#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৪৬+৪৭

0
454

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ৪৬+৪৭
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৪৬
.
আদ্রিয়ান সকালের ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্যে সবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় কেউ পেছন থেকে বলে উঠল,

— ” স্যার।”

ডাকটা শুনে চমকে উঠলো আদ্রিয়ান। দ্রুত পেছনে ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটিকে দেখে মুখে হালকা হাসি পুটে উঠলো ওর। বেশ খুশি হয়েই বলল,

— ” তুমি?”

অভ্র মুচকি হেসে বলল,

— ” কেনো স্যার? আশা করেননি তাইনা ?”

আদ্রিয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর অভ্র অভিমানী কন্ঠে বললো,

— ” এতোটা পর করে দিলেন স্যার? এরকম একটা সময়ও আমাকে একটু ডাকার প্রয়োজন মনে করলেন না?”

আদ্রিয়ান একটু শ্বাস নিয়ে বললো,

— ” নাহ আসলে তুমি তোমার ফ্যামিলি ম্যামবার দের কাছে ছিলে তাই ভেবেছিলাম..”

অভ্র আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” আপনি হয়তো আমাকে আপনার পিএ ছাড়া আর কিছু ভাবেন না কিন্ত আমি আপনাকে আমার বড় ভাই ভাবী। তাইতো খবরটা কানে যেতেই চলে এলাম।”

আদ্রিয়ান নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কোমরে হাত দিয়ে বলল,

— ” বেশি কথা শিখে গেছো আজকাল।”

তারপর আদ্রিয়ান হেসে অভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অভ্র সাথেসাথেই এসে জরিয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান অভ্রকে ছেড়ে বলল,

— ” কিন্তু আমিতো আজ সুইডেন যাচ্ছি। তুমি..”

আর কিছু বলার আগেই অভ্র বলল,

— ” জানিতো, আমি সব ব্যবস্হা করে নিয়েছি স্যার। আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে।”

আদ্রিয়ান অভ্রর কাধে হাত রেখে বলল,

— ” চালু আছিস খুব।”

অভ্র একটু ভাব নিয়ে বলল,

— ” সবই আপনার সাথে থাকার ফল।”

কিছুক্ষণ একেওপরের দিকে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলো দুজনেই। এরপর আদ্রিয়ান, অভ্র আর আদিব রওনা দিলো সুইডেন এর উদ্দেশ্যে। আশিস দেশেই থেকে গেলো কারণ আদ্রিয়ানের এখানে কিছু কাজকর্ম সামলানোর দ্বায়িত্ব আদ্রিয়ান ওকেই দিয়ে গেছে।

____________________

অনিমা চুপচাপ জানালার কাছে বসে নিরবে চোখের জল ফেলছে। আদ্রিয়ানের কথা খুব বেশি মনে মরছে ওর। খুব বেশি মিস করছে ওকে। আদ্রিয়ানের শাসন, ভালোবাসা, খুনসুটি এসব কিছুই বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যেতে আদ্রিয়ানের কাছে। কিন্তু ওর কোনো উপায় নেই, ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের ওপর কোনো কিছুই নির্ভর করছে না এই মুহূর্তে। ওর শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোনো এক কারণে সেটা পারছেনা। হঠাৎ কেউ ওর কাধে হাত রাখতেই অনিমা ঘুরে তাকিয়ে দেখলো যে স্নিগ্ধা ওর পাশে এসে বসেছে। অনিমা স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। এই অল্প সময়েই বেশ ভালো বন্ডিং তৈরী হয়ে গেছে ওদের দুজনের । স্নিগ্ধা অনিমায পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,

— ” কীরে? কাঁদছিস কেনো? আমি জানি তোর এখানে থাকতে ভালোলাগছেনা। আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু ধৈর্য ধর ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— ” আদ্রিয়ান..”

এটুকু বলেই আবার কেঁদে দিলো ও। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে গেলো। কার নাম বললো অনিমা? আর তার কথা ভেবে কাঁদছেই বা কেনো? অনিমাকে সোজা করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কে আদ্রিয়ান? কী হয়েছে এক্সাক্টলি বল তো?”

