#বর্ষণের সেই রাতে পর্ব- ৫২
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
.
অনিমা বেডে বসে মাথা নিচু করে মুড অফ করে আছে। যেটা আদ্রিয়ানে একটুও ভালো লাগছে না। কিন্তু কিছু বলছেওনা ওও চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” অনি প্লিজ এভাবে মুড অফ করে বসে থেকোনা আমার ভালোলাগছে না।”
অনিমা কিছু না বলে জাস্ট একটু নড়ে বসলো তবে ওর মুখে বিষন্নতা এখনও স্পষ্ট। আদ্রিয়ান এবার এগিয়ে বসে অনিমার থুতনি ধরে ওর মুখ উচু করে ধরল তারপর কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে বলল,
— ” অনি কে কী বলল না বলল তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসেনা। তুমি নিজের কাছে ক্লিয়ার, আমি জানি তুমি কী আর কেমন। তাহলে অন্য একজনের কথায় তুমি কেনো কষ্ট পাচ্ছো?”
অনিমা মাথা নিচু করে ভাঙ্গা গলায় বলল,
— ” এখানে ফুপির কোনো দোষ নেই। আমার সাথে যা যা হয়েছে তাতে অন্যদের আমাকে নিয়ে এরকম ধারণা তৈরী হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভাগ্যের জোরে কয়েকবার হয়তো বেঁচে গেছি, কিন্তু হতেই তো পারতো। তাই এসব ভাবা স্বাভাবিক।”
আদ্রিয়ান অনিমাকে ছেড়ে বলল,
— ” নাহ স্বাভাবিক না। কেনো মেয়েরা বাড়ির বাইরে একটা রাত কাটিয়ে আসলেই এটা মনে করা হয় যে মেয়েটা উল্টোপাল্টা কিছু করেছে বা ওর সাথে উল্টোপাল্টা কিছু হয়েছে। কেনো? মেয়েদের কী নিজের মতো চলাফেরা করার স্বাধীনতা নেই নাকি? আর যদি এমন কিছু হতোও দেন আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। বিকজ আই ট্রাস্ট ইউ এন্ড আই লাভ ইউ।”
অনিমা কিছু একটা ভেবে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” এত্তো ফ্রিডম দিচ্ছেন আমি যদি সত্যিই ভুলভাল কিছু করে বেড়াই তাহলে?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় চাটা মেরে বলল,
— ” কী বলোতো জানপাখি? তোমার যদি এরকম কিছু করার ওয়ান পার্সেন্ট ও চান্স থাকতো তাহলে আমি তোমাকে ঘরে আটক করে রেখে দিতাম।”
অনিমা আদ্রিয়ান কাধে কুনুইয়ের ভর দিয়ে বলল,
— ” তবুও ছাড়তেন না আমায়?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে বলল,
— ” ভালোবাসলে ছেড়ে দেওয়া যায় না
জানপাখি। ভালোবাসার মানুষটার মধ্যের দোষগুলোকে ভালোবেসে ঠিক করে নিতে হয় বুঝলে?”
অনিমা মুচকি হাসলো। কিছু মনে পরতেই মাথা তুলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে।”
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বলল,
— ” সিরিয়াস কিছু?”
অনিমা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়িয়ে তারপর একটু চুপ থেকে বলল,
— ” আসলে তীব্র স্নেহা, আশিস ভাইয়া অরুর মধ্যে অনেক প্রবলেম চলছে। সেদিন দেখলাম একে ওপরকে ইগনোর করল। দুদিন ধরেই খেয়াল করছি যে তীব্র আর অরুমিতারও মুড অফ। স্নেহার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করছে, স্নেহা ওর বাবার মুখের ওপর কথা বলতে পারছে না, তীব্রকেও কথা বলতে দিচ্ছেনা তাই তীব্র রেগে আছে ওর ওপর। আর অরু..”
আদ্রিয়ান অনিমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
— ” অরুমিতা আর আশিসের সমস্যাটা আমি জানি। দেখো ভুলটা আশিসের, নিজের ভুল বুঝতে হলে ওর নিজেকেই বুঝতে হবে। আশিস যতক্ষণ নিজে না রিয়ালাইস করছে ও যেটা করেছে সেটা ভুল আর ও সত্যিই অরুমিতাকে ভালোবাসে, আর এসব বুঝে ও নিজে থেকে অরুমিতার কাছে ক্ষমা না চাইবে ততোক্ষণ আমরা কিছু করতে পারিনা। এরপর অরুমিতা ওকে ক্ষমা করবে কী না সেটা অরুমিতার ব্যাপার। আর তীব্র আর স্নেহার ব্যাপারটা আমি দেখছি। এখন মিস্টা.. আই মিন আঙ্কেল এর কেসটা নিয়ে ব্যস্ত আছিতো একটু ফ্রি হলেই তীব্রর বাবার সাথে আমি নিজে কথা বলব। হ্যাপি?”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,
— ” হুমম।”
আদ্রিয়ান হেসে অনিমার চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বলল,
— ” রাত হয়েছে অনেক এবার শুয়ে পরো।”
অনিমা জানে আদ্রিয়ানের কথা না শুনে কোনো উপায় নেই। তাই লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান মুচকি হেসে অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” চোখ বন্ধ!”
