#__ফাগুন_প্রেম___পর্বঃ ৩৩+৩৪
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#
💛
রুমু এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না। বর্ণালীর বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। বর্ণালী কিভাবে রুমুকে শান্তনা দিবে তা জানা নেই ওর। কিন্তু তারপরও রুমুর এই কান্নার কারণ ওকে জানতেই হবে। রুমুকে সে কখনোই কাঁদতে দেখে নি। কেন আজ এভাবে কাঁদছে মেয়েটা।
-“কি হয়েছ রুমু কিছু তো বল।”
রুমু শান্ত হয়ে কি বসে রইলো কিছুক্ষণ তারপর বললো,
-“সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আমার বিয়ের কথা কেন কেউ বলেনা? আমার কি বিয়ের বয়স হয় নি?”
বর্ণালী রুমুর এমন কথা শুনে প্রায় আকাশ থেকে পড়লো। এই মেয়ে কি পাগল। এই কথার জন্য এভাবে কাঁদে কেউ!!! ভয় পাইয়ে দিলো শুধু শুধু। বর্ণালীর এখন ইচ্ছে করছে একটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু তা সে পারবে না। মাথায় হাত দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে।
-“কিরে ভাইয়াকে বল না আমার বিয়ের কথা। আমি তো লজ্জা পাই।”
কথাটা বলেই রুমু চোখ নিচের দিকে নামিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
-“তোর লজ্জা আছে?”
-“লজ্জা না থাকলে কি শুধু শুধু এই কাপড়ের বোঝা বয়ে বেড়াই নাকি?”
-“দেবো এক থাপ্পড় মেয়ে। আমাকে ভয় পাইয়ে মজা করা হচ্ছিলো?”
-“তুই যেভাবে টেনশনে ছিলি এর চেয়ে ভালো কোন উপায় জানা ছিলো না আমার তোকে টেনশন থেকে মুক্তি দেয়ার। হিহিহিহি”
রুমু বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে শুয়ে পড়লো।
-“ছাড় আমার গরম লাগছে।”
-“বাহ আজ আমি বান্ধবী ধরেছে বলে গরম লাগছে আর যখন ইভান এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে তখন খুব ঠাণ্ডা লাগবে না?”
বর্ণালী রুমুর মাথায় একটা চাপড় মেরে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“ইভান ছাড়া কি তোর মাথায় আর কেউ আসেনা?”
-“নাহ দুলাভাই হিসেবে তো আমার ইভানকেই চাই।”
-“আর যদি এমন না হয়?”
-“হবে হবে ইভান তোকে অনেক ভালোবাসে আর সারাজীবন বাসবে। দেখ ওকে আর অপেক্ষা না করিয়ে তোর মনের কথা ওকে বলে দে।”
-“আমি নিজেই তো বুঝিনা রে আমার মন আসলে কি চায়।”
-“তোর মন ইভানকেই চায়। তুই বুঝতে পারছিস না। বেশি দেরি করিস না পরে না আবার আমার মতো পস্তাতে হয়।”
-“তোর মতো পস্তাতে হয় মানে?”
-“এই যে ভাই-ভাবীকে বলতে পারছি না আর বিয়েটাও হচ্ছেনা।”
-“যাহ পাজি কোথাকার। ঘুমা এখন কাল সকালে উঠিতে হবে। কলেজে কাল অনেক কাজ।”
-“কি এতো কাজ?”
-“আরে পরশু অনুষ্টান না? তুই আসবি প্লিজ? তুই আসলে আমার কাজে অনেক হেল্প করতে পারিস।”
-“১০০টাকা দিবি?”
-“১০০টাকা দিয়ে কি করবি?”