অনিমা প্রথমে কিছু না বললেও পরে স্নিগ্ধার জোরাজোরিতে সব খুলে বলল, স্নিগ্ধা কিছু না বলে অনিমাকে জরিয়ে ধরে বসে রইলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগল,

— ” এটা তুমি কী করেছো রিক দা? আমি তো ভেবেছিলাম অনিমা তোমাকে ভালো না বাসলেও ওর মনে অন্য কেউ নেই। তাই আমি ভেবেছিলাম তোমাকে কোনোভাবে শুধরে নিয়ে অনিমাকে কন্ভেস করে নেবো। কিন্তু যেখানে ও অন্য একজনকে এতোটা ভালোবাসে সেখানে তুমি কীকরে এটা করতে পারো? তোমাকে ভালোবেসেও নিজের করে পাইনি আমি কিন্তু এই মেয়েটাকে ওর ভালোবাসার কাছ থেকে আলাদা হতে দেবোনা আমি। কিছুতেই না।”

অনিমার কান্না থেমে গেলেও শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। স্নিগ্ধা ওকে সরিয়ে অনিমার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলল,

— ” চুপ। অনেক কান্নাকাটি হয়েছে। এবার চল তো একটু কিচেনে গিয়ে কোনো একটা স্নাকস করে দুজন মিলে খাবো হুম? আর এসব নিয়ে ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রমিস করছি ”

অনিমা চোখ মুছে মুচকি হেসে মাথা নাড়ল। তারপর স্নিগ্ধা ওকে নিয়ে কিচেনে চলে গেলো। স্নিগ্ধা এরকমি করে, বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে ব্যাস্ত রাখে অনিমাকে। কখনো ওকে নিয়ে রান্না করে, কখনো কিছু একটা খেলে, কখনো অনলাইনের বিভিন্ন ভিডিও দেখে। এরকম নানা রকম কিছু করে খুশি রাখার চেষ্টা করে অনিমাকে। দুজনের বাস্তবিক স্বভাব এক হওয়ার কারণেই ওদের বন্ডিং তৈরী হতে সময় লাগে নি। অনিমা আর সিগ্ধা মিলে চা আর পাকোরা বানাচ্ছে। হঠাৎ রিক কিচিনে এলো। রিক কে দেখে অনিমার মুখের হালকা হাসিটুকুও মিলিয়ে গেলো। গোমড়া মুখ করে পাকোরা ভাজায় মন দিলো। যেটা রিকের চোখে পরলো আর ওর খারাপ ও লাগলো। স্নিগ্ধা ভ্রু কুচকে বললে,

— ” কী হলো রিক দা? মেয়েদের এখানে তোমার কী কাজ? আমরা রান্না করছি সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

রিক উকি দিয়ে কী রান্না হচ্ছে সেটা দেখে বলল,

— ” হুমম। তো আমি কী একটু ভাগ পাবো? নাকি তোরা দুই রাক্ষুসী মিলেই খাবি।”

রাক্ষুসী বলাতেও অনিমার মধ্যে কোনো ভাবান্তর হলো না বরং ও ওর মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা রেগে বলল,

— ” কীহ? আমাদের রাক্ষুসী বলা হচ্ছে?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” আচ্ছা বাবা সরি। এবার পাবোতো একটু?”

স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে খানিকটা ভাব নিয়ে বললে,

— ” হ্যাঁ যাও যাও পেয়ে যাবে।”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” সিউর তো?”

স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলল,

— “আরে বাবা বললাম তো পেয়ে যাবে। যাও তো এখন। এমন খাদক জীবণে দেখিনি বাবা।”

রিক হেসে দিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে। স্নিগ্ধা কিছু একটা ভেবে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দিয়ে বলল,

— ” তুই দেখতে থাক আমি একটু আসছি।”

বলেই কিচেন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সোজা রিকের কাছে গিয়ে স্নিগ্ধা বলল,

— ” রিক দা?”

রিক সোফায় বসে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” কিছু বলবি?”

স্নিগ্ধা রিকের পাশে বসে বলল,

— ” সাইক্রাটিস্ট এর সাথে কথা বলেছো?”

রিক একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” এখানকার বেস্ট যিনি তিনি নেই এখন। কদিন পর আসবেন। তখনি দেখাবো ওকে।”

স্নিগ্ধা আর কিছু না বলে উঠে চলে গেলো অনিমার কাছে। কী আর বলবে এখন নতুন করে। এখন শুধু ডক্টর আসার অপেক্ষা। আরো একটা কাজও করা বাকি আছে ওর। সেটাও খুব গুরত্বপূর্ণ।

_______________________

এইদিকে কিছুক্ষণ আগেই সুইডেনে ল্যান্ড করলো আদ্রিয়ানরা। এখন আপাদত এখানে আদ্রিয়ানের পরিচিত একজনের একটা বিল্ডিং আছে। সেই বিল্ডিং এরই একটা এপার্টমেন্টে উঠেছে ওরা। আজকে দিনটা বেড়বেনা ওরা আর। আজ আগে রুমে বসেই রিক কোথায় থাকতে পারে এরকম জায়গা গুলোকে মার্ক করবে । আদ্রিয়ান, আদিব, অভ্র সোফায় বসে কফি খাচ্ছে। অভ্র ল্যাপটপে কাজ করছে। আদ্রিয়ান কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বলল,