আদ্রিয়ানের কথা অনুযায়ী অনিমা চোখ বন্ধ করে ফেললো। আর আদ্রিয়ান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান খেয়াল করলো অনিমা ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্রিয়ান অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে।
______________________
পার্টির অফিস থেকে কাজ সেড়ে বলে বাড়ি ফিরছে রিক। হঠাৎ মনে হলো যে স্নিগ্ধার তো এখনি হসপিটাল থেকে ফেরার কথা। একি রাস্তা দিয়ে যখন যাচ্ছে তখন ওকে নিয়েই ফিরুক। এসব ভেবে স্নিগ্ধাদের হসপিটালের সামনে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে বসে স্নিগ্ধার বেড়োনোর অপেক্ষায় করতে লাগল। বেশ কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধাকে দেখতে পেলে রিক। তবে স্নিগ্ধার সাথে একটা ছেলেও আছে। দুজনে হাসাহাসি করতে করতে আসছে, আর দুজনে খুব কাছাকাছি অবস্হাতেই হাটছে। রিকের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এই দৃশ্য দেখে, এমন কেনো হলো ও নিজেই জানেনা, কিন্তু স্নিগ্ধাকে এভাবে দেখতে ওর মোটেও ভালোলাগছে না। রিক গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। গেইটের কাছে এসে ছেলেটা স্নিগ্ধাকে একহাতে হালকা করে হাগ করে বিদায় দিলো, এতে রিকের আরো রাগ হলো। গেইট থেকে বেড়িয়ে রিককে দেখে স্নিগ্ধা বেশ অবাক হয়ে গেলো সাথে খুশিও হলো। এগিয়ে গিয়ে বলল,
— ” আরে রিক দা তুমি এখানে ?”
রিক সানগ্লাসটা খুলে ইতস্তত কন্ঠে বলল,
— ” ঐ এই পথ দিয়েই ফিরছিলাম তোকে দেখতে পেয়ে গাড়ি থামালাম। চল গাড়িতে ওঠ।”
স্নিগ্ধা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে গাড়িতে উঠে বসলো। রিক গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বেশ অনেক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলো। নিরবতা ভেঙ্গে হঠাৎ রিক বলে উঠলো,
— ” ছেলেটা কে ছিলো?”
স্নিগ্ধা অবাক হয়ে বলল,
— ” কোন ছেলেটা বলোতো?”
রিকের এবার গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে, কোন ছেলেটা মানে কী? কটা ছেলের সাথে ঘোরে এই মেয়ে? তাই বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” যেই ছেলেটার সাথে হাসতে হাসতে গেইট পর্যন্ত এলি, কে ও?”
স্নিগ্ধা হেসে বলল,
— ” ওহ আচ্ছা ওর কথা বলছো? ও তো আমার ক্লাসমেট!”
রিক ভ্রু কুচকে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে করতে বলল,
— ” তো ক্লাসমেট এমন কী জোকস শোনালো যে হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পরছিলি?”
স্নিগ্ধা এবার নিজেও বিরক্ত হয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আজব গায়ে ডলে পরবো কেনো হ্যাঁ? ওই ক্লাসে হওয়া একটা ঘটনা নিয়েই কথা বলছিলাম।”
রিক বিড়বিড় করে বলল,
— ” হ্যাঁ সে তো দেখতেই পাচ্ছিলাম।।”
স্নিগ্ধা এবার হাত ভাজ করে সিটে হেলান দিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা তোমার তাতে কী বলোতো?”
স্নিগ্ধার প্রশ্নে রিক নিজেও চমকে গেলো। ঠিকিই তো। ওর কী সমস্যা এতে? ও কেনো এতো প্রশ্ন করছে? এতো রাগ করছে? স্নিগ্ধা যা খুশি করুক ও এসব নিয়ে ভাবছে কেনো? তবুও পরিস্হিতি সামাল দিতে বল,
— ” থাকিসতো আমাদের বাড়িতেই। উল্টোপাল্টা কিছু করলে দ্বায় তো সেই আমাদের ঘাড়েই পরবে তাইনা?”
