#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১১
সাঈদ ইরিনার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে যাবে কি-না ভাবছে সে। ভেতরে না গেলে সত্য জানতে পারবে না৷ আর সত্য না জানার পর্যন্ত সে শান্তি পাবে না৷ হঠাৎ পেছন থেকে ঝর্ণার কন্ঠ ভেসে আসলো,
“আসসালামু আলাইকুম”
সাঈদ পেছনে ফিরে ঝর্ণাকে দেখে মুখে হাসি ফুটালো। ঝর্ণার হাতে বাজারের ব্যাগ। সাঈদ বলল,
“তুমি বাজারে গিয়েছিলে?”
ঝর্ণা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। সাঈদ চিন্তিত হয়ে বলল,
“তার মানে উনি বাসায় একা?”
“কে! আপা?”
“হ্যাঁ”
“আরে আমি মাত্র গেলাম আর আইলাম। চিন্তা কইরেন না। আপনে বাইরে কি করেন? ভিতরে আহেন আমি চা রান্না করি।”
সাঈদ মাথা নাড়াল। তারা দুজন কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেল। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই ইরিনার ঘর থেকে কাচ ভাঙ্গার শব্দ আসলো। সাঈদের কলিজা মোচড় দিয়ে উঠল শব্দ শুনে। দৌড়ে গেল সে সেখানে। ঝর্ণাও সাথে যেতে নিলো কিন্তু তার নাকে পুড়া গন্ধ আসতেই সে রান্নাঘরের দিকে গেল। সাঈদ গিয়ে দেখে ইরিনা মাটিতে পড়ে আছে। পায়ে তার কাচ ভেঙ্গে গেঁথে আছে। সাঈদ দৌড়ে গেল। ইরিনা সাঈদকে দেখে তাকিয়ে রইল। সাঈদ কি করবে বুঝতে পারছে না। পা থেকে ভীষণ রক্ত ঝরছে। সে দ্রুত পকেট থেকে রুমাল বের করে ইরিনার পা আলতো করে ধরে কাচ বের করার চেষ্টা করছে। ভয় করছে তার ভীষণ। ইরিনা সাঈদকে চিন্তিত দেখে বলল-
“পা প্যারালাইজড, ব্যথা অনুভব হয় না। টান দিয়ে বের করে ফেলো আমি ব্যথা পাবো না।”
সাঈদ ইরিনার দিকে তাকাল। বুক কাঁপছে তার। কাচ ধরে চোখ বন্ধ করে টেনে বের করে ফেলল। ইরিনার মনে হলো সে কিছুটা ব্যথা অনুভব করেছে। যেহেতু ট্রিটমেন্ট সাকসেস হচ্ছে তাই এখন তার সুস্থ হওয়ার চান্স খুব বেশি। সাঈদ রুমাল দিয়ে ইরিনার পা চেপে ধরলো। ইরিনা তাকিয়ে আছে সাঈদের দিকে। সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
“আপনাকে কে বলেছে খাট থেকে একা নামতে?”
“পুড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম। বাসায় কেও ছিল না। কিছু বুঝতে না পেরে খাট থেকে নামার চেষ্টা করেছি। তখনই হাত লেগে গ্লাসটা পড়েছে সাথে আমিও।”
সাঈদ রাগান্বিত স্বরে ঝর্ণাকে ডাকলো।ঝর্ণা সাঈদের ডাক শুনে দৌড়ে আসলো।সাঈদ ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে উঁচু স্বরে বলল,
“তুমি উনাকে একা রেখে কেন গিয়েছিলে?”
সাঈদের বকা শুনে ঝর্ণা ভয় পেয়ে গেল। ইরিনা সাঈদের উদ্দেশ্যে বলল,
“ওকে আমি যেতে বলেছিলাম। তুমি শান্ত হও। ওর সাথে এমন ব্যবহার করো না। ও খুব ছোটো।”
সাঈদ ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ছোটো বলে কি মাথায় তুলে রাখবো? ওকে যে কাজের জন্য রাখা হয়েছে সেটা করতে পারে না?”
ঝর্ণা এক সময় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সাঈদ ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এখন কান্না করে মামলা জিততে হবে না। যাও এখান থেকে তুমি।”
ঝর্ণা ফুপাতে ফুপাতে চলে গেল। সাঈদ ইরিনাকে ধরে তুলার চেষ্টা করতেই ইরিনা বাঁধা দিয়ে বলল,
“লাগবে না, ইর্তেজা এসে পরবে এখন। যাও তুমি এখন।”
“আপনাকে এভাবে একা রেখে চলে যাব?”
