#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ২৫

0
484

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ২৫
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

অনিমার ফেস রিয়াকশন দেখে আদ্রিয়ানের খুব হাসি পাচ্ছে। মেয়েটা ওর মজাও বোঝেনা। হাসিটা চেপে রেখে অনিমাকে বলল,

— ” কী হলো বলো? ভালো হবেনা?”

অনিমা বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার। লিভ ইন রিলেশনসিপ এর মানে বোঝেন?”

অাদ্রিয়ান অনিমার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল,

— ” না বোঝার কী আছে? দুজন পরস্পর বিপরীত লিঙ্গের মানুষ যদি বিয়ে না করেই স্বামী স্ত্রীর মতো লাইফ লিড করে তাহলেই তাকে লিভ ইন রিলেশনশিপ বলে, রাইট? তুমি যখন বিয়ে করবেই না তখন এটাই বেটার অপশন না?”

অনিমা বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

— ” লোকে ঠিকি বলে সেলিব্রেটিদের ক্যারেক্টার এরোকমি হয়। সবগুলো অসভ্য।”

আদ্রিয়ান অনিমার একদম কাছে গিয়ে বলল,

— ” আমি কতোটা অসভ্য সেটা সময় এলে বুঝিয়ে দেবো। আপাদত কথাটা তুলে রাখলাম।”

অনিমার পেছানোর আর ন‍ূন্যতম জায়গাও নেই। তাই একটু ইতস্তত করে বলল

— ” একটু দূরে সরে বসুন প্লিজ।”

আদ্রিয়ান বুঝতে পেরেও অনিমাকে জ্বালাতে বলল,

— ” কেনো?”

— ” আমার আনইজি লাগছে।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সরে এলো অনিমার কাছ থেকে, তারপর ফোন স্ক্রল করতে লাগল। অনিমা মুখের ওপরে পরা চুলগুলো কানে গুজে একটু সংকোচ নিয়ে বলল

— ” ইয়ে.. এভাবে হাফ এডাম হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কেনো?”

আদ্রিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

— ” আমার ইচ্ছে।”

অনিমা বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। কিছু একটা মনে হতেই ও চমকে গিয়ে বলল

— “আচ্ছা এটা আপনার এপার্টমেন্ট?”

আদ্রিয়ান ফোন টিপতে টিপতেই বলল

— ” নাহ। এটার মালিক আমাকে ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে। ”

অনিমা একটা মুখ ভেংচি দিলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল

— ” আমার স্কুটি কোথায়?”

— ” বিক্রি করে দিয়েছি। আসলে পকেটে টাকা নেই। ওটা বেচে যা পেয়েছি সেটা দিয়ে মাস খানেক চলে যাবে।”

অনিমা এবার খুব বিরক্ত হয়ে বলল

— ” আপনি কী সোজাভাবে কথা বলতে পারেন না?”

আদ্রিয়ান এবার মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বলল

— ” আমার কী দোষ? তুমি প্রশ্নগুলোই এমন করো। এবার এসব আউলফাউল প্রশ্ন করা বন্ধ করে এক্সাক্টলি কী জানতে চাইছো বলো?”

অনিমা এবার মাথা নিচু করে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,

— ” আচ্ছা কাল রাতে আপনি কোথায় ঘুমিয়েছেন?”

আদ্রিয়ান এবার ফোনটা রেখে হেসে বলল,

— ” ওহ তাহলে এটাই ম্যাডামের মূল প্রশ্ন?

অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আমি আমার বেড ছাড়া কোথায় ঘুমোবো?”

অনিমা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,

— ” মানে আপনি আমার পাশে শুয়েছেন?”

আদ্রিয়ান ভ্রু কিঞ্চিত উচু করে মুচকি হেসে অনিমার দিকে তাকালো, অর্থাৎ হ্যাঁ তো? অনিমা চুপ করে আছে আসলে কী বলবে বুঝতে পারছেনা। অনিমার চেহারা দেখে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল,

— ” আরে আমি সোফাতেই ঘুমিয়েছি, সো চিল।”

এটা শুনে অনিমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে আবার ফোনে মনোযোগ দিল। দুজনেই বেশ অনেকক্ষণ চুপ ছিলো। হঠাৎ করেই ওর রিকের কথা মনে পরলো। রিক তো বলেছিলো আজ ওকে নিয়ে যেতে আসবে। এরপর যদি এসে ওকে না পায়, আর যদি এটা জানতে পারে যে ও আদ্রিয়ানের কাছে আছে তাহলে? তাহলে তো ওরা আদ্রিয়ানকে মেরে ফেলবে। আর এসব জেনেও অনিমা এভাবে বসে আদ্রিয়ানের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে? আদ্রিয়ান জানেনা অনিমা আদ্রিয়ানের জন্যে কতো বড় বিপদ, কিন্তু অনিমা তো জানে। তাহলে ও কীকরে এই ভূলটা করছে? না আদ্রিয়ানকে বাঁচাতে ও সেচ্ছায় ঐ নরকে ফিরে যেতেও রাজী আছে। ওর যতোই কষ্ট হোক আদ্রিয়ান তো ভালো থাকবে।অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল

