ভাড়াটিয়া -৫
রুবিনার বাবা তো মানা করে দিলেন। শাহিন ভেবেছিলো। রুবিনা ইউনিভার্সিটিতে পড়া মেয়ে। ও নিশ্চয়ই বাবার অন্যায় কথা মেনে নিবে না।
ওদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক চলছিলো বলা যায়। অনার্স শেষ হওয়ার পর হুট করে রুবিনা কোথায় যেন হারিয়ে গেল!
ওদের ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেল ওখানে ওরা থাকে না। রুবিনা তো শাহিন কে বলতে পারত। কেন যে কিছুই বলল না কে জানে?
ছেলের অবস্থা বুঝতে পেরে আমজাদ খান ওনার বন্ধুর মেয়ে আনোয়ারার সাথে শাহিনের বিয়ে দিয়ে দেন। আনোয়ারা খুব ভালো মনের মানুষ! শাহিন কে আপন করে নেন খুব দ্রুত।
আজ এত বছর পরে রুবিনার মেয়ে শাহিন সাহেবের বাসায় বসে আছে।
শাহিন সাহেব সুইটির কাছে গেলেন। উনা কে দেখে সুইটি দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।
“বসো মা।” উনিও সুইটির পাশের সোফায় বসলেন।
“কেমন আছেন আংকেল? ”
“ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?”
“জি, ভালো।”
“তা তোমার বাবা মা কেমন আছে?”
” ভালোই আছে।”
শাহিন সাহেব বুঝতে পারছেন না। মেয়েটির মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবেন কি-না? এ মেয়ে কে দেখে তো মনে হচ্ছে না। নানার সংস্কৃতি ধারণ করে আছে। একে অনেক স্মার্ট মনে হচ্ছে।
শাহিন সাহেব প্রশ্নটা করতে পারলেন না। ওনার খুব ইচ্ছে হচ্ছে সুইটিদের বাসায় যেতে! রুবিনা কে দেখতে। তা বোধহয় সম্ভব না। আনোয়ারা কে বলতে হবে এদের কে বাসায় দাওয়াত দিতে। তাহলে দেখা হয়ে যাবে। বা রুবিনা নিশ্চয়ই আগের মতো পর্দা করে না। ছাদে-টাদে গেলে দেখা হতে পারে।
আনোয়ারা একটা ট্রেতে চা আর কিছু পিঠা নিয়ে এলেন। ঢাকা শহরে বড়ো হলেও আনোয়ারা খুব ভালো পিঠা বানাতে পারেন। বিকালের নাস্তায় হাতে বানানো পিঠাই খাওয়া হয়।
ট্রেটা টি টেবিলে রেখে আনোয়ারা বললেন, “নাও মা।”
সুইটি একটু লজ্জিত মুখে একটা পিঠা হাতে তুলে নিলো। আলত করে একটু কামড় দিলো। যে ভাবে মানুষ প্রেমিকা কে চুমু খায়। না, পিঠা খেতে বেশ ভালো লাগছে! শাহিন সাহেবও একটা পিঠা নিলেন। এই পিঠা ওনার খুব পছন্দ!
শাহিন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,” তুমি কীসে পড় মা?”
“অনার্স থার্ড ইয়ার।”
“কোন সাবজেক্ট? ”
“বাংলা।”
“বাঃ! বাংলা সাহিত্যের একজন ছাত্রী পাওয়া গেল। সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা শুনা যাবে। ”
ওনার কথা শুনে সুইটি একটু হাসল। মনে হচ্ছে সুইটি কত সাহিত্য বুঝে! পাশ করার জন্য যতটুকু পড়তে হয় ততটুকু পড়ে। তাছাড়া এ সব কবিতা-টবিতা ভালোও লাগে না!
আনোয়ারার খুব ভালো লাগছে! শাহিন মেয়েটা কে পছন্দ করেছে। খুব আগ্রহ নিয়ে কথা বলছে। অবশ্য সুইটি পছন্দ করার মতো একটা মেয়ে।
সুইটি উঠে দাঁড়াল। মিষ্টি করে হেসে বলল, “আজ তাহলে আসি আন্টি। ”
“দুপুরে খেয়ে যাও।”
হালকা হেসে বলল, “আরেকদিন আসব।” আসি আংকেল।”
শাহিনের মেয়েটার সাথে গল্প করতে বেশ লাগছিল। মেয়েটা ওর মায়ের মতো খুব সুন্দর করে কথা বলে। অবশ্য রুবিনা কে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। সন্ধ্যার সময় একবার কি যাবে ওদের বাসায়? বাড়িওয়ালা হিসাবে সে তো যেতেই পারে। নাকি ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে ঠিক বুঝতে পারছেন না।
আনোয়ারা বললেন,” কেমন লাগল মেয়েটাকে? ”
শাহিন আনোয়ার মুখের দিকে তাকালেন। কেমন আত্মতুষ্টির হাসি ওর মুখে।
“ভালোই তো।”
“শুধু ভালো!”
“না, অসম্ভব ভালো বলা যায়।”
“তোমার পছন্দ হয়েছে? ”
একটু অবাক হয়ে আনোয়ারার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কীসের কথা বলছ তুমি?”
“হ্যাঁ, তুমি যা ভাবছ তাই। দুইজন কে ভালো মানাবে। ”
“তোমার সব কিছু তে বাড়াবাড়ি! চেনা নাই জানা নেই। সব কিছু ভেবে বসে আছ।”
“আঃ! খবর নিবো। মেয়ে তো আর আকাশ থেকে উড়ে আসে নাই। চোখের সামনেই আছ।”
“সে না হয় নিলা। মেয়ে যদি তোমার ছেলে কে পছন্দ না করে?”
“কেন করবে না! আমার ছেলে খারাপ কীসে শুনি?”
“মেয়ের তো পছন্দের ছেলে থাকতে পারে, কি পারে না?”
আনোয়ারার মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল! আজকালকার ছেলে-মেয়েরা বয়স না হতেই সম্পর্ক করে ফেলে। ছোটো ছোটো মেয়েরা প্রেম ট্রেমে পড়ে যায়। তার ছেলেটাই একটু ব্যতিক্রম। এত বয়স হয়ে গেছে এখনো এ সবে জড়ায়নি।
চলবে–