“কোথায় আমি একা? ঝর্ণা আছে আমার সাথে। আর তুমি ওর সাথে এমন ব্যবহার করে ঠিক করো নি। তুমি জানো না ও আমার কত খেয়াল রাখে।”
“আচ্ছা আমি মাফ চেয়ে নিবো। আসুন খাটে তুলে দেই আপনাকে।”
“না না লাগবে না”
সাঈদ ইরিনার কথা শুনলো না। হঠাৎ করে কোলে তুলে নিলো। ইরিনা অবাক হয়ে বলল,
“কি করছো নামাও আমাকে।”
সাঈদ ইরিনাকে খাটে বসিয়ে বলল,
“আপনি কি ভেবেছেন আপনাকে তুলে নিয়ে যাবো?”
“তোমার সাহস আছে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার?”
সাঈদ ইরিনার দিকে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে বলল,
“দেখতে চান আমার সাহস?”
ইরিনা দু’বার চোখের পলক ফেলে সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। সাঈদ মুচকি হেসে ইরিনার পাশে বসলো। পা থেকে রুমাল খুলে দেখে রক্ত ঝরা কমে নি। ইরিনাকে জিজ্ঞেস করে ওয়ারড্রবের ড্রয়ার খুলে ঔষধের বক্স থেকে মলম বের করে আবার এসে ইরিনার পাশে বসলো। ইরিনার পা নিজের কোলে নিয়ে পরম যত্নে মলম লাগিয়ে দিতে লাগলো। ইরিনা চাচ্ছে বাঁধা দিতে কিন্তু মন বলছে এই মুহূর্তটাকে মন ভরে উপভোগ করতে।
.
.
শ্রাবণ খাটে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে৷ সাগরিকা চা বানিয়ে নিয়ে আসলো৷ শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ আগে গোসল করে বের হয়েছে সাগরিকা। চুল এখনো ভেজা। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিলো। শ্রাবণ সাগরিকার হাত থেকে কাপ নিলো। সাগরিকা ঘুরে চলে যেতে নিতেই শ্রাবণ তার হাত ধরে ফেলল। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণের চাহনি দেখে থমকে গেল সে। কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। শ্রাবণ সাগরিকাকে তার বরাবর বসালো। তার বেহায়া চোখ সাগরিকাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। সাগরিকা নিজের হাত ছাড়িয়ে বলল,
“রান্না চুলায়, পরে কথা বলি।”
সাগরিকা উঠতে চাইল। শ্রাবণ আবার বাঁধা দিয়ে সাগরিকার কাছে গিয়ে বসলো। সাগরিকার হাত মুঠোবন্দি করে তাকিয়ে আছে। আজও সাগরিকার নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। শ্রাবণ আলতো করে মুছে দিয়ে বলল,
“রান্না করতে হবে না। চলো আজ বাহিরে যাই৷ একেবারে ডিনার করে বাসায় ফিরবো।”
“আজ না। আগামীকাল যাবো। রান্না অলরেডি হয়ে গিয়েছে।”
“সেগুলো সার্ভেন্টদের প্যাক করে দিয়ে দাও তারা বাসায় নিয়ে যাবে।”
“আমাদের দুজনের জন্য শুধু রান্না করেছি এতজনকে কিভাবে দিই?”
“দিন দিন আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো।”
বলেই শ্রাবণ সাগরিকার হাত ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। যেন অভিমান করেছে। সাগরিকা তা দেখে মনে মনে বলল, “ন্যাকামোর লিমিট থাকে শ্রাবণ।”
কিন্তু হাসিমুখে বলল, “তো এখন কি করতে পারি?”
শ্রাবণ সাগরিকার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, “চলো বাহিরে যাব।”
“ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে নাও। আমি রান্নাঘর থেকে আসছি।”
শ্রাবণ হেসে সম্মতি জানালো। সাগরিকা যেতে নিলো আবার বাঁধা দিলো শ্রাবণ। সাগরিকা শ্রাবণের দিকে মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে তাকিয়ে বলল,
“আবার কি হলো তোমার? তুমি আমাকে এত জ্বালাও কেন বলো তো।”
শ্রাবণ সাগরিকার চুলের মাঝে মাঝে আঙুল ঢুকিয়ে কাছে গেল। সাগরিকার কপালে ও গালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখলো। তারপর ছেড়ে বলল,
“নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলাম না। এখন যাও।”
সাগরিকার নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। ছাড় পেতেই দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। শ্রাবণ হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলো।
সাগরিকা রান্নাঘরে এসে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। ইদানীং তার কি হয়েছে নিজেও জানে না। শ্রাবণের কাছে গেলে বিরক্ত লাগে। আবার দূরে গেলে অস্থিরতা হয়। সাগরিকা চুলা বন্ধ করে দিলো। একজন সাার্ভেন্ট ছিলো রান্নাঘরে। তাকে বলল সবাইকে বলে দিতে আজকের জন্য ছুটি। সে সাগরিকার কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে রান্নাঘর থেকে বের হলো। সাগরিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ তার চোখের সামনে কিছু দৃশ্য ভেসে উঠল।
সাগরিকার অতীত…..
