#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪৯
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
মারিয়াকে নিয়ে আসা হয়েছে রাফসানদের বাড়িতে।সাথে আরু,আয়ান,তন্নি,অনিম সবাই এসেছে।অবশ্য রাতে কেউ থাকবে না এখানে তা আগেই বলে দিয়েছে।
মারিয়াকে আরু তন্নি আর রাফসানের কিছু কাজিন মিলে রাফসানের ফুলে সাজানো রুমে নিয়ে গেছে।সেখানে যেতেই মারিয়া যেনো মরি মরি অবস্থা।কেমন যেন নার্ভাস আর ভয় কাজ করছে।এর মাঝে রাফসানের কাজিনরা এটা সেটা বলে মারিয়াকে আরো লজ্জায় ফেলছে।এই অবস্থার সম্মুখীন তন্নিও হয়েছিলো তাই ও জানে এই জ্বালা কী।কিন্তু আরুকে এসব কিছুই পোহাতে হয়নি।কারণ ওদের বিয়েটাই যেভাবে হয়েছে তা-তে-তো…..
আরুও এসব কথা শুনে প্রচন্ড লজ্জা লাগছে তাই ওদের চুপ করাতে আরু বলে,
আরুঃ এসব কি বলছো তোমরা?ওতো নতুন।এসব বলে ওকে লজ্জায় কেনো ফেলছো?
মেয়েঃ আহা!ভাবি তুমি তো এসব বিষয়ে নতুন নও।এসব তো তোমার কাছে পুরোনো।তাই না?
মেয়েগুলো হাসতে লাগলো।যদিও এখানে সবাই বিবাহিত।অবিবাহিতদের চলে যেতে বলা হয়েছ।আরু না বুঝে বললো,
আরুঃ এসব আমার সাথে কেনো হবে শুধু শুধু।আর তোমরা এখন চলো।মারুকে আর শুধু শুধু লজ্জায় ফেলো না।
মেয়েঃ সেকী তোমাকে এসব কথা শুনতে হয়নি?ভালোই তো এসব লজ্জা জনক কতা থেকে বেঁচে গেলে ভাবি।আর আমাদের জানো?বিয়ের দিন কাউকে চিনি না জানি না নতুন গিয়ে এসব লাগামহীন কথা শুনতে হয়েছে।
আরুঃ কেনো শুনতে হবে কেনো?তোমরা বলে দিতে এসব কথদ তোমরা শুনতে চাও না।ব্যাস তাহলেই তো হতো।
মেয়েঃ কী বলে দেখে।সবাইকে কী এমন করে বলা যায়।আর….আচ্ছা ভাবি আয়ান ভাইকে দেখে তো খুব রোমান্টিক মনে হয়।তা ফাস্ট নাইট কেমন কাটলো তোমাদের?
বলেই সবাই মিটমিট হাসছে।এবার আরু পরেছে মহা ঝামেলায়।এসব কেমন কথা।এসব কেউ বলে।এদের কী মুখের কোনো ব্যালেন্স নেই।না থাকলে আরুকে বলুক ও রিচার্জ করে দিবে।আরু তো লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলেছে।কিছুক্ষন পর আবার একটা মেয়ে বললো,’আরে বলো না’।আরু যেনো আরো লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে।কিন্তু হটাৎ ওর মনে পরলো ওদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি।হয়েছিলো ওকে ঠকিয়ে না জানিয়ে।এবার আরুর মুখ থেকে লজ্জা সরে গিয়ে একগুচ্ছ কালো মেঘ এসে জড়ো হয়েছে।তন্নি ব্যাপারটা বুঝে বললো,
তন্নিঃ আচ্ছা এসব কথা পরে হবে।এখন মারুকে রেস্ট নিতে দাও।কিছুক্ষন পর তো রাফসান ভাই আসবে।চলো সবাই।
তন্নির কথা সবাই সায় মিলিয়ে যায় রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তন্নি যাওয়ার আগে মারিয়াকে “বেস্ট অফ লাক” বলে (😉)একটা চোখটিপ দিয়ে হেসে চলে গেলো।
ওরা যাওয়ার পর মারিয়া একটু শস্তি মিললো।ও উঠে দাড়িয়ে ড্রেসুং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের গা থেকে ভারি গহনা গুলো খুলতে লাগলো।এর মাঝেই রুমে রাফসান ঢুকলো।মারিয়া তা বুঝতে পেরে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।রাফসান ব্যাপারটা বুঝে ওকে আশস্ত করলো।এতে মারিয়া একটু ফ্রী হলো।মারিয়া গহনা গুলো খুলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।আর রাফসান রুমে মারিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।আজকে ওদের এতো বছরের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে।কিন্তু এখম থেকে নতুন ভাবে,অন্য ভাবে ওদের পথ চলা আবার শুরু হবে।ভালোবেসে মুড়ে থাকবে সারাজীবন।আজ এই ভালোবাসার মানুষ দুটি এক হবে।এক হবে তাদের আত্মা।আর তার সাক্ষী থাকবে আকাশের চাঁদ।
—————
আরু দাড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে।তন্নি আর অনিম বিদায় নিয়ে চলে গেছে কিছুক্ষন আগে।এখন আরু দাড়িয়ে আছে আয়ানের জন্য।কারন আয়ান ভিতরে কী একটা কাজে যেনো গিয়েছে।একটু পর আয়ান এলো।আয়ান এসে দেখে আরু গাড়িতে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হটাৎ কী আরুর মন খারাপ হলো কেনো তাই বুঝছে না।সেই কখন থেকে দেখছে ওর মুখটা যেনো কেমন হয়ে আছে।আরুকে জিজ্ঞেস করলে ও কিছু বলবে না তা আয়ান জানে।তাই আরুর মন ঘুরাতে আয়ান বললো,
আয়ানঃ বউ চলো।
আরুঃ হু..হুম কোথায়?
