ভাড়াটিয়া-৩
শাহিন সাহেব ঘরে বসে আছেন। ওনার প্রচন্ড চা খেতে ইচ্ছে করছে। অবশ্য রহিমা কে বললেই চা বানিয়ে দিবে। কিন্তু বলতে ইচ্ছে করছে না!
মনে হচ্ছে কেউ নিজ থেকে চা নিয়ে এলে ভালো হতো। ইচ্ছে পূরনের একটা ব্যাপার হতো। জান্নাতে এমনটা হবে। মনে মনে কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করলেই খাবার হাজির হবে!
আবার সেই খাবার নাকি কষ্ট করে খেতেও হবে না। মুখের মাঝে খাবারের স্বাদ পাওয়া যাবে।
জান্নাতে সব ধরনের কষ্টের অবসান হবে। যত রকম কষ্ট আছে সব দুনিয়ায় ভুগতে হবে!
আনোয়ারা বেগম চা নিয়ে শাহিন সাহেবের ঘরে ঢুকল। শাহিন সাহেবের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিল না! তার মতো একজন নাদান বান্দার ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করে ফেললেন!
তবে মানুষের ছোটো অনেক ইচ্ছে হুট করে পূরণ হয়। যেমন রাস্তায় দাঁড়িয়ে একজন ভাবছে এখন যদি বৃষ্টি হতো! খুব ভালো হতো। দেখা যায় আচমকা বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়!
বৃষ্টি দেখে মানুষটার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তার মনখারাপ হয়ে যায়। সে ভাবে ইশ যদি বড়ো কিছু চাইতাম! ইচ্ছে পূরণের সুযোগটা নষ্ট হলো!
শাহিন সাহেবের একটা ধারণা ছিলো চা নিয়ে আসবে রহিমা। তার এ ধারণাটাও ভুল প্রমাণিত হয়েছে!
আনোয়ারা বেগম চা নিয়ে এসে শাহিন সাহেবের পাশে বসলেন। “তোমার চা।” এমনভাবে বললেন যেন শাহিন সাহেব ওনাকে চায়ের কথা বলেছেন!
“এ সময় চা নিয়ে এলে যে?”
আনোয়ারা শাহিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বললেন, ” কেন জানি মনে হলো তোমার চা খেতে ইচ্ছে করছে! ”
শাহিন সাহেব কিছু বললেন না। আলগা একটু হাসি দিলেন। ব্যাপারটা ওনার কাছে কেমন রোমাঞ্চকর লাগছে!
পুরো ঘটনাটা আনোয়ারা কে বলতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু বলতে পারছেন না। কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে! তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় কথা বললেন, ” তোমার তিনতলা ভাড়া হয়েছে? ”
“হ্যাঁ, খুব ভালো ভাড়াটিয়া পাওয়া গেছে! ”
শাহিন সাহেব আনোয়ারার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসি দিয়ে বললেন, “তোমার কাছে সব ভাড়াটিয়াই তো ভালো! পরে দেখা যায় একেকটা চিজ!”
আনোয়ারা বেগম একটু বিরক্ত হলেন। “মানুষ কে না চিনে এমন বলবে না তো! তুমি জানো আসলাম সাহেব খুব ভালো মানুষ! ”
শাহিন সাহেব কিছু বললেন, “ভালো হলেই ভালো!” তিনি জানেন আনোয়ারার মনটা খুব ভালো। সব মানুষ কে কেমন আপন করে নিতে চায়।
দুনিয়া তো ফাজিলে ভরা। সেটা আনোয়ারা কে বুঝাবে? যাক থাকুক ওর মতো করে। মানুষ কে ভালোবাসায় খারাপ কিছু নাই।
“তুমি তো দেখনি! আসলাম সাহেবের মেয়েটা কী যে সুন্দর দেখতে! যেমন সুন্দর দেখতে তেমনই আবার লক্ষী একটা মেয়ে।”
শাহিন সাহেব আনোয়ারার দিকে আড় চোখে তাকালেন। চোখে কেমন খুশি ঝিলিক! ঘটনা কী একটা মেয়েকে দেখে আনোয়ারা এত খুশি কেন? ও কী মেয়েটা কে ঘিরে কোনো পরিকল্পনা করছে নাকি।
কী জানি বলা যায় না! সরল মনের মানুষটা বড্ড বোকা! কত সহজে মানুষ কে বিশ্বাস করে ফেলে।
“তা-ই নাকি?”
“হ্যাঁ, খুব ভালো হবে বুঝলে–!”
