#_ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৪৫+৪৬

0
332

#_ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ৪৫+৪৬

Written by: Bornali Suhana
💛
💛
ইভান ওর আরো কাছে চলে আসে। থুতনিতে ধরে মুখটা উঁচু করে বর্ণালীর ঠোঁট দু’টো একসাথে নিজের ঠোঁটের ভেতর পুরে নেয়। ওর হাত থেকে কাপড়গুলো ধপ করে ফ্লোরে পরে যায়। হুট করে এটা হবে ভাবতেও পারেনি সে। চোখ খিচে বন্ধ করে দু’হাত দিয়ে নিজের ড্রেস খামচে ধরে মুঠোয় নেয়। ইভান ওর ঠোঁট দু’টো চেপে ধরে আছে। বর্ণালী ঠোঁট বের করে আনার বিন্দুমাত্র ক্ষমতা নেই। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। কিছুক্ষণ পর ঠোঁট ছেড়ে দেয়। ঠোঁট ছেড়ে দিতেই বর্ণালী নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায়। ইভানের উপরের ঠোঁটের কোণে চুমু খায় আর ইভান তার নীচের ঠোঁটে। হাত নিয়ে বর্ণালীর গলায় স্লাইড করতে লাগে। খানিক্ষন পর বর্ণালীকে ছেড়ে এক পা পিছিয়ে যায় ইভান। সে এখনো চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো ভেজা এলোমেলো। ঠোঁট দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ বুকের ওড়নাটাও এলোমেলো৷ দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে দাঁড়িয়ে। খামচে ধরা ড্রেস থেকে হাত দুটো হাট হয়ে আসে। মাথার ব্যান্ডেজ ভিজে গেছে। বাইরে বাতাসের শা শা শব্দ হচ্ছে। আর বর্ণালীর ভেতরে বয়ে যাচ্ছে ঝর। ইভান নিজের দু’হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে মাথা বাকা করে দাঁড়ায়।
-“দ্রুত চেঞ্জ করে আসো যাও।”
ইভানের কথায় চোখ তুলে তাকায় বর্ণালী।
-“হুউউ!”
-“বলছি দ্রুত চেঞ্জ করে আসো।”
-“হ্যাঁ।”
পেছন ফিরে ওয়াশরুমে যেতে চাইলেই ইভান বলে,
-“দাঁড়াও।”
বর্ণালী আবারো কাঁপতে শুরু করে। না জানি ইভান এখন কি করে।
-“এগুলো যে রেখে যাচ্ছিলে। পড়বে কি?”
ইভান এগিয়ে এসে ওর হাতে কাপড় ধরিয়ে দিয়ে কথাটা বলে। বর্ণালী নিজের বোকামিতে নিজেই হাসছে। বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। একটু আগেও পরিবেশ কেমন ছিলো আর এখন সম্পূর্ণ শান্ত। ইভান দরজা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে পরিবেশটা কত সুন্দর হয়ে গেছে। বৃষ্টি যেনো সব কিছু ধুয়ে মুছে নতুন রুপে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। যেমন একটু আগেই ওদের সম্পর্কটাও একটা নতুন রুপ পেলো।
বর্ণালী চেঞ্জ করে বাইরে আসবে দেখে ওড়না আনেনি। আনবেই কিভাবে কাপড় তো ইভান দিয়েছে। কিন্তু এখন তো বের হতে হবে৷ এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে ইভান তো আগেও আমায় এভাবে দেখেছে। না না বর্ণ তোকে লজ্জা পেতে হবে না। বাইরে চল। সে একা একাই কথাগুলো বলছে। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ইভান ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়৷ ফাস্ট এইড বক্স এনে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
-“এবার লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমাও। আমি বাসায় যাচ্ছি। আর কাল আসবো দেখতে।”
