#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ২৩+২৪

0
431

#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব ২৩+২৪
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

.
আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে ভোরের সকাল, আকাশে বিস্তৃত থাকা ঘন মেঘের জন্যে সদ্য উদিত সূর্যের সম্পূর্ণ আলো‌ পৃথিবীর বুকে পৌছতে পারছে না। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শব্দহীনভাবে পরে চলেছে সেই কখন‌ থেকে। বর্ষাকাল প্রায় শেষের পথে, এইমুহূর্তের বৃষ্টি এমনি হয় তীব্র গতীর চেয়ে ধীর গতিতেই পরতে বেশি পছন্দ করে। ব্যালকনির রেলিং এ ভর দিয়ে এক দৃষ্টিতে সেই বৃষ্টির দিকে‌ তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান। বুকে এক অদ্ভুত ব্যাথা হচ্ছে ওর। কালকে রাতে অনিমাকে যেই অবস্থায় দেখেছে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে ঐ‌ অবস্হায় দেখা সহজ ছিলোনা ওর কাছে। সারারাত ব্যালকনিতেই দাড়িয়ে ছিলো, কারণ এক মূহুর্তের জন্যেও নিজের দুচোখের পাতা এক করতে পারেনি ও। যতোবার চোখ বন্ধ করছে বারবার অনিমার ওই মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে, ওকে জরিয়ে ধরে যখন‌ কাদঁছিলো‌ মেয়েটা সেই কান্নার আওয়াজ ওর কানে এখোনো বাজছে। নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে। কেউ যে ওর ফ্লাটে এসছিলো সেটাতো স্পষ্ট । আর ওর গালে ‌আঙ্গুলের ছাপ, ঠোঁটের কোণে রক্ত দেখেই আদ্রিয়ান‌ বুঝতে পেরেছে অনিমার সাথে কী হয়েছে। আর সেই দৃশ্যটা কল্পনা করার চেষ্টা করলেও‌ ওর রক্ত গরম হয়ে উঠছে। কিন্তু অনিমার মতো মেয়ের সাথে কেউ এরকম কেনো করবে? আর অনিমার ওপরেও রাগ হচ্ছে , কিচ্ছু বলছেনা ওকে। যদিও অনিমার চুপ থাকার কারণটা আদ্রিয়ান কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে । অনিমার এমন‌ একটা মেয়ে যে চুপচাপ সব যন্ত্রণা সহ্য করে নেবে, নিজে কষ্টে থাকবে কিন্তু ওর জন্যে অন্য কারো জীবনে কোনো প্রকার ক্ষতি হতে দেবেনা। এরকমি ওর অনি। কিন্তু মেয়েটা কেনো বোঝেনা যে ওর সামান্য কষ্ট আদ্রিয়ানকে কতোটা পোড়ায়। সেদিন ওর হাতের ক্ষত আর‌ কাল রাতে ওর শরীরের আঘাতের চিন্হগুলো যে আদ্রিয়ানের বুকে কতোটা আঘাত করেছে সেটা কেনো বোঝেনা ও? অনিমা যে এমনি এমনি কিছু বলবেনা সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে আদ্রিয়ান। কিন্তু ওকে তো জানতেই হবে ,যেকরেই হোক। কফির মগে চমুক দিয়েই বৃষ্টি দেখতে দেখতে ভেবেই যাচ্ছে আদ্রিয়ান বিরবির করে নিজেই নিজেকে বলতে লাগল

— “অনিমার একজন জার্নালিস্ট তাই ওর শত্রু অনেক থাকতেই পারে তবে তারা হয় ওকে মেরে ফেলতে চাইবে নয় হুমকি দেবে। কিন্তু অনিমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। কিচ্ছু মাথায় আসছেনা কে বা কারা করছে এসব কেনো করছে? কী কারণ হতে পারে?

রেলিং এ অনেক জোরে একটা পাঞ্চ মারলো, সব কেমন জটিল হয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই ঘুমের মধ্যে অনিমার বলা কথাগুলো মনে পরলো, সাথে সাথেই টনক নড়ল আদ্রিয়ানের। হাত দিয়ে কপালের চুলগুলো উল্টে ধরে বলল

— ” ইয়েস। আমার সব প্রশ্নের উত্তর অনিমার অতীতেই আছে। অনিমার বাবা মারা যাওয়ার আগে অবধি আমি সব জানি। এরপর কী হয়েছিলো ওর সাথে? আই এম ড্যাম সিউর যে এরপর যা হয়েছে সেটা কালকের ঘটনার সাথে কানেক্টেড। তাই সবার আগে আমাকে ওর পাস্ট জানতে হব।”

কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ান ফোন বের করে অনিমাকে কল করলো।

