হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৪৬

0
656

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

১০ দিন পর,
আয়ানকে আজ বাসায় আনা হবে।আরু আগে থেকে বাসায় সার্ভেন্টদের বলে ওদের পুরো রুম পরিষ্কার করিয়েছে।আরু এই কয়দিন একবারো বাসায় যায়নি।সবাই ওকে অনেক বার বলেছে বাসায় গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে তারপর আসতে কিন্তু ও যায়নি।১ মিনিটের জন্যেও ওকে চোখের আড়াল করেনি।এর মাঝে আরু আয়ানের সাথে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলেনি।আয়ান অনেক কথা বলেছে কিন্তু আরু চুপ ছিলো।এইকয়দিনে সবাই এসে দেখে গেছে আয়ানকে।
আয়ানকে হুইলচেয়ারে করে ওদের রুমে রেখে গেছে।আরু আয়ানকে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে ওয়াশরুমে গিয়েছে।আর আয়ান শুধু তাকিয়ে দেখছে তার বউকে।আগে থেকে শুকিয়ে গেছে।ঠিক মতো ঘুম,খাওয়া কিছু হয়নি এই কয়দিনে।রাতে আয়ান একটু নড়ে উঠলে আরু সাথে সাথে উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করতো,’কী হয়েছ?’ ‘ কষ্ট হচ্ছে না কী?’ ‘ ডাক্তার ডাকতে হবে কী না?’ এই সেই।আরুকে এমন উতলা হতে দেখে আয়ান আরুর হাত ধরে চুপ করে বসিয়ে দিয়ে বলতো ওর কিছু হয়নি।তারপর আরুও নিশ্চিন্ত হতো।
আয়ানের এসব ভাবনার মাঝেই আরু ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি আর ছোট রুমাল নিয়ে বের হয়।আয়ান বুঝলো ওর শরীর মুছে দিতে আসছে।এই কয়দিন এমনই হয়েছে।প্রথম যেদিন আয়ানের শরীর মুছে দেওয়ার জন্য আরু এগিয়েছিলো ওইদিন ওকে হাজারো জড়তা,হাজার লজ্জায় ঘিরে ধরেছিলো।বারবার এক পা এগিয়ে গিয়ে দু পা পিছিয়ে আসছিলো।আয়ান এসব দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলো।পরে আরু নিজের সব জড়তা,লজ্জা সাইডে রেখে আয়ানের দিকে এগিয়ো গিয়োছিলো।কিন্তু কীভাবে আয়ানের শরীরে হাত দিবে তা নিয়েও অনেকক্ষন ভাবনা চিন্তা করতে হয়েছে।আরুকে তখন এমন দাড়িয়ে থাকতে দেখে আয়ান বলে,
আয়ানঃ এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো?কাছো আসো।দেখো শরীর প্রচন্ড চুলকাচ্ছে।
আরুঃ…………
আয়ানঃ আচ্ছা তোমর কী লজ্জা লাগছ?(ইচ্ছে করে বলেছে)
আরুঃ……….
আয়ানঃ কী হলো নিচে তাকিয়ে আছো কেনো?…আচ্ছা তোমার যদি এতোই লজ্জা লাগে তাহলে তুমি সরো একজন নার্সকে পাঠিয়ে দাও।

আরু এমন ভাবে তাকালো যে এখনই আয়ানকে গিলে খাবে।ও মুখে এখন লজ্জা উবে গিয়ে রাগ ভেসে উঠেছে আরুর ইচ্ছে করছে আয়ানকে গলা টিপে মেরে ফেলতে।আরুকে এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান আবার বললো,
আয়ানঃ কী এতো ভাবছো?যদি তুমি দাও তাহলে তাড়াতাড়ি করো আর না পারলে একজন না……

