#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৫
গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাহা। আজ ভার্সিটিতে স্টুডেন্ট আসলেও অনেক স্যার ম্যামই আসেনি তাই ক্লাস হবে না। বিথি কোল্ড ড্রিংকস পান করতে করতে বলল,
“দোস্তোরা, আমার মনে হয় স্যার ম্যাডামরা নিশ্চয়ই ঘুরতে গেসে। আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে ক্লাস নিবো না-কি?”
মাহা বুকের বা পাশে হাত রেখে বলল,
“উফফফ চিন চিন ব্যাথা করছে। আজ একটা বয়ফ্রেন্ড থাকলে আমিও ভার্সিটি আসতাম না।”
আলিয়া বলল,
“তুই তো এমনিতেও ভার্সিটি সপ্তাহে ১ বার আসিস। তাই তো তোকে কেও চিনে না ঠিক মতো।”
“চুপ থাক তুই।”
মাহা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকাল। দূর থেকে ইর্তেজা, আফজাল আর রাফসানকে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এই রাফসান ওদের সাথে কি করে?”
বিথি অবাক হয়ে বলল,
“তাদের তিনজনের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল না তো?”
মাহা হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজ এই তিনটাকে মঙ্গলগ্রহে ভ্রমণে পাঠাবো।”
আলিয়া বলল,
“মাহা হাতজোড় করছি প্লিজ উল্টা পাল্টা কিছু করিস না।”
“হাতজোড় কেন? তুই আমার পা ধরলেও আমি তোর কোনো কথা শুনবো না।”
“ধ্যাত কোনো ইজ্জতই নেই আমার।”
মাহা চোখে সানগ্লাস পড়ে এগিয়ে গেল। তাদের তিনজনের পথ আটকে দাঁড়াল। রাফসান মাহাকে দেখেই আফজালের পেছনে গিয়ে লুকালো। আফজাল রাফসানকে কনুই দিয়ে গুতা মেরে বলল,
“ছেলে হয়ে মেয়েদের ভয় পাস? ছি ছি তোর সাথে এখনই বন্ধুত্ব ভাঙবো।”
“মেয়েটা খুব ডেঞ্জারাস। আমার ভয় করছে। প্লিজ আমাকে বাঁচা তোরা।”
ইর্তেজা তাদের দুজনকে চুপ থাকতে বলে মাহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“কিছু বলবেন?”
“রাফসানের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করার আগে আমার থেকে পারমিশন নিসিলি তুই?”
ইর্তেজা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল। প্রথম দেখাতেই তুইতোকারি করছে মেয়েটা। বিথি আর আলিয়া হেঁটে এসে মাহার পাশাপাশি দাঁড়াল। আলিয়া এক নজর রাফসানকে দেখে বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মাহা আবার বলল,
“দেখ আমি যা বলি মুখের উপর বলি। এই রাফসানের সাথে বন্ধুত্ব না ভাঙলে ভালো হবে না কিন্তু।”
“দেখুন ও শাস্তি পেয়েছে। এবার ওকে ক্ষমা করে দিন।”
মাহা রাগী দৃষ্টিতে রাফসানের দিকে তাকাল। রাফসান চমকে বলল,
“দেখ দেখ কিভাবে দেখছে আমাকে। যেন এখনই খেয়ে ফেলবে।”
মাহা রাফসানকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,
“ইয়াক, আমি পঁচা জিনিস থেকে শত হাত দূর থাকি।”
রাফসান ইর্তেজাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুই আমার শেষ ভরসা। প্লিজ কিছু কর।”
মাহা ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“এই শুটকি আমার কি করবে শুনি।”
বিথি ফিক করে হেসে দিলো। আলিয়া সাথে সাথে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল। সে চায় না ইর্তেজা তার হাসি দেখুক। মাহা আর বিথি হাইফাইভ করে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহার দিকে। মাহা হাসি থামিয়ে বলল,
“তোর কি রাগ হচ্ছে না আমার কথা শুনে?”
