ভাড়াটিয়া-২
আনোয়ারা বেগম রুমে এসে দেখলেন, রহিমা ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করে রেখেছে। ঘরে চাল ছিলো কিন্তু চালটা পুরান হয়ে গেছে।
এ চাল নিজেরা হয়ত খেতে পারবে। মেহমানদের জন্য সবচেয়ে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এটা রহিমা শিখেছে ওর মায়ের কাজ থেকে। তাই আব্বাস কে চাল আনতে পাঠিয়েছে।
আনোয়ার বেগম রহিমার কাজ দেখে বেশ খুশি হলেন! মেয়েটা খুব লক্ষী হয়েছে। এ মেয়েটা যেই ঘরে যাবে সেই ঘর উজ্জ্বল করে রাখবে।
রহিমা বলল, “মা শুধু মুরগি করবা? ”
“একটু ইলিশ ভাজ আর ডালের চচ্চড়ি করলেই হবে।”
রহিমা ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছের প্যাকেট বের করল।
“রায়হান কোথায় রে মা?”
“ভাইয়া তো বাইরে গেছে। ”
“কখন গেলো বের হতে দেখলাম না তো!”
“তুমি বারান্দায় ছিলা তখন গেছে।”
রায়হান কি মেয়েটা কে দেখেছে? মনে হয় দেখেনি। আনোয়ারা বেগম বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, ছেলে বের হয়েছে অথচ ওনার চোখেই পড়েনি! এটা কেমন কথা।
মেয়েটার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলেন। ছেলের দিকে নজর পড়েনি!
ওয়ারির রেনকিন স্ট্রিটের পাঁচতলা বাড়িটা বানিয়েছিলেন রায়হানের দাদা আমজাদ খান। এ ছাড়া যাত্রাবাড়িতে দুইটা আর বনানীতে ওদের একটা বাড়ি আছে। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। রায়হানের বাবা শাহিন খান একজন সরকারি কর্মকর্তা।
সরকারি চাকরি করে তেমন কিছু করতে পারেননি। সম্পত্তি যা আছে তার সবই ওনার বাবার।
শাহিন সাহেবের ইচ্ছে ছিলো সরকারি চাকরি করবেন। তাই পড়াশোনা শেষকরে বাবার ব্যবসায় না বসে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছিলেন।
আমজাদ খানও ছেলেকে বাধা দেননি। টাকা পয়সা তার কম ছিলো না। ছেলে দেশের জন্য কাজ করতে চাচ্ছে করুক।
আনোয়ারা বেগম বাসা থেকে বের হলেন। ওনারা দুতলায় থাকেন। নতুন ভাড়াটিয়া আসলাম সাহেব উঠেছেন তিনতলায়।
জিনিসপত্র সব বাসায় আনা হয়েছে। এখন বাসা গুছানো হচ্ছে। আনোয়ারা বেগম কে দেখে আসলাম সাহেব মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ” কেমন আছেন ভাবি?”
হালকা হাসি দিয়ে বলল, ” ভালো। এর মধ্যেই সব গুছিয়ে ফেলেছেন। কী সুন্দর লাগছে বাসাটা এখন!”
একটু হাসলেন আসলাম সাহেব। কত হবে লোকটার বয়স পঞ্চাশ? না মনে হয় পঞ্চাশ হবে না। দেখে চল্লিশের মতো লাগে।
পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির মতো লম্বা। হালকা পাতলা দেহের গড়ন।
আসলাম সাহেব একটু উঁচু গলায়,” সুইটি মা এদিকে আয়ত।”
মেয়েটার নাম তাহলে সুইটি। নামের মতোই দেখতে মিষ্টি। মেয়েটি এসে আসলাম সাহেবের পাশে দাঁড়িয়েছে। আনোয়ারা বেগম কে দেখে সালাম দিলো।
আসলাম সাহেব বললেন, “এ হলো আমার মেয়ে সুইটি।
আনোয়ারা কে দেখিয়ে সুইটি কে বললেন, ” উনি আমাদের বাড়িওয়ালী।”
সুইটি হালকা হেসে বলল,” কেমন আছেন আন্টি?”
