেমে এসেছে। ঘড়িতে তখন ৬.৪৭। চৈত্রিকা লাগেজ থেকে একটা ড্রেস নিয়ে গোসল সেড়ে এলো। রুমে আসতেই দেখে সাফারাত ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে আছে বিছানায় সটানভাবে। হয়ত ক্লান্তি ঘিরে ধরেছে তাকে। চুল থেকে তোয়ালে সরিয়ে চেয়ারের উপর মেলে দিল। সাফারাত দুই চোখ বুঁজে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। চৈত্রিকা খানিক উঁচু পেট টা নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে পাশে বসল। সাফারাতের মুখের দিকে চেয়ে থাকল মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে। কি সুন্দর এই মানুষ টা!এতো মায়াময় মানুষটার জীবন কেন এত বিষাক্ত ছিল?চৈত্রিকা হাত উঠালো চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। পরক্ষণেই সাফারাত বিরক্ত হয় যদি তা ভেবে সরিয়ে আনল। পাশ থেকে উঠতে নিলে সুড়সুড় করে কর্ণগহ্বরে পৌঁছাল,

‘ চৈত্র উঠছেন কেন?’

ব্যস আর উঠা হলো না। এক বাক্যে সারা অঙ্গ স্থির। সাফারাত চক্ষু মেলল,তবে শোয়া হতে উঠল না। বরং চৈত্রিকার এক হাত টেনে সম্পূর্ণ দেহ টা বুকের উপর এনে জড়িয়ে ধরল ওকে। হঠাৎ কান্ডে চৈত্রিকার হৃদস্পন্দন চক্রাকারে বৃদ্ধি পেয়ে গেল যেন। নিঃশ্বাস কেমন থমকে গেল। বুকে উথাল-পাথাল ঢেউ গর্জে উঠল। এক গাছি ভেজা চুল সাফারাতের নাকের কাছে গিয়ে ঠেকল। প্রাণ, মন ভরে সেই ভেজা সিক্ত ঘ্রাণ নাসারন্ধ্র দ্বারা টেনে নিতে শুরু করে সাফারাত। চৈত্রিকার কোমর জরিয়ে ধরে খুবই আলতো বাঁধনে।
চৈত্রিকা হতবাক, বিস্মিত নেত্রে চেয়ে রইল। হুট করেই, সেকেন্ডের ব্যবধানেই ওর সেই চাউনি বদলে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। পরিণত হয় লজ্জিত দৃষ্টিতে। সাফারাত মাদকময় চাহনিতে চেয়ে আছে। দু চক্ষে নেশা। কন্ঠ গাঢ়,শীতল। বলল,

‘ ভালো আছেন আপনারা?’

চৈত্রিকা তব্দা খেয়ে গেল। হুটহাট এই এক প্রশ্ন কাঁপিয়ে তুলে ওকে। প্রশান্তিতে ভরে যায় মন। বলতে ইচ্ছে করে এভাবে জিজ্ঞেস করলে খারাপ থাকা যায়?উল্টো বুকে ঢোল বাজে। ছোট্ট করে বললো,

‘ আলহামদুলিল্লাহ। ‘
এটুকু বলে থামল। ক্ষীণ সময় পরে জিজ্ঞেস করে উঠল,
‘ আপনার কি ক্লান্তি লাগছে?’
সাফারাত ঠোঁটের কোণ বাঁকালো। টুপ করে গালে চুমু খেয়ে বলে,

‘ ছিলাম। আপনার শরীরের স্পর্শ, ঘ্রাণ, আপনার মিষ্টি প্রশ্ন, কন্ঠস্বর,স্নিগ্ধ চেহারা,আপনি সবকিছু আমার সকল ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে। নিজেকে স্ট্রং স্ট্রং ফিল হচ্ছে। আপনি আমাকে কখনও ছেড়ে যাবেন না চৈত্র। আপনার ঘ্রাণ, স্পর্শ, আপনি না থাকলে এই পৃথিবীতে থাকার জন্য কোনো কারণ থাকবে না আমার নিকট। থাকতে পারব না আপনাকে ছাড়া। ‘

চৈত্রিকা দু হাতে ঝাপটে ধরল সাফারাতকে। শক্ত করে। সাফারাত মাথায় ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠল,

‘ কি করছেন?আমাকে এতো জোরে জড়িয়ে ধরলে সুখ ব্যাথা পাবে তো। ‘
বুক থেকে মুখ তুলে চোখের পল্লব ঝাঁকিয়ে মিটমিট করে চাইল চৈত্রিকা সাফারাতের হাসোজ্জল মুখের দিকে। হতবিহ্বল হয়ে প্রশ্ন করে বসল,
‘ আপনিও আয়মানের মতো বলছেন?’
‘ হু। সুখ তো। সুখকে আপনি দুঃখ দিতে চান?’
চৈত্রিকা এক গাল হেসে বললো,
‘ সুখ কে কখনও দুঃখ দেওয়া যায় না। ‘
‘ আচ্ছা সুখের আম্মুকে আদর করা যায়?’
লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলল চৈত্রিকা। মাথা উপর নিচ করে বললো,
‘ নির্দ্বিধায় করা যায়। ‘
‘ নির্দ্বিধায় করি সবসময়। তাই বলেই তো সুখ এ পৃথিবীতে আসার ভিসা পেয়ে গেল। অধৈর্য হয়েছি,আদরে কিপ্টামি করি নি। ‘

