#বিষাক্তফুলের_আসক্তিপর্ব-১৯

0
422

#বিষাক্তফুলের_আসক্তিপর্ব-১৯
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

বিশাল দুতলা বাড়ির দক্ষিণপাশে পুকুরের ওপারে বকুল গাছের নিচে ঘুমিয়ে আছে তিতির। এপারে পুকুরের সিঁড়িতে বসে আছে আহান। তিতিরপাখিকে নিয়ে লন্ডন যাওয়ার আগেও একবার এই বাড়িতে এসেছিলো তারা। রঙচটা বাড়িটা যেনো ভূতের বাড়িতে রূপ নিয়েছে। একসময় কত হাসিখুশিতে ভরপুর থাকতো এই বাড়িটা, আজ চারদিকে কেবল নিস্তব্ধতা। বাড়িতে গুটিকয়েক কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই। বাড়ির আঙিনায় কতশত স্মৃতি আহু আর তুতুলের। আহান চোখ মুছে পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। এটা আট মাস আগে বাংলাদেশে এসে কিনেছিলো সেই ফোন। আহান সব প্রমাণ পুলিশকে দিয়ে ফোন থেকে সেই যে সিম খুলে ফেলেছিলো আর সিম লাগায়নি। তিতিরের মৃত্যুর পর এই কয়েকদিনে অনেকবার চেয়েছে তাজের সাথে যোগাযোগ করে সবটা জানাতে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়েছে, যেখানে তিতির ইচ্ছে করে তাজকে কিছু জানায়নি সেখানে সে কীভাবে জানাবে ? তিতির তো বলে গেছে তাজ যদি কোনোদিন ধ্রুবর খোঁজে আসে তবে ডায়েরিটা তাকে দিতে কিন্তু আহানকে বলেনি তাজকে খুঁজতে। আহান ফোনটা আবার রেখে দিলো পকেটে। তাজকে সে দেখেছে তিতির ফোনে ছবিতে এছাড়া চিনে না। মাত্র নয় বছর বয়সে এই দেশ ছেড়েছে, এখন খুব একটা ধারণা নেই এই দেশ সম্পর্কে। আহান উঠে দাঁড়ালো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটা পদ্মফুল ছিঁড়ে নিলো, হাতে কাঁটাও ফুটলো। কাঁটা দেখে মুচকি হাসলো, ছোটবেলায় তুতুল কত বায়না ধরতো এই ফুল এনে দিতে কিন্তু আহান কাঁটার ভয়ে আসতো না। ফুলটা হাতে নিয়ে কবরের দিকে এগিয়ে গেলো, শ্যাওলা ধরা পাথরে বাঁধানো দু’টো পুরানো কবরের পাশে একটা নতুন বাঁধানো কবর। আহান ফুলটা তুতুলের কবরের মাথার দিকে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

আহান মুচকি হেসে বললো, তোর মনে আছে তুতুল, ছোটবেলায় দুপুরবেলা তুই যখন মামির পাশে এভাবে শুইয়ে ঘুমিয়ে থাকতি। আমি পা টিপেটিপে এসে তোকে তুলে নিয়ে খেলতে চলে যেতাম দু’জনে। আজ আর আমার সেই সাধ্য নেই রে। তুই বরং ছোটবেলার মতো বাবা-মার রাজকন্যা হয়ে এখানেই শান্তিতে ঘুমা আমি বরং আসি। কত দায়িত্ব দিয়ে গেছিস আমাকে, সেসব পালন করতে হবে তো নাকি ? ভালো থাকিস তুই, আমিও অনেক ভালো থাকবো দেখিস।

