#ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৩+৪৪

0
365

#ফাগুন_প্রেমপর্বঃ ৪৩+৪৪

Written by: Bornali Suhana
💛
💛
রুম থেকে বের হতেই বেসিং এর সাথে ধাক্কা খায় রুমু। ট্যাপ ছেড়ে মুখে পানি দিতে থাকে। আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে মৃদু হেসে বর্ণের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ওর পা আগাচ্ছেনা৷ জোর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে। ইভানকে নীরব হয়ে সোফায় বসে থাকতে দেখে রুমু। এখন সে ইভানের কাছে যাবেনা৷ এখন তার বর্ণকে প্রয়োজন আর বর্ণের তাকে প্রয়োজন।
রুমে ঢুকে দরজা লক করে বর্ণের পাশে ফ্লোরে বসে পড়ে রুমু। মেয়েটা কত সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত বর্ণকে আরো বেশি শান্ত দেখায়৷ আলতো করে বর্ণের হাতের উপর মাথা রাখে রুমু। যখন জেগে থাকে তখন কোন কিছু বলার সাহস পায় না আজকে সে তার মনের কথাগুলো বলতে চায়। আর যে পারছে না এভাবে কথাগুলো চেপে রাখতে। বিছানার উপর হাত রেখে ব্যান্ডেজের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। চোখের কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। হাতটা শক্ত করে মুঠিবদ্ধ করে নেয়। এতোটাই শক্ত করে মুঠিবদ্ধ করেছে যে হাতের ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু ওর ব্যাথা লাগছে না একটুও। দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে বর্ণের হাতের উপর।
-“আমার ভালোবাসায় তো কোন খাদ ছিলো নারে৷ যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে সজিবকে চেয়েছি। আমার সব ভাবনা জুড়ে সজিব ছিলো এখনো আছে আর আজীবন থাকবে। তাহলে কেন আমি সজিবকে পেলাম না?
জানিস তুই যখন স্কুল/কলেজে মজা করে বলতি আমাকে তোর ভাবী বানাবি আমি তখন কি যে খুশি হতাম। ভাবতাম আমরা সারাজীবন এভাবেই একসাথে থাকবো। কিন্তু নিয়তি হয়তো অন্য কিছু চায়।
আসলে সব দোষ আমারই। আমিই দেরি করে ফেলেছি। অপেক্ষা করা যে আমার জন্য এমনও দিন নিয়ে আসতে পারে তা কেন আগে বুঝলাম না। আগে বুঝলে হয়তো…….! নাহ আসলে আগে বুঝলেও কিছু হতো না। সজিব কখনোই আমার ছিলো না আর হতোও না। ঈশার ভাগ্যে লিখা ছিলো ও। তাই তো আজ তারা একসাথে এতো সুখী। তারা সুখে থাকুক আমি না হয় ভালোবাসার সুখ দেখে সুখী হবো।”
-“তুই কিভাবে পারলি আমার থেকে কথাটা লুকাতে?”
এমন কথা শুনে রুমু চোখের জল মুছে ধরফরিয়ে উঠে বসে।
-“আরে তুই উঠতে যাচ্ছিস কেন? শুয়ে থাক জান। তোর ঘুম প্রয়োজন।”
বর্ণ তাও কথা শুনে না। উঠে বসতে লাগে। রুমু ওকে ধরে বালিশে আধশোয়া করে রাখে।
-“এসব কথা কেন আমায় আগে বলিস নি?”
-“কোনসব কথা?”
-“দেখ রুমু আমার মাথা গরম করিস নে। তুই জানিস আমি কি বলছি। আমাকে কেন এসব কথা বলিস নি?”
রুমু একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নেয়। চোখের কোণে জল আর ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলে,
-“বলে কি হতো? আমি চাইনি এই ব্যাপারটা আমাদের বন্ধুত্তের মাঝে আসুক।”
-“আমি আজকেই সবার সাথে কথা বলবো সর।”
রুমু এতোক্ষণ চোখ নিচের দিকে নিয়ে কথা বলছিলো। বর্ণের মুখে এই কথা শুনে আচমকাই চোখ উপরে তুলে। চট করে ওর হাত ধরে নেয়।
-“কিসব পাগলামো কথা বলছিস বর্ণ?”
-“আমি কোন পাগলামো কথা বলছিনা। আমি যদি আগে জানতাম তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাহলে কখনোই ঈশার সাথে বিয়ে ঠিক হতে দিতাম না। তুই কেন আমায় আগে বলিস নি? আগে বললে ব্যাপারটা এতো দূর যেতো না। যাই হোক যতদূরই যাক তা আমি সামলে নেবো৷ আমার কাছে তোর হ্যাপিনেসটা আগে আসে। সর আমায় উঠতে দে।”
রুমু বর্ণালীর কোমড় জড়িয়ে ওর কোলে মাথা রাখে।
-“আমার কসম লাগে বর্ণ। প্লিজ তুই এসব কিছু করতে যাস নে। সজিব আর ঈশা দুজন দুজনকে ভালোবাসে রে। আমি ওদের ভালোবাসার মাঝে কিভাবে আসি?”