অনিমাও ব্যালকনির ফ্লোরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে শূণ্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বাইরের বৃষ্টি দেখছনা ও, গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। বাতাসে ওর এলোমলো চুলগুলো উড়ে উড়ে ওর মুখ পরছে, বিষন্ন মুখটাতেও জেনো এক আলাদা মায়া কাজ করছে। ফোনের আওয়াজ পেয়ে পাশে রাখা ফোনটার দিকে তাকালো অনিমা। ফেটে যাওয়া স্ক্রিণে আদ্রিয়ানের নামটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। কিন্তু অনিমা ফেটে যাওয়া স্ক্রিণটাই দেখছে, আর কালকের কথা ভাবছে, কালকের আছাড়ে ফোনটার তেমন কিছু না হলেও স্ক্রিণ ফেটে গেছে। ফোনটা কেটে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অনিমা। কারণ তার একটু আগেই একটা মেসেজ এসছিলো ওর ফোনে। মেসেজটা ছিলো ‘ তোমার কাছে শুধুমাত্র এক সপ্তাহ আছে। তোমার কার্যকলাপি ঠিক করবে আদ্রিয়ানকে মেরে তোমায় আমার কাছে আনবো নাকি বাঁচিয়ে রাখব। তাই প্রতিটা কদম ফেলার আগে আদ্রিয়ানের প্রাণের কথা ভেবে ফেলো।” আবারো ফোন বেজে উঠল অনিমা এবারেও কেটে দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। জীবণটা এমন কেনো হলো? এসব কিছু ওর সাথেই কেনো হলো? ওই কেনো? ওর জীবনটাও তো বাকি সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারতো। যেখানে কোনো ভয় থাকবেনা, কারো কাছ থেকে পালাতে হবেনা, স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে। এই হাওয়ার মতো ওও মতো নিজের ইচ্ছেমতো চলতে ইচ্ছে করে ওর, পাখির মতো মুক্ত হয়ে উড়তে ইচ্ছে করে। কিন্তু ওকে বন্দি হয়েই থাকতে হয় । কখনো অন্যের কাছে, কখনো নিজের ভয়ের কাছে, আবার কখনো নিজেরই কাছে। ওকেই কেনো এসব সহ্য করতে হচ্ছে। ফোন ক্রমাগত বেজেই চলেছে। অনিমা এবার ফোনটা ধরছেও না কাটছেও না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নামটার দিকে। এই ছেলেটাকে নিজের থেকে দূরে কীকরে সরাবে ও? খুব বেশি জরিয়ে ফেলেছে ওর সাথে। ওর সামনে নিজেকে কীকরে সামলে রাখবে? কীকরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে?
বারবার কল কেটে দেওয়ায় আদ্রিয়ানে রক্ত উঠে গেছে। কী পেয়েছে কী ও? কল কেটে দেবার মানে কী? তবুও নিজের রাগকে গুরত্ব না দিয়ে অনিমাকে মেসেজ করলো।
মোবাইলে মেসজের টোন বাজতেই অনিমা কেপে উঠলো, ও ভেবেছিলো রিকের মেসেজ। কিন্তু তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ানের মেসেজ। তাতে লেখা আছে ‘ স্কুটি নিয়ে বেরিয়োনা, আমি পিক করবো তোমাকে।’ ফোনটা সাইডে রেখে অনিমা আবারো ওয়ালে হেলান দিলো। কীকরে আদ্রিয়ানকে ইগনোর করবে? কিন্তু ও না চাইতেও ওকে এটা করতেই হবে। আদ্রিয়ানের ভালোর জন্যেই ওকে করতে হবে। ও বাধ্য এসব করতে। ওর ভাগ্যটাই হয়তো এরকম ওকে সব বাধ্য হয়েই করতে হয়। এসব ভেবে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো অনিমা আর তার সাথে চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল
_______________

আদ্রিয়ান অনিমার গেইটের সামনে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে। বারবার ঘরি দেখে চলেছে ও। আর গেইটের দিকে দেখছে। হঠাৎ আনিমাকে স্কুটি নিয়ে বেরোতে দেখে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে গেলো। ওর মেসেজ কী অনিমা দেখেনি? আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে বলল

— ” অনি? তুমি…”

কিন্তু আদ্রিয়ান কথা শেষ করার আগেই ‍অনিমা স্কুটি চালিয়ে চলে গেলো একবার অাদ্রিয়ানের দিকে তাকালোও না। আদ্রিয়ান দুবার ডাকল কিন্তু লাভ হলো না। আদ্রিয়ান আহম্মকের মতো তাকিয়ে রইলো অনিমার যাওয়ার দিকে। এই মেয়ের হঠাৎ কী হলো? এইরকম ব্যবহারের মানে কী? কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আদ্রিয়ানের। গাড়িরতে একটা লাথি মেরে, রাগে আগুন হয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো।
_______________

অনিমা অফিসে গিয়ে ডেস্কে বসতেই তীব্র আর অরুমিতা অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে। ওর হাতে ব্যান্ডেজ, ঠোট কোণায় কেমন দাগ হয়ে আছে। অরুমিতা একটানে অনিমার চেয়ার নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল

— ” এই কী হয়েছে তোর? এগুলো কীকরে হলো?”

