#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ৪+৫

0
591

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ৪+৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
— একেই বলে আকাশ থেকে পরে খেজুর গাছে আটকে যাওয়া।
ওনার এই কথাটা শুনে আমার বড্ড হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসাটা একদমি ঠিক হবেনা। কারণ আমার ক্রাশের রিয়াকশনটা যখন এরকম হতাশ হতাশ তখন আমার রিয়াকশনে হাসি থাকাটা মোটেই শোভনীয় নয়। তাই নিজের এই হাসিটাকে দাবিয়ে রেখে চেহারায় একটুখানি সিরিয়াস ভাব আনার চেষ্টা করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি চুপ করে বসে আছেন, এতোক্ষণ কতো কথা বলছিলেন আর এখন একেবারেই চুপ। কিছুক্ষণ নিরবতার পর আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠলেন
— সো কালকের হেডলাইন কী হবে?
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললেন
— কী হলো বলো? কালকের হেডলাইন কী হবে? ‘দেখে নিন আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের রাতের চেহারা’ ‘বর্ষণের রাতে এক মেয়ে জার্নালিস্টের ফ্লাটে রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ‘ নাকি অন্য কিছু?
আমি এখোনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে। আজব! আমি একজন জার্নালিস্ট ব্যাস এটুকু শুনেই যা খুশি বলে যাচ্ছে? আমার কোনো কথা শোনার কোনো দরকারই মনে করছেনা? ডিসগাসটিং। খুব রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে আচ্ছা মতো কয়েকটা শুনিয়ে দেই। কিন্তু পরে মাথাটা ঠান্ডা করে ভাবলাম যে ওদের সাথে রিগুলারলি যা হয় স্পেশিয়াশি ওর সাথে তাতে ওর এই মুহূর্তে জার্নালিস্ট দেখলে এভাবে রিয়াক্ট করাটাই স্বাভাবিক। তাই মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে হবে। আমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে উনি একটু জোরেই বললেন
— কী হলো বলো? হেডলাইন কী দেবে? মানে কী লিখলে তোমাদের খবরটা বেশি বিক্রি হবে?
কথাটা আমার গায়ে লাগলো। কারণ এই প্রফেশনটা আমার জন্যে কী সেটা আমিই জানি। কিন্তু ওনার দিক দিয়েও উনি ঠিক তাই সেটাকে গুরত্ব না দিয়ে আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম
— ‘খাদ্যসংকোটে অবশেষে এক জার্নালিস্টের ফ্লাটে নৈশভোজের আশায় গ্রেট রকস্টার আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের’
এটা শুনে উনি ভ্রু কুচকে তাকালেন আমার দিকে। আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— এই হেডলাইনটা কিন্তু দাড়ুন হবে তাইনা? বেশ চলবে।
আদ্রিয়ান আমার দিকে অদ্ভুতভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলেন আর ওনার হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম। উনি হাসতে হাসতেই বললেন
— তুমি সবসময় এমন চিল মুডে কীকরে থাকো বলোতো?
— আপনার মতো শর্ট টেমপার হলে এই প্রফেশনে টিকতে পারতাম না স্যার।
— আমি শর্ট টেমপার?
— এনি ডাউট? ম্যাক্সিমাম ইন্টারভিউতে তো আপনি রিপোর্টারদের ওপর রেগে বোম হয়ে যান।
— তো? তোমরা প্রশ্নগুলোই এমন করো যে মাথা ঠিক রাখাটা মুসকিল হয়ে যায়। প্রশ্ন করার নাম করে এট্যাক করে কথা বলো। দরকারী প্রশ্নের চেয়ে অদরকারী আর অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নই বেশি করো।
আমি একটা ছোট্ট শ্বাস নিয়ে বললাম
— আচ্ছা কফিটা খেতে খেতে কথা বলি ঠান্ডা হয়ে যাবে।
উনি ভ্রু কুচকে কফির মগে চুমুক দিলেন, বুঝতে পারছি উনি আমার ওপর খুব বিরক্ত হয়ে আছেন। আমিও কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিয়ে বাইরে তাকালাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরা শুরু হয়ে গেছে। হালকা হালকা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সবকিছু একদম শান্ত। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ভ্রু কুচকে কফি খাচ্ছে, আমি বললাম
— আচ্ছা সব রিপোর্টারই কী একিরকম আজেবাজে প্রশ্ন করে?