— ” আমি আমার ফ্লাটে যাবো। ”

আদ্রিয়ান ফোনে চোখ রেখেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল

— ” যতোদিন না তুমি আমাকে সবটা ক্লিয়ার করে বলছো আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিচ্ছিনা। সবটা জেনে তারপর ঠিক করব যে যেতে দেবো নাকি নিজের কাছে আটকে রাখব।”

অনিমা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল। আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যেই এখন ওকে আদ্রিয়ানের সাথে রুড হতেই হবে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে রেগে তাকিয়ে চেচিয়ে বলল

— ” কী পেয়েছেন কী আপনি হ্যাঁ? যা ইচ্ছে হবে তাই করবেন? কোন অধিকারে এতোটা জোর খাটাচ্ছেন আমার ওপর? কে হন আপনি আমার যে আপনাকে সবটা বলতে হবে? আমার যা ইচ্ছে হবে আমি করব, যেখানে ইচ্ছে হবে সেখানে যাবো। এসব নিয়ে কথা বলার আ..”

এটুকু বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আতকে উঠল অনিমা। আদ্রিয়ানের চোখ লালচে হয়ে গেছে, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে, হাতের রগগুলো ফুলে উঠেছে। অনিমা বেশ ভয় পেয়ে গেলেও সেই ভয়কে পাত্তা না দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল

— ” সো আমার বিষয়ে নাক গলানোটা বন্ধ করুন। আর নেক্সট টাইম আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করবেননা, আপনার কোনো অধিকার নেই এসব করার।”

এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান একটানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এরপর দাঁতে দাঁতে চেপে বলল

— ” তাহলে কার অধিকার আছে ওই রিক চৌধুরীর?”

অনিমা চমকে গেলো আদ্রিয়ানের কথায়। কালকে তো শুধু অাদ্রিয়ান রিকের গলার আওয়াজ শুনেছে, অদ্ভূতভাবে কোনো প্রশ্নও করেনি ওকে। কিন্তু নাম কীকরে জানলো? অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ান বলল

— ” কী ভাবছো? আমি কীকরে জানলাম তাইতো?

অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অাদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান অনিমাকে আরেকটু নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল

— “আমার নজর থেকে কিচ্ছু এড়ায় না। সেদিন রাতে ও এসছিলো না তোমার ফ্লাটে?”

অনিমা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বলল

— ” কী সম্পর্ক ওর সাথে তোমার? ওসব কথা কেনো বলছিলো তোমাকে?”

অনিমা কিছু না বলে ছলছলে চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান ধমকি দিয়ে বলল

— ” বলো? কেনো আসে ও তোমার কাছে?”

অনিমা নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের চোখে চোখ রেখে চড়া গলায় বলল

— ” বললাম না এসব আমার পার্সোনাল ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাদ্ধ নই আমি। আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্কই সম্ভব নয়। আমাদের দুজনের লাইফস্টাইল, স্টেটাস সব আলাদা। সো স্টে এওয়ে ফ্রম মি এন্ড লেট মি গো প্লিজ।”

অনিমার কথায় আদ্রিয়ানের রাগ আরো বেড়ে গেলো অনিমার দুই বাহু চেপে ধরে বলল

— ” তাহলে প্রথমেই কেনো দূরে সরিয়ে দেওনি? কেনো এসছিলে এতো কাছে? কেনো বন্ধুত্ব করছিলে আমার সাথে? তখন এসব মনে ছিলোনা?”

অনিমা নিজের চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল

— ” না ছিলোনা, কিছু সময়ের জন্যে আবেগে ভেসে গেছিলাম, বাস্তবতা বুঝতে পারিনি।”

আদ্রিয়ান রাগে আগুন হয়ে বলল

— ” ও তা এখন তোমাকে বাস্তবতা কে বোঝালো? রিক চ‍‍োধুরী?”

অনিমা আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল

— ” হ্যাঁ ওনিই বুঝিয়েছেন। আমার আসল জায়গা কী সেটা উনিই দেখিয়ে দিয়েছেন আমাকে।”

এটুকু বলে অনিমা চলে যেতে নিলেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরে একটানে বেডে ফেলে দিলো। অনিমা আবাক হয়ে তাকাতেই আদ্রিয়ান অনিমার কাছে এসে ওর গালে হাত রেখে বলল

— ” এবার আমি তোমাকে তোমার আসল জায়গা দেখাবো।”

এটুকু বলে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে দড়ি বের করে নিয়ে এলো আদ্রিয়ান। অনিমা আদ্রিয়ানের চোখ মুখ দেখেই ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো। অাদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেতেই অনিমা বলল

— ” আদ্রিয়ান আপ..”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান অনিমার হাত পা বেধে দিলো। অনিমা রেগে গিয়ে বলল

— ” কেনো করছেন এরকম? কী চান আপনি?”

