ভাড়াটিয়া-৬
রায়হান ঘরে শুয়ে আছে। এ সময়টাতে সাধারণত ও শুয়ে থাকে না। দুপুরে খাবার আগের সময়টাতে বই-টই পড়ে সময় কাটায়।
এ সময়টা কেমন যেন কোনো কিছুই করতে ভালো লাগে না! বাইরে যাওয়া যায় না। ঘুমানো যায় না। গল্পের একটা বই নিয়ে অবশ্য পড়া যায়। গত কয়দিন ধরে একটা উপন্যাস পড়ছে, বইটা শেষ করা যায়। কিন্তু এখন পড়তেও ইচ্ছে করছে না।
আনোয়ারা ছেলের ঘরে উঁকি দিলেন। এ সময় ছেলে কে শুয়ে থাকতে দেখে একটু অবাক হলেন। জ্বর-টর হলো কি-না! আনোয়ারা ছেলের ঘরে ঢুকলেন। রায়হান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
আনোয়ারা ছেলের পাশে বসে আলত করে কপালে হাত রাখলেন। মায়ের হাতের শীতল স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলল রায়হান।
মায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা একটু হাসি দিলো।
“কী হয়েছে বাবা?”
“কিছু হয়নি তো মা।”
“অসময় শুয়ে আছিস! শরীর খারাপ লাগছে? ”
“না, মা। আমি ঠিক আছি।”
“উঠে গোসল কর।”
“দুপুরে কি তোমার কোনো গেস্ট আসবে?”
“হ্যাঁ।” আনোয়ারা রহস্যময় হাসি দিলেন।
রায়হান কিছু বলল না। সে জানে, মা মানুষ কে খাওয়াতে ভালোবাসে। প্রায়ই সময়ই অজানা মানুষজন ধরে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। কিন্তু আজ কেন জানি মনে হচ্ছে বিশেষ কেউ আসবে। মা কেমন করে যেন হাসছেন!
“গোসল করে ডাইনিং আয় তাড়াতাড়ি। ” ছেলেকে তাগাদা দিয়ে চলে গেলেন আনোয়ারা।
আজকের আয়োজনটা করা হয়েছে শাহিন সাহেবের কথায়। সুইটির পরিবারের সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য। আসলে তিনি রুবিনা কে দেখতে চাচ্ছেন। আচ্ছা এত বছর পর রুবিনা তাকে দেখে কী করবে?
সবার সামনে নিশ্চয়ই না চেনার একটা ভান করবে। অভিনয় ভালোই করতে পারবে মনে হচ্ছে। মেয়েরা বিয়ের পর অভিনয়টা ভালোই শিখে যায়। কত ধরনের অভিনয় মেয়েদের করতে হয়।
ডাইনিং রুমে এসেই রায়হান একটা ধাক্কা খেল! সেই মেয়েটি বসে আছে। সাদার ওপরে কালো ছাপের একটা জামা পরে আছে। দেখতে মেয়েটাকে বেশ সুন্দর লাগছে!
মেয়েটার পাশে একজন বয়স্ক মহিলা। বয়স দেখে মনে হয় মেয়ের মা হবে। যদিও চেহেরায় কোনো মিল নেই। রায়হান বুঝতে পারছে না, মা এ মেয়েকে পেলো কোথায়!
সুইটির মা কে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছেন শাহিন সাহেব। এটা কী করে সম্ভব! এতো রুবিন না। ওনার নাম না-কি রাশিদা। উনি এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন। সুইটি মেয়েটার চেহারা রুবিনার মতো। তবে কি তিনি রুবিনার চেহেরা ভুলে গেছেন! এটা সম্ভব না। রুবিনার মুখ উনি কোনোদিন ভুলতে পারবেন না।
আনোয়ারা বেগম রায়হান কে ডাকলেন, “আয় বাবা।”
রায়হান মায়ের পাশের চেয়ার বসল। মুরুব্বিদের সাথে দেখা হলে সালাম দিতে হয়। রায়হান সালাম দিলো না। কারণ আসলাম সাহেব ও রাশিদা বেগম খাবার খাচ্ছেন। খাবারের সময় সালাম দেয়া নিষেধ।
আনোয়ারা বেগম বললেন, “এ হলো আমার ছেলে রায়হান।”
সুইটি আড় চোখে একটু তাকাল। রায়হানের মনে হলো মেয়েটা ওকে দেখে ঠোঁট বাঁকিয়েছে!
“এ হলো আসলাম সাহেব আর রাশিদা বেগম। আর ও হলো সুইটি। ওনারা আমাদের তিনতলায় উঠেছেন।”
আসলাম সাহেব মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “কেমন আছ বাবা?”
