#Your_psychoPart_27+28
#A_Devils_Love
#Written_by_Aruhi_khan (ছদ্মনাম)
.
.
.
ইয়াশ সামনে তাকিয়ে দেখে ডায়না ম্যাম ও পুরো ভিজে গেছে। পুরো চুল মুখের সাথে লেপ্টে আছে।
আর মুখের সব আটা ময়দা একত্রিত হয়ে
ডায়না রিয়েল ডাইনিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
রশ্নি ইয়াশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আর ইয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
ডায়না: হোয়াট দা হেল!!!!!!!!!
রশ্নি নিজের কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে নিলো।😵
ডায়না: কি করেছ দেখতে পাচ্ছো?
রশ্নি এবার ভালো করে ডায়না ম্যামকে পর্যবেক্ষণ করলো।
আর ওর মুখ থেকে হু হু করে হাসি বেরিয়ে গেল🤣
ইয়াশ গিয়ে রশ্নির মুখ চেপে ধরলো।
রশ্নি: 🤣🤣
ইয়াশ চোখ রাঙিয়ে তাকালো।
ইয়াশ: ম্যাম আপনি কিছু মনে করবে না। বাচ্চা মানুষ ভুল করে ফেলেছে😅
ডায়না ম্যাম কোনো মতে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিলো।
ডায়না: ইটস ওকে। বাই দা ওয়ে শার্টটা চেঞ্জ করে নিবেন কজ ভিজা অবস্থায়…..ইউ আর জাস্ট লুকিং মোর এন্ড মোর হট (চোখ মেরে)
রশ্নি: আমার সামনে আমার জামাইর সাথেই ফ্লার্ট করস সালি ডাইনি।
ইয়াশ রশ্নির মুখ চেপে ধরে রাখার ডায়না ম্যাম ওর কথাগুলো বুঝেনি।
ডায়না: ও কি বললো?
ইয়াশ: নাথিং নাথিং😅
ডায়না: উম…বিয়ে তো করে ফেললেন না জানিয়ে
যাক তারপরও সমস্যা নাই।
ইয়াশ: সরি?
ডায়না: না মানে…
ইয়াশ: আচ্ছা আমরা আসছি। বেশিক্ষন ভিজে থাকলে রশ্নির স্বাস কষ্ট শুরু হয় যায় সো বায়।
বলে ইয়াশ রশ্নিকে নিয়ে চলে আসলো।
রশ্নি: 😒
ইয়াশ: এত বাঁদরামো কিভাবে করো?
রশ্নি: 😒
ইয়াশ: হাংকি পাঙ্কি।
রশ্নি: আবার না😩
ইয়াশ: 😂
রশ্নি: হুহ এঙ্গরী বার্ড😏
ইয়াশ: তাই না?
ইয়াশ রশ্নির গাল চেপে ধরলো।
আর রশ্নি ইয়াশের চুল।
(ছোট বেলায় ইয়াশ রশ্নিকে মজা করে হাংকি পাংকি বলতো আর রশ্নি ইয়াশকে এঙ্গরি বার্ড
আর দুইজনই এই নাম গুলো শুনলে ক্ষেপে যায়)
তো আবার শুরু এদের যুদ্ধ।
.
পাঁচ মাস পর—-★
————————–
এই কয়েক মাসে ইয়াশ রশ্নিকে নানাভাবে খুশি করার চেষ্টা করেছে। যাতে রশ্নি ওকে একটু ভালোবাসে।
রশ্নি তো ইয়াশের প্রেমে সেদিনই পরে গিয়েছিল
যেদিন ইয়াশের বুকে ওর নাম দেখেছিল। আর ইয়াশের কেয়ারিং গুলো তো আরো পাগল করে দেয়।
কিন্তু রশ্নি ইয়াশকে এখনো ওর ফিলিংসএর ব্যাপারে জানায়নি।
অপরদিকে সেহের আর সানার সম্পর্কটা ওর ফ্যামিলি এখনো মেনে নেয় নি। সানার সাথে নিজেদের সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। এর জন্য সানা সেহেরকে দোষী বলে। যতটা পারে সেহেরের থেকে সরে থাকে।
.