আদ্রিয়ান মাথা বাকা করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— নাহ ঠিক তা না? কেউ কেউ ভালো এবং কাজের প্রশ্নও করে।
— তাহলে? সবাইকে ব্লেম করা কী ঠিক হচ্ছে?
উনি ভ্রুটা কিঞ্চিত কুচকে বাইরে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বললেন
— জানিনা। কিন্তু তোমাদের আই মিন জার্নালিস্ট দের সহ্য হয়না আমার। এরা পারেনা এমন কোনো কাজ আছে নাকি?
আমি মুচকি হেসে কফির মগটা পাশে রেখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— হুমম। তো আপনার আর কী কী অভিযোগ আছে আমাদের মানে জার্নালিস্টদের নিয়ে।
উনিও কফির মগটা আওয়াজ করে পাশে রেখে বললেন
— ইরিটেটিং পিপল। কাজের কাজতো কিছু হয়না এদের দ্বারা সবি অকাজ। একট্রেস স্মৃতির সাথে একদিন একটা রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছে তাই একসাথে লাঞ্চ করেছি। সেটা নিয়ে পরেরদিন হেডলাইন হয়েছে উই আর ডেটিং ইচ আদার। ওয়াও! মানে কিছু বলার নেই।
আমি হেসে দিলাম। উনি বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— তুমি হাসছো? হাসবেই তো তুমিওতো সেই দলেরি তাই না?
আমি কোনোরকমি হাসি থামিয়ে বললাম
— আচ্ছা হাসছিনা এরপর বলুন?
— এদের কীর্তি বলে শেষ করে যাবেনা। এমনকি টাকার জন্যে কাউকে যেমন উচুতে ওঠাতে পারে ঠিক সেইরকমভাবেই এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিতে পারে। রিডিউকিলাস। সেলিব্রেটিদের মধ্যে কার বাচ্চা কতোবার টয়লেটে যায় সেটাও তাদের প্রচার করতে হবে কিন্তু সত্যিই যেই নিউসটা সবাইকে জানানো দরকার সেটার দিকে তাদের কোনো পাত্তাই নেই?
আমি হাটুর ওপর দুই হাত রেখে বললাম
— ইউ আর রাইট। কিন্তু একটা কয়েন এর যেমন এপিঠ ওপিঠ আছে তেমনি সবকিছুরই এপিঠ ওপিঠ আছে।
— মানে?
— সাত বছর আগের কথা। একজন জার্নালিস্ট একজন মন্ত্রীর এগেইনস্টে খুব স্ট্রং একটা আর্টিকেল তৈরী করছিলো উইথ প্রুভ। কিন্তু ওই মিনিস্টার যখন জানতে পারে ওই জার্নালিস্টের কথা তখন উনি ওই জার্নালিস্টকে টাকার লোভ দেখায়, কিন্তু তাতেও যখন ওই জার্নালিস্ট মানতে চায়নি তখন তাকে হুমকি দিতে শুরু করে। তার একমাত্র মেয়েকে রেইপ করার, তাকে খুন করার আরো বিভিন্ন হুমকি দেয়া শুরু করে, কিন্তু উনি মানেননি। উনি অনেক কষ্টে ওনার মেয়ের সম্মান আর জীবণতো বাচিয়ে নিয়েছিলো কিন্তু নিজেকে বাচাতে পারেননি। প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাকে।
এটুকু বলে আমি ওনার দৃষ্টির আড়ালেই নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলাম আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
— উনি মারা যাবার পর ওনার মেয়ের কী হয়েছিলো?
— কারো জন্যে তো জীবণ থেমে থাকে না। তাই ওনার মেয়েও মরে যায়নি শ্বাস নিচ্ছে এখোনো।
আদ্রিয়ান কিছু না বলে চুপ করে রইলো। পরিবেশটা আবারো নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। শুধু বৃষ্টির হালকা হালকা ফোটার আওয়াজ আর মেঘের হালকা গর্জন শোনা যাচ্ছে। বেশ অনেকক্ষণ পর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম
— এখোনো মনে হয় সব জার্নালিস্ট এক?
