#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১২+১৩

0
457

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ১২+১৩
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
মিস্টার রঞ্জিত কোনো উত্তর দিলেন না। তবে বুদ্ধিটা মন্দ লাগেনি তার। উনি জুস খেতে খেতে ভাবলেন,ঠিকি তো বিষধর সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেললে মজা আছে নাকি? বিষধর সাপের বিষদাঁত ভেঙ্গে তাকে নিজের মতো করে নাচানোতেই তো আসল মজধা। কথাটা ভেবেই আপন মনে শয়তানী হাসি দিলেন মিস্টার রঞ্জিত।
_______

আজকে রাতে আবারো বর্ষণ শুরু হয়েছে, তবে ভারী বর্ষণ না, গুড়ি গুড়ি এর চেয়ে একটুখানি বেশি আর মধ্যমের চেয়ে একটুখানি কম । বাজ পরছে না এখোনো। । রাতের বৃষ্টির টুপুর টুপুর শব্দ, তারওপর বৃষ্টিভেজা ঠান্ডা বাতাসের সাথে হালকা হালকা বৃষ্টির ঝাপটা, বর্ষার রাতে এই মনমুগ্ধকর পরিবেশের প্রায়ই দেখা মেলে। এমন সময় কেউ পছন্দ করে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমাতে, আর কেউ পছন্দ করে জানালা সামনে বা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে বর্ষণের সেই রাতকে উপভোগ করতে। অনিমা এই দুই কাতারের মধ্যেই পরে, যখনি বাজ পরে তখন সে কম্বল মুরি দিয়ে ঘুমাতেই ভালোবাসে আর যখন কমগতির হালকা বৃষ্টি থাকে তখন সে দ্বিতীয় কাজটাই করে। তাই এখন ব্যালকনিতে চেয়ার নিয়ে বসে কফি খেতে খেতে বৃষ্টি দেখছে আর নানা জল্পনা কল্পনা করে চলেছে।
আর অপরদিকে আদ্রিয়ানও ব্যালকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে। আদ্রিয়ান কিন্তু দ্বিতীয় কাতারেই পরে, বাইরে বৃষ্টি হলে ঘুমিয়ে থাকার কথা ভাবতেই পারেনা সে। অনিমার চেহারাটা বারবার মনে পরছে তার। ভাগ্যিস সেদিন ঐ লোকগুলো এট্যাক করেছিলো আর ও কিছু না ভেবে ঐ ফ্লাটেই ঢুকেছিলো, তাইতো ও ওর প্রাণভোমরাটাকে পেয়েছে। ওর বাচার তো দুটোই কারণ ছিলো এক ওর গান দুই হলো… কিন্তু এই মেয়েটা এসে সবকিছু বদলে দিলো, ওকে বাচার নতুন এবং প্রধান একটা কারণ দিয়ে দিলো। আচ্ছা কী করছে এখন ওর জানপাখি? ঘুমিয়ে গেছে নাকি বৃষ্টি দেখছে? ফোন করবে একটা? এতক্ষণ যাবত নিজের মনে এসব আওরে নিয়ে ফোনটা হাতে নিলো আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ ভেবে কল করেই দিলো।
নিজের ভাবনায় মগ্ন অনিমা ফোনের আওয়াজ পেয়ে ব্যালকনি থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফোনটা নিয়ে দেখে আদ্রিয়ানের কল। একটু অবাক হলো ওও, তারপর ব্যালকনির চেয়ারে বসে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল
— “হ্যালো?” — “কেমন আছো?”
— ” ভালো, আপনি?”
— ” বেশ ভালো, কী করছো?”
— “এইতো ব্যালকনিতে বসে আছি।”
আদ্রিয়ান ছোট্ট করে বলল
— “ওহ।”
অনিমা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। অাদ্রিয়ান নিজেই বলল
— ” আচ্ছা তুমি এতো রুড কেনো বলোতো? নিজে থেকেও তো মাঝে মাঝে একটা ফোন করতে পারো?”
অনিমা কী বলবে বুঝতে পারছেনা। এইরকম প্রশ্নের কী উত্তর দেওয়া যায় সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা ও। তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান হালকা হেসে দিয়ে বলল
— “উত্তর না থাকলে চুপ করে থাকাটা কী তোমাকে অভ্যাস?”
— “তো উত্তর না থাকলে আর কী করা যায়?”
— “ওই টপিকেই অন্য কিছু বলতেই পারতে।”
অনিমা একটু অবাক হলো, অন্য কী বলবে? তাই কৌতুহলি কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো
— ” লাইক?”
— ” লাইক আমার ঐ প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারতে ‘ঠিকাছে এর পর থেকে ফোন করব’।”
অনিমা হেসে দিলো, সত্যিই ছেলেটা অদ্ভুত আর তার চেয়েও অদ্ভূত ওর কথাবার্তা। অনিমা কথার টপিক পালটে বলল
— “আপনি কী করছেন?”
— “আমিও ব্যালকনিতেই আছি তবে বসে না দাড়িয়ে।”
— ” ওহ”
— “তোমার সাথে আবার মিট করতে ইচ্ছে করছে।”
অনিমা চমকে গেলো সাথে একটু অবাক ও হলো। কী চাইছে টা কী এই ছেলে? কী চলছে আদ্রিয়ানের মনে? অনিমা যেটা ভাবছে সেটা কী সম্ভব আদোও? অনিমা এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান বলল
— “কীহলো? কী ভাবছো?”
অনিমা হকচকিয়ে বলল
— “নাহ ক্ কিছু না।”
আদ্রিয়ান অনিমার এমন কান্ডে হেসে দিলো। হাসতে হাসতেই বলল
— ” আচ্ছা ঠিকাছে, অফিস টাইম শেষ কখন তোমাদের?”