মেয়েটা হাসিটা বেশ সুন্দর! অনেক সুন্দরী মেয়েদের হাসি সুন্দর হয় না। দেখা যায় এমনিতে দেখতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু হাসলে বিশ্রী লাগে! এ মেয়েকে হাসলেও ভালো লাগে!
কথার মাঝে উপস্থিত হয়েছেন রাশিদা বেগম। সুইটির মা। এই মহিলাও দেখতে অসম্ভব সুন্দরী! তবে সুইটির মতো না।
বেশ উচা-লম্বা মহিলা। বয়সও বেশি মনে হয় না। দেখে বুঝাই যায় না সুইটির মতন একটা মেয়ে আছে ওনার।
রাশিদা বেগম এসে বললেন, ” আপা দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসেন।”
সোফাসেট বসান হয়ে গেছে। সোফার সামনের টেবিলটায় দুইটা প্রেইন্টিং পড়ে আছে। এগুলো মনে হয় দেয়ালে ঝুলাবে।
দেয়াল ফুটা করলে খারাপ লাগে! খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। ভাড়াটিয়াদে প্রয়োজন হলে দেয়ালে পেরেক গাঁথবে। সেটা গাঁথুক সমস্যা নাই।
আগের ভাড়াটিয়া ছিলো একটা বদের বদ। সারাঘরময় পেরেক গেঁথেছে। দেখে মনে হয় পেরেক দিয়ে দেয়াল ডিজাইন করা। সব পেরেক তুলে নতুন করে আস্তর করা হয়েছে।
আনোয়ারা বেগম সোফায় বসলেন। ওনার পাশেই বসল সুইটি। ওপর পাশে আসলাম আর রাশিদা বেগম।
“আপনার মনে হয় পেরেক গাঁথথে হবে?”
আসলাম সাহেব। আলগা একটু হাসি দিলেন। বাড়িওয়ালাদের এ এক সমস্যা। দেয়ালে পেরেক ঠুকা যাবে না! আরে এত শক্ত করে দেয়াল বানানো হয়েছে কেন? যাতে করে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়ালে লাগাতে পারে। না হলে কাঁচ দিয়ে ঘর বানাত মানুষ।
অফিসে কিছু ঝুলাতে হয় না বলে অফিস থাকে কাঁচের।
“আমি আব্বাস কে পাঠিয়ে দেব। আপনাদের যেখানে -যেখানে প্রয়োজন ডিল দিয়ে ফুটো করে দিয়ে যাবে।”
আসলাম সাহেব একটু হালকা হাসি দিলেন কিছু বললেন না। না, বাড়িওয়ালী মনে হয় খিটখিটে না। তিনি যতটা খবর নিয়েছেন খুবই ভালো মানুষ।
আনোয়ারা বেগম উঠে দাঁড়ালেন। “আপনার কাজ করুন। আমি থাকলে কাজ হবে না।”
রাশিদা বেগম বললেন, “সমস্যা নাই আপা। কাজ তো শেষ। টুকটাক গুছগাছ ধীরে ধীরে করতে হবে।”
“আপনারা আজ দুপুরে আমার বাসায় খাবেন কেমন?”
রাশিদা বেগম বললেন,” এ সব ঝামেলা কেন করতে গেলেন আপা!”
“ঝামেলা কেন হবে আপা। আপনারা আমার বাড়িতে এসেছেন, আপনাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা তো আমার দায়িত্ব। ”
রাশিদা বেগম মিষ্টি হাসি দিলেন। কী বলবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না।আজকাল এমন মানুষ হয়!
আনোয়ারা বেগম বেরিয়ে গেলেন।
চলবে–