অনিমা নিচু গলায় বলল

— ” কিছুনা সামান্য লেগেছে।”

তীব্র উঠে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলল

— ” সামান্য নাকি মারাত্বক সেটা পরের কথা আগে বল কীকরে হলো।”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো। অরুমিতা বিরক্ত হয়ে বলল

— ” কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে।”

অনিমা এবারেও চুপ করে আছে। তীব্র অরুমিতা এতো এতো প্রশ্ন ওর মধ্যে সামান্য বিরক্তির চিন্হও নেই। ভাবলেশহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তীব্র আর অরুমিতাও নাছোড়বান্দা ওরা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। অনিমা এবার হঠাৎ করে রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলল

— ” রিক এসেছিলো কাল রাতে, বরাবরের মতো কালকেও আমার গায়ে হাত তুলেছে। শুনে নিয়েছিস? শান্তি হয়েছে এবার? ”

তীব্র আর অরুমিতা আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আশপাশের ডেস্কের অনেকেই তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, অনিমাও হাইপার হয়ে গেছে। অনিমা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। অনিমাকে এভাবে দেখে ওরা ভাবলো এখন ব্যাপারটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো পরে এসব আলোচনা করা যাবে। তাই ওরা নিজেদের ডেস্কে কাজে বসে গেলো।
_______________

নিজের গাড়ির ব্যাক সিটে বসে আছে রিক, ড্রাইভার ড্রাইভ করছে। কাল সারারাত ক্লাবে পার্টি করে বাড়ি ফিরছে ও। অনেকদিন পর খুব খুশি ও, কারণ ও অনিমাকে পেয়ে গেছে। এতোদিনের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। ফোন বেজে ওঠায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল

— ” কী খবর ওখানকার?”

ওপাশ থেকে জবাব এলো

— ” ভাই। এডি ভাবীকে নিতে এসছিলো গাড়ি করে, কিন্তু ম্যাম নিজের স্কুটি করে চলে গেছে এডির সাথে কথা অবধি বলে নি।”

এটা শুনে বাঁকা হাসলো রিক। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল

— ” ঠিক আছ নজর রাখতে থাক।”

— ” ঠিকাছে ভাই।”

ফোনটা রেখে সিটে হেলান দিয়ে হাসলো রিক। খুবি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে মেয়েটা। যদি আজ ও নিজে থেকে ঐ আদ্রিয়ানের ধারেকাছেও যেতো বা কথা বলতো, তাহলে আজ কী হতো সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারছেনা। এই আদ্রিয়ানের জন্যেই আজ অনিমাকে কাছে আনতে আরো এক সপ্তাহ ওয়েট করতে হচ্ছে। ও তো কলকে রাতে আদ্রিয়ানকে মেরে অনিমাকে নিয়ে আসতেই যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই ওর মামা আটকে নিলো।

আসলে কাল রিক অর্কর সাথে কথা বলে এসেই রুম থেকে গান নিয়ে বেরোতে নিচ্ছিলো।তখনি কবির শেখ এসে বলল

— ” আরে বাবাই কোথায় যাচ্ছো? ”

রিক রাগে গজগজ করে বলল

— ” পথ ছাড়ো মামা। আজ আগে ঐ রকস্টারকে শেষ করবো তারপর অনিমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। ”

— ” পাগল হয়ে গেছো নাকি? এসো এখানে বসো।”

বলেই রিক কে নিয়ে সোফায় বসালেন কবির শেখ। রিক রেগে বলল

— ” মামা লেট মি গো।”

— ” আরে যাবেতো আগে আমার কথাটা শোন।”

রিক অস্হির হয়ে বলল

— ” মামা।”

— ” আরে শোনো। ওই রকস্টার আর অনিমার সম্পর্ক নিয়ে গোটা মিডিয়া জানে। এইমূহুর্তে যদি তুমি ওকে খুন করো আর তারপর যদি অনিমা কে তোমার সাথে তোমার ওয়াইফ হিসেবে দেখে তাহলে কী হবে বুঝতে পারছো? তখন তোমাকে বাচাঁনো অসম্ভব হয়ে যাবে। ওর ফ্যান ফ্লোয়িং তো জানো তাইনা? ব্যাপারটা বুঝতে পারছো?”

রিক কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলল

— ” তাহলে? কী করতে বলছো?”

কবির শেখ হেসে বললেন

— ” অনিমা আর আদ্রিয়ানকে একে ওপরের থেকে দূরে সরিয়ে দেও, যাতে সবাই এটা মনে করে যে ওদের সম্পর্কে যা শুনেছে সব গুজব। এবার নিশ্চয়ই তোমাকে বলে দিতে হবনা যে কী করতে হবে?”

রিক ভ্রু কুচকে বলল

— ” কিন্তু আদ্রিয়ান? ওর কী করবো? ওকে ছেড়ে দেবোনা আমি। আর মিথ্যে প্রমিসও করতে পারবোনা। তুমি জানো আমি প্রমিস ভাঙ্গিনা।”

— ” আরে তোমাকে প্রমিস ভাঙতে কে বলছে? তুমি শুধু বলবে যে তুমি কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু অন্যকেউ তো করতেই পারে? তাইনা?”