— ” রেয়ার যেসব জায়গা গুলো। মানুষ যেখানে কম থাকে। সেইসব জায়গাগুলোতেই ওদের থাকার চান্স বেশি।”

অভ্র থুতনিতে হাত রেখে বলল,

— ” হুম এইদেশে এরকম জায়গা মানে হলো আইসল্যান্ড। এরকম জায়গা আইসল্যান্ডেই আছে। ”

আদিব ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” তাহলে তো খুজে পাওয়াটা সহজ হবে।”

আদ্রিয়ান মগটা সাইডে রেখে বলল,

— ” এটা সুইডেন আদিব। এখানে দ্বীপের অভাব নেই।”

অভ্র আদ্রিয়ানের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

— “এক্সাক্টলি। সবগুলো খুজতে অনেকটা সময় লাগবে।”

আদ্রিয়ান সোফায় হেলান দিয়ে বলল,

— ” দ্বীপগুলোতে যাওয়ার জাহাজ আর এয়ারলাইন গুলোতে খোজ নিলেই পাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।”

ওরাও আদ্রিয়ানের কথা অনুযায়ী নিজেদের কাজে লেগে পড়লো আর আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দিলো। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে ওকে।

_____________________

আরো দুইটা দিন পার হয়ে গেলো। এর মধ্যে রিক অনিমার সাথে কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করেনি। আর স্নিগ্ধার সাথে অনিমার সম্পর্কটাও অনেক বেশি ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মুড চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার সমস্যাটা এখোনো অনিমার মধ্যে আছে।

রিক ওর রুমে বসে একমনে ভেবে চলেছে যে স্নিগ্ধা আসার পর অনিমার মধ্যের পরিবর্তন গুলো। খুব বেশি না হলেও এখন মাঝেমাঝে হালকা হাসি ফোটে ওর মুখে। একটু হলেও ভালো থাকে। আচ্ছা সত্যিই কী তাহলে ওই ভুল? ও নিজেই ইচ্ছাকৃতভাবে অনিমার জীবণ থেকে ওর খুব খুশি কেড়ে নিচ্ছে? তবে যাই হোক ও মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে যে অনিমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার ও আর করবেনা। এসব চিন্তা করতে করতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে একবার তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বলল,

— ” হ্যাঁ মামা বলো?”

কবির শেখ রাগী কন্ঠে বললেন,

— ” কী আর বলব? আমার কোনো কথা শোনো তুমি? নাকি শোনার প্রয়োজন মনে করো?”

রিক ভ্রু কুচকে বলল,

— ” কীসব বলছো মামা? ”

কবির শেখ ঝাঝালো কন্ঠে বললেন,

— ” ভুলটা কী বলেছি? তোমাকে বললাম কতোবার যে স্নিগ্ধাকে ওখানে নিয়ে যেও না। কিন্তু না তুমিতো ঐ মেয়ের প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছো তাইনা? তাই ওর ভালোর জন্যে আমার বারণ সত্যেও স্নিগ্ধাকে নিয়ে গেলে।”

রিক বিরক্ত হয়ে বলল,

— ” হয়েছে কী বলবে?”

কবির শেখ হতাশার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,

— ” ঐ স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানকে জানিয়ে দিয়েছে যে তোমারা কোন আইসল্যান্ডের কোথায় আছো?”

রিক অবাকের চরম সীমায় পৌছে বলল,

— ” হোয়াট?”

কবির শেখ বিরক্তি ঝেড়ে বললেন,

— ” এখন আর হোয়াট বলে কী হবে? যা করার তো করেই ফেলেছো। বারবার বলেছিলাম যে ঐ মেয়ের প্রেমে এতো গদগদ হয়ে যেওনা। এবার দেখলেতো আমার কথা না শুনে কী হলো? এখন পারলে আদ্রিয়ান আসার আগেই অনিমাকে ওখান থেকে সরাও। এবার অন্তত বুঝেছো তোমার খারাপের জন্যে বলিনা কিছু? তাই পারলে আমার কথাটাই শোনো।”

রিক রাগী স্হির কন্ঠে বলল,

— ” রাখছি।”

মানুষ ছোটবেলা থেকে যেরকম পরিবেশ আর পরিস্হিতে বেড়ে ওঠে স্বভাবত সে সেইরকমি তৈরী হয়, সাইকোলজি সেটাই বলে। আর কিছু ক্ষেত্রে ছোট বেলা থেকেই কিছু মানুষের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার স্বভাব থেকে যায় অনেকের। যেমন কারো কাছে নিজের মায়ের কথাই চিরন্তন সত্য মনে হয়, আবার বাবার উপদেশই সবচেয়ে সঠিক মনে হয়, নিজে থেকে একবার বিবেচনা করার ইচ্ছেই জাগেনা। রিকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেরকমি হয়েছে, ছোটবেলা থেকেই ওর মামার দ্বারা একটু বেশিই প্রভাবিত ও। যা চাইলেও হুট করে ছাড়া সম্ভব না। রিক হনহনে পায়ে অনিমার রুমে গিয়ে দেখে যে স্নিগ্ধা অনিমার সাথে বসে কথা বলছে। রিক সোজা গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে দাড় করিয়ে বলল,

— ” তুই আদ্রিয়ানকে জানিয়েছিস আমরা কোথায় আছি?”