-“তুই মাঝে যাচ্ছিস না। ঈশা মাঝে এসেছে। কেন বুঝতেছিস না? তোর কসম ফিরিয়ে নে বলছি।”
-“তুই কি সজিবের সুখটা চাস না?”
-“হ্যাঁ চাই সাথে তোর সুখটাও। দেখ ভালো মতো বলছি তুই তোর কসম ফিরিয়ে নে।”
-“নাহ নিবো না। আমি তাদের সুখ চাই। প্লিজ জান এমন করিস না। আমাকে তুই অপরাধী করিস না।”
বর্ণালী বুঝতে পারছে রুমু এভাবে মানবে না। ওকে মানাতে সে পারবে না। এমনই তো করে ও সবসময়। কখনোই নিজের সুখের কথা ভাবেনা। সবসময় অন্যকে সুখী করার পিছে পড়ে থাকে। নীরব হয়ে শুয়ে আছে দুজন। রুমু দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে বর্ণালীকে।
-“ছাড় আমায়।”
-“নাহ ছাড়বো না।”
-“আরে বাবা নড়তে পারছি নাতো।”
-“ওহ সরি।”
রুমু সরে এসে পাশে শুয়ে পড়ে। বর্ণালী যেনো কোন কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য ঠোঁটের আগায় আনতে চেয়েও আনছেনা। রুমু ভালো করেই বুঝতে পারছে সে কোন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চায়। বর্ণালীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
-“ইভান বাইরেই বসে আছে।”
-“আমি কি জিজ্ঞেস করেছি?’
-“না মানে আমিই বললাম। ছেলেটা অনেক কান্না করেছে রে। কেন এমন করছিস? ওর তো কোন দোষ নেই।”
-“হ্যাঁ ওর কোন দোষ নেই। দোষ আমার আর আমি তা ঠিক করতে চাই। আমি চাইনা আমার জন্য আমার পরিবারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হোক।”
-“এতে পরিবারের সম্মানের কথা কেন আসছে? তুই তো ইভানকে ভালোবাসিস।”
-“হ্যাঁ বাসি তবে সব ভালোবাসা যে পূর্ণতা পেতেই হবে তার তো কোন কথা নেই। আমার ভালোবাসা না হয় পূর্ণতা নাইবা পেলো।”
-“কিন্তু ইভানের কি হবে?”
-“ওর জন্য মালিহা আছে। মালিহা ওকে অনেক ভালোবাসে। আমি দেখেছি ওর ভালোবাসা।”
-“তুই কেন বুঝতেছিস না……..”
-“আমি বুঝতেছি না নাকি তুই বুঝতেছিস না? নিজে কি করেছিস? নিজের ভালোবাসা যদি অন্যের হাতে তুলে দিতে পারিস তাহলে আমি কেন পারবো না?”
এতোক্ষণে বর্ণালী রুমুর দূর্বল জায়গাটা ধরতে পেরেছে। ও বুঝে গেছে রুমুকে কিভাবে রাজী করানো যেতে পারে। শেষ চেষ্টাটা ও করবে।
ঈশা এসে রুমে ঢুকে দেখে রুমু বর্ণালীর বুকের উপর মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। ওদের এভাবে দেখে ঠোঁটের কোণে এক পশলা হাসি ফুটে উঠে। এমন বন্ধুত্ব আজকাল দেখা যায় না।
-“ঘুমিয়ে নাকি দুজন?”
রুমু মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বলে,
-“আরে না আয় বস।”
ঈশা বর্ণালীর ওপর পাশে বসে। বর্ণালী চুপ হয়ে আছে কিন্তু ওরা দুজনে গল্প জোরে দিয়েছে।
👇
ইভান শান্তভাবে সোফায় বসে বারবার বর্ণালীর রুমের দিকে তাকাচ্ছে। তখনই ওর মা আর বাবা আসেন। মা-বাবাকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসে সে। বর্ণালীর জন্য অনেক রকম ফলফ্রুট নিয়ে আসেন। ফলের ঝুরিটা রুমু এসে এগিয়ে নিয়ে রান্নাঘরে যায়। ঈশা বর্ণালীর পাশে বসেই গল্প করছে। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কিছুক্ষণ আলাপ করে বর্ণালীকে দেখতে রুমে যান। ইভানের মা-বাবাকে দেখে বর্ণালী উঠে বসে। সাহারা ইসলাম ওকে উঠে বসতে দেখে বলেন,
-“আরে না মা উঠতে হবে না তুমি শুয়েই থাকো।”
-“না আন্টি ঠিক আছি।”
ফারহান আহমেদ একটুখানি হেসে বলেন,
-“এখন শরীর কেমন মামনি?”