আদ্রিয়ান কঠিন গলায় বলল

— ” তোমাকে উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি। তোমার যেটা ইচ্ছে হয়েছে করেছো, এবার আমার যেটা ইচ্ছে হবে সেটাই করব।”

অনিমা এবার আর কান্নাটা আটকে রাখতে পারলোনা। অনিমা কেঁদে দিয়ে বলল

— ” প্লিজ আমার কথাটা শুনুন।”

আদ্রিয়ান অনিমার আর কোনো কথা না শুনে রুমাল দিয়ে ওর মুখও বেধে দিলো। অনিমা করুণ চোখে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানের ও খারাপ লাগছে অনিমাকে এভাবে দেখে কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুম লক করে হনহনিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। কী ভাবছে কী মেয়েটা? ও মুখে যা বলে সেটাই মেনে নেবে? আদ্রিয়ান তো অনিমার চোখ দেখেই ওর মনের কথা পরতে পারে। ও জানে অনিমা যা বলছে সব বাধ্য হয়ে বলছে। সবার ভালোর জন্যে আনিমা নিজে ঐ বিপদে নিজেকে জরাতে চাইলেও, আদ্রিয়ান অনিমাকে ওই বিপদে ছেড়ে দিতে পারবেনা। এতে যদি ওকে নিজের কাছে অাটকে রাখতে হয় তো ও সেটাই করবে। আর অনিমা ওভাবেই খাটে বসে চোখেল জল ফেলে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান তো কিছুতেই বুঝতে চাইছেনা, কী করে আদ্রিয়ানকে বাঁচাবে ও? কীকরে?

________________

রিকের নিজের রুমে এসে সবকিছু ভাঙচূড় করে চলেছে। রাগে সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে ওর। কালরাত থেকেই অনিমার ফোন বন্ধ পেয়ে এমনিতেই মাথা গরম ছিলো। তাই সকালেই চলে গেছিলো অনিমার ফ্লাটে ওখানে গিয়ে অনিমার ফ্লাটে তালা দেখে ওর রাগ আরো বেড়ে গেলো। শুক্রবার নিশ্চয়ই অফিসে যায় নি তাহলে? এরপর সারাদিন অনিমাকে সারা শহরে লোক লাগিয়ে খুজেছে কিন্তু কোনো খোজ পায় নি। মোবাইল ট্রেস করেও কোনো হদিস পায় নি। একটা লোক এসে ভয়ে ভয়ে বলল

— ” ভাই আসবো?”

রিক রাগে গজগজ করে বলল

— ” কাজের কথা বল।”

— ” ভাই এডিকে আজ সারাদিন কোথাও দেখা যায় নি।”

রিক হাতের ইশারায় যেতে বললেই লোকটা চলে গেলো। রিক রাগে আগুন হয়ে একটা শো পিছ আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল। এতোক্ষণ সন্দেহ করলেও রিক এবার নিশ্চিত যে অনিমা আদ্রিয়ানের কাছেই আছে। রিক জোরে গর্জন করে উঠল, তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে বলল

— ” কাজটা তুমি ঠিক করোনি বেইবি। আমার সাথে বিট্রে করার পরিণাম কতোটা ভয়ংকর সেটা এবার বুঝবে। আর আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের তুমি নিজেও জানোনা তুমি কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো। এবার মরার জন্যে তৈরী হও।”

এসব বলে আবার ভাঙচুর শুরু করলো রিক। কবির শেখ হন্তদন্ত হয়ে রিকের রুমে এসে রিক কে থামিয়ে বলল

— ” বাবাই কী করছো কী? মাথা ঠান্ডা করো।”

রিক কবির শেখকে ঝাড়া দিতে সরিয়ে বলল

— ” চুপ করো মামা। তোমার জন্যেই সব হলো সব তোমার জন্যে হয়েছে। যদি সেদিনি ঐ আদ্রিয়ানকে মেরে অনিমাকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম তাহলে এসব হতোনা। আজ ঐ মেয়েটা আমার কাছেই থাকতো।”

কবির শেখ বিচলিত হয়ে বললেন

— ” বাবাই আমার কথা..”

— ” নাহ আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। ওদেরকেতো আমি খুজে বের করবোই। খুব তাড়াতাড়ি তারপর আগে ঐ মেয়ের সামনেই আদ্রিয়ানকে খুন করবো তারপর ঐ মেয়েকে এমন শিক্ষা দেবো ও ভাবতেও পারছেনা।”

এটুকো বলে চলে গেলো রিক। কবির শেখ বাকা হেসে বলল

— ” বাহ বাহ এবার খেলা জমবে। কথায় বলেনা এক বনে দুই সিংহ থাকতে পারেনা। আর যদি থাকে তো শিকারীকে কষ্ট করে দুটো সিংহ মারতে হয়না। কারণ একটা সিংহকে মারার কাজ ওপর সিংহ করে দেয়। এবার এই দুই সিংহের মধ্যে কোন সিংহ মরবে সেটাতো আমার জানা নেই তবে যেই মরুক লাভ তো আমারি। তাই আমি এখন এই খেলায় হাত লাগাবো না, যেমন চলছে চলতে থাক। সময় এলে দেখা যাবে।”

