ছায়া নীল!
৪.
ওকে আমি অনুভব করতে পারি। আচ্ছা ও কি আমায় অনুভব করতে পারে??
আমি ওর জন্য যতোটা পাগল, ও কি তাই?
আমি ওকে যতোটা কাছে পেতে চাই, ও কি ততোটাই আমাকে কাছে পেতে চায়???
আফরোজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা বললো। কী বললো বুঝলাম না।
অন্যমনস্ক ছিলাম তাই বুঝতে পারি না। আফরোজা কে জিজ্ঞেস করলাম
– কিছু বললি?
– কফি খাবি??
– আনতে পারিস।
আফরোজা চলে গেলো। একটা সুযোগ পেয়েছি তার সদ্ব্যবহার করা দরকার। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলপিন এর প্যাকেট টা বের করলাম।
একটা আলপিন ডান হাতে নিয়ে বাম হাতের প্রত্যেকটা আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
এখন আর তেমন ব্যথা লাগে না। প্রথম প্রথম খুব ব্যথা লাগতো। কয়েকদিন যাবত হাত ফুলে থাকতো। কিন্তু এখন একটু জ্বলে।
এটুকু কষ্টে ওকে কাছে নিয়ে আসা সম্ভব না।
আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। আরেকটা আলপিন বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
কিন্তু আলপিন টা বারবার পিছলে যাচ্ছে। রক্তে ভিজে আছে আংগুল গুলো আর সেই ভেজা আংগুলে আলপিন ধরাতে পিছলে যাচ্ছে।
মনে হলো কারো পায়ের শব্দ আমার রুমের দিকেই আসছে।
তাড়াতাড়ি করে হাত মুছে নিয়ে, আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম।
এই কাজ প্রথম না তাই খুব সহজে করতে পারি। আমার কারণেই চাকু, বটি বা ধাড়ালো কোনো জিনিষ বা ব্লেড ও তালা মেরে রাখা হয়।
যখন প্রয়োজন হয় তখন মা নিজে দাঁড়িয়ে কাজ করিয়ে আবার তালা মেরে রাখেন।
বিয়ে বাড়িতে চাকু পাওয়াটা কঠিন হবে না।
আফরোজাই মাকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে বলেছে।
ওকে সব শেয়ার করার একটা খারাপ দিক। আমার কোনো ক্ষতি হবে বুঝতে পারলেই সেটা বলে দিবে মার কাছে।
ব্যাস আমি তখন বন্দী কারাগারে।
আলপিন গুলো খুব সাবধানে রেখেছি। দুই মগ কফি নিয়ে আফরোজা এলো।
আমার হাতে এক মগ দিয়ে ও নিজে এক মগে চুমুক দিলো।
আমিও ওর সাথে কম্পানি দিলাম। গরম মগ ধরাতে হাত টা জ্বলছে। জ্বলুক না, ওর জন্য তো এটুকু কিছুই না।
চাকু কীভাবে আনবো সেই ফন্দী টা আঁটতে পারলেই হয়।
কফি শেষ হবার পর আফরোজাকে বললাম
– আফরোজা আমার না খিদে পেয়েছে।
– আন্টিকে বলবো ভাত বা পোলাও আনতে?
– না রে ওসবের খিদে না।
– তাহলে কী খাবি?
– ফল খাবো।
– একটু বোস আমি নিয়ে আসছি।
ও আবার চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ও ফল নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু চাকু নেই।
আমি বললাম
– আপেল কী দিয়ে কেটে খাবো?
– দাঁত দিয়ে। আমি জানি তুই ফল কেনো চেয়েছিস? তুই চাকু দিয়ে নিজের হাত বা পা কাটবি। তাই না???
আমি হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতেই বললাম
– তুই তো আমার থেকেও চালু।
– তোর সাথে প্রায় ৭ বছর যাবত আছি। তোকে আমি পুরোটা না হলেও অধিকাংশ টাই জানি।
নিলু আমাদের রুমে এসে আফরোজা কে বলল
– খালাম্মা আপনাকে ডাকে।
আফরোজা চলে গেলো। নিলুকে আমার নানী নিয়ে এসেছেন। সে এই বাড়িতে নতুন। তার আমার ব্যাপারে বেশি কিছু জানার কথা না।
ওকে দিয়েই কাজটা করানো যাক।
নিলু চলে যাবে আর ওকে ডেকে বললাম
– নিলু, চাকু নিয়ে আয় তো। ফল কেটে খাবো।
– আচ্ছা, আপামনি।
মুহূর্ত এর মধ্যে ও চাকু টা এনে দিলো। নিলুকে বললাম চলে যেতে।
চলে গেলো। মেয়েটা অনেক ভালো। আমাকে যখনি দেখে তখনই ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আমার অসহ্য লাগে এভাবে তাকালে। যাকে এতো ভালবাসি সেই তাকায় না আর অন্যরা…….
চাকুটার ধার আছে বটে।
চাকুটাকে কব্জির নিচে ধরলাম। খুব আলতো করে একটা আচর দিলেই হবে।
মনে হচ্ছে মা, আফরোজা আর আরো কয়েকজন আমার রুমের দিকেই আসছে। তাই চাকুটাকে আমি যেখানে বসেছি তার নিচে রেখে দিলাম আড়ালে।
রুমে ঢুকে আমার সামনে একজন ৬০-৬৫ বছরের মহিলা বসলেন।
তার হাতে লাগেজ। আমাকে বললেন
– বউ মা, ঝটপট করে সেজে নাও তো। আর বেশিক্ষণ নেই।
মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন
– বেয়াইন সাহেব, কাজী সাহেব কতদূর?
ও তার মানেই ইনিই আমার হবু শাশুড়ি। দেখতে খারাপ না। আচ্ছা নীলের মা দেখতে কেমন? সেও কি আমাকে বউ মা বলে ডাকবে???
হবু শাশুড়ি বললেন
– আর মাত্র ১ ঘণ্টা!
হবু শাশুড়ি চলে গেলেন। লাগেজ থেকে শাড়ী বের করে আমাকে পড়িয়ে দিলেন।
আমিও ভালো মেয়ের মতো পড়লাম। মা সাজাতে জানেন না।
তাই শাড়ী পড়িয়ে, গহনাগাঁটি পড়িয়ে বললেন
– দেখেছিস কতো গহনা দিয়েছে তোকে??
– অনেক, আরো দিবে বিয়ে হলে।
– হ্যা, ঠিকি ধরেছিস।
– মা, আমার না পানির তেষ্টা পেয়েছে।
আফরোজা যে কোন সময় রুম থেকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।
মাও পানি আনতে চলে গেলো।
ড্রয়িংরুমে কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম কাজী সাহেব এসে গেছেন।
রুমের দরজা আটকে দিলাম আর বারান্দার দরজাও আটকে দিলাম।
চাকু টা ডান হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ওকে অনুভবে আনার চেষ্টা করলাম।
চেষ্টা বিফল হলো। বাম হাতের কব্জির নিচে চাকুর ধাড়ালো অংশ ধরে খুব জোড়ে আচর কাটলাম।
সাথে সাথেই ফিনকী দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।
অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি বুঝতে পারছো????
দেখো না আমার খুব খারাপ লাগছে???
চলবে……..!
© Maria Kabir