-“জ্বি আংকেল আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন অনেকটা ভালো আছি।”
-“নিজের খেয়াল রাখতে শিখো মামনি।”
বর্ণালী অনেক লজ্জা পাচ্ছে। ইভান এক কোণা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার বাসন্তীকে দেখার একটা সুযোগও ছাড়তে চায় না। অভিমান ঠিকই কমে যাবে। বাসন্তী তার বসন্ত পথিককে কখনোই মাঝপথে একা ছাড়বে না। এটা ভেবেই ইভান নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে।
দেখাদেখির পর্ব শেষ করে সবাই এখানেই খাওয়া-দাওয়া করেন। ইভান মুখে একটু খাবারও দিতে পারেনি। ওর গলা দিয়েই নামছিলো না খাবার। বাসায় যাবার সময় হয়ে আসে। ঈশার মন চাইছিলো না বাসায় যেতে তবুও যেতে হবে। সবাই বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে কিন্তু ইভানের পা আগাচ্ছে না। সে তার বাসন্তীকে এমন অবস্থায় রেখে যেতে পারছেনা। ইভান সামনে হাঁটছে আর পেছনে তাকাচ্ছে। ঈশা ইভানের হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়।
-“কি হলো উঠ।”
ইভান ঈশার হাত ছাড়িয়ে বলে,
-“তোমরা বাসায় যাও আমি পরে আসছি।”
সাহারা ইসলাম কিঞ্চিৎ ব্রু কুচকে বলেন,
-“মানে কি? রাত কয়টা বাজে দেখেছিস? ১২টা বাজতে চললো। চল বাসায় চল।”
ফারহান আহমেদ হাত দিয়ে ইশারা করে সাহারা বেগমকে থামিয়ে দেন।
-“কি হয়েছে ইভু? কোথায় যাবে তুমি বাবা?”
ইভান ওর বাবার সাথে কোনদিন মিথ্যা কথা বলেনি। আজ প্রথম বলতে যাচ্ছে। অন্যদিকে তাকিয়ে চট করে এক নিশ্বাসে বলে দেয়।
-“বাবাই আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ ওকে দেখতে যেতে হবে।”
-“কাল গেলে হয় না?”
-“আসলে বাবাই।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে যাও তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। কেমন?”
সাহারা ইসলাম স্বামীর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকান। ফারহান আহমেদ সেদিকে না তাকিয়েই বলেন,
-“কিন্তু যাবি কীভাবে?”
-“আমার গাড়ি তো সাথেই আছে বাবাই চিন্তা করো না।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে।”
সাহারা ইসলাম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
-“তাড়াতাড়ি চলে আসিস বাবা। তুই না আসলে আমার ঘুম আসবে না।”
-“হ্যাঁ আম্মু টেনশন নিও না।”
আর কেউ না বুঝলেও ঈশা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ইভানের ভালোবাসার পাগলামো।সে জানে ওর কোন বন্ধুই অসুস্থ নয়। সত্যি কথা তো বর্ণকে ছেড়ে ও যেতে চাইছে না। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বুঝে আশ্বাস দিলো যে চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ইভানও আলতো হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। গাড়ি ছাড়তেই ইভান নিজের গাড়িটা কিছুদূর নিয়ে পার্ক করে বাড়ির ভেতর আসে। বর্ণালীর রুমের বেলকনির পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রেলিং টপকে বেলকনিতে ঢুকে যায়।
💛
#_____চলবে………

#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৪৪
Written by: Bornali Suhana
💛
💛
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বুঝে আশ্বাস দিলো যে চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ইভানও আলতো হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। গাড়ি ছাড়তেই ইভান নিজের গাড়িটা কিছুদূর নিয়ে পার্ক করে বাড়ির ভেতর আসে। বর্ণালীর রুমের বেলকনির পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রেলিং টপকে বেলকনিতে ঢুকে যায়। বেলকনির দরজা বন্ধ। বাহির থেজে বর্ণালীকে দেখা যাচ্ছে। দরজা নাই খোলা থাকুক সে তার বাসন্তীকে তো দেখতে পাচ্ছে এতেই অনেক শান্তি লাগছে। সেই প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে ওর। এভাবেই কতদিন লুকিয়ে এসেছিলো তাকে দেখতে। কত সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়েছিলো দুজনে একসাথে। কিন্তু আজ ওর ভালোবাসা কি শান্ত হয়ে শুয়ে আছে। ইভান ওখানেই রেলিঙে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। চুপচাপ বসে দেখে যাচ্ছে তাকে। রুমু হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে আসে বর্ণালীর জন্য। স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে দেখে সজিব ওর হাত থেকে খোলে নেয়।
-“রুমু ওকে খাইয়ে একটু আমার রুমে আসিস।”
-“কেন?”
