#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-১৩

0
430

#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-১৩
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
#বোনাস পর্ব-১৩
(গল্পের নতুন মোড়)

গাইনোকোলজিস্ট সাবিত্রী দেবীর চেম্বারে থম মেরে বসে আছে তিতির। যে মিথ্যা দিয়ে গল্পের শুরুটা হয়েছিলো, সেই মিথ্যাটা এখন সবচেয়ে কঠিন সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে তিতিরের সামনে।

সাবিত্রী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তিতির তুমি আমার মেয়ের বয়েসী। তাই নিজের মেয়ে মনে করেই বলছি তুমি এবরশন করে ফেলো। এই বাচ্চাটা তোমার শরীরের শত্রু হয়ে দাঁড়াবে।

মনে হচ্ছে কেউ শক্ত করে তিতিরের গলা চেপে ধরেছে। কিছুতেই গলা থেকে আওয়াজ বের করতে পারছে না।

অনেক কষ্টে বললো, কিন্তু ম্যাম ওর কী দোষ ?

দোষ ওর নয় তিতির, দোষ তোমার শারিরীক অবস্থার। তোমার শারিরীক অবস্থা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।

কিন্তু পঁচিশ বছর তো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য উপযুক্ত বয়স তাহলে ?

উপযুক্ত বয়স হলেও তোমার অনেক কমপ্লিকেশন আছে সেটা রিপোর্টে স্পষ্ট। যত সময় যাবে তুমি তত অসুস্থ হতে থাকবে। ডেলিভারিতে তোমার আর বাচ্চার দুজনেরই লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে।

তিতির কী বলবে বুঝতে পারছে না।

তিতির কোনমতে বললো, আমার একটু সময় চাই।

ঠিক আছে, তুমি ভালো করে চিন্তা ভাবনা করে দেখো। তবে বেশি দেরি করো না, তাহলে এবরশনও রিস্ক হয়ে যাবে।

তিতির এলোমেলো পায়ে বের হয়ে গেলো হসপিটাল থেকে। মাঝে আরো দুটো দিন পেরিয়েছে, একটু বেশি অসুস্থ ফিল করায় হসপিটালে এসেছিলো তিতির। এখানে এসে এসব জানতে পারবে কল্পনাও করেনি। এবার কী করবে সে ? বাচ্চাটাকে বাঁচাতে গিয়ে যদি সেও মা*রা যায় তাহলে পাখিকে কে দেখবে। বাচ্চাটা এখনো একটা ভ্রুণ মাত্র কিন্তু পাখিকে সে কোলেপিঠে করে বড় করেছে ষোল বছর ধরে। নিজের সন্তানের থেকে কোনো অংশে কম নয় পাখি। কাকে বেছে নিবে তিতির সন্তান, নাকি বোন। আর তাজ সে কখনো এই বাচ্চা মেনে নিবে না। সবাই যদি এই বাচ্চার কথা জানতে পারে তাহলে মৌ ফিরে পাবে না তাজকে। নাহ তিতির কাউকে জানতে দিবে না এই বাচ্চার কথা। তিতির নিজের পেটে হাত রেখে অনুভব করার চেষ্টা করলো। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তিতিরের, এখানে ছোট একটা প্রাণ আছে।

তিতির কাঁদতে কাঁদতে বললো, মাকে মাফ করে দে সোনা। তোর মা যে বড্ড স্বার্থপর। শুধু যদি নিজের জীবনের ঝুঁকি থাকতো তাহলে কখনো তোকে মে*রে ফেলার কথা ভাবতাম না। কিন্তু তোর এই স্বার্থপর মায়ের জীবনের সাথে আরো একটা জীবন জড়িয়ে আছে যে সোনা। তোর স্বার্থপর মা তোকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবে না। তুইও ঘৃণা কর তোর মাকে, প্রচন্ড ঘৃণা।

কাঁদতে কাঁদতে ফুটপাতে বসে পড়লো তিতির। এদিকটায় নিরিবিলি, খুব একটা মানুষজন নেই। তিতিরের কান্নার আওয়াজে ভারী হয়ে উঠলো আশপাশটা। নিজের সন্তান খু*নের দ্বায় মাথায় নিয়ে কীভাবে বাঁচবে সে ? সারাজীবন এই যন্ত্রণা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই তার সামনে।

তুমি এখানে কী করছো ?

গম্ভীর আওয়াজে মাথা তুলে তাকালে তিতির। সামনে তাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি নিজের চোখের পানি মুছে ফেললো।

তাজ তাচ্ছিল্যের সুরে বললো, এখানে বসে কান্না করছো কেনো ? চোখের পানি জমিয়ে রাখো, খুব তাড়াতাড়ি এই পানির প্রয়োজন হবে।

তিতির না বুঝে ভাঙা গলায় বললো, মানে ?

খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে সেটা। এখন এখানে বসে সিনক্রিয়েট না করে গাড়িতে গিয়ে বসো। তোমার নাটক দেখতে দেখতে আমি নিজেই অভিনয় ভুলে গিয়েছি।

তিতির কথা না বাড়িয়ে উঠে তাজের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো, যেটা রাস্তার অপর পাশে পার্ক করা। তিতিরকে দেখে তাজ গাড়ি থামিয়েছে। তিতির রাস্তায় পা রাখতেই তাজ হাত ধরে টান দিলো। দ্রুত গতিতে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো একটা প্রাইভেট কার।

কী করছিলে এখনই উপরে চলে যেতে।

তিতির তাকালো চলে যাওয়া গাড়ির দিকে তারপর তাজের দিকে তাকালো, আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি স্যার। উপরে চলে গেলে একটু বিশ্রাম অন্তত পেতাম।

তাজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো তিতিরের দিকে। তিতির তাজের দৃষ্টি উপেক্ষা করে হাতের দিকে তাকালো। সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলো তাজ। তিতির রাস্তার এপাশ ওপাশ দেখে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। তাজও তার পিছনে গেলো। গাড়িতে উঠে সিট বেল লাগিয়ে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো তিতির। তাজ একবার তিতিরের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। তাজের হঠাৎ খেয়াল হলো গত দেড় মাসে তিতির শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। চোখের নিচে গাড়ো কালো দাগ পড়েছে, ফর্সা মুখে যেটা খুব বাজে লাগছে। মুখটা কেমন ফ্যাকাশে সাদা হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কেউ শরীরের সব রক্ত শুষে নিয়েছে।

তাজ সামনে তাকিয়ে বললো, এদিকে কোথায় গিয়েছিলে ?

তিতির স্বাভাবিক গলায় বললো, আরো একটা পাপ করার প্রস্তুতি নিতে।

তাজ বাঁকা চোখে তাকালো তিতিরের দিকে। মেয়েটা সবসময় এমন এমন কথা বলে রাগে তাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়। যেমন এখন রাগে ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে লা*থি দিয়ে ফেলে দিতে। আ*ব*জ*র্নাটাকে গাড়িতে উঠানো ভুল হয়েছে তার। নাকমুখ কুঁচকে গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো তাজ। তিতির আঁড়চোখে তাকালো তাজের দিকে। তিতিরের হাতটা আপনাআপনি চলে গেলো নিজের পেটে।

মনে মনে বললো, ওর কথা আপনি কোনদিন জানতে পারবেন না। যেদিন জানতে পারবেন সেদিন হয়তো ও থাকবে না কিংবা আমি। সেদিন হয়তো আরো একটু বেশি ঘৃণা করবেন আমাকে।

তিতির বললো, আমাকে একটু আমার ফ্ল্যাটের সামনে নামিয়ে দিয়েন।

তাজ সরু চোখে তাকিয়ে বললো, কেনো ?

তিতির বললো, আজ রাতটা সেখানেই থাকতে চাই।

তিতির কোথায় থাকলো না থাকলো তাতে কিছু যায় আসে না তাজের। তাই সে আর কথা বাড়ালো না। তিতির আগের মতো লুকিয়ে দেখছে তাজকে, প্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে। কোনো জানি মনে হচ্ছে আর দেখতে পাবে না এই মানুষটাকে। শেষবারের মতো নিজের আসক্তিকে প্রাণ ভরে দেখে নিচ্ছে তিতির। তাজ তিতিরের দিকে তাকালে দেখতে পেলো সে চোখ বন্ধ করে আছে, কিন্তু তার মনে হচ্ছিল তিতির তাকে দেখছে। বা*জে চিন্তা বাদ দিয়ে গাড়ি চালানোয় মন দিলো তাজ। তিতিরের ফ্ল্যাটের সামনে গেলে তিতির চুপচাপ নেমে যায়। তাজ তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে। আজ একটু বেশি বিধস্ত দেখাচ্ছে তিতিরকে কিন্তু কারণটা বুঝতে পারছে না তাজ।

তাজ নিজের উপর বিরক্ত হয়ে বললো, এতো কী ভাবছিস তাজ ? দেখ গিয়ে এটা আবার নতুন কোন নাটক শুরু করেছে।

