#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ২২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
অনিমা চমকে তাকালো দরজার দিকে, রিক খুলে ফেলেছে দরজাটা, তারপর ও ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা ধরতে গেলো, কিন্তু ফোনটা হাতে নেওয়ার সাথে সাথেই অনিমার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটা থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড়টায় অনিমা ছিটকে ফ্লোরে পরে গেলো, আর হাত থেকে ছিট কে ফোনটাও একটু দূরে পরে গেলো। অনিমা তবুও মাথা তুলে ফোনটা ধরতে যাবে তার তখনই রিক ওর পা দিয়ে অনিমার হাত পিসে ধরল। অনিমা করুণ দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে তারপর ফোনের দিকে তাকালো। স্ক্রিণে আদ্রিয়ানের নামটি স্পষ্ট ফুটে উঠছে।
আর এদিকে আদ্রিয়ান চলতি গানটা শেষ করে ফোনটা বের করে অনিমার এতোগুলো কল দেখেই ও টেনশনে পরে গেলো। অনিমা এমনিতেই ওকে নিজে থেকে ফোন করতে লজ্জা পায়, আর করলেও খুব দরকার ছাড়া ফোন করেনা। সেই জায়গায় এতোগুলো কল দেখে ও সাথেসাথে ওখানেই শো এবোট করে দিয়ে অনিমাকে বারবার কল করছে কিন্তু অনিমা না ধরাতে ও আরো টেনশনে পরে গেলো। হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে সোজা বেড়িয়ে পরলো অনিমার ফ্লাটের উদ্দেশ্যে। এক হাতে ড্রাইড করছে, আরেকহাতে বারবার কল করে যাচ্ছে কিন্তু ওপাশ থেকে রিসিভ করছে না। মেয়েটার কোনো বিপদ হলো না তো? ফোনটা কেনো ধরছেনা? সমস্যা কী ওর? যদি গিয়ে দেখে ইচ্চে করে ফোন ধরেনি ঠাটিয়ে একটা চর মারবে। কিন্তু যদি কোনো বিপদ হয় তাহলে? ও পারবেতো ঠিক সময় পৌছাতে? এসব ভেবে ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ানের, টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। বার বার বিরবির করে একটা কথাই বলছে
— ” পিক আপ দা ফোন ড্যাম ইট।”
রিক অনিমার হাত পা দিয়ে এতো জোরে পিসে ধরেছে যে ওর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। রিক ওর হাত পা দিয়ে পিসে ধরেই হাটু ভেঙ্গে বসলো ওর সামনে। তারপর ফ্লোর থেকে ফোনটা তুলে স্ক্রিণে তাকিয়ে আদ্রিয়ানের নামটা দেখে দেখে রিকের রাগ কয়েকগুন বেড়ে গেলো, আর সেই রাগটা ঝারলো অনিমার হাতের ওপর। পা দিয়ে আরো জোরে পিসে ধরল। অনিমা চোখ খিচে মৃদু চিৎকার করে উঠল। রিক ফোনের স্ক্রিণে তাকিয়ে বলল
— ” বাহ বাহ কী প্রেম? একজন এখানে কাদছে ওখানে ! অস্হির হয়ে যাচ্ছে?”