মুখে মুচকি হাসি আর চোখের কোণে নোনাজল আহানের। চোখ মুছে কবর জেয়ারত করে লম্বা কদমে চলে এলো সেখান থেকে। সোজা নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো, গাড়িতে বসে একবার কবরের দিকে তাকিয়ে জানলায় কাঁচ তুলে দিলো। ড্রাইভারকে বললো এয়ারপোর্টের দিকে যেতে। একবার মনে হয়েছিলো রায়হানের সাথে দেখা করে জানতে চাইবে কী লাভ হলো এতো পাপ করে ? কিন্তু পরক্ষণে ইচ্ছেটা মরে গেছে, তাই সোজা লন্ডন ফিরছে আহান। সেখানে ন্যান্সি একা আছে পাখি আর ধ্রুবর সাথে। সিলেটের সবুজ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আহান চললো এয়ারপোর্টের দিকে। সবুজের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করলো,

“যদি আপন না হবে প্রিয় তবে স্বপ্ন কেন দেখাও,
যদি ছেড়েই চলে যাবে তবে মায়া কেন বাড়াও।”

২৪.
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রায়হানের সাথে দেখা করতে এসেছে তাজ। তাজের সাথে করা অন্যায় আর হসপিটালের অসহায় রোগীদের স্বল্প টাকায় অপারেশনের নামে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ (যেমনঃ চোখ, কিডনি) এসব বের করে নিয়ে বিদেশে পাচার করার জন্য যাবত জীবন কারাদণ্ড হয়েছে তার। ডার্ক ডেভিল নামে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে সংযুক্ত ছিলো সে। অনেক ইনফরমেশন রায়হানের থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। তবে কয়েকদিন ধরে তাজের সাথে সে দেখা করতে চাইছে কিন্তু তাজ যায়নি। কিন্তু লাস্টবার বলেছে তিতিরের খোঁজ চাইলে যেনো তার সাথে দেখা করে। তাজ যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখা হলো রায়হানের সাথে। জেলের ওপারে রায়হান আর এপারে তাজ। চুল, গোঁফ, দাঁড়িতে রায়হানকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে তাজের। তবে তার চোখেমুখে কোনো অনুশোচনা দেখা গেলো না।

তাজ উত্তেজিত হয়ে বললো, বল তিতির কোথায় ?

রায়হান মুচকি হেসে বললো, তুই মুক্ত হয়ে সারা পৃথিবীতে ঘুরে জানিস না তিতির কোথায় আর আমি ঐ চারদেয়ালে বন্দী থেকে কীভাবে জানবো তিতির কোথায় ?

রেগে গেলো তাজ, তাহলে আসতে বলেছিস কেনো ?

রায়হান কিছু না বলে হা হা করে হাসতে লাগলো, তোকে দেখে বড্ড করুণা হচ্ছে আমার তাজ। যদিও সেটা তোর হওয়া উচিত আমার জন্য বাট উল্টোটা হচ্ছে।

তাজ বিরক্ত হলো রায়হানের কথায়। এর এসব ফা*ল*তু কথা শোনার ইচ্ছে নেই তাজের তাই চলে যেতে নিলে রায়হান পেছন থেকে ডাকলো, আরে শুনে তো যা কেনো আসতে বলেছি।

তাজ ঘুরে তাকিয়ে বললো, তোর বা*জে বকবক শোনার ইচ্ছে নেই আমার। তবে হ্যাঁ তোকে একটা গুড নিউজ দেওয়ার আছে। বিয়ে হয়েছে মৌয়ের, নাহ্ আমার সাথে নয়, তোদের কলিগ শানের সাথে।

রায়হান মুচকি হেসে বললো, তোর সাথে তো হয়নি আমি এতেই খুশি।

তাজ তেড়ে এলো রায়হানের দিকে, লোহার রডের ফাঁকে হাত গলিয়ে রায়হানের কলার চেপে ধরলো।

আসলে তুই মৌকে কখনো ভালোই বাসিসনি। তোর শুধু হিংসা ছিলো আমার উপর।

রায়হান তাজের হাত ছাড়িয়ে নিলো নিজের কলার থেকে, একদম ঠিক ধরেছিস তুই। ভালোবাসা থাকলেও একসময় সেটা জেদে পরিণত হয়েছিলো। তোর থেকে আমি তো কোনোদিকে কম ছিলাম না, তবু মৌ আমার ভালোবাসা পায়ে পিষে বারবার তোর পিছনে ঘুরঘুর করেছে। তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম আমি মৌকে পাই আর না পাই তোকে পেতে দিবো না।

