#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৯
ইর্তেজা মুখ গোমড়া করে রেখেছে। ইরিনা কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করছে না। ইর্তেজা ভাত মেখে লোকমা তুলে ধরলো ইরিনার দিকে। ইরিনার চাহনি দেখে বলল- “কি হলো? হা করো।”
ইরিনা ইর্তেজার হাত সরিয়ে বলল- “তোর কি হয়েছে এটা বল। কিছুক্ষণ আগে ভালো ছিলি। এখন মন খারাপ করে রেখেছিস।”
“কিছু হয়নি আপু।”
“আমি অনেকবার বলেছি আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই।”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা ইর্তেজার হাত ধরে বলল- “তুই বলিস আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ডের সাথে শেয়ার করবি না?”
ইর্তেজা একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল- “আমি খুব খারাপ জানো?”
ইরিনা চমকে উঠল ইর্তেজার মুখে এমন কথা শুনে। আলতো করে ইর্তেজার গালে হাত রেখে বলল- “কি হয়েছে ইর্তেজা? প্লিজ আমাকে বল আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
“আপু তুমি বলতে না আমি খুব লয়াল?”
“হুম”
“একদম না, আমার মতো স্বার্থপর এই দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি আর নেই।”
“হঠাৎ এমন কথা বলছিস কেন?”
ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকাল। তার মনে হচ্ছে কেও তার গলা চেপে ধরেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল- “আমার মনে হচ্ছে আমি মাহাকে ভুলে যাচ্ছি।”
বলেই ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। ইরিনা অবাক হয়ে বলল- “এতে স্বার্থপরের কি আছে ইর্তেজা?”
“স্বার্থপরই তো, তুমি বিষয়টা বুঝতে পারছো না? আমি মাহাকে ভুলে যাচ্ছি। মেহরুন্নেসাকে ভুলে যাচ্ছি আমি।”
“তো কি হয়েছে? ২ বছর হয়ে গিয়েছে ওর চলে যাওয়ার। এখনো ওকে মনে ধরে তুই বাঁচতে চাস?”
“হ্যাঁ, কারণ ওকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
“পাগলদের মতো কথা বলিস না ইর্তেজা। যার ভালোবাসায় তুই নিজেকে বরবাদ করছিস সে এখন অন্য কারোর স্ত্রী।”
ইর্তেজার গলা কাঁপছে। খুব কষ্টে সে কান্না আটকে রেখেছে৷ ইরিনা আর কি বলবে বুঝতে পারছে না। ইর্তেজা ইরিনার দিকে তাকিয়ে বলল- “আমি ওকে ভুলতে চাই না আপু। আমি ওকে হারিয়ে বাঁচতে রাজি। কিন্তু এমন কারো প্রেমে পড়তে চাই না যাকে আমি কখনো পাবো না।”
“তুই কি বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।”
ইর্তেজা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। ইরিনার প্রশ্নের উত্তর সে কিভাবে দেবে বুঝতে পারছে না।
.
.
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে ফেলল সাগরিকা। চোখ তুলে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ কাপে চা ঢেলে পায়ের উপর পা তুলে কাপে চুমুক দিলো। দেয়ার সাথে সাথে সাগরিকার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ তারা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। সাগরিকা কাপ রেখে বলল- “আমি চিনি নিয়ে আসি।”
“আরে তুমি বসো আমি যাচ্ছি। ভুলেই গিয়েছি যে চায়ে চিনি দিতে হয়।”
শ্রাবণ দ্রুত হেটে রান্নাঘরে গেল। আজ শ্রাবণের ব্যবহার সাগরিকার বেশ ভালো লাগছে৷ এমন যদি প্রতিটা দিন হতো কতোই না ভালো কাটতো জীবন। সাগরিকা সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসলো। শ্রাবণ আসলো চিনি নিয়ে। সাগরিকা ও তার চায়ে চিনি মিলিয়ে বসলো। সাগরিকা সোজা হয়ে বসে বলল- “একটা কিছু চাই, দেবে?”
