ছায়া নীল!
৩.
ওর কাছে যাওয়ার জন্য দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। মনে হলো কিছু একটাতে পা আটকে গেছে আর সাথে সাথেই আমি উপর হয়ে পরে গেলাম।
কপাল সরাসরি ফ্লোরের উপর পরাতে খুব ব্যথা পেলাম। উঠতে পারছি না, কিন্তু আমাকে তো ওর কাছে যেতেই হবে।
আমার পরে যাওয়াতে খুব জোড়ে শব্দ হয়েছে।
মা আর আফরোজা আমাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।
মা বললো
– কীভাবে পরলি?
আমি বললাম
– ফ্লোরে কিছু একটাতে পা আটকে গিয়েছিলো।
আফরোজা বলল
– কই ফ্লোরে তো আটকে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।
মা বললো
– আফরোজা যাও তো বরফ নিয়ে আসো। ওর কপাল টা ফুলে যাচ্ছে। বিয়ের দিন মেয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কী যে হবে?
মনে হলো আফরোজা বরফ আনতে গেছে। আমার তো চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছিনা।
বরফ এনে কপালে মা ডলে দিচ্ছিলো। তার মধ্যেই নানী মাকে ডাকলেন।
মা আফরোজাকে বলল
– তুমি কপালে ডলে দাও । আমি একটু দেখে আসি।
আফরোজা বরফ ডলে দিচ্ছিলো। আফরোজা বলল
– এই তোর কোনো ফুফু আছে নাকি? যাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে?
– নাহ তো আমার জানামতে তো নেই।
আফরোজা চাপাস্বরে বলল
– জানিস না একজন মধ্যবয়সী মহিলা আর তার পরিবার এসেছিলো। তোর মা আর ছোটো ফুফু তাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার এখন একটু ভালো লাগছিলো। মনে হলো চোখ খুলতে পারবো। চোখ খুলে বললাম
– কী এমন বলেছে যে,তুই আমার ফুপু ভাবলি?
– তোর ছোটো ফুফু সেই মধ্যবয়সী মহিলাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করলো।
আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ছোটো ফুপু তো তার মেজো বোন মানে আমার যেই ফুপু মারা গেছে তাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করে।
মেজো ফুপুর কথা তেমন কেউ বলে না। হঠাৎ হঠাৎ সবাই একসাথে হলে বাবা ওনার প্রসঙ্গ তুলে।
– কিন্তু আফরোজা আমার মেজো ফুপু তো মারা গেছেন অনেক আগেই।
– কিন্তু জানিস শারলিন তোর চেহারার সাথে অনেক মিল পেলাম।
– বাবা বলে আমি নাকি মেজো ফুপুর মতো সুন্দর।
– শোন কোনো একটা ঝামেলা আছে এর মধ্যে।
– বাবা আসুক। জানা যাবে।
বাবার কথা তোলাতেই আমার ওর কথা মনে পড়লো। সাথে সাথেই ওকে যেখানে দেখেছিলাম সেখানে তাকালাম।
কিছুক্ষণ আগেও ও ওইখানে ছিলো আর এখন নেই।
মেঝের উপর তো কিছুই নেই, তাহলে আমি পরলাম কীভাবে?
আমি তো সহজে আছাড় খেয়ে পরি না। ও কি চায়না আমি ওকে পাই?
না এটা হতেই পারেনা। আমারি ভুল।
আফরোজা বলল
– এই তোর শাড়ীর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আমি বললাম
– ওইতো পায়ে বেধে আমি ঠাস আর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আরেকটা কথা মাথায় ঘুরছে। এতক্ষণে তো বিয়ে হয়ে যাবার কথা।
– আফরোজা।
– হ্যা বল
– বিয়ে তে দেরি হচ্ছে কেনো?