অনিমার দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিণের দিকে আদ্রিয়ান কনটিনিউয়াসলি ফোন করেই যাচ্ছে। অনিমা ঝোকের বসে ফোন করে ফেললেও এখন ও মনে মনে বলছে আদ্রিয়ান যেনো এগানে না চলে আছে। ওর সাথে যা তাতো হবেই আদ্রিয়ানও বিপদে পরবে। রিক রেগে ফোনটা জোরে ছুড়ে মারল আর ফোনটা খুলে এদিক ওদিক ছড়িয়ে গেলো।
আদ্রিয়ান এবার ফোন করে অনিমার ফোন বন্ধ পেলো, এতো ওর টেনশন আরো বেড়ে গেলো, এখন প্রতিটা সেকেন্ড ওর কাছে একেকটা যুগ মনে হচ্ছে। মুখের ঘামটা মুছে গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিলো ও।
এখানে অনিমা এবার হাত টান দিয়ে রিকের পায়ের তলা থেকে হাত সরিয়ে নিলো যার ফলে ওর হাতের উল্টপিঠ বাজেভাবে ছিলে গেলো, তবুও ও উঠে পালাতে চাইলে রিক সর্বোশক্তি দিয়ে অনিমার গালে চড় বসিয়ে দিলো, অনিমা আবারো ফ্লোরে পরে গেলো, গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে কাদতে লাগল ও, ওর ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে। অনিমার চুল এর মুঠি ধরে বলল
— ” কী ভেবেছিলে? দরজা বন্ধ করে রাখলে আমি তোমার কাছে আসতে পারবোনা? আর তোমার ঐ রকস্টার কে সবটা জানালেই ও তোমায় এসে বাঁচিয়ে নেবে? ”
অনিমার কিছু বলতে পারছেনা, শুধু কেদেই যাচ্ছে। রিক অনিমার চুলে আরো জোরে টান মেরে ধরল। অনিমা ‘আহ’ করে উঠল। রিক রাগে কটমট করে বলল
— ” কী হলো? কথা বলছোনা কেনো? খুব তো সাহস দেখাচ্ছিলে? এখন কাঁদছো কেনো?”
অনিমা অনেক কষ্টে কাঁদতে কাদঁতে বলল
— ” আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ। আমি যেতে চাইনা কোথাও। প্লিজ চলে যান।”
অনিমার এইসব কথায় রিকের মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে। ও চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলে
— ” বেইবি তোমাকে কে বলল আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসছি?”
অনিমা এতোক্ষণ কাদলেও এবার অবাক হয়ে রিকের দিকে। নিয়ে যেতে আসেনি মানে? তাহলে কেনো এসছে? অনিমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিক বলল
— ” কী ভাবছো? তোমায় নিয়ে যেতে না আসলে কেনো এসছি তাইতো? তুমি অন্য কোনো ছেলের এতো কাছে যাবে আর আমি সেই ছেলেকে ছেড়ে দেবো? আগে তোমার চোখের সামনে ওকে ওপরে পাঠাবো তারপর তোমাকে আমার কাছে অানবো।”
রিকের কথা শুনে ভয়ে কেপে উঠলো অনিমা। ওর জন্যে আদ্রিয়ানকে মরতে হবে? কেনো গেলো ও আদ্রিয়ানের এতো কাছে? ও তো জানতো ওর জীবনের চরম সত্যিটা। অনিমা রিকের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” প্লিজ ওনাকে কিছু করবেন না। উনি কিছু করেননি। ”
— ” ও আমার জিনিসে হাত দিয়েছে আর তুমি বলছো কিচ্ছু করেনি?”
— ” অ্ আপনি ভূল ভাবছেন। ওনার আর আমার মধ্যে তেমন কিছুই নেই।”
রিক অনিমার চুল আরো জোরে টেনে ধরে বলল
— ” তোমার সাথে এতো ভালো সম্পর্ক, বার্থ সেলিব্রেট করেছে, জরিয়ে ধরেছে সেগুলো এমনি এমনি?”
অনিমা কী বলবে বুজতে পারছেনা, ওর মাথায় শুধু একটা কথাই চলছে আদ্রিয়ানকে বাঁচাতে হবে এই লোকগুলোর কাছ থেকে। রিক অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে বলল
— ” কী হলো? বলো? ওকে মরতে দেখার জন্যে তৈরী তুমি?”
অনিমা শিউরে উঠল রিকের দিকে তাকিয়ে হাত জোর করে বলল
— ” প্লিজ ওনাকে ওকে কিছু করবেন না।”
রিক আরো জোরে অনিমার চুল টেনে ধরে বলল
— ” এতো দরদ ওর জন্যে? হ্যা? একয়দিনেই কী এমন করলো যে এতো মায়া তৈরী হয়ে গেছে যেটা পাঁচ বছরেও আমার জন্যে তৈরী হয়নি? তাহলে তো ওকে এখন মরতেই হয় বলো? ”
অনিমা কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে, তবুও অনেক কষ্টে বলল
— ” বিশ্বাস করুন ওনার কোনো দোষ নেই, আমি নিজেই গেছিলাম। আমি নিজে থেকেই মিশেছি ওনার সাথে, যা করার আমি করেছি। প্লিজ ওনাকে কিছু করবেন নাহ, প্লিজ।
রিক এবার অনিমার চুলের মুঠি ছেড়ে বলল
— “ওহ তারমানে সব দোষ তোমার? যা দোষ করার তুমিই করেছো?”