স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকালো রিকের দিকে। ও বুঝতে পেরে গেছে যে রিক সব জেনে গেছে আর এখন মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই। তাই কাঁপা কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ বলেছি।”

রিক স্নিগ্ধার গালে জোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। অনিমা চমকে গেলো পুরো। স্নিগ্ধা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রিক দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” তোকে বিশ্বাস করাটাই আমার ভুল ছিলো।এতোবড় সাহস তোর। যাই হোক…”

বলে অনিমার কাছে যেতেই অনিমা পিছিয়ে গেলো। রিক ওর কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল,

— ” চলো এখান থেকে।”

অনিমা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

— ” আমি কোথাও যাবোনা।”

রিক রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

— ” দেখো এই মুহূর্তে মেজাজ খুব খারাপ আছে আমার। তাই আমাকে রাগীও না তোমার জন্যেই খারাপ হবে। চলো!”

অনিমা এবারেও জেদ ধরে বলল,

— ” অামি কোথাও যাবোনা। যদি পারেন তো আদ্রিয়ান আসার পর ওর সামনে দিয়ে নিয়ে যান। আমি জানি আদ্রিয়ান খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”

রিকের রাগ এবার সীমা পার হয়ে গেলো। রাগে অনিমার হাত মুচড়ে ধরে কাছে এনে চেঁচিয়ে বলল,

— ” আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান, আদ্রিয়ান। সারাক্ষণ শুধু ওর নাম যপতে থাকো তাইনা? হ্যা? কেনো বলো? কেনো? ”

অনিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল,

— ” হ্যাঁ আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যপে যাবো। কারণ আমি ওকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি।”

রিক অনিমার ভালোবাসি কথায় আরো রেগে গেলো। ও ধাক্কা দিয়ে অনিমাকে ফেলে নিজের বেল্টে হাত দিতেই স্নিগ্ধা চেঁচিয়ে বলল,

— ” নাহ রিক দা। একদম না।”

রিক গিয়ে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে রুমের বাইরে ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দরজা লক করে দিলো। স্নিগ্ধা দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল,

— ” রিক দা প্লিজ ওর কোনো দোষ নেই এখানে। প্লিজ মেরোনা ওকে।”

রিক বেল্ট খুলতে খুলতে অনিমার দিকে এগোতে এগোতে বলল,

— ” সারাদিন আদ্রিয়ান নাম যপবে তাইনা? আজকে আদ্রিয়ানের নামটাই ভুলিয়ে দেবো তোমাকে।”

অনিমা বসা অবস্হাতেই কাঁদতে কাঁদতে হালকা পিছিয়ে যেতে লাগল। কিছু বলবে সেই শক্তি নেই ওর মধ্যে। কেমন যেনো মাথা ঝিম ধরে আসছে ওর। সব ঝাপসা লাগছে। স্নিগ্ধা সমানে দরজা ধাক্কিয়ে যাচ্ছে। রিক বেল্ট দিয়ে আঘাত করতে যাবে তখনি খেয়াল করলো অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সেটা দেখে রিকের হাতের বেল্ট পরে গেলো। রিক তাড়াতাড়ি অনিমার সামনে বসে ওকে ধরে বলল,

— ” এই অনি কী হয়েছে তোমার? দেখো ত্ তুমি ভয় পেয়োনা। মারবোনা আমি তোমাকে। আই সোয়ার।”

কিন্তু অনিমার নাক দিয়ে রক্ত বেড়িয়েই যাচ্ছে। আর শরীর ছেড়ে দিচ্ছে ও । রিক তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” স্নিগ্ধু অনি..”

স্নিগ্ধাকে আজ এতোবছর পর রিক স্নিগ্ধু বলে ডেকেছে কিন্তু স্নিগ্ধার সেটা নিয়ে ভাবার সময় নেই। ও তাড়াতাড়ি ভেতর গিয়ে অনিমার অবস্হা দেখে চেচিয়ে বলল,

— ” কী করেছো তুমি ওর সাথে?”