চৈত্রিকা আর মুখ তুলতে পারল না। নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইল শক্তপোক্ত প্রশস্ত বুক টায়। লুকিয়ে রাখল লাল মুখশ্রী।
________________

গতকাল পুরো একটা বৃষ্টিমুখর দিন,রাত পার হবার পর একটা সুন্দর সকালের দেখা মিলে বার্লিন নগরীতে। চৈত্রিকা বিছানা ছেড়ে রুমের একপাশে দেয়ালের পরিবর্তে দেয়া বড় কাঁচ টার সমুখে এসে দাঁড়াল। এখনও কাঁচে পানি লেগে আছে। গত রাতে আয়ান ও আলো বেগমের হাসবেন্ডের সাথে দেখা হয় ডিনার টাইমে। রাতে আলো বেগম নিজ হাতে ওদের জন্য কয়েক ধরনের বাঙালি খাবার রান্না করে। সবাই তৃপ্তি করে খেলেও চৈত্রিকা একটা বিষয় খেয়াল করে। অন্য কেউ করেছে কি-না জানে না। তবে সাফারাত আলো বেগমের রান্না করা একটা জিনিসও খায় নি। সিনথিয়া ডাল রান্না করেছিল সেটাই খেয়েছিল শুধু। আলো বেগম,খালু,আয়ান অনেক সাধলেও সাফারাত জানায় তার শুধু এখন ডাল দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে,কোনো প্রকার ভারী খাবার খেতে চাচ্ছে না। আলো বেগমের একটু মন খারাপ হয়েছে তা ওনার মুখ দেখেই চৈত্রিকা বুঝে ফেলে। কিন্তু সবার সামনে সাফারাতের মুখের উপর কিছু বলতে পারছিল না। হয়ত সত্যিই শরীর খারাপ লাগছিল তার। সন্ধ্যে হতেই তো ক্লান্ত ছিল।

বিশাল কাঁচে একটা অবয়ব দেখে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়াল চৈত্রিকা। পিছন হতে এক জোড়া ঠোঁট উষ্ণ ছোঁয়া এঁকে দিল ওর কানে। নিমিষেই চোখ বুঁজে আসল। কন্ঠনালির ঠিক বা পাশে দীর্ঘ,গভীর চুমু খেয়ে বলে উঠল সাফারাত,

‘ রেডি হয়ে নিন। প্রিয়ন্তীকেও বলুন। আমরা বের হবো। ব্রেকফাস্ট বাহিরে করবো। ‘

চৈত্রিকার কন্ঠে অবাকতার দেখা মিলে,– ‘ কোথায় যাবো?’
সাফারাত কাঁচের দেয়ালের উপর রাখা চৈত্রিকার হাত টার উপর হাত রাখে। কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,
‘ সুখের আম্মার জন্য সারপ্রাইজ আছে। ‘
নিরবে হাসল চৈত্রিকা। মনে মনে আওড়ালো,– ‘ সাফারাতের চৈত্র মাস, সুখের আম্মা। উফ!এত সুখ! ‘
_______________

বড় একটা রাউন্ড ড্রেস পড়েছে চৈত্রিকা। গলায় স্কার্ফ পেঁচানো। পাশেই প্রিয়ন্তী হাঁটছে। মেয়েটা আজকাল কথা বলে না। প্রয়োজনে দু ঠোঁট আলগা হয় ওর। সাফারাত গাড়ি পার্ক করে ওদের পাশে এসে হাঁটতে থাকে। গাড়িটা ওর নিজের। এদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তার। অফিসের কাজও আবার স্টার্ট হয়ে গিয়েছে। হাঁটার তালে তালে সে নিরব প্রিয়ন্তীর হাত টা ধরল। প্রিয়ন্তী ভাইয়ের স্পর্শে চমকালো না। সাফারাত ওর জীবনে যে সুখ আনার চেষ্টা করছে ও তা ভালো করে বুঝতে পারছে। যার সাথে বাবা- মা এত অন্যায় করেছে সেই মানুষ টা কি সুন্দর আগলে রাখছে ওকে। সমাজের তুচ্ছ দৃষ্টি থেকে বাঁচিয়েছে। মৃ*ত্যু না বেছে লড়াই করতে শিখিয়েছে। প্রিয়ন্তী জানে বাবা-মার সাফারাতের উপর করা অত্যাচারের কথা। কম বয়সে মেয়েটা জীবনের সকল ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। চঞ্চলতা ভুলে গুমরে জীবনযাপন করা শিখেছে। তবুও ভাই নামক মানুষটার জন্য, তার দিকে চেয়ে হাসল সে মৃদু। চৈত্রিকার হৃদয় জুড়িয়ে গেল ওদের দেখে। জার্মানির বাতাসে বাতাসে সুখ মিশে আছে কি!নয়ত এত শান্তি অনুূভূত হচ্ছে কেন!