আয়ানকে আর বলতে না দিয়ে আরু রেগে বললো,
আরুঃ আশেপাশে মেয়ে দেখলে মন খালি ইশপিশ করে তাই না?লুচু কোথাকার😤
আয়ানঃ যা..বাব্বা আমি আবার কী করলাম?তোমার করতে অসুবিধা হচ্ছে বলেই তো আমি এই কথাটা বললাম।
আরুঃ আমার অসুবিধা হচ্ছে একবারো বলেছি😬।বেশি বুঝতে কে বলেছে?..ঘরে বউ রেখে বাহিরের মেয়েদের দিকে নজর যায়।ইচ্ছে করছে চোখ গুলো খুলে লুডু খেলি😠
আয়ানঃ হায় হায় বউ কী বলো🤭।আমার চোখ না থাকলে তোমাকে দেখবো কী করে।আর ঘরের বউয়ের কথা বলছো বউতো আমার দিকে ঠিক মতো ফিরেই তাকায় না☹️
আরুঃ না তাকালে এখন কী করছি?
আয়ানঃ সে তো এখন না পেরে….ওই তো নার্স এসেছে।

ওদের কথার মাঝেই একজন নার্স এলো রুমে।তাকে দেখে আয়ান এই কথা বললো।আরু ফিরে তাকিয়ে দেখে সত্যি একজন নার্স এসেছে।নার্সটি না বুঝে এগিয়ে এসে বললো,
নার্সঃ স্যার কিছু বলছেন আমাকে?
আয়ান একবার আরু দিকে তাকিয়ে বললো,
আয়ানঃ হ্যা আসলে বলছিলাম,আমার শরীরটা মু……
আরুঃ আপনি কী কোনো দরকারে এসেছেন?
নার্সঃ হ্যা আসলে স্যারের এখন একটা ইনজেকশন আছে।সেটাই দিতে এসেছি।কিন্তু স্যার কী বলছিলেন?
আরুঃ আচ্ছা আপনি আপনার লাজ করুন।আর ও আপনাকে কিছু বলেনি।
আরুর কথা শুনে নার্স নিজের কাজ করে চলে গেল।আর আরুর এমন ব্যবহার দেখে আয়ান মিটিমিটি হাসছে।তা দেখে আর আরুজ গা-পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।
——-
সেদিনের কথা ভেবেই আয়ান এখনো হাসছে।তা দেখে আরু বললো,
আরুঃ শাঁকচুন্নির কথা এখন আবার মনে পরলো?
আয়ানঃ আমার লাইফে শাঁকচুন্নি,পেত্নী,পরী,মানুষ সব একজনই।সেই আমার মন জুড়ে বিরাজ করছে।সে কিন্তু একান্তই আমার।আমি ছাড়া তার উপর আর কারো অধিকার নেই।আর সারাজীবন করবে আর সে কে জানো?
আরুঃ.(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
আয়ানঃ সে হলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার আমার বউ।আমার ভালোবাসা,আমার বেঁচে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি।তাঁকে ছারা নিশ্বাস নেওয়া টাও আমার কষ্টের।ভালোবাসি❤️

আরু এমন কথা শুনে পুরো স্তব্ধ।এর আর কী বলা যায় তা আরু জানে না।যদি জানে কিন্তু ও বলতে চাচ্ছে না।নিজের মনে কোনো এক কোনায় এটা থাক।
আরু নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আয়ানের গা মুছে দেয়।গ মুছে দিতে দিতে আরু আয়ানের দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
আরুঃ আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলবেন?
আয়ানঃ না মিথ্যে বলবো।
আরুঃ আবার?😤
আয়ানঃ আচ্ছা বেশ বলো?
আরুঃ আপনার শরীরে এই দাগ গুলো কিসের?
আয়ানঃ একজনের মনে প্রচন্ড পরিমানে আঘাত করেছিলাম সেই আঘাতের ভাগ নিতে নিজের শরীর ক্ষত বিক্ষত করেছি।(পুরো নির্লিপ্ত ভাবে)
আরুঃ মানে?(অবাক হয়ে)
আয়ানঃ এতো মানে জানতে হবে না।খিদে পেয়েছে মা’কে বলো খাবার পাঠাতে।
আরুঃ আব…আমি যাচ্ছি।ফ্রেশ হয়ে নি।