— সেটা কখনোই মনে হয়নি আমার তবে ম্যাক্সিমাম তো একই তাইনা?
— হ্যা সেটা ঠিক। আর আমি জানি আপনি আমার বিশ্বাস করে উঠতে পারছেননা। তবে আপনি একরাত বিপদে পরে আমার ফ্লাটে হেল্পের জন্যে এসছেন। এটাকে নিউস করার মতো বিশেষ কিছু আমার মনে হচ্ছেনা। আর আমি ওতোটাও চিপ রিপোর্টার না যে এসব বিষয় নিয়ে নিউস বানাবো। আপনি আমার হিস্ট্রি চেক করে দেখতে পারেন। আমি ঐ লেভের রিপোর্টার নই।
আদ্রিয়ান ইতোস্তত করে বলল
— অব্ আমি আসলে…
— আমার কাছে এটা শুধুমাত্র একটা প্রফেশন নয় আদ্রিয়ান, আমার জীবণের বিরাট একটা অংশ আমার বেচে থাকার একমাত্র ভিত্তি বলতে পারেন।
আদ্রিয়ান আমার হাতটা ধরে ওর দুই হাতের মধ্যে নিয়ে নিলো। আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
— আই এম সরি। আমার ওভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। হঠাৎ করেই যখন জানলাম যে তুমি একজন জার্নালিস্ট তখন
— ইটস ওকেহ.. আপনার দিক দিয়ে আপনি একদমি ঠিক ছিলেন। সত্যি বলতে আজকাল বেশিরভাগ জার্নালিস্ট তো এটাই করে তাইনা?
— হুম বাট তবুও…
— বাদ দিন তো এসব। মগটা দিন সিনে রেখে আসি।
— হুম।
এরপর সিনে মগদুটো রেখে, চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। অন্যের সামনে কেদে আর নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চাইনা। এরপর মুখটা মুছে গিয়ে ওনার পাশে বসলাম উনি মুচকি হেসে সামনে তাকিয়েই বললেন
— তো আজকালকার দিনে একা একটা ফ্লাটে থাকার কারণ?
— কেউ না থাকলে তো একাই থাকতে হয় তাইনা?
আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
— তোমার বাবা মা?
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললাম
— মা জন্মের পরেই মারা গেছেন আর বাবা ও কয়েকবছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।
— আ’ম… আ’ম সরি আমি জানতাম না।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম
— জানার কথাও না। সো ডোন্ট বি..
— তোমার আর কোনো রিলেটিভ নেই?
— বাবা মা না থাকলে দুনিয়াতে আর কেউ থাকেনা। মামুর বাসাতেই ছিলাম চার বছর কিন্তু…
— কিন্তু?
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
— বাদ দিন এসব।
— ওকে। আমি হয়তো একটু বেশিই পার্সোনাল ইসুতে ঢুকে যাচ্ছি।
আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম আর মনে মনে বললাম; আ’ম সরি আদ্রিয়ান। আপনি আমার মাত্র এক রাতের অতিথি। তাই আপনাকে আমার জীবণের ভয়ংকর কালো সত্যগুলো বলতে চাইনা। বলতে চাইনা আপনি যার কাছে একরাতের জন্যে আশ্রয় চেয়েছেন সে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে নিজেরই খুব কাছের মানুষদের কাছ থেকে। প্রতিটা মুহূর্তে ভয়ে থাকি ধরা পরে যাবার ভয়। এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বললেন
— তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই?
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওনার দিকে তারপর বললাম
— সেটা দিয়ে অাপনি কী করবেন?
উনি একটু রাগী গলায় বললেন
— আছে কী না বলো?