-“দিবি কিনা বল।”
-“আচ্ছা দিবো।”
-“হুম এখন ঘুমাতে দে।”
👇
ইভান বর্ণালীর বাসার সামনে এসে ঘোরঘোর করছে কখন বের হবে এই ভেবে। কিন্তু ওর কোন খবরই নেই। বর্ণালীকে কল দিলো কিন্তু রিসিভও করলো না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ণালী আর রুমুকে দেখতে পেলো বের হতে। ইভান একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। সাদা আর বেগুনি রঙের মাঝে ড্রেসটায় বর্ণালীর সৌন্দর্য যেনো আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। ইভান আরো একবার ওর প্রেমে পড়ে গেলো। চোখ সরাতে পারছে না। হা হয়ে তাকিয়েই আছে।
-“তোর আশিক সামনে।”
-“মানে?”
-“আমার দুলাভাই।”
-“কি বলিস এসব?”
-“আরে সামনে দেখ কারো সু-নজর পড়েছে তোর উপর।”
বর্ণালী সামনে তাকিয়ে দেখে ইভান দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখ এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত পায় ইভানের দিকে যাচ্ছে।
-“তু…তুমি এখানে কি করছো?”
-“হু….!”
-“কি হু?”
-“না মানে তোমাদের লিফট দিতে এলাম এই আরকি।”
-“তোমাকে কি কেউ বলেছে আমাদের লিফট দিতে?”
এদিকে ইভান আর বর্ণালী কথা বলছে আর ওইদিকে রুমু গিয়ে টুপ করে গাড়ির ভেতর গিয়ে বসে পড়ে।
-“তোদের ঝগড়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি ভেতরে আয়। আমি বসলাম।”
-“রুমু নেমে আয়। আমরা রিকশা করে যাবো।”
-“আমার কাছ টাকা নেই আমি ইভানের গাড়িতে যাবো।”
-“আমার কাছে আছে আয় আমি ভাড়া দিবো।”
-“আমি তোর টাকায় যাবো না।”
বর্ণালী শুধু শুধুই কথা বাড়াচ্ছে। ও জানে রুমুর সাথে কথা বলে পারবে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। সে এখনো ইভানের উপর রেগে আছে। কথাই বলবে না ভেবেছিলো। কিন্তু ইভান যেমন ছেলে কথা না বলেও থাকতে দিবে না ওকে।
💛
#______চলবে…….
#___ফাগুন__প্রেম____
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ৩৪
💛
বর্ণালী শুধু শুধুই কথা বাড়াচ্ছে। ও জানে রুমুর সাথে কথা বলে পারবে না। তাই আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ির ভেতরে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। সে এখনো ইভানের উপর রেগে আছে। কথাই বলবে না ভেবেছিলো। কিন্তু ইভান যেমন ছেলে কথা না বলেও থাকতে দিবে না ওকে।
ইভান বারবার আয়নায় বর্ণালীকে দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। রুমুকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আবারো কলেজের দিকে রওয়ানা দেয়। কলেজে আসতেই বর্ণালী দ্রুত নেমে অফিসে চলে যায়। ইভান পেছনে ডাকলেও তাকায় না।
মালিহা, মিথি, রাহাত, শিমুল আর আসাদ ইভানকে দেখে এগিয়ে আসে।
-“কিরে কেমন আছিস তোরা?”
ইভানের কথা শুনে মালিহা বলে,
-“তোর আমরা কেমন আছি তাও জানতে হয় নাকি?”
মালিহার কথা শেষ হতেই রাহাত বলে উঠে,
-“খবরও তো রাখিস না।”
-“আরে ব্যাস্থ ছিলাম বুমনির বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
-“তাই? কার সাথে? কবে? কিছু বললিও না। কল দিলেও রিসিভ করিস না।”
-“শান্ত হো মালিহা ইভানকে তো বলতে দে৷ ও বিজি ছিলো বললো শুনলি না?”
