ভাড়াটিয়া-১২
সুইটি বিউটি পার্লারে গিয়ে নিজের লম্বা চুল ছোটো করে ফেলল। চুল কাটলে মানুষ কে চেনা একটু কঠিন হয়ে যায়। চুলের সাথে সাথে চেহেরা অনেকটা বদল হয়ে যায়। আসলাম বলে গেছেন কিছুদিন বাসা থেকে বের না হওয়ার জন্য।
সুইটির বের হতেই হবে। সুইটির খারাপ লাগছে! আনোয়ারা বেগম মানুষটার জন্য। কেমন আপন করে নিয়েছিলেন। আজকাল এমন মানুষ পাওয়া যায় না!
সাদা রংয়ের একটা শার্ট, নীল রংয়া প্যান্ট পরেছে সুইটি। ওকে দেখতে অনেকটা ছেলেদের মতো লাগছে। খুব আপন কেউ না হলে সুইটি কে চিনবে না।
টাকা পয়সা সব ভাগাভাগি হয়ে গেছে! সুইটি পনেরো লাখ টাকা পেয়েছে। বাকিটা ওরা দুইজন নিয়ে গেছে। গয়নাগুলো বিক্রি করা হবে পরে। আপাতত রেখে দেয়া হয়েছে।
শাহিন সাহেব অফিসে বসে আছেন। পিয়ন এসে একবার চা দিয়ে গেছে। চা এখনো তিনি খাচ্ছেন না। মেজাজটা ভালো না।
বিয়ের ঝামেলটা কোনোরকমে সামাল দেয়া গেছে৷ আনোয়ার অবস্থা এখন পুরোপুরি ভালো। রায়হানের মনের অবস্থা ভালো না। ভালো থাকার কথা না। এমন একটা ধাক্কা ছেলেটা খেলো!
সুইটি মেয়েটাকে খুঁজে বের করতে হবে। এদের ছেড়ে দেয়া যাবে না।
পুলিশের আইজি শাহিন সাহেবের বন্ধু মানুষ। ওকে ব্যাপারটা বলতে হবে। ওদের ছবি টবি থাকলে ভালো হতো। আছে কিনা কে জানে? বাড়া দেয়ার সময় ছবি আইডি কার্ড নেয়ার কথা৷ আনোয়ারা নিয়েছে বলে মনে হয় না!
দুষ্ট লোকেরা কেমন করে আপন হয়ে যায়! তখন সাধারণ নিয়ম কানুনের কথা মনে থাকে না!
শাহিন সাহেব বাড়িতে কল দিলেন। ফাতেমা কল ধরলো “কী খবর বাবা?”
“ভালো। কী করিস রে মা?”
“বই পড়ছিলাম বাবা।”
“তোর মা কই?”
“মা রান্না করে।”
“আচ্ছা শোন, সুইটিদের কোনো ছবি টবি আছে বাসায়?”
“ওনাদের সবার ছবি তো নাই! সুইটির একটা ছবি মামার কাছে আছে।”
“তোর মামা কে বল, ছবিটা আমার মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিতে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।”
ইলিয়াস সাহেবের মেজাজ ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। ওনার কাছে একটা প্যাকেট এসেছে। প্যাকেটা খুলে উনি বসে আছেন। এটা পেয়ে খুশি হওয়ার কথা। কারণ কাজটা হয়েছে।
বন্ধু খুব অল্প সময়ে বিরাট একটা কাজ করে দিয়েছে। বন্ধু কে বড়সড় একটা ধন্যবাদ দিতে হয়। সুইটি মেয়েটার পাসপোর্ট করেছেন। এবং সেই পাসপোর্ট মরিশাসের ভিসাও লাগিয়ে ফেলেছে! বিরাট কাজ করেছে বন্ধু!
উনি চিন্তা করছেন। ভাগ্যিস ইয়ার টিকিটটা কাটা হয়নি। না হলে কাকে পাঠাতেন এখন?
ফাতেমা উঁকি দিলো মামার ঘরে। দেখল মামা চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের ওপরে রাখা একটা প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছেন।
“কী করো মামা?”