ওনার রাগী কন্ঠে একটু দমে গেলাম, কারণ ওনার রাগের সাথে খানিকটা পরিচিত আমি। তাই নিচু গলায় বললাম
— না নেই
উনি একটা শ্বাস নিয়ে বললেন
— যাক।
সেটা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি বললেন
— বাই দা ওয়ে তুমি রান্নাটা খুব ভালো করো। ভালোই হলো বিয়ের পর আর ওই স্টুপিড সেফদের ডিসগাস্টিং রান্না খেতে হবেনা
আমি বাইরে তাকিয়ে আনমনে বললাম
— হুমম।
পরক্ষণেই খেয়াল হলো কী বললেন উনি চমকে গিয়ে ভ্রু কুচকে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— বিয়ের পর মানে?
আদ্রিয়ান হকচকিয়ে গিয়ে বলল
— অব্ ব আই মিন। আমার বিয়ের পর আমার বউ যদি তোমার মতো রান্না জানে তাহলে আরকি।
কথাটা আমার কেমন যেনো লাগল তবুও ছোট করে বললাম
— ওহ।
উনি কিছু বললেন না। কিছুক্ষণ পর আমি বললাম
— ঘুম পাচ্ছে নিশ্চই। আপনি আমার বেডে শুয়ে পরুন আমি সোফার রুমে চলে যাচ্ছি।
বলে উঠে দাড়াতেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি একটু না অনেকটা অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। উনার চোখে এক অদ্ভুত চাহনী আর ঠোটে ঝুলে আছে মুচকি এক হাসি। আমার কেমন একটা লাগছে, হার্টবিট দ্রুত গতিতে ছুটছে, নিশ্বাস না চাইতেও ভারী হচ্ছে। এই অনুভূতির কারণ আমার জানা নেই। বাইরে বৃষ্টির গতি হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পেলো। যেনো বৃষ্টিও আজ কিছু জানাতে চাইছে। উনি স্লো ভয়েজে বললেন
— আজ একটা রাত না ঘুমোলে আমার বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না? তোমার কী খুব সমস্যা হবে?

#পর্ব- ৫
.
— আজ একটা রাত না ঘুমোলে আমার বিশেষ কোনো সমস্যা হবে না? তোমার কী খুব সমস্যা হবে?
আমি কিছু না বলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। সেটা দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন
— কী হলো? বসো?
আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে থেকেই ওনার পাশে বসে বললাম
— ঘুমোবেন না?
— আজ জেগে থাকি না? সমস্যা কী?
রাত জেগে থাকার অভ্যেস আমার নেই। কিন্তু কেনো জানি ওনাকে না করতে ইচ্ছে করছেনা। তাই চুপ করে রইলাম। উনিও চুপ করেই আছেন। বৃষ্টির বেগ আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে বাজ পরাও শুরু হবে। আর সেই সাথে আমার ভেতরের ভয়টাও বাড়ছে, কারণ বাজ পরা বৃষ্টির রাতগুলো বারবার আমাকে সেই ভয়ংকর অতীতগুলো মনে করিয়ে দেয় কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে পারিনা আমি। অন্যান্য দিন তো সিলিপিং পিল খেয়ে কম্বলে মুরি দিয়ে কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরি, আজ কী করবো? আদ্রিয়ানের সামনে নিজেকে শক্ত কীকরে রাখব? চুপচাপ বসে এগুলোই ভাবছিলাম। দীর্ঘসময়ের নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বললেন
— জানো বৃষ্টির দিনগুলো আমার খুব পছন্দের। বাইরে পরতে থাকা বৃষ্টি দেখতে দেখতে ধোয়া ওঠানো কফির মগে চুমুক দেওয়া। আবার বৃষ্টি দেখতে দেখতে গিটার বাজানোটাও আমার খুব পছন্দের কাজ। এনিওয়ে তোমার বৃষ্টি ভালোলাগে?
আমি এতোক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ওনার কথা শুনে আকাশের দিকে তাকিয়েই মুচকি হেসে বললাম
— একসময় খুব ভালোলাগতো। কিন্তু এখন ভয় লাগে, তবে আগের মতো ওতোটা ভয় না পেলেও ভয়টা পুরোপুরি কাটাতে পারিনি।
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— বৃষ্টিকে ভয় পাও? স্ট্রেন্জ!