“উঁহু”
“এই রোমিও, আমি তোকে শুটকি বলেছি। শুটকি চিনিস তো?”
“হ্যাঁ, শুটকি ভর্তা আমার খুব প্রিয় খাবার।”
“ইয়াক, এই দূর থাক আমার থেকে।”
ইর্তেজা মাহার দিকে ধীরে ধীরে হেটে গেল। মাহা ডান বাম দেখে ইর্তেজার দিকে তাকাল। ইর্তেজা মাহার দিকে ঝুঁকে তার সানগ্লাস খুলে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“ভেবে নাও, দূর চলে গেলে পরে মিস করবে।”
মাহা দু’বার চোখের পলক ফেলল। পুরো কনফিউজ হয়ে গেল সে। ইর্তেজাকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ব্রো দূর থাক। তোকে দেখলে শুটকি আমার চোখে ভাসে।”
বিথির সাথে সাথে আলিয়াও শব্দ করে হেসে দিলো। রাফসান তা দেখে আলিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“তোমার লজ্জা পাওয়া উচিত। যে ছেলে তোমার হয়ে লড়েছে তার অপমান হতে দেখে হাসছো? আরে তোমার তো উচিত তার হয়ে নিজের বান্ধবীর সাথে লড়াই করা।”
আলিয়া হাসি থামিয়ে ফেলল। মাহা রাফসান দিকে এসে তার বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“তোর লজ্জা পাওয়া উচিত। যে ছেলে তোর গালে নিজের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে পেইন্ট করে দিয়েছে তার সাথে লড়াই করা। তা না করে তারই আগে ফিরে ঘুরছিস?”
বিথি হাসতে হাসতে বলল,
“তোমার ডায়লগ তোমাকেই ছিপকিয়ে দিলো। এখন বলো কেমন বোধ করছো?”
রাফসান ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ইর্তেজা বলল,
“আচ্ছা সবাই থামো। আমরা সবাই একই ভার্সিটির স্টুডেন্ট। শুধু তাই না, এক ক্লাসেও পড়ি। তাই আমাদের মাঝে ফ্রেন্ডশিপ থাকুক বা না থাকুক আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা দরকার। প্র্যাকটিক্যাল সামনে আমরা চাইলে একে অপরকে হেল্প করতে পারি।”
মাহা ইর্তেজার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কি? হেল্প? তাও একে অপরের? মেহরুন্নেসা মাহা মরে যাবে তবুও কারোর থেকে হেল্প নিবে না। তুই চাইলে আমার থেকে হেল্প নিতে পারিস।”
ইর্তেজা মাহার সামনে হাতজোড় করে বলল,
“মাফ করে দিন ম্যাম। এখন প্লিজ আমাদের যেতে দিন আমরা এখন খুব তাড়ায় আছি।”
“তোর বাকি দুই চামচাকেও বল হাতজোড় করতে তাহলেই যেতে দিবো।”
আফজাল রাগী কন্ঠে বলল,
“দিজ ইজ নট ফেয়ার। সে এখন বাড়াবাড়ি করছে।”
রাফসান বলল,
“হ্যাঁ ঠিক, নিজেকে কি ভাবে?”
মাহা বলল,
“তুই জানতে চাস নিজেকে কি ভাবি?”
রাফসান চুপসে গেল। আলিয়া মাহার কানে কানে বলল,
“এবার যেতে দে এদের। অকারণে বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই। সবারই সময় নষ্ট হচ্ছে। তুই তো বলেছিলি তোর চাচুর জন্য পাত্রী দেখতে যাবে সবাই।”
“ওহ হ্যাঁ ঠিক তো। আমি তো ভুলেই গিয়েছি।”
মাহা ইর্তেজার হাত থেকে নিজের সানগ্লাস নিয়ে চোখে পড়ে ভাব নিয়ে বলল,
“আজ যেতে দিলাম। তোরাও মনে রাখবি মাহা কত বড়ো মনের মানুষ।”
ইর্তেজা হাসলো। আফজাল আর সহ্য করতে না পেরে ইর্তেজার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল। তাদের পিছন পিছন রাফসানও পালালো। মাহা তাদের যাওয়ার পথে তাকাতেই দেখে ইর্তেজা তার দিকে তাকিয়ে আছে। মাহা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে বিথি ও আলিয়াকে বলল,
“এই ছেলে আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে কেন?”