রিকের কয়েক সেকেন্ড লাগলো কথাটা বুঝতে আর বুঝতে পেরেই হেসে দিলো ও আর কবির শেখও একটা হাসে দিলেন।

সত্যিই ওর মামা ওর গরু, মানতে বিদ্ধ ও।এরকম নানকথা ভাবতে ভাবতে রিক বাড়িতে পৌছে গেলো। ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই দেখলো কবির শেখ আর মিস্টার রঞ্জিত বসে আছে। মিস্টার রঞ্জিতের এসব নিয়ে হেলদোল নেই উনি একমনে কাজ করে চলছেন। কবির শেখ রিক কে দেখে উঠে এসে বলল

— ” কাজ হয়েছে?”

রিক ওর মামার কাধ জরিয়ে ধরে বলল

— ” তোমার প্লান ফ্লপ হয়েছে কখনো?”

— ” সাবাস! যাও এবার রেস্ট করো।”

— ” হ্যা এখন রেস্ট করে লাঞ্চ টাইমে ওর সাথে দেখা করতে যাবো।”

এটুকু বলে রিক হালকা হেসে উপরে চলে গেলো আর কবির শেখ রিকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলেন। ঠিকি বলেছে রিক। ওনার প্লান কোনোদিন ফ্লপ হয়না। আচ্ছা সবাই এতো বোকা নাকি উনিই বেশি চালাক সেটাই বুঝতে পারছেনা কবির শেখ। কেউ আজো ধরতে পারেনি ওনার আসল উদ্দেশ্য। আদ্রিয়ান, অনিমা, রিক ওরাতো ওনার খেলার একেকটা গুটি মাত্র। এরাতো শুধু কোট বদলাচ্ছে কিন্তু আসল খেলা তো খেলছেন উনি। এসব চিন্তা করেই উনি ওনার সেই শয়তানী হাসি দিলেন।
________________

লাঞ্চ টাইমে অনিমা কিছু খায়নি বললেই চলে। তীব্র আর অরুমিতা চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা কারণ কিছু বললেই অনিমা হাইপার হয়ে যাচ্ছে। তবুও অরুমিতা বলল

— ” কীরে কিছুই তো খেলিনা।”

অনিমা সরল ভাবে জবাব দিলো

— ” খিদে নেই আমার।”

অরুমিতা আর কিছু বললোনা তবে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। অরুমিতা আর তীব্র ফ্রেশ হয়ে ওপরে ডেস্কে চলে গেছে। অনিমা সবে যেতে নেবে ওমনি কেউ ওর হাত ধরে হ্যাচঁকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল। অনিমা প্রথমেই ভয় পেয়ে গেছিলো, আর লোকটার চেহারা দেখে আরো ভয় পেলো। কারণ রিক অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। অনিমা কিছু বলার আগেই রিক ওর গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল

— ” ভেবেছিলাম তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলবো কিন্তু তুমিতো তার যোগ্যই নও। ”

অনিমা ভীত আর অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে রিকের দিকে। তবুও কোনোরকমে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল

— ” কী করেছি আমি?”

রিক রাগী কন্ঠে বলল

— ” ওই রকস্টার এখানে কেনো এসছে?”

চমকে উঠলো অনিমা। আদ্রিয়ান এসছে? কিন্তু কেনো? রিকের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” বিশ্বাস করুন আমি জানতাম না উনি এসছেন। আর আমি ওনার সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। আপনি যা বলেছেন তাই করেছি। প্লিজ ওনাকে কিছু…”

— ” আরে কুল কুল আমি জানি সব। আর এভাবেই ঠিক যা বলবো তাই করবে ঠিকাছে?”

অনিমা কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে আছে। অনিমাকে চুপ থাকতে দেখে রিক ওর ব্যান্ডেজ করা হাত চাপ দিয়ে ধরে বলল

— ” কী হলো বলো?”

অনিমা ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। তারপর হ্যা বোধক মাথা নাড়ল। রিক বাকা হেসে বলল

— ” গুড। এবার যাও ও হয়তো ও তোমার সাথে কথা বলবে। কী করতে হবে সেটতো জানো।”

রিক অনিমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো। অনিমা চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে যেতেই আদ্রিয়ানকে দেখতে পেলো। আজকেও আদ্রিয়ান ক্যাপ আর সানগ্লাস পরে আছে তাই কেউ চিনছেনা। তাহলে রিক কীকরে চিনলো? আর লাঞ্চ টাইম শেষ তাই ক্যান্টিন ও প্রায় ফাঁকা। অনিমা আদ্রিয়ানকে দেখে ইগনোর করে চলে যেতে চাইলেই আদ্রিয়ান দ্রুত পদে এসে ওর হাত ধরলো। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্রিয়ান ওকে ধরে টেনে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তারপর পাশে বসে ওর হাত চেপে ধরলো যাতে উঠতে না পারে। তারপর রাগী কন্ঠে বলল

— ” সমস্যা কী তোমার?”

অনিমা মাথা নিচু করে বলল

— ” যেতে দিন আমাকে।”

— ” এতোটা অসহ্য হয়ে গেছি আমি এখন? যে দুমিনিট আমার পাশে বসতেও চাইছোনা? ”

অনিমা একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিলো রিক আছে কী না। তারপর আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল

— ” আদ্রিয়ান প্লিজ। আপনি দূরে থাকুন আমার থেকে। ”

আদ্রিয়ান দাতে দাত চেপে বলল

— ” কেনো আমাকে আর ভালোলাগে না?”