— ” এমনিতে রাত আট টায় শেষ হয় তবে কাজ থাকলে আরো রাত হয়। ”
কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মুড একটু অফ হয়ে গেলো, ও মনে মনে ভেবে রেখেছিলো কালকে দেখা করবে অনির সাথে কিন্তু রাত আটটায় পর অফিস শেষ হলেতো সেটা সম্ভব নয়। তাই একটু মন খারাপ নিয়ে নিচু কন্ঠে বলল
— “ওহ”
অনিমা একটু ইতস্তত করে বলল
— ” কিন্তু কালকে দুপুরের পরে আর কাজ নেই। সকালে শুধু একটা কলেজের যেতে হবে ছাত্ররা মানববন্ধন করেছে সেই নিউস এর জন্যে। ওটা করতে করতে দুপুর হয়ে যাবে তারপর ফ্রি আছি।”
কথাটা শুনে আদ্রিয়ানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। যাক তাহলে কালকে তার প্রেয়সীকে কাছ থেকে দেখতে পাবে সে। তাই খুশি খুশি কন্ঠেই বলল
— ” অবব্ দেন ঐ কলেজের নাম আর এড্রেসটা মেজেস করে দাও। আমি ওখান থেকে তোমাকে পিক করে নেবো?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল
— “পিক করবেন?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উত্তর দিলো
— ” হ্যা। ”
— ” বাট..”
অনিমাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে আদ্রিয়ান বলল
— “নো বাট নো কিন্তু। আমি কাল আসছি সো স্কুটি নিয়ে বেরিয়ো না তীব্রকে বলো তোমায় নিয়ে যেতে।”
অনিমা নিজেও চায় যে আদ্রিয়ান আসুক কিন্তু তবুও আদ্রিয়ানকে জ্বালানোর জন্যে একটু দুষ্টুমি করে বলল
— “আরে আপনি আসলেই তো হবেনা আমি যেতে চাই কী না সেটা শুনবেন না?”
আদ্রিয়ান এবার একটু ধমকের সুরে বলল
— “আমার যেটুকু শোনার দরকার শুনে নিয়েছি। আমি পারমিশন চাইনি তোমার, কালকে আমি আসছি। আর রইলো তুমি যেতে চাওয়া কী না সেই প্রশ্ন? যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে আসবো গট ইট?”
বলেই ফোনটা কেটে দিলো আদ্রিয়ান। অনিমা বেশ অবাক হলো হঠাৎ এভাবে রেগে গেলো কেনো? আর কী বলছিলো যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে যাবে? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? যা খুশি করুক, শুধুই ধমকালো ব্যাটা খবিশ। বলেই মুখ ফুলিয়ে এড্রেস মেসেজ করে গিয়ে শুয়ে পরল অনিমা।
এদিকে আদ্রিয়ান ফোন কাটার পর বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বিড়বিড় করে নিজেই নিজেকে বলল
— “কুল আদ্রিয়ান কুল। কী করছিস কী তুই? কন্ট্রল ইউর সেলফ, কন্ট্রল। তোর এই রূপ ওর জন্যে না একদমি না।”
লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করলো আদ্রিয়ান তারপর বলল
— “ও কী রাগ করেছে? সরি বলতে হবে।”
ফোনটা হাতে নিয়ে কল করতে গিয়েও থেমে গেলো তারপর আপন মনেই বলল
— ” থাক এখন আর ফোনটা করার দরকার নেই কালকে সরাসরি সরি বলে দেবো।”
ফোনটা রেখে রেলিং ধরে দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভাবল কদিন আগে অবধি মেয়েটাকে চিনতো না সে, কিন্তু এখন ওর সবটা জুরেই অনিমার বসবাস। সত্যিই নিয়তি খুব জটিল একটা ছোট্ট ঘটনা মুহূর্তেই সবকিছু বদলে দেয়। গিটার হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে টুংটাং সুর তুলতে তুলতে চোখ বন্ধ করে অনিমার কথা ভাবতে লাগল ও।
________

তীব্র গাড়ি নিয়ে অনিমার ফ্লাটের সামনে ওয়েট করছে। পাঁচ মিনিটের মাথায় অনিমা দ্রুতপদে এসে গাড়িতে উঠে বসে পরল। তীব্র গাড়ি স্টার্ড দিতে দিতে বলল
— “কী ব্যাপার বলতো? আজ আমাকে নিতে আসতে বললি?”
অনিমা সিটবেল্ট বাধতে বাধতে বলল
— ” আদ্রিয়ান আসবে আজকে।”
এটা শুনে তীব্র প্রথমে একটু অবাক হলো তারপর মুচকি হেসে বলল
— ” ওয়াহ ভাই। ভালোই তো চলছে তোদের। তা ভাইয়া থেকে জিজু কবে হচ্ছে?”
অনিমা বিরক্ত হয়ে তাকালো তীব্রর দিকে তারপর বিরক্তি নিয়ে বলল
— “তোরা কেনো এসব ফালতু মজা নিস বলতো?”
তীব্র হেসে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
— ” ফালতু না কী সেটাতো পরেই দেখা যাবে।”
অনিমা কিছু বললোনা কিছুক্ষণ পর কিছু একটা ভেবে বলল
— ” বাই দা ওয়ে অরু কোথায়?”
— ” ওর বাড়িতে পূজো আছে আজ তাই ছুটি নিয়েছে।”
অনিমা খানিকটা অবাক হয়ে বলল
— “প্রতিবারতো আমাদের নিয়ে যায়, এবার কী হলো?”
তীব্র হেসে দিয়ে বলল
— “কারণ এবার ওর দিদা এসছে।”
— ” হ্যা তো? ”
— ” আমরা মুসলিম এতে অরুর বাবা মায়ের প্রবলেম না থাকলেও ওর দিদার ব্যাপক প্রবলেম। এবার বুঝলি নাকি আরো কিছু বলতে হবে?”
— ” হুম বুঝলাম। আমরা গেলে বুড়ি ক্যাটক্যাট করবে তাই ডাকেনি, তাইতো?”
— “হুমম”।
এরপর দুজনেই হেসে দিলো।
________

সারারাত ক্লাবে বন্ধুদের সাথে পার্টি করে সকাল আটটায় বাড়িতে এলো রিক। মিস্টার রঞ্জিত সোফায় বসে কফি খেতে খেতে পেপার দেখছিলেন আর তার পাশেই কবির শেখ বসে কফি খাচ্ছেন। ছেলেকে দেখে মিস্টার রঞ্জিত একটা ছোট্ট শ্বাস নিলেন প্রায়ই সারারাত বাইরে কাটিয়ে আসে ওও। এসব দেখতে দেখতে এখন অভ্যস্ত উনি। রিক ভেতরে যেতে নিলেই মিস্টার রঞ্জিত গম্ভীর কন্ঠে বললেন
— “শুনে যাও।”
রিক ভ্রু কুচকে তাকালো, এখন ও পুরো মাতাল না হলেও নেশাটা পুরোপুরি কাটেনি। তাই চোখ ঝাপটা দিয়ে ভাঙা গলায় বলল
— “বলো।”
মিস্টার রঞ্জিত চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
— ” ঐ মেয়েটার একটা ছবি দিয়ে যেও।”
রিকে একটু অবাক হয়ে বলল
— ” ওর ছবি দিয়ে কী করবে?”
