ভাড়াটিয়া-৪
পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দাঁড়িয়ে আছে রায়হান আর রইস। রইসের কাজ আজকে আর হবে না। পরে এক সময় যেতে বলেছে।
রইস বলল,” দ্যাখ কী সুন্দর একটা মেয়ে!”
রায়হান মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। আরে এই মেয়ে এখানে কেন? সকালে রিকশা নিয়ে চলে এসেছিল মেয়েটা।
“চিনিস নাকি মেয়েটাকে?”
রায়হান বলল, “না।”
“যেভাবে তাকিয়ে আছিস, মনে হয় তোর পাশের বাসার মেয়ে!”
“কী সব বলিস না তুই! চল ক্যান্টিনের দিকে যাই।”
“মেয়েটা কি আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ে না-কি রে? আগে তো দেখিনি। ”
“জানি না। পড়লে পড়তেও পারে।”
“চল পরিচয় হই।”
একটু বিরক্ত হয়ে রায়হান বলল, “তুই যা, আমি ক্যান্টিনের দিকে যাই।”
রইসও অবশ্য গেল না। দুইজনে ক্যান্টিনের দিকে রওয়ানা দিলো।
ক্যান্টিনে এ সময়ে খুব একটা ভির থাকে না। আজ মনে হয় ওদের কেউ আসেনি। সোহেলের সাথে দেখা করা যায়। ও মহসিন হলে থাকে। না, আজ আর কারো সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে না। রইসের কাজটা যেহেতু নেই। বাড়ি চলে যাওয়া যায়।
একটা টেবিলে বসল ওরা দুইজন। রইস বলল, “আজ দেখি কেউ আসেনি রে!”
“হ্যাঁ, তাই তো দেখছি।”
রইস হাঁক দিলো,” মামা দুই কাপ চা দাও তো। আর কিছু খাবি নাকি? ”
“না, এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। তুই খেলে খা।”
ক্যান্টিনের মামা দুই কাপ চা এনে টেবিলে রাখল। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আলত চুমুক দিলো রইস।
“তারপর তোর প্লান কি বলতো?”
রায়হান চায়ের কাপটা হাতে ধরে বলল, “দেখি কী করা যায়।”
“বি,সি এস টি সি এস দিবি না-কি? ”
“দেয়া তো দরকার। একটা সরকারি চাকুরি হলে খারাপ হয় না। জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটান যায়।”
“তোরও চাকরি-বাকরি নিয়ে চিন্তা আছে তাহলে!”
“কেন থাকবে না? আমার বাবা কি এ দেশের রাজা নাকি? ”
“রাজা না হলেও রাজার চেয়ে কম না!”
“ধুর! তোর খালি আজগুবি কথাবার্তা। ”
“হলের দিকে যাবি?”
রায়হান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” না রে। আজ বাড়ি যেতে হবে।”
“বাড়িতে কাজ-টাজ আছে নাকি?”
“আছে হয়ত। মা বলেছে তাড়াতাড়ি ফিরতে। আজ বের হতেই মানা করছিলো। তোর কাজটার জন্যই আসলাম কিন্তু কাজটা তো আর হলো না।”
রইস বলল,” এখনি চলে যাবি নাকি! বস না আর কিছুক্ষন। ওরা হয়ত কেউ আসবে।”
“আজ যাই রে। দেখি সময় পেলে কাল একবার আসব।”
রায়হান ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেল। কেন জানি আজ বাসায় যেতে খুব ইচ্ছে করছে!
——–
অনেকটা সময় ধরে ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরল সুইটি। নতুন এলাকাটা বেশ ভালো।
বাড়িটা সুইটির খুব পছন্দ হয়েছে। বাড়িওয়ালীটাও খুব ভালো! প্রথমদিন কেমন জোর করে বাসায় নিয়ে খাওয়াল।
রাতেও আবার এসে খবর নিয়ে গেলেন। সব কিছু ঠিকঠাক হয়েছে কি-না? ভাবা যায়! রাতেও অবশ্য খাবারের কথা বলেছিলেন। সুইটিরা রাজি হয়নি। বাসায় রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করা হয়ে গেছিল।
সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় আনোয়ারার সাথে দেখা হয়ে গেল।
সুইটির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, ” কেমন আছ মা?”
“ভালো আন্টি। আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো আছি মা। এসো ভিতরে। ”
এখন ওনাদের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। এমনভাবে ধরলে নাও বলা যায় না।
শাহিন সাহেব আজ অফিসে যাননি। তিনি ঘরে বসে বসে বই পড়ছেন। আনোয়ারা সুইটি কে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে ভিতরে গেলেন শাহিন কে ডাকতে। সেদিন শাহিন বাসায় ছিলেন না। মেয়েটার সাথে দেখা হয়নি।
আনোয়ারা এসে বললেন,” তুমি একটু ড্রয়িং রুমে গিয়ে মেয়েটা কে একটু সময় দাও তো। আমি চা করে নিয়ে আসছি।”
শাহিন বইটি একপাশে রেখে বললেন, “কোন মেয়ে?”
“এত কথা বলছ কেন! গেলেই তো দেখতে পাবে।”
শাহিন উঠে ড্রয়িংরুমে গেল। মেয়েটা কে দেখে প্রচন্ড রকমের ধাক্কা খেলেন শাহিন সাহেব!
এটা কী করে সম্ভব? হুবহু সেই মুখ। তার বয়স এখম পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। সেই হিসাবে রুবিনার বয়স পয়তাল্লিশ তো হবে।
এ মেয়েকে দেখে তো এত বয়স্ক মনে হচ্ছে না।
রুবিনা ছিলো শাহিনের সাথে একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। ওদের ডিপার্টমেন্টে একটা মাত্র মেয়ে বোরকা পরে আসত। এখানকার মেয়েদের মতো বোরকা না। একাবারে হাত-পা কিছু না দেখা বোরকা!
একসাথে পড়ার দুইবছর কেটে গেছে অথচ রুবিনা নামের মেয়েটির চেহেরা দেখা হয়নি কোনো ছেলের!
ডিপার্টমেন্টের অনেকেই সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। শাহিন এখনো কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনি।
সেই শাহিনের প্রেম হলো বোরকাওয়ালী রুবিনার সাথে। টানা দুইবছর প্রেম করল ওরা। শাহিনের খুব ইচ্ছে ছিলো রুবিনা কে বিয়ে করার।
ওদের সম্পর্কে নিয়ে শাহিনের বাবার আপত্তি করার কথা। এত বড়োলোকের ছেলে পছন্দ করেছে সাধারণ ঘরের একটা মেয়ে কে।
দেখা গেল শাহিনের বাবা আমজাদ খান ওদের সম্পর্ক মেনে নিলেন। এবং নিজে রুবিনার বাবার কাছে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গেলেন।
রুবিনার বাবা ছিলেন হুজুর মানুষ। কঠিন ধর্ম মানা মানুষ। তিনি আমজাদ খানের সব রকমের ব্যবসার খবর নিলেন।
আমজাদ খানের একটা সিনেমা হলো ছিলো। বাবা মারা যাওয়ার পর শাহিন খান হলটা নিজে চালাননি।
সিনেমা হল থাকার কারণে শাহিনের সাথে রুবিনার বাবা বিয়ে দিতে অস্বীকার করলেন!
চলবে–