-“ঠিকাছে তুমি বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করে শুয়ে পড়।”
-“হ্যাঁ জো হুকুম।”
ইভান বেলকনি দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ফজর হয়ে আসছে। বাড়ি থেকে বের হতেই জয়ের সামনে পড়ে। জয়ের জবের ইন্টারভিউ ছিলো ওইটা দিয়েই এখন ট্রেনে এসে নেমে বাড়ি ফিড়ছে। ইভানকে এই সময় এ বাড়ি থেকে বের হতে দেখে বাড়ির ভেতর তাকায়। সোজা গিয়ে চোখ পরে বর্ণালীর উপর গিয়ে পরে। ও ইভানকেই দেখছিলো। পাশে যে জয় দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে কোন খেয়ালই করেনি। ইভান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে যেতেই জয়ের উপর চোখ পড়ে ওর। হালকা হালকা আলোয় জয়কে চিনতে ভুল করেনা৷ ভয়ে ওর কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে। জয় যদি সজিবকে সব বলে দেয় তাহলে কি হবে! বৃষ্টি হওয়ায় হালকা শীতে পড়েছে অথচ তার মাঝেও সে ঘামতে শুরু করে। নাহ যা হবার হবে। সময়মত দেখা যাবে৷ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করতে নেই। দরজা লাগিয়ে রুমুর পাশে এসে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।
-“এই আপনার তাড়িয়ে দেয়া?”
রুমুর কথায় বর্ণালী প্রায় আকাশ থেকে পরে। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই নিজের জিভ কাটে। রুমু ওর দিকে ফিরে বলে,
-“যখন ওকে ছাড়া থাকতে পারবি না তখন এসব কেন করলি? নিজেও কষ্ট পেলি আর তাকেও কষ্ট দিলি। এখন তো ঠিকই আবার তার ভালোবাসার কাছে হেরে গেলি।”
-“তখন আমি শুধু আমার পরিবার আর ইভানের সম্মানের কথা ভেবেই এমনটা করেছিলাম রে। কিন্তু আমি পারবো না তাকে ছাড়া থাকতে।”
-“তা আমি বুঝেই গেছি সোনা। আচ্ছা এখন ঘুমিয়ে পর। ভোর তো হতেই চললো প্রায়।”
-“হ্যাঁ জড়িয়ে ধর আমায়।”
রুমু হেসে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে। আল্লাহর কাছে তার একটাই চাওয়া তার বান্ধবীটা যেনো ভালোবাসা পায়। জীবনে এতোটা সুখী হয় যতোটা সুখী হলে সে তা দেখেই সুখী হতে পারে। আলতো করে বর্ণালীর গালে চুমু একে দেয়। সে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই হেসে রুমুর একটা হাত জড়িয়ে ধরে।
👇
সজিব প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসে বসে আছে। বারবার ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছে। প্রিন্সিপাল চশমার ফাঁক দিয়ে ল্যাপটপে কিছু একটা টাইপ করছেন। হলুদ রঙের শার্ট পড়া পিয়ন এসে দু’কাপ চা দিয়ে যায়। কেমন বিদঘুটে লাগছে ছেলেটাকে। এমন রঙের শার্ট কেউ পরে নাকি! সজিব নিজের দিকে তাকালো সে হালকা মেরুন রঙের শার্ট পরে আছে। ঈশা তাকে এটা উপহার হিসেবে দিয়েছিলো। চেয়ার দোলাতে দোলাতে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু কাত হয়ে বসলেন প্রিন্সিপাল। সজিবকে চোখ দিয়ে ইঙ্গিত করলেন চা নিতে। সজিব গলা ঝেড়ে মৃদু হেসে চায়ের কাপ হাতে নিলো।
-“তো মি. সজিব মিস বর্ণালীর শরীরের অবস্থা এখন কেমন?”
