#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ২৯+৩০
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
হঠাৎ করে কোনো অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলে বা শুনলে কিছুসময়ের জন্যে মানুষের মস্তিষ্ক কী বলা উচিত বা করা উচিত সেটাই ভূলে যায়। আর সেরকমটাই হয়েছে এখন অনিমার সাথে। কিছুটা সময় ও সম্পূর্ণ অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো ওর মামার দিকে। যখন অনিমা বুঝতে পারলো কী হচ্ছে তখন ও বিষ্ময়ভরা দৃষ্টিতে ওর মামা আশরাফ মৃধার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” মামু কী বলছো তুমি এসব? আমি কখন তোমাদের বাড়িতে গেলাম?”
পাশ থেকে ওর মামী মিসেস রাহেলা এসে অনিমাকে আরো অবাক করে দিয়ে বললেন,
— ” কবে মানে? কাল সকালেই তো এলি। তোর কোচিং এর ছুটি পরেছে তাই?”
অনিমা যেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে? অবাক দৃষ্টিতে দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। এভাবেই মিথ্যে বলার কারণটা ওর সহজসরল মন ওর মস্তিষ্কে পৌছে দিতে পারছেনা। অফিরসার বলল,
— ” কী হলো? আপনার মামা মামী তো বলছে আপনি বাড়িতে ছিলেনই না তাহলে?”
ও অফিসারের দিকে একবার আশরাফ মৃধার কাছে গিয়ে বলল,
— ” মামু? তুমি মিথ্যে কথা কেনো বলছো? তুমি জানোনা ওরা আব্বুকে কতোটা কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মামু প্লিজ সত্যিটা বলো ওদের।”
আশরাফ মৃধা এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” স্যার কিছু মনে করবেন না। আসলে বাবাকে খুব ভালোবাসতো তো, হঠাৎ করে ওর বাবার মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেনি। তাই ম্যান্টালি একটু।”
এটুকু বলে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” দেখ মা পাগলামী করিসনা। কারো বাবা মা তো আর চিরকাল বেঁচে থাকে না। তাই বলে এভাবে ভেঙ্গে পরলে চলবে? আমি তোর মামী আছিতো। দুলাভাই যে কেনো এমন করলো কে জানে?”
অনিমা মামার হাত সরিয়ে দিয়ে অফিসারের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,
— ” আমার আব্বু সুইসাইড করেনি। আমার আব্বু কাওয়ার্ড ছিলোনা যে সুইসাইড করবে। প্লিজ স্যার আমার কথাটা বিশ্বাস করুন।”
অফিসার ভ্রু কুচকে বলল,
— ” কীকরে বিশ্বাস করবো? তুমি তোমার বক্তব্যের কোনো প্রমাণও দেখাতে পারছোনা। আর বলছো তোমাকে মারার জন্যে তুলে নিয়ে গেছিলো, তাহলে ছেড়ে দিলো কেনো? বলুন কেনো ছেড়ে দিলো?”
অনিমা কোনো উত্তর দিতে পারলোনা। কীকরে দেবে? উত্তরটাতো ওরও ওজানা। মিসেস রাহেলা এসে বললেন
মিস্টার রঞ্জিত এগিয়ে এসে বললেন,
— ” মামনী তুমি এরকম কেনো ভাবছো, তোমার আব্বু খুব ভালো মানুষ ছিলো। ওনাকে কেনো মারবো আমরা?”
কবির শেখও সম্মতি দিয়ে বললো,
— ” সেইতো? ওরকম একজন সৎ, ভালো মানুষকে কেউ মারার কথা ভাবতেও পারেনা।”
অনিমা এবার রেগে রঞ্জিত চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” একদম নাটক করবেননা। আপনি খুন করেছেন আমার আব্বুকে। আপনাকহ্ আপনাকে আমি…”
বলে একটা ইট তুলে নিয়ে রঞ্জিত চৌধুরীকে মারতে গেলেই অফিসার অনিমার হাত ধরে বলল,
— ” বিহেভ ইউর সেলফ। নাবালিকা তাই জেল না হলেও হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেই পারি। আর তোমার মামা ঠিকি বলেছে, ইউ নিড রেস্ট।”
বলেই অনিমার হাত থেকে ইটটা নিয়ে ফেলে দিলো। অনিমা আর কিছু না বলে হাসান কোতয়াল এর লাশের সামনে বসে পরলো। ও বুঝে গেছে ওর কথা কেউ শুনবে না। তাই চুপচাপ নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। অফিসার মিস্টার রঞ্জিত এর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলেন, উত্তরে মিস্টার রঞ্জিতও হাসি দিলেন। হ্যাঁ অনিমার মামা মামী আর অফিসার সবাইকেই মিস্টার রঞ্জিত টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে, এমনকি প্রেসের লোকদেরও টাকা খাইয়ে রেখেছে। নইলে অনিমার এসব কথা এভাবে উড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্নেই ওঠেনা। পুলিশ অফিসাররা ডেডবডি নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক বিপদ হলো। অনিমা কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবেনা, কিন্তু পোস্টমর্ডেন এর জন্যেতো নিতেই হবে। অনিমাকে লেডি অফিসাররা জোর করে ওকে ধরে রেখেছে। বডিটা নিয়ে পুলিশরা যাওয়ার পরে বাকি সবাই চলে গেলো। অনিমা বসে বসে চিৎকার করে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর আশরাফ মৃধা এসে শক্ত গলায় বলল,
— ” কান্নাকাটি হয়ে গেলে এবার ভেতরে চল।”
অনিমা অবাক হয়ে তাকালো আশরাফ মৃধার দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— ” তোমরা মিথ্যে কেনো বললে হ্যাঁ? আমিতো তোমাদের বাড়িতে ছিলামই না, তাহলে? কেনো বললেনা সত্যিটা। উল্টে আমাকে মেন্টালি সিক বানিয়ে দিলে সবার সামনে? কেনো করলে এমন? কেনো?”