অনিমা এবার আদ্রিয়ানের হাত ছাড়িয়ে উঠে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলল

— ” নাহ লাগেনা ভালো আর আপনাকে। জাস্ট অসহ্য লাগে। কেনো পরে আছেন আমার পিছনে? আপনি তো এতো বড় একজন রকস্টার। আমার মতো একটা মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব কেনো রাখবেন? তাই নেক্সট টাইম আমার সাথে কথা বলার চেষ্টাও করবেন না। দূরে থাকুন আমার থেকে। আপনি আপনার জীবণ নিয়ে ভালো থাকুন আমাকেও থাকতে দিন। প্লিজ।”

এটুকু বলে অনিমা দৌড়ে চলে গেলো। একবারের জন্যেও পেছনে ফিরে তাকায়নি। পেছনে তাকালে যে পিছুটান ছাড়া যায়না। আর আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকিয়ে আছে অনিমার যাওয়ার দিকে। হাতে ধরে রাখা গ্লাসটা চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলল। যার ফলে হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে আদ্রিয়ানের। কিছুতেই রাগ কমছেনা।
________________

এভাবে আরো ছয় দিন কেটে গেছে। অনিমা আদ্রিয়ানকে চরমভাবে ইগনোর করছে। আর রিক ফোনে কিংবা সামনে এসেই অনিমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়েছে। উপর দিয়ে নিজেকে স্ট্রং দেখালেও ভেতর দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে অনিমা। এতো মানসিক চাপ নিতে পারছেনা ও। অার আদ্রিয়ানের অবস্হা ভয়াবহ। অনিমার ইগনরেন্স ওকে প্রচন্ড ডেসপারেট করে তুলেছে। কোনো কাজে মন বসছেনা ওর। এবার ওর মাথায় একটা কথাই চলছে, অনেক হয়েছে এবার মেয়েটার একটা ব্যবস্হা করতে হবে।

অনিমা অফিস থেকে ফ্লাটে ফিরছে স্কুটিতে। হঠাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি থামলো। অনিমা দ্রুত ব্রেক করল। গাড়ি থেকে একটা লোক নামতেই অনিমা রেগে কিছু বলবে তার আগেই হেডলাইটের আলোতে ওর মুখটা দেখে চমকে উঠল। কারণ লোকটা আদ্রিয়ান। অনিমা অবাক হয়ে বলল

— ” আপনি?”

আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান এসে অনিমার দুইহাত ধরে পেছনে নিয়ে বেধে দিলো। অনিমা বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পাচ্ছেনা। আদ্রিয়ান ওকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সিটবেল্ট বেধে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসল। অনিমা রেগে বলল

— ” ছাড়ুন আমাকে।”

— ” আমি আগেই বলেছি আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা।”

— ” অাদ্রিয়ান আমি এবার চেচাবো কিন্তু।”

আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

— “মুখ খোলা রেখেছি ভালো লাগছে না? ”

অনিমা চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট দিতেই অনিমা বলল

— ” কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়ে থেকেই স্বাভাবিকভাবে বলল

— ” কাজী অফিস।”