গম্ভীর কণ্ঠে কথাটা জিজ্ঞেস করে আবারো চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেন তিনি।
সজিব এখনো চায়ের কাপ নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,
-“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
-“আচ্ছা তা যে কারণে আপনাকে এখানে ডেকেছি সে কথা শুরু করি। আসলে অতি ভারাক্রান্ত মনে জানাচ্ছি যে, আমরা আর মিস বর্ণালীকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে রাখতে পারছি না।”
যেইনা ও চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাবে তখনই কথাটা শুনে থমকে গিয়ে কাপটা আবারো আগের জায়গায় রেখে দিলো। প্রিন্সিপাল চশমার ফাঁক দিয়ে চায়ের কাপের দিকে একবার আর সজিবের দিকে একবার তাকাচ্ছেন। কাপটা একটু কাত করে রাখায় হেলদোল করছে আর টনটন করে একটা আওয়াজ সৃষ্টি হচ্ছে। দু’হাত টেবিলের উপর রেখে প্রিন্সিপালকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সজিব।
-“কারণটা কি জানতে পারি স্যার? আমার বোনের দোষটা কোথায়? যে তাকে তার অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করছেন? সে তো তার যোগ্যতার বলে জবটা নিয়েছিলো।”
-“আসলে এমন কাজ আমি করতে চাইনি। কিন্তু কি করবো বলেন এই প্রতিষ্ঠান আমাকে চালাতে হবে। আর প্রতিষ্ঠান চলে এখানের ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবার করা বিনিয়োগের কারণে। আর বর্তমানে সকল অভিভাবক মিস বর্ণালীর উপর অত্যন্ত ক্ষেপে গেছেন। তারা তাদের সন্তান রাখবে একটা শর্তেই।”
-“আর সেই শর্ত হলো বর্ণকে এখান থেকে বরখাস্ত করা তাইতো?”
-“দেখেন মি. সজিব জ্ঞানী মানুষের জন্য ইশারাই যথেষ্ট। সব তো আর খুলে বলতে হয়না। আমি না হয় মিস বর্ণালীকে বিশ্বাস করলাম কিন্তু…”
-“কিন্তু অভিভাবকরা করবেনা। হ্যাঁ এটাই বাস্তবতা৷ ঠিকাছে স্যার ধন্যবাদ। আমাদের এতে কোন আপত্তি নেই।”
সজিব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে কক্ষ ত্যাগ করতে গেলেই প্রিন্সিপাল বলেন,
-“সাসপেনশন লেটারটা নিয়ে যান। আর উনার বেতন একাউন্টে ক্লিয়ার করে দেয়া হবে।”
সজিব হেসে প্রিন্সিপালের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নেয়। একটু আগে হয়তো প্রিন্সিপাল মনযোগ সহকারে এটাই টাইপ করছিলেন।
রিকশায় বসে একটা কথাই বারবার তার মনের মাঝে আসছে সে তার বোনের হাতে কিভাবে এই কাগজটা ধরিয়ে দিবে। কিভাবে তার বোনের স্বপ্নটা ভেঙে দিবে। চোখের কোণে জল ছলছল করছে। বাতাস এসে সেই জল উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রিকশাওয়ালার রিকশাটাও বাতাসের বেগের কাছে হার মানছে। টেনে নিয়ে যেতে পারছে না। খুব জোর তুফান আসবে মনে হচ্ছে। রিকশায় বসেই ঈশাকে কল দেয় সজিব।
-“হ্যাঁ সজিব বলো।”
-“বাবা-মাকে বলে দাও যেদিন বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছিলো সেদিন আমরা বিয়ে করছিনা। কয়দিন বিয়ের তারিখটা পিছিয়ে দাও ঈশা।”
ঈশা সজিবের মুখে এমন কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা ওর। ৭দিন পর বিয়ে। বিয়ের কার্ডও ছাপানো হয়ে গেছে। আর সজিব এখন এসব কথা কেন বলছে!
-“কেন সজিব? কারণটা কী বলবে আমায়?”