আশরাফ মৃধা কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমার গালে। তাল সামলাতে না পেরে বসে পরলো অনিমা। গালে হাত দিয়ে ছলছলে চোখে আশরাফ মৃধার দিকে তাকাতেই উনি ধমকের সুরে বললেন,
— ” তো কী তোদের জন্যে আমরা মরবো নাকি? বেশি হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে তোর বাপ মরলো, তোকে কেনো ছাড়লো সেটাই বুঝলাম না।”
মানুষ একটা ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই একটার পর একটা নতুন নতুন ধাক্কা পেলে তখন তার মধ্যে আর অবাক হওয়ার বা পতিক্রিয়া করার কোনো ক্ষমতা থাকে না। তাই অনিমাও আর কোনো প্রতিক্রিয়া করছেনা, গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে। ওর সত্যিই আর কিছুই বলার নেই। মিসেস রাহেলা আশরাফ মৃধাকে চোখ রাঙ্গিয়ে কিছু ইশারা করে অনিমার কাছে বসে বলল,
— ” দেখ মা মামার কথায় কিছু মনে করিসনা। উনিতো তোকে খুব ভালোবাসেন। আমরা যা করেছি তোর ভালোই জন্যেই করেছি।”
আশরাফ মৃধাও এসে বলল,
— ” হ্যাঁ মা। দেখ আমরা সত্যিটা বললেও কোনো লাভ হতোনা। বরং আরো বিপদ বারতো তাইনা?”
অনিমা কিছু না বলে চুপচাপ উঠে ওর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল। ও কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে যে ওর কান্নার দিন সবে শুরু হয়েছে। ও নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছেনা যে ওর আব্বু আর নেই। কাল অবধি যেই মানুষটা ওকে যত্ন করে নিজের বুকে আটকে রেখেছে সেই মানুষটা আর নেই। গতপরশু রাতেও ও ওর আব্বুর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলো, আর আজ নেই ওর আব্বু। কেনো এরকম হলো?
___________________
সোফায় গম্ভীর মুখ করে বসে আছে রঞ্জিত চৌধুরী। রিকের আসার অপেক্ষায় করছে। মেয়েটাকে মারতে কেনো দিলোনা ও? ওনার ছেলের হঠাৎ ওরকম করার কারণটা বোধগম্য হয়নি তার। ছেলের এই কাজে খুশিও নন উনি। এরমধ্যেই রিক ঘড়ি ঠিক করতে করতে এসে রঞ্জিত চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— ” কিছু বলবে?”
রঞ্জিত চৌধুরী ভ্রু কুচকে রিকে দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” এসবের মানে কী রিক? মেয়েটাকে ছেড়ে দিলে কেনো তুমি? কতোটা ঝামেলা হতো বুঝতে পারছো? ফেসে যেতাম পুরো।”
রিক হু কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
— ” হয়নিতো কিছু এতো ভাবছো কেনো?”
মিস্টার রঞ্জিত রাগী কন্ঠে বললেন,
— ” হয়নি কারণ ওর মনে ঐ মামা মামীর মুখ টাকা দিয়ে বন্ধ করেছিলাম, আর ওই অফিসার আর প্রেসকেও টাকা দিতে হয়েছে। যদি রাজি না হতো তাহলে?”
রিক হালকা হেসে বলল,
— ” টাকার কাছে সবাই মাথা নামিয়ে নেয় ড্যাড।”
মিস্টার রঞ্জিত এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,
— ” যদি তাই হতো তাহলে ওই হাসান কোতয়ালকে মারতে হতো না। যাই হোক মেয়েটাকে মারতে দিলেনা কেনো?”
রিক একটু আলসেমি ঝেড়ে সোফায় বসে বলল,
— ” তোমার একমাত্র বউমাকে নিজের হাতে মেরে ফেলবে? নট ডান!”
এটা শুনে কবির শেখও অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে। মিস্টার রঞ্জিত তো আকাশ থেকেই টুপ করে মাটিতে পরলেন এমন অবস্হা। উনি অবাক হয়ে বললেন,
— ” কী সব বলছো? বউমা মানে?”
রিক সহজভাবে বলল,
— ” মানে খুব সিম্পল ড্যাড। আমি ওকেই বিয়ে করছি।”
মিস্টার রঞ্জিত যেনো অবাকের শেষ পর্যায়ে গেছে, উনি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
— ” পাগল হয়ে গেছো? কী সব বলে চলেছো?”
রিক দৃঢ় কন্ঠে বলল,
— ” তুমি জানো আমি যা বলি ভেবে চিন্তেই বলি।”
মিস্টার রঞ্জিত খুব ভালো করে চেনেন তার ছেলেকে। একবার যেটা বলে সেটা যেকোনো মূল্যে করেই ছাড়ে। কারো কথা শোনার ছেলে ও নয়। তাই এখন ওনার ছেলেকে বিগড়ে দেওয়া মানে লাভের লাভ কিছুই হবেনা উল্টে ঘরে অশান্তি হবে। তাই ভ্রু কুচকে বললেন,
— ” কিন্তু কালকেতো তোমার ফ্লাইট। তুমি এখানে ছুটিতে এসছো সেটা কী ভূলে গেছো?”
রিক গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল,
— ” না ভূলিনি আর এটাও ভূলিনি যে দুই বছর পর আমি ফিরেও আসছি। ”
মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর মুখ করে বসে রইলেন। কবির শেখও চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ নিরবতার পর রিক বলল,
— ” বাট দুই বছর পর এসে যাতে ওকে আমি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত দেখতে পাই। আদারওয়াইস, ইউ নো বেটার।”
মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেইখ দুজনেই তাকালো রিকের দিকে। রিক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
— ” মম আমার কফিটা রুমে পাঠিয়ে দাও।”
বলেই ও উঠে চলে গেলো। মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। কবির শেখ তার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” চিন্তা করছেন কেনো জিজু? ঐ পুচকি মেয়ে কী বা করবে? রিক বাবা যদি ওকে নিয়ে খুশি থাকে তো থাক।”
মিস্টার রঞ্জিত চোখের ইশারায় সম্মতি জানালো। আর কবির শেখ আপন মনেই কিছু একটা আওরে নিয়ে বাকা হাসি দিলেন। যেই হাসি সত্যিই অনেক বড় রহস্য।
____________________
অনিমা ওর মামার বাসায় জানালার কাছে বসে মনমরা হয়ে বসে আছে। দুই দিন আগে হাসান কোতয়ালের লাশ দাফন করা হয়েছে। ও ওর আব্বুকে আর কখনো দেখতে পাবেনা এটা ভাবতেই ওর বুকের ভেতর ভার হয়ে আসছে, চোখ দিয়ে ধীর গতিতে জল গড়িয়ে পরছে। এদিকে আশরাফ মৃধা সোফায় বসে চা খেতে খেতে টিভি দেখছেন। মিসেস রাহেলা রাগে গজগজ করে এসে ওনার পাশে বসে বললেন,
— ” নিজের ভাগ্নিকে এখানে এনে রাখলে। ও বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে কে? মহারাণী তো রুম থেকে বেরোনোর নামও নেয়না। শুধু পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাচ্ছে।”
আশরাফ মৃধা ভ্রু কুচকে টিভির দিকে তাকিয়েই বললেন,
— ” ওকে সাধে রাখিনি এখানে আমি। তোমার মতো হাটুর নিচে বুদ্ধি নিয়ে ঘুরিনা আমি। খুব ভেবে চিন্তেই ওকে এখানে রেখেছি আমি। হাসানের সব প্রপার্টি, ব্যাংক ব্যালেন্স সব ওর নামে। এগুলো হাতছাড়া করে দেবো?