— ” ওকে খুজতে লোক লাগাবো।”
রিক একটু চুপ থেকে রাগী গলায় বলল
— ” তারমানে এতোদিন খোজো নি তুমি ওকে?”
মিস্টার রঞ্জিত হকচকিয়ে গেলেন। আমতা আমতা করে বললেন
— ” অব্ আসলে ”
রিক তার বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
— ” স্টপ ড্যাড, কোনো এক্সকিউস এর দরকার নেই। আমার ধারণাটাই সত্যি ছিলো, খোজইনি তুমি ওকে?
— ” এখন খুজবো তো।”
— “আর খোজার দরকার নেই তোমার আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি ওলরেডি। তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো।”
এটুকু বলে ভেতরে যেতে নিয়েও থেমে গেলো তারপর চেচিয়ে বলল
— ” মম আমি এখন ঘুমোবো আমার খিদে পেলে নিজেই খাবার চাইবো। সো ডাকাডাকি করে কেউ যেনো আমাকে ডিসটার্ব না করে।”
বলেই হনহন করে চলে গেলো রিক। আর মিস্টার রঞ্জিত রাগান্বিত গলায় বলল
— “ছেলেটা দিন দিন বেশি বেপোরোয়া হয়ে যাচ্ছে। ”
মিসেস লিমা হাত মুছতে মুছতে এসে বললেন
— ” ছেলেতো তোমারই তাইনা? তুমি ওর চেয়ে কোন অংশে ভালো? ডক্টর বলেছে বলে মদ খাওয়াটা কমিয়ে দিয়েছো, এছাড়া আর পার্থক্য কী?”
মিস্টার রঞ্জিত দাতে দাত চেপে বললেন
— “বেশি কথা না বলে চুপচাপ ব্রেকফাস্ট সার্ভ করো।”
মিসেস লিমা চলে গেলেও মিস্টার রঞ্জিত গভীরভাবে ভাবছেন। সত্যিই ছেলের লাগামটা আরো আগেই ধরা উচিত ছিলো ওনার এখন আর কিছু করার নেই ছেলে যে টোটালি তার হাতের বাইরে চলে গেছে সেটা বুঝেছেন উনি।
________

নিউস সুট শেষ করে অনিমা কলেজ গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে। তীব্রর কাজ ছিলো তাই চলে গেছে। এরমধ্যেই আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো ওর সামনে। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে বুঝতে পারলো এটা আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো, আজকেও ক্যাপ আর সানগ্লাস এর জন্যে সহজে ওকে কেউ চিনবেনা। আদ্রিয়ান দ্রুতপদে এসে অনিমার হাত ধরে বলল
— “তাড়াতাড়ি চলো কেউ চিনে ফেললে ফেসে যাবো। গার্ড আনিনি আমি”
বলেই অনিমার হাত ধরে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। দুজনেই চুপ করে আছে, তবে আড়চোখে দুজন দুজনকে দেখে চলেছে। আধ ঘন্টা পর একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামালো আদ্রিয়ান, ওখানে ওর বুক করা প্রাইভেট রুমে নিয়ে গেলো অনিমাকে। তবে এই দীর্ঘ সময় দুজনেই চুপ ছিলো। আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কী খাবে?”
অনিমা নিচু কন্ঠে বললে
— ” আপনি যা ওর্ডার করেন।”
— “সিউর?”
— “ইয়াহ।”
আদ্রিয়ান খাবার ওর্ডার করে দিলো। অনিমা একধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো জানি খুব আনইজি লাগছে তার, আর আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে একধ্যানে দেখে চলেছে অনিমাকে, ঐ মুখের দিকে সারাজীবণ তাকিয়ে থাকলেও যেনো ক্লান্ত হবেনা সে।
________

রিক খাটে উপোর হয়ে এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে তবে ঘুমোচ্ছেনা ঘুম ভেঙ্গে গেছে একটু আগেই এখন শুধু শুয়ে আছে। গভীরভাবে ভাবছে কিছু কী আছে ঐ একটা মেয়ের মধ্যে যে ওর না থাকা ওকে এতো পোড়াচ্ছে? পিঠে কেউ হাত রাখতেই পেছন ঘুরে তাকালো রিক। তাকিয়ে কবির শেখ কে দেখে উঠে বসে চোখ ডলে বলল
— “বসো।”
কবির শেখ টি- টেবিল থেকে খাবার রিকের দিকে বাড়িয়ে বলল
— “আগে এটা খেয়ে নাও।”
রিক বিরক্ত হয়ে বলল
— ” খিদে নেই আমার মামা।”
কবির শেখ রিকের কাধে হাত রেখে বললেন
— “লোক লাগিয়েছো তো পেয়ে যাবে ওকে। নিজের এমন অযত্ন করলে হবে?”
রিক এবার রাগী গলায় বলল
— “ড্যাড এটা কেনো করল মামা? কেনো খোজেনি ওকে? এটা জেনেও যে আই ডেসপারেটলি ওয়ান্ট হার।”
— ” আচ্ছা বাবাই এসব বাদ দাও আগে খেয়ে নাও। ”
রিক খাবারটা ঠেলে সরিয়ে বলল
— ” পারছিনা মামা পারছিনা বাদ দিতে। ওও কতোদিন ধরে নেই আমার কাছে। এতোদিনে ওকে যদি কেউ বিয়ে নেয়? কিংবা ও যদি কাউকে ভালোবেসে ফেলে?”
— ” তাতে কী যার কাছেই থাক তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে আসবে? সিম্পল!”