-“বর্ণালীর চাকরিটা চলে গেছে ঈশা। এই মুহুর্তে আমার বোনের পাশে আমাদের প্রয়োজন। এমন সময় তো আর আমরা ওকে রেখে আনন্দ করতে পারিনা।”
-“এসব কি বলছো! চাকরি চলে গেছে! দেখো সজিব তুমি কোন টেনশন করো না। এদিকটায় আমি সব সামলে নিবো। কোন সমস্যা নেই। তুমি যখন চাইবে তখনই হবে। আমি কয়দিন কেন বছরের পর বছর তোমার জন্য অপেক্ষা করতে রাজী।”
সজিবের ঘাড় থেকে যেনো অনেক বড় বোঝা নেমে গেলো। সে ভাবতেই পারেনি ঈশা এতো সহজভাবে নিবে ব্যাপারটা। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে কল কেটে ফোনটা পকেটে ঢুকায় সজিব। আসলেই সে তার মনের মতোই জীবনসঙ্গী পেয়েছে।
👇
রুমের ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। দিনের বেলাও দরজা-জানালা বন্ধ করে রেখে শুয়ে আছে বর্ণালী। সেদিনের পর আর বাইরে যায়নি সে। একটা ঘটনার জন্য চাকরি, কোচিং, টিউশনি সব হাতছাড়া হয়ে গেলো ওর। অনার্স এর পরীক্ষাটাও দেয়নি। কিভাবে দেখাবে সে নিজের মুখ সবাইকে। ইভানের সাথেও কথা বলেনা। প্রতিদিন ইভান এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে৷ কিন্তু সে তার বাসন্তীকে দেখতে পায়না। চেহারা অনেকটা কালচে হয়ে গেছে। ক্লিন শেভ করা ছেলেটার মুখভর্তি একগাদা দাড়ি। চুলগুলো লালচে হয়ে ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কেমন অপরিষ্কার থাকে। গোসল, খাবার, ঘুম কোন কিছুরই ঠিক নেই৷ কতদিন ঈশার সাথে বাসায় এসেছে কিন্তু বর্ণালী রুমের দরজাটাই খুলেনি। রুমু আর নিজের পরিবারের কেউ ছাড়া কাউকে আশেপাশে যেতে দেয়না৷ কারো সাথে কথাও বলেনা। এলাকার লোকজন নানা কথা বের করেছে এসব নিয়ে। শারমিন বেগম বাইরে বের হলেই অনেক কথা শুনতে হয় তাকে। সেই ভয়ে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একমাত্র ইভানের পরিবারের কেউ কোন প্রশ্নও উঠায় নি বর্ণালীর উপর বা তার পরিবারের উপর। তারা সবসময় পাশেই থেকেছে। রুমু বর্ণালীর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
বর্ণালীর উষ্কখুষ্ক চুল আর ফোলে যাওয়া চোখ কচলে কচলে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। দরজা জানালা সব খুলে দিতেই ওর চোখে আলো এসে যেনো বিজলির চমকের মতো লাগে।
-“খুলিস না। লাগিয়ে দে।”
-“বললেই হলো? এদিকে কাছে আয়।”
বর্ণালীর পাশে বসে চুলে তেল দিয়ে মেসাজ করে দিতে লাগলো।
-“কি করছিস?”
-“কিছুনা সোনা। দেখবি ভালো লাগবে।”
-“সে কি আজও এসেছে?”
-“জানিসই তো।”
বর্ণালী চুপ হয়ে যায়। শূন্য দেয়ালের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। মনে মনেই আঁকিবুঁকি করছে।
-“এখানে আমার একটা ছবি ঝুলিয়ে দিলে ভালো হতো না? আসলে একা আমার না। তোর আর আমার দুজনের ছবি টানাবো। আমাদের বন্ধুত্ত্বের অস্তিত্ব থাকবে সবখানে। আমি তোকে আমার সবটা জুড়ে চাই।”
রুমু হাত থেকে তেল বর্ণালীর হাতে মাখতে মাখতে বললো,
-“আমি আছি আর তোর সবটা জুড়েই থাকবো। কিন্তু যে প্রতিদিন তিনবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে তাকেও আর কত শাস্তি দিবি? এভাবে কত নিজেকে বন্দি রাখবি?”