মিসেস রাহেলা একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,
— ” কিন্তু তোমার ভাগ্নি এসব দেবে আমাদের?”
আশরাফ মৃধা বাকা হেসে বললেন,
— ” দিতে হবেনা। এমনিতেই আমাদের হয়ে যাবে।”
মিসেস রাহেলা অবাক হয়ে বললেন,
— “কিন্তু কীকরে?”
আশরাফ মৃধা টিভি থেকে চোখ সরিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
— ” যদি অর্কর সাথে ওর বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে?”
মিসেস রাহেলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলেন পরে কিছু একটা ভেবে বললেন,
— ” কিন্তু ও রাজী হব?”
আশরাফ মৃধা হেসে বললেন,
— ” ও হবেনা ওর ঘাড় রাজি হবে। আর শোনো কটা দিন যাক তারপর ওকে আর এতো তোষামোদ করার দরকার নেই। বয়স কম আছে এখন থেকেই দমিয়ে রাখতে হবে। কী বলছি বুঝতে পেরেছো?”
রাহেলা বেগম উঠে দাড়িয়ে বললেন,
— ” ও নিয়ে ভেবোনা। ওকে কীকরে টাইট দিয়ে রাখতে হয় সেটা খুব ভালো করেই জানি আমি।”
এটুকু বলে উনি কিচেনে চলে গেলেন নিজের কাজে।
___________________
এভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো প্রথম কয়েকদিন কিছু না বললেও। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে অনিমার ওপর অত্যাচার করা শুরু করলেন ওনারা। এক টা দুটু করে করে একপর্যায়ে বাড়ির সব কাজ ওকে দিয়ে করানো শুরু করলো ওর রাহেলা বেগম, প্রথমে বকাবকি করলেও পরে গায়ে হাত তোলাও শুলু করলো। প্রথম আঠারো বছরের একটা মেয়ে যে সদ্য বাবা হারা হয়েছে, এতোগুলো মানসিক আঘাত পেয়েছে তার পক্ষে নিজের হয়ে প্রতিবাদ করার মতো ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই ছিলোনা। আর কাজ করা নিয়ে ওর তেমন কোনো আপত্তি ছিলোনা, ওর মতে ওর মামীর কাজই তো করে দিচ্ছে সমস্যা কী? কিন্তু কারণে অকারণেই ওর মামী ওর গায়ে হাত তুলতো, আর মামা দেখেও না দেখার ভান করতো। আর তারচেয়েও বড় সমস্যা ছিলো ওর মামাতো ভাই অর্ক, কারণ সুযোগ পেলেই ও অনিমার সাথে বাজে ব্যাবহার করতো, খারাপভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। প্রথমে চুপ থাকলেও একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মামা মামীর কাছে সবটা বলেছিলো ও কিন্তু তার উত্তরে ওর কপালে জুটেছিলো চড় আর নিজেরই চরিত্র নিয়ে বাজে কথা। সেদিনের পর আর কিচ্ছু বলেনি ও, ওর খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করার ছিলোনা ওর, রাতের অন্ধকারে বালিশে মুখ চেপে কাদা ছাড়া।
একদিন অনিমা সকালে উঠে বই পরছিলো। হঠাৎ রুমে ওর মামী এসে বলল
— ” কী নবাবজাদি? এভাবে পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে চলবে? কিছু কাজও তো করতে পারিস? ওর বাপ ও বলি হারি নিজে মরে মেয়েটাকে আমাদের ঘারে জুটিয়ে দিয়ে গেছে।”
অনিমা মাথা নিচু করে নিচু কন্ঠে বলল,
— ” প্লিজ মামী আব্বুকে নিয়ে কিছু বলোনা। কী করতে হবে বলো আমি করে দিচ্ছি।”
মিসেস রাহেলা বেগম এসে ওর হাত মুচড়ে ধরে বলল,
— “আমার মুখে মুখে কথা বলিস? এতো সাহস তোর?”
অনিমা চোখ খিচে বন্ধ করে আছে ওর মামী ওর হাত ঝাড়া দিয়ে বলল,
— ” যা অর্ককে কফি করে দিয়ে আয়।”
অনিমা অসহায়ভাবে তাবে তাকালো ওর মামীর দিকে। ওই ছেলেটার রুমে যেতে হবে ভাবলেই গা সিউল ওঠে ওর, কিন্তু ও জানে ওর মামীকে এসব বলে লাভের লাভ এটাই হে যে গালে আরো দুটো থাপ্পড় পরবে। তাই চুপচাপ চলে গেলো কিচেনে। কফি করে মনের সাথে অনেকক্ষণ যুদ্ধ করে তারপর অর্কর রুমে ঢুকলো ও। অর্ক খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে, অনিমাকে দেখেই একটা বাকা হাসি দিলো ও। অনিমা মাথা নিচু করে টি- টেবিলে কফি মগটা রেখে ফিরে আসতে নিলেই ওর হাত ধরল অর্ক। অনিমা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই গরম কফি মগের ওপর ওর হাতটা চেপে ধরলো অর্ক। জালায় চোখ বন্ধ করে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল অনিমা। রিক আরো জোরে চেপে ধরে বলল,
— ” এতো ছটফট কেনো করিস? আমি ধরলেই গায়ে ফোসকা পরে তাইনা?”