__________________

সন্ধ্যায় আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখলো অনিমা উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। বারোটার দিকে এসে খাইয়ে দিয়ে গেছিলো আর কিছুই খায় নি মেয়েটা এখোনো, অাদ্রিয়ান সার্ভেন্ট কে খাবার আনতে বলে অনিমার কাছে এসে বসল। উপুর হয়ে শুয়ে থাকায় চুলগুলো মুখের ওপর পরে আছে আদ্রিয়ান আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ানের অনিমাকে এভাবে দেখতে ভালো লাগছে না, অনিমাকে কষ্ট দিতে চাইছেনা ও, কিন্তু ও নিরুপায়। খাবার আসতেই অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো গলায় ডাকল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের ডাকে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। হাত পা মুখ সব বাধা তাই উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। আদ্রিয়ান নিজেই বসিয়ে দিলো ওকে। অনিমা চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, আদ্রিয়ান অনিমার মুখ থেকে কাপড়টা নিচে নামিয়ে দিলো। তারপর খাবারটা ওর দিকে বারিয়ে দিলো। অনিমা কোনো টু শব্দ না করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। অনিমার এই নিরবতাও আদ্রিয়ানের বুকে ছুড়ি আঘাত করছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট রেখে এসে দেখে অনিমা উপর হয়ে শুয়ে আবার কাদছে। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল

— ” এভাবে কেঁদোনা প্লিজ। প্রবলেম টা কোথায় বলবে তো?”

অনিমা কষ্ট করে উঠে বসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” আপনি কেনো বুঝছেন না আমায় যেতে হবে?”

আদ্রিয়ান অনিমার কাছে যেয়ে বলল

— ” কেনো? আমার কাছে থাকতে সমস্যা কোথায় তোমার?”

অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলো। কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে ও? আদ্রিয়ান তো কিছু বুঝতেই চাইছে না। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে বলল

— ” কীসের শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? কেনো এমন করছো? কেনো? কেনো পোড়াচ্ছো এভাবে? আমার দোষটা কোথায়? ”

অনিমা এবার শব্দ কর কেঁদে দিলো, ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে অাদ্রিয়ানের বুক ছ্যাত করে উঠল। ও কিছু বলবে তার আগেই অনিমা বলল

— ” প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন, প্লিজ।”

— ” বুঝতেই তো চাইছি বলো কী হয়েছে? ”

— ” আমি ঠিক নই আপনার জন্যে। ইনফ্যাক্ট আমি কারো জন্যেই ঠিক নই। কারণ আমি অশুভ, অভিশাপ আমি একটা। আমি যার জীবণে যাবো তার জীবণটাই শেষ হয়ে যাবে, অভিশপ্ত হয়ে যাবে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। অনেক কিছু হারিয়েছি আমি আর হারানোর ক্ষমতা নেই আমার মধ্যে, প্লিজ।”

কথাটা শেষ করে আবারো কাঁদতে লাগল ও। আদ্রিয়ান আলতো হাতে অনিমা চোখ মুছে দিয়ে বলল

— ” তুমি যদি অশুভ, অভিশাপ হও তো শুভ আর আশির্বাদ বলে কোনো শব্দই নেই পৃথিবীতে। আর যদি হওও তাহলে তোমার কারণে সব অশুভ জিনিস ও আমার কাছে শুভ। তোমার কারণে পাওয়া সব অভিশাপকেও আশির্বাদে পরিণত করে নেবো আমি। কিন্তু তুমি না থাকলে তো সবকিছুই আমার কাছে অশুভ, সব দোয়াও অভিশাপ। তাই যেকোনো পরিস্হিতিতেই আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ ইয়ার।”

— “কেনো? কেনো চান আপনি আমাকে? কীসের এতো প্রয়োজন আমাকে?”

আদ্রিয়ান অনিমাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিলো, ওদের মধ্যে কেবল এক ইঞ্চির দূরত্ব আছে। আদ্রিয়ান একটা শ্বাস নিয়ে বলল

— ” বিকজ আই লাভ ইউ। হ্যাঁ ভালোবাসি আমি তোমাকে। নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি। আমার নিশ্বাস তুমি, আমার অস্তিত্ব, আমার হৃদস্পন্দন সব তুমিই। আর সেই ভালোবাসার জোরেই বলছি তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আর সেটা তুমি চাইলেও আর না চাইলেও। আর আমিই তোমার ভাগ্য, তোমার ইচ্ছে না থাকলেও সেই ভাগ্যকে তোমায় মেনে নিতে হবে, তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

অনিমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। এটা প্রপোজ ছিলো? ওর তো ভিলনদের থ্রেট মনে হলো। ফিল্মে,সিরিয়ালে,রিয়েল লাইফে কতোজনকে লাভ কনফেশন করতে দেখেছে কিন্তু এভাবে হাত পা বেধে হুমকির স্টাইলে কাউকে লাভ কনফেশন করতে এই প্রথম দেখলো। ওর জীবণটাই শুধু অদ্ভুত না, ওর জীবণে যেসব মানুষ আসে তারাও অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত।
.
#চলবে…

#Extra_Part
.
অাদ্রিয়ানের ঐ ভালোবাসি শব্দটা শোনার সাথে সাথেই অনিমা হ্যাং হয়ে গেছে। যদি সবকিছু স্বাভাবিক হতো তাহলে হয়তো সবচেয়ে বেশি খুশি ও হতো। কিন্তু ওর কপালে ভালো কিছু থাকতেই পারেনা, ওর কপালটাই এরকম, ভালোবাসাটা ওর জন্যে লেখা নেই। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে আদ্রিয়ান অনিমার কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে বলল,

— ” তোমার উত্তর জানতে চাইনা আমি। শুধু আমার মনের কথাটা তোমাকে জানিয়ে দিলাম।’

অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, অনিমার উত্তর যে আদ্রিয়ান জানতে চায়না সেটাতো ওর প্রপোজের স্টাইল দেখেই বুঝে গেছে। নতুন করে বলার কী আছে। আদ্রিয়ান অনিমার কপালের কপাল ঠেকিয়ে বলল,

— ” ভালোবাসি তোমাকে আর আমি জানি যে তুমিও বাসো। কিন্তু সেটা বুঝতে পারছোনা বা বুঝতে চাইছোনা। অথবা জেনে বুঝেও স্বীকার করছো না। কিন্তু আমার কাছে এটা মেটার করেনা যে তুমি আমাকে ভালোবাসো কী না। আমার কাছে এটাই গুরত্বপূর্ণ যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমাদের জন্যে আমার একা ভালোবাসাটাই যথেষ্ট।”

অনিমা একদৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে, আদ্রিয়ানের কথাগুলো ওকে ঘোরের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। আদ্রিয়ানও অনিমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই অনিমার হুস এলো। ও আদ্রিয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,

— ” আমি ভালোবাসি না আপনাকে। ছাড়ুন আমায় ।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে আরো কাছে টেনে নাকে নাক ঘষে দিয়ে বলল,

— ” যতো যাই বলো ভালোতো তুমি আমাকেই বাসবে জানপাখি।”

‘জানপাখি’ শব্দটা শুনে অনিমার বুকের ভেতরে কেমন ধক উঠল। কেনো জানিনা এক অদ্ভুত ভালোলাগা ছুয়ে গেলো ওর মনকে। চোখ নিয়ে ওর অজান্তেই পানি গড়িয়ে পরল, কিন্তু এই ভালোলাগা ওর জন্যে না। অনিমা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,

— ” আমাকে যেতে হবে আমার কাল আমার অফিস আছে।”

আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে একটূ দূরে সরে বসে বলল,

— ” যেতে হবেনা কয়েকদিনের জন্যে তোমার ছুটি।”

আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা চরম অবাক হয়ে বলল,

— ” মানে কী? অফিসটা কী আমার জামাইর যে? আমি চাইলেই আমায় ছুটি দিয়ে দেবে?”

আদ্রিয়ান অনিমার নাক টিপে দিয়ে বলল,

— ” বড্ড বেশি কথা বলো তুমি, এখন চুপচাপ শুয়ে পরো। এসব তোমাকে জানতে হবেনা।”

— ” দেখুন আপনি কিন্তু…”

আদ্রিয়ান অনিমার ঠোটে আঙুল দিয়ে বলল,

— ” হুসস আর একটা কথাও না, আমি বাধন খুলে দিচ্ছি চুপচাপ শুয়ে পরো, একটুও ছটফট করবে না। তাহলে কিন্তু আবার বেধে দেবো।”

এটুকু বলে আদ্রিয়ান অনিমার হাত পা খুলে দিয়ে বলল,

— “শুয়ে পরো। একটাও কথা না ওকে?”

অনিমা কিছু না বলে শুয়ে পরলো কারণ ও জানে এখন কিছু বললে বা করলে আদ্রিয়ান আবার ওর হাত পা মুখ বেধে রেখে দেবে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে মুচকি হাসতে হাসতে অনিমাকে দেখে যাচ্ছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উলটো ঘুরে শুয়ে পরলো। সেটা দেখে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে ফেলল। তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল,

— ” এক মিনিটের মধ্যে যদি এদিকে না ঘোরা হয়, তাহলে কিন্তু আমি বেডে চলে আসবো। আই থিংক কেউ সেটা পছন্দ করবে না।”

অনিমা চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। বুঝতে পারলো যে ওকেই বলছে, বেডে আসবে মানে কী? সত্যিই চলে আসবে নাকি। অনিমা এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান বলল

— ” আর থার্টি সেকেন্ড দেখবো আমি।”