— ” হ্যাঁ।”
রিক একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল
— ” তারমানে পানিশমেন্ট তোমার পাওয়া উচিত?”
— ” আপনি যা বলবেন আমি শুনবো। কিন্তু প্লিজ ওনাকে কিচ্ছু করবে না প্লিজ!”
রিক উঠে দাড়িয়ে বেডের ওপর বসে বলল
— ” ঠিকাছে ওকে কিচ্ছু করবোনা যদি তুমি আমার কথা শোনো তো।”
অনিমা চোখ মুছে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” ঠিকাছে ওকে কিচ্ছু করবোনা, যদি তুমি আমার কথা মতো কাজ করো তো।”
— ” বললাম তো আমি সব করব কিন্তু ওনাকে এসবে আনবেন না। প্লিজ।”
রিক একটু আলসেমি ঝেরে বলল
— ” তোমাকে ঐ রকস্টার,কী জেনো নাম? হ্যাঁ মনে পরেছে, আদ্রিয়ান। ওর সাথে তোমার সো কলড বন্ধুত্ব বা যাই থাক সেই সম্পর্ক ভাঙতে হবে।”
অনিমা স্হির দৃষ্টিতে তাকালো রিকের দিকে। রিক হেসে বলল
— ” আমি বলতে চাইছি তোমাকে ওর থেকে দূরে সরতে হবে আর ওকেও তোমার জীবণ থেকে বের করতে সবে ফরএভার।”
অনিমা ধীর কন্ঠে বল
— ” তাহলে আপনি সত্যিই ওর কোনো ক্ষতি করবেন না তার কী গ্যারান্টি আছে?”
— ” বাহবা কতো সাহস হয়েছে আমার কাছে গ্যারান্টি চাইছো? ওকে ফাইন,আমি প্রমিস করছি। আর তুমি জানো আমি যতোই খারাপ হই, কখনো প্রমিস ব্রেক করিনা।”
অনিমা ভাঙা গলায় বলল
— ” ঠিকাছে আমি তাই করবো। কিন্তু ওনার কোনো ক্ষতি যাতে না হয়।”
— “তুমি আমার কথা শুনে চললে ওর কিছুই হবেনা। কিন্তু মনে রেখো যদি না শোনো, তোমার চোখের সামনে এতো নৃশংস ভাবে মারবো যে কল্পনাও করতে পারবেনা।”
হঠাৎ করেই গাড়ির হর্ন শুনতে পাওয়া গেলো। রিক উঠে বেলকনিনে গিয়ে উকি দিয়ে দেখে হেসে ভেতরে ঢুকে বলল
— ” সত্যিই কী টান? ফোন না ধরায় সোজা বাসায় চলে এসছে?”