আলিয়া ফিক করে হেসে বলল,
“নিশ্চয়ই তোকে পছন্দ করে ফেলেছে।”
“আপাতত তো আমার মনে হচ্ছে তুই এই শুটকির প্রেমে পরেছিস।”
“একদম না, ছেলেটা অনেক ভালো। আমার কোনো ভাই নেই। ইর্তেজা আমার সম্মান রক্ষা করায় মনে হয়েছে আমি আমার নতুন ভাই পেয়েছি।”
“ইশশশ ভাই বোনের ভালোবাসা। চল এখন আমার সাথে শপিংমল। অনেক কিছু কেনার আছে আমার।”
“ইশশ যেন তোকে দেখবে আসবে। তোর চাচুর জন্য মেয়ে দেখতে যাবি তোরা বুঝলি?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। চল এখন।”
.
.
ইর্তেজা বাসায় এসে সোফায় ধপ করে বসলো। আজকের দিন স্বরণীয় থাকবে। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে ইরিনা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। ইর্তেজাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুই আসলি বিদ্যুৎ চলে গেল। কুফা কোথাকার।”
ইর্তেজা দাঁড়িয়ে কলার ঠিক করে ইরিনার সামনে এসে বলল,
“আজ্ঞে না, তুমি আজ বাসায় আছো বলে বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। প্রিয় বোন, আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। যাও বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে আসো।”
ইরিনা চোখ ছোটো ছোটো করে ফেলল। ছেলেটা সবসময় এসব কথা বলে দুষ্টুমি করে।ইর্তেজা চমকানোর ভান ধরে বলল,
“ওপস আপু, আমি তো ভুলেই গিয়েছি তুমি সিংগেল। আহারে আপু থাক মন খারাপ করো না।”
ইরিনা সোফা থেকে বালিশ নিতেই ইর্তেজা দৌড়ে মায়ের ঘরে গেল। ইরিনাও গেল তার পেছন। মা মাত্র নামাজ আদায় করে উঠে খাটে বসলেন। ইর্তেজাকে তুফানের গতিতে আসতে দেখে উনি ভয় পেয়ে গেলেন। ইর্তেজা এসে খাটে উঠে দাঁড়াল। ইরিনা আসতেই মা রাগী কন্ঠে বললেন,
“তোরা বাসায় না থাকলে আমার ঘর ঘর মনে হয়। আর তোরা থাকলে চিড়িয়াখানা।”
“তো তোমার ছেলেকে চিড়িয়াখানায় গিয়ে দিয়ে আসো না কেন? এই বানরটাকে বানরের খাঁচায় ভরে রাখা দরকার।”
ইর্তেজা বলল,
“দেখলে আম্মু এই ক্যাঙ্গারু আমাকে কি বলছে?”
ইরিনা অবাক হয়ে বলল,
“আম্মু ও ওর বড়ো বোনকে ক্যাঙ্গারু বলছে।”
“চিতাবাঘ বললে তো খুশি হও। ক্যাঙ্গারু বললে রাগো কেন?”
“চিতাবাঘের মতো দৌড়াতে পারি তো খুশি হবো না কেন?”
“ক্যাঙ্গারুর মতো যে লাফিয়ে লাফিয়ে দৌড়াও সেটা বললে না যে?”
ইরিনা রাগে কটমট করছে। ইর্তেজার সাথে সে কথায় পারবে না বুঝতে পেরে চলে গেল। মা খাট ছেড়ে দাঁড়িয়ে ইর্তেজার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ইর্তেজা দাঁত বের করে হাসছে। খাট থেকে নেমে মায়ের সামনে এসে কান ধরলো। মা ইর্তেজার গালে আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল,
“কতবার বলেছি বড়ো বোনের সাথে দুষ্টুমি করতে না?”