বলেই আরু চলে গেলো ফ্রেশ হতে।আরএ আয়ান এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লে।পুরোনো এসব কথা আয়ান ভাবতে চায়না।যা ছিলো কালো এক অধ্যায়।
আরু ওয়াশরুমে এসে আয়ানের কথা গুলো ভাবছে।আয়ানের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন।কিছু কয়েকদিন আগে এক্সিডেন্টের আর কিছু অনেক পুরোনো।দেখে মনে হচ্ছে কেউ নির্মম ভাবে মেরেছে।পুরো পিঠ জুড়ে মারের দাগ।লাঠি বা চিবুকের মার হবে কিন্তু সঠিক কোনটা তা বুঝতে পারছে না।আর তাছাড়া কাটাছিড়া তো আছেই হাতে আর বুকে।আরুর হটাৎ মনে হলো সেদিন হসপিটালে আয়ানার কথা আর তার আগে বলেছিলো ‘যদি ইচ্ছে করে ওর শরীরটা একবার দেখো।বুঝতে পারবে সব’।আরু দু কথা এক সাথে মিলিয়ে নিলো।তাহলে কী আয়ান ইচ্ছে করে নিজেকে…..না আরু আর ভাবতে পারছে না।
————-
আরু প্রায় অনেকক্ষন সময় দিয়ে সাওয়ার নিয়ে এসেছ।সাওয়ার নেওয়ার ফলে ওকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে।মনে হচ্ছে চেহারা থেকে অনেকটা ক্লান্তি দূর হয়েছে।আরু একটা লাল থ্রী-পিস পরে বের হয়েছে।বের হয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।ওখানে থেকে গলায় একটা চিকন স্বর্নের সেইন লকেট সহ,কানের দুল,হাতে এক জোড়া চিকন চুরি,নাকে আগেই নোজফিন ছিলো কিন্তু এখন নতুন একটা পরেছে।ব্যাস আরু রেডি।ওকে দেখতে পুরো বউ বউ লাগছে।আয়ানের বউ।এইসব কিছু আয়ানের মা দিয়েছে আরুকে পরার জন্য।ওকে একদম খালি খালি লাগছিলো তাই হসপিটাল থেকে আসার সাথে সাথে ওকে এগুলো দেয়।আরুও না করেনি।নিয়ে চলে এসেছে।
আরু এক মনে আয়ানার সামনে দাড়িয়ে এসব পরে নিজেকে তৈরী করছে আর একজন তৃষ্ণাতো চোখে আরুকে দেখছে।তার ইচ্ছে করছে আরুর কোমর অবধি ভেজা চুলে নিজের নাক ডুবিয়ে দিতে।আরুকে পুরো নিজের সাথে মিশেয়ে নিতে।ওর ভেজা ঘাড়ে নিজের ঠোঁটের ছোঁয়া দিতে।কিন্তু তার ভাগ্য খারাপ।এসব কিছুই এখন সে করতে পারবে না।
আরুর কথায় আয়ানের ঘর কাটে।
আরুঃ এমন করে কী দেখছেন?
আয়ানঃ আমার বউকে।কী সুন্দর,স্নিগ্ধ।ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে পেলি।
আরুঃ আ..আব..আমি খাবার আনতে যাচ্ছি।