রিক কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,

— ” আমি জ্ জানিনা ও কীভাবে, কী হ্ হয়েছে ওর? ”

স্নিগ্ধা অনিমাকে চেক করছে এরমধ্যেই অনিমা আস্তে করে চোখ বন্ধ করে ফেলল। রিকের বুকের ভেতরে ধক করে উঠল সেটা দেখে । রিক দ্রুত গিয়ে অনিমার মাথাটা কোলে নিলো। নাক থেকে বের হওয়া রক্তে অনিমার মুখ রক্তাক্ত হয়ে গেছে, রিক অনিমার গালে হাত দিয়ে ঝাকিয়ে বলল,

— ” অনি? এই অনি? ত্ ত্তাকাও? দেখো বেল্ট কিন্তু এখানেই আছে আমি রেগে গেলে কিন্তু সত্যিই মারবো। ওঠো ড্যাম ইট? আচ্ছা ফাইন তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমি আর আটকে রাখবোনা তোমাকে। যেখানে খুশি যেতে পারো তুমি। আই প্রমিস। তবুও তাকাও প্লিজ…।”

কিন্তু অনিমা কোনো রেসপন্স করছেনা। স্নিগ্ধাতো কেঁদেই দিয়েছে। আর এরমধ্যেই কেউ চিৎকার করে উঠল,

— ” অনি..”

চিৎকারটা শুনে রিক স্নিগ্ধা দুজনেই চমকে তাকালো পেছনের দিকে।

#পর্ব- ৪৭
.
অনিমাকে ওভাবে দেখে সম্পূর্ণ স্তম্ভিত হয়ে গেছে অাদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে দেখে রিক অনেকটা চমকে গেলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অনিকে ডাকতে লাগল। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে ছিলো অনিমার দিকে। যখন ওর মস্তিষ্কে এই কথাটার ধাক্কা লাগল যে অনিমা ওভাবে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে তখন আর একমুহূর্ত দেরী না করে দ্রত অনিমার কাছে হাটু ভেঙ্গে বসে রিকের কাছ থেকে ওকে নিজের কোলে নিয়ে বলল,

— ” জানপাখি? কী হয়েছে তোমার? দেখো চলে এসছি আমি। এক্ষুনি নিয়ে যাবো আমি তোমাকে। চোখ খোলোনা প্লিজ!”

এটুকু বলে অনিমাকে নিজের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান পাগলের মতো করছে। আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে কিচ্ছু খেয়াল নেই ওর। ওর সামনে রিক আছে, স্নিগ্ধা আছে সেসব নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই ওর মধ্যে। রিক একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। স্নিগ্ধা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ভাইয়া ওকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। আমি এভাবে কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ তাড়াতাড়ি করুণ।”

আদ্রিয়ান নিজেকে সামলে নিয়ে অনিমাকে কোলে নিয়ে দ্রুত চলে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। স্নিগ্ধাও পেছন পেছন দৌড়ে গেলো। রিক ওখানেই পাথরের মতো বসে আছে। কিছু একটা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে বেড়িয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান অনিমাকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলেই ওর সামনে একজন লোক এসে দাঁড়ালো। লোকটি বাঙালি। আদ্রিয়ান পাত্তা না দিয়ে নামতে গেলেই লোকটি বলল,

— ” রিক চৌধুরী বাড়িতে আছেন। আসলে একজন পেসেন্ট কে দেখতে আসতে বসেছিলেন।”

আদ্রিয়ান শেষের কথাটা শুনে থেমে গেলো। স্নিগ্ধা এসে বলল,

— ” হ্যাঁ। ভাইয়া ইনিই এখানকার বেস্ট সাইক্রাটিস্ট। ”

আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে বলল,

— ” আরে ওর নাক দিয়ে রক্ত পরছে। হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ওকে।”

তখনি রিক এসে হাফানো কন্ঠে বলল,

— ” হসপিটালে নিয়ে যেতে সময় লাগবে অনেক। ওতো সময় নেওয়া ঠিক হবেনা। রক্ত পরা বন্ধ হয়ে গেছে তারমানে খুব বেশি মারাত্বক কিছু না। আমি ডক্টরকে ফোন করেছি উনি টিম নিয়ে আসছেন। ততোক্ষণ উনি দেখুক। ওকে নিয়ে রুমে এসো।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ রিকের দিকে তাকিয়ে থেকে স্হির কন্ঠে বলল,

— ” রুমটা দেখিয়ে দাও।”

রিক মাথা নামিয়ে নিয়ে বলল,

— ” আমার সাথে এসো।”