অনিমা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,
— ” ভাইয়া লাগছে আমার।”
রিক অনিমার হাত কফি মগে চেপে ধরেই উঠে দাড়িয়ে বলল,
— ” লাগার জন্যেই দিচ্ছি। এতো তেজ কীসের হ্যাঁ? কদিন পরতো আমারি হবি। এতো নাটকের কী আছে। ”
এটুকু বলে ওপর হাত অনিমার কোমরে রাখতে যাবে তার আগেই আশরাফ মৃধা অর্ককে ডাকলো। বাবার ডাক শুনে অর্ক অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। অনিমা চোখ মুছে কিচেনে চলে গেলো কারণ এগুলো ওর কাছে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এভাবেই কেটে গেলো দুই বছর। এই দুই বছরে এগুলোই সহ্য করে চলতে হয়েছে অনিমাকে। কথায় কথায় ওকে থাকা খাওয়ার খোটা দিতো। অথচ হাসান কোতয়ালের ইন্সুরেনস, অফিস থেকে, ব্যাংক থেকে প্রতিমাসে যা আসে তাতে অনিমা কেনো ওই তিনজনেরও খাওয়ার খরচ হয়ে যায়। এগুলো বুঝতে পারে অনিমা কিন্তু কিছু বলেনা। যেমনি হোক ওর তো দুনিয়াতে এই মামা মামী ই আছে, এখান থেকে চলে গেলে ও একা একটা মেয়ে যাবে কোথায়? তবে পড়াশোনায় বাধা দেয়নি কিংবা বলা যায় দিতে পারেনি, অনিমা নিজের স্কলারশিপ এর টাকা দিয়েই পরতো। আর এরমধ্যে অর্কর সাথে ওর বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে। না করার ক্ষমতা ছিলোনা ওর।এই দুই বছরে ও ভূলেই গেছে যে ওর নিজের জীবণের সিদ্ধান্ত ও নিতে পারে।
___________________
গতকাল দুই বছর পর দেশে ফিরেছে রিক। আজ অনিমার কাছে যাবে বলে ঠিক করেছে। দুই বছর ছোটখাটো খবরাখবর রেখেছে অনিমার সম্পর্কে। কোন ইউনিভার্সিটিতে পরে, কোথায় আছে সব। তবে ঘরের ভেতরের খবর তো ওর জানা নেই। ও কার ড্রাইভ করছে আর ভাবছে দুই বছর ধরে অপেক্ষা করেছি আজকের দিনটার। আজ থেকে তুমি শুধুই আমার। ইউ আর ওনলি মাইন।
এদিকে অনিমা ক্লাস শেষে সিড়ি দিয়ে নিচে নামবে তখন হোচট খেয়ে পরে যেতে নিলেই পাশ দিয়ে যেতে থাকা একটা ছেলে ওর হাত ধরে ফেলল। অনিমা সোজা হয়ে দাড়াতেই ছেলেটা বলল,
— ” আর ইউ ওকে?”
অনিমা মুচকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন অনিমাকে হাত ধরে ঘুরিয়ে জোরে একটা থাপ্পড় মারলো। অনিমা গালে হাত সামনে তাকিয়ে অপরিচিত একজনকে দেখে রেগে বলল,
— ” আপনার সাহস কীকরে হলো আমাকে..”
আর কিছু বলার আগেই আরো চড় পরলো ওর গালে এবার ও সিড়ির ওপরেই পরে গেলো। যেই ছেলেটা অনিমাকে ধরেছিলো কিছু লোক এসে ঐ ছেলেটাকে ধরে নিয়ে গেলো। অনিমা আহম্মকের মতো তাকিয়ে আছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা ওর যে ওর সাথে এসব কী হচ্ছে? ছেলেটা ওর সামনে বসে ওর গাল চেপে ধরে বলল,
— ” খুব শখ না ছেলেদের হাত ধরার।”
অনিমা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলল,
— ” কে আপনি? আর আমার সাথে এরকম কেনো করছেন। আর ওকে কোথায় নিয়ে গেলো।”
রিক অনিমার হাত চেপে ধরে বলল,
— ” খুব দরদ উতলে উঠছে ওর জন্যে হ্যাঁ? ওকে এটা বোঝা তে নিয়ে গেছে যে রিক চৌধুরীর জিনিসে হাত দিলে তার কী পরিণাম হয়। এবার চলো তোমাকেও কিছু বোঝানোর আছে।”
বলেই টেনে নিয়ে যেতে লাগল অনিমাকে। অনিমা কিছুই বুঝতে পারছেনা যে কে এই রিক চৌধুরী? আর ওর সাথেই বা এমন কেনো করছে? রিক ওকে টেনে গাড়িতে তুলল তারপর গাড়ি স্টার্ট করে সোজা ওকে ওর নিজেরই মামা বাড়িতে নিয়ে এলো। তারপর ওকে টেনে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। অদ্ভুতভাবে ওর মামা মামী অর্ক কিছুই বলছেনা। যেনো তাড়া জানে যে এটাই হওয়ার। অনিমাকে নিয়ে ওরই রুমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো রিক। তারপর বাইরে গিয়ে দরজা লক করে সোজা কিচেনে চলে গেলো, অনিমা সমানে দরজা ধাক্কিয়ে মামা মামীকে ডাকছে কিন্তু তারা সব শুনেও শুনছেন না। রিক ওখান থেকে একটা চটা নিয়ে গ্যাস অন করে ওটা পুরিয়ে উত্তপ্ত করে ওটা নিয়ে আবার অনিমার রুমের দিকে গেলো। আশরাফ মৃধা, মিসেস রাহলা, অর্ক সবাই নিরব দর্শক এর ভূমিকা পালন করছে। রিক দরজা বন্ধ করে অনিমার দিকে অনিমা ফ্লোরে বসে কাঁদছে। একটু বেশিই শকড হয়েছে মেয়েটা। রিকের হাতে ধোয়া ওঠা স্টিলের চটা দেখে অনিমা ভয়ে গুটিয়ে গেলো চিৎকার করে মামা মামীকে ডাকতে লাগল কিন্তু ওনারা তো ওনারাই। রিক ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে ওর হাত ধরে সামনে এনে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,
— ” এই হাতটাই ধরেছিলো ওই ছেলেটা তাইনা?”