তাজ রাগে ফোঁস ফোঁস করে বললো, তুই একটা সাইকো রায়হান।

তাজ রেগে বের হতে গেলে রায়হান পেছন থেকে সেই সুরে শিস বাজাতে লাগলো। তাজ থেমে গেলো, আটমাস আগে রায়হান আসার সময়ও এই সুরে শিস বাজিয়েছে। কিছু তো রহস্য আছে এই সুরে। তাজ আবার ঘুরে তাকালো রায়হানের দিকে।

রায়হান মুচকি হেসে বললো, আসল কথা না জেনেই চলে যাচ্ছিস তুই।

তাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো রায়হানের দিকে রায়হান এবার গেয়ে উঠলো,
ওরে খোকা তুই আমার দু’চোখের মণি
কষ্ট ভুলে যাই ‘বাবা’ ডাকিস যখনই।
দেখে তোর হাসি, আমি সুখে ভাসি-
দুঃখরা ঝরে যায় তখনই…
খোকা, আয় তুই বুকে এখনই খোকা,
আয় তুই বুকে এখনই।

সেই সুরের গানের কলিটা গেয়ে উঠলো রায়হান। তাজ কিছু বুঝতে না পেরে শুধু তাকিয়ে আছে রায়হানের দিকে। কী বুঝাতে চাইছে রায়হান সেটা বুঝার চেষ্টা করছে।

রায়হান তাজের দিকে তাকিয়ে আবার হা হা করে হেসে বললো, তোর মস্তিষ্কে জং ধরেছে তাজ।

তাজ বিরক্ত গলায় বললো, মানে কী এসবের ?

রায়হান জেলের রড ধরে ফিসফিস করে বললো, তোর মতো হতভাগ্য বাবা এই পৃথিবীতে দু’টো নেই রে তাজ। যে নিজের সন্তানের আগমনের কথাই জানে না। যে নিজের সন্তানের মুখে বাবা ডাক শুনে সুখে ভাসতে পারবে না।

শরীরের রক্ত হিম হয়ে গেলো তাজের। রায়হান এসব কী বলছে ? অজানা অনুভূতিতে বুক ঢিপঢিপ করছে, হাত-পা কাঁপছে, চোখে পানির কণা চিকচিক করছে।

রায়হান আয়েশ করে বলতে লাগলো, তিতিরকে যে রাতে তুই ওর ফ্ল্যাটে দিয়ে এসেছিলি সে রাতেই আমার লোক ফোন করে জানায় আহান পাখিকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। আহান আমার ভাই যার কাছে আমি তিতিরের বোন পাখিকে রেখেছিলাম। বিয়ের খুশিতে কারো খবর নেয়নি তেমন। কিন্তু সেই ফোন পেয়ে প্রথমে ফোন দেই যে তিতিরের উপর নজর রাখে তার কাছে। সে জানায় তিতির আজ একটা হসপিটালে গিয়েছিলো কোনো কারণে, সেখান থেকে বেড়িয়ে সামনের রাস্তায় বসে কাঁদতে থাকে আর সেখান থেকে তুই গিয়ে তাকে তার ফ্ল্যাটে রেখে এসেছিস। একটু খটকা লাগে আমার, তখনই হসপিটালে আমার থাকা লোকের মাধ্যমে জানতে পারি তিতির প্রেগনেন্ট। বুঝেছিস তাজ, এতোদিনে তোর সন্তান পৃথিবীর আলো দেখেছে হয়তো। কিন্তু তুই বাবা হয়ে সেটা জানতেই পারিসনি।

তাজ কাঁপা গলায় বললো, এজন্য সেদিন বলেছিলি তিতির যাওয়ার আগে আবার আমার থেকে কিছু কেঁড়ে নিয়ে গেছে।

যাক এতক্ষণে তোর মাথায় বুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিতির একা যায়নি সাথে নিয়ে গেছে তোর সন্তানকেও।

তাজ নিজের ধৈর্য হারালো, ছুটে গিয়ে রায়হানের কলার চেপে ধরলো আবার।

বল তিতির কোথায়, আমার স,,সন্তান কোথায় ?