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললাম
— আই নো।
— বাট বৃষ্টি কে ভয় পায়? ভয় পাওয়ার মতো কী আছে।
আমি কথাটা ঘোরানোর জন্যে হালকা হেসে বললাম
— আচ্ছা বাদ দিন এসব। আর কিছু লাগবে আপনার?
উনি হয়তো বুঝতে পারলেন আমি কথাটা এরিয়ে যেতে চাইছি। তাই কথা না বাড়িয়ে বললেন
— নাহ আপাদত অার কিছু চাইনা। তুমি আমাকে নিয়ে ব্যাস্ত না হয়ে একটু শান্ত হয়ে বসোতো। লিসেন! আমার আজ ঘুমোতে একদমি ইচ্ছে করছে না আর তুমিও যে আজ ঘুমোতে পারবেনা আমি জানি। কজ একা একটা ফ্লাটে একটা ছেলেকে রেখে ঘুম আসবেনা আনইজি লাগবে তোমার। যেহেতু দুজনেরই ঘুম আসবেনা সো গল্প করে রাতটা পার করে দেই সেটা ভালো হবে না?
— অাপনি দেখছি অাজ খুব গল্প করার মুডে আছেন?
আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে হালকা ঝুকে বললেন
— এরকম সুন্দরী একটা মেয়ে পাশে থাকলে তো অনেক কিছুরই মুড হয় তাইনা?
আমি একটু দূরে সরে গিয়ে গলা ঝেরে বসলাম। সেটা দেখে উনি শব্দ করে হেসে দিয়ে বললেন
— এতো ভীতু কেনো তুমি? তোমার এখনো মনে হচ্ছে আমি তোমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করবো?
আমি কানের পিঠে চুল গুজতে গুজতে ইতোস্তত করে বললাম
— নাহ বাট এভাবে বলে কেউ?
উনি ফ্লোরে একহাতের ভর নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
— তাহলে কীভাবে বলে?
অামি এবার ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
— লোকে ঠিকি বলে আপনারা সেলিব্রিটিরা সত্যিই অসভ্য।
— তাই?
— এনি ডাউট?
উনি এবার একটা বাকা হাসি দিলেন। তারপর ওনার এক হাত আমার উপর দিয়ে নিয়ে ফ্লোরে রেখে আমার দিকে বেশ অনেকটা ঝুকে গেলো। আমি একটা ঢোক গিলে কাপাকাপা গলায় বললাম
— ক্ কী করছেন?
— ভেবেতো ছিলাম কিছু করবোনা। কিন্তু কিছু না করে অসভ্য হবার চেয়ে কিছু করে অসভ্য হওয়াটা বেটার না?
বলেই মুখটা আরেকটু এগিয়ে আনতেই আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। উনি কিছুই করবেনা সেটা জানি আমি কিন্তু ওনার এতো কাছে আসাতে তো আমার অবস্হা খারাপ হচ্ছে, কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
— এই দেখুন অাপনি আবার আমার কথাগুলোকে সিরিয়াসলি নিয়ে নিচ্ছেন আমি তো মজা করছিলাম।
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সরে গেলো। আমিও সোজা হয়ে বসে একটা শান্তির নিশ্বাস নিলাম আরেকটু হলেই দম অাটকে যেতো আমার বাপরে বাপ। আমি হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে ওনার দিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম
— হোয়াট?
— ইউ নো তুমি…
এটুকু বলতে না বলতেই প্রচন্ড জোরে চারপাশ কাপিয়ে বজ্রপাত হলো। অামি সাথে সাথেই দুই হাতে কান চেপে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম
— আব্বু…
চোখ খিচে বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে কাপছি আমি। চোখ বন্ধ রাখা অবস্হাতেই বুঝতে পারলাম আদ্রিয়ান আমার দুই হাতের বাহু ধরে হালকা ঝাকিয়ে বললেন
— কী হয়েছে? অনিমা? জাস্ট বাজ পরেছে কিছু হয়নি তাকাও? এভরিথিং ইজ নরমাল। তাকাও?