মিথি অনেকক্ষণ পর কথাটা বলে।
ইভান সব বলতে বলতে কলেজের ভেতর এগিয়ে যায়। সবাই ইভানের কথা শুনে অবাক হয়। মালিহা তো খুব বেশিই অবাক হয়। ও ভাবতেই পারেনি বর্ণালীর ভাইয়ের সাথে ইভানের বোনের বিয়ে হবে। ভাবতেই ওর গা কেমন করছে। ইভানরা শেষ পর্যন্ত এমন লো ক্লাস ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে গেলো৷ আর কেউ পেলো না। গা ঝাড়া দিয়ে মালিহা এখান থেকে চলে যায় কে কোন বিষয়ের উপর অভিনয় করবে রিহার্সাল নিতে৷ আসাদ কবিতা আবৃত্তির, মিথি নাচের আর শিমুল গানের রিহার্সাল নিতে। আজকেই ফাইনাল রিহার্সাল। ইভান আর রাহাত খাবারে কি ধরনের আইটেম হবে তার জন্য যায়। এদিকে বর্ণালীর কথামতোই স্টেজ তৈরী করা হচ্ছে।
👇
রুমু অনেকক্ষন ধরে আলমারিতে ঘাটাঘাটি করে ব্যাগে কাপড় ভরছে আর একা একাই কি সব কথা বলে যাচ্ছে৷ রুমুর মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে ওর ভাবী রুমে আসেন। কিন্তু রুমে এসে রুমুকে কাপড় প্যাকিং করতে দেখে থেমে যান। কল কেটে রুমুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
-“কি গো ননদিনী কোথায় যাওয়ার জন্য প্যাকিং হচ্ছে?”
-“সময় হলে জেনে নিতে পারবে ভাবী।”
-“মা-বাবা কাল আসছেন।”
-“আম্মু কল দিয়েছিলো?”
-“হ্যাঁ এইমাত্র কথা হলো। কালই ফিরছেন তারা। কিন্তু তোমার কোথায় যাওয়ার প্ল্যানিং হচ্ছে সেটা তো বলো।”
রুমু হাতের কাপড়টা ব্যাগের ভেতর রেখে বলে,
-“পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছি৷ কাওকে বলো না কিন্তু।”
রুমুর এমন কথায় ওর ভাবী হোহো করে হেসে দেন।
-“তা কার সাথে পালাতে যাচ্ছেন ম্যাডাম?”
রুমু মুখটা একটু গোমড়া করে বলে,
-“এ জীবনে একটা প্রেমও করলাম না যার সাথে পালাতে পারি। দেখি এই কয়দিনের ভেতর কাওকে পটাতে পারি কি না। ”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো পাজি মেয়ে কোথাকার। তোমাকে বিয়ে দেয়া প্রয়োজন। তাহলেই তোমার এসব দুষ্টুমি কমবে।”
-“আর বিয়ে!!! সেটা কি আমার কপালে আছে?”
-“থাকবে না কেন?”
-“আমার তো মনে হচ্ছে আমার কপালে বিয়ে নেই।”
-“দাঁড়াও তোমার ভাইয়ার সাথে আজকেই কথা বলছি।”
-“হ্যাঁ বলো বর কিন্তু হিরো আলমের মতো হওয়া চাই। আমার যা একখানা চেহারা আমাকে হিরো আলমের মতো কেউ ছাড়া বিয়েই করবেনা।”
-“নিজেকে আয়নায় একবার ভালো করে দেখো আর ধারণা পাল্টাও।”
কথাটা বলেই রুমুর ভাবী রুম থেকে বেরিয়ে যান। রুমু ভাবীর কথামতো আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আয়নায় খুঁটেখুঁটে নিজেকে দেখছে। নিজেকে কখনো ভালো করে দেখেইনি ও। আজকে মনে হচ্ছে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে নেমেছে। আসলেই তো সে দেখতে এতোটা খারাপ না। গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা কিছুটা বাদামী বর্ণের। চুলগুলো একটু যত্ন নিলে আরো ভালো হতো। এখনও খারাপ না চুলগুলো না কালো না লাল। কিন্তু কোমড় পর্যন্ত লম্বা। উচ্চতাও খারাপ না ৫ফুট ২ইঞ্চি তো হবেই। আর স্বাস্থ্য নাহ স্বাস্থ্যটা ভালো না। এই একটা ব্যাপারে খুব খারাপ লাগছে দেখতে। নিজেকে ওর কাছে কেমন শিল্পা শেঠির কাজের মেয়ে মনে হচ্ছে।
এজন্যই হয়তো ছেলেরা ওর ধারেকাছেও ঘেঁষে না। এমন কংকালের কাছে কে আসবে! কংকাল তো ভালো ও যে রকমের দজ্জাল ছেলেরা এই ভয়ে আরো আগে ওর কাছে আসেনা।
👇
প্রিন্সিপাল স্যার পিয়নকে পাঠিয়ে সবাইকে অফিসে ডাকিয়ে নেন।
-“কাজ কতদূর?”