রিক এগিয়ে গেলো আর আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে নিয়ে ওর পেছনে গেলো, সাইক্রাটিস্ট ও ওদের পেছন পেছন গেলো। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দুজনের জন্যে। এখন যেরকম পরিস্হিতি দুজনের মধ্যেতো মারামারি লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখন এদের দুজনের মূল ফোকাস শুধু অনির ওপর। আর কোনোকিছুরই খেয়াল নেই এদের মধ্যে। সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো হয়তো এমনই হয়। এসব ভেবে মুচকি হাসলো স্নিগ্ধা তারপর ও ওদের কাছে গেলো।

ডক্টর অনিমাকে চেকআপ করছে। ওর হাতে সেলাইন লাগানো। আদ্রিয়ান অনিমার পাশে ওর হাত ধরে বসে আছে। রিক পায়ের দিকটায় মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বসে আছে, চাইলে ও আর স্নিগ্ধাই চেকআপ করতে পারতো বাট কোনো মেশিন ছাড়া শুধু হাতের সাহায্যে সম্ভব ছিলোনা সেটা। আর স্নিগ্ধা ওপর পাশের কর্ণারে বসে ডক্টরকে হেল্প করছে চেকআপ করতে।আদিব আর অভ্রও চলেছে ওরা এতোক্ষণ বাইরেটাই সামাল দিচ্ছিল। প্রায় আধঘন্টা চেকআপ করার পর ডক্টর উঠে দাঁড়াতেই আদ্রিয়ান আর রিক দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

— ” এনিথিং সিরিয়াস ডক্টর।”

ডক্টর অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকালো। তারপর একটা শ্বাস নিয়ে বলল,

— ” নো..বাট ইট কুড বি। ইজ শি হ্যাজ এনি মেন্টাল প্রেশার টু মাছ? ”

স্নিগ্ধা বলে উঠল,

— ” ইয়েস ডক্টর সি হ্যাজ। বাট হোয়াটস্ দ্যা মেটার?”

ডক্টর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” একচুয়ালি সামহাউ শি হ্যাড সো মাচ প্রেসার ইন হার ব্রেইন। এন্ড দ্যাটস হোয়াইট শি হ্যাড এ স্মল হিট অন হার নার্ভ এন্ড স্টার্টেড ব্লেডিং। বাট নাও এভরিথিং ইজ ফাইন ডোন্ট ওয়ারী। আ’ম প্রেসক্রাইবিং সাম মেডিসিন। সি উইল বি অলরাইট।”

ওরা সবাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। ডক্টর ওদের বিদায় দিয়ে চলে গেলো। এরপর সেই বাঙালি সাইক্রাটিস্ট ওদের উদ্দেশ্যে বললেন,

— “মিস্টার চৌধুরীর কাছে যেটুকু শুনেছি তাতে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে উনি কোনো কারণে প্রচুরভাবে ট্রমাটাইজড আর উনি হাই পাওয়ার এর ঔষধ ও নিতেন হয়তো। ইউসিয়ালি সেই ঔষধ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলেই হঠাৎ এরকম প্রবলেম বেশি হয়।”

আদ্রিয়ান একটা শ্বাস ফেলে বললো,

— ” ইয়েস ডক্টর ঔষধ নিতো ও। আর কিছুদিন যাবত সেটা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ।”

বলেই কঠোর দৃষ্টিতে রিকের দিকে তাকালো।রিক বেশ অবাক হয়ে বলল,

— ” ঔষধ নিতো মানে? কী হয়েছিলো ওর।”

ডক্টর বললেন,

— ” হ্যাঁ। আমাকে প্লিজ শুরু থেকে সব বলুন নইলে আমি কিছূ বলতে পারছিনা।”

আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর শূরু সবটাই খুলে বললো ডক্টরকে। সবটা শুনে রিক পুরো হতভম্ব হয়ে গেলো। বেড ধরে বসে পরলো ও। ডক্টর বললেন,

— ” এমনিতেই এরকম অবস্হা তারওপর ঔষধ বন্ধ করে দিয়েছেন? আবার এতোটা মেন্টাল প্রেশার দিয়েছেন। আপনাদের ভাগ্য ভালো মেয়েটা এখনো পাগল হয়ে যায়নি। যাই হোক ঔষধগুলো কনটিনিউ করুন আর একটু খেয়াল রাখুন তাতেই হবে।”

বলে উনিও চলে গেলেন। রিক নিজের মাথা চেপে ধরে ভাবতে শুরু করলো যে কী কী করেছে ও? যেখানে আগে থেকেই মেয়েটার লাইফ এতোটা কম্প্লিকেটেড হয়ে আছে সেখানে ও গিয়ে সেই জীবণটাকে আরো কম্প্লিকেটেড করে দিয়েছে। বারবার অনিমার গায়ে হাত তোলা ওকে কষ্ট দেওয়া সব চোখে ভেসে উঠছে। হঠাৎ অর্ক অনির সাথে এরকম কিছু করেছে মনে পরতেই ওর রক ফুলে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