বলেই আনোয়ার আর কিছু বলল না। মনে হয় এক্ষুনি সে বলতে চাচ্ছে না। একটা পরিকল্পনা সে করছে এটা শাহিন সাহেব ঠিক ধরতে পারছেন। তিনি আনোয়ারা কে এ বিষয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না ঠিক করলেন।
অবশ্য আনোয়ারা নিজেই সব কিছু বলে দিবে। কোনো কথা বেশিদিন ও পেটে রাখতে পারে না।
————
রায়হান দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। ওর এখন ইউনিভার্সিটিতে যেতে হবে। যদিও এখন ক্লাস-টেলাস কিছু নাই। তবু্ও ইউনিভার্সিটিতে যায়। ওর মতো আর কিছু বন্ধু আসে। আড্ডা -টাড্ডা মারে। ভবিষ্যতে কী করবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
দূর থেকে দেখল একটা রিকশা আসছে। হাতের ইশারায় রিকশাটাকে ডাকল। রিকশাটা কাছাকাছি আসার সাথে সাথে কথা থেকে সুইটি এসে রিকশায় উঠে পড়ল!
উঠেই বলল, “চলেন মামা।”
রায়হান হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। এ মেয়ে কোথা থেকে আসল। মেয়েটা কে আগে কখনো এলাকায় দেখেছে বলে মনে হচ্ছে না। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর! নীল রংয়ের একটা জামা পরেছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা নীল পরী। কিন্তু পরীর ব্যবহার এমন কেন হবে? পরী তো হবে মায়াবী।
রায়হনের মনে হলো মেয়েটা কে কঠিন কিছু কথা বলা দরকার। কিন্তু ও কঠিন কথা বলতে পারে না। এমন সুন্দরী একটা মেয়েকে তো কঠিন কথা আর কঠিন!
একটা গালি দিলে হয়। রায়হান অবশ্য বেশ কয়েকটা গালি জানে। ফাজিল, বদমাশ, আর গান্ডু এ সব গালি কি মেয়েদের দেয়া যায়? নাকি মেয়েদের জন্য আলাদা গালি আছে। আর একটা গালি অবশ্য রায়হান জানে। সেটা মনে হয় বলা যাবে না! খুবই বাজে গালি।
এটা শিখেছিল টুম্পার কাছ থেকে। টুম্পা হলো রায়হানের ক্লাসমেট। ওরা একসাথে স্কুলে পড়ত। একদিন টুম্পা এসে বলল, “এই রায়হান তোরা না-কি খান বংশ?”
রায়হান কিছু বলল না। টুম্পা সব বিষয় নিয়ে ফাজলামি করে।
“কী রে বললি না? তোরা খান বংশ কিনা?”
“এ সব বংশ-টংশ এখন চলে না।”
“চলে। তবে খান কিন্তু খুবই উচ্চ বংশ।”
রায়হান কিছু বলল না।
“তুই কি জানিস তোদের উচ্চ বংশের সাথে একটা প্রশ্ন যোগ করলে ভয়ংকর একটা গালি হয়?”
রায়হান টুম্পার দিকে তাকিয়ে রইল। টুম্পা মিটিমিটি হাসছে।” কী বুঝতে পারছিস না?”
তোদের বংশের সাথে একটা কি যোগ করে দিবি। হা হা হা
রায়হান দেখল মেয়েটা রিকশা নিয়ে চলে গেছে! ওকে কিছুই বললও না মেয়েটা। মনে হয় বুঝতে পারেনি। রায়হান রিকশা ডেকেছে। রিকশাওয়ালাটাও কী শয়তান! সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে চলে গেল।
এ জায়গাটাতে সকালের দিকে রিকশা পাওয়া যায় না। লম্বা সময় অপেক্ষা করে একটা রিকশা পাওয়া গেল।
রায়হানের মেজাজটা একটু খারাপ। শুধু শুধু দেরি হয়ে গেল। আজ রইসের সাথে একটা জরুরি কাজ আছে। গতকাল ও অনেকবার বলেছিলো আজ একটু আগে যেতে।
যেদিন কাজ থাকে সেদিন ঘুম ভাঙে দেরি করে। রাতে মনে ছিলো না। না হলে রহিমা কে বলে রাখলেই হতো। ও আবার খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে।
মা ইদানিং রায়হান কে সকালে ডাকে না। ডেকে কী হবে? এখন তো রায়হানের ভার্সিটিতে যাওয়ার তাড়া নেই।
রিকশায় উঠে বসার পরই রইসের কল আসল। কলটা রিসিভ করবে কি-না ঠিক করতে পারছে না রায়হান।
রইসের অভ্যাস হলো কল রিসিভ না করা পর্যন্ত কল দিতেই থাকবে। ইচ্ছে না করলেও কলটা ধরল রায়হান।
“কী রে কোথায় তুই?”
“রিকশায় বসে আছি।”
“এখনো রিকশায় মানে তুই মাত্র বাসা থেকে বের হয়েছিস!”
“না, বের হয়েছি ঘন্টাখানেক আগে। এসে তোকে সব কিছু বলব।” কলটা কেটে দিলো রায়হান। রায়হান মেয়েটা কঠিন কথা বলতে না পারলেও রইস তাকে ঠিকই বলবে!
চলবে–