-“এই তো স্যার সব শেষ।”
-“তা তোমার টিম তোমায় ঠিকমতো সাহায্য করেছে তো?”
-“হ্যাঁ স্যার ওরাই সব করেছে। আমার তো কোন কিছু করতেই হয় নি।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে সব স্টুডেন্টদের জানানো হয়েছে তো?”
-“সব হয়ে গেছে স্যার আর কোন সমস্যা নেই।”
-” ঠিকাছে কাল সকাল ৮টার ভেতর তোমরা সবাই উপস্থিত থাকবে। আর বর্ণালী প্রতিবারের মতো এবারও তুমি উপস্থাপনা করতে হবে। প্রথমে তোমার গান দিয়েই শুরু হওয়া চাই অনুষ্ঠান।”
বর্ণালী আগেই জানতো প্রিন্সিপাল স্যার ওকে এমন কিছুই বলবেন। প্রতিবারই তাকে ডেকে এনে এমন কিছু একটা বলা হয়। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ও হ্যাঁ বলে দিলো।
সবাই বের হয়ে গেলো অফিস থেকে।
-“কালকেই কাজটা শেষ করতে হবে।”
-“মালিহা আরেকবার ভেবে নে। বর্ণালী ম্যাম কিন্তু অনেক ভালো। তাছাড়া উনি ইভানকে ভালোও বাসেন না। শুধু শুধু এমন কিছু করে উনাকে…..”
-“চুপ করবি মিথি? তুই কি আমার ফ্রেন্ড না ওই বর্ণালী ম্যামের চামচা?”
-“মালিহা কি বলছিস এসব? আমি তো তোকে বুঝাচ্ছিলাম। আর ভেবে দেখ বিষয়টা ইভান জানতে পারলে কিন্তু অনেক রেগে যাবে।”
-“ইভানকে কি তুই বলবি?”
-“আমি কেন বলবো?”
-“তাহলে? যখন তুইও বলবি না আর আমিও বলবো না তাহলে ইভান জানবে কিভাবে?”