রায়হান একটু লাজুক হাসি দিয়ে বলল, “ভালো। আপনি কেমন আছেন? ”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা।”
সুইটি রায়হানের দিকে মিটিমিটি হাসছে। ছেলেটা কী লজ্জা পায়! পায়ে দিয়ে একটা গুঁতা দিলে কেমন হয়? বোকাটা আবার বলে দিবে না তো! বলা যায় না। এ সব মিচকা শয়তানগুলির বিশ্বাস নাই। থাক পরে দেখা যাবে। তবে বলদটা কে সুইটির পছন্দ হয়েছে!
খাবারের আয়োজন ভালো। অনেক পদের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক প্রকার ভর্তাও আছে। এত সব আয়োজন কেন করেছে কে জানে? আসলাম সাহেবের ভালো লাগল। পরিবারটা খুবই ভালো! তিনি যতটুকু শুনেছেন তারচেয়ে বেশি ভালো মনে হচ্ছে।
ছেলেটাকেও খারাপ লাগছে না। সহজ সরল ছেলে। দেখতেও বেশ স্মার্ট। এত বড়োলোকের ছেলে এমন হয়!
“আপনি তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাবেন তা-ই না?”
প্রশ্নটা শুনে রিকশায় বসা রায়হান ঘুরে তাকাল। সুইটি দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। আজ পরেছে একটা কালো রংয়ের শাড়ি। কালো রংয়ের শাড়িতেও মেয়েটা কে বেশ ভালো লাগছে! এ মেয়ে যা পরে তাতেই মনে হয় ভালো লাগে!
কিছু মানুষ আছে এদের সব পোশাকে ভালো লাগে! আবার এমন মানুষ আছে এদের কোনো পোশাকেই ভালো লাগে না! যাই পরে দেখলেই মনে হয় এমন বাজে একটা জামা কী করে পরল!
“হ্যাঁ, কেন বলুন তো?”
একটু হাসি দিয়ে বলল,” আমিও অদিকে যাব।”
“ও আচ্ছা। ”
সুইটি রিকশার কাছে এসে বলল,” সরে বসুন। আমিও আপনার সাথেই যাব।”
রায়হান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলল না।
“আমার সাথে যেতে কোনো আপত্তি নেই তো?”
রায়হান না সূচক মাথা দুলাল। মুখে কিছু বলল না। এমন সুন্দরী একটা মেয়ে ওর সাথে রিকসায় যেতে চাচ্ছে! যার সাথে এখনো ঠিকমতো পরিচয়ই হয়নি।
“তাহলে এমন শক্ত হয়ে বসে আছেন কেন!”
রায়হান একদিকে চেপে বসল। সুইটি উঠে পাশে বসল। সুইটি মিটিমিটি হাসছে। বলদটা কে দারুণ একটা চমক দেয়া গেল। এ এখন কচ্ছপের মতো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে। যেন সুইটির দেহের সাথে স্পর্শ হলেই বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে!
“আপনার তো মাস্টার্স শেষ তা-ই না?”
“জি।”
“প্রতিদিন ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে কী করেন? ”
“প্রতিদিন তো যাই না। মাঝেমধ্যে যাই।”
“ও প্রতিদিন যান না! “ঠোঁট টিপে হাসছে সুইটি।
” মাঝে মাঝে কি গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যান?”
“না তো এমনই বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাই।”
“কেন! আপনার বুঝি ব্রেকআপ হয়ে গেছে! ”
“একটু বিরক্ত হলো রায়হান। ব্রেকআপ হবে কেন! আমি প্রেম-ট্রেম করিনি।”
“কী বলেন! আপনার মতো এমন সুইট ছেলেকে কেউ পছন্দ করল না!”
বড়ো চোখে সুইটির দিকে তাকাল রায়হান। অবশ্য কিছু বলল না। সুইটি ঠোঁট টিপে হাসছে।
রিকশা চলে এসেছে টি এস সির সামনে। রায়হান নেমে রিকশাওয়ালা কে ভাড়া দিলো। সুইটির দিকে তাকিয়ে বলল, “আসি।”
“আপনি কখন বাসায় যাবেন?”
“ঠিক নেই। কেন বলুন তো?”
“একসাথে যাওয়া যেত। আমরা তো একই বাড়িতে থাকি তা-ই না?”
রায়হান সুইটির দিকে তাকিয়ে রইল কিছুটা সময়। মেয়েটা কি চায়? ঠিক বুঝতে পারছে না!
চলবে–