অনিমা জানে এই ছেলের বিশ্বাস নেই সত্যিই চলে আসতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরলো কিন্তু চোখ বন্ধ করে রাখল যাতে ওকে দেখতে না হয়। আদ্রিয়ান হালকা হেসে আবারো ওর জানপাখিকে দেখায় মনোযোগ দিলো। অনিমা মাঝেমাঝে এক চোখ খুলে তাকায় আর আদ্রিয়ানকে দেখে সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে নেয় কারণ প্রতিবারই আদ্রিয়ানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে। এরক কয়েকবারই হলো অনিমার এসব বাচ্চা বাচ্চা কান্ডে হেসে দেয় আদ্রিয়ান। এভাবেই দুষ্টোমি করতে করতে আস্তে আস্তে দুজনেই ঘুমিয়ে পরে।

_______________

বেডের খাটে হেলান দিয়ে মনমরা হয়ে বসে আছে অরুমিতা। অনিমাকে কাল থেকে ফোনে পাচ্ছেনা ফ্লাটেও নেই কোথায় গেলো মেয়েটা? রিক নিয়ে যায় নি তো? এসব চিন্তায় তীব্র অরুমিতা দুজনেরই মাথা খারাপ হয়ে আছে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই অরুমিতা তাকিয়ে দেখে আশিসের ফোন, ওর মন ভালো নেই তাই রিসিভ করে বলল

— ” কী বলবেন বলুন?”

আশিস জানে অরুমিতার মন খারাপ তাই ওর মাইন্ড ফ্রেশ করতে মজা করে বলল

— ” আরে এটা কোনো কথা হলো? কোথায় আমি ভাবলাম কোথায় আজ সারারাত দুজন প্রেমালাপ করবো তুমি এভাবে বলছো? কতো আনরোমান্টিক তুমি।”

এতে অরুমিতার মুড ভালো হওয়ার পরিবর্তে আরো চটে গেলো। অরুমিতা রেগে বলল

— ” আপনি এসব ফাউল কথা বলতে আমাকে ফোন করেছেন?”

— ” আরে এগুলোই তো কাজের কথা। আমি কোথায় ভাবলাম…”

অরুমিতা এবার চরম রেগে গিয়ে আশিসকে থামিয়ে বলল

— ” সাট আপ। কী পেয়েছেন কী আপনি? যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করে চলেন। আপনার সবসময় মজার মুড থাকলেও অন্য কারো নাও থাকতে পারে এটা বোঝেন? তাই নূন্যতম সেলফ রেসপেক্ট থাকলে ভবিষ্যতে এসব মজা করতে আসবেন না আমার সাথে।”

অরুমিতাকে নিয়ে আহামরি সিরিয়াস না হলেও অরুমিতার এসব কথায় খানিকটা কষ্ট পেলো আশিস। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল

— ” আমার ফোনে তুমি ডিসটার্ব হও এটা জেনেও আমি তোমাকে কল করতাম কারণ আমার ভালো লাগে তোমার সাথে কথা বলতে। তোমাকে আগেও বলেছি ভালোবাসি আমি তোমায়, কিন্তু তুমিযে এতোটা বিরক্ত বোধ করবে সেটা বুঝতে পারিনি। সরি ফর দ্যাট। আর কখনো নিজে থেকে বিরক্ত করবোনা তোমাকে, গুড বাই।”

এটুকু বলেই ফোনটা রেখে দিলো আশিস। অরুমিতা থম মেরে বসে রইলো, শুধু শুধুই ছেলেটাকে এতো কথা শোনালো। আসলে এতোটাই ডিসটার্বট ছিলো যে হঠাৎই মাথা গরম হয়ে উঠল আর কীসব বলে দিলো। এখন নিজের কাজে নিজেরই আফসোস হচ্ছে ওর কিন্তু ইগোর জন্যে কল ব্যাক করতে পারছেনা। একরাশ মন খারাপ নিয়েই শুয়ে পরল অরুমিতা।
আর ওদিকে আশিস কিছুক্ষণ মন খারাপ করে বসে থেকে ওর কোনো এক গার্লফ্রেন্ড কে ফোন করে টাইমপাসে বিজি হয়ে গেলো। এখন এটাই মাইন্ড ফ্রেশ করার একমাত্র উপায়।

__________________

বাইরে তীব্র গতিতে বৃষ্টি হচ্ছে, বাজ ও পরছে মাঝে মাঝে। রিক আজকে আবারো ড্রিংক করে টলতে টলতে বাড়ি এসছে। সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাবে তার আগেই মিস্টার রঞ্জিত এসে বললেন,

— ” দাড়াও রিক।”

রিক পেছনে ঘুরে পিটপিট চোখে তাকিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল

— ” প্লিজ ড্যাড। রাত দুপুরে তোমার স্পিচ দিয়ো না, আ’ম নট ইন মুড।”

— ” হ্যা সেটাই তোমার তো শুধু মদ গেলার আর ঐ মেয়ের নাম জপারই মুড থাকে।”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল

— ” যা বলার ডিরেক্টলি বলো।”

মিস্টার রঞ্জিত সোফা থেকে উঠে এসে রিকের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বলল

— ” সামনে পার্টির ইলেকশন মাথায় আছে এটা?”