-“কথা আছে।”
-“হুম আসছি।”
সজিব বর্ণের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
-“খেয়ে চুপচাপ ঘুমাবি স্বরবর্ণ। আর কিছু প্রয়োজন হলে ভাইয়াকে ডাকবি। গুড নাইট।”
-“আচ্ছা ভাইয়া গুড নাইট।”
রুমুর দিকে একবার তাকিয়ে সে চলে যায়। ভাই-বোনের এতো সুন্দর মোমেন্ট হয়তো ইভান কখনোই দেখতে পারতো না যদি না সে এখানে থাকতো। তার ঠোঁটের মাঝে হাসি লেগে আছে।
রুমু নিজে ভাত মেখে বর্ণালীর মুখের সামনে ধরে।
-“নে হা কর।”
-“খেতে ইচ্ছে করছে না রে।”
-“তুমি অনেক দূর্বল সোনা। সো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ হা করো আর খাও।”
-“এমনভাবে কথা বলছিস যেনো তুই আমার জামাই।”
-“কেন মনে নেই আগে কি বলতাম?”
-“হ্যাঁ আছে ওইতো আমি ছেলে হলে তুই আমায় বিয়ে করতি।”
-“হুউউ একদম।”
দুজনেই একসাথে হো হো করে হেসে দেয়।
এমন হাসি দেখে ইভানের বুকে তীরের মতা এসে বিঁধে। মনে হচ্ছে কত জনম পর তাকে এভাবে হাসতে দেখছে। এমন বান্ধবী খুব বেশি সৌভাগ্যক্রমে পাওয়া যায়। হয়তো সে খুভ ভালো কোন কাজ করেছে যার দরুন রুমু ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। রুমু ওকে ভাত খাইয়ে ঔষধ খাওয়ায়। তারপর ওর কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দেয়। বর্ণালী রুমুর কাটা হাত ধরে ব্যান্ডেজের উপর চুমু একে দেয়। রুমু হেসে রুম থেকে বের হবার সময় বেলকনিতে চোখ যায়। কিছু একটার ছায়া সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে হাত থেকে খাবার প্লেট সাইড টেবিলে রাখে। তারপর বেলকনির দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করে। ইভান দেখতে পাচ্ছে রুমু এদিকেই আসছে। কিন্তু ওর কিছু করার নেই চুপচাপ বসে আছে। রুমু দরজা খুলে একদম চমকে উঠে।
-“তুমি!!!!”
পেছন থেকে বর্ণালী বলে উঠে,
-“কি রে রুমু?”
রুমু দরজা ছেড়ে একটু সরে দাঁড়ায়। বর্ণালীর চোখ ইভানের উপর পড়তেই প্রায় ওখানেই থমকে গেছে। সে তার একদম সোজাসুজি ফ্লোরে বসে আছে। তাকে দেখতেই চোখে জল জমে যায়। কিন্তু এই জল দেখানো যাবেনা কখনোই না। এই জল দেখলেই ইভান ভাববে ও তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। নিজেকে শক্ত করতে হবে। ওকে দেখাতে হবে যে না সে কষ্ট পায় না। পাশ ফিরে চোখের জল মুছে নেয় বর্ণালী।
-“তুমি এখানে কি করছো? তোমাকে না কখন বলেছি এখান থেকে চলে যেতে?”
ইভান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। দরজার সামনে দু’কদম এগিয়ে মৃদু হেসে বলে,
-“যতক্ষণ না তুমি সেই আগের তুমি হচ্ছ ততক্ষণ আমি এখান থেকে এক পা নড়ছি না বাসন্তি।”
-“চুপ করো আমি কারো বাসন্তী নই। প্লিজ চলে যাও এখান থেকে।”
-“সেটা তো সম্ভব না। আমি প্রয়োজনে সারারাত এখানে বসে থাকবো তাও তুমি আমায় ক্ষমা না করে আমার কাছে ফিরে না আসা অবধি এখান থেকে তো যাচ্ছিই না।”
কথাটা বলেই ইভান আগের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে। ওর চোখ থেকে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বর্ণালীর কলিজায় মুচড় দিয়ে উঠে। সে তার ভালোবাসাকে এভাবে দেখতে পারছে না। কিন্তু তার ভুলের কারণে যে ইভান পুরো কলেজের সামনে অপমানিত হলো। সে নিজেও চরিত্রহীনা প্রমাণিত হলো। কাল নিজের পরিবার নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন দেখা করতে। এই একটা ভুলের জন্য পরিবারের সবাইকেও অপমানিত হতে হবে। না ইভানের দিকে ঝুকে পড়লে হবে না। মনটা শক্ত করতে হবে তাকে। কিন্তু ভালোবাসা কিভাবে দমিয়ে রাখবে সে! কিভাবে! ভালোবাসা যে ক্ষণেক্ষণে বেড়েই চলছে ওর। ওই পাগলের পাগলামোর প্রেমে পড়েছে সে ভীষণভাবে প্রেমে পড়েছে। এই প্রেম থেকে উঠে আসা কি আদৌ সম্ভব হবে!