চমকে গেলো অনিমা, আদ্রিয়ান এসছে? কোনো ক্ষতি করে দেবেনাতো? ওর? অনিমা ভয়ে ভয়ে রিকের দিকে তাকালো, রিক অনিমার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওর সামনে হাটু ভেঙে বসে বলল
— ” আরেহ ভয় পেয়োনা, আমি চলে যাচ্ছি। কিন্তু হ্যা এক সপ্তাহ সময় দিলাম এর মধ্যেই যেনো আমি শুনতে পাই তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই। নাহলে, কী করবো সেটা আবার নিশ্চই বলতে হবে না? মনে রেখো কিন্তু।”
এটুকু বলেই রিক উঠে চলে গেলো ওখান থেকে। অনিমা ওখানেই গুটিয়ে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল, চেয়েও কান্নাটা থামাতে পারছেনা ও। আদ্রিয়ান আসছে ও কাঁদলে চলবেনা। কিন্তু পারছেনা ওর কান্না থামাতে ও। হঠাৎই হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো আদ্রিয়ান। অনিমা ওভাবে ফ্লোরে বসে কাঁদতে দেখে অস্হির হয়ে উঠল ও। তাড়তাড়ি অনিমার সামনে গিয়ে বসে কাঁপা কন্ঠে বলল
— ” অনি।”
অনিমা আদ্রিয়ানের আওয়াজ শুনে মাথা তুলে তাকালো, অনিমার চেহারা দেখে আদ্রিয়ানের ভেতরে ছ্যাত করে উঠল। চোখ ফুলে আছে, বাম গালে কারো তিন আঙ্গুলের দাগ বোঝা যাচ্ছে, ঠোটের কোণা থেকে হালকা রক্ত বেরোচ্ছে, হাটুর ওপর রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলে ডান হাতের উল্টো পিঠ বাজে ভাবে ছিলে গেছে। আদ্রিয়ান ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে অনিমাকে এভাবে দেখে, ওর মনে হচ্ছে এসবের জন্যে ওই দায়ী কেনো আরো আগে আসতে পারলো না ও, চোখ দুটো ছলছল করে উঠল ওর । আস্তে করে অনিমার গালে হাত ছুইয়ে ঠান্ডা গলায় বলল
— ” এসব কীকরে হলো? ”
অনিমা আর নিজেকে সামলাতে পারলোনা আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আদ্রিয়ানও শক্ত করে জরিয়ে ধরল ওকে। অনিমার এই কান্না ওর কাছে অসহনীয় লাগছে। রাগে ওর নিচের ঠোঁটটা প্রচন্ড রকম কাঁপছে। যে এই কাজটা করেছে তার সাথে সাথে ওর নিজের ওপরেও প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, কেনো একটু আগে এসে পৌছলোনা কেনো? ফ্লোরে ওর ভাঙা ফোনটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কেনো ফোন বন্ধ ছিলো। অনিমা তো আদ্রিয়ানকে জরিয়ে ধরে কেদেই যাচ্ছে। অনিমার ওপরেও রাগ হচ্ছে আদ্রিয়ানের মেয়েটাকে, ঘটনাটাতো আর একদিনে শুরু হয়নি? কেনো কিছু বললোনা ওকে ও? কেনো? কিন্তু এখন ওকে বোকে লাভ নেই এমনিতেই বেশ ভয় পেয়ে আছে মেয়েটা। তাই আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
— ” কান্না থামাও, আমি এসে গেছিতো, দেখো।”
আদ্রিয়ানের গলার আওয়াজেই ওর রিকের বলা কথাগুলো মনে পরলো। নাহ ওকে আদ্রিয়ানকে নিজের থেকে দূরে রাখতেই হবে। হ্যা ওর কষ্ট হবে এতে, খুব কষ্ট হবে কিন্তু আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যে ও সব করতে পারবে সব। ও একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই নিজের থেকে সরিয়ে দিলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো অনিমার দিকে, হঠাৎ এইরকম আচরণের কারণ বুঝতে পারলোনা ও। অনিমা চোখ মুছে শক্ত কন্ঠে বলল
— ” আপনি কেনো এসছেন এখানে?”
আদ্রিয়ান চোখ ছোট ছোট করে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— “তারআগে বলো এসব কী করে হলো? কে করেছে এসব? দরজা খোলা ছিলো কেনো? কে ঢুকেছিলো?”
অনিমার ইচ্ছে আদ্রিয়ানের সাথে কোনো রুড বিহেভ করতে। তাই নিজেকে সামলে বলল
— ” আপনি চলে যান।”
আদ্রিয়ান মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে এখন, রগগুলো ফুলে উঠতে চাইছে। মেয়েটার গায়ে যদি আঘাতের চিন্হ না থাকতো নিশ্চিত কষে দুটো চড় মারতো ওর গালে। বাট অনিমার অবস্হা দেখে নিজের রাগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে শক্ত গলায় বলল
— ” আগে বলো এসব কে করেছে?”
অনিমার এবার কান্না পাচ্ছে খুব। এই ছেলেটা কেনো বুঝতে চাইছেনা যে ও চায়না ওর সাথে রুড বিহেভ করতে। উল্টো ঘুরে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকে, একটা শ্বাস নিয়ে ঘুরে বলল
— ” এটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আপনাকে বলতে বাধ্য নই আমি। যান এখান থেকে!”