স্নিগ্ধা কিছু বললনা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। রিক ও কিছু না বলে ভুলে ভ্রু কুচকে ড্রাইভিং এ মন দিলো।
_______________________
আজ অফ ডে তাই আদ্রিয়ান বা অনিমা কেউ অফিসে যায় নি। বিকেলে আদ্রিয়ান নিচে নেমে এসে দেখে মিস্টার এন্ড মিসেস আবরার সোফায় বসে আছে। আদ্রিয়ান হেসে সোফায় গিয়ে বসে বলল,
— ” কী ব্যাপার মিস্টার এন্ড মিসেস। কি নিয়ে এতো মিটিং চলছে শুনি?”
মানিক আবরার বললেন,
— ” এই যে রকস্টার বাবু খুব তো বউ নিয়ে চলে এলে এবার তো সত্যি সত্যি বিয়েটা করতে হবে নাকি?”
মিসেস আবরার ও সম্মতি জানিয়ে বললেন,
— ” দেখ তোর ফুপিমনি কীসব বলে গেলো। হ্যাঁ জানি যে কে কী বলল না বলল এতে তোর কিচ্ছু যায় আসেনা। ইন ফ্যাক্ট আমাদেরও যায় আসেনা। কিন্তু তোকে কেউ কিছু বলার সাহস না পেলেও অনিমাকে কেউ ছেড়ে দেবেনা। ওকে রোজ বাইরে বেড়োতে হয়। তুই তো জানিস আমাদের সমাজটা কেমন? আর ওকে কী কী শুনতে হতে পারে?”
আদ্রিয়ান এবার চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর ওনাদের দিকে বলল,
— ” ইউ আর রাইট বাট এখন যেই পরিস্হিতি তাতে বিয়ের মতো ঝামেলা করে সময় নষ্ট করা যাবেনা। এখন প্রতিটা সেকেন্ড খুব ইম্পর্টেন্ট আমাদের জন্যে। তোমাদের তো বলেছি তাইনা?”
মানিক আবরার বললেন,
— ” হুমম বুঝতে পেরেছি। বিয়েটা আপাদত নাই বা করলে বাট এনগেইজমেন্ট টা হয়ে যাওয়া ভালো না?”
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল,
— ” ফাইন। তোমারা চাইলে তাই হবে।”
মিসেস আবরার খুশি হয়ে বললেন,
— ” তাহলে ডেট ফিক্সড করে ফেলি?”
মানিক আবরার উপরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” হুমম কিন্তু যাকে নিয়ে এতো কথা সে কই? মামনী কোথায় আদ্রিয়ান?”
আদ্রিয়ানও একবার ওপরের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” একটু ঘুমোচ্ছে। আসলে আমিই জোর করে ঘুম পারিয়ে দিয়েছি। দুপুর থেকেই অসুস্হ ছিলো!”
মিসেস আবরার উত্তেজিত হয়ে বললেন,
— ” কী বলছিস কী? কী হয়েছে?”
আদ্রিয়ান ওনাদের আশ্বস্ত করে বলল,
— ” আরে এতো হাইপার হওয়ার কারণ নেই। আসলে একটু মাথা ব্যাথা করছিলো আর শরীর গরম ছিলো হালকা। এমনিতেই সহজে ছুটি পায়না। মাঝখানে কয়েকদিন এতো প্রেশার গেছিলো ওর ওপর দিয়ে , তারওপর ওর হেল্থ কন্ডিশন ও ভালো নেই। জোর না করলে একটুও রেস্ট করতে চায়না।”
মিসেস আবরার উপরের দিকে একবার তাকিয়ে বললেন,
— ” থাক ঘুমোক। আজ ওকে আর নিচে নামতে দিস না। সন্ধ্যার পর কফি পাঠিয়ে দেবো ওপরে। ভালো একটা ঘুম দিয়ে কফি খেলে ভালো লাগবে ওর।”
আদ্রিয়ান কিছু না বলে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ওর মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় এটা ভেবে যে, একজন পুরুষের জীবণের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষ হলো মা আর স্ত্রী, একজন জন্মদাত্রী, আরেকজন জীবনসঙ্গীনী, আর ওর জীবণের এই দুজন মানুষেরই কোনো তুলনা হয়না। এরা দুজনেই নিজের নিজের জায়গায় এক্কেবারে পার্ফেক্ট আর অসাধারণ। এরকম মা আর স্ত্রী পাওয়া যেকোনো পুরুষের জন্যেই ভাগ্যের ব্যাপার।
_______________________
মিস্টার রঞ্জিত ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলেন। রিক দরজার কাছে এসে বলল,
— ” ড্যাড আসবো?”