-“আমি তাকে বলেছি নাকি আসতে?”
-“কেন এমন করিস? ভালোও বাসিস আবার কষ্টও দিস।”
-“আমি পারছি না রে। পারছিনা মেনে নিতে। তাকে কষ্ট দিতে কি আমার ভালো লাগে! কিন্তু আমার জীবনে তাকে রাখলে সে কষ্ট আর কষ্টই পাবে।”
-“তাহলে তাকে সোজা না করে দে। সে আর তোর অপেক্ষা করেনা। আর এখানেও আসেনা। কষ্টও পায় না।”
-“ক্ষুধা লেগেছে খাইয়ে দে।”
-“কথা পালটানোর অভ্যাসটা তোর আর গেলো না।”
-“খাবো তো। তাড়াতাড়ি।”
-“আসছি হাত ধুয়ে।”
-“হু দ্রুত।”
রুমু হাত ধোয়ার জন্য ওয়াশরুমে যেতেই বর্ণালী উঠে বেলকনির পাশে যায়। দরজার আড়াল থেকে ইভানের গাড়ি দেখতে পায় কিন্তু ইভানকে দেখতে পায়না। রুমুর দরজা খোলার শব্দ শুনেই দ্রুত এসে বিছানায় আগের জায়গায় বসে পরে।
👇
৩দিন পর সজিব আর ঈশার বিয়ে। আজ থেকেই মেহমান আসা শুরু করেছেন ঈশাদের বাড়িতে। ফারহান আহমেদ কোন কমতি রাখতে চান না মেয়ের বিয়েতে। কিন্তু সজিবের পরিবারের কথা ভেবে খুব বেশি ধুমধাম করছেন না। আত্মীয় স্বজনদের কম দাওয়াত দেয়া হলেও অনুষ্ঠান জমজমাট ভাবেই করবেন। হাবিব হাসান ও শারমিন বেগম বলে দিয়েছেন তারা যেভাবেই চায় সেভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে। তাদের কোন আপত্তি নেই। বর্ণালী অনেকটা স্বাভাবিক হচ্ছে। রুমু এই কদিন এখানেই থেকেছে। সবসময় বর্ণালীর খেয়াল রেখেছে ঠিক একটা বোনের মতো করে। তার জন্যই এতোটা স্বাভাবিক হতে পেরেছে। নাহলে হয়তো আজও সেই অন্ধকার রুমেই বন্দি থাকতো। ঈশা অনেক বুঝিয়ে সজিবকে আজ চুল-দাড়ি কাটতে পাঠায়। বোনের বিয়ে আর তার কথা কিভাবে সে রাখবে না। তাই আর না ভেবে সে চুল-দাড়ি কাটতে চলে যায়। চুল আর দাড়ি ছোট করে। ক্লিন শেভ করেনা। বর্ণালীর তো আবার দাড়িওয়ালা ছেলে পছন্দ। গালের সাথে লাগিয়ে হালকা দাড়ি রেখে নেয়। নিজেকে আয়নায় দেখছে বারবার। অনেকটা পরিবর্তন এসেছে ওর চেহারার। মনের মাঝেই প্রশ্ন জাগে তার “আচ্ছা আমাকে দেখলে কি সে চিনবে!” আরে ধুর কি সব ভাবছে সে! অবশ্যই চিনবে। এটা কি কখনো হতে পারে যে বাসন্তী তার বসন্ত পথিককে চিনবেনা। কতদিন সে তার বাসন্তীকে দেখেনা। চোখে চোখ রাখেনা। কথার ঝুড়ি নামায় না তার সামনে। মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে।
আজকে কি সে তার বাসন্তীকে দেখতে পাবে! আজকে কি তার অশান্ত মনটা শান্ত হবে! তাকে দেখে কি ক্লান্ত দু’চোখ নিশ্চলতা পাবে!