“আপুকে রাগাতে আমার ভালো লাগে।”
“যা আপুকে সরি বল গিয়ে। আমি মরে গেলে ও-ই তোর খেয়াল রাখবে।”
“তুমি কেন এসব বলো সবসময়? যাও তোমার সাথে রাগ করেছি।”
বলেই ইর্তেজা মায়ের গালে চুমু দিয়ে চলে গেল। মা হাসছে দাঁড়িয়ে।
———–
মাহা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছে কোন কালারের লিপস্টিক পড়া যায়। আজ তো তাকে সবচেয়ে সুন্দর দেখানো দরকার। সে পাত্রের একমাত্র ভাতিজী। দরজায় টোকা পরলো। মাহা ভেতরে আসার পারমিশন দিলো। লাল রং এর লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে সুন্দর করে লাগাতে লাগলো। দরজা ঠেলে আসলো মাহার মা। মাহা মা’কে দেখে কিছুটা বিরক্ত হলো। লিপস্টিক ড্রেসিং টেবিলের উপর শব্দ করে রেখে খাটে বসে জুতা পড়তে লাগলো। মা খাটের উপর একটা শপিং ব্যাগ রেখে বলল,
“মাহা, তোর জন্য মেকআপ নিয়ে এসেছি। দেখ তো আর কিছু লাগবে কি-না তোর।”
মাহা জুতা পড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কেন এসেছেন? জানেন না আজ আমাদের জন্য বিশেষ দিন। কু’নজর দিতে এসেছেন?”
মায়ের মন খারাপ হলো মাহার কথা শুনে। মাহা আবার বলল,
“চলে যান প্লিজ। আপনি জানেন আমার আপনাকে সহ্য হয় না। চলে গিয়েছিলেন না? তবুও বার বার কেন আসেন?”
“আমি ছাড়া কে আছে তোর?”
“আমার দাদা, আমার চাচু, আমার ফুপু আর এখন চাচিও আসবে। আমি আমার পরিবার নিয়ে সুখে আছি। আপনি আপনার পরিবারের কাছে ফিরে যান।”
মা তালিচ্ছ্যের হাসি দিয়ে বললেন,
“তোর পরিবার? ভুলিস না এসব কিছু তোর বাবার সম্পত্তি ছিল। উনি মৃত্যুর আগে তোর নামে করে দিয়েছে সব। সবাই তোকে হাত করে রেখেছে সম্পত্তির জন্য। কবে বুঝবি তুই?”
“শুনুন, তাদের সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা শুনতে চাই না আমি। চলে যান এখনই।”
“যাচ্ছি, আমি এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি হয়েছি। তোকেও খুব তাড়াতাড়ি মুক্তি করবো।”
মাহা হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মা মাহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন। মাহা চোখ ঘুরিয়ে শপিং ব্যাগের দিকে তাকাল। রাগও হচ্ছে আবার কলিজা ছিঁড়ে কান্নাও আসছে। শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে সজোরে মাটিতে ছুঁড়ে মারলো।
.
.