১৫.
রাত নেমেছে পৃথিবীর বুকে। রুমের এক কোণে গুটিশুটি মেরে বসে আছে তিতির। গায়ের শাড়িটা এখনো চেঞ্জ করা হয়নি তার। নিজের পেটের উপর হাত রেখে চুপচাপ বসে আছে।

আজ রাতটা শুধু তোর আর আমার। আজ সারারাত মা ছেলে মিলে গল্প করবো ঠিক আছে সোনা বাচ্চা আমার। ইশ তুই ছেলে নাকি মেয়ে সেটা তো জানিই না।

চোখে পানি চলে এলো তিতিরের, আর কোনোদিন জানতেও পারবো না। তুই আমার ছেলে কারণ ছেলেরা যে মাকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু তোর মাকে তো কেউ ভালোবাসে না, তুইও বাসবি না আমি জানি। তবে বিশ্বাস কর তোর মা তোকে খুব ভালোবাসে কিন্তু সে অসহায়, নিরুপায়।

হু হু করে কেঁদে উঠলো তিতির। কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে তার, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে আজ।

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বললো, আই লাভ ইউ সোনা।

হঠাৎ কলিংবেলের শব্দে চমকে উঠলো তিতির। এতরাতে এখানে কে আসবে। তাজ ছাড়া তো কেউ জানে না সে আজ এখানে আছে, তাহলে কী তাজ ? কিন্তু সে কেনো এখানে আসতে যাবে ? তিতির ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। অনেক সাহস নিয়ে দরজা খুললো। ঝড়ের বেগে কেউ জাপ্টে ধরলো তাকে। ঝোঁক সামলাতে না পেরে দু’কদম পিছিয়ে গেলো।

ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেউ বললো, আপুনি।

হুঁশ ফিরলো তিতিরের ভেঙে ভেঙে বললো, বোনু তুই ?

পাখিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তিতির। ছেড়ে দিলে আবার হারিয়ে যাবে যেনো। বেশ অনেকটা সময় লাগলো তিতিরের নিজেকে সামলে উঠতে। পাখিকে নিজের বুক থেকে সরিয়ে সারামুখে চুমু খেতে লাগলো। আবার বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। তিতিরের কান্নায় পাখিও কাঁদছে। দীর্ঘ দেড় মাস পর বোনুকে পেয়েছে তিতির। গত ষোল বছরে একটা দিনও বোনুকে দূরে রাখেনি সে।

তিতির কাঁদতে কাঁদতে বললো, কোথায় চলে গিয়েছিলি বোনু ? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই ? আর কখনো একা ছাড়বো না তোকে।

আহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিতিরের দিকে। এটাই তার তুতুল বিশ্বাস করতে পারছে না। কী বিধস্ত অবস্থা চেহারার। ছোটবেলায় নাদুসনুদুস চেহারার মেয়েটার এই হাড্ডিসার দেহ, গলার হাড়গুলো যেনো চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে, ফ্যাকাশে মুখে চোখের নিচে গাড়ো কালো দাগ।

আহান অস্পষ্ট আওয়াজে বললো, তুতুল।

এতক্ষণে তিতিরের চোখ পড়লো পাখির পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আহানের দিকে। তার আওয়াজ শুনতে পায়নি তিতির, তবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে একটু থমকালো।

পাখিকে নিজের থেকে একটু সরিয়ে, আপনি কে ?

আহান কাঁপা গলায় বললো, তুতুল তুই আমাকে চিনতে পারছিস না ?

কেঁপে উঠলো তিতির। আজ কতগুলো বছর পর এই নামে কেউ ডাকলো তাকে। নামটা তো সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো। তিতির ভালো করে দেখতে লাগলো সামনে দাঁড়ানো অচেনা ছেলেটাকে। তিতিরের চোখ আঁটকে গেলো ছেলেটার ডানপাশের ভ্রুর কাটা দাগে। ধূলোপড়া স্মৃতি হাতড়ে উঠিয়ে আনলো সেই দিনটা।

তিতির ভাঙা গলায় বললো, আহু ?

আহান বাচ্চাদের মতো ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে মাথা উপরে নিচে নাড়িয়ে বুঝালো হ্যাঁ সে আহু। তুতুলের খেলার সাথী আহু।

তিতির দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আহানকে। আহানও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তার তুতুলকে। এত বছরের হাহাকার করা বুকে যেনো এক পশলা বৃষ্টি হলো আহানের।

কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি তুই তুতুল। সেদিন ঘুম থেকে উঠে তোদের বাড়ি গিয়ে দেখি কেউ নেই। মামা-মামী, তুই কেউ নে। বেলা গড়িয়ে মামা-মামীর লা*শ বাড়িতে এলো তারপর আর কোনোদিন তোকে খোঁজে পায়নি আমি। পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম, বাবা বাধ্য হয়ে লন্ডন পাঠিয়ে দেয়।