মিস্টার রঞ্জিত ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে চশমা ঠিক করে রিকেল দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” হ্যাঁ এসো।”
রিক ভেতরে ঢুকে মিস্টার রঞ্জিতের বরাবর বেডে বসল। মিস্টার রঞ্জিত রিকের দিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” কিছু বলবে?”
রিক একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আবার মিস্টার রঞ্জিতের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” মামাকে ডেকেছি মামা আসুক তারপরে বলছি।”
মিস্টার রঞ্জিত কিছু না বলে কাজে মন দিলো। কিছুক্ষণ পর কবির শেখ এসে বেডের অন্যসাইডে বসে বললেন,
— ” বাবাই কিছু বলবে বলছিলে?”
রিক এবার দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” হাসান কোতয়ালের আর্টিকেলটাতে যেই পাঁচজন জার্নালিস্ট কাজ করতেন তার মধ্যে একজন তোমাদের হয়ে কাজ করতো। সে কে?”
মিস্টার রঞ্জিত ভ্রু কুচকে বলল,
— ” সেটা জেনে তুমি কী করবে?”
রিক এবার বিরক্ত হয়ে বলল,
— ” কারণ আদ্রিয়ান ঐ চারজনকে খুজছে। খুজে পেতে বেশি সময় লাগবেনা। আর পেট থেকে কথা বের করতে ও খুব ভালোকরেই জানে। তাই তোমাদের ভালোর জন্যেই বলছি।”
কবির শেখ একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,
— ” যদি ওকে খুজে পায় তো বড় একটা সমস্যা হয়ে যাবে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী ও।”
রিক কবির শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” এইজন্যেই তো বললাম সব তোমাদের। এবার দেখো কী করতে পারো।”
মিস্টার রঞ্জিত চৌধুরী বললেন,
— ” কবির আতাউর কোথায় আছে এখন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে দূরে পাঠিয়ে দাও।”
কবির শেখ থুতনির নিচে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বললেন,
— ” উমহুম শুধু দূরে নয়। আতাউর কে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে ফেলতে হবে নইলে ব্যাপারটা রিস্কি হয়ে যাবে।”
রিক ভ্রু কুচকে বললো,
— ” তারমানে জার্নালিস্ট আতাউর রহমান তোমাদের কাছে হাসান কোতয়ালের আর্টিকেলের ইনফরমেশন গুলো লিক করতো?”
কবির শেখ মাথা হালকা নেড়ে বললেন,
— ” হুমম ও আমাদের কাছে সমস্ত সিকরেট নিউস লিক করতো আর তার বদলে আমরা ওকে টাকা দিতাম।”
রিক এবার লম্বা একটা শ্বাস ফেলে ধীর কন্ঠে বলল,
— ” হুমমম বুঝলাম।”
কবির শেখ উঠে দাড়িয়ে রিকের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” চোখ কান খোলা রেখে ওদের সাথে থেকো। আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের কিন্তু খুব চালাক, ওর নজর এরিয়ে কাজগুলো করা কিন্তু খুব কঠিন।”
রিক ও উঠে দাঁড়িয়ে হালকা হেসে বলল;
— ” আমি জানি সেটা।”
এটুকু বলে রিক চলে গেলো মিস্টার রঞ্জিতের রুম থেকে। মিস্টার রঞ্জিত আর কবির শেখ নিজেদের ভাবনায় ব্যস্ত হয়ে পরলেন।
_____________________
কারো আল্তো ডাকে অনিমা ঘুম ভেঙ্গে গেলো আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে মিসেস আবরার মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে, আর আদ্রিয়ান পেছনে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। অনিমা আস্তে করে উঠে বসে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে বলল,
— ” কী হয়েছে মা? কিছু বলবে? আমাকে ডেকে নিতে?”
মিসেস আবরার অনিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
— ” কেমন লাগছে এখন?”
অনিমা মুচকি হেসে বলল,
— ” আমার আবার কী হবে? আ’ম সুপার ফিট।”
আদ্রিয়ান এবার এসে বেডে বসতে বসতে বলল,
— ” হ্যাঁ তাতো দেখাই যাচ্ছে কতো ফিট। ঠিক করে কথা বলতে পারছেনা একটা সেন্টেস কমপ্লিট করতে চারবার শ্বাস নিতে হচ্ছে সে আবার ফিট।”
অনিমা মুখ ফুলিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর মিসেস আবরারের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” দেখেছো মা? তোমার ছেলে কীভাবে আমাকে টিজ করছে ?”