ডিং ডং—★—★–★
ডোর বেল শুনে রশ্নি তাড়াতাড়ি উঠে যায়।
রশ্নি ইয়াশের জন্য গিফ্ট অর্ডার করেছে।
এটা দিয়ে আজ ইয়াশকে নিজের মনের কথা বলবে বলে।
গিফ্ট নিয়ে নিজের রুমে আসছিল আর তখন শুভ,ইয়াশ আর কাব্যকে একসাথে সোফায় বসা দেখতে পায়।
ইয়াশ দুই গালে হাত দিয়ে বসে আছে
আর কাব্য আর শুভ দুইদিকে বসে ওকে কিছু একটা নিয়ে মোটিভেট করছে।
রশ্নি: দাল মে কুছ তো ব্ল্যাক হ্যা🤨
রশ্নি কান পেতে শুনার চেষ্টা করলো।
কাব্য: ভাই তোমার এভাবে হার মানলে চলবে না।
শুভ: হ্যা তুমি আমাদের সবার বড় হয় এভাবে হেরে গেলে চলবে না।
ইয়াশ: সবার বড় হয়ে লাভ কি?
সেই তো সবচেয়ে ছোটটার পিছেই ঘুরতে হয়।
কাব্য: আরেহ আমরা আছি তো। কোনো না কোনো পথ বের করবোই।
শুভ: হ্যা রশ্নিও তোমায় ঠিক ভালোবাসবে😊
ইয়াশ: এতদিন চেষ্টা করলাম তবুও কাজ হলো না।
কাব্য: আচ্ছা তুমি ওকে ওর পছন্দের কিছু দিয়ে প্রোপোজও তো করতে পারো?
ইয়াশ: উম…বাট কি দিব?
শুভ: যা রশ্নির পছন্দ?🤔
কাব্য: নীল শাড়ি আর নীল চুরি গিফ্ট করে দেখো😍
ইয়াশ: ওহ হ্যালো! ওটা রশ্নি কোনো সাধারণ মেয়ে না।
রশ্নিকে শাড়ি গিফ্ট করলে।
ওটাকে দুই জানালার গ্রিলের সাথে বেঁধে দোলনা বানিয়ে ফেলবে। আর চুরির ছানছান শুনলে ওর
মাথা ফেটে যায়।
শুভ: 🤣
কাব্য: দেখতে হবে না বউটা কার!
ইয়াশ: এই তুই কি বললি?
কাব্য: না বলছিলাম যে নুপুর কেমন হবে?
ইয়াশ: ওটার আওয়াজও ওর পছন্দ না প্লাস
পায় কাতুকুতু লাগে।
কাব্য: তোমার বউ তুমিই সামলাও আমি গেলাম😤
বলে কাব্য উঠে চলে গেল।
ইয়াশ: 😑
শুভ: 🤣🤣
.
রশ্নিরও এদের কথাগুলো শুনে হাসি পাচ্ছে।
রশ্নি: হুম! সো মিস্টার জল্লাদ চৌধুরী আমাকে প্রপোজ করার প্ল্যান করছে।
হুহ কিন্তু তার আগে আমিই ওই জল্লাদ চৌধুরীকে প্রোপোজ করে ফেলবো😎
রশ্নি নিয়ে নিজের রুমে চলে আসছিল
কিন্তু আবারো কিছু শব্দ ওর কানে এসে বারি খেলো।
রশ্নি খেয়াল করে দেখলো।
এটা শুভার রুমের থেকে শব্দ আসছে।
ওর দাদির কন্ঠও শুনতে পাচ্ছে।
রশ্নি: এরা আবার কি নতুন শয়তানি করার প্ল্যানিং করছে শুনি তো। কিন্তু কারো কথা আড়ি পেতে শুনা ঠিক না।
হুহ ভালো কাজ কয়টাই বা করছি।😆
যাহিরা খান খুব রেগে কথা বলছেন–
মানলাম আমি এখানে উপস্থিত ছিলাম না।
কিন্তু তোমরা আমার ইচ্ছার সম্পর্কে জানতে।
সেটার কোনো মূল্য নেই?
আমি মরেও তো যেতে পারতাম
ওটা আমার শেষ ইচ্ছাও হতে পারতো।
রশ্নি খেয়াল করে দেখল
সেখানে বাড়ির সব ওল্ড সদস্যরা উপস্থিত আছে।
রাশিদ: মা আমরা…..