রায়হান অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তাজের হাত নিজের কলার থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। তাজের শরীরে যেনো অসীম শক্তি ভড় করেছে।

বল ওরা কোথায় আছে ? আমি জানি তুই সব জানিস।

তাজের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে কারারক্ষী এগিয়ে এলো। রায়হানের থেকে তাজকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করলো। রায়হানের কলার ছেড়ে দিলেও রড শক্ত করে ধরে রাখলো তাজ আর বারবার তিতিরের কথা জানতে চাইলো। অনেক কষ্টে কয়েকজন কারারক্ষী মিলে একটু দূরে আনলো রায়হানের থেকে। রায়হান তখনো অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ছে।

রায়হান হঠাৎ থেমে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, এই রিয়াকশনটা দেখার জন্যই আজ সত্যিটা তোকে জানালাম আমি। আমি এই চার দেয়ালে বন্দী থাকবো আর তোরা শান্তিতে বাঁচবি সেটা কীভাবে হয়। গত আটমাস হন্যে হয়ে তিতিরকে খুঁজেছিস, এটা ভেবে অস্থির হয়েছিস তিতির কী কেঁড়ে নিয়েছে আবার তোর থেকে ? আর আজ থেকে দু’জনকে খুঁজবি তুই। নিজের সন্তানকে একবার ছুঁয়ে দেখার জন্য ছটফট করবি। আমি তো সেটাই চেয়েছিলাম।

কথাগুলো বলে রায়হান চলে গেলো ভেতরে, তাজ নিজের ভাড় ছেড়ে দিলো। হাঁটু গেড়ে ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে। কারারক্ষীরা ছেড়ে দিলো তাকে।

তাজের চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ছে শুকনো ফ্লোরে, এটা কেনো করলে তিতির ? আমার তো অধিকার ছিলো নিজের সন্তানের কথা জানার।

তাজ উঠে দাঁড়ালো কোনোমতে। টলমলে পায়ে বের হয়ে গেলো। দিকবিদিকশুন্য হয়ে গাড়ি ছুটালো। বেশ কয়েকবার এক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচে গেলো।

ইকবাল অনেকটা সুস্থ এখন তাই বাড়িতে আনা হয়েছে। ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো ইরিনা আর ইকবাল। কোনোদিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো তাজ, সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের মতো রইলো ইকবাল আর ইরিনা। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলো না, উপরে বিকট আওয়াজ পেয়ে কেঁপে উঠলো।

ইকবাল উপরের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখো তো ইরি কী হলো ?

ইরিনা সম্মতি জানিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। তাজের দরজার সামনে দাঁড়াতেই একটা ফুলদানি তার পায়ের কয়েক ইঞ্চি দূরে পরে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেলো ইরিনা।

এসব কী তাজ ?

তাজের কানে সে কথা পৌঁছালো না, রুমের জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছুঁড়ে ফেলতে লাগলো। ইরিনাও আগাতে পারছে না, শেষে কোনটা এসে শরীরে লাগে। সব ভাঙা শেষ হয়ে গেলে চুল খামচে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো তাজ। জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। ইরিনা সাবধানে পা ফেলে তাজের কাছে এসে কাঁধে হাত রাখলো।

কী হয়েছে আমার বাবার ?