— ” আজ ওর শেষ দিন।”

বলে বেড়োতে নিলেই আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে আটখে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুকে জোরে একটা ধাক্কা মেরে বলল,

— ” ওকে শাস্তি দেবে তুমি? হ্যাঁ? আর তোমাকে? তোমাকে কে শাস্তি দেবে? ওদের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল তুমি? হ্যাঁ বলো? ভালোবাসার নাম করে ওর ওপর কী কী ধরণের অত্যাচার করতে সেটা নিশ্চই ভুলে যাওনি তাইনা? ওর এই অবস্হার জন্যে যেসকল মানুষ দায়ী তার মধ্যে তুমি অন্যতম। আর এখন নাটক করছো। নাটক!”

রিক কিছু না বলে দেয়াল ঘেসে বসে পড়ল ওখানেই। আদ্রিয়ান পেছন থেকে গানটা বেড় করে বলল,

— ” ওর কপালে দাগ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে এখানে এনেও ওর গায়ে হাত তুলেছো? আজ তো আমি।”

আদ্রিয়ান শুট করতে গেলেই স্নিগ্ধা এসে আটকে দিয়ে বলল,

— ” প্লিজ ভাইয়া এখন এসব কিছু করোনা। অনি অসুস্হ। প্লিজ।”

আদ্রিয়ান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে গানটা পকেটে ভরে নিলো। আর রিক একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ ওর নিজেকেই নিজের কাছে সবচেয়ে বেশি নিকৃষ্ট মানুষ মনে হচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমার কাছে গিয়ে বসলো। রিক উঠে সোজা ওর রুমে চলে গেলো। স্নিগ্ধাও রিকের পেছন পেছন গেলো। স্নিগ্ধা রিকের রুমের গিয়ে দেখে রিক ফ্লোরে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে অনিমার ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে। বিয়ারের বোতলটা খুলে চুমুক দিতে যাবে তখনি স্নিগ্ধা এসে হাত ধরে আটকে দিলো। রিক স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” যা এখান থেকে এখন।”

স্নিগ্ধা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল,

— ” এখন এতো কষ্ট পেয়ে কী হবে বলোতো? আমি তোমাকে আগেও বলেছিলাম নিজের রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে শেখো। কিন্তু তুমি তো কোনোদিন সেটা পারলেই না।”

রিক কিছু না বলে একদৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। স্নিগ্ধা আবার বলল,

— ” তুমি বলতেনা যে অনিমা কেনো এতো আদ্রিয়ান আদ্রিয়ান করে? ওনার মধ্যে এমন কী আছে যেটা তোমার মধ্যে নেই? জানো কী পার্থক্য তোমাদের? অনিমা যখন তোমাকে এভোয়েট করতো বা কথা শুনতো না তখন তুমি ওর গায়ে হাত তুলে জোর করে ওকে নিজের কথা শোনাতে বাধ্য করাতে। অথচ তোমার ভয়ে ও আদ্রিয়ান ভাইয়াক এভোয়েট করছিলো কথা শুনছিলো না। তখনও কিন্তু আদ্রিয়ান ভাইয়া জোর করেই ওকে দিয়ে নিজের কথা শুনিয়েছে। কিন্তু মারধোর করে নয়, নিজের ভালোবাসা দিয়ে। ভালোবেসেই জোর খাটাতো অনিমার ওপর। ওনার কাছে সবচেয়ে বেশি ইমপরটেন্ট ভালোবাসার মানুষের ভালো থাকা আর তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইম্পরটেন্ট ওকে নিজের কাছে রেখে দেওয়া। এটাই পার্থক্য তোমাদের মধ্যে।”

রিক কিছু না ভেবেই স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরল। স্নিগ্ধাতো পুরো শকড হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ও বুঝতে পারলো যে রিক কাঁদছে। স্নিগ্ধা আরেকবার অবাক হলো। রিক এমনই একজন যে সহজে সবার সামনে নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায়না, স্নিগ্ধাও এই প্রথম রিককে কাঁদতে দেখছে। ও কী করবে, কীভাবে রিক কে সামলাবে কিছুই জানে না ও। শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে রিকেল পিঠে হাত রাখলো।

______________________

আশিস নানা ভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। আদ্রিয়ানের না থাকায় ওর ওপর চাপটা খুব বেশি তারজন্যেই নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে পারছে ও। তবে কিছুতেই মনকে স্হির করতে পারছেনা। আরুমিতার ওপরেরেই মাইন্ড পুরো সেট হয়ে আছে ওর। অরুমিতার বোকামো, ইনোসেন্ট ফেস, বাচ্চামো সবকিছুই বারবার মনে পরছে ওর আর তারচেয়েও বেশি মনে পরছে শেষে অরুমিতার বলা কথাগুলো। বুকের ভেতরে হটাৎ করেই এক অসহ্য যন্ত্রণা হয় ওর কিন্তু এরকম কেনো হচ্ছে এমন তো হওয়ার কথা ছিলোনা।