রিক চোখ ডলতে ডলতে ভাঙ্গা গলায় বলল

— ” সো? আমি কী করবো? ”

মিস্টার রঞ্জিত এবার রেগে গিয়ে বললেন

— ” কী বলতে চাইছো তুমি? তুমি একজন ক্যান্ডিডেট ভূলে যাচ্ছো সেটা?”

— ” নো ড্যাড, বাট পার্টি তো আমাদেরই সো চাপ নিয়োনা। তুমি সামলে নাও।”

— ” কিন্তু তোমাকে তো একটু হলেও প্রেজেন্ট থাকতে হবে নাহলে কীসের ভিত্তিতে জেতাবো তোমাকে?”

— ” দেখো ড্যাড আমি আগেও বলেছি আর এখোনো বলছি এসবে আমার ইন্টারেস্ট নেই তোমার জোরাজুরিতেই এসব ইনভল্ব হচ্ছি নাথিং ইলস। আমার এখন অনিকে খুজতে হবে সেটাই বেশি ইমপরটেন্ট, তারপর এসব ভাবা যাবে।”

এটুকু বলেই রিক রুমে চলে গেলো। মিস্টার রঞ্জিত রাগে ফেটে যাচ্ছেন। ওই একটা মেয়েই সব ভেস্তে দিচ্ছে। এখন তো গলার কাটার মতো আটকে আছে, না পারছে গিলতে আর না পারছে উগলাতে। ঐদিন যদি রিক ওখানে না চলে আসতো তাহলে এই ঝামেলায় পরতেন না উনি।

_________________

বাজ পরার আওয়াজে চিৎকার করে উঠে বসলো অনিমা। ভয়ে হাত পা কাপছে ওর দুই হাতে চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। অনিমার চিৎকারে আদ্রিয়ানের ঘুম ভেঙে গেলো, বাজ পরার আওয়াজেই ও বুঝতে পারলো কী হয়েছে। ‘সিট’ বলেই উঠে লাইট জ্বালিয়ে অনিমার কাছে গিয়ে বসলো। অনিমা চোখ মুখ খিচে কানে হাত দিয়ে বসে আছে আর কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান অস্হির হয়ে বলল

— ” অনি তাকাও কী হয়েছে?”

অনিমা আদ্রিয়ানের আওয়াজ পেয়েই আদ্রিয়ানকে দেখে ওকে জাপটে ধরে শব্দ কলে কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ান একহাতে অনিমার পিঠ জরিয়ে ধরে মাথায় ওপর হাত বুলাতে বুলাতে বলল

— ” কিচ্ছু হয়নি। এভরিথিং ইজ ফাইন। কেনো এতো ভয় পাচ্ছো বলো?”

অনিমা উত্তেজিত হয়ে বলল,

— ” স্লিপিং পিলস, প্লিজ আমাকে স্লিপিং পিলস দিন। প্লিজ।”

আদ্রিয়ানের খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে অনিমাকে এভাবে দেখে, তবুও নিজেকে সামলে বলল

— ” নো। স্লিপিং পিলস পাবেনা তুমি।”

অনিমা করুণ স্বরে বলল

— ” প্লিজ।”

— ” না বললাম তো। ভয়ের থেকে পালাতে নয় ভয়ের মোকাবেলা করতে শেখো। তোমাকে এই সিচিউশন ফেস করতে হবে। ”

কিন্তু অনিমা কোনো কথাই শুনছেনা প্রচন্ড হাইপার হয়ে যাচ্ছে, পাগলের মতো বিহেভ করছে। অাদ্রিয়ান এবার আর সহ্য করতে না পেরে ঘুমের ঔষধ এনে খাইয়ে দিলো ওকে। অনিমা ওটা এমনভাবে খেলো যেনো চরম তৃষ্ণার্ত কোনো ব্যাক্তিকে পানি দেওয়া হয়েছে। আদ্রিয়ানের বুক ফেটে যাচ্ছে অনিমার এই অবস্হায়। ও অনিমাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল। অনিমা ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল

— ” প্লিজ আব্বুকে বাঁচান ওরা মেরে ফেলবে আব্বুকে। প্লিজ কিছু করুন প্লিজ।”

অনিমা কিছুক্ষণ কান্না করে দিয়ে আবারো বলে উঠল,

— ” অামাকে যেতে দিন, আমি কিচ্ছু করিনি প্লিজ। ”