ইলিয়াস ফাতেমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করল।” কিছু না রে মা। আয় ভিতরে আয়।”
ফাতেমা ঘরে ঢুকে খাটের ওপরে বসল।
ইলিয়াস বললেন, “কিছু বলবি? না এমনিতেই এসেছিস। ”
মামার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলল, “বাবা কল দিয়েছে। তোমার কাছে সুইটি মেয়েটার একটা ছবি আছে না?”
“শুধু ছবি কি রে! একটা পাসপোর্ট আছে। অবশ্য পাসপোর্ট দিয়ে কোনো কাজ হবে না। পাসপোর্ট এ বাড়ির ঠিকানা দেয়।”
“বাবা বলছেন, ছবিটা বাবা কে পাঠাতে।”
“আচ্ছা পাঠিয়ে দিচ্ছি। মেয়েটা কে ধরা দরকার।”
ইলিয়াস সুইটির ছবিটা শাহিন সাহেবের মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলেন।
“তোর মা কই?”
“মা রান্না করে।”
“আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবি রে মা।”
“আমি চা নিয়ে আসছি মামা।” ফাতেমা উঠে দাঁড়াল।
শাহিন সাহেবের সামনে বসে আছেন পুলিশের আইজি মিলন খন্দকার। শাহিন সাহেবের কল পেয়ে চলে এসেছেন।
“কি খাবা বলো?”
“সে পরে হবে। আগে তোমার জরুরি কথাটা শুনি। আচানক এমন ভয়ংকর তলব করলা! দুইদিন কাটেনি ছেলের বিয়ে দিয়েছ। এরমধ্যেই পুলিশ দরকার হয়ে পড়ল! “হা হা হা।
“ফোনে তো তোমাকে বলেছি।”
“সে তো বলেছ। এখন কি চাও এটা বলো?”
এ সময় শাহিন সাহেবের পিয়ন ঘরের ভিতরে ঢুকল। উনি বোধহয় বেল চাপ দিয়েছেন।
“দুই কাপ কফি দাও। আর কিছু? ”
“না আপাতত কফিই চলুক। পরে দেখা যাবে তোমার মামলা বুঝে।”
“আমি চাই মেয়েটা খুঁজে বের করতে ব্যস।”
“ছবিটা দাও। দেখি কী করা যায়।”
পিয়ন এসে দুই কাপ কফি টেবিলে রাখল। কফির কাপটা হাতে নিয়ে আলত চুমুক দিলেন মিলন খন্দকার। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলেন। একটু বিরক্তও হলেন!
কী করে এত বড়ো ভুলটা করল! আরে মেয়ে মানুষ বাসায় বসে থাকে। দুনিয়াদারির খবর তো ওদের কাছে থাকে না। মানুষ এখন কী পরিমান ধুরন্ধর হয়েছে তা কি শাহিন জানে না?
ভাড়াটিয়া একটা মেয়ের সাথে চেনা নাই জানা নেই বিয়ে ঠিক করে ফেলল! এটা কোনো কথা?
ভেবেছিল কিছু কঠিন কথা বলবেন। কিন্তু শাহিনের মুখোমুখি হয়ে কিছু বলতে পারলেন না! মানুষ তো এমনই হওয়ার কথাছিল। কতটা উদার মনের হলে। সাধারণ একটা ভাড়াটিয়ার মেয়ের সাথে একমাত্র ছেলের বিয়ে দিতে চায়!
সকালে একটা পার্সেল এসেছে শাহিন সাহেবের বাড়িতে। পার্সেলটা ইলিয়াসের নামে। প্রেরকের নাম সুইটি! ইলিয়াস বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে পার্সেলটার দিকে।
ওনার পাসপোর্ট সহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব পাঠিয়ে দিয়েছে মেয়েটা। ওনার মনটা ভালো হয়ে গেছে! বিরাট ঝামেলা থেকে বাঁচা গেছে। ইলিয়াস সুইটি মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিলেন। এখন মনে হচ্ছে মেয়েটা খুব একটা খারাপ না! কেন যে এমন একটা কাজ করল!
চলবে —