রুমু চুপচাপ এখনো সেই আগের জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে বলে,
-“রুমু দরজা বন্ধ করে পর্দাটা টেনে দে।”
-“নাহ। দরজা বন্ধ করবে করো। কিন্তু পর্দাটা টানিও না প্লিজ। আমি মরে যাবো। আমি শুধু এখানে বসে বসে তোমাকে দেখবো আর কোন সমস্যা করবো না কথা দিচ্ছি বর্ণ।”
ইভানের কথা কানে না নিয়ে বর্ণালী আবার বলে,
-“কি হলো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আমার কথা কানে যায় না? দরজা বন্ধ কর।”
-“রুমু প্লিজ দরজা বন্ধ করে নাও কিন্তু পর্দাটা টেনে দিও না প্লিজ।”
রুমু একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে দরজা বন্ধ করে হনহনিয়ে রুম থেকে বের যায়। ইভানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে৷ বর্ণালী পিছন থেকে রুমুকে ডাকছে,
-“রুমু, রুমুউউউ কি করেছিস এটা তুই?”
রুমু বাইরে থেকেই চিল্লিয়ে বলে,
-“পর্দা অনেক ময়লা হয়ে গিয়েছিলো ধুয়ে দিতে হবে তাই খুলে নিলাম। আসছি আমি ১০মিনিট পর।”
বর্ণালীকে কখনোই রাগতে দেখেনি ইভান। আর আজকে এই মেয়ের রাগ সপ্তম আকাশ পাড় হয়েছে। এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বর্ণালী অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। এসব দেখে সে একা একাই হেসে যাচ্ছে। এই রাগ আজকেই পানি করবে যেভাবেই হোক।
👇
রুমু সজিবের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজায় নক দিয়ে বলে,
-“আসবো?”
-“হ্যাঁ আয়। এতে পারমিশনের কি আছে?”
রুমে ঢুকতে ঢুকতেই বলে,
-“নাহ এমনি ভাবলাম আগে থেকে অভ্যাস করি পারমিশন নিয়ে রুমে ঢোকার।”
সবিব কিঞ্চিৎ ব্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে। দিনের কথা মনে পড়তেই কুচকে যাওয়া ব্রু নিজের অবস্থান আগের মতোই করে নেয়।
-“বস।”
-“বলো কি বলতে চাও?”
-“বর্ণালীর এই অবস্থা কিভাবে হলো আর কেন হলো? কারণটা কি?”
রুমু বিছানায় সজিবের পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এসব কি না জানলেই নয়?”
-“না নয় আমার বোনের খবর তো আমাকে জানতেই হবে নাকি?”
-“হ্যাঁ তাও ঠিক। বর্ণালী একটা ছেলেকে ভালোবাসে। আজকে কলেজে একটা মেয়ে ওর সাথে দুশমনি করে ওদের দুজনের কিছু ছবি পাবলিক করে দেয়। এসব সহ্য করতে পারেনি ও৷ সে মনে করছে এতে সব দোষ ওর একারই।”
-“ছেলেটা কে?”
-“এটা না হয় আপাতত অজানাই থাক। সময় হলে জানতে পারবে। বর্ণ এখন এসব বলতে তৈরী নয়। তাই আর প্রশ্ন করো না। সময় হলে সে নিজেই এসে বলবে।”
সজিব বুঝতে পারে এই ব্যাপারে বর্ণালী এখন কাউকে কিছু জানাতে চাচ্ছেনা। আর জানলেও হয়তো প্রবলেম হয়ে যাবে। তাই সে রুমুকেও আর কোন প্রশ্ন করেনা। রুমু বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-“শুন, কাল সকাল ১০টায় স্কুলে গিয়ে বর্ণালীর প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করে এসো। ওর মনের যা অবস্থা ও যেতে পারবে না।”
কথাটা শেষ করেই রুমু দরজার দিকে হাঁটা শুরু করে। সজিব পিছন থেকে বলে,
-“আচ্ছা তুই আমাকে তুমি করে কেন বলছিস?”
রুমুর পা থমকে যায়। পিছনে একপলক তাকিয়ে দেখে সজিব ওর উত্তরের অপেক্ষাটাই করছে।
-“তুমিই তো চাইতে আমি যেনো তোমাকে তুই করে না বলি। তাই তো সম্মান দেখিয়ে তুমি করে বলছি।”
-“শুন,”
-“হ্যাঁ বলো”
-“তুই আমাকে তুই করেই বলিস। তোর মুখে তুমিটা ঠিক মানাচ্ছে না।”
-“কেন ঈশার মুখে মানায়?”
সজিব কিছুটা অবাক জিজ্ঞেস করে,
-“মানে কি?”
-“কিছুনা আসি।”
ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা হাসি ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হতেই হাবিব হাসানের সামনে পড়ে রুমু।
-“বড় আব্বুউউ।”
বলেই রুমু তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
-“হুস মা কাঁদেনা। আমার মেয়ে অনেক স্ট্রং ওর কিচ্ছু হবে না।”
-“হ্যাঁ ওর কিচ্ছু হতেই দিবো না।”
-“দেখ আমার শার্ট ভরিয়ে দিচ্ছিস কেঁদে। চল আমাদের স্ট্রং বাচ্চাকে দেখে আসি।”
-“হুউউ চলো।”
রুমু হাবিব হাসানের সাথে রুমে আসে। মেয়ের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে তার বুকের মাঝে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। বরাবরই উনি সজিবকে একটু বেশি ভালোবেসেছেন। বর্ণ তার থেকে কম ভালোবাসা পেয়েছে। কিন্তু যতই হোক বাবা তো তাই আজ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না। চোখের মাঝে জল এসেই গেলো। মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত দিতেই বর্ণালী চোখ খুলে তাকায়।
-“বাবা তুমি?”