যাহিরা: তোমরা জানতে
আমি সেই ২১ বছর আগেই ইয়াশ আর শুভার বিয়ে ঠিক করেছিলাম।
শুভ যেদিন হয়েছিল
সেদিনই আমার ইচ্ছে হয়েছিল
আমার বড় নাতির সাথে আমার বড় নাতনির বিয়ে দিব।
তারপরও তোমরা…
নিলাসা: ওদের বিয়ের আধ বছর হতে চলেছে আর
এখন এসব কথার তো মানেই হয় না।
যাহিরা: আমি শুধু শুধু কথা গুলো বলছি না।
আর শুধু আমার ইচ্ছাই না। শুভাও তো ইয়াশকে ভালোবাসতো। ওর জন্য সুইসাইড করতে বসেছিল আমার নাত্নীটা।
রাশিদ: শুভা আমি এগুলো কি শুনছি?
শাহানা: প্লিজ আর ঢং করো না রাশিদ। তোমরা সবাই জানতে যে শুভা আর ইয়াশের বিয়ে ছোট বেলায়ই ঠিক করা আছে। আর শুভাও ওকে পছন্দ করে
কিন্তু না আমার মেয়ের ফিলিংসএর তো কোনো দামই নেই।
নিজের মেয়ে কি আকাম করতে যাচ্ছিল
তার থেকে বাঁচানোর জন্য আমার মেয়ের হবু জামাইর গলায় নিজের মেয়েকে ঝুলিয়ে দিলো ছি।
রেহেনা: মুখ সামলে কথা বলুন ভাবি। আমি আমার মেয়ের নামে আর একটাও বাজে কথা সহ্য করবো না।
নিলাসা: আর ইয়াশ রশ্নিকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করেছে।
যাহিরা: ওহ প্লিজ তোমার কি মনে হয় আমি জানি না।
রাশিদের মেয়ে কি করতে যাচ্ছিল?
আর আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না
তোমরা ওই রাস্তার মেয়েটাকে নিয়ে এত মাতামাতি করছো কেন।
রাশিদ এবার প্রচন্ড রেগে গেলো।
রাশিদ: মাআআ!! রাস্তার মেয়ে কাকে বলছেন আপনি? রশ্নি আমার মেয়ে
এই খান বংশের মেয়ে।
যাহিরা: কিপ ইওর ভয়েস ডাউন!
নিজের মেয়ে বলছো
সেখানেই বরাদ্ধ রাখো। খান বংশের সাথে জুড়তে এসো না।
কার না করে পাপের ফসল
রাস্তা থেকে তুলে এনে তুমি খান বংশের টাইটেল দিতে পারো না।
রাশিদ: আমার মেয়ের কোনো টাইটেলের প্রয়োজন নেই। ও আমার মেয়ে আর এটাই ওর পরিচয়।
রাশিদ কথা গুলো বলে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন।
রেহেনাও উঠে চলে আসলেন।
নিলাসা: আজকে আপনি যা বললেন তার পর থেকে আপনাকে নিজের মা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
যাহিরা খান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলেন।
যাহিরা: তাতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসে না।
তবে ইয়াশ যখন জানবে যে ওর বউ……
নিলাসা: জাস্ট শাট আপ।
আমার ছেলে কারো পরিচয় দেখেনা তার মন দেখে ভালোবেসেছে।
যাহিরা: দেখা যাক।
নিলাসা: এমন ও মানুষ হয় ছি!
বলে নিলাসা বেগমও চলে গেলেন।
.
শাহানা: মা আপনি তো পুরো ফাটিয়ে দিয়েছেন…
কিছু পড়ার শব্দ শুনে শুভা শাহানা বেগমের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
শাহানা: কিসের শব্দ হলো?
শুভা: কি জানি
দাঁড়াও দেখে আসছি।
ওরা একসাথে বাহিরে আসলো।
আর বাহিরে এসে রশ্নিকে দেখে চমকে গেল।
(রশ্নি একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল তাই বাকিরা ওকে দেখেনি)
রশ্নি মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।
রশ্নি: ব-ব-বড় আম্মু আমি….আমি এ-এডপ্টেড?
শুভা: ইয়াহ! ডক্টর ছোট আম্মুকে বলে দিয়েছিল যে উনি কখনো মা হতে পারবেন না। আর তাই তো দাদি আম্মু তাকে মেনে নেয় নি।
আর ছোট আব্বু তোকে রাস্তায় পরে থাকা অবস্থায় পেয়েছিল আর তখন তার মায়া হয় তাই তোকে নিজের সাথে নিজের মেয়ে করে নিয়ে আসে।
রশ্নি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।
দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।
.