#পর্ব: ২৪
.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে চরম মাত্রায় অবাক হলো অনিমা। কাজী অফিস? কিন্তু কেনো? অনিমা অবাক হয়েই বলল
— “কিন্তু কেনো?”
এটা শুনে আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” কাজী অফিসে মানুষ কেনো যায়?”
অনিমা সরল ভাবে জবাব দিলো
—” বিয়ে করথে নয়তো বিয়ে দেখতে।”
— ” এক্সাক্টলি! আমরাও সেইজন্যেই যাচ্ছি।”
অনিমা ভ্রু কুচকে ফেলল, কার বিয়ে দেখতে নিয়ে যাচ্ছে ওকে? তাও এইভাবে বেধে? অনিমা চিন্তিত কন্ঠেই বলল
— ” কারা বিয়ে করছে কার বিয়ে দেখতে যাচ্ছি আমরা? আর আমাকেই কেনো নিয়ে যাচ্ছে?”
আদ্রিয়ান অনিমার কথায় বিরক্ত হয়ে বলল
— ” তোমাকে কে বলল যে আমরা কারো বিয়ে দেখতে যাচ্ছি?”
অনিমার এবার একটু ভয় লাগছে তাই তুতলিয়ে বলল
— ” তাহলে কেনো যাচ্ছি ?
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বাকা হেসে স্পষ্টভাবে বলল
— ” আমাদের বিয়ে হবে।”
অনিমা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে আদ্রিয়ানের কথা শুনে। কী বলছে কী আদ্রিয়ান? পাগল টাগল হয়ে গেলো না তো? এরকম মজার মানে কী? আদ্রিয়ান তো একমনে ড্রাইভ করেই চলেছে। অনিমা কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
— ” আমিতো যথেষ্ট স্পষ্ট ভাষায় বললাম। তবুও তুমি যেহেতু বুঝতে পারছোনা আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি। তোমাকে আর আমার মানে আমাদের দুজনের বিয়ে হবে।”
এবার অনিমা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো। আদ্রিয়ান হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। অনিমা আর কী বলবে আদ্রিয়ানের কথা শুনেই অনিমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎ এই ছেলের কী হলো? এসব উদ্ভট কথাবার্তার মানে কী? কিছুক্ষণ বোকার মতো বসে রইল। হঠাৎ রিকের বলা কথা মনে পরতেই অনিমা নিজেকে সামলে নিলো, তারপর রেগে গিয়ে বলল
— ” মজা করছেন আপনি আমার সাথে?”
আদ্রিয়ান অনিমার এরকম প্রশ্নে আরো বিরক্ত হয়ে বলল
— ” তোমার মনে হয় আমি মজা করার মুডে আছি?”
— ” একদমি না আমার মনে হচ্ছে আপনি পাগল হয়ে গেছেন।”
— ” রিয়েলি? এমন কী বলে ফেললাম?”
অনিমার এবার রাগ মাথায় চরে যাচ্ছে। এই ছেলেটা এতো কুল কীকরে? কী করতে চাইছে ও? অনিমা নিজের হতের বাধন ছড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল
— ” কী করেছন মানে?একেতো আমাকে বেধে রেখে দিয়েছেন তারওপর কীসব ভূলভাল বকেই যাচ্ছেন? সমস্যা কী আপনার?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল
— ” দোষটা তো তোমারই। তুমি যদি এভাবে এই ছয়টা আমাকে ইগনোর না করতে, আমার সাথে কথা বলতে তাহলে এসব করতাম না আমি।”
অনিমা কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠল। অনিমার হাত বাধা আছে তাই ও ফোন রিসিভ করতে পারছেনা। আদ্রিয়ান গাড়িটা সাইড করে ব্রেক করল। অনিমা ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে, কারণ যদি রিক ফোন করে থাকে তাহলে? অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
— ” আমার হাত খুলুন ফোন রিসিভ করব। অাদ্রিয়ান অনিমার কথায় কান না দিয়ে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে বলল
— ” আমি থাকতে তুমি কষ্ট কেনো করবে?”
অনিমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অাদ্রিয়ান অনিমার ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো
— ” ফোন রিসিভ করতে এতোক্ষণ লাগে নাকি? যাই হোক খুব ভালো কাজ করেছো। ঠিক আমি যেভাবে বলেছি সেভাবেই। কালকে তৈরী থেকো আমি কালকেই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি করার চেষ্টা করোনা বেবি। তুমি সেটা করলে আমি কী করবো ইউ নো এস ওয়েল।”
আদ্রিয়ান ফোনটা কানে ধরেই রাগী চোখে তাকালো অনিমার দিকে। অনিমা ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। তারপর ফোনটা সুইচড অফ করে জানালা সোজা বাইরে ফেলে দিলো। সেটা দেখে অনিমা উত্তেজিত হয়ে বলল
— ” আরে? আমার ফোন ছিলো ওটা।”
আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট করে সামনে তাকিয়েই বলল
— ” ফাটা স্ক্রিনের ফোন ইউস করার কোনো দরকার নেই। তাই ফেলে দিলো।”
অনিমা এবার চেচিয়ে বলল
— ” দেখুন আপনি এরকম নিজের খেয়ালখুশি মতো কাজ করতে পারেন না।”
আদ্রিয়ান এবার জোরে ধমকে বলল
— ” চুপ। একদম চুপচাপ বসে থাকো নইলে কীকরে চুপ করাতে হয় আমি জানি।”
অনিমা মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলো আর আদ্রিয়ান ড্রাইভ করার কনসেনট্রেট করলো। রাগে রগ ফুলে উঠেছে ওর, ইচ্ছে করছে সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে ফেলতে।
আর ওদিকে কথা শেষ হবার আগেই ফোন কেটে দেওয়ায় রিকের রাগ মাথায় চড়ে আছে আর তারপর ট্রায় করে ফোনটা বন্ধ পেয়ে সেই রাগ কয়েকগুন বেড়ে গেছে। বিয়ারের বোতলটা আছাড় মেরে ফেলে বলল
— ” খুব সাহস হয়ে গেছে মেয়েটাল। ওয়েট, কালকে একবার নিয়ে আসি তোমাকে তারপর দেখে নেবো তোমাকে কতো সাহস।”
গাড়ি থামতেই মাথা তুলে তাকালো অনিমা, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এটা একটা বিশাল বিল্ডিং এর সামনে থেমেছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে নামাতে গেলেই অনিমা অবাক হয়ে বলল
— ” আপনি তো বলেছিলেন কাজী অফিস যাবেন কিন্তু এখানে তো..”