আদ্রিয়ানের ধৈর্যের বাধ এবার ভেঙ্গে গেলো। অনিমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
— ” তাহলে এতোবার ফোন করেছিলে কেনো? তামাশা দেখাতে?”
— ” ভূল হয়ে গেছে আমার হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি আপনার কাছে। নাউ জাস্ট লিভ।”
অাদ্রিয়ান তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে ও বুঝতে পারছে অনিমা কিচ্ছু বলবেনা ওকে। তাই ঠান্ডা গলায় বলল
— “ফার্স্ট এইড বক্সটা কোথায়?”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে করুণ চোখে একবার তাকালো ও চেয়েও কান্না থামাতে পারছেনা। ও কাদতে কাদতেই বলল
— ” প্লিজ চলে যান আপনি প্লিজ।”
অাদ্রিয়ান এবার প্রচন্ড জোরে ধমক দিয়ে বলল
— ” ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?”
অনিমা কেঁপে উঠলো। এইকয়দিনে আদ্রিয়ানের এই রূপ ও দেখেনি। রিকের ধমকও কোনোদিন এতোটা কম্পনসৃষ্টিকারী ছিলোনা যতোটা আদ্রিয়ানের ধমকে ছিলো। আদ্রিয়ানকে খুব ভয়ংকর লাগছে দেখতে। অনিমা ভয়ে একটু পিছিয়ে গেলো ও আর একটা শব্দ করারো সাহস পেলোনা, চুপচাপ আঙ্গুলের ইশারায় ওয়াডড্রপ এর ওপর দেখিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান ফার্স্ট এইড বক্সটা এনে প্রথমে অনিমার হাতে আলতো করে ঔষধ লাগিয়ে দিতে লাগলো, অনিমা ভয়ে টু করছে না, ব্যাথা পেলে যে হালকা আহ করবে সেই সাহসটাও নেই ওর। আদ্রিয়ান
গম্ভীর কন্ঠে বলল
— ” ব্যাথা পেলে বলতে পারো আমি কিছু বলবোনা।”
অনিমা মাথা নিচু করে রইলো। আদ্রিয়ানের হঠাৎ এই রাগী রূপ দেখে ও ভয় পেয়ে গেছে। আদ্রিয়ান অনিমার হাতে ব্যান্ডেজ করে, ঠোঁটে আর গালেও ঔষধ লাগিয়ে দিলো। এরপর উঠে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে কোথায় যেনো গেলো অনিমা বুঝছেনা গেলো কোথায়? আর হঠাৎ কী হলো ওর? গোবিন্দা থেকে শক্তি কাপুড় কীকরে হয়ে গেলো? এটা আদ্রিয়ানই তো? দরজাটাও লক করে গেছে। দশ মিনিটের মাথায় আদ্রিয়ান হাতে একটা থালা নিয়ে এলো তাতে পাস্তা আছে। আদ্রিয়ান অনিমার এক চামচ পাস্তা অনিমার দিকে বাড়িয়ে দিতেই অনিমা কিছু বলবে তার আগে আদ্রিয়ান এমন ভাবে তাকালো যে অনিমার মুখ অটোমেটিক্যালি হা হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান পুরোটা পাস্তা অনিমাকে খাইয়ে দিলো। ভয়ে অনিমা একটা আওয়াজ ও করেনি। তারপর ওকে পানি খাইয়ে মুখ মুছে দিলো। অনিমা মাথা নিচু করে আছে আদ্রিয়ান অনিমার থুতনি ধরে মাথা উচু করে বলল
— ” আপাদত চলে যাচ্ছি। কিন্তু হ্যা শুধু আজকের জন্যেই যাচ্ছি। এখন থুমি সুস্হ নও তাই এখনকার ছেড়ে দিলাম। বাট, আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা এটা মাথায় রেখো। দরজা লক করে শুয়ে পরবে। কাল দেখা হচ্ছে।”
বলেই উঠে হনহনিয়ে চলে গেলো। অনিমা হা করে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এটা আদ্রিয়ান ছিলো? সিরিয়াসলি?
.
#চলবে…