এলার্ম বাজছে, সকাল সকাল এই শব্দ শুনে সাগরিকার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু আজ তার ঘুম ভাঙ্গছে না। রাত জেগে ফোনালাপ করেছে। আর এখন ঘুমের কারণে কান দিয়ে শব্দ যাচ্ছে না। এলার্মের শব্দ শুনে সূর্য তার ঘর থেকে এসে এলার্ম বন্ধ করলো৷ সাগরিকাকে কয়েকবার ডাকলো। কিন্তু সে উঠছে না। সূর্য কোমড়ে হাত দিয়ে উঁচু স্বরে বলল,
“আরে আজমাইন ভাইয়া আপনি? আপু তো ঘুম।”
আজমাইন নামটা যেন সাগরিকার কানের ভেতর গিয়ে ব্রেইনের সাথে ধাক্কা খেল। সাগরিকা ধরফরিয়ে উঠে বসে বলল,
“তুমি কেন আসলে?”
সূর্য মুখ টিপে হাসলো। সাগরিকা বোকার মতো এদিক সেদিক দেখে সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কোথায় আজমাইন?”
সূর্যের জবাব দিলো না। শব্দ করে হাসতে হাসতে চলে গেল। সূর্য তাকে উঠানোর জন্য এমনটা করেছে সাগরিকা বুঝতে পারলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ নিমিষেই বেরিয়ে আসতে নিলো। কলেজ যেতে হবে। ক্লাস হয়তো শুরু। সাগরিকা দ্রুত খাট থেকে নেমে বাথরুমে গেল। ফ্রেশ হয়ে এসে কলেজ ইউনিফর্ম পড়ে বাহিরে গেল। সূর্য নাশতা নিয়ে এসেছে। সাগরিকাকে বাসা থেকে বের হতে দেখে বলল,
“কোথায় যাচ্ছো? নাশতা খেয়ে যাও।”
“সময় নেই যেতে হবে। টাকা আছে আমার কাছে কেন্টিন থেকে কিছু খেয়ে নেবো। তুই আব্বুর খেয়াল রাখিস আল্লাহ হাফেজ।”
সাগরিকা দৌড়ে চলে গেল। আজ ভাগ্য তার খারাপ রিকশা পাচ্ছে না। দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুটা দূর যেতেই খেয়াল করলো সামনে থেকে আজমাইন আসছে বাইক চালিয়ে। সাগরিকার মুখে হাসি ফুটে উঠল। আজমাইন বাইক থামিয়ে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“আমি কলেজের বাহিরে দাঁড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আর তুমি রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছো?”
সাগরিকা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
“আমার দোষ নেই। ঘুম দেরিতে ভেঙ্গেছে। প্লিজ আমাকে কলেজ দিয়ে আসো।”
“আর যেতে হবে না ক্লাস শুরু হয়েছে অনেক আগে। এখন গেলে লম্বা লেকচার শুনতে হবে। আর আমি চাই না তোমাকে কেও বকা দেক।”
সাগরিকা মুচকি হেসে এগিয়ে গেল আজমাইনের দিকে। আজমাইন সাগরিকার হাত ধরে কাছে নিয়ে এসে কপাল ছোঁয়া চুল সরিয়ে বলল,
“তোমার কন্ঠ থেকে এখনো ঘুম ঘুম ভাব যায় নি৷ পাগল বানাতে চাচ্ছো আমায়?”
সাগরিকা দ্রুত হাত সরিয়ে বলল,
“তুমি খুব আজব আজব কথা বলো আমার এসব পছন্দ না। আর আমার পারমিশন না দিয়ে হাত ধরেছো কেন?”