অনিমা অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। হঠাৎ কোথা থেকে এলো এই ছেলে আর কেনো ওর সাথে এমন করছে সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। হঠাৎ করেই ওর হাতের ওপর গরম চটাটা চেপে ধরলো রিক। জোরে চিৎকার করে উঠল অনিমা। প্রায় মিনিট খানেকের মতো অনিমার হাতে চটাটা চেপে ধরে রেখে ওকে ছেড়ে দিলো রিক। নিজের হাত ধরে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল অনিমা। রিক রাগে গজগজ করে বলল,
— ” নেক্সট টাইম যদি অন্যকোনো ছেলের ধারেকাছেও যেতে দেখিনা এমন অবস্হা করবো যে আয়নার সামনে দাড়ালে নিজেই নিজেকে চিনতে পারবেনা।”
এটুকু বলে ওখান থেকে চলে গেলো রিক। অনিমা হাত ধরে বসে কাঁদতে লাগল। আসলে রিক সকালে বাসাতেই এসছিলো কিন্তু অনিমাকে পায়নি পরে ওর মামা মামীর সাথে কথা বলে রিক। আর এটাও বুঝতে পারে যে ওনাদের অনিমার প্রপার্টি চাই। ও চাইলেই ওদের হুমকি দিয়ে এমনিতেই সব করতে পারতো কিন্তু ও ঝামেলা চায়না তাই ওনাদের বলেছে যে অনিমার সব প্রপার্টি ওনাদেরই থাকবে, শুধু তাইনা ও নিজেও প্রতিমাসে ওনাদের এক্সট্রা টাকা দেবে কিন্তু তার পরিবর্তে অনিমাকে ওর চাই। মানে আজ থেকে অনিমা ওর, অনিমা এই বাড়িতেই থাকবে কিন্তু অনিমার ওপর সবধরণের রাইট ওর থাকবে। আর অনিমার মামা মামীও টাকার লোভে পরে রাজী হয়ে যায়।এককথায় অনিমাকে রিকের কাছে বিক্রি করে দেয়। যদিও রিক চেয়েছিলো অনিমাকে এখনি নিয়ে যেতে কিন্তু কবির শেখ ওকে বলে যে আগে অনিমার ওনার্স শেষ হোক তারপর এসব ভাবতে। এরপর থেকেই রিকের নানারকম টর্চার সহ্য করতে হয়েছে অনিমাকে, কারণে অকারণে নানারকমভাবে টর্চার করতো ও অনিমাকে। একপর্যায়ে রিক অনিমার কাছে সবচেয়ে ভয়ের বস্তু হয়ে গেলো যাকে দেখলেই ওর রুহ কেপে উঠতো। কিন্তু ও বুঝতে পারতোনা কেনো এমন করে ওর সাথে আর মামা মামীই বা কেনো কিছু বলেনা। একদিন অনিমা ওর মামা মামীর কথা শুনে ফেলে আর সেদিন খুব ভেঙ্গে পরে ও। এতোদিন সব সহ্য করলেও এবার সবকিছু ওর সহ্যসীমার বাহিরে চলে যায়। এতোটা খারাপ মানুষ কীকরে হতে পারে? শুধুমাত্র টাকার জন্যে নিজের ভাগ্নেকে এমন একটা লোকের কাজে কেউ বিক্রি করে দিতে পারে? তাও সেই লোকটার ছেলে যেই লোকটা ওর বাবাকে খুন করেছে? সত্যিই টাকা কী এতোই শক্তিশালী? যার কাছে মনষ্যত্বের কোনো জায়গাই নেই?
#পর্ব- ৩০
.
সব সত্যিটা জানার পর ও ঠিক করে থাকবেনা এখানে আর ও। ও কিছুতেই ওর বাবার খুনির ছেলের সাথে থাকতে পারবেনা আর তারচেয়েও বড় কথা রিক খুব খারাপ ব্যবহার করে ওর সাথে। ওর কথার নড়চড় হলেই অমানুষের মতো মারে। একটু সাজার কারণে মুখে গরম জল ঢেলে দেওয়া, ছেলেদের সাথে কথা বলেছে বলে পিঠে গরম শিক চেপে ধরা, এসব সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছিলো ওর কাছে। অনিমা সেদিন রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে প্রচুর কেঁদেছিলো। এটা ভেবে যে ওর নিজের মামা মামী ওর সাথে এরকম করেছে। সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরার পরেই ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো ও কিন্তু ও জানতোনা যে রিকের লোকেরা ওর ওপর নজর রাখছিলো। ও বেড়িয়ে যেতেই ঐ লোকেরা রিক কে খবরটা দেয়।
অনিমা রাস্তা দিয়ে একপ্রকার দৌড়চ্ছে, ও চায়না আর এই নরকে থাকতে । হঠাৎ ওর সামনে কালো একটা গাড়ি থামে। গাড়িটা দেখেই ওর আত্মা শুখিয়ে যায় কারণ গাড়িটা রিকের। রিক গাড়ি থেকে নেমে ওর সামনে এসে দাড়ায়। রিককে দেখে অনিমা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে ভয়ে একদম সিটিয়ে আছে। রিকের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। রিক সর্বশক্তি দিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো অনিমাকে। থাপ্পড়টা এতোই জোরে ছিলো যে ও নিচে পরে গেলো। রিক অনিমার হাত ধরে টেনে তুলে চুলের মুঠি ধরে বলল,
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে তাইনা? পালাতে যাচ্ছিলে?”