স্টুডেন্ট পড়াতে বেরিয়েছে ইর্তেজা। প্রতিদিনের মতো আজও কাঠফাটা রোদ উঠেছে। প্রত্যেক স্টুডেন্টদের বাসা কাছাকাছি তাই রিকশার দরকার হয় না। ৫ থেকে ৭ মিনিটের রাস্তা। তবুও এই রোদে হাঁটার কারণে শার্ট ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে যায়। স্টুডেন্টের বাসায় পৌঁছে দেখে আজ বাসায় আয়োজন হচ্ছে। তার ৬ বছরের ছাত্র নিলয় তাকে বেশ পছন্দ করে। কারণ ইর্তেজা তার জন্য চকোলেট নিয়ে আসে প্রতিদিন। চকোলেটের লোভে সে লক্ষী বাচ্চাদের মতো পড়াশোনা করে। নিলয় ইর্তেজার হাত ধরে টেনে তার ঘরে নিয়ে গেল। ইর্তেজা খাটে বসে পকেট থেকে চকোলেট বের করে নিলয়কে দিলো। নিলয় তার আঁকাবাকা দাঁত বের করে হেসে ইর্তেজার কোলে বসে বলল,
“জানো ভাইয়া আন্টি এসেছে। আর আমার জন্য চকোলেট আনে নি। তাই আমার মন খারাপ।”
“এইযে আমি এনেছি তো। তাই এখন মন খারাপ না করে তোমার স্কুল ব্যাগ নিয়ে আসো আমরা পড়াশোনা করি।”
“ওকে”
নিলয় ইর্তেজার কোল থেকে নেমে ব্যাগ নিতে গেল। তখনই একজন মাঝবয়েসী মেয়ে ভেতরে আসলো। ইর্তেজা তাকে চিনে। নিলয়ের আন্টি হয় সে। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে সালাম দিলো। উনি সালামের জবাব নিয়ে বললেন,
“তুমি বেশ ভালো পড়াও। নিলয় খুব তাড়াতাড়ি পড়া শিখে যাচ্ছে মাশা আল্লাহ।”
“ও পড়তে খুব ভালোবাসে। আর ইন শাহ আল্লাহ পরীক্ষা ওর খুব ভালো হবে।”
“ইন শাহ আল্লাহ, বসো তুমি আমি তোমার জন্য ঠান্ডা শরবত নিয়ে আসি। ঘেমে গিয়েছো খুব।”
“হ্যাঁ আজও খুব গরম পড়েছে।”
তখনই নিলয় আসলো ব্যাগ নিয়ে। তার আন্টি চলে গেল ইর্তেজার জন্য শরবত নিয়ে আসতে। ইর্তেজা নিলয়কে পড়ানোর মাঝে নিলয়ের আন্টি আসলো। উনার হাতে ট্রে। ইর্তেজা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এগুলো কি?”
“তোমার জন্য নাশতা। আপু বলেছে তুমি কিছুই খেতে চাও না। কষ্ট করে নিলয়কে পড়াও। একটু খাতিরদারি তো করা-ই যায়।”
ইর্তেজা হাসলো। এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ খুব ভালো। ইর্তেজার খুব আপন মনে হয় সবাইকে। নিলয়ের আন্টি ছোটো টি টেবিল টেনে খাটের পাশে রেখে ট্রে সেটার উপর রেখে বলল,
“ইর্তেজা দোয়া করো আমার জন্য। আজ যেন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।”
“আজ আপনাকে দেখতে আসবে? তাই তো বলি এত আয়োজন হচ্ছে কেন আজ।”
“হ্যাঁ, পাত্র দুলাভাইয়ের পরিচিত। ছবি দেখে আমার পছন্দ হয়েছে। এখন সব আল্লাহ তা’য়ালার হাতে।”
“ইন শাহ আল্লাহ, আমি দাওয়াত পাবো তো?”
“অবশ্যই, আমি নিজে গিয়ে তোমার বাসায় দাওয়াত দিয়ে আসবো।”
ইর্তেজা মুচকি হাসলো। তখনই নিলয়ের মা দ্রুত এসে বললেন,
“রোকসানা তুই এখনো তৈরী হসনি? ওরা এসে পড়েছে তো।”
“এইরে, আমি তো এখনো চুল স্ট্রেইট করি নি।”
“তাড়াতাড়ি যা”
নিলয়ের মা ও আন্টি দুজনই দ্রুত চলে গেল। ইর্তেজা মাথা নিচু করে মুচকি হাসছে। একদিন তার বাসায়ও এমন আয়োজন হবে। সে ও তার মা ঠিক এমনই ব্যস্ত হবে। তার বোন সেদিন খুব সুন্দর করে সাজবে। ইরিনাও চলে যাবে বিয়ে করে। তখন তার মা ও সে একা থাকবে। ইর্তেজার মন খারাপ হয়ে গেল। নিলয়ের ডাকে ইর্তেজার হুঁশ ফিরলো। সে নিলয়কে পড়ানোয় মনোযোগ দিলো।
———-
নিলয়কে পড়ানো শেষ। বাহিরে মেহমান আছে ইর্তেজা এখন বের হবে কি-না বসে ভাবছে। নিলয় ছুটি পেতেই দৌড়ে বাহিরে গেল। ইর্তেজা বসে আছে। বোর লাগছে তার। মোবাইল বের করে গেমস খেলতে লাগলো। তখনই নিলয়ের মা আসলো। ইর্তেজা উনাকে দেখে মোবাইল রেখে বলল,
“আন্টি মেহমান এখনো আছে।”
“হ্যাঁ, তোমার কি লজ্জা লাগছে বাহিরে যেতে?”