বালিশ আকড়ে ধরে হিচকি তুলে কাঁদছে আর কান্নার গতিও যেন বেড়েই চলেছে। আর সাথে পুরো শরীরও থরথর করে কাঁপছে।
রশ্নি: আমি কারো পাপের ফসল?
আমি এই বাড়ির মেয়ে না? যাকে এতদিন নিজের মা বাবা ভাবতাম তারাও আমার মা বাবা না!
আর দাদি তো ঠিকই বলেছে
নীল ভাইয়া কি কোনো রাস্তার মেয়েকে নিজের বউ হিসেবে মেনে নিবে?
নীল কেন কেউই মেনে নিবে না।
রশ্নির এগুলো ভেবে আরো কান্না আসছে।
রশ্নি: না এই জীবন রাখার আর কোনো মানেই হয় না।
আমার তো মরে যাওয়া উচিৎ।
রশ্নি গিয়ে ওর ড্রয়ার থেকে ওর মার একটা শাড়ি বের করলো।
সেটাকে ফানের সাথে বেঁধে নিলো।
তারপর সেটার উপর দাঁড়ালো।
কিন্তু কি ভেবে আবার নেমে আসলো আর একটা কাগজ নিয়ে কিছু লিখা শুরু করলো।
সেটাকে স্টাডি টেবিলে রেখে দিলো।
তারপর একটা টুলে দাঁড়িয়ে নিজের গলার সাথে শাড়িটা পেঁচিয়ে নিলো।
রশ্নি: হয়তো আমি মারা গেলে শুভা আপুর সাথে নীল ভাইয়ার বিয়ে হবে। আর তাতেই সবার ভালো হবে।
হুহ বেঁচে থাকতে তো কখনো কারো ভালোর কথা ভাবিনি
তবে এবার আমি মরাতে যদি কারো ভালো হয় তাহলে নাহয় তাইই হোক। আর এমনিতেও আমার আসল সত্যি জানার পর ভাইয়া আমাকে ঘৃণাই করবে।
রশ্নি নিজের চোখের পানি মুছে নিলো।
তারপর টেবিল টাকে পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
শাহানা,শুভা আর যাহিরা বেগম দরজার ফাঁকা দিয়ে সব দেখেছে।
শাহানা: আমাদের কি ওকে থামানো উচিত না?
মানে এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না?
যাহিরা: চুপ থাকো তো শাহানা।
যা হচ্ছে হতে দাও। চুপচাপ দেখো।
শুভা: দাদি ঠিকই তো বলছে। এই অপদটা বিদায় হলেই ভালো।
হঠাৎ শুভার চোখ কিছু একটায় আটকে গেলো।
— ওয়েট!
বলে শুভা দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে একটা কাগজে কিছু লিখে রশ্নির মতোই ভাঁজ করে নিলো।
তারপর সেটাকে টেবিলের উপর রশ্নির চিঠিটার জায়গায় রেখে
রশ্নির চিঠিটা নিজের কাছে নিয়ে নিলো।
এদিকে রশ্নির দেহটা নিথর হয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলছে
।
।#Your_psycho
#A_Devils_Love
#Part_28
#Written_by_Aruhi_khan (ছদ্মনাম)
.
.
.
হসপিটালের বাহিরে ইয়াশ বসে আছে।
চোখ দুটো বার বার ভিজে যাচ্ছে
সাথে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে।
ভাবতেও পারেনি রশ্নি কখনো এমন কিছু করবে।
তার থেকেও বড় কথা
ও এমনটা কেন করলো।
ডক্টর বলেছেন।
আর একটু দেরি হলে হয়তো রশ্নিকে আর বাঁচানোই যেত না।
রশ্নি এখনো সেন্সলেস তবে বিপদমুক্ত।
হঠাৎ ইয়াশের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পড়ায় ইয়াশ মুখ তুলে তাকায়।
জোৎস্না খালাকে দেখে ইয়াশ
তাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইয়াশ: থ্যাংকস আন্টি।
জোৎস্না: কেন?
ইয়াশ: আপনি ঠিক সময় ওর রুমে না পৌঁছালে আজ হয়তো রশ্নি…..