আরু মানে মানে কেটে পরলো।কারণ এখানে থাকলে আয়ান ওকে আরো লজ্জায় ফেলবে।
আরু যেতে আয়ান নিঃশব্দে হেসে উঠে।
————–
আরু এক বাটি স্যুপ নিয়ে রুমে এলো।এসে দেখে আয়ান হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আরু সামনে গিয়ে বললো,
আরুঃ উঠুন।খেয়ে নিন।
আয়ানঃ এখন খেতে ভালো লাগছে না বউ🙁
আরুঃ একটু আগে তো বললেন খিদে পেয়েছে।এখন খেতে ইচ্ছে করছে না🤨।আর তাছাড়া একটু পর ওষুধ আছে।
আয়ানঃ একটু আগে খিদে ছিলো কিন্তু এখন নেই।
আরুঃ কোনো কথা শুনতে চাই না।চুপচাপ খান।
আয়ানঃ খাবো কিন্তু আমাকে আগে কিছু দিতে হবে।
আরুঃ কী🙄
আয়ানঃ আগে ঘুষ দিতে হবে।(ওর ঠোঁটের দিকে ইশারা করে)
আরু প্রচন্ড লজ্জা পেলো।লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো।আরুকে লজ্জায় মাথ নামাতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ হায়য়!এতো লজ্জা এখন পেলে বসরের সময় কী করবে?
এবার আরু গাল লাল হয়ে গেছ।কান গুলোও গরম হয়ে গেছে।কিন্তু এখন নিজের লজ্জা সাইডে রেখে বললো,
আরুঃ এই গরম স্যাুপ গুলো এখন ছুড়ে মারলে সারাজীবন এমন ঘুষ চাওয়ার কথা মাথাও আসবে না😬।চুপচাপ খাওয়া শুরু করুন।
আয়ানঃ খাচ্ছি খাচ্ছি।কী বউ কপালে পরলো🤦‍♂️।কথায় কথায় থ্রেট দেয়😣।একটু ভালোবেসে বললে কী হয়🙁
আরুঃ 😠তুই খাবি?
আয়ানঃ খাইয়ে দাও।হাতে ব্যাথা🥺।

আরু আর কিছু না বলে আয়ানকে খাইয়ে দিতে শুরু করলো।আর আয়ান আরুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।আরুকে আজ পুরো বউ বউ লাগছে।আয়ানের ইচ্ছে করছে আরুর গাল দুটোতে চুমু খেতে।কিন্তু এখন নিজের ইচ্ছেকে দমিয়ে রেখেছে।কারণ তার বউ এখন খেপে আছে।

আরু আয়ানকে খাইয়ে দিয়ে ওকে ওষুধ খাইয়ে দিলো।আয়ানকে শোয়ানোর জন্য আরু আয়ানের কাছে গেলো।আরু একটু ঝুকে পরার কারনে আরুর গাল আয়ানের ঠোঁটের খুব কাছে চলে গেছে।আয়ান এই সুযোগে আস্তে করে ওর হাতটা উঠিয়ে আরুর মাথার সাইডে নিয়ে ওর কাছে টেনে নিলো।আরু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আরু কিছু বলার আগেই আয়ান আরুর গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলো।চুমু দিয়ে আয়ান হাত ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আরু হতভম্ব হয়ে সেভাবেই ঝুকে আছে।আরুকে এমন অবাক হয়ে ঝুকে থাকতে দেখে আয়ান বাঁকা হেসে বললো,
আয়ানঃ কী হলো বউ?আরো চুমু লাগবে?

আরু কথা শুনেই সোজা হয়ে গেলো।ও রেগে বললো,
আরুঃ এটা কী হলো?
আয়ানঃ কোনটা কী হলো?(জেনেও না জানার ভান করে)
আরুঃ ধূর।কিছু না।শুয়ে পারুন।