— ” নাহ মামা তুমি বুঝছোনা। আমি বারণ করার পরেও কলেজের অনুষ্ঠানে একদিন ও হালকা সেজে গেছিলো, আর ছেলেরাও ওকে দেখে ফিদা হচ্ছিল। তার শাস্তি হিসেবে আমি ওর মুখে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিলাম, আমায় পায়ে ধরে অবধি ক্ষমা চেয়েছিলো তবুও মাফ করিনি আমি, দুই দিন অবধি মুখ লাল হয়ে ছিলো ওর জানো? আর সেই জায়গায় ওকে অন্যকেউ টাচ করবে মানতে পারবোনা আমি সেটা। কিছুতেই না। যদি কেউ সেটা করে তাহলে তার শেষ দিন ঘনিয়ে এসছে, আর ওই মেয়েকে কী করবো সেটা ভাবতেও পারবেনা কেউ।”
বলেই উঠে হনহন করে চলে গেলো ওয়াসরুমে আর কবির শেখ ওর যাবার দিকে তাকিয়ে খানিক হেসে বললেন
— ” কী আছে ঐ মেয়ের কপালে কে জানে? আর যদি প্রেমে পরে থাকে তাহলে সেই ছেলের অবস্হা তো…তবে যাই হোক তাতে আমার কী?
________

খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে আদ্রিয়ান আর অনিমা। আদ্রিয়ান এবার অনিমার দিকে ইশারা করে বলল
— ” শুরু করো।”
অনিমা শুরু করার পর আদ্রিয়ানও শুরু করল। খাওয়ার সময়ও দুজন কোনো কথা বলেনি। খাওয়া শেষে আদ্রিয়ান টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল
— ” চলো ”
— ” এখন কোথায়? ”
— ” ছাদে।”
অনিমা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান এর দিকে আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওর হাত ধরে ওকে ছাদে নিয়ে গেলো। ছাদে গিয়ে অনিমা অবাক হয়ে গেলো সত্যিই খুব সুন্দর পরিবেশটা, এই ছাদ থেকে আশপাশটা দেখতে অসাধারণ লাগছে। আদ্রিয়ান পকেটে হাত ঢুকিয়ে সাইডে দাড়িয়ে বলল
— ” পছন্দ হয়েছে?”
অনিমা চারপাশটা দেখতে দেখতে বলল
— ” ভীষণ”
— ” চলো সাইডে গিয়ে বসি?”
— ” চলুন”
আদ্রিয়ান আর অনিমা ছাদের পাশে গিয়ে বসলো তবে পা ঝুলিয়ে বসে নি হাটু ভেঙ্গে বসেছে দুজন। বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থেকে পরিবেশটা ফিল করছে, হালকা বাতাসে অনিমার চুলগুলো হালকা উড়ছে। নিরবতা ভেঙ্গে আদ্রিয়ান বলল
— ” অনি? ”
অনিমা অন্য ধ্যানে মগ্ন ছিলো আদ্রিয়ানের ডাকে হুস আসায় হকচকিয়ে বলে
— ” হুম? ”
— ” কালকের জন্যে সরি, আসলে জানিনা কেনো একটু রেগে গেছিলাম। সো সরি ফর মাই বিহেভিয়ার।”
অনিমা দাত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে অবাক হয়ে বলল
— ” আপনি কীসের কথা বলছেন?”
আদ্রিয়ান পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো, এরমধ্যেই ভূলে গেছে? যাক ভালোই হলো ব্যাপারটা ও ততোটাও মনে নেয়নি।
— ” কী হলো বলুন? ”
অনিমার ডাকে আদ্রিয়ানের হুস এলো নিজেকে সামলে বলল
— ” ন্ নাথিং ”
— ” ওহ”
বলে অনিমা আবারো চারপাশটা দেখায় ব্যাস্ত হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান বলল
— “একটা কথা বলবো?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” বলুন?”
— ” তুমি সাজোনা কেনো?”
নিমেষেই অনির মুখটা কালো হয়ে গেলো মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচু গলায় বলল
— “এমনি।”
অনিমা ছলছলে চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, পুরোনো কথা মনে খুব আঘাত করছে। আদ্রিয়ান খানিকক্ষণ চুপ থাকলো তারপর অনিমার হাত ধরে নিজর দুই হাতের মুঠোয় আনলো। অনিমা একটু অবাক হলেও তাকালো না । আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” অনি? লুক এট মি?”
অনিমা তবুও মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার গালে হাত রেখে বলল
— ” তাকাও।”
অনিমা এবার আদ্রিয়ানের দিকে তাকালো সাথে সাথেই ওর চোখে জমে থাকা পানি গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ান অনিমার চোখের পানি আলতো হাতে মুছতে মুছতে বলল
— ” একজন মানুষের জীবনে খারাপ কিছুদিন আসতেই পারে তাই বলে সেটা ধরে সারাজীবণ বসে থাকাটা বোকামী। কারো জন্যে তুমি নিজের জীবণ কেনো বদলাবে? জীবণটা তোমার আর সেটাকে সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব ও শুধুই তোমার। বুঝলে? ”
অনিমার চোখ দিয়ে আবারো অশ্রু গড়িয়ে পরল। আদ্রিয়ানের কথাগুলো আজ ওর আব্বুর কথা মনে করিয়ে দিলো। ওর আব্বুও ওকে এভাবেই বোঝাতো। আদ্রিয়ান আবারো বলল
— বেশি না চোখে হালকা কাজল পরে দেখো চোখগুলো আরো মায়াবী লাগবে।
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে দিলো। আজ সে তার আবেগকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা, খুব কান্না পাচ্ছে, তাই আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। এই কান্না সুখের নাকি কষ্টের সেটা বলা মুসকিল, তবে কেদে নিজেকে হালকা করছে। অনিমা ওর কাধে মাথা রাখায় আদ্রিয়ান অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে, তবে কাদতে বারণ করছেনা কিছু সময় কাঁদা উচিত তাই নিজেও এক হাতে জরিয়ে নিলো ওর প্রাণভোমরাকে।

#পর্ব- ১৩
.
