ছায়া নীল পর্ব-৮

0
300

ছায়া নীল !

৮.
আমি সৌরভ এর বুকের বাম পাশের উপর আমার ব্যান্ডেজ করা হাত রাখলাম। সৌরভ কিছুটা অবাক হলো। আমি ওকে বললাম
– আমার চোখের দিকে তাকাও
ও আমার চোখের দিকে তাকালো আমি ধীরে ধীরে বললাম
-আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না। যা যা ঘটেছে তোমার আমার মাঝে তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। প্লিজ সৌরভ হেল্প মি!
সৌরভ আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো
– আমি বলবো তোমাকে কিন্তু এখন না।
– আমি সব গুলিয়ে ফেলছি। সবকিছু ধোঁয়াটে লাগছে আমার কাছে।
– মনে করো সবকিছু স্বাভাবিক আর কোনো ধোঁয়াটে কিছুই নাই।
– আমি পারছি না।
– একটু সুস্থ হও তারপর সময় করে বলবো।
– তুমি যেও না আমাকে একা ফেলে।
– আরে আমি তো আছি তোমার মাঝেই। তোমার মাঝেই আমি ছড়িয়ে আছি শুধু অনুভব করতে যতটুকু সময় লাগে।
মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দিকে আসছে। আমি ওর থেকে দূরে সরে গেলাম আর সৌরভও দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাবা বারান্দায় এসে বলল
– ওরা তো এখন চলে যাবে তাই রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভালো হয়।
সৌরভ বলল
– কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তার উপর আবার রান্না কে করেছে???
– বাইরের থেকে খাবার কিনে এনেছি।
– আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আপনার কষ্ট করতে হবে না।
সৌরভের কাঁধে হাত দিয়ে বাবা বলল
– নাহ বাবা তুমি যা উপকার করেছো সারাজীবন মনে রাখবো।
কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো। আমার সুইসাইড এর কারণ টা বাবা জানলে কাঁধে হাত না রেখে গালে থাপ্পড় বসাতো।
জোড়াজুড়ির কারণে রাত ৮ টায় খেতে হলো।

সৌরভ চলে যাবার আগে আমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়ে গেলো আর বললো – যখন খুব মনে পড়বে তখন আমাকে ফোন করবে।
আমি বললাম – তুমি করবে না?
সৌরভ কী যেন ভাবলো তারপর বললো
– হ্যা করবো।
মেজো ফুপু আর সৌরভ চলে গেলো। পুরো বাসায় আমি আর বাবা।
বাবা আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়ে বলল
– তুই ঘুমা আর কাল সকালে তোর মা আসবে।
কথাটা বলেই বাবা চলে গেলো। মা আসবে, জানি না আবার কতো বেশি মার খেতে হবে।
মা যে কেনো এমন করে বুঝিনা। আমাকে কেনো এতো বড়লোকের সাথে বিয়ে দিতে হবে?
বড়লোক দিয়ে কী হবে?? কেনো বুঝে না মা আমার শান্তি অন্যকিছুতে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে সৌরভের চেহারা টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
নীল নাম দিয়েছিলাম কোনো নাম খুঁজে না পেয়ে। নীল নাম দেয়ার মধ্যেও একটা লজিক আছে।
লজিকটা হলো – রাতের অন্ধকারে একমাত্র নীল রঙ টাই মিশে যায়।
রাধা ঘন শ্যামের সাথে রাতের বেলা দেখা করতে যাওয়ার সময় নীল রঙের শাড়ী পড়তেন। যাতে কেউ রাধার অস্তিত্ব বুঝতে না পারেন।
ঠিক তেমনিভাবে ও………
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নীলের নাম্বার। ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু কোনো শব্দ আসছে না ওপাশ থেকে।
এতোবার হ্যালো বললাম তারপরও কোনো রেসপন্স নাই।
ফোন কেটে দিলাম হয়তোবা ঘুমায় আছে। হাতের আশেপাশে ফোন ভুলে চলে আসছে।ফোন পাশে রেখে চোখ বুজলাম সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো।
এর মধ্যে আবার কাটা হাতে ব্যথা করতে শুরু করলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম।
– হ্যালো
এইবার প্রথমে ওপাশ থেকেই আগে হ্যালো বললো। ওর কণ্ঠ তো এমন না। ফোনে তো অনেকের কণ্ঠে চেঞ্জ আসে।
ওর নাম্বার থেকে ও ছাড়া আর কেউই ফোন করতে পারেও না।
আমি বললাম
– এতো রাতে ফোন দিলা?
হাসার শব্দ কানে আসলো তারপর বললো
– কেবল ১১ টা বাজে এখন তো কেবল শুরু।
– কিছু বলবা?
– তোমার হাতের ব্যথা বেড়েছে মনে হয়??
– হ্যা, তুমি জানলে কীভাবে? আমি তো বলিও নাই।
– আরে রাতে সবধরনের ব্যথা বাড়ে তাই বললাম।
– ওহ। তুমি কী করছো?
– আচ্ছা রাখি তুমি ঘুমাও।
– এই শুনো কিছু বলবা?
– রাখো তো।
ফোন কেটে গেলো। আমি যে ফোন দিবো ফোনে টাকাও নেই।
জানি না আমি আমার জীবন কোন দিকে যাচ্ছে।
জানি না ভালবাসার ঢেউ আমাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমার কেনো যেন কোথাও একটা খটকা লাগছে।
মেজো ফুপুর কাহিনী টা যেভাবেই হোক আমাকে জানাতে হবে!
কিন্তু সেটা কী হতে পারে?
ফোনে মেসেজ আসলো। মেসেজ চেক করলাম
সৌরভের মেসেজ – স্বপ্নে আমি আসতে পারি?

চলবে……….!

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here