-“হুস শুয়ে থাক উঠতে হবে না।”
বর্ণালী বাবার কথায় আর উঠেনা৷ শুয়েই থাকে। সেই ছোটবেলার পর আজ এই প্রথম বাবা ওর পাশে এসে বসেছেন। নিজেকে অনেক নিরাপদ মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
-“নিজের একটু খেয়ার রেখো।”
-“হুউউ।”
-“হুউউ কি বলো ঠিকাছে।”
-“হ্যাঁ ঠিকাছে।”
-“আচ্ছা খেয়েছো? ঔষধ নিয়েছো?”
-“হ্যাঁ বাবা রুমু সব করিয়েছে।”
-“আচ্ছা তাহলে ঘুমাও। আমি যাই সকালে দেখা হবে।”
-“জ্বি।”
হাবিব সাহেব রুম থেকে বের হতেই রুমু দরজা লক করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। এতোক্ষণ সে দরজার সামনেই দাঁড়িয়েছিলো। আর ভয়ে ছিলো না জানি ইভানকে দেখে ফেলেন। বর্ণালীর চোখ আবার ইভানের দিকে পড়ে। সে এখনো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তার উপর চোখ সরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। রুমুও অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। ইভানের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো বর্ণালীর দিকে একবার তাকাচ্ছে। বর্ণালী চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে শুয়ে থাকলেও ওর মনটা অশান্ত হয়ে আছে। আর রুমু তা ভালো করেই বুঝতে পারছে।
-“আচ্ছা ওকে একটা বালিশ আর কাঁথা দিয়ে দিলে কেমন হয়?”
-“যা না বিছানাটাও করে দিয়ে আয়।”
-“এভাবে কেন কথা বলছিস? আজ তোর জন্যই ওর এই অবস্থা। ভালো যদি নাই বাসবি তো এতো নাটকের কি প্রয়োজন ছিলো? কেন ওকে তোর প্রতি দূর্বল করলি? আর আজ কেন ওকে এতো কষ্ট দিচ্ছিস? সোনার খাটে ঘুমানো ছেলে আজ তোর জন্য ফ্লোরে বসে আছে। চোখে পড়ে না এসব? তোর সেই বাচ্চা মনটা কি হারিয়েছিস? এই মনতো অনেক শক্ত রে। আমি যে বর্ণের সাথে কথা বলছি এই বর্ণ তো আমার আগের বর্ণ না। আমি জানি তুই পরিবার, সমাজ এসবের কথা ভাবছিস। ভালো পরিবারের কথা ভাবা ভালো কিন্তু সমাজের কথা তুই কেন ভাববি? সমাজ কি তোর কথা ভাবছে? নাকি ভাববে? আর বাকি রইলো পরিবার প্রেম করতে পারলে পরিবারের সাথে কি লড়াই করতে পারবি না? এইটুকু সাহস রাখিস না? আমি তোর জায়গায় হলে কখনোই ইভানকে এভাবে কষ্ট দিতাম না। ও তোকে অনেক ভালোবাসে তাই সব মুখ বুজে সহ্য করছে। ধুর ছাই আমি এসব কাকে বলছি।”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলেই রুমু রাগে উলটো দিকে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। বর্ণালীর চোখ ভিজে ভিজে হয়ে আছে। রুমুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই রুমু ওর হাত সরিয়ে দেয়। আবারো জড়িয়ে ধরে আবারো সরিয়ে দেয়। এভাবে ৩বার করার পর বর্ণালী ভেজা চোখ নিয়ে নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পড়ে। রুমু এই কথাগুলো বলার জন্য নিজে মনে মনে কষ্ট পেলেও জাহির করছে না তা৷ বর্ণালীকে ঠিক করতে এই কথাগুলো বলা জরুরী ছিলো। সে জানে বর্ণালী এখন কাঁদছে। কাঁদুক এতে ওরই ভালো। কেঁদেও যদি বুদ্ধিটা একটু বাড়ে তাহলেই হলো।
👇
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আকাশের অবস্থাও ভালো না। বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে। ঠান্ডা বাতাস বইছে। ইভানের প্রায় শীত লাগতে শুরু করে। রুমু গভীর ঘুমে আছন্ন। বর্ণালীর চোখে ঘুম নেই। রুমুর কথাগুলো বারবার কানে বাজছে। আসলেই তো সে যদি ইভানকে ভালোই না বাসে তাহলে কেন ওকে এভাবে কাছে টেনে নিলো। আজকে ওর জন্যই তো সে কষ্ট পাচ্ছে। ওর তো কষ্ট পাওয়ার অধিকার নেই। কেন ওকে কষ্ট দিবে সে। ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ কষ্ট দেয়! নাহ সে আর ভাবতে পারছেনা।