“এমনই কিছু”
নিলয়ের মা হাসলেন। তখনই নিলয় দৌড়ে আসলো। এসেই সে ইর্তেজার কোলে বসে মুখ লুকালো। তার মা ও ইর্তেজা দুজনই অবাক হলো। মা বলল,
“কি হলো তোমার? ব্যাথা পেয়েছো কোথাও?”
নিলয় মায়ের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
“আম্মু ওখানে পরী এসেছে।”
“পরী?”
“হ্যাঁ, তুমি বলেছো না পরীরা খুব সুন্দর হয়? ওখানে পরী দেখেছি আমি।”
“কি বলছে ছেলেটা। দাঁড়াও আমি আসছি।”
মা দ্রুত ঘর থেকে বের হলেন। দরজার সামনে যেতেই হেসে বললেন,
“মাহা তুমি? আচ্ছা ও তোমাকে দেখে পরী বলছে তাহলে।”
মাহা, নামটা শুনে ইর্তেজা দরজার দিকে তাকাল। দরজার ওখান থেকে হাসির শব্দ আসলো। কন্ঠটা তার চেনা। হাসির শব্দ তার বুকে কম্পন সৃষ্টি করে ফেলেছে। দরজার ওপাশ থেকে কেও একজন উঁকি দিলো। ইর্তেজা থমকে গেল। তার মনে হচ্ছে নিলয় সত্যি বলছে। এইটা তো সত্যি-ই পরী। মাহা ইর্তেজাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে আসলো কিছুটা। নিলয় তাকে দেখে ইর্তেজার সাথে আরে ঘেষে বসলো। ইর্তেজা তাকিয়ে আছে মাহার দিকে। খয়েরী রঙের ফ্লোর টাচ, ফুল হাতা ওয়ালা জামা। ওড়না বাম পাশে ও ডান পাশ চুল দিয়ে ঢাকা। হালকা মেকআপেও মেয়েটাকে দারুন লাগছে। মাহা পেছনে ফিরলো। নিলয়ের মা নেই। লম্বা নিশ্বাস ফেলে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই এখানে কি করছিস? আর পাত্রী তোর কি হয়?”
ইর্তেজার ধ্যান ভাঙলো। আমতা আমতা করে বলল,
“আন্টি, মানে নিলয়ের আন্টি।”
“সেটা জানি, তোর কি হয় সেটা বল।”
নিলয় ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“পরী রাগ করে কেন ভাইয়া? তুই করে বলছে তোমাকে।”
ইর্তেজা ঢোক গিলল নিলয়ের কথা শুনে। মাহার দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার পরী আমাকে চিনে তাই। আমরা এইভাবেই কথা বলি।”
মাহা অবাক হয়ে বলল,
“ভাইয়া? কিন্তু আমি তো জানতাম নিলয়ের কোনো ভাই বোন নেই।”
“আমি নিলয়ের স্যার। তাকে ৩ মাস ধরে পড়া-ই। তাই সে আমাকে ভাইয়া ডাকে। আর প্লিজ ও বাচ্চা। ওর সামনে তো সুন্দর মতো কথা বলো।”
“আচ্ছা সরি, কো-ইন্সিডেন্স। আমাদের আবার দেখা হলো।”
ইর্তেজা বাঁকা হাসলো। মাহা নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি আমার সাথে কথা না বলে চলে আসলেন কেন?”