অনিমা কিছু না বলে আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে দিলো। আজ সে তার আবেগকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা, খুব কান্না পাচ্ছে, তাই আদ্রিয়ানের কাধে মাথা রেখে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে সে। এই কান্না সুখের নাকি কষ্টের আ বলা মুসকিল, তবে কেদে নিজেকে হালকা করছে। অনিমা ওর কাধে মাথা রাখায় আদ্রিয়ান অদ্ভুত এক শান্তি অনুভব করছে, তবে কাদতে বারণ করছেনা কিছু সময় কাঁদা উচিত তাই নিজেও এক হাতে জরিয়ে নিলো ওর প্রাণভোমরাকে।
অনিমা অনেক্ষণ যাবত কেদেই চলেছে তবে নিঃশব্দে। আদ্রিয়ান এতোক্ষণ কিছু না বললেও এবার আর অনিমার কান্না সহ্য হচ্ছেনা ওর। অনেকক্ষণ ধরে কাদছে মেয়েটা নিরবে কাদলেও কেপে কেপে উঠছে বারবার। আদ্রিয়ান এবার অনিমার মাথাটা ওর কাধ থেকে সরিয়ে দিয়ে সোজা করিয়ে বসিয়ে ওর দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি ভালোভাবে মুছে দিয়ে বলল
— “ব্যাস অনেক হয়েছে নাও স্টপ ক্রাইং।”
অনিমা নাক টেনে একবার আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকালো। তারপরই ওর মনে পরলো ও এতোক্ষণ কী করছিলো, বুঝতে পেরেই তাড়তাড়ি আদ্রিয়ানের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসে চোখ নামিয়ে নিলো, আর মনে মনে নিজেই নিজেকে বকতে লাগল। কীভাবে আদ্রিয়ানের এতো কাছে গেলো ওও? আদ্রিয়ান নিশ্চই ওকে একটা গায়ে পরা মেয়ে ভাবছে। এসব ভাবতে ভাবতে নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে অনিমা। অনিমাকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ান নিজেই একটু এগিয়ে এসে অনিমার সাথে লেগে বসল। অনিমা একপলক আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “তুমি আমার দিকে তাকাতে এতো লজ্জা পাও কেনো বলোতো?”
আদ্রিয়ানের এই কথাটায় অনিমা আরো বেশি লজ্জা পেলো। অনিমা যখনি আদ্রিয়ানের দিকে তাকায় তখনি আদ্রিয়ানকে ওর দিকে এমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে, আর সেই দৃষ্টি দেখে ও ভীষণ অসস্তিতে পরে যায়, সাথে লজ্জাও পায়। কিন্তু সে কথা মুখ ফুটে কীকরে বলবে আদ্রিয়ানকে। তাই মাথা নিচু করে আছে। আদ্রিয়ান অনিমার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তাই অনিমার দিকে সুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ তারপর আবারো অনিমার হাত ধরল। এই স্পর্শটা অনিমাকে অনেকটা নাড়িয়ে দিলো, এরআগেও আদ্রিয়ান ওকে ছুয়েছে কিন্তু এই স্পর্শটায় অন্যকিছু ছিলো, এক অদ্ভুত অনুভূতি মিশ্রিত আছে যেটা অনিমার সারা শরীরে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমার হাতের দিকে তাকিয়েই বলল
—- “প্রত্যেকটা সম্পর্ক মুজবুত হবার জন্যে সেই সম্পর্কের সাথে আরেকটা সম্পর্ক জুড়ে রাখতে হয় সেটা কী জানো?”
অনিমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান অনিমার হাত আরেকটু শক্ত করে ধরে বলল
— “বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যেকোনো সম্পর্কে যদি বন্ধুত্বের সম্পর্কটাও মিশে থাকেনা তাহলে সেই সম্পর্কটা খুব বেশিই দৃঢ় হয় সেটা বাবা-মা আর সন্তানের হোক, শিক্ষক ছাত্রের হোক, ভাই বোনের হোক, বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের হোক কিংবা স্বামী স্ত্রীর। এতে করে একে ওপরকে বোঝা যায়, একজন আরেকজনের সাথে সব শেয়ার করতে পারে, একে ওপরকে আগলে রাখতে পারে। তবে হ্যা বন্ধত্বের সম্পর্ক থাকলেও আসল সম্পর্কটা মাথায় রাখতে হবে যেমন বাবা মা বাবা মাই হয়, ভাই-বোন ভাই বোনই হয়, স্বামী স্ত্রী স্বামী স্ত্রীই হয়, এই সব সম্পর্কের কিছু আলাদা আলাদা সীমাবদ্ধতা থাকে তাই বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করে সেই সীমা পেরোনো উচিত না, সেই সীমার মধ্যে থেকেই বন্ধু হওয়া উচিত। শুধু বন্ধু শুধু বন্ধুই হয় তারা সব সীমার উর্ধ্বে।”
অনিমা মুচকি হেসে বললো
— ” যে সম্পর্কের এতো ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে সব সম্পর্ককে এতো ভালো মূল্য জানে সে নিজেরই পরিবারের থেকে আলাদা আছে?”
আদ্রিয়ান মলিন হেসে বলল
— ” আমিতো ড্যাডের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কই করত চেয়েছিলাম কিন্তু ড্যাড হয়তো শুধু বাবা হয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করছিলেন।”
অনিমা কিছু বললো না। আদ্রিয়ানেও চুপ করে রইলো। অনিমা বুঝতে পরলো হয়তো আদ্রিয়ানের মন খারাপ হয়ে গেছে, হয়তো পরিবারের সবার কথা মনে পরেছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
— ” অনি ভবিষ্যতে আমাদের সম্পর্কটা কোন দিকে যাবে আমি জানিনা কিন্তু আমাদের মধ্যে যেকোনো সম্পর্ক শুরু হোক তার আগে আমি চাই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হোক। তবে শুধু বন্ধু না আমাদের বন্ধুত্বেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে, কেনো সেটা আপাদত জিজ্ঞেস করোনা, সময় এলে নিজেই বলব। সো হবে আমার বন্ধু?”