“বলে তো দেখো। তোমার জন্য সব করতে পারি।”
“হ্যাঁ পারো, তাই তো আমার কোনো কথা-ই শোনো না।”
শ্রাবণ শব্দ করে হাসলো। সাগরিকা মাথা নিচু করে বলল- “আব্বু আর নেই।”
শ্রাবণ থমকে গেল। অবাক দৃষ্টিতে সাগরিকার দিকে তাকিয়ে রইল। সাগরিকা মাথা তুলে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “আমি আর তুমি ছাড়া সূর্যের কেও নেই। ওর বয়সই কত তুমি বলো। কিভাবে একা থাকবে সে? ওকে কি আমাদের সাথে রাখা যায় না?”
“হুম, অবশেষে তোমার লোভী বাবা দুনিয়া ছেড়ে গেল। তাই তো বলি অনেকদিন ধরে কল দিয়ে বলছে না যে তার টাকা দরকার মদ খাবে।”
“মানুষটা চলে গিয়েছে এখন এমনটা না বললেই নয়?”
“আমি তো বলবোই? তার পেছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাসিয়েছি আমি এই দুই বছরে।”
সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। ঠিক এই কারণেই তার শ্রাবণকে সহ্য হয় না। মৃত মানুষকেও সে রেহাই দেয় না। শ্রাবণ চায়ের কাপ রেখে বলল- “ঠিক আছে ডেকে নাও সূর্যকে। কিন্তু ওকে বলবে অকারণে যদি আমার সাথে না লাগতে আসে।”
“তাহলে তুমিও সহ্য করা শিখে নাও। কারণ কেরাসিন আর আগুনের সম্পর্ক খুব ভয়াবহ।”
শ্রাবণ বিরক্ত হলো। সাগরিকা হেসে বলল- “আচ্ছা আমি ওকে বুঝাবো। তার আগে ওয়াদা করো ওর সাথে ভালো ব্যবহার করবে।”
“সাগরিকা আমার চেহারা দেখে কি মনে হয় আমি গুন্ডা?”
সাগরিকা এক ভ্রু উঁচু করে তাকাল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ আমতা আমতা করে বলল- “ইয়ে মানে, হ্যাঁ মানে গুন্ডা ছিলাম। মানে আমি বলছি যে..”
“হয়েছে থামো এবার। অফিস যাও নি কেন আজ?”
“তোমার সাথে সময় কাটাবো বলে।”
সাগরিকা তাকিয়ে রইল শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ মুচকি হেসে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
.
.
সাঈদ ভয়ে কাঁপছে। হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার ডাকে ডাকলো কেন বুঝতে পারছে না। সে তো ভালো মতোই ক্লাস নেয়। অফিসরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলো সাঈদ। তারপর হাসিমুখে গিয়ে পারমিশন নিয়ে ভেতরে গেল। স্যারকে সালাম দিয়ে মুখ ঘুরাতেই চমকে উঠল। জেসমিন বসে আছে সোফায়। সাঈদ ভাবছে সে কি জেসমিনের সাথে বাজে ব্যবহার করেছে কখনো? না, তার কিছুই মনে পড়ছে না। হ্যাঁ জেসমিনকে এড়িয়ে চলে। কারণ মেয়েরা বেশ চিপকু৷ প্রিন্সিপাল স্যার সাঈদকে বসতে বলল। সাঈদ চেয়ারে বসে বলল- “স্যার আমার দ্বারা কি কোনো ভুল হয়েছে।”
“আরে না না, তুমি তো খুব ভালো মতো ক্লাস করাও।”
“ধন্যবাদ স্যার”
“আসলে সাঈদ জেসমিনকে তো দেখছোই তুমি। সে আইসিটিতে খুব খারাপ।”
“হ্যাঁ স্যার, তার বুঝতে খুব সময় লাগে। কিন্তু একবার বুঝে গেলে সব পারে।”
“হ্যাঁ সেটাই, সাঈদ আমি চাচ্ছি তুমি জেসমিনকে আলাদা ভাবে আইসিটি শিখাও।”