আজমাইন হাতজোড় করে বলল,
“মাফ চাই ন্যাকার রানী মাফ চাই”
সাগরিকা ভেংচি কাটলো। আজমাইন হেসে তার সানগ্লাস সাগরিকার চোখে পড়িয়ে বলল,
“সূর্যকে কল দিয়েছিলাম সে বলল তুমি কিছু না খেয়েই বেড়িয়ে পরেছো। চলো আমরা নাশতা করে আসি।”
সাগরিকা মাথা নাড়িয়ে বাইকে উঠে বসলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আজমাইনকে।
দুজন একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলো। সাগরিকার অভ্যেস চেয়ারে বসে পা নাড়ানো। আজমাইন ভ্রু কুঁচকে বলল,
“পা ভেঙ্গে হাতে দিয়ে দেবো। বলেছি না পা না নাড়াতে এভাবে!”
“তো কিভাবে নাড়াবো শিখিয়ে দাও।”
আজমাইন সাগরিকার বিনুনি টেনে ধরে বলল,
“এত দুষ্টুমি কোথা থেকে শিখো তুমি হ্যাঁ?”
সাগরিকা আজমাইনের হাতে ইচ্ছে মতো থাপ্পড় মারতে লাগলো। কিন্তু এতে কাজ হলো না। অবশেষে তার হাত কামড় দিয়ে ধরলো। আজমাইন হাসতে হাসতে বলল,
“এই খরগোশের মতো দাঁত আমার ক্ষতি করতে পারবে না।”
সাগরিকা আজমাইনের দিকে মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে তাকিয়ে বলল,
“ব্যথা পাচ্ছি”
আজমাইন সাথে সাথে ছেড়ে দিলো। সাগরিকা খিলখিল করে বলল,
“উল্লু বানিয়েছি তোমাকে। একটুও ব্যথা পাইনি।”
আজমাইন হাসলো। সাগরিকার হাতের আঙুলের মাঝে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরলো। সাগরিকা তাকাল আজমাইনের দিকে। আবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেকেই তাদের দেখছে। সাগরিকা লজ্জায় পরলো। মাথা নিচু করে ফেলল সাথে সাথে। আজমাইন মুচকি হেসে ওয়েটারকে ডাকলো। খাবার অর্ডার দিয়ে সাগরিকাকে বলল,
“কিছুদিন আগে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম মনে আছে?”
সাগরিকা মাথা তুলে আজমাইনের দিকে তাকাল। আজমাইন মুচকি হেসে বলল,
“চাকরি পেয়ে গিয়েছি। এখন তোমার বাবা আর না করতে পারবে না। উনাকে বলে দিও মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন পাবো এই চাকরিতে।”
“বলো কি? বাবাকে বললে আজই বিয়ে দিয়ে দেবে আমাদের।”
“কি আজব তাই না? মনে হচ্ছে তুমি আমাকে না আমার চাকরিকে বিয়ে করবে।”
“তোমার বেকারত্ব নিয়ে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আব্বু কেমন তা তো জানোই।”
আজমাইন এই বিষয়ে আর কিছু বলল না। সাগরিকার মন খারাপ হয়ে যাবে নাহলে। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“আচ্ছা শুনো, আগামী সপ্তাহ থেকে জয়েন করবো। আমি চাই তুমি তোমার এইচএসসির পরীক্ষার জন্য পড়ায় মনোযোগ দাও এবার।”
“পরীক্ষার এখনো ৭ মাস বাকি।”
“এখন থেকেই প্রস্তুতি নও। এ-প্লাস না পেলে তোমাকে আমি বিয়ে করবো না।”
“হাউ রুড”
সাগরিকা মুখ লটকিয়ে ফেলল। আজমাইন হেসে আশে পাশে তাকাল। সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আজমাইন সাগরিকাকে কাছে টেনে বুকে ভরে নিলো। সাগরিকা আজমাইনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল,
“তুমি এত বেশরম কেন? পাবলিক প্লেসে এসব কি?”
“আমার হবু বউকে জড়িয়ে ধরেছি কার সাহস আছে কিছু বলার?”
“আর আমি যদি অস্বীকার করি যে তোমাকে চিনি না তখন?”
“বাপরে এত ডেঞ্জারাস কেন তুমি?”
“আমি এমনই”
আজমাইন মুচকি হেসে বলল,
“সবসময় এমনই থেকো। কখনো নিজেকে পরিবর্তন করো না। আর হ্যাঁ ছেড়ে যেও না কখনো আমাকে।”
“কোথায় যাবো বলো? যেখানে তাকাই তুমি ছাড়া আর কাওকে দেখতে পাই না।”
আজমাইন মুচকি হেসে সাগরিকার হাতে চুমু দিলো। সাগরিকা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।
বর্তমান…..
গালে ছোঁয়া পেয়ে সাগরিকার হুঁশ ফিরলো৷ পাশে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। সাগরিকার অনুভব হলো তার গালে পানি। দ্রুত মুছে বলল,
“তুমি রেডি হও নি এখনো?”