অনিমা পুরো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ওকে বন্ধু হতে বলছে? আর কোন সম্পর্ক শুরুর কথা বলছে আদ্রিয়ান? বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্ক শুরু করতে চায় ও? অনিমা ওর অবাকের রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই আদ্রিয়ান বলল
— ” কী হলো হবেনা? ”
অনিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে আদ্রিয়ানের ওর যেই হাত ধরে আছে তার ওপর দিকে হাত রেখে মুচকি হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করলো হ্যা হবে। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে হুট করেই জরিয়ে ধরল অনিমাকে, অনিমা তো পুরো জমে গেছে, হার্টবিট থেমে গেছে মনে হয়, নিশ্বাস ও ভারী হয়ে আসছে। আদ্রিয়ান শক্ত করে জরিয়ে ধরে আছে ওকে, কিছুক্ষণ অবাক হয়ে থাকার পর অনিমার মধ্যেও এক অনুভূতি কাজ করতে শুরু করলো, আদ্রিয়ান ওকে জরিয়ে ধরাতে বেশ শান্তি লাগতে শুরু করলো ওর, ভালোলাগতে শুরু করলো। ওও নিজের অজান্তেই মুচকি হেসে আদ্রিয়ানের পিঠে আলতো করে হাত রাখল।
________

আরো দুটো দিন কেটে গেছে এভাবেই, ঐ দিনের পর আদ্রিয়ানের সাথে অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে অনিমা। এইদুইদিন আর দেখা করেনি ওরা তবে ফোনে কথা হয়েছে যদিও অনিমা এখনো নিজে থেকে ফোন করেনি, আদ্রিয়ানই করে। অনিমা অফিস থেকে ফিরেই তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে, আদ্রিয়ান পাঁচ মিনিট যাবত নিচে ওয়েট করছে। অফিসে কাজ করছিলো হঠাৎ করেই আদ্রিয়ান মেসেজ করেছে অফিস থেকে ফিরে রেডি হয়ে থাকার জন্যে, কিন্তু কেনো? সেটা এতোবার জিজ্ঞেস করার পরেও বলেনি। বারণ করবে তার‍ও উপায় নেই, কারণ না গেলে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়েছে তাকে, বেচারি আর কী করব? নীল কুর্তি আর কালো জিন্স পরে চুলটা সাইড সিথি করে আচড়ে নিলো। আয়নার সামনের থেকে সরে যেতে নিয়েও আদ্রিয়ান এর বলা কথাগুলো মনে পরতেই আরেকবার আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবলো সত্যিই কী একটু সাজলে ভালো লাগবে ওকে? কিছুক্ষণ ভেবে অরুমিতার গিফ্ট করা মেকাপ সেট থেকে কাজল টা নিতেই ওর রিকের করা টর্চার গুলোর কথা মনে পরলো, কী নির্মমভাবে মুখে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিলো, সেই যন্ত্রণার কথা মনে পরলেও রুহ কেপে ওঠে ওর। নিজেকে সামলে কাজলটা রেখে চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। আদ্রিয়ানতো ঠিকি বলেছে খারাপ কিছু অতীতের জন্যে নিজের বর্তমান কেনো নষ্ট করবে ও? জীবনটা ওর আর ওর জীবনটা ও নিজের মতো করেই বাচবে। এসব ভেবে নিজেকে সামলে কাজলটা নিয়ে ভাবতে লাগল। হঠাৎ পেছন থেকে আদ্রিয়ান বলে উঠলো
— “কী ভাবছো?”
অনিমা একটু চমকে পেছনে তাকিয়ে বলল
— ” আপনি? ”
— ” তোমার আসতে লেট হচ্ছিলো তাই দেখতে আসলাম কী করছো।”
— ” ওহ।”
আদ্রিয়ান অনিমাকে একবার স্কান করে বলল
— ” তুমিতো রেডিই আছো তাহলে চলো?”
— ” হুম।”
অনিমা কাজলটা রাখতেই আদ্রিয়ানের চোখ পড়ল সেদিকে, অনিমা ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়তে গেলেই আদ্রিয়ান বলল
— “ওয়েট।”
অনিমা থেমে গিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান কাজলটা হাতে নিয়ে ক্যাপ খুলে অনিমার সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর অনিমার গালে এক হাত রাখল, অনিমা তো পুরো শকড হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে আদ্রিয়ান আলতো হাতে অনিমার দু চোখেই হালকা করে কাজল পরিয়ে দিলো। অনিমা এখোনো অবাক হয়েই তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বক্স থেকে নুড কালার একটা লিপস্টিক নিয়ে অনিমার ঠোটে হালকা ছুইয়ে দিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়েই সুন্দরভাবে পুরো ঠোটে মিশিয়ে দিলো। অনিমার শরীরে জেনো কয়েকশ ভোল্টের শক লাগল আদ্রিয়ান ওর ঠোট স্পর্শ করাতে। আদ্রিয়ান অনিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে ভ্রু নাচালো, এতে অনিমার ধ্যান ভাঙলো, সাথে সাথেই নিজেকে সামলে চোখ নামিয়ে নিলো, আদ্রিয়ান অনিমাকে ধরে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে বলল
—- ” নিজেই নিজেকে দেখো এবার। ”
অনিমা আয়নার দিকে তাকালো আদ্রিয়ান ওর দুই বাহুতে হাত রেখে ওর পিঠ ঘেসে দাড়িয়ে আছে, অনিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” আমাকে দেখতে মিরোর লাগবেনা এমনিই দেখতে পাবে পালিয়ে যাচ্ছিনা, আপাদত নিজেকে দেখো।”
আদ্রিয়ানের কথায় অনিমা বেশ লজ্জা পেলো। লোকটা এমন কেনো? শুধু শুধুই একটা অসস্তিকর অবস্হায় ফেলে দেয় ওকে। অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল
— “দেখো নিজেকে।”
অনিমা আস্তে আস্তে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। সত্যিই এটুকু সাজেই একটু অন্যরকম লাগছে ওকে, কিছুক্ষণ নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো ওও। আদ্রিয়ান আয়নায় তাকিয়েই বলল
— “তুমি এতো শর্ট কেনো?”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে আদ্রিয়ানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলল
—- “আমি ৫’৩” ওকে?”
আদ্রিয়ান অনিমার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়েই বলল
— “তাতে কী? দেখো তোমার মাথাটা আমার কাধের নিচে এসে পরে। তো তুমিতো শর্টই তাইনা?”