অনিমা কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় বলল,
— ” প্লিজ যেতে দিন আমাকে। আমি হাত জোড় করছি, প্লিজ।”
অনিমার এই কথায় রিকের করুণা হওয়ার পরিবর্তে রিকের রাগ আরো বৃদ্ধি পেলো। ও অনিমার চুল আরো জোরে টেনে ধরে বলল,
— ” যাওয়াচ্ছি তোমাকে। চলো।”
বলে অনিমাকে টেনে গাড়িতে তুললো তারপর ওকে বাড়িতে এনে অনিমার রুমে নিয়ে ওর সামনে দাড় করিয়ে বলল,
— ” আমার হাত থেকে পালাতে চাও? আমার হাত থেকে।”
বলে আবারো চড় মারলো ওর গালে। ‘আমার অনুমতি ছাড়া আর বেড়োবে বাড়ি থেকে? বলো?’ এরকম নানা কথা বলতে বলতে একটার পর একটা চড় মারতে শুরু করলো। এদিকে অনিমার ঠোটের কোণ ফেটে রক্ত পরছে, গালে রক্ত জমাট বেধে গেছে সেই নিয়ে রিকের কোনো মাথাব্যাথা নেই। আর যতোক্ষণ ওর রাগ না কমেছে ততোক্ষণ মেরেছে মেয়েটাকে। আর রিক চলে যাওয়ার পর ওর মামীও মেরেছে ওকে। মানুষ কতোটা নির্মম হতে পারে তা অনিমা নিজের সাথে ঘটা ঘটনা দিয়েই বুঝতে পারছে।
এভাবেই দিন কাটছে। অনিমার ওনার্স ফাইনাল ইয়ারের এর ফাইনাল এক্সামও দিয়ে ফেলেছে। শুরুতে ও কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ওর মামা মামীর জন্যে পারেনি, ওইদিনের পর রিক ওর মামা মামীকে হুমকির স্বরে বলে দিয়েছে যাতে পালাতে না পারে আর চেষ্টা করলেও যাতে ওকে জানানো হয়। অনিমা যতোবার পালানোর চেষ্টা করতো ওর মামা মামী ওকে আটকে রিককে বলে দিতো, আর রিক ততোবার এসে শাস্তির নাম করে অনিমার সাথে অমানুষের মতো ব্যবহার করতো। একপর্যায়ে অনিমা নিজেই সেই চেষ্টা থামিয়ে দিয়েছে কারণ তাতে কোণো লাভ হয়নি বরং ওকে আরো টর্চার সহ্য করতে হয়েছে। এদিকে অর্কের মাথায় অন্যকিছু চলছে। অনিমার অনার্স শেষ হয়ে গেছে এখন তো রিক ওকে নিয়ে যাবে। যেখানে অনিমা ওর হওয়ার কথা ছিলো সেখানে এখন ঐ রিককে দিতে হবে? টাকার লোভও সামলাতে পারেনি তাই রাজি হয়েছে। রিকের ভয়ে এই দুই বছর অনিমার সাথে আগের মতো অতোটা বাজে ব্যবহার করে নি। কিন্তু ওর তো অনিমাকে চাই সেটা এক রাতের জন্যেই হোক না কেনো? আর রিক থোরিই জানতে পারবে এসব? এগুলো চিন্তা করে সঠিক সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল ও। একদিন রাহেলা বেগমের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে ওনারা সকলেই চলে গেলো। কিন্তু অনিমাকে নেয় নি, কখনো নেয়ও না ওকে, ও তো ছিলো ঐ বাড়ির ফেলনা বস্তু যেটাকে এক কোণে ফেলে রাখা হয়। রাতে অনিমা একা একাই নিজের রুমে গুটিসুটি মেরে বসে আছে? কারণ বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে আর বাজ পরছে যার ফলে কারেন্টও নেই, মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। ওর আব্বুর খুন হওয়ার সেই রাতের পর থেকে বাজ পরলে খানিকটা ভয় লাগে ওর। মনে হয় এই বাজ পরা ওর জন্যে অশুভ বড্ড বেশিই অশুভ। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ শব্দে চমকে তাকালো অনিমা। উঠে দাড়িয়ে দেখে অর্ক রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করছে। অনিমা ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
— ” ভাইয়া তুমি এখানে? তুমি যাও নি?”
অর্ক বাকা হেসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” ভাবলাম তুই এখানে একা একা বোর হচ্ছিস তাই তোকে একটু কম্পাপি দেই।”
এটুকু বলে অনিমার দিকে বাকা হেসে এগোতে লাগল অনিমা বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে ওর মতলব টা কী, কিন্তু ও কী করবে সেটাই বুঝতে পারছেনা, শুধু পিছিয়ে যাচ্ছে। অর্ক ওর কাছে আসতেই ও ছিটকে দূরে গিয়ে বলল,
— ” ভাইয়া কী করছো এসব? প্লিজ এরকম করোনা?”
অর্ক অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে এনে বলল,
— ” কেনো? রিক যদি করতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা?”
অনিমা নিজেকে ছাড়নোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
— ” পাগল হয়ে গেছো তুমি? কীসব বলছো? ছাড়ো আমাকে।”
অর্ক একটা শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,
— ” ছাড়ার জন্যে ধরেছি নাকি?”
অর্ক অনিমার কাছে আসতে নিলেই অনিমা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে পালাতে চাইলো কিন্তু তার আগেই রিক ওর কুর্তির স্লিভ ধরে টান মারলো, ফলসরূপ ওর স্লিভ ছিড়ে গেলো আর তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে গেলো। অনিমা বসে বসেই হালকা পিছিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
— ” ভাইয়া প্লিজ আমার কাছে এসোনা, যেতে দাও আমায়।”
অর্ক ওর কথা কানে না নিয়ে এগিয়ে আসতে নিলেই অনিমা অনেক কষ্টে উঠে আবারো পালাতে নিলে অর্ক ওর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো আর অনিমা বেডের ওপর পরে গেলো।
___________________
মাদার একটা শ্বাস নিলেন কারণ ওনার গলা ধরে আসছে, উপস্থিত সকলের চোখ দিয়েই জল গড়িয়ে পরছে। মানুষ কতোটা নির্মম, নোংরা আর খারাপ হতে পারে সেটা অনিমার অতীত না জানলে বুঝতেই পারতোনা ওরা। ওরা ভাবতেও পারছেনা ঐ মেয়েটা এতোকিছু সহ্য করে বেঁচে ছিলো? কতোটা নির্মম এই পৃথিবী। প্রত্যেকেরই বুকের ভেতর ভার ভার হয়ে আসছে, চাপা কষ্ট হচ্ছে একটা। তবে একজনের চোখে তেমন জল নেই শুধু চোখ দুটো হালকা ছলছল করে উঠছে, তবে যেটা আছে সেটা হলো রাগ। তীব্র রাগে ফেটে পরছে ও, চোখ লালচে হয়ে আছে, সারাশরীর থরথর করে কাপছে , যেনো এক্ষুনি সব শেষ করে দেবে, আর সেটা হলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওখানের সবাই চমকে উঠলো, সাথে ভয়ও পেয়ে গেলো। মাদার আদ্রিয়ানের কাধে হাত রেখে বলল,
— ” কুল ডাউন মাই চাইল্ড। শান্ত হও।”
আদ্রিয়ান চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রাইমা কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— ” অর্ক কী সেদিন ওর সাথে…”
রাইমা নিজেও আর কিছু বলতে পারলোনা ওর গলা ধরে আসছে । আদ্রিয়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে, এরপরে কী হয়েছিলো সেটা কল্পনাও করতে চাইছেনা উপস্থিত কেউ। মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
— ” এরপর অর্ক..”