নিলয় লজ্জা পেয়ে বলল,
“আমি ভাইয়ার কাছে পড়ছি তো তাই চলে এসেছি।”
মাহা হেসে এগিয়ে আসলো। নিলয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“সো কিউট”
ইর্তেজার মাহার দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল,
“হুম আসলেও খুব কিউট।”
মাহা ইর্তেজার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
“আমি নিলয়ের কথা বলছি।”
“আমিও নিলয়ের কথা-ই বলছি।”
“তো এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস? জীবনে মেয়ে দেখিস নি?”
“দেখেছি, আর ভাবছি আজ ভার্সিটিতে যে মেয়েটাকে দেখলাম সেই মেয়ে আর তুমি এক মানুষ কি-না।”
“কি আবল তাবল ভাবনা।”
ইর্তেজা হেসে বলল,
“হুম ভাবছি ভার্সিটিতে জিন্স আর ফতুয়া পড়ে, চুল উঁচু করে বেঁধে ছেলেদের মতো হাঁটাচলা করে পুরো ভার্সিটিকে নাচানো মেয়েটা আসল মাহা না-কি এখন থ্রি পিস পড়ে, চুল খোলা রেখে পুরো মেয়েলি স্বভাবে কথা বলা মেয়েটা আসল মাহা।”
মাহা তাকিয়ে রইল ইর্তেজার দিকে। তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে ধীরে ধীরে। ইর্তেজাও চোখ সরালো না। হঠাৎ কারো হেটে আসার শব্দ আসলো। মাহা ও ইর্তেজার হুঁশ ফিরলো। ইর্তেজা নিলয়ের সাথে কথা বলতে লাগলো। মাহা পেছনে ফিরে দরজার দিকে তাকাল। তার ফুপু এসেছে। ফুপু ঘরের ভেতর একটা ছেলেকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুমি এখানে কি করছো?”
“নিলয়ের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
বলেই মাহা মাথা নিচু করে ফেলল।
“চলো আমরা চলে যাব এখন।”
মাহা মাথা নাড়িয়ে ধীরপায়ে হেটে চলে গেল। ইর্তেজা থমকে গেল। তার খুব অবাক লাগছে। মাহা এত শান্ত গলায় কথা বলল সেই ভদ্রমহিলার সাথে। এই মেয়ে তো এত শান্ত থাকার মানুষ না। হঠাৎ ইর্তেজার ইচ্ছে হলো মাহার সম্পর্কে জানার। মাহাকে ভালো মতো চিনতে ইচ্ছে করছে তার। নিলয়কে খাটে বসিয়ে ইর্তেজা হেটে গেল। দরজার আড়াল থেকে উঁকি মারলো। মেহমান চলে যাচ্ছে। একপাশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে মাহা। রোকসানা তাকে কিছু বলায় সে মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। ইর্তেজা মুগ্ধ হলো। মাহার এই রূপ তার মনকে কাবু করে ফেলেছে।
মাহার ফুপু তাকে চোখের ইশারা করায় মাহা মাথা নিচু করে ধীরপায়ে ফুপুর পেছনে হাঁটা ধরলো। তার হঠাৎ ইচ্ছে করলো একবার সেই ঘরে আবার যাওয়ার। কিন্তু কেন সে জানে না। আড়চোখে সেই ঘরের দরজার দিকে তাকাল। ইর্তেজার দেখা পেলো সে। ইর্তেজা মাহার চাহনি দেখে কিছুটা এগিয়ে এসে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে হাসলো। মাহা সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। হঠাৎ কেন তার এমন অনুভূতি হচ্ছে বুঝতে পারছে না।
চলবে……..
[একটা কথা জিজ্ঞেস করি। প্লিজ সবাই সত্যি সত্যি উত্তর দিবেন। আপনাদের মতামত আমার জানা জরুরি। ইর্তেজা ও মাহার অংশ আপনাদের কেমন লাগছে? যদি আপনাদের ভালো না লেগে থাকে প্লিজ বলবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েন]