অনিমা একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল
— ” হুহ আমার হাইট ঠিকিই আছে এভারেজের চেয়ে এক ইঞ্চি বেশি, বাট আপনার টাই ঠিক নেই এভারেজের চেয়ে অনেক বেশি।”
আদ্রিয়ান অনির বাহু ছেড়ে বলল
— “হ্যা এখন তো এসবই বলবে লিলিপুট একটা।”
অনিমা দুই কোমরে হাত দিয়ে বলল
— ” আম লিলিপুট?”
আদ্রিয়ান হাত ভাজ করে মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বলল
— “লিলিপুটই তো।”
অনিমা রেগেমেগে বলল
— “অাপনি কী হ্যা? তালগাছ একটা।”
অাদ্রিয়ান অবাক হয়ে বলল
— ” তালগাছ?”
— “জ্বী। আমি যদি লিলিপুট হই তো আপনি তালগাছই।”
আদ্রিয়ান একটু অবাক হলো,এইকয়দিনে অনিমাকে কখন এতো চঞ্চলভাবে কথা বলতে দেখেনি। অনিমার এইরূপ দেখে ও খুশিও হলো যাক ও ওর কথা রাখতে পারছে, অনিমার মধ্যে লুকিয়ে থাকা চঞ্চল মেয়েটাকে বের করতে পারছে আসতে আসতে, এসব ভেবে আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” আচ্ছা মহারাণী চলুন এবার।”
— ” হুম।”
অনিমা নিজেও অবাক, কতোদিন পর কারো সাথে এভাবে কথা বলল ও নিজেই জানেনা। এরপর দুজনে মিলেই বেড়িয়ে পরলো। গাড়িতে উঠে আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতেই অনিমা বলল
— ” যাচ্ছি কোথায়?”
আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়েই গাড়ি চালাতে চালাতে বলল
— “জানিনা।”
অনিমা আবাক হয়ে বলল
— “মানে?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” লং ড্রাইভে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি জানা নেই। যেদিকে যেতে ইচ্ছে করবে সেদিকেই যাবো।”
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অনিমা হেসে দিয়ে বলল
— ” আপনি সত্যিই একটা পাগল।”
— ” আই নো।”
অনিমা মনে মনে ভাবছে একসময় এমন পাগলামী তো ওও করতো। মাঝরাতে আব্বুকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে লং ড্রাইভে যাওয়া আইসক্রিম খাওয়া। কিন্তু এখন নিজেকেও কেমন হারিয়ে ফেলেছে, ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। বেশ দুই ঘন্টা ড্রাইভ করার পর আদ্রিয়ান বলল
— ” আইসক্রীম খাবে?”
অনিমা ভাবছে লং ড্রাইভে এসে আইসক্রীম খাওয়াতো ওর অভ্যাস ছিলো, কিন্তু আদ্রিয়ানের মাথায় কীকরে এটা আসলো? শুধুই কাকতলীয়? অনিমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আদ্রিয়ান গাড়ি থামালো এক আইসক্রীম পার্লারের সামনে তারপর অনিমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। অবাক করা বিষয় গোটা পার্লারে ওরা ছাড়া আর কোনো কাস্টোমার নেই। আদ্রিয়ান যেতেই একটা লোক উঠে এসে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
— ” আরে স্যার আপনি? এসে গেছেন? আপনার কথামতো সব রেডি করে রেখেছি।”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— “গুড। একটা চকলেট আইসক্রীম, আর একটা ভ্যানিলা।”
— ” ওকে স্যার।”
আদ্রিয়ান অনিমার হাত ধরেই ওকে নিয়ে একটা টেবিলে বসল। অনিমাতো কখন থেকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে দিকে। অনিমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলল
— ” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”
— ” এখানে আর কোনো কাস্টোমার নেই কেনো?”
আদ্রিয়ান দুইহাত এককরে এক হাতের আঙ্গুলের মধ্যে আরেক হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে বলল
— ” আজ রাতের জন্যে পুরোটা বুক করেছি।”
অনিমা তো আরেকদফা অবাক হলো, এইটুকু সময়ের জন্যে গোটা রাত? তবুও নিজেকে সামলে বলল
— ” আপনি কীকরে জানলেন আমি চকলেট আইসক্রীম পছন্দ করি?”
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” সিম্পল! তুমি চকলেট পছন্দ করো, আর যে চকলেট এতো পছন্দ করে সে চকলেট আইসক্রীম তো পছন্দ করবেই।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই একজন লোক এসে আইসক্রীম দিলো টেবিলে তারপর আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল
— ” স্যার আমি আপনার সব গান শুনি, খুব বড় ভক্ত আমি আপনার, একটা সেলফি নিতে পারি প্লিজ?”
আদ্রিয়ান উঠে দাড়িয়ে হেসে বলল
— ” সিউর। ”
ছেলেটার সাথে সেলফি তুলার পর, দুজনে আইসক্রীম খেয়ে কিছুক্ষণ গাড়ি করে ঘুরলাম। ফ্লাটের সামনে গাড়ি থামানোর পর আমি নামতে গেলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে বলল
— ” এইযে ম্যাডাম সাজতে বলেছি বলে যে সেজেগুজে স্টাইল করে ঘুরে বেরাবেন সেটা কিন্তু হবে না। আজ ঘুরতে যাচ্ছি তাই একটু লিপস্টিক দিতে দিয়েছি। রেগুলার সাজবে না কিন্তু, তবে হ্যা কাজলটা রেগুলার দিও, এরবেশি সাজার পারমিশন দেই নি আমি।”
অনিমা এতোক্ষণ হেবলার মতো তাকিয়ে আদ্রিয়ানের কথা শুনছিলো লাস্ট কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে বলল
— ” পারমিশন?”
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
— ” ইয়েস পারমিশন।”
অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
— ” যদি না মানি?”