আদ্রিয়ান দুষ্টু হেসে অনিমার দিকে ঝুকে বলল
— ” কেনো কাজী অফিসে গেলেই বেশি খুশি হতে বুঝি? তাহলে বলো আমি গাড়ি ঘোরাচ্ছি।”
অনিমা রেগে বলল
— ” আপনি নিয়ে গেলেও আমি বিয়ে করতাম না আপনাকে।”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
— ” আমি জানি তুমি সোজা কথার মেয়ে নও। তাই আগে তোমাকে সোজা করি তারপর বিয়ের কথা ভাবব।”
অনিমা ছটফট করতে করতে বলল
— ” আমাকে বাসায় যেতে দিন ।”
— ” বাসাতেই নিয়ে যাচ্ছি চলো।”
বলে অনিমাকে কোলে নিয়েই হাটতে শুরু করলো। অনিমা ছটফট করে চলছে নামার জন্যে কিন্তু অাদ্রিয়ান তো আদ্রিয়ানই। অনিমার ছটফটানিটা ও বেশ ইনজয় করছে। অনিমাকে নিয়ে ও বিল্ডিং এর সেভেনথ ফ্লোরের একটা এপার্টমেন্টে নিয়ে গেলো। অনিমা চিৎকার চেচামেচি করেই যাচ্ছে। আদ্রিয়ান অনিমাকে নিয়ে ওর বেডে বসিয়ে দিলো। তারপর হাতের বাধন খুলে দিয়ে বলল
— ” তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর হ্যা দরজা লক করা চাবি আমার কাছে। সো তোমার কোনো চেষ্টাই কাজে লাগবেনা।”
এটুকু বলেই আদ্রিয়ান ওয়াসরুমে চলে গেলো। অনিমা কিছুই বুঝতে পারছেনা যে ওর সাথে হচ্ছেটা কী? দরজা দিয়ে পালাতে চাওয়াটাও বোকামী হবে, একতো দরজা লক করা আর দুই ওর গার্ডরাও ওর পারমিশন ছাড়া অনিমাকে বেড়োতে দেবেনা। নিজে নিজেই বিরবির করে বলল
— “কী করতে চাইছে আদ্রিয়ান? উনি তো বুঝতেই পারছেনা ওর জন্যে কতো বড় বিপদ। আমার সাথে থাকলে ওরা ওনাকে ছেড়ে দেবে না। রিক যদি এটা জানতে পারে তাহলে তো আদ্রিয়ানকে মেরেই ফেলবে।”
— ” কে কাকে মেরে ফেলবে?”
কারো আওয়াজ শুনে চমকে তাকালো অনিমা আদ্রিয়ান মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে। অনিমা কিছু না বলে চোখ সরিয়ে নিলো। আদ্রিয়ান অনিমার সামনে বসে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
— ” বাই এনি চান্স তুমি আমাকে মার্ডার করার প্লান করছোনা তো?”
অনিমা ভ্রু কুচকে তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে বলল
— ” জাস্ট কিডিং। খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? কী খাবে বলো?”
— ” আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”
এবার আদ্রিয়ান আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলোনা। অনিমার হাত ধরে হ্যাচকা টানে ওকে দাড় করিয়ে দুই বাহু ধরে নিজের কাছে এনে বলল
— ” ছেড়ে দিন, যেতে দিন হোয়াটস ইউর প্রবলেম ড্যাম ইট। আমি আগেই বলেছি আমি কাউকে ছেড়ে দেইনা। তোমাকে তো নাই। তোমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করাটা। এবার তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে, দেখি কতো ইগনোর করতে পারো।”
— ” আপনি বুঝতে পারছেন না..”
আদ্রিয়ান জোরে চেচিয়ে বলল
— ” আমি বুঝতে চাইও না ওকে? যদি সত্যি কিছু বলতে চাও তাহলে নিজের সমস্যাটা বলো নইলো জাস্ট কিপ ইউর মাউথ সাট।”
অনিমা এবার করুণ চোখে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান অনিমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই, কাউকে ফোন করে মাটান পরোটা আনতে বলে দিলো। অনিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো, এ ছাড়া আপাদত কিছুই করার নেই ওর। খাবার আসতেই আদ্রিয়ান অনিমার সামনে প্লেট নিয়ে বসে বলল
— ” হা করো।”
অনিমা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান খাবারের লোকমা ওর দিকে এগিয়ে রেখেছে। অনিমা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল
— ” খিদে নেই আমার।”
আদ্রিয়ান জোর করেই এক লোকমা অনিমার মুখে পুরে দিয়ে বলল
— ” ঠিকভাবে খাবে নাকি এভাবে নাকে মুখে ভরিয়ে খাবে সেটা তোমার ব্যাপার। ”
অনিমা আর ঝামেলা না করে চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়ার শেষ করে যেই আদ্রিয়ান প্লেট রাখতে যাবে তখন অনিমা নিচু কন্ঠে বলল
— ” আপনি খেয়ছেন?”
আদ্রিয়ান পেছন ঘুরে হেসে দিয়ে বলল
— ” আমি আটটার মধ্যেই ডিনার কম্প্লিট করে ফেলি।”
বলে আদ্রিয়ান চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর এসে দেখে অনিমা বেডে এলোমেলোভাবে পরে আছে। আদ্রিয়ান মুচকি হাসলো কারণ ও জানতো এরকম কিছুই হবে। কারণ পানিতে ঘুমেল ঔষধ ছিলো। নইলে আজ গোটা রাত জালিয়ে মারতো ওকে। আদ্রিয়ান অনিমাকে কোলে নিয়ে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিলো, তারপর কপালের এলোমেলো চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে অনিমার কপালে একটা কিস করল তারপর মুচকি হেসে বলল
— ” একবার সত্যিই মনে হয়েছিলো তোমাকে কালকেই বিয়ে করে নেবো। পরে ভেবে দেখলাম জোর করে কী বিয়ে হয়? কবুল কী শুধুই একটা শব্দ? যেটা জোর মুখ থেকে বের করে নিলেই বিয়ে হয়ে যাবে? এতে সমাজ হয়তো স্বীকৃতি দিয়ে দিতো কিন্তু মন কী স্বীকৃতি দিতো? আমি জানি তোমার মনেও আমার জন্যে অনুভূতি আছে। কিন্তু কোনো কারণে সেটা প্রকাশ করতে পারছোনা। আগে আমি সেই কারণটা জানবো তারপর কী করতে হবে সেটা ঠিক করব। আর ঐ কলটা কার ছিলো সেটাও ওকে জানতে হবে। অনিমার এই ব্যবহারের কারণ যে ঐ কলটাই সেটা আমি সিউর। কিন্তু অনিকে জিজ্ঞেস করলে ও বলবেনা তাই আমাকেই খুজে বার করতে হবে।”
এরপর আদ্রিয়ান সোফায় গিয়ে শুয়ে পরলো। কিন্তু ওর চোখে ঘুম নেই ও তো ওর ঘুমন্ত মায়াপরীকেই দেখে চলেছে একদৃষ্টিতে।
________________