-“তারপরও মালিহা।”
-“এই তুই যা তো। লাগবে না আমার তোর হেল্প। যে হেল্প করার সে তার কাজে অলরেডি লেগে গেছে। আর আমার কাজ অনেকটা সহজ করে নিয়েছে।”
-“আচ্ছা সরি মালিহা। দেখ আমি জাস্ট তোর ভালোর জন্য বলছিলাম। কিন্তু আমি তোকে সাহায্য করতে মানা করিনি।”
-“তাহলে আমি যেনো আর তোকে বর্ণালী ম্যামের চামচামি করতে না শুনি।”
-“হু।”
-“চল।”
মালিহা আর মিথির পাশ কাটিয়ে বর্ণালী গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
-“যান ম্যাডাম যান। আজকে তো হাসিমুখে যাচ্ছেন কাল এই মুখে কালো মেঘ জমে চোখে বৃষ্টি নামবে।”
বিরবির করে কথাটা বলেই ঠোঁট বাকা করে হাসলো মালিহা।
বর্ণালী গরমের মাঝে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো ৩টা বেজে গেছে। একটু আগেই মনে হচ্ছিলো ক্ষিধের যন্ত্রণায় মরেই যাবে। কিন্তু এখন আর ক্ষিধেটা নেই। একটা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছেনা। একটু হাঁটতেই বর্ণালীর জুতোটা ছিড়ে যায়। এখন পড়া গেলো আরেকটা যন্ত্রণায়। এখনই সময় পেলো জুতো ছিড়ে যাওয়ার!! তার মাঝে এই গরম!!! যদিও সূর্যটা পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে তবুও রোদের তাপ কমেনি।
শরীরটা চুলকাচ্ছে আর মুখে কেমন একটা জ্বালা অনুভব করছে। অসহ্য লাগছে এই গরমে। একটু বৃষ্টি প্রয়োজন ছিলো।
জুতোটা খুলে পথে রেখেই আগাতে শুরু করে। উফ পা যেনো পুড়ে যাচ্ছে৷ রাস্তাটা এত্তো গড়ম। মনে হচ্ছে কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কে যেনো বারবার গাড়ির হর্ণ বাজাচ্ছে!! বিরক্ত হয়ে বর্ণালী ড্রেনের উপর উঠে পায়ের গতিটা আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু তাও গাড়ির হর্ণ থামছেনা। পিছন ফিরে তাকিয়ে বর্ণালী ইভানের গাড়ি দেখে আবারো হাঁটা শুরু করে। ইভান রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে বর্ণালীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্ণালী একবার ওর দিকে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলেই ইভান আবারো সামনে এসে দাঁড়ায়।
-“কি হলো রাস্তা ছাড়ো।”
-“আমাকে না বলে কেন যাচ্ছ?”
-“তো কি করবো ইভান? সবসময় কি তোমাকে বলে আসতে হবে আর যেতে হবে?”
-“হ্যাঁ তাই করতে হবে। গাড়িতে উঠো।”
-“প্লিজ ইভান আমাকে যেতে দাও। আমি বাস বা সিএনজি-তে চলে যাবো।”
-“আমার গাড়ি থাকতে কেন তুমি বাস বা সিএনজি-তে যাবে? তাও এতো গরমে! কখনো না। চলো বলছি। এই তোমার জুতো কোথায়?”
-“ছিড়ে গেছে।”
-“বর্ণালী আর কথা বাড়ালে কিন্তু খুব খারাপ হবে তোমার পায়ে তো গরম লাগছে।”
কথাটা বলেই ইভান বর্ণালীর হাত ধরে টান দেয়। বর্ণালী আশেপাশে তাকিয়ে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
-“ইভান ছাড়ো সবাই এদিকে তাকাচ্ছে।”
-“তুমি ভালোয় ভালোয় চলো আমার সাথে। এভাবে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তো লোকে তাকাবেই।”
-“নাহ আমি তোমার সাথে যাবো না।”
-“যাবেনা?”
-“নাহ।”
-“সত্যি যাবেনা?”
-“না তো রে বাবা আর কতবার বলবো!”
-“ঠিকাছে।”
ইভান বর্ণালীর হাত ছেড়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়৷ ও আবার সামনের দিকে হাঁটতে লাগে। কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারে কেউ তার পিছু পিছু আসছে। পেছনে তাকিয়ে দেখে ইভান। বর্ণালী ব্রু কুচকে ইভানের দিকে তাকায়।
-“তুমি আমার পিছু পিছু আসছো কেন?”
-“রাস্তাটা কি তোমার একার?”
বর্ণালী আর কথা না বাড়িয়ে পিছন ফিরে সামনের দিকে হাঁটতে গেলেই খেয়াল করে ইভান খালি পায় এসেছে। চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“এই তোমার জুতো কোথায়?”