আদ্রিয়ান এবারের খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো
— ” কীকরে মানাতে হয় সেটা আমি জানি। এখন বাই।”
বলে অনিমার হাত ছেড়ে দিলো অনিমা নামতেই ওকে হাত নেড়ে চলে গেলো আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো সাথে ভালোও লাগলো আদ্রিয়ানের ওর প্রতি এই অধিকারবোধ দেখে। অন্য একজনও তো ওর ওপর অধিকার খাটাতো, আদ্রিয়ানও খাটাচ্ছে কিন্তু দুজনের অধিকার খাটানোর পদ্ধতিটা কতোটা ভিন্ন। একজন ওকে নিজের সম্পত্তি মনে করে আরেকজন… আরেকজন কী? কী মনে করে আদ্রিয়ান আমাকে? ওও কী রিকের মতো ওকে নিজের সম্পত্তি মনে করবে? যার সাথে যা খুশি করা যায়। এসব ভাবতে ভাবতেই ফ্লাটে ঢুকলো অনিমা।
________

বারে বসে নিজের মতো করে আলাদা এক জায়গায় ড্রিংক করে চলেছে রিক। ওর বন্ধুরা একটু দূরেই গার্লফ্রেন্ডস বা অন্য মেয়েদের সাথে ডান্স করছে। বেশ কয়েকজন স্টাইলিস্ট মেয়ে এসে ডান্স করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে কিন্তু রিক ইগনোর করে গেছে, এসবের প্রতি এইমুহূর্তে কোনো ইন্টারেস্ট নেই ওর। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে রিকের কাধে হাত রেখে বলল
— “হাই হানি? লেটস হ্যাভ আ ডান্স?”
রিক একটু বিরক্তি নিয়ে হাতটা সরিয়ে বলল
— ” নট ইন্টারেস্টেড।”
মেয়েটি নাছোড়বান্দা। ও রিকে সামনে এসে এক হাত কাধে আর আরেক হাত গালে দিয়ে বলল
— ” হোয়াই বেবি? কাম অন? লেটস ইনজয়।”
রিক ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে রাগী গলায় বলল
— ” আই সেইড নো। এন্ড ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি এগেইন।”
কিন্তু মেয়েটি বেহায়ার মতো এটেনশন পেতে রিকের গালে কিস করে দিলো রিক সাথে সাথেই মেয়েটাকে সর্বশক্তি দিয়ে একটা চড় মেরে দিলো। এতো জোরে মেরেছে যে মেয়েটা ফ্লোরে পরে গেলো। সাথে সাথেই সব মিউসিক থেমে গেলো চারপাশ ঠান্ডা হয়ে গেলো। রিকের বন্ধুরা ছুটে এসে বলল
— ” কী হয়েছে?”
রিক দাত করমর তাকিয়ে চিৎকার করে বলল
— “এই ডাসবিনটাকে সরা আমার সামনে থেকে। এইসব চিপ মেয়েদের সাহস কীকরে হয় রিক চৌধুরীকে কিস করার?”
মেয়েটা উঠে জান বাচিয়ে পালালো। রিক এখোনো রাগে ফুসছে। একটা চেয়ারে বসে সরাসরি বোতলে চুমুক দিতে লাগল। ঐ মেয়েটার গলা কেটে দিতে ইচ্ছে করছিলো ওর। যেখানে দুই বছর অনিমাকে নিজের আয়ত্তে রেখেও ওকে ঐরকম উদ্দেশ্যে ছোয় পর্যন্ত নি সেখানে এই মেয়েটা এসব ভাবে কোন সাহসে। ওর বন্ধুরা ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। ওরাও অবাক যে ছেলের তিন বছর আগেও প্রতিদিন আলাদা আলাদা মেয়ে লাগত এখন সে কোনো মেয়েকে সহ্যই করতে পারেনা? এটাও সম্ভব।
________

অন্ধকার একটা রুমে বসে দাবা কোট সামনে নিয়ে দুইহাত থুতনির নিচে রেখে একদৃষ্টিতে প্রতিটা গুটি দেখছে, আর খুব গভীরভাবে কিছু ভেবে চলেছে আদ্রিয়ান। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বলল
— “স্যার আসবো?”
আদ্রিয়ান দাবার গুটির দিকে তাকিয়েই বললেন
— “এসো অভ্র”
অভ্র হলো আদ্রিয়ানের পার্সোনাল এসিস্টেন, আদ্রিয়ানের ব্যাক্তিগত প্রফেশনাল সব কাজেই সাহায্য করে ও। অভ্র ভেতরে এসে বলল
— “স্যার ম্যামের সম্পর্কে যা যা ইনফরমেশন চেয়েছেন সব এনেছি।”
আদ্রিয়ান এবারেও গুটির দিকে তাকিয়ে বলল
—- “শুরু করো।”
—- ” স্যার ম্যাম লালবাগ থাকতেন ওনার বাবার সাথে, ওনার মা জন্মের পরেই মারা যান। ওনি যখন এইচ এস সি এক্সাম শেষ করেন তার কিছুমাস পরেই কোনো এক কারণে ওনার বাবা সুইসাইড করেন কিন্তু কারণটা আজও কেউ জানেনা।”
এটুকু বলে অভ্র থেমে যায় আদ্রিয়ান বলল
— “বলতে থাকো।”
— ” এরপর থেকে উনি ওনার মামা বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু চার বছর পর কোনো এক কারণে উনি ওখান থেকে পালিয়ে আসে। যদিও ওনার মামা মামি ছড়িয়েছেন যে উনি কারো সাথে পালিয়ে গেছেন।”
এটা শুনে আদ্রিয়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। যার অর্থ অভ্র বুঝলোনা। আদ্রিয়ান অভ্রর দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো
— “ওর বাবার নাম কী?”
— ” হাসান কোতয়াল।”
আদ্রিয়ান চমকে গিয়ে তাকালো অভ্রর দিকে, অবাক হয়ে বলল
— ” চিফ রিপোর্টার হাসান কোতয়াল?
— ” জ্বী স্যার।”
আদ্রিয়ান আবারো জিজ্ঞেস করল
— ” আর ইউ সিউর?”
— ” ইয়েস স্যার।”
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাপা গলায় বলল
— ” অব্ ইউ ক্যান গো।”
অভ্র চলে গেলো আর আদ্রিয়ান মাথা নিচু হাত মুঠো করে বসে আছে। চোখ দুটো ছলছল করছে, তবে মুখে হালকা হাসি আছে। কোনোরকমে নিজেকে সামলে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
— ” ইয়েস। আই ওয়াজ রাইট। আমার কোনো ভূল হয়নি। এটলাস্ট আই হ্যাভ ফাউন্ড ইউ।”
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here