আয়ানঃ চলো দেখতে পাবে।(গাড়িতে বসতে বসতে)
গাড়ি চলতে শুরু করলো।গাড়িতে দু’জনেই নিরব।আরুর হটাৎ এমন করাটা আয়ান মেনে নিতে পারছে না।কিছুক্ষন পর আরুকে চুপ থাকতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ বউ আমার শর্তটার কথা মনে আছে তো?
এতোক্ষন আয়ানের সেই কথাটা মনে ছিলো না আরুর।হটাৎ আয়ান বলাতে আবার মনে পরেছে।কিন্তু এখন আরুর ভয়ও করছে আয়ান যদি সেইরকম কিছু চেয়ে বসে।তখন আরু কী করবে?তারপরও নিজেকে শান্ত করে বললো,
আরুঃ কী শর্ত🙄(
আয়ানঃ বারে আবার ভুলে গেলে?…এই তুমি সত্যি ভুলে যাও নাকী ভুলে যাওয়ার অভিনয় করো।আমার মুখ থেকে শুনার জন্য? (দুষ্ট হেসে)
আরুঃ কীসব বাজে কথা😤
আয়ানঃ যা সত্যি তাই তো বললাম।🙁
আরুঃ এই চুপ।নাহলে কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে যাবো।
আয়ানঃ আচ্ছা।কিন্তু এখন বলো আমি যা চাই তা দিবে কী না?
আরুঃ কী চাই আপনার?
হটাৎই আয়ান গাড়ি ব্রেক করলো।এতে আরু কিছুটা সামনে এলিয়ে পরলো।যদিও পুরাপুরি পরে যায়নি কারন সিটব্লেট ছিলো।হটাৎ এমন হওয়াতে আরু কিছুটা ভয়ও পেয়েছে।নিজেকে ঠিক করে ঠিকঠাক মতো সিটে বসে আয়ানের দিকে রাগী লুকে তাকালো।আয়ান ছোট করে ‘ সরি ‘ বলে দিলো।আয়ান আবার বললো,
আয়ানঃ এখন বলো?আমি যা চাই তা দিবে তো?(আরুর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে)
আরুঃ ক…কী চাই?আ..আর আপনি এগিয়ে আ..আস..আসছেন কেনো?দূ..দূরে যান
আয়ানঃ দূরে গেলে তো সেই কবেই চলে যেতাম।কাছাকাছি আসার জন্যই তো এই ব্যবস্থা।(আরুর আরো কাছে এসে)
আরুঃ ম..মানে?
আয়ানঃ আজ রাফসানের ফাস্ট নাইট,সাথে দেখো চাঁদের আলো চারদিকে ঝলমল করছে,তুমি আর আমি খুব কাছাকাছি,কেমন একটা রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব চারপাশে।আর কী লাগে বলো।তারউপর এখনো আমাদের ফুলসজ্জাও হয়নি।এমন সময় কী মাথায় আসে বলো।
আরুর গালে আয়ানের আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে স্লো ভয়জে কথা গুলো আয়ান বলছিলো।আরু আয়ান যখন ওর গালে হাত দিয়েছে তখন যে চোখ বন্ধ করেছে তো করেছে আর খোলার নাম নেই।আরুর অবস্থা দেখে আয়ান হাসছে কিন্তু শব্দ করছে না।আরুর নিশ্বাসও যেনো আঁটকে আছে।আরুর ঠোঁট গুলোও কাঁপছে।কিন্তু ও অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রেখেছে।আয়ান আরুণাংশু ঠোঁটের দিকে নজর যেতেই ওর চোখ আটকল গেলো।আয়ান এবার ওর আঙুল আরুর ঠোঁটের উপর স্লাইড করছে।কিন্তু কিছু বলছে।আর এদিকে আরুর মরো মরো অবস্থা।ও পারছে না এখান থেকে ছুটে পালাতে।আবার মনে হচ্ছে জমে পুরো বরফ হয়ে আছে পুরো শরীর।নড়ার শক্তিটাও নেই।আয়ান একমনে স্লাইড করে হটাৎ কী মনে করে আরুর থেকে দূরে চলে গেলো।কিন্তু আরু এখনো চোখ বন্ধ করে চুপ করে আছে।আয়ান ভাবালো ও এটা কী করতে যাচ্ছিলো।ওর এই কাজে আরু হয়তো আবার ওকে ভুল বুঝতো,আরু নিজে কষ্ট পেতো।কিন্তু এগুলোর কিছুই আয়ান হতে দিবে না।তাই নিজেকে সংযোত করে আরুকে নরমাল করার জন্য আয়ান এবার হো হো করে হেঁসে উঠে।আয়ানের হাসির শব্দে আরুর ঘোর ভাঙলো।তারপর তাকিয়ে দেখে আয়ান হাসছে কিন্তু কেনো তা আরু বুঝতে পারছে না।তাই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে।আয়ান বললো,
আয়ানঃ জাস্ট রিলেক্স জান।আমি মজা করছি।
আরুর একটু শস্তুি মিললো।কিন্তু আয়ান আবার বললো,
আয়ানঃ বাট আমার কিন্তু সত্যি কিছু চাই এখন।
আরুঃ কী?