আদ্রিয়ান মাদারকে থামিয়ে দিয়ে কাঁপা গলায় বলল,
— ” আমি আর শুনতে চাইনা।”
আদ্রিয়ান নিচের দিকে তাকিয়েই বলল কথাটা, এখনো কাঁপছে ও, এরপরে কী হয়েছে সেটা শোনার সাহস ওর নেই। মাদার আদ্রিয়ানকে আশ্বস্ত করে বলল,
— ” রিল্যাক্স। সবসময় যে খারাপ কিছুই হবে সেটা ভাবাও ঠিক না তাইনা?”
আদ্রিয়ান ছলছলে চোখ নিয়ে তাকালো মাদারের দিকে। মাদার আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” কিন্তু সেদিন অনিমা নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। মেয়েদের সম্মান তাদের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা আবার সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাও। যখন সেখানেই কেউ হাত দেয় তখন মেয়েদের মধ্যে এমনিতেই এক শক্তি চলে আসে। অনিমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অর্ক ওর কাছে আসার আগেই ও টি টেবিল থেকে ফ্লাওয়ার ভাস নিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে আঘাত করেছিলো রিকের মাথায় , এতে অর্কর তেমন কিছু না হলেও কিছু সময়ের জন্যে ঘায়েল হয়ে গেছিলো। সেই সুযোগেই অনিমা দৌড়ে রুমটা বাইরে থেকে লক করে বাইরে বেরিয়ে যায়। ওর সমস্ত ধৈর্য আর সহ্যের সীমা পার হয়ে গেছিলো সেদিন। আর ও ঠিক করে নিয়েছিলো যে ও আর কখনো ফিরবেনা ওই নরকে তাতে যাই হোক না কেনো। ওই হয়তো প্রথম মেয়ে যে ঝড় বৃষ্টির রাতে বাড়ি থকে রাস্তায় বেরিয়েছিলো নিজেকে বাঁচানোর জন্যে। কিন্তু আমাদের সমাজ তো আর এতো সহজ নয়। একটু বেশিই নিষ্ঠুর। রাস্তাতেও কিছু মাতাল ছেলেদের পাল্লায় পরতে হয়েছে ওকে। ওদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে রাস্তাতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায় ও, এতো কিছু সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো ওর মস্তিস্কের আর ছিলো না। কিন্তু সৌভাগ্যবসত সেদিন ঐ রাস্তা দিয়েই সিলেট থেকে ফিরছিলাম আমি, এটাই হয়তো জিজাসের ইচ্ছে ছিলো, যদি সময়মতো ঐ দিন আমি না পৌছাতাম তাহলে হয়তো..”
আদ্রিয়ানের চোখে থেকে ওর অজান্তেই এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো, আজ খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে ওর। মাদার একটু থেমে বললেন,
— ” ওকে সেদিন আমি আমার কাছে নিয়ে আসি। হসপিটালে এডমিট করার একদিন পর জ্ঞান ফিরেছিলো ওর। আর একসপ্তাহ পর্যন্ত কোনো কথা বলেনি ও একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি। যেনো ওর মধ্যে কোনো অনুভূতিই কাজ করছেনা। ওকে এভাবে দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিলো আমার। যেই মেয়েটা সবসময় দুষ্টুমি খুনসুটি করে বেড়াতো তার এভাবে চুপ হয়ে যাওয়া দেখে সত্যিই অবাক হয়েছিলাম। আমিতো ভেবেছিলাম মামা বাড়িতে হয়তো ভালো আছে কিন্তু ভাবতেও পারিনি যে ও এইরকম ভালো থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে ও সুস্হ হলো কিন্তু আগের মতো আর হলোনা একেবারে চুপচাপ, শান্ত হয়ে গেছিলো, অল্পেই ভয় পেয়ে যেতো, সবাইকে এড়িয়ে চলতো। আর ওর সবচেয়ে বড় ভয় ছিলো বজ্রপাত আর ঝড়। এগুলো দেখলেই ও ভয়ে সিটিয়ে যেতো, ঐ সময় ওর মনে হতো ওর সাথে আবার এসব হবে। ”
মাদার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবার দিকে তাকালেন সবার মুখই অন্ধকার আচ্ছন্ন। মাদার আবার বললেন,
— ” ওর সব সার্টিফিকেট আর বায়োডেটা গুলো জিডি করে তারপর ওকে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করে দেই মাস্টার্স কম্প্লিট করার জন্যে। ওখানেই তীব্র আর অরুমিতার সাথে আলাপ হয় ওর। এরপর এখানে থেকেই ওর স্টাডি কম্প্লিট করে জব জয়েন করে, তিনজন একই সাথে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো আর তিনজনেরই হয়ে গেছে। আর জব পাওয়ার পর অনিমা আর আশ্রমে থাকেনি ওর মতে ও আমার ওপর বোঝা হয়ে থাকছে, সত্যি বলতে আমারও কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু ওতো আমার মেয়ের মতো, সেইজন্যে ওকে নিজের কাছে আগলে রেখেছি। কিন্তু ও তো ওই, ফ্লাট ভারা নিয়ে ওখানেই থাকতে শুরু করলো। কিন্তু একটা কথা বুঝলাম না স্টুডেন্ট লাইফে ওকে খুজে না পাওয়ার কারণ আছে কিন্তু জার্নালিস্ট হবার পরে তো ওকে খুজে পেয়ে যাওয়ার কথা যদি খুজে থাকে তো। না খুজলে পেতোনা কারণ এতো এতো জার্নালিস্টদের মধ্যে কজনকেই বা মন্ত্রী মিনিস্টাররা দেখে বা চেনে? কিন্তু না খোজার কারণ কী? হঠাৎ করেই বা কীকরে পেয়ে গেলো? সেটাই প্রশ্ন। ”
আদ্রিয়ান ঠান্ডা গলায় বলল,
— ” কেউ হয়তো অনিমাকে না খুজে নিজের স্বার্থ খুজছিলো।”
উপস্থিত কেউ ওর কথা বুঝলোনা, কী বলতে চাইলো আদ্রিয়ান? মাদার অবাক হয়ে বললেন,