জোৎস্না: ছি এসব কথা মুখে আনতে নাই। আমি তো খালি উসিলা। বাকিটা তো আল্লাহর ইচ্ছায় হইসে।
(নোভা আসলো)
নোভা: রশ্নিকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে তাই ওকে এখন বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।
ইয়াশ কথাটা শুনা মাত্র রশ্নির ক্যাবিনে ছুটে চলে গেল।
সারাক্ষন বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখা সেই চঞ্চল রশ্নি
এখন এভাবে চুপচাপ স্থির হয়ে পড়ে আছে।
ইয়াশের চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পরেই চলেছে।
ইয়াশ গিয়ে রশ্নির পাশে বসলো।
তারপর ওর হাতটা নিজের দুই হাতের মাঝে পুড়ে নিলো।
ইয়াশ: কেন করলে রশ্নি এমন টা? কেন?
ইয়াশ কোনো ভাবে নিজের কান্না থামাতে পারছে না।
এদিকে রশ্নির বাবার অবস্থা পুরো বেহাল।
চোখ খুলতে পারছেন না। মাথাটা শুধু ভন ভন করে ঘুরছে।
বারবার রশ্নির কাছে দৌড়ে যেতে চাচ্ছেন।
কিন্তু তার এই অবস্থায় কেউ তাকে যেতে দিচ্ছে না।
রেহেনা বেগম নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
রাশিদ: আমার মেয়ে এখন কেমন আছে?
নোভা: আঙ্কেল গুড নিউজ আছে। ডক্টর বলেছেন রশ্নি এখন বিপদমুক্ত আর আগের থেকে সুস্থ আছে
সো আমরা ওকে এখন বাসায় নিয়ে যেতে পারবো।
তুমি আর চিন্তা করো না।
নোভার কথা শুনে সবার মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠলো। শুধু ৩ জন মানুষ বাদে।
আর তারা হলো যাহিরা খান,শুভা আর শাহানা বেগম।
যাহিরা: এই বেঁচে গেল কিভাবে?
শুভা: ওই ব্রেইনলেস জোৎস্নার কারনে।
জোৎস্না বুড়িটা ওই টাইমে রশ্নির রুমে না চলে আসলে
আর আমাদের পথের কাটা সরে যেত।
যাহিরা: urgh… Disgusting!!
শুভা: তুমি চিন্তা করো না দাদিআম্মু
রশ্নির এই জীবনটাকে আমি মৃত্যুর থেকেও বেশি ভয়ংকর করে তুলব।
যাহিরা বেগম বাঁকা হাসলেন।
.
রাতে—★
রশ্নি ঘুমিয়ে আছে।
আর রাশিদ খান ওর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
বুকের ভিতর এখনো চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছেন।
খুব আদর যত্ন দিয়ে গড়া মেয়েটার হঠাৎ এই অবস্থা
সহ্য করতে পারছেন না।
(Knock knock)
ইয়াশ: আসতে পারি?
রাশিদ খান: নিজের ঘরে আসতে আবার পারমিশন লাগে নাকি?
ইয়াশ গিয়ে তার পাশে বসলো।
ইয়াশ: তুমি এখন কিছু খাও নি কেন?
রাশিদ: খিদে নেই।
ইয়াশ: এমনটা বললে চলবে না।
চলো কিছু খেয়ে নিবে।
রাশিদ: তুইও তো কিছু খাস নি।
ইয়াশ: রশ্নিকে খাইয়ে দিয়ে পরে আমি খেয়ে নিব।
ইয়াশের কথা শুনে একটু মুচকি হেসে ইয়াশের মাথায় হাত রাখলেন।
তারপর উঠে সেখান থেকে চলে গেলেন।
ইয়াশ রশ্নিকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও একটু খেয়ে নিল।
তারপর রশ্নিকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে নিলো।
.
ইয়াশ এক ধ্যানে রশ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
রাজ্যের সব মায়া যেন এই মুখটাতে এসে ভিড় জমিয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ ইয়াশের চোখ গেল টেবিলের নীচে পরে থাকা একটা ভাজ করা কাগজে।
ইয়াশ রশ্নিকে শুইয়ে দিয়ে
ওটা হাতে নিলো।
কাগজটার মধ্যে অনেক কিছুই লিখা।
চিঠিটার নীচে রশ্নির নাম লিখা আছে।
ইয়াশ বুঝতে পারলো এটা একটা সুইসাইড নোট
যা রশ্নি সুইসাইড করতে চাওয়ার আগে লিখেছিল।
হয়তো এটায় রশ্নি কেন সুইসাইড করতে চেয়েছিল সেটা লিখা আছে।
তাই ইয়াশ সিদ্ধান্ত নিলো এই লেটারটা সবার সাথে একসাথে পড়বে।
.