মিসেস আবরার আদ্রিয়ানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বলল,
— ” এই একদম আমার মেয়েকে টিজ করবি না।”
আদ্রিয়ান ওর হাতে রাখা আপেলটা মুখের সামনে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,
— ” হ্যাঁ সেই। বাড়ি তোমাদের, ঘর তোমাদের, আমার বউটাও তোমাদের। আমার আর কী আছে বলো? সবি তোমাদের। আমিতো মঙ্গলের গ্রহ থেকে এখানে পিকনিক করতে এসে এক্সিডেন্টলি তোমাদের ঘরে ডেলিভারড করে গেছি। কপাল কপাল। এইজন্যেই কে যেনো বলেছিলো বেশি মিষ্টি মেয়েদের বউ করে ঘরে আনতে নেই, তাতে ছেলেরা মিষ্টির বাক্স হয়ে যায়।”
বলেই আপেলে বাইট করলো। অনিমা আর মিসেস আবরার মিটমিটিয়ে হাসছে আদ্রিয়ানের কথায়। মিসেস আবরার টি-টেবিল থেকে কফির মগটা অনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
— ” এটা খেয়ে নে ভালো লাগবে।”
অনিমা কফি মগটার দিকে তাকিয়ে অসহায়ভাবে বলল,
— ” তুমি কেনো আনতে গেলে আমি তো পারতাম।”
মিসেস আবরার রাগী কন্ঠে বললেন,
— ” মারবো টেনে এক থাপ্পড় এই শরীর নিয়ে উনি রান্নাঘরে যাবেন শখ কতো! চুপচাপ কফিটা খা আমিও যাই তোর বাবাকে চা দিতে হবে।”
বলে মিসেস আবরার চলে গেলেন ওখান থেকে। অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও একমনে আপেল খাচ্ছে। অনিমা কিছু না বলে কফির মগটা নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। ব্যালকনির রেলিং ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে নিজের কফির মগে চুমুক দিতে লাগল। কিছুক্ষণপর পেছন থেকে ওকে আলতো করে জরিয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখল আদ্রিয়ান। অনিমা একটু অবাক হলো কারণ আদ্রিয়ান এমনিতে সবসময় ওর আশেপাশে থাকলেও এভাবে হুটহাট জরিয়ে ধরেনা। তবুও কিছু না বলে নিজের একহাত আদ্রিয়ানের হাতের ওপর দিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আদ্রিয়ান স্লো ভয়েজে বলল,
— ” একটা গুড নিউস আছে তোমার জন্যে।”
অনিমা চোখ না খুলে মুখে হাসি রেখেই বলল,
— ” সেটা কী?”
আদ্রিয়ান অনিমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
— ” আগামী শুক্রবার আমাদের এনগেইজমেন্ট।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে ঘুরে অবাক হয়ে তাকালো। আদ্রিয়ান অনিমার চুলগুলো কানে গুজতে গুজতে বলল,
— ” ইয়েস জানপাখি। যদিও বাবা মা বিয়ের কথা বলছিলো বাট আমি না করেছি এখন অন্য কিছুতে টাইম বেশি ওয়েস্ট করা ঠিক হবেনা তাই।”
অনিমা আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
— ” আচ্ছা এরপরের স্টেপ কী হবে?”
আদ্রিয়ান কিছু একটা ভেবে তারপর মুচকি হেসে বলল,
— ” তা জানিনা বাট যা হবে ভালো হবে। ভরসা রাখো আমার ওপর।”
অনিমা নিচু কন্ঠে বলল,
— ” হুম।”
বলে আবারো কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। কিছুদিন যাবত অন্যকিছু ভাবছে ও। আদ্রিয়ান এগুলো কীকরে করে? রিকের মতো একটা মানুষের সিকিউরিটি ক্রস করে সুইডেন এর একটা নির্জন দ্বীপে পৌছে যাওয়া, এতো প্রমাণ যোগার, ওকে সেভ রাখা, কবির শেখ, রঞ্জিত চৌধুরীর মতো পাওয়ারফুল মানুষদেরকেও তোয়াক্কা না করা। এসব কী শুধুমাত্র একজন রকস্টার এর পক্ষে সম্ভব? তবুও কিছু জিজ্ঞেস করেনা ও আদ্রিয়ানকে। হয়তো এই আশায় যে একদিন আদ্রিয়ান নিজেই ওকে সব বলবে।
#চলবে…