ওনার কথাগুলো আমার কানে গেলেও আমি চোখ খোলার সাহস পাচ্ছিনা। ভয়ে হাত পা কাপছে আমার। বার বার সেই রাতগুলোর কথা মনে পরছে। সারা শরীর অসম্ভবরকম কাপছে। হঠাৎ গালে অাদ্রিয়ানের হাতের ছোয়া পেলাম। ও গাল হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বললেন
— লুক এট মি? কিচ্ছু হয়নি দেখো।
অামি অাস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম ওনার দিকে ওনার চেহারায় চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। উনি আমাকে একহাতে জরিয়ে নিয়ে বললেন
— বাজ পরেছিলো কিচ্ছু হয়নি দেখো?
কিন্তু আমার চোখের সামনে শুধু সেই নৃশংস ঘটনাগুলো ভাসছে আর কিছুই না। তাই শুধু বললাম
— আব্বু আহ্ আব্বু..
আদ্রিয়ান কিছু বলবে তার আগেই আবারো আওয়াজ করে বজ্রপাত হলো আর আমি সামনের ব্যাক্তিটিকে জরিয়ে ধরলাম। এইমুহুর্তে আমি কী করছি না করছি আমার কোনো খেয়াল নেই। এই মুহুর্তে আমার শুধু একটা অবলম্বন চাই যার দ্বারা আমি নিজেকে শান্ত করতে পারবো। উনিও শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে এই ঠান্ডা পরিবেশেও ঘামে ভিজে যাচ্ছি আমি দম বন্ধ হয়ে আসছে, ধীরে ধীরে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কোনো অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছি আমি যেখান থেকে চেয়েও বেড়োতে পারছিনা।

আস্তে আস্তে চোখ খুললাম মাথাটা বেশ ভারী লাগছে। ভালোভাবে তাকিয়ে মোমের আবছা আলোতে বুঝতে পারলাম রুমের বেডে শুয়ে আছি। ধীরে ধীরে সবটা মনে পরলো। এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম আমি। আমি জানতাম আমি নিজেকে সামলাতে পারবোনা। পাশে তাকিয়ে আদ্রিয়ানকে বসে থাকতে দেখে হুরমুরিয়ে উঠে বসলাম। আদ্রিয়ান শান্ত গলায় বললেন
— আস্তে এতো তাড়াহুড়োর কিছু হয়নি।
আমার বেশ লজ্জা লাগছে বেচারা আমার বাসায় অতিথি হয়ে এসে আমারি সেবা করছে। তার‍ওপর জরিয়ে ধরেছি আমি ওকে। ও কী ভাবলো? আর আমি ভেতরে কীকরে এলাম? নিশ্চই আদ্রিয়ান এনেছে? ওহ আল্লাহ আমি আসলেই একটা প্যানিক। আমার কাছে যে আসে সেই ঝামেলায় পরে। আমি ওনার দিকে তাকিয়ে ইতোস্তত করে বললাম
— আ’ম সরি আসলে…
— ডোন্ট বি সরি। এখন কেমন লাগছে?
— বেটার।
— বাট বাজ পরলে এতো ভয় পাও তুমি?
কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি কারণ এই মুহুর্তে কিছু বলার নেই আমার। কী বলবো? এই বাজ পরা বৃষ্টির রাতগুলোই তো আমার জীবণের কাল ছিলো। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল
— ওকেহ ব্যালকনিতে চলো একটু ফ্রেশ লাগবে।
আমি একটু গুটিয়ে বসলাম। তারপর মাথা নাড়লাম। উনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললেন
— বাইরে এখন অার বাজ পরছেনা। সি বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে না। আমরা গিয়ে বসতে পারি।
ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম সত্যিই সব থেমে গেছে এখন শুধু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আছে বাইরে। টেবিল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত সাড়ে তিনটে বাজে। আদ্রিয়ান আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
— চলো?
আমি আদ্রিয়ানের দিকে খানিক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইতোস্তত করে ওনার হাতটা ধরলাম। উনি হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলেন। এরপর দুজনেই ফ্লোরে বসলাম। তবে কেউ কোনো কথা বলিনি দুজনেই বেশ অনেক্ষণ নিরব ছিলাম। নিরবতা ভেঙ্গে আমিই বললাম
— একটু বিরক্ত করে ফেললাম আপনাকে তাইনা?
উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
— কোন ব্যাপারে?
বুঝতে পারলাম বুঝেও না বোঝার ভান করছেন। তাই মুচকি হেসে বললাম
— নাহ মানে এতোক্ষণ সেন্সলেস ছিলাম আপনাকে এভাবে টেনশনে ফেলে দিলাম।
— সে দিক দিয়ে বলতে গেলে তো আমিও তোমাকে বিরক্ত করেছি।
আমি অার কিছু বললাম না আবারো কিছুক্ষণ পরিবেশটা নিরব রইলো। দুজনেই তাকিয়ে বাইরের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি দেখছি। হঠাৎ উনি বললেন
— তোমার আব্বুকে খুব ভালোবাসো তাইনা?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম
— আমি যতোটা ভালোবাসি আব্বু আমাকে তার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতেন।
— হুমম অজ্ঞান অবস্হাতেও আব্বু আব্বু করছিলে। বাই দা ওয়ে ওসব কী বলছিলে তুমি?
— কী বলছিলাম?
— জানিনা কোনো তালমিল পাচ্ছিলামনা তোমার কথার। তোমাকে কোলে নিয়ে রুমে এনে শুইয়ে দেবার পরেই কীসব বলছিলে। আব্বু বলে চেচাচ্ছিলে, ‘প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে, প্লিজ এটা করবেন না’ এসব বলছিলে আবার কখনো বলছিলে ‘ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে এসোনা, যেতে দাও আমায়’ এই ভাইয়া কে? আর কী করেছিলো তোমার সাথে?
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম। অতীত গুলো খুব বেশি যন্ত্রণা দেয়। যেখানে নিজের লোকেরাই এমন করতে পারে তখন অন্যের কী দোষ? টাকা আর লোভ মানুষকে দিয়ে কী না করায়? বিশ্বাস করে যাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিলাম তাড়াই আমার সাথে..না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল। সেটা দেখে আদ্রিয়ান আমার কাধে হাত রেখে বললেন
— আরেহ হোয়াই আর ইউ ক্রাইং? আচ্ছা আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করবোনা চিল।
আমি আর কিছু বললাম না চুপ করে রইলাম। আদ্রিয়ান নিজেই আমার মাথাটা ওর কাধে নিয়ে গেলো। আমি বেশ অবাক হলাম, কিন্তু কিছু বললাম না হয়তো আমাকে কাদতে দেখেই এমন করছে, সান্তনা দিতে। আর আমারও এই মুহুর্তে এরকম একটা কাধের খুব দরকার ছিলো। তাই কিছু চিন্তা না করেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।

রোদের আলো চোখে পরতেই জেগে গেলাম। চোখে হাত দিয়ে আলতো করে চোখ খুলে দেখি বেডে শুয়ে আছি। সিট! ঘুমিয়ে পরেছিলাম আর এবারেও নিশ্চিত আদ্রিয়ান ই রুমে এনেছে। চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে দেখি আদ্রিয়ান রুমে কোথাও নেই। তবেকী চলে গেছে ওও? আস্তে করে উঠে ব্যালকনিতে গেলাম। সারারাত বৃষ্টির পর আকাশ একেবারেই পরিস্কার হয়ে গেছে। ভেজা সিগ্ধ সকালের এই নরম রোদের আলোয় চারপাশটা ঝকঝক করছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলে উঠল
— গুড মর্নিং ম্যাডাম।
আমি চমকে পেছনে তাকালাম। আদ্রিয়ান দুই হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমিতো অবাকের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌছেছি। হা করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন
— কী হলো হা করে আছো কেনো?
আমি অবাক হয়েই তাকিয়ে থেকে বললাম
— আপনি কফি বানিয়ে এনেছেন?
— হ্যা এনি প্রবলেম? ( ভ্রু কুচকে )
— বাট কীভাবে?