মাথা খানিক ভার ভার অনুভব করে আস্তে চোখ খুলে তাকালো অনিমা। মাথা চেপে ধরে কোনোরকমে উঠে বসলো ও। আশেপাশে তাকিয়ে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। এরপর ধীরে ধীরে কালকে রাতের কথা মনে পরলো ওর। হঠাৎ এভাবে ঘুমিয়ে কেনো পরেছিলো সেটাই বুঝতে পারছেনা ওও। এসব ভেবে খাটে হেলান দিয়ে বসল। ওয়াসরুমের দরজা খোলার আওয়াজে চোখ খুলে তাকাতেই আদ্রিয়ানকে সাথে সাথে চোখ বন্ধ ফেলল অনিমা। কারণ আদ্রিয়ান জাস্ট নীল একটা হাফ প্যান্ট পরে কাধে টাওয়েল ঝুলিয়োএ চুল নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে এসছে। অনিমা চোখ বন্ধ করেই রাগে গজগজ করে বলল
— ” সিট। এভাবে কেউ বেরোয়?”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে একবার অনিমার দিকে একবার নিজের দিকে তাকালো। অনিমার এই আচরণের কারণটা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান টাওয়েল টা রেখে অনিমা সামনে গিয়ে বসে বলল
— ” ইটস মাই বেডরুম। আর আমি যেভাবে ইচ্ছে থাকতে পারি। রাইট?”
অনিমা চোখ খুলে আদ্রিয়ানকে ওর সামনে দেখে একটু পিছিয়ে গেলো কিন্তু পেছনোর জায়গাই নেই। অনিমা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। কারণ আদ্রিয়ানের লোমহীণ বুকেও বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, চুল দেকে পানি বেয়ে সারা গায়ে পরছে। এইভাবে আদ্রিয়ানকে দেখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছেনা ও। তাই বিরবিল করে বলল
— ” অসভ্য লোক একটা।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল
— ” কিছু বললে?”
— ” আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসছেন। আর কাল এসব বিয়ে, কাজী অফিস কী সব বকছিলেন হ্যাঁ?”
অাদ্রিয়ান অনিমার পাশ দিয়ে হাত রেখে ওর দিকে একটু ঝুকলো অনিমা হকচকিয়ে একটু গুটিয়ে যেতেই আদ্রিয়ান হেসে বলল
— ” ভেবেছিলাম তো বিয়েই করবো পরে ভাবলাম ব্যাপারটা বোরিং হয়ে যাবে। আর তুমিও রাজী নও বিয়েতে তাই ভাবছি যতদিন তুমি রাজি না হবে। আমরা দুজন বিয়ে ছাড়াই একসাথে থাকবো। ”
অনিমা অবাক বলল
— ” মানে?”
আদ্রিয়ান অনিমার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল
— ” মানে লিভ ইন রিলেশনসিপ ইউ নো। দারুণ হবেনা ব্যাপারটা? নতুন ইক্সপেরিয়েন্স হবে কী বলো?”
এটুকু বলেই আদ্রিয়ান চোখ টিপ মারলো। অনিমার চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেলো। হার্ট বিট করতে করতে বেরিয়ে আসার উপক্রম। ও বোকাল মত তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে। লিভ ইন রিলেশনসিপ? লাইক সিরিয়াসলি?
.
#চলবে…
.
( রি- চেইক হয়নি। আর কালকে সকালে এক্সট্রা পার্ট পাবেন। হ্যাপি রিডিং😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here