“কিন্তু স্যার আমি তো সবাইকে কোচিং করাচ্ছি।”
“জানি, আমি বলতে চাচ্ছি তুমি কলেজের ছুটির পর আমাদের বাসায় গিয়ে জেসমিনকে আলাদা সময় দিয়ে ভালো মতো পড়া শেখাবে।”
সাঈদ বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল৷ সে যত মেয়েটার কাছ থেকে দূর যেতে চায় তত কাছে যাচ্ছে। সাঈদ জেসমিনের দিকে তাকাল। জেসমিন মোবাইলে গেমস খেলছে। প্রিন্সিপালের মেয়ে বলে এত আরাম আয়েসে বসে আছে। সাঈদ না করবে কিভাবে বুঝতে পারছে না। স্যার বললেন- “তোমার কি কোনো সমস্যা আছে? টাকার চিন্তা করো না। আমি এর জন্যও তোমাকে আলাদা টাকা দেবো।”
সাঈদ স্যারের দিকে তাকিয়ে বলল- “না স্যার, টাকার চিন্তা করছি না। আমি যদি আপনাকে আগামীকাল জানাই চলবে? আসলে আমার সময় বের করতে হবে।”
“ঠিক আছে জানিও তাহলে। সে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে৷ যদি এই সাবজেক্টে ভালো নাম্বার না পায়? আমি চাচ্ছি আমার মেয়েটা সবার থেকে ভালো করুক।”
“জি স্যার প্রত্যেক বাবা মা-ই এমনটা চান। আমি তাহলে আপনাকে আগামীকাল জানাবো।”
“ঠিক আছে”
পারমিশন নিয়ে সাঈদ অফিস-রুম থেকে বের হলো। তার সাথেই সবসময় কেন এমন হয়। এখন ইরিনার সাথে দেখা করার সময়টুকু তার কাছে থাকবে না। প্রিন্সিপাল স্যারকে যেভাবেই হোক না করতে হবে।
.
.
সাগরিকা আর শ্রাবণ পাশাপাশি হাঁটছে বাগানে৷ বৃষ্টি পড়ায় বাগান ভিজে আছে। বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে পা ভেজাতে বেশ ভালো লাগে। শ্রাবণ এখন বেশির থেকে বেশি সময় কাটাতে চায় সাগরিকার সাথে। ডাক্তার বলেছে এমন সময় রোগী ডিপ্রেসড হতে পারে৷ তাই তাকে হাসিখুশি রাখা প্রয়োজন। সাগরিকা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো- “এত পরিবর্তন কিভাবে হলে তাও মাত্র ১ দিনে।”
“কেন তোমার ভালো লাগে নি আমার পরিবর্তন দেখে?”
“অবাক হওয়া এখনো শেষ হয়নি আমার। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।”
“কেন?”
“শ্রাবণ আহমেদ রান্না করছে। শ্রাবণ আহমেদের মুখে আজ কাজ কর্মের কথা নেই। শ্রাবণ আহমেদ আমার সেবা করছে। প্লিজ শ্রাবণ নিজের আসল রূপে আসো।”
শ্রাবণ থেমে গেল। সাগরিকাও থামলো তাকে দেখে। শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে দেখে শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাগরিকা হেসে দিলো। শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বলল- “যত চেষ্টা করি তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করবো তুমি ততবার আমার রাগ ওঠাও।”
“এটাই তো আসল কথা। তোমার রাগ হয় আমার কথায়। থাক বাদ দাও। এখন ঝগড়া করতে চাই না আমি। জানি ক্ষণিকের জন্য তোমার এই পরিবর্তন। এই সুন্দর সময়টা নষ্ট করতে চাই না।”
“তোমার মনে হয় আমি এক্টিং করছি?”