বর্ণালী মোবাইল বের করে দেখে রাত ২টা বাজে ৩৪মিনিট। দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখে ইভান ফ্লোরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। ওকে এভাবে দেখতেই গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে যা গলা পর্যন্ত গিয়ে থামে। এতো কেন ভালোবাসে এই ছেলেটা ওকে। চোখের জল মুছে নিজের বালিশ ও কাঁথাটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্চে। ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দরজাটা বাহির থেকে আলতো করে লাগিয়ে দেয়।
বাতাস রুমে গেলে আবার রুমু উঠে যাবে। ইভান কত সুন্দর বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। এই মুখটায় কত মায়া। তার মাথাটা আলতো করে তুলে মাথার নীচে বালিশ দিয়ে দেয়৷ তখনই ইভান চোখ খুলে নেয়। ইভান চোখ খুলতেই বর্ণালী তার থেকে সরে উঠে আসতে লাগে। কিন্তু ইভান ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের উপর ফেলে দেয়। বর্ণালীর সব চুল এসে পড়েছে ইভানের মুখে। চোখ বন্ধ করে সেই চুলের গন্ধ নিতে লেগে যায়। কতদিন পর এই চুলের গন্ধ নিচ্ছে। বর্ণালী কানের পেছনে চুল গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“ছা…..চ্ছাড়ো।”
ইভানও ফিসফিস করে জবাব দেয়,
-“একদিন না বললাম তোমাকে ধরেছি ছাড়ার জন্য না। আজীবন নিজের কাছে ধরে রাখার জন্যই।”
বর্ণালীর ডান পা ইভানের দু’পায়ের মধ্যখানে আর বাম পা ওর পায়ের উপর। ইভান তার হাত ছেড়ে দিয়ে ধীরে ধীরে কোমড়ে নিয়ে রাখে। আবেশে ব্রু কুচকে চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। বাতাস এসে ওর চুলগুলো বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছে। ইভান কাছে আসলে কখনোই ও দূরে থাকতে পারেনা। এমনকি তাকেও দূরে সরিয়ে দিতে পারেনা৷ বরাবরই ইভানের এমন স্পর্শের কাছে হেরে যায় ও। নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। ড্রেসের ফাঁক দিয়ে বর্ণালীর উন্মুক্ত কোমড়ে হাত পৌঁছায় ইভানের। বর্ণালীর পুরো শরীরে কম্পন ধরে যায়। দু’পায়ের আঙুল দিয়ে ইভানের পা চেপে ধরে। দু’হাত ওর বুকের উপর খামছে ধরে। চোখ কুচকে বন্ধ করে নিজের কপাল নিয়ে ইভানের গালে ঠেকায়৷ দিনের সবকিছু ওর মাথা থেকে চলে গেছে। এখন কেবল সে এই মুহুর্তে ইভানে মগ্ন হয়ে আছে। ঘন হয়ে আসা নিশ্বাস ইভানের গাল ও গলা ছুঁয়ে দিচ্ছে। শরীরে যেনো এক অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। তার হাত কোমড়ের উপর ধীরে ধীরে স্লাইড করতে লাগে। বর্ণালীর শরীরের কাপুনি বাড়তেই থাকে। হাত দুটো আরো শক্ত করে ওর বুকের উপর ধরে। কোমড় থেকে হাত এনে পেটের এক পাশে চেপে ধরতেই বর্ণালী ইভানের গালের একটু নীচে কামড় বসিয়ে দেয়৷ ইভান ব্যাথা পেলেও একটুও নড়ে না৷ ওর পেটের মাঝে শক্ত করে চেপে ধরে। বর্ণালী ইভানের পায়ের মাঝে নখ বসিয়ে দিচ্ছে। সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। হুট করেই ইভানের গলায় কয়েক ফোটা গরম জল পড়ে। ইভানের হাত হাট হয়ে আসে। বর্ণালীর থুতনিতে হাত রেখে মুখটা তুলে ধরতে চাইলে ও শক্ত করে নিজের মুখটা তার গালের মাঝে চেপে ধরে। বর্ণালী যে কাঁদছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে ইভান।
-“সরি।”
বর্ণালীর মুখ দিয়ে এমন শব্দ শুনে ইভান ওকে নিজের বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
-“আমার দিকে তাকাও।”
-“উহু।”
-“কেন?”