আজ বৃষ্টি নেই, পরিবেশ আদ্র। ওরা এসেছে বার্লিন প্রাসাদ ও পার্কে। বার্লিনে মূলত তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো এ জায়গাটা। চৈত্রিকা অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে চারদিকে তাকাচ্ছে। একপাশে ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চা খেলা করছে। চৈত্রিকার মনে হলো,ইশ!আয়মানকে নিয়ে আসলে ভালো হতো। এই বৈচিত্র্যময় দেশে চৈত্রিকার বৈচিত্র্যময় মনে হয় এদেশের মানুষগুলো কে। অকস্মাৎ একটা সাদা চামড়ার,ব্রাউন চুলের ছেলে সাফারাতকে জড়িয়ে ধরল। হতভম্ব হয়ে পড়ল চৈত্রিকা ও প্রিয়ন্তী দু’জনেই। কিন্তু সাফারাতের অভিব্যক্তি বুঝা গেল না। ছেলেটাকে ওকে ছেড়ে দিয়ে ইংরেজিতে গটগট করে বললো,
‘ হাউ আর ইউ শাফারাত?’
সাফারাত চোখ রাঙালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘ ফাইন। এন্ড শাফারাত নই ইট’স সাফারাত। ‘
‘ হ্যাঁ। ইয়াহ!শাফারাত। ‘
সাফারাত সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছাড়ল। একে বুঝিয়ে লাভ নেই। ছেলেটা চৈত্রিকার চমকপ্রদ দৃষ্টি দেখে সাফারাতের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
‘ হু ইজ শি?’
সাফারাত চৈত্রিকাকে দেখিয়ে বললো,
‘ শি ইজ মাই ওয়াইফ,চৈত্রিকা এহমাদ। ‘
চৈত্রিকা ছেলেটাকে সালাম দিল। নিমেষে ছেলেটা ওকে অবাক করে দিয়ে বললো,
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম৷ আমি ফাইয়াদ। সাফারাত ও আমি একই ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। ‘
প্রিয়ন্তী ও চৈত্রিকা উভয়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। পাক্কা বিদেশি, সাদা চামড়াওয়ালা ছেলেটা কেমন শুদ্ধ বাংলা ভাষা উচ্চারণ করছে। একটু আগেই তো সে ইংরেজি বলছিল,সাফারাতের নামটা বিগড়ে দিয়েছিল। চৈত্রিকার মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এলো,
‘ আপনি বাংলা বলতে পারেন?’
‘ হুম। আমার বাবা বেঙ্গলি। মা জার্মানির হলেও শকের বশে বাংলা শিকেছি। আপনার হাসবেন্ডই শিকিয়েছে। ভালোভাবে বলতে পারি না। ‘
প্রিয়ন্তী মুখ চেপে হাসল ‘শক’ শব্দ শুনে। শক,শিকেছি বাহ্ কি দারুণ শব্দ জার্মানি পোলার মুখে। প্রিয়ন্তীর এরকম কথা শুনলে হাসতে হাসতেই কেঁদে দিবে মনে হচ্ছে। চৈত্রিকার হাসি পেলেও বললো,
‘ আপনি অনেক সুন্দর বাংলা বলেন ভাইয়া। ‘
ফাইয়াদ মাথা চুলকে বলে,–‘ ধন্যবাদ। ‘

সাফারাত থেকে চোখ সরিয়ে ফাইয়াদ অপর পাশে তাকাতেই দেখে ফর্সা, কম বয়সী একটা মেয়ে মুখ চেপে হাসছে। আবার হাত সরিয়ে ঠোঁট দুটো চেপে ধরছে হাসি আটকাতে। ফাইয়াদ থমকে যায়। একদৃষ্টে চেয়ে থাকে হাসিমাখা মুখ খানায়। সাফারাত প্রিয়ন্তীকে দেখিয়ে বললো,
‘ আমার বোন,প্রিয়ন্তী। ‘
ফাইয়াদ হাত বাড়িয়ে দিল হ্যান্ডশেক করতে। প্রিয়ন্তী ভাইয়ের দিক তাকালো। সাফারাতের সম্মতি পেয়ে হাত মিলিয়ে দিল ফাইয়াদের হাতে। ফাইয়াদ হাসল। স্মিত সেই হাসি। বলল,
‘ ওয়েলকাম প্রিয়ন। ওয়েলকাম ইন আওয়ার কান্ট্রি। ‘
প্রিয়ন্তী ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো। হাত টা ছাড়িয়ে নিল ঝটপট। মনে মনে রাগে আওড়ালো, –‘ জার্মানির বাচ্চা, আমি প্রিয়ন না প্রিয়ন্তী। ‘

#চলবে,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর যা রহস্য বাকি আছে আমি পরবর্তী পর্বগুলোতে ক্লিয়ার করে দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here