“আমি এমনটা বলি নি শ্রাবণ।”
“সাগরিকা তোমার সমস্যা জানো কি? তুমি আমাকে কোনো রূপেই মেনে নিতে পারো না।”
শ্রাবণ রেগে হনহন করে চলে গেল। সাগরিকা দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা নিশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাল। বৃষ্টি পড়ার পর আকাশ বেশ সুন্দর দেখায়৷ শ্রাবণ আবার হেটে আসলো। সাগরিকা তাকে দেখে মুচকি হাসলো। কিছু বলার আগেই শ্রাবণ বলল- “আমি অফিস যাচ্ছি। তুমি তৈরী হয়ে নাও। তোমাকে সূর্যের কাছে দিয়ে আমি চলে যাব।”
সাগরিকার হাসি উড়ে গেল। কিছু বলল না। এই মানুষটা শুধরাবে না সে জানে। শ্রাবণ চলে গেল। সাগরিকা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে গেল। শ্রাবণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছে। সাগরিকা খাটে বসলো৷ শ্রাবণ রাগান্বিত কন্ঠে বলল- “তৈরী হতে বলেছিলাম।”
“যাব না আমি। ক্লান্ত লাগছে খুব।”
শ্রাবণ কিছু বলল না। দ্রুত তৈরী হয়ে চলে গেল। সাগরিকার চোখ গেল আলমারির দিকে৷ জামা সব এলোমেলো হয়ে আছে। সাগরিকা লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এগিয়ে গেল আলমারি গুছাতে।
.
.
আজ অতিরিক্ত সিগারেটের নেশা লাগছে ইর্তেজার। ছাদে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে সে। বুকের জ্বালা সিগারেটের ধোঁয়া বানিয়ে বের করছে সে৷ হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল তার৷ পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে শ্রাবণ কল করছে। রিসিভ করে কানে ধরলো- “আসসালামু আলাইকুম বস।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, ইর্তেজা এখনই অফিস আসো।”
“সব ঠিক আছে তো?”
“এত প্রশ্ন করো না। তারাতাড়ি আসো।”
“জি”
ইর্তেজা কল কেটে ছাদ থেকে নামলো। ঝর্ণাকে ইরিনার সাথে থাকতে বলে বাসা থেকে বেরিয়ে পরলো। অফিস বাসা থেকে দূর৷ একটা রিকশা নিয়ে রওয়ানা দিলো। অফিস পৌঁছে শ্রাবণের কেবিনে গেল। শ্রাবণ পকেটে হাত দিয়ে জানালার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। ইর্তেজা এগিয়ে গিয়ে বলল- “জি বস বলুন।”
শ্রাবণ পেছনে ফিরলো। শ্রাবণের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ইর্তেজা চিন্তিত হলো।
“বস আপনি ঠিক আছেন তো?”
“একটা কথা জানানো ছিলো তোমাকে।”
“জি বস বলুন।”
“বসো আগে।”
ইর্তেজা চেয়ার টেনে বসলো। শ্রাবণও বসে লম্বা নিশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। ইর্তেজার চিন্তা বাড়ছে। হঠাৎ মাথায় আসলো সাগরিকার কিছু হয়নি তো?
“বস, ম্যাম ঠিক আছে তো?”
শ্রাবণ মাথা তুলে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “হুম ও ঠিক আছে। ইর্তেজা মনোযোগ দিয়ে শুনো। তুমি জানো আমার ব্যবসায় অনেক লস হচ্ছে। আমি একদিকে সাগরিকার মন জয় করার চেষ্টায় আছি আর একদিকে ব্যবসা সামলাচ্ছি। সেদিন ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগায় আমি আরো ডুবে যাচ্ছি।”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। শ্রাবণ যদি জানে সেদিন আগুন লাগার পেছনে ইর্তেজার হাত আছে। তাকে মেরেই ফেলবে। শ্রাবণ আবার বলল- “আমি অবৈধ ব্যবসা করি এটা জানলে কেও ফ্যাক্টরি গুলো কিনতে চাইবে না। আমি চাই তুমি যেভাবেই হোক আমার ৪ টা ফ্যাক্টরি বিক্রি করিয়ে দাও।”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “হয়ে যাবে বস। কিন্তু আপনি কি করবেন এর পর?”