“আমি রেডি, কাঁদছো কেন?”
“কোথায় না তো।”
“বোকা পেয়েছো আমাকে? বলো কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি। তুমি যাও আমি খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে আসছি।”
শ্রাবণ সাগরিকার কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরালো। সাগরিকার কন্ঠ কাঁপছে। শ্রাবণ বলল,
“আসার সময় সূর্যকে সাথে করে নিয়ে আসবো আমাদের সাথে।”
সাগরিকা চোখ তুলে শ্রাবণের দিকে তাকাল। গলা ধরে আসছে তার। শ্রাবণ মুচকি হেসে সাগরিকার গালে হাত রাখলো। সাগরিকার বুক ছিঁড়ে কান্না আসছে। মুহূর্তেই জাপ্টে ধরলো শ্রাবণকে। শ্রাবণের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। শ্রাবণ অবাক হলো। সে তার কান্নার কারণ বুঝতে পারলো না। ভাবলো এখন জিজ্ঞেস করবে না। শক্ত করে বুকের সাথে ধরে রাখলো সাগরিকাকে।
রাতেরবেলা……
ইর্তেজা ছাদে এসেছে। আজ আকাশে তারার মেলা দেখা যাচ্ছে। চাঁদ একদম গোল আর আলোয় ভরপুর দেখাচ্ছে। ইর্তেজা রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। শত তারার মাঝে চাঁদ যেমন একা ঠিক তেমনই শত ভীরের মাঝে ইর্তেজা একা। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ওয়ালপেপারের দিকে তাকাল। মাহার এই অভিমানী চেহারাটা বড্ড মনে পড়ছে তার। বড্ড ইচ্ছে করছে আর একটিবার মাহাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতে। ইর্তেজা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সে জানে এটা কখনো সম্ভব না। হঠাৎ মেসেজ আসলো মোবাইলে। শ্রাবণ মেসেজ দিয়েছে। ইর্তেজা মেসেজটা পড়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। শ্রাবণ একটা ছেলে হায়ার করেছে। সে ইর্তেজার জমিন মালিকের স্ত্রীকে কিডন্যাপ করতে সাহায্য করবে। তার ডিটেইলস পাঠিয়েছে শ্রাবণ। আগামীকাল গিয়ে ইর্তেজা তার সাথে দেখা করবে৷ ইর্তেজা মোবাইল পকেটে রেখে আবার আকাশের দিকে তাকাল। সময় ডাকে এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে। সে কখনো ভাবে নি কাওকে কিডন্যাপ করার মতো ঝঘন্য কাজ করবে।
পরেরদিন…..
ইর্তেজা ফ্যাক্টরির সামনে দাঁড়িয়ে সেই ছেলেটার অপেক্ষা করছে। প্রায় আধঘন্টা হয়ে গিয়েছে কিন্তু ছেলেটার আসার নাম গন্ধ নেই। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে আসলো। ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স খুব কম। সে ইর্তেজাকে দেখে বলল,
“মাফ করবেন দেরি হয়ে গেল।”
“তোমাকেই শ্রাবণ আহমেদ হায়ার করেছে?”
ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে ইর্তেজার দিকে একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল,
“সেই মহিলার ছবি। আপনি একবার চেক করে নেন। শুনলাম আগামীকাল সে পার্লারে যাবে পরিবারে কারো বিয়ে তাই। সে পার্লারে যাওয়ার সময়ই তাকে তুলে নিয়ে শ্রাবণ স্যারের কাছে যাবো।”
ইর্তেজা খামটা হাতে নিয়ে বলল,
“তোমার নাম কী?”
“বাদশাহ”
ইর্তেজার তার নাম পছন্দ হলো। বাদশাহ’র কাঁধে হাত রেখে বলল,
“খুব ইন্টারেস্টিং তোমার নামটা। আচ্ছা বাদশাহ কাল দেখা হবে তাহলে। তোমাদের ধন্যবাদ।”
“ভালো নাম পারভেজ। আম্মা ডাকে বাদশাহ। তাই সবাইকে বাদশাহ নামই পরিচয় দিই। আপনার নাম্বার আছে আমার কাছে। আমি কাল কল করবো আপনাকে।”
ইর্তেজা মাথা নাড়াল। বাদশাহ চলে গেল। ইর্তেজা খাম খুলে ছবি বের করলো।ছবিটা দেখে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তার কেন যেন মনে হচ্ছে সে মানুষটাকে চেনে। কিন্তু মনে করতে পারছে না।
চলবে……