উনি মুচকি হেসে বললেন
— একটু কষ্ট হয়েছে সব খুজে পেতে বাট পেরেছি। টেষ্ট ইট?
— কষ্ট করার কী দরকার ছিলো আমায় ডাকতেন?
— তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই জাগাতে ইচ্ছে করছিলোনা। আর তাছাড়া দুই মগ কফিই তো বানিয়েছি। এ আর এমন কী?
আমি মুচকি হেসে মগটা নিলাম। উনি মুখ ছোট করে বললেন
— খারাপ হলেও কিন্তু বলবেনা খারাপ হয়েছে ওকে?
আমি হেসে দিলাম ওনার কথায় সাথে উনিও হেসে দিলেন। এরপর দুজনেই রেলিং ধরে দাড়িয়ে কফি খেতে খেতে বাইরের সিগ্ধ পরিবেশটা। যেনো সারারাত কান্না আর গর্জনের পর এখন পরিবেশটা মন খুলে হাসছে। সেই হাসিতে চারপাশ ঝকঝক করছে। কিন্তু মানুষের জীবনটা তো এতো সহজ না। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। একটু পরেই কারেন্ট চলে এলো। সেটা দেখে অাদ্রিয়ান বলল
— থ্যাংক গড। তুমি তোমার ফোনটা একটু চার্জে দাও প্লিজ।
— হুম। চার্জ হতে হতে আমি ব্রেকফাস্ট করছি।
— ওকেহ।
আমি ফোন চার্জে দিয়ে কিচেনে চলে গেলাম পাস্তা বানাতে। পাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসে দেখি আদ্রিয়ান আমার ফোন ঘাটছে। আমাকে দেখে উনি বললেন
— সামনের মেইন রোডে আমার ম্যানেজার গাড়ি নিয়ে ওয়েট করবে। ওই পর্যন্ত কীকরে যাবো? কেউ দেখে নিলে তো জেকে ধরবে।
আমি কিছু একটা ভেবে বললাম
— আমার স্কুটিতে করে আপনাকে ঐ জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আমি অফিস যাবো।
— ওকেহ থ্যাংকস।
এরপর দুজনেই খেতে বসলাম। একটুপর উনি চলে যাবে আর হয়তো এভাবে দেখা হবেনা। মনটা খারাপ লাগছে কিন্তু ওনার মধ্যে মন খারাপের কোনো ছাপ নেই। থাকবেই বা কেনো? থাকার তো কোনো কারণ নেই।
খেয়ে আমি রেডি হয়ে নিলাম আর উনিও টিশার্ট জ্যাকেট পরে নিলেন। এরপর দুজনেই বেড়িয়ে পরলাম। হেলমেট পরে থাকায় ওনাকে কেউ চিনতে পারেনি। স্কুটি করে ওনাকে ওনার গাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে নিজেও নামলাম। উনি বললেন
— বাই।
আমিও মুচকি হেসে বললাম
— বাই
উনি চলে যেতে নিয়েও পেছনে ফিরে বললেন
— ধরো আবার যদি কখনো বিপদে পরি আর তোমার হেল্পের দরকার হয়? সো?
আমি বুঝতে পারলাম উনি কী চাইছেন আমি একটু অবাক হলেও আমার কার্ডটা নিয়ে ওনাকে দিলাম। উনি সেটা নিয়ে মুচকি হেসে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট করতেই উনি হাত নাড়লেন আর আমিও হাত নেড়ে বিদায় দিলাম ওনাকে।
যতোক্ষণ গাড়িটা দেখা গেছে তাকিয়ে ছিলাম আমি। জানিনা আর দেখা হবে কী না। আকষ্মিক ভাবেই একটা গোটা একরাত একসাথে ছিলাম বর্ষণের সেই রাতে। যেই রাতটা আমার কাছে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। নিজের একা জীবণে একরাতের জন্যে হলেও একজন সঙ্গী পেয়েছিলাম। কিন্তু উনি কী মনে রাখবেন আমাকে? হয়তো হ্যা আবার হয়তো না। হয়তো অনেক মানুষের ভীরে আমি পরে থাকবো ওনার স্মৃতির কোনো এক তুচ্ছ কোণে।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here