“খোঁটা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। সাগরিকা যেমন শ্রাবণ আহমেদ চায় আমি তেমন শ্রাবণ আহমেদ হয়ে দেখাবো। সে চায় আমি আমার সব অবৈধ কাজ বন্ধ করি। ঠিক আছে তা-ই হবে। যাতে এরপর থেকে আমার ব্যবহার দেখে ওর মনে না হয় আমি নাটক করছি।”
বলেই শ্রাবণ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো।
“জানো আমি ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমি তো না করছি না ইর্তেজা। আমি জানি আমি অনেক খারাপ। কিন্তু আমার কী ভালোবাসার অধিকার নেই? হ্যাঁ আমি অহংকার করি। আমার রাগ হয় সাগরিকার চোখে যখন নিজের প্রতি ভালোবাসা খুঁজে না পাই।”
“বস, দোষ আপনারই। আপনি ম্যামের মন জেতার চেষ্টা করেন নি। বরং তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন। তার বাবাকে টাকা দিয়েছেন। ম্যাম মনে করে আপনি তাকে কিনে নিয়েছেন। একটা সাধারণ জিনিসের মতো মানুষকে কিনে নেয়া বিষয়টা কেমন দেখায় আপনিই বলুন।”
“তো কি করতাম আমি? আর আমার একা দোষ ছিল না। সাগরিকা আমাকে ধোঁকা দিয়েছিল। ঠিক এই কারণে আমি রাস্তা খুঁজে না পেয়ে তার বাবাকে ব্যবহার করেছি। ওর বয়ফ্রেন্ডকে মেরে….”
শ্রাবণ থমকে গেল কথাটা বলে। ইর্তেজা শ্রাবণের কথার মানে বুঝলো না। শ্রাবণ চিন্তায় পরলো। এখন ইর্তেজা প্রশ্ন করলে? যেমনটা চিন্তা করলো তেমনটাই হলো।
“ম্যাম আপনাকে ধোঁকা দিয়েছিল আবার বয়ফ্রেন্ডকে মেরে মানে? বস কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”
.
.
দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। ইরিনা বসে নিউজপেপার পড়ছিল। ঝর্ণা গিয়ে দরজা খুলে চমকে উঠে বলল- “আপনে হেনে কেন আইছেন? যান এহনই।”
ইরিনা ভ্রু উঁচু বলল- “কে এসেছে আর তাকে তাড়াচ্ছো কেন?”
ঝর্ণাকে ঠেলে একটা পুরুষ ভেতরে প্রবেশ করলো। ইরিনা তাকে দেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। ঝর্ণা এগিয়ে এসে বলল- “যান আপনে এহানতে।”
“একদম চুপ, আমি তোমার সাথে কথা বলতে আসি নি।”
মানুষটার ধমক শুনে ঝর্ণা চুপসে গেল। ইরিনা রাগী কন্ঠে বলল- “আবার কেন এসেছেন আপনি? আমার জীবন বরবাদ করে শান্তি পান নি? না-কি খবর পেয়ে গিয়েছেন আমি সুস্থ হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে।”
মানুষটা হাঁটু গেড়ে বসে বলল- “শান্ত হও, আমি যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
“আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না ডক্টর হাসিব। ইর্তেজা জানে না আপনি আমার উল্টা পাল্টা চিকিৎসা করায় আমি প্যারালাইজড হয়েছি। জানলে এখনই মাটিতে পুঁতে ফেলবে।”
“হ্যাঁ ফেলবেই তো। তোমার ভাই গুন্ডা হয়ে গিয়েছে।”
ইরিনা হাসিবের কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ । নাহলে ভুলে যাব আপনি কে।”
“তার আগে নিজের ভাইকে সামলাও। ক্রিমিনাল শ্রাবণ আহমেদের সাথে ও কী করছে জিজ্ঞেস করো গিয়ে।”
ইরিনা হাসিবের কলার ছেড়ে দিলো। হাসিব নিজের কলার ঠিক করে বলল- “দেখো ইরিনা, তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলে। হ্যাঁ আমার আর আমার সিনিয়রদের দ্বারা ভুল হয়েছে। আমরা তোমার ভুল চিকিৎসা করেছি। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার এত বড়ো ক্ষতি হবে বুঝতে পারি নি। তুমি আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ভেঙেছো মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমি সবসময় তোমাকে ভালো বান্ধবী ও ইর্তেজাকে ছোটো ভাই মনে করেছি। ইর্তেজাকে আমি ১ বার ২ বার না পুরো ৫ বার দেখেছি শ্রাবণ আহমেদের সাথে। তার গাড়িতে দেখেছি। তার বাড়িতে, অফিসে ঢুকতে দেখেছি। শুধু তাই না গত পরশুদিন হসপিটালেও দেখেছি শ্রাবণ আহমেদের সাথে।”
“এতে কি প্রমাণ হয় আমার ভাই ক্রিমিনাল হয়ে গিয়েছে? আর তোমার কাছেই বা কি প্রমাণ আছে যে তুমি সত্যি বলছো?”
“তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করলে আমার কিছু করার নেই। ইর্তেজা আসলে জিজ্ঞেস করে নিও।”
“অনেক হয়েছে, আমার বাসা থেকে বের হও।”
হাসিব ইরিনার হাত মুঠোবন্দি করে বলল- “আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানের কসম খেয়ে বলছি আমি মিথ্যে বলছি না। ইর্তেজাকে থামাও প্লিজ।”
ইরিনা তাকিয়ে রইল হাসিবের দিকে। তখনই দরজা দিয়ে সাঈদ প্রবেশ করলো। হাসিমুখে প্রবেশ করলেও এমন দৃশ্য দেখে বুকে এক ধাক্কা খেলো। ইরিনার পাশের লোকটাকে সে চিনে না। কিন্তু হাতধরা দেখে মনে হচ্ছে তারা একে অপরকে চিনে। ঝর্ণা সাঈদকে দেখে বলল- “আপনে আইসেন আমি যায়া চা বানাই।”
ইরিনা ঝর্ণার কথা তাকাল। সাঈদকে দেখে থমকে গেল। হাসিবও তাকাল সাঈদের দিকে৷ ঝর্ণা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই সাঈদ বলল- “না আমি চা খাবো না। ইর্তেজার সাথে দেখা করতে আসছিলাম। হয় তো ভুল সময় এসে পড়েছি। পরে আসবো নি।”
সাঈদ আর এক মুহুর্ত দাঁড়াল না। দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। পরিস্থিতি হঠাৎ অস্বাভাবিক হয়ে উঠল। সাঈদের ব্যবহার দেখে সবাই কনফিউজ। হাসিব সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল- “এই ছেলেটা কে ছিল?”
“ইর্তেজার বন্ধু”
“ও এমনভাবে চলে গেল কেন?”
“তা তো জানি না।”
“আমার কেন মনে হলো আমাদের একসাথে হাতধরা দেখে ও চলে গেল।”
ইরিনা চমকে উঠল হাসিবের কথা শুনে।
.
.
ইর্তেজা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। শ্রাবণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইর্তেজা বলল- “আপনি কি বলছেন এসব? মানে সেদিন আপনি আমাকে যা যা বলেছেন সব মিথ্যে ছিল।”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ইর্তেজা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শ্রাবণ আবার বলল-
“সাগরিকা জানলে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি কি করবো ইর্তেজা? না পারছি সত্য বলতে না পারছি মিথ্যে লুকাতে।”
ইর্তেজা শ্রাবণের সামনে এসে বলল- “আপনি এখন কি করতে চাচ্ছেন?”
“২ বছর ধরে যা করে আসছি। সাগরিকাকে সত্য বলা যাবে না। ইর্তেজা তুমি আমাকে সাহায্য করবে সব অবৈধ কাজ বন্ধ করতে।”
“বস আমি সব করতে পারি আপনার জন্য। বলুন কি করতে হবে?”
“একটা জমিন কিনতে চাই। কিন্তু যার থেকে কিনতে চাই সে দেবে না।”
“তাহলে অন্য জমিন কিনে নিন।”
“না আমার ওটাই লাগবে। সেই লোকটা আমাকে বলেছে আমার মতো ক্রিমিনালের কাছে বিক্রি করবে না। অথচ সে অন্যান্য বিজনেসম্যানদের কাছে যাচ্ছে।”
“তো বস, এখন কি করবেন?”
“জোর করে সেই জমিন কিনতে হবে।”
“কিভাবে?”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “তুমি ভেবে নাও আমার সাহায্য করবে কি-না।”
“ভেবে নিয়েছি বলুন আমাকে কি করতে হবে।”
“কিডন্যাপ”
চলবে……