আর এদিকে অরুমিতা বাইরে দিয়ে স্ট্রং থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রতিনিয়ত গুমরে মরে। যতই হোক প্রথম ভালোবাসা ছিলো আশিস ওর। তবে ও ঠিক করে নিয়েছে ওর যতো কষ্টই হোক আশিসকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না ও কোনোদিনও না।

______________________

অনিমা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। নাকের ভেতর জ্বালা করছে, মাথাটাও ব্যাথা করছে। ভালোভাবে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখতে পেলো আদ্রিয়ান ওর হাত ধরে বসে আছে। অনিমা অবাক হয়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। উঠে বসার চেষ্টা করতেই আদ্রিয়ান ওকে ধরে উঠিয়ে বসালো। অনিমা এখোনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

— ” কী ব্যাপার ম্যাডাম? আমাকে দেখতে কী ভুতের মতো লাগছে যে এভাবে তাকিয়ে আছো?”

এটা শোনার পর আস্তে আস্তে অনিমা বুঝতে পারলো যে সপ্ন দেখছে না সত্যিই আদ্রিয়ান ওর সামনে আছে। অনিমা ছলছলে চোখে আস্তে আস্তে অনিমার গালে হাত রাখলো। আদ্রিয়ান অনিমা হাতটা ধরে তাতে ছোট্ট করে একটা কিস করলো। অনিমা হুট করেই আদ্রিয়ান জরিয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। আদিব আর অভ্র একে ওপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। অনিমা কেঁদেই যাচ্ছে একনাখারে। আদ্রিয়ান অনিমাকে শক্ত করে নিজের সাথে জরিয়ে ধরে বলল,

— ” জানপাখি? প্লিঠ স্টপ ক্রাইং তুমি জানো আমার এটা সহ্য হয়না তবুও তুমি কাঁদবে?”.

অনিমার কান্না থামার বদলে আরো বেড়ে গেলো। আদ্রিয়ান অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা এখনতো আমি এসে গেছি তাইনা? তবুও এভাবে কাঁদবে? আমার কষ্ট হচ্ছে তো।”

অনিমা ভাঙ্গা গলায় বলল,

— ” প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে কথাও যাবেননা প্লিজ।”

আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,

— ” তোমাকে ছাড়ার জন্যে কী কষ্ট করে এতোদূর এসছি নাকি? বাঁচা ছাড়তে পারলেও তোমাকে ছাড়তে পারবোনা জানপাখি।”

ওদের দুজনকে দরজায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে দেখছে রিক। তবে ওর আজ একটুও রাগ হচ্ছে না, তবে কষ্ট হচ্ছে এক অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছে। ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে ওর। রিকের কাধ কেউ হাত রাখতেই রিক গুরে দাড়িয়ে দেখলো স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা বলল,

— ” কী ভাবছো?”

রিক অনিমা আর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,

— ” ওদেরকে দেখছি, সত্যিই খুব ভালোবাসে একে ওপরকে। আমি ই এতোদিন ওদের লাভস্টোরির ভিলেন হয়ে ছিলাম। তবে আর সবো না। আজ থেকে ওদের জীবণের কোনো বাধা হয়ে থাকবোনা আমি। ওরা যেভাবে থাকতে চায় সেবাবে থাকুক।।

স্নিগ্ধা অবাক হলো রিকের কথায়। অবাক হয়েই বলল,

— ” ভেবে বলছো তো?”

রিক মুচকি হেসে চোখের কোণের হালকা জলটা মুছে বলল,

— ” প্রথমবার মন থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভুল করবো না। আজ যখন অনির ওরকম অবস্হা হলো ঠিক তখনি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকাই সবচেয়ে বেশি ইমপর্টেন্ট আর কিছু না। ও আদ্রিয়ানের সাথে ভালো থাকবে এটাই বড় কথা। আমি নাহয় ওয়ান সাইডার লাভার হয়েই জীবণটা কাটিয়ে দেবো। এতো বছর ধরে ভালোবেসেছি ঠিকি কিন্তু ভালোবাসার আসল মানেটা আজকে বুঝেছি। আর আমি চাই ও ভালো থাকুক। ও ভালো আছে এটুকু জেনেই নিজে ভালো থাকার চেষ্টা করবো। কী করবো সবকিছুতো সবার ভাগ্যে থাকেনা। আর আমিতো নিজের দোষেই নিজের ভাগ্যকে হারিয়ে ফেলেছি।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here