💛
💛
#_____চলবে………

#_ফাগুন_প্রেম
পর্বঃ ৪৬
Written by: Bornali Suhana
💛
💛
কতদিন সে তার বাসন্তীকে দেখেনা। চোখে চোখ রাখেনা। কথার ঝুড়ি নামায় না তার সামনে। মনটা বড্ড ব্যাকুল হয়ে আছে।
আজকে কি সে তার বাসন্তীকে দেখতে পাবে! আজকে কি তার অশান্ত মনটা শান্ত হবে! তাকে দেখে কি ক্লান্ত দু’চোখ নিশ্চলতা পাবে!
👇
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। লাল সূর্যটা হলুদাভ ধারণ করে পুব আকাশে ঢলে পরেছে। দিন শেষে পাখির বাচ্চারাও ঝাঁক বেঁধে মায়ের কোলে ফিরে যাচ্ছে।
ইভান সেই চিরচেনা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে৷ বাড়িটা যেনো আজ নতুন বউয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে। পুরো বাড়ি জুড়ে নীল রঙের বাতি ঝলমল করছে। সন্ধ্যায় এই নীল আলোটা অন্যরকম এক সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। মানুষের আনাগোনাও অনেক বেশি। কেউ কারো কথা শুনছে কিনা কে জানে! সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত।
ইভান নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেলো। পেছন ফিরে তাকাতেই তার কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। গম্ভীর মুখে হাবিব হাসান দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণের ভেতরই তার চেহারার ভাব বদলাতে দেখে সে। হাসি আসছেনা তাও জোর করে হাসার চেষ্টা করছে। হাবিব হাসান মুচকি হেসে বলেন,
-“এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছো ইয়াং ম্যান? ভেতরে আসো।”
-“হু!!! হা… জ্বি আংকেল।”
এমন অবস্থায় প্রায় থতমত খেয়ে যায় কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এই মুহুর্তে এখানে কেন এসেছে জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে! গভীর ভাবনায় পড়ে যায়।
হাবিব হাসান ভেতরে যাচ্ছেন ইভান তাঁর পাশেপাশেই হেঁটে যাচ্ছে। বুকটা ধুকপুক করছে তার। মনে হচ্ছে যেনো কোরবানির জন্য গলায় দড়ি বেঁধে কেউ গরু নিয়ে যাচ্ছে। মেহমান তেমন নেই কিন্তু কমও না। সামনের দরজা খোলাই আছে আজকে।
-“বর্ণালীইইইই দুই গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় তো।”
বাবার ডাক শুনে সে বিছানা ছেড়ে রান্নাঘরে যায়। পরিচিত কারো ছায়া দেখতে পায় কিন্তু মেহমানের ভিড়ে এতোটা ধ্যান দেয় না। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দুই গ্লাসে ঢেলে ট্রেতে করে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে।
-“বাবা পানি।”
-“হ্যাঁ। তাকেও এক গ্লাস দাও।”
ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কতদিন পর সে তার বাসন্তীকে দেখতে পাচ্ছে। চোখজোড়া শান্ত হয়ে এসেছে ওর। পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই নিজের হাতের সাথে তার হাত স্পর্শ হয়। বর্ণালীর হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়৷ চোখ জোড়া ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলে ইভানকে দেখে কাঁপতে শুরু করে সে। ইভান পানির গ্লাস নিয়ে ওর দিকে তাকিয়েই এক ঢোকে খেতে লাগে৷ মুখের দু’পাশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। বর্ণালীর চোখ যেনো ওখানেই থমকে গেছে। পানি খেয়ে গ্লাস ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ মুছে নেয় ইভান।
-“কিছু নাস্তার ব্যাবস্থা কর মা যা।”
-“হু!!!!”