– তোদের বিয়ে পড়ানোর জন্য যে কাজী সাহেবের আসার কথা তিনি ফেরিঘাট এ আটকে আছেন।
– ফেরিঘাট এ কেউ একটা বোম ফাটালেই হয়।
– তুই যা বলেছিস। মনে হয় আর কোনো কাজী সাহেব নেই।
– আজকের দিনের মতো তো বিয়ে থেমে যাবে।
– কিন্তু হবে তো একদিন। সেটা পরে দেখা যাবে।
– তোর কপালে এই তুহিন মশাই আছে।
ওর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। আমি ভাবতে শুরু করলাম কীভাবে ওকে আমার সামনে বাস্তবে আনা যায়?
আচ্ছা আমি তো পরিষ্কার ভাবে ওর ছায়া দেখেছি। ও আমার আশেপাশেই ছিলো।
আফরোজাকে তো সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার সব কথাই বলি। এটা কেনো বাদ দিবো?
– আফরোজা জানিস ওকে আমি কিছুক্ষণ আগেও ওই বারান্দার দরজার কাছে দেখেছি।
– তারপর তুই দৌড়ে ওকে ধরতে গিয়ে আছাড় খেলি?
– হ্যা।
– এর মাঝেই ও হাওয়া?
– হ্যা। জানিস ওকে সামনে আনার একটা উপায় পেয়েছি?
– কী শুনি তো?
– নিজেকে যত বেশি কষ্ট দিবো ও ততোই আমার কাছে আসবে।
– শারলিন, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত কষ্ট দিবি?
আজ প্রায় ২ বছর যাবত তুই নিজেকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস সেটা কি কম ছিলো?
– হ্যা ছিলো।
– জেদ করবি না।
– জেদ না। আরো আগে থেকে শুরু করলে আজ আমার সাথে থাকতো।
– শারলিন চুপ কর।
– নিজেকে যত কষ্ট দিয়েছি ও ততোটাই আমার কাছে এসেছে। আগে তো দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাকে ওর কাছে আসতে দিতো না। এখন আমাকে জড়িয়েও ধরে।
জানিস আজকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি কেনো নিজেকে কষ্ট দেই?
– তুই কী বলেছিস?
– কিছু বলার আগেই তো তুই স্বপ্নটা ভেঙে দিলি ।
– আমি জানি না এর শেষ কোথায়???
– আমি জানি। আমার মৃত্যুই এর শেষ। আমাকে যেদিন সাদা কাফনে সাজিয়ে রাখবে, সেদিন ও আসবে।
তখন ওকে বলিস, ভালে সময়ে এসেছেন।
আফরোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
এটা প্রথম না। আজ ২ বছর যাবত আমার এসব কথা শুনতে শুনতে ও অভ্যস্ত কিন্তু সহ্য করার ক্ষমতা ওর এখনো হয়নি। তাই কেঁদে ফেলে বাচ্চাদের মতো।
আর আমারি বা কী করার আছে? ও আমার কাছে একটা নেশার মতো হয়ে আছে।
যাকে আমি ভুলে থাকার কথাও ভাবতে পারিনা।
একটা মানুষ স্বপ্নে এসেই আমাকে অর্ধেক পাগল করে দিয়েছে।
ও চায়টা কী?
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
– কী চাও?
আমাকে বলেছিলো
– তোমাকে চাই। তোমার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে আমি থাকতে চাই। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসে আমি থাকতে চাই। আমি চাই তুমি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কাছে পাওয়ার আশায় বাঁচো।
তোমার এই মায়াবী চোখ যেনো প্রতি মুহূর্ত আমাকেই খুঁজে বেড়ায়।
তোমার শয়নেস্বপনে আমি শুধু আমি থাকতে চাই।
আমি বলেছিলাম
– আছোই তো।
ও আমার হাতে চুমু দিয়ে বলেছিলো
– মায়াবিনী তাহলে তো আমি তোমার স্বপ্নে না তোমার বস্তুজগৎ এ থাকতাম।
চলবে………!
© Maria Kabir