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান হালকা হেসে বললো,
— ” কিছুনা মাদার। থ্যাংকস আ লট। এভাবে হেল্প করার জন্যে। আমরা উঠছি তাহলে আজ।”
মাদার উঠে দাড়িয়ে বললেন,
— ” আরে এখনি চলে যাবে কিছু খেয়ে যাও।”
আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে বলল,
— ” না মাদার মেয়েটা একা আছে এপার্টমেন্টে। যদিও রুমে খাবার দিয়ে এসছি। কিন্তু যেয়ে হয়তো দেখবো কিছুই খায়নি।”
মাদার হেসে দিয়ে আদ্রিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” আমি জানিনা ঐ ভয়ংকর প্রাণীগুলোর সাথে লড়ার ক্ষমতা তোমার কতোটুকু আছে কিন্তু আমার কেনো জানিনা মনে হচ্ছে একমাত্র তুমিই পারবে অনিমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে।”
আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
— ” পারতেতো হবেই মাদার কথা দিয়েছি তো। যাই হোক আসছি।”
বলেই আদ্রিয়ান বেড়িয়ে গেলো আর মাদারকে বিদায় দিয়ে ওর পেছন পেছন বাকিরাও বেড়িয়ে গেলো। অনিমার অতীত সকলের মনেই একটা দাগ কেটে দিয়েছে আজকে। এইসব ঘটনা যেনো ওদের কল্পনারও উর্ধ্বে ছিলো। তীব্র আর অরুমিতা অনেককিছু আগে থেকে জানলেও আজ নতুন করে কষ্ট হচ্ছে ওদের। মাদার তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার পথে। আদ্রিয়ান ছেলেটার কথায় এতো রহস্য কেনো? কেনো জানি মনে হয় এমন অনেক কিছুই আছে যেটা সবার অজানা।
_____________________
তীব্র গাড়ি ড্রাইভ করছে। ফ্রন্ট সিটে স্নেহা আর ব্যাক সিটে অরুমিতা বসে আছে। অরুমিতার মনটা ভার হয়ে আছে, কারণ অনিমার সাথে ঘটা ঘটনাগুলো মনে পরছে বারবার আর আশিস আজকে ওকে পুরো এভোয়েট করেছে। আশিসের ঐ জ্বালাতনেই ও অভ্যস্ত হয়ে গেছে, এখন সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবকিছুই ওর কাছে ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অরুমিতাকে নামিয়ে দিয়ে তীব্র ওর গাড়ি সোজা ট্যাক্সি স্টান্ডে নিয়ে থামালো। স্নেহা অবাক হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই তীব্র বলল,
— ” এখান থেকে ট্যাক্সি ধরে বাড়ি চলে যাও।”
স্নেহা তো চরম অবাক হলো, কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
— ” মানে?”
তীব্র সামনে তাকিয়ে হু কেয়ারস ভাব নিয়ে বলল,
— ” তোমাকে বাড়ি অবধি পৌছে দেবার মতো ফাল্তু টাইম নেই আমার কাছে। নিজে চলে যাও।”
স্নেহার চোখ এবার ছলছল করে উঠলো। দেড় বছর আগেও এই ছেলেটা ও একা কোথাও বেড়োলেও রাগ করতো। এতোটাই অপছন্দের হয়ে গেছে ও তীব্রর কাছে এখন? স্নেহা কেদে দিয়ে বলল,
— ” আমাকে তুমি আর একটুও ভালোবাসোনা তীব্র?”
তীব্রর রাগ আরো বেড়ে গেলো এই প্রশ্নে। ওর ভালোবাসা কী এতো সস্তা নাকি যে দুদিন পরেই উবে যাবে? সবাইকে নিজের মতো ভাবে নাকি ও? তীব্র তাই রাগে গজগজ করে বলল,
— ” নাহ ভালোবাসিনা। আর বাসার কোনো কারণও নেই।”
তীব্রর কথা স্নেহার বুকে গিয়ে লাগল। কতো সহজে বলে দিলো কথাটা? তাই নিজেকে সামলে বলল,
— ” ঠিকি বলেছো কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমি বাসি এখনো ভালোবাসি। আর সেইজন্যেই ঐ ছেলেকে রিকোয়েস্ট করে এনগেইজমেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছিলাম।”
তীব্র অবাক হয়ে তাকালো স্নেহার দিকে। স্নেহা চোখ মুছে বলল,
— ” আব্বুকে বললে আব্বু ঘরে আটকে রেখে দিতো তখন চেয়েও কিছু করতে পারতাম না। তাই বাধ্য হয়ে করেছিলাম এনগেইজমেন্ট। কিন্তু পরে ওই ছেলেকে বলে সেটা ভেঙ্গেও দিয়েছি। কিন্তু এসব তোমাকে কেনো বলছি? তুমিতো আমাকে আর ভালোই বাসোনা রাইট?”
এটুকু বলে স্নেহা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে চলে গেলো, তীব্র আটকাতে গিয়েও থেমে গেলো। এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে ওর। এতোটা খারাপ ব্যাবহার করাও ঠিক হয়নি কিন্তু ওই বা কী করতো, স্নেহাকে অন্য কারোর সাথে যে ও সহ্য করতে পারেনা, সেখাতে এনগেইজমেন্ট এর কথা শুনে নিজেকে ঠিক কীকরে রাখতো?
___________________
আদ্রিয়ান কার ড্রাইভ করছে। চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে ওর। ওই সবগুলোকে জ্যান্ত জালিয়ে মারতে ইচ্ছে করছে ওর। আর নিজের ওপরেও রাগ হচ্ছে। কেনো আরো আগে খুজে পেলোনা অনিমাকে? মেয়েটাকে কী কী সহ্য করতে হয়েছে ভাবলেও ওর রক্ত গরম হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে সব ধ্বংস করে দিতে, সব। আর এখন সেদিন রাতে অনিমার অবস্হা, রিকের ফোন, অনিমার ভয় সব পরিষ্কার হচ্ছে ওর কাছে। এসব চিন্তা করতে করতে ওর এপার্টমেন্টে ঢুকে ওর রুমের যেখানে অনিমাকে রেখেছে তার লক খুলে ভেতরে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে আদ্রিয়ানের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠল।
.
#চলবে…