আয়ান হাসতে হাসতে শেষ আরুর কথা শুনে আর ওর মুখ দেখে।আর আয়ানের হাসি দেখে আরুর রেগে যাচ্ছে।কিন্তু গালে লজ্জার আভা।
————-
আরু নিজে খেয়ে এসে নামাজ পরে শুয়ে পরলো।ওর প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।আর ঘুমও পাচ্ছে অনেক।আরু ঘুমানোর আগে আয়ানকে বলেছে কোনো দরকার হলে ওকে যেনো ডেকে দেয়।
আরু শোয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরলো।কিন্তু আয়ানের ঘুম আসছে না।ওর তো সারাদিন শুয়ে বসে,ঘুমিয়েই কেটে যায়।তাই এখন ঘুম আসছে না।আয়ান পাশ ফিরে ওর ঘুম কুমারীর দিকে তাকিয়ে আছে।কতো মায়া এই মুখে।আর এই মুখেই ওর জন্য একদিন কান্না ফুটে উঠেছিলো।না জেনে না বুঝে কতো কষ্ট দিয়েছ মেয়েটাকে।ওতো ভেবেছিলো আরুকে আর কোনো দিন ফিরেই পাবে না।কিন্তু না ওর জীবনে আবার ফিরে পেয়েছে তার আরুপাখিকে।এসব ভেবেই আয়ান এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তখনই ওর রুমে ওর মা নক করলো।আয়ান ও আরুর গায়ে ভালো মতো চাদর দিয়ে মা’কে ভিতরে আাতে বললো।আয়ানের মা ভিতরে এসে বললো,
আফিয়া রাহমানঃ এখন কেমন লাগছে বাবা তোর?
আয়ানঃ ভালো।
আফিয়া রাহমানঃ খেয়েছিস কিছু?
আয়ানঃ হ্যা আরু একটু আগে স্যুপ খাইয়েছে।তোমরা খেয়েছো?মায়ান আপু কোথায়?
আফিয়া রাহমানঃ হ্যা খেয়ছি সবাই।তোর আপু মায়ানকে ঘুম পারাচ্ছে।…আরু তো দেখি ঘুমায়।ঘুমাক মেয়েটা।অনেক ধকল গেছে মেয়েটার উপর দিয়ে এই কয়দিন।একা হতে তোর সবটা করছে।কাউকে কিছু করতে দেয়নি।
আয়ান শুধু আরুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।ওর মা আবার বললো,
আফিয়া রাহমানঃ কষ্টও পেয়েছে মেয়েটা।তোর আইসিইউতে থাকার সময় পাগলের মতো সবার কাছে গিয়ে বলছিলো একবার ওকে তোর কাছে যেতে দিতে।….কপাল করে এমন বউ পেয়েছিস।মেয়েটা সত্যি তোকে অনেক ভালোভাসে।ওকে আর কষ্ট দিস না।
আয়ান অবাক হয়ে ওর মা’র কথা শুনছে।আরু কী তাহলে সত্যি ওকে ভালোবাসে আগের মতো?…ভালোবাসা না থাকলে কেউ এমন করতে পারে না।………আয়ান আরুর দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
আয়ানঃ দেবো না।কোনো দিম ওকে কষ্ট পেতো দিবো না।সবসময় আগলে রাখবো।
আফিয়া রাহমানঃ দোয়া করি সব সময় সুখে থাক।
আয়ানঃ 😊😊
—————
প্রায় ১ মাস পর,
আয়ান এখনো সুস্থ হয়ে উঠেনি।ও এখনো হাটতে পারেনা শুধু পা একটু নাড়াতে পারে।তারপরও আরুর সেবার কোনো ত্রুটি নেই।একা হতে সব করছে।আয়ানও দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়।এটা সেই ছোট আরু যাকে না দেখে ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো।না দেখে দুষ্টামির বসে প্রোপোজ করেছিলো।প্রথম দেখে যাকে বাচ্চা মনে হয়েছিলো সেই আরু?আজ নিজের হাতে অসুস্থ স্বামীর সেবা করছে।সংসারে টুকটাক কাজ করছে।বিশ্বাসই হচ্ছে না।
ওদের সম্পর্কে টুকটাক ভালোবাসার খুনসুটি লেগেই থাকে প্রতিদিন।সবাই ভাবছে ওরা ওদের সম্পর্কে এগিয়ে গিয়েছে।কিন্তু আসলে কী তাই নাকি অন্য কোনো কাহিনি আছে।তা শুধু আয়ান আর আরু নিজে জানে।