এরকম নানারকম কথা বলে চলেছে অনিমা আর অাদ্রিয়ান ওকে বুকে জরিয়ে ধরে রেখে মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছে আর একটার সাথে আরেকটা মেলানোর চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে অনিমা থেমে যেতেই আদ্রিয়ান বুঝলো ও ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান অনিমাকে বুক থেকে সরালো না, ওকে বুকে নিয়েই খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলো। আর গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। এই বাজ পরা তীব্র বৃষ্টিকে ও এতো ভয় পায় কেনো? কী কারণ হতে পারে এর? কী এমন হয়েছিলো? কীকরে জানবে ও ওর অতীত? অনিমা ছাড়া আর কে জানতে পারে? হঠাৎ করেই ওর অরুমিতা আর তীব্রর কথা মনে পরলো। ইয়েস একমাত্র ওরাই জানতে পারে সব সত্যিটা। ওকে ওদের সাথে কথা বলতে হবে আর কালকেই। আদ্রিয়ান সাথে সাথেই অরুমিতা আর তীব্রকে মেসেজ করে দিলো। তারপর অনিমাকে আরো শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরল। আজ ওর আর ঘুম আসবেনা, ওর কানে শুধু অনিমার করুণ আর্তনাদগুলোই বাজছে। কিছুতেই মনকে স্হির করতে পারছেনা কিছুতেই না।

_______________

রিক ওর ফার্মহাউজে রকিং চেয়ারে বসে আছে। সামনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল

— ” ওর বন্ধুদের বায়োডেটা সহ লিস্টটা দে।”

লোকটা মাথা নিচু করেই এগিয়ে দিলো লিস্টটা রিকের দিকে। রিক লিস্ট দেখে ভ্রু কুচকে বলল

— ” মাত্র দুজন ফ্রেন্ড? ”

— ” জ্বী ভাই। অরুমিতা আর তীব্র।”

তীব্র নামটা শুনেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো রিকের। ছেলে ফ্রেন্ড ও জুটিয়েছে? তবুও নিজেকে সামলে বলল

— ” আদ্রিয়ান আবরার এর বাড়ি আর এপার্টমেন্টে খোজ নিয়েছিস?”

— “জ্বী ভাই কিন্তু ভাবী ওখানে নেই।”

— ” ঠিকাছে তুই যা।”

লোকটা চলে যেতেই রিক ভাবতে বসলো। তারমানে আদ্রিয়ান অনিমাকে ওর এমন কোনো এক বাংলো বা এপার্টমেন্টে রেখেছে যেটা পাবলিক ইনফরমেশন এ দেওয়া নেই। কোনো গোপন জায়গা? রিক চোয়াল শক্ত করে বলল

— ” খুব চালাক ভাবো নিজেকে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের? কিন্তু তুমি ওকে যেখানেই লুকিয়ে রাখোনা কেনো খুজেতো ওকে আমি পাবোই, আর তোমার সামনে দিয়েই ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো আমি।”

____________________

একটা কফিশপে আদ্রিয়ান, তীব্র আর অরুমিতা বসে আছে। নিরবতা ভেঙে আদ্রিয়ান বলল

— ” অনি আমার কাছেই আছে।

তীব্র আর অরুমিতা দুজনেই চমকে তাকালো। আদ্রিয়ান একটু কেশে নিয়ে বলল

— “কোথায় আছো সেটা এখনি বলতে পারবোনা তোমাদের তবে সেফ আছে।”

অরুমিতা আর অরু দুজনেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো। অরুমিতা একটা শ্বাস ফেলে বলল

— ” থ্যাংক গড যে ও আপনার কাছে আছে। আমরাতো টেনশনে পরে গেছিলাম।”

অাদ্রিয়ান এবার দুজনের দিকে তাকিয়েই বলল

— ” তোমরা দুজনেই অনিমার ভালো চাও রাইট?”

তীব্র আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” অবশ্যই চাই ও আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ও খুশি থাকলে আর কিচ্ছু লাগবেনা আমাদের।”

আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো তারপর বলল

— ” তাহলে তোমাদের আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।”

অরুমিতা অবাক হয়ে বলল

—“কীকরম হেল্প?”

— ” দেখো ওর জীবণের সব বিপদের কারণ ওর অতীত, আর তাই ওকে নিরাপদ রাখতে আমাকে ওর অতীত জানতে হবে। তাই ওর অতীত টা সম্পূর্ণ খুলে বলো আমাকে। কী হয়েছিলো ওর বাবা মানে আঙ্কেল মারা যাওয়ার পর?”

তীব্র বলল

— ” এক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে বেশি আপনাকে মাদার হেল্প করতে পারবে। আমরা কিছু কিছু ঘটনা জানি কিন্তু উনি আপনাকে সম্পূর্ণ ঘটনাটাই ক্লিয়ারলি বুঝিয়ে বলতে পারবে।”

আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল

— ” চলো তাহলে আর এক মূহুর্ত ও ওয়েস্ট করতে চাইনা আমি।”

এরপর আদ্রিয়ানের গাড়ি করে ওরা তিনজনেই রওনা দিলো অনাথ আশ্রমের উদ্দেশ্য। আদ্রিয়ান খুব দ্রুত ড্রাইভ করছে ও আর ধৈর্য ধরতে পারছেনা অনিমার অতীত জানার জন্যে।
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here