বর্ণালী কিছু না বলেই ইভানের থুতনিটা ঠোঁটের ভেতর পুরে নেয়। কয়েকবার চুমু খায়। চুমু খেতে খেতে কানের পাশ দিয়ে নামছে। চোখ বন্ধ করে আছে দুজনেই। বাতাসের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে। হুট করেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে আসে। বাতাসের তোড়ে বেলকনিতে বৃষ্টি এসে পড়ছে। বর্ণালীর সম্পূর্ণ পিঠ ভিজিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সে ইভানের গলার মাঝে নিজের মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিতে মগ্ন। বৃষ্টির ফোটা এসে তার মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্ণালীর পিঠে হাত দিতেই দেখে ওর পিঠ ভেজা। ইভান তাকে নিজের উপর থেকে নিচে নিয়ে নেয়। হুট করে এমন হওয়ায় বর্ণালী চোখ খুলে তাকায়। ইভান ওর উপরে দেখে খালি গলায় ঢোক গিলে।
-“ভিজে যাচ্ছ তুমি। এমনিতেও অসুস্থ এভাবে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে পরে। রুমে যাও গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।”
ইভানের মুখে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। বর্ণালীর ওকে এভাবে দেখতে কেমন নেশা নেশা লাগছে ইচ্ছে করছে মুখে জমে থাকা জলগুলু ঠোঁট দিয়ে শুষে নিতে। ছিঃ কি সব ভাবছে ও!!!
সে এতো নির্লজ্জ কিভাবে হলো!!
কি করছে ও!! একটু আগে যা করলো কিভাবে করলো!! ভাবতেও পারছেনা। এসব যাই করছে একদম ঠিক হচ্ছেনা। কিন্তু ওর আবারো ঘোর লেগে যাচ্ছে। ইভানের মাথা ভিজে চুল থেকে জল এসে তার গালের উপর টপটপ করে পড়ছে। একে অপরের দিকে চোখ দুটো’ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। ইভান নিজের মুখ ওর দিকে এগিয়ে আনছে। খালি গলায় ঢোক গিলে বর্ণালী। ওর গালের উপর জমে থাকা জলের উপর ঠোঁট বসায় ইভান। বর্ণালী চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস ভেতরে নেয়। খালি গলায় ঢোক গিলে ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলছে। ইভানের চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে। কেমন ঠান্ডা কিছু অনুভব করছে তার গালের উপর কিন্তু চোখ খুলে দেখার মতো সাহস নেই ওর। ঠোঁট চেপে জিহ্বা দিয়ে জমে থাকা জল চুষে নিচ্ছে ইভান। ঠোঁটের উপর স্পর্শ পেতেই ঠোঁটজোড়া মুখের ভেতর পুরে নেয় বর্ণালী। এ কেমন অনুভূতি! এসব আর সহ্য করতে না পেরে পাশ ফিরে যায়। ইভান ওর উপর থেকে উঠে বসে। বৃষ্টির সাথে বাজ পড়তেই বর্ণালী লাফ দিয়ে উঠে তার বুকের সাথে মিশে যায়। দুজিনেই ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। কাঁপতে শুরু করে বর্ণালী। ইভান শক্ত করে বাহুডোরে নেয় তাকে। তার ঘাড়ের মাঝে নাক ঘষতে ঘষতে বলে,
-“চলো রুমে চলো চেঞ্জ করে নিবে।”
বর্ণালীর কোন সাড়াশব্দ পায়না। কিভাবেই পাবে লজ্জায় মেয়েটা কুঁকড়ে গেছে। মুখ তুলে তাকাতে পারছেনা। কি সব করে ফেললো। চাইলো ওর থেকে দূরে সরে যেতে সেই কিনা আরো কাছে চলে এলো। এবার তো আর তাকে ছাড়া থাকা সম্ভব নয় ওর। আগেও কি পারতো তার এই পাগল বসন্তপথিক ছাড়া থাকতে! নাহ পারতো না। ইভান তার সাড়াশব্দ না পেয়ে ওর হাত দুটো নিয়ে নিজের গলায় জড়িয়ে নেয়। তারপর পাঁজাকোলা করে তুলে নেয়। মাথাটা একদম ইভানের বুকের সাথে লাগিয়ে আছে। হাত দু’টো শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে ধরেছে। ওয়াশরুমের দরজায় এনে নামিয়ে দেয়। বর্ণালী মাথা তুলে তাকাচ্ছে না ইভানের দিকে। নিচু করে আছে। আলমিরা থেকে একটা সাদা টি শার্ট আর প্লাজো এনে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
-“যাও চেঞ্জ করে নাও।”
বর্ণালী দাঁড়িয়ে হাত মলছে। ইভান বুঝতে পারছে সে তাকে কিছু বলতে চায়। আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর দু’হাত নিজের দু’হাতের ভেতর নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“বলো কি বলবে?”
-“বা….বাসায় যাও এখন।”
বর্ণালীর ঠোঁট ভীষণভাবে কাঁপছে। কথা বলতে পারছেনা। ইভান ওর আরো কাছে চলে আসে। থুতনিতে ধরে মুখটা উঁচু করে বর্ণালীর ঠোঁট দু’টো একসাথে নিজের ঠোঁটের ভেতর পুরে নেয়। ওর হাত থেকে কাপড়গুলো ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যায়। হুট করে এটা হবে ভাবতেও পারেনি সে। চোখ খিচে বন্ধ করে দু’হাত দিয়ে নিজের ড্রেস খামচে ধরে মুঠোয় নেয়। ইভান ওর ঠোঁট দু’টো চেপে ধরে আছে।
💛
💛
#_____চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here