আয়ানঃ আজকে এখনই আমার সাথে লং ড্রাইভে যেতে হবে।রাজি?
আরুর ভেবে দেখলো রাজি হওয়া যায়।না হওয়ার কিছু নেই।তাই আরু বলে,
আরুঃ বেশ।কিন্তু বাড়িতে বাবা মা?
আয়ানঃ সে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।
—————
আরুরা এখন দাড়িয়ে আছে নদীর পাড়ে।ওরা ঢাকা ছেড়ে অনেকটা দূরে চলে এসেছে।রাতের নিস্তব্ধ ঢাকা।আশপাশে কোনো কোলাহল নেই।এইসময় আরু এই প্রথম বাহিরে।ওর প্রচন্ড ভালো লাগছে।আরুর একটু আগে মন খারাপটা নিমিষেই চলে গেছে।বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।আয়ান একসময় নদীর পাড়ে এনে গাড়ি থামালো।আয়ান আরুকে ইশারা করলো গাড়ি থেকে নামতে।আরু গাড়ি থেকে নেমে একদম নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ালো।আয়ানও ততোক্ষনে চলে এসেছে আরুর পাশে।আজ পূর্ণিমার আলোতে চারদিকে আলোকিত।চাদের আলো পানিতে পরে আরো ফুটিয়ে তুলেছে।হালকা বাতাসক গা ছুয়ে দিচ্ছে।আর হালকা শীতও লাগছে।আরু জুতা খুলে পানিতে পা ভিজালো।ওর পানিতে পানি লাগতেই পুরে শরীর সীড়সীড় করে উঠলো।আরুর মুখে হাসি।আর এই হাসি আয়ানের হৃদয় শান্ত করতে যথেষ্ট।আয়ান মুচকি হেসে আরুর দিকে এগিয়ে গিয়ে আরুর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।হটাৎ আরু অনুভব করলে ওর পেটের উপর কারো হাত।তবে আরু চমকালো না।কারণ ও জানে এটা কার হাত।তাই আরু চুপ করে ওর পুরো শরীরের ভাড় আয়ানের উপর ছেড়ে দিলো।আয়ানও আরো নিবিড় ভাবে আরুকে আগলে নিলো।করো মুখে কোনো কথা নেই।কিছু সময় নিরব থেকে পরিবেশটা উপোভোগ করার মজাই আলাদা।আলাদা প্রশান্তি।আরু আয়ানের ঘাড়ে মাথা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আর ওর চোখ গুলো চিকচিক করছে।এটা কী সুখের না দুঃখের তা আরু বুঝতে পারছে না।এমন একটা পরিবেশ পাশে আছে ভালোবাসার মানুষ,আশেপাশে কোনো নেই কোনো কোলাহল সাথে মন খুলে নিশ্বাস নেওয়া,আছে দূর আকাশের ওই চাঁদ।আর কী প্রয়োজন।এ জেনো এক অন্য অনূভুতি।কিন্তু এই অনূভুতির সাথে আরুর পরিচয় আগে ছিলো না।থাক না কিছু অনূভুতি না জানার।সব অনূভুতির সাথে পরিচিত হতে হবে এটাও তো কথা নেই।প্রায় অনেকক্ষন পর আয়ান আরুর ঘাড়ে মুখ রেখে বলে,
আয়ানঃ জান,যাবে না?
আরুঃ উহু।
আয়ানঃ এভাবে পানিতে থাকলে তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
আরুঃ লাগুক।
আয়ান হেসে দিলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ৩ টা।অনেকটা সময় পার হয়েছে।কারন ওরা রওনা দিয়েছিলো ১২.৩০ এর সময়।এখনই ব্যাক করতে হবে।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।আয়ান আবার বললে,
আয়ানঃ জান এখন চলো।আবার পরে আসবো।এখন না ফিরলে অনেক লেট হয়ে যাবে।
আরুর কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেলে।ওর আরো কিছুক্ষন থাকার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু এখন আর পারবে না।আরুর মন খারাপ দেখে আয়ান আরুর মুখটা ওর দু হাতে আগলে নিয়ে বললো,
আয়ানঃ আমরা আবার আসবো জান।মন খারাপ করে না।চলো।
আরুঃ হুম☹️।
আয়ান মুচকি হেসে আরুর কপালে একটা চুমু খেয়