-“ছিড়ে গেছে।”
-“মানে কি? একটু আগেই না তোমার পায়ে দেখলাম।”
-“হ্যাঁ একটু আগে ভালো ছিলো এখন ছিড়ে গেছে।”
-“মিথ্যা বলবে না। যাও জুতো পড়ো রাস্তা অনেক গরম ইভান যাও।”
-“গরম বুঝি তোমার লাগেনা?”
-“না লাগেনা। আমার অভ্যাস আছে।”
-“তোমার অভ্যাস আছে আর আমার অভ্যাস হয়ে যাবে।”
-“উফ এই ছেলেটা!”
-“এই ছেলেটা কী?”
-“এতোটা বাচ্চামো ভালো নয় ইভান।”
-“তোমারও এতোটা জেদ ভালো নয় বর্ণ।”
-“উফ!!!!”
-“চলো না গাড়িতে উঠো প্লিজ এই একটা রিকুয়েষ্ট রাখতে পারোনা আমার? তুমি যাই বলো আমি তো তাই করি। তুমি আমার এই একটা কথা শুন।”
বর্ণালী পিছিন ফিরে হাঁটতে শুরু করে। খুব তাড়াতাড়ি হেঁটে যাচ্ছে। আবার কি যেনো ভেবে ইভানের দিকে এগিয়ে আসছে। তার সামনে এসে কিছুক্ষণ রাগি চোখে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে হনহন করে চলে যায়। চুপ করে গাড়ির ভেতর গিয়ে বসে। ইভান মাথার চুল ঝাকিয়ে হেসে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। ওর পা এতোক্ষণে প্রায় জ্বলে যাচ্ছিলো। এই জীবনে প্রথম এতো গরম অনুভব করতে হলো ওকে তাও বর্ণালীর কারণে।
👇
ইভান গাড়ি এনে একটা শপিংমলের সামনে থামায়। বর্ণালী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেক বড় একটা শপিংমল।
-“এখানে কেন থামালে?”
-“একটা জিএফ কিনবো। চলো তুমিও একটা বিএফ কিনে নিবে।”
-“ফাজলামো ছাড়ো ইভান। আমার মাথা ব্যাথা করছে প্লিজ বাড়িতে পৌঁছে দাও।”
ইভান তার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দেয় সে নামার জন্য।
-“নেমে আসো।”
-“আমি নেমে কি করবো?”
-“এসো না প্লিজ।”
-“তুমি জুতো পড়ো।”
-“এখন না পরে। তুমি নামো তো প্লিজ”
বর্ণালী নেমে ইভানের পাশেপাশে হেঁটে যাচ্ছে। জুতোর সেকশনে নিয়ে যায় ইভান। কয়েক জোরা জুতো বের করে বর্ণালীর দিকে এগিয়ে দেয়। ও হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ইভান ওর জন্য জুতো কিনতে নিয়ে এসেছে! একটা চেয়ারের উপর ওকে বসিয়ে দেয় ইভান।
-“ইভান এসব কি করছো?”
-“হুস এখানে কোন সিনক্রিয়েট করো না। চুপচাপ তাই করো যা আমি বলছি।”
ফিসফিস করে ইভান বর্ণালীকে কথাটা বলে। ফ্লোরে বসে বর্ণালীর পা হাঁটুর উপর নেয়। সে পা ধরতেই যেনো বর্ণালী ৪৪০ ভোল্টেজের শক খায়। দোকানের লোক ওদের দেখে মিটিমিটি হাসছে। এসব ওর একদম ভালো লাগছে না৷ কেমন লজ্জা লাগছে। কিন্তু কিছু বলতেও পারছেনা। ইভান আলতো করে একের পর এক জুতো বর্ণালীর পায়ে পড়িয়ে দেখছে কোনটা ভালো লাগে। পুরো দোকান ওলট-পালট করে একজোড়া জুতো পছন্দ করে কিনে বেরিয়ে ক্যান্টিনে যায় ওকে নিয়ে৷ -“চলো কিছু একটা খাওয়া প্রয়োজন।”
-“আমি কিছু খাবো না ইভান বাসায় যাবো।”
-“আচ্ছা তুমি খেতে হবে না আমি খাবো তুমি চুপচাপ বসে থেকো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে। কিছু না খেলে গাড়ি চালাতে পারবো না৷”
বর্ণালীর সাধারণত রাগ করেনা। কিন্তু আজ ইভানের উপর ওর অনেক রাগ হচ্ছে। এই ছেলেটা কেন এমন করে!!!