তাজ নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলো না। বসা অবস্থায় মাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। ইরিনা তাজের পাশে বসলে তাজ মায়ের কোলে মাথা রেখে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। ইরিনা সময় দিলো তাজকে, এখন জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে পারবে না ছেলেটা। অনেকটা সময় পর ঠান্ডা হলো তাজ, চুপচাপ শুয়ে আছ। ততক্ষণে দরজায় এসে দাঁড়ালো ইকবার।

ইরিনা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, এবার বল কী হয়েছে বাবা ?

তাজ ভেজা গলায় বললে, সবাই আমার সাথেই কেনো এমন করলো মা ? আমি তো কারো সাথে কোনো অন্যায় করিনি। রায়হান বন্ধু হয়ে এভাবে পিঠে ছুরি বসালো। আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করলো বন্ধুত্ব, মৌকে তো আমি বলিনি রায়হানকে বাদ দিয়ে আমাকে ভালোবাসতে। এ কেমন ভালোবাসা মা ? যে ভালোবাসা কেঁড়ে নিতে শেখায়। আর তিতির, তাকে তো আমি আমার জীবনে জোর করে আনিনি, সে নিজের ইচ্ছায় জোর করে এসেছে আমার জীবনে। আমি মানছি রাগের বশে একটা ভুল করে ফেলেছি, অন্যায় করে ফেলেছি তার সাথে। তাই বলে সে আমাকে না জানিয়ে আমার সন্তানকে আমার থেকে লুকিয়ে চলে যাবে ? আমার তো অধিকার আছে আমার সন্তানের উপর, তাই না মা ? যতটা অধিকার তিতিরের আছে, ঠিক ততটা অধিকার আমারও আছে।

স্তব্ধ হয়ে আছে ইরিনা আর ইকবাল। তাজের কথায় মাথা হ্যাং হয়ে গেছে তাদের। ইরিনার মনে পরলো শেষের কিছুদিন তিতিরের অসুস্থতা। সে এমন কিছুই সন্দেহ করেছিলো কিন্তু যখন তাজ আর তিতিরের মধ্যকার সম্পর্কের অবস্থা মনে হয় তখন সে ইগনোর করে যায় ব্যাপারটা। ইকবাল এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা।

গম্ভীর গলায় বললো, বাচ্চার কথা তুমি কীভাবে জানলে ?

রায়হান বলেছে সব, তাজ একে একে সব খুলে বললো রায়হান যা যা বলেছে।

ইকবাল বললো, হয়তো এবারও সব মিথ্যে বলছে রায়হান।

না এবার আর কিছুই মিথ্যা নয়। রায়হানের থেকে সব শুনে আমি সেখানেই গিয়েছিলাম তিতিরকে যেখানে বসে কাঁদতে দেখেছি। এটা সত্যি না হলে ঐ হসপিটালের বাইরে বসে কেনো কেঁদেছিলো তিতির। তার আশেপাশে ঐ একটাই হসপিটাল ছিলো সেখানে খোঁজ নিয়েছি আমি। তিতির সেখানেই ডক্টর সাবিত্রী দেবীর কাছে গিয়েছিলো, রিপোর্টও ফেলেই চলে এসেছিলো। সেই ফাইল আমাকে দেখিয়েছে ডক্টর সাবিত্রী। অনেক কমপ্লিকেশন ছিলো তিতিরের প্রেগনেন্সিতে, সেসব বলেছে আমায়, লাইফ রিস্কও ছিলো। ডক্টর সাবিত্রী তিতিরকে এবরশন করাতে বলেছিলো তার তিতির ভাবার জন্য সময় চেয়ে বের হয়ে আসে। তাই হয়তো ওভাবে কাঁদছিলো।

ইকবাল দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তিতির যা স্বার্থপর মেয়ে দেখো এবরশন করে কবেই শেষ করে দিয়েছে তার অস্তিত্ব।

তাজ যেনো ধপ করে জ্বলে উঠলো, বাবা।

তাজের মনে ভয় ঢোকে গেলো। বেঁচে আছে তো তার সন্তান, আর তিতির সেই বা কেমন আছে ? কীভাবে খোঁজে পাবে তাদের ?

চলেব,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here