-“বলছি যে কিছু নাস্তার ব্যাবস্থা কর।”
-” হ্যাঁ করছি বাবা।”
ট্রে হাতে নিয়ে দ্রুত রান্নাঘরের দিকে চলে যায় সে। সজিব ততক্ষণে ড্রয়িংরুমে এসে ইভানের সাথে বুক মিলিয়ে পাশেই বসে৷ হাবিব হাসান তাদের বসতে বলে নিজের রুমে এগিয়ে যান। সজিব তার সাথে গল্প জুড়ে বসে। বর্ণালী রান্নাঘরে এসে কোনরকম ট্রেটা রাখে। থরথর কাঁপছে সে৷ এমন মনে হচ্ছে যেনো তার কোন চুরি ধরা পড়ে গেছে।
-“কিরে কি হলো?”
মায়ের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় সে। একদিকে এতোদিন পর ভালোবাসার মানুষকে দেখার আনন্দ অন্যদিকে তার সাথে করা অপরাধবোধ। আনন্দের চাইতে অপরাধবোধটাই বেশি ওর মাঝে।
রুমু ও বর্ণালীর ৫জন কাজিনও এসে তাদের সাথে গল্পে যোগ দেয়। মেয়ের বাড়ির লোক এসেছে জেনে সবাই এসে গোল হয়ে ঘিরে বসে ইভানকে। এদিকে বর্ণালী নাস্তা তৈরী করে রান্নাঘরে পায়চারি করছে। কীভাবে ওর সামনে যাবে সাহস পাচ্ছেনা। উঁকি দিয়ে ইভানকে দেখার চেষ্টা করছেম কতটা শুকিয়ে গেছে। চেহারাটাও অনেকটা মলিন হয়ে গেছে। কেন জানি মনে হচ্ছে হুট করেই যেনো ইভান বড় হয়ে গেছে। দাড়িতে তাকে মারাত্নক আকর্ষণীয় লাগছে। চোখ ফেরানো দায়। ইভানের চোখ রান্নাঘরে পরতেই বর্ণালীর চোখে চোখাচোখি হয়ে যায়৷ ও দ্রুত সেখান থেকে সরে আসে। কি লজ্জাটাই না পেতে হলো। এভাবে কেন দেখতে গেলো।
-“কিরে যা নাস্তা নিয়ে।”
-“মা তুমি গিয়ে দিয়ে আসো না প্লিজ।”
-“আমার এতো কাজ তোর চোখে লাগেনা? একটা বিয়ের উপলক্ষে তোর ফুফু, চাচারা এসেছেন তাদের যদি ভালো মতো খেয়াল রাখতে না পারি তাহলে হয়তো সম্পর্কটা ঠিক হওয়ার আগেই আবার নষ্ট হয়ে যাবে। তা কি তুই চাস?”
শারমিন বেগমের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাস্তার ট্রে হাতে নেয়৷ লম্বা করে একটা নিশ্বাস নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে যায়৷
-“নাস্তা বানিয়ে নিজেই খেতে লেগে গিয়েছিলি নাকিরে স্বরবর্ণ?”
ভাইয়ের দিকে ব্রু কুচকে তাকিয়ে ট্রেটা ঠাস করে টেবিলে রাখে।
-“তুমি নিজেই বানাতে গেলে না কেন তাহলে?”
-“আরে চেতে যাচ্ছিস কেন? আমি তো এমনি এমনিই বললাম জানতাম নাকি আসলেই তুই খেতে লেগে গিয়েছিলি।”
কথাটা বলেই সজিব হো হো করে হেসে দেয়। কিন্তু আর কেউ হাসছেনা দেখে সে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
-“হাসতে তো ট্যাক্স লাগেনা। তোমরাও হাসো।”
রুমু, ইভান সহ সজিবের কাজিনরাও হো হো করে হেসে দেয়। বর্ণালী রাগছে না কিন্তু এই হাসিগুলো তার খারাপ লাগছেনা৷ সবার মাঝে ইভানের হাসিটাও যে আছে৷ যা দেখে তার ঘোর লেগে যাচ্ছে। এতোদিন পর দেখছে সেই হৃদ কাঁপানো হাসি। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। ইভান আঁড়চোখে বর্ণালীর দিকেই তাকাচ্ছে।
💛
#______চলবে………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here