ইভান অনেক রকম খাবার অর্ডার দিয়ে খেতে শুরু করে। বর্ণালীরও খুব ইচ্ছে করছে খেতে কিন্তু একটু আগে যে বললো খাবে না তাই কিছু বলতেও পারছেনা। ইভান তো ওকে একবার খাবার কথা বলতে পারতো। কিন্তু না সে একাই গপগপ করে খেয়ে যাচ্ছে। পেটে ক্ষুধা থাকলে নাকি অনেক মানুষের রাগ উঠে আর আজ তা বর্ণালী হারে হারে টের পাচ্ছে। হুট করেই ইভান বর্ণালীর দিকে একটা বারবিকিউ বাড়িয়ে দেয়। চোখ ছোট ছোট করে ইভানের দিকে তাকিয়ে আশেপাশে চোখ বুলায় সে। এখানে কেউ কারো দিকে তাকানোর মতো বিন্দু পরিমাণ সময় নেই। যে যার মতোই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত। বর্ণালী ইভানের হাত থেকে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তারপর খেতে শুরু করে।
👇
গাড়িটা বাড়ির রাস্তা দিয়ে যেতে না দেখে বর্ণালীর মনে কেমন খটকা লাগে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এই ছেলে!
-“ইভান কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
-“গেলেই দেখতে পাবে।”
-“অনেক দেরি হয়ে গেছে ইভান এবার প্লিজ বাড়িতে দিয়ে এসো। মা টেনশন করবে।”
-“১টা ঘন্টা প্লিজ। এর চেয়ে বেশি সময় নিবো না তোমার। এই তো এসেই গেছি”
কোন কিছু বলে লাভ হবে না দেখে বর্ণালী চুপ মেরে যায়।
পার্কে লেকের পাড়ে এসে বসে আছে দুজনে। আশেপাশে মানুষের আনাগোনা নেই। অনেক নীরব জায়গাটা। মাঝেমধ্যে কোকিলের কুহু ডাক শোনা যাচ্ছে।
-“এখানে নিয়ে এলে যে? কোন কথা ছিলো?”
-“নাহ এখানে বসতে চাইছিলাম তোমার সাথে কিছুক্ষণ। দেখো কত সুন্দর বাতাস৷ ভালো লাগছেনা এই জায়গাটা?”
-“হ্যাঁ ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে এখানেই বসে থাকি।”
জায়গাটা অনেক সুন্দর সাথে শীতল বাতাসে বর্ণালীর প্রাণটা প্রায় জুড়িয়ে গেছে। ইচ্ছে করছেনা এখান থেকে যেতে। চোখে ঘুম নেমে আসছে ওর। ইভান কিছুটা সরে আসে ওর দিকে। দুজনে একেবারে গা ঘেঁষে বসে আছে। আলতোভাবে চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী। নিজের অজান্তেই ইভানের কাঁধে ও মাথা রাখে। খুব ঘুম পাচ্ছে মনে হচ্ছে কত জনম ঘুমায় না। ঘুম ঘুম চোখেই আরেকটুখানি সরে যায় ইভানের দিকে।
💛
#_____চলবে_____