ইয়াশ হল রুমে সবাইকে একসাথে চিঠিটা পড়ার জন্য ডেকে আনলো।
সৌভিক: কি হয়েছে ইয়াশ এত রাতে আমাদের সবাইকে ডেকে আনলে কেন?
ইয়াশ চিঠিটার ব্যাপারে বললো।
শুভা: ইয়েস যা চাচ্ছিলাম।
শাহানা: কেন রে কি লিখেছিলি ওটাতে?
শুভা: জাস্ট দেখতে থাকো।
ইয়াশ চিঠিটা পড়া শুরু করলো—-
★★★
ডিয়ার মাম্মাম এন্ড পাপাই
আমি এখন খুব বড় একটা ডিসিশন নিতে যাচ্ছি। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
নিজের মাম্মাম,পাপা,মিষ্টি,শুভ এন্ড আমার সব ফ্রেন্ডদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি
একেবারের জন্য। আর আমার এতে কোনো আফসোসও নেই। আর তোমরাও হয়তো আমার এই ডিসিশনে খুশিই হবে। কারন তোমরা তো এটাই চেয়েছিলে। আমাকে জীবত রেখেই মেরে দিতে।
বিশ্বাস করো আমার এই জীবন মৃত্যুর থেকেও বেশি কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
তোমরা সবাই জানতে আমি নীল ভাইয়াকে ভয় পেতাম কিন্তু না তারপরও তোমরা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে
তার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিলে।
তাও আবার আমাকে ভুল বুঝে।
সেদিন আমি নাহিদকে বিয়ে করতে যাইনি
ও আমাকে জোর করে বিয়ে করছিল।
সেটা আমি তোমাদের বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছিলাম। চিৎকার করে তোমাদের বলতে চাচ্ছিলাম।
কিন্তু তোমরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করো নি।
মাম্মামের কথা তো নাহয় বাদই দিলাম। উনি আমার ছোট থেকেই দেখতে পারেন না কিন্তু বাবাই তুমিও আমাকে বিশ্বাস করো নি।
কিন্তু তোমরা জানো
আমি তারপরও সবটা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এই কথায় কথায় নীল ভাইয়ার হাতের থাপ্পড় আর সহ্য করতে পারিনি।
বিয়ে থেকে পালানোর জন্য আমাকে অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হতো।
সাথে সামান্য একটু ভুল হলেও আমার নীল ভাইয়ার হাতে মার খেতে হতো।
যেখানে আমি ছোট থেকে তোমাদের আদরের দুলালী হয়ে বড় হয়েছিলাম। আচ্ছা তোমরা আমাকে এত আদর যত্ন দিয়ে কেন বড় করেছিলে বলো তো
যে আমি সব কিছুতেই ভুল করতাম আর
একটু মারলেই কেঁদে দিতাম।
আর শুধু থাপ্পড়ই না আরো অনেক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হতো আমার।
আমি এসব আর মুখ বুজে সহ্য করতে পারছি না
আর আমি লোকটার অত্যাচার নয় ওই লোকটাকে ঘৃণা করি। আমি আর কোনো মতেই তার সাথে থাকতে পারবো না। তাই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
তোমরা ভালো থেকো এই আমিহীন পৃথিবীতে।
ইতি,
অভাগী রশ্নি।
★★★
(কিন্তু রশ্নির লিখা চিঠিতে ওর সুইসাইড করতে চাওয়ার আসল কারণটা লিখা ছিলো।
ও যে কুড়িয়ে পাওয়া এটা জেনে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে
এটা লিখা ছিলো।)
চিঠিটা পড়া মাত্র ইয়াশের হাত আলগা হয়ে আসলো।
যার ফলে চিঠিটা ওর হাত থেকে ছুটে পরে গেল।
নিলাসা বেগম এসে ঠাস করে ইয়াশের গালে চড় বসিয়ে দিল।
নিলাসা: তোর জন্য আমার মেয়েটা আত্মহত্যা করতে বসেছিল?
তুই ওকে অত্যাচার করতি? কেন রে মেয়েটা এমন কি ভুল করেছিল?