বাবা শব্দটা শুনে ছিটকে দূরে সরে গেলো তিতির। এত বছর পর নিজের ছোটবেলার খেলার সাথীকে দেখে কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলো অতীতের ভয়ংকর সেই রাতের কথা। তিতির দৌড়ে পাখির কাছে এসে বুকে জড়িয়ে নিলো পাখিকে।

ভীত গলায় বললো, তোকে রায়হান চৌধুরী পাঠিয়েছে তাই না ? পাখিকে ফিরিয়ে দিতে পাঠিয়েছে, কাজ হয়ে গেছে এবার চলে যা।

আহান কঠিন গলায় বললো, আমাকে রায়হান চৌধুরী পাঠায়নি, আমি রায়হান চৌধুরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পাখিকে তোর কাছে নিয়ে এসেছি। কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তোর ঠিকানা পেতে, জানিস তুই ?

তিতির অবাক হয়ে বললো, রায়হান চৌধুরী জানে না তুই পাখিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিস ?

নাহ্ রায়হান চৌধুরী কিছুই জানে না।

তিতির চমকে উঠলো আহানের কথা শুনে। ব্যস্ত গলায় পাখির দিকে তাকিয়ে বললো, আমাদের এখনই এখান থেকে চলে যেতে হবে বোনু। রায়হান চৌধুরী জানতে পারলে তোকে আবার কেড়ে নিবে আমার থেকে।

আহান বলল, কী বলছিস এসব ?

তিতির তাকালো আহানের দিকে কিছু ভেবে আহানের সামনে হাত জোর করলো, পাখিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে অনেক বড় উপকার করেছিস। এখান থেকে দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে আর একটা সাহায্য কর আহান। এর বিনিময়ে তুই যা চাইবি তাই দিবো আমি। শুধু রায়হান চৌধুরীর নাগালের বাইরে নিয়ে চলে।

আহান মনে মনে বললো, তুই চাইলে তো নিজের জীবনটাও দিয়ে দিবো রে তুতুল।

চল আমার সাথে।

তিতির যেতে গিয়েও থেমে গেলো, এক মিনিট দাঁড়া।

তিতির দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ব্যস্ত হাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। আর কখনো দেখতে পাবে না এই রুমটাকে। জীবনের দীর্ঘ ষোলটা বছর কাটিয়েছে এখানে, কতশত স্মৃতি এখানে। এসবের মায়া করলে হবে না এখন, পাখিকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে হবে তাকে, অনেক অনেক দূরে। আহান তিতির আর পাখি গাড়িতে গিয়ে বসতেই আহান গাড়ি নিয়ে ছুটতে লাগলো ব্যস্ত ঢাকা শহরের বাইরে৷

তিতির চোখ বন্ধ করে মনে মনে বললো, ভালো থাকবেন স্যার। ভালো থেকো মৌ আপু, তোমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম তোমাকে। মাফ করবেন স্যার যাওয়ার সময়ও আপনার জীবন থেকে কিছু কেড়ে নিয়েই গেলাম। তবে আজ আপনার জীবন থেকে বিষাক্তফুলের বিদায় হল তার বিষাক্ততা নিয়ে।

তিতির গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো, আবার কী আসা হবে এই শহরে ? হয়তো না।

১৬.
এতরাতে ফোনের আওয়াজে বিরক্ত হলো রায়হান। সারাদিন হসপিটালে থেকে, বিয়ের কেনাকাটা করে ক্লান্ত হয়ে শুয়েছে। এখন আবার কে বিরক্ত করছে তাকে।

ফোন রিসিভ করে ঘুমঘুম গলায় বললো, হ্যালো।

স্যার দুদিন ধরে আহান স্যার তার ফ্ল্যাটে নেই আর মেয়েটাও।

এক ঝটকায় ঘুম উড়ে গেলো রায়হানের, ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।

ধমকে উঠলো, ফ্ল্যাটে নেই মানে কী ?

স্যার, দু’দিন আগে আহান স্যার মেয়েটাকে নিয়ে বাইরে আসে। আমরা ভেবেছিলাম অন্যদিনের মতো ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা নজর রেখেছি কিন্তু আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। ভেবেছিলাম খোঁজে পেয়ে যাবো তাই আপনাকে জানায়নি। কিন্তু আজ জানতে পারলাম আহান স্যার মেয়েটাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে।

চমকে উঠলো রায়হান, হোয়াট ?

ভীত গলায় উত্তর এলো, ইয়েস স্যার।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here