এর মাঝে আয়ানকে বাসায় আনার ১ সপ্তাহ পর আয়ানা চলে গেছে ইউ.কে।আবার আসবে কিন্তু এখন ওকে যেতে হবে।
তন্নি আর অনিমের সম্পর্কে পুরো মাখন টাইপ।হ্যাপি কাপল ওরা।
মারিয়া আর রাফসানের প্রতিদিন একবার করে ব্রেকআপ হয়।আবার তা মিলে যায়।কিন্তু এতো কিছুর মাঝে ভালে খবর হলো,এতো বছর পর মারিয়া আর রাফসানের ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।ওদের বিয়ে।আয়ান একটু সুস্থ হলেই ওদের বিয়ের আয়োজন শুরু হবে।
————-
রাত ৩ টা
হটাৎ আরুর ঘুম ভেঙে গেছে।আসলে হটাৎ না একটা বাজে স্বপ্ন দেখেছে।যাতে ছিলো,আয়ান ওকে ছেড়ে কোথাও চলে যাচ্ছে।অনেক দূরে আরু বারবার ডাকছে কিন্তু আয়ান সারা দিচ্ছে না।
আরু একলাপে ঘুম থেকে উঠে বসে।ও প্রচন্ড ঘামছে।পাশে তাকিয়ে দেখে আয়ান ঘুমাচ্ছে।একদম নিষ্পাপ।
আরু আর কিছু না ভেবে আয়ানের বুকের উপর মাথা রেখে নিঃশব্দে কাদতে লাগে।ওর অনেক ভয় করছে।আয়ান যদি ওকে ছেড়ে চলে যায়।..না না ও থাকতে পারবে না আয়ানকে ছাড়া।বাঁচবে না ও।
হটাৎ গলায় তরল কিছুর অস্তিত্ব পেতেই আয়ানের ঘুম ভেগে গেলো।।ও আস্তে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আরু ওর বুকের উপর আর কিছুক্ষন পর পর কেঁপে উঠছে।এবার আয়ান বুঝতে পারলো আরু কাঁদছে।হটাৎ আরু আরু কাঁদছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছে না।আরুর কান্নার শব্দ আয়ানের কানে যেতেই ওর বুকের ভিতর কষ্ট হচ্ছে।আয়ান আস্তে করে ওর এক হাত আরুর মাথায় আরেক হাত আরুর পিঠে রেখে ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আয়ানঃ আরু পাখি কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেনো?
আরুঃ কিছু হয়নি।
আয়ানঃ শরীর খারাপ লাগছে?এই বউ বলো কী হয়েছে?
আরু এবার মাথা তুলে তাকালো।ডিম লাইটের আলোতে দেখা যাচ্ছে আরু চোখের পানি চিকচিক করছে।তা দেখে আয়ানের বুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
আরুঃ বললাম তো কিছু হয়নি।আপনি উঠলেন কেনো?
আয়ানঃ কিছু না হলে কান্না করছো কেনো?
আরুঃ এমনি ঘুম ভেঙে গেছে।
আয়ানঃ ঘুম ভাঙলে মানুষ কান্না করে?সত্যি করে বলো কী হয়েছ?
আরুঃ কিছু হয়নি।ঘুমান আপনি।

আয়ান বুঝেছে আরু কিছু বলবে না।তাই ও হাল ছেড়ে দিয়েছে।আরু আবার বালিশে মাথা রাখতে গেলে আয়ান বললো,
আয়ানঃ তুমি বালিশে মাথা রাখছো কেনো?
আরুঃ তো মাথা রাখবো?(ভ্রু কুচকে)
আয়ানঃ এখানে আসো।(ওর বুক দেখিয়ে)
আরুঃ ব্যাথা পাবেন।
আয়ানঃ এতোক্ষন যখন কাদছিলে তখন তো ব্যাথা পাইনি।তাহলে এখনো পাবো না।
আরুঃ (চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে)
আয়ানঃ এসো….

আরু আর কিছু না বলে আয়ানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো আর আয়ানও আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here