আর এত কিছুর পরও মেয়েটা সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করতো।
নিলাসা বেগম আবারও ইয়াশকে মারার জন্য হাত তুললেন কিন্তু এবার রেহেনা বেগম হাতটা ধরে ফেলল।
রেহেনা: আপনি ওকে কিছু বলবেন না প্লিজ। ভুলটা আমাদের। আমরা ওকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিলাম।
আর সত্যিই তো
মা হিসেবে আমি কখনো ওকে বুঝার চেষ্টা করি নি।
কখনো ওর মনের কথা জানার চেষ্টা করি নি। ও কি চায় সেটার মূল্য দেই নি।
আমি একজন মা হিসেবে যোগ্য না।
রেহেনা নিজের চোখের পানি
বাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে গাড়ির চাবি নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।
নিলাসা বেগম আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার আগেই রেহেনা খান বেরিয়ে যায়।
রাশিদ: আমিও নিজের মেয়েটাকে চিনলাম না?
ওর এতটা ক্লোজ হয়েও? আমি নাকি ওকে সব থেকে ভালো বুঝতাম?
তাহলে কেন তখন ওর কথা গুলো শুনলাম না?
মেয়েটা এত চিৎকার করে বলতে চাচ্ছিল তবুও আমরা ওর কথা শুনলাম না।
ইয়াশ কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
.
পরেরদিন সকালে—★
শুভা আর শাহানা বেগম একসাথে হাই ফাইভ করে আবার শয়তানি হাসি হাসতে শুরু করলেন।
শাহানা: যা দিয়েছিস না! পুরো টপ ক্লাস।
শুভা: দেখতে হবে তো নাতনি টা কার😎
শাহানা: ” মেয়েটা কার” ও বলতে পারতি🙂
শুভা: 🙄😑😒
যাহিরা: শাটআপ ইউ টু ফুলস!
আমি এটা বুঝতে পারছি না যে ইয়াশ রশ্নিকে এতদিন পড়ানোর পরেও ওর হ্যান্ড রাইটিং চিনলো না?
শুভা: ওহ দাদি ডু ইউ নো হোয়াট?
আমি যখন স্কুলএ ছিলাম
তখন সবাই আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে তাদের রেজাল্ট কার্ডে
প্যারেন্টস সিগনেচার কপি করাতো।
কজ, আমি হ্যান্ডরাইটিং কপি করাতে এক্সপার্ট ছিলাম।😎
যাহিরা: 🙄😑😐
শাহানা: আচ্ছা চল নীচে গিয়ে একটু ফ্যামিলি ড্রামা দেখে আসি।
শুভা: ইয়াহ লেটস গো।
.
এদিকে কাল রাতে যে রেহেনা আর ইয়াশ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল এখনো বাড়ি ফিরেনি।
সবাই তাদের নিয়ে বেশ চিন্তিত।
নিলাসা বেগম সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছেন।
কাব্য: ছোট মামী আর ভাই এর কিছু হয়ে নি আম্মু প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়ো না।
নিলাসা: হঠাৎ আমাদের পরিবারটার উপর এত অশান্তি কেন এসে ভর করলো বলতে পারিস?
(Ting tong– doorbell)
কাব্য: আমি দেখছি।
কাব্য গিয়ে গেটটা খুলে দিল।
মুহূর্তেই কাব্যর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
কাব্য: আম্মু!!!!! ভাই এসেছে (চিৎকার করে)
নিলাসা বেগম গিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলো।
যতই হোক নিজের সন্তান বলে কথা।
নিলাসা: কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই?
ইয়াশ কিছু না বলে ওদের সরিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
.
কিছুক্ষন পর, ফরমাল ড্রেসে নীচে নেমে এলো আর হাতে একটা ট্রলি ব্যাগ।
নিলাসা: কিরে এসব নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
ইয়াশ এবারও কিছু বললো না।
শুধু নিলাসা বেগমের দিকে একটা খাম এগিয়ে দিল।
নিলাসা বেগম খাম টা খুলে ভিতর থেকে একটা কাগজ বের করলেন।
কাগজটা পরে উনার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়া অবস্থা।
নিলাসা বেগম অবাক দৃষ্টিতে ইয়াশএর দিকে তাকালেন।
নিলাসা: কি এসব?
ইয়াশ ক্লিয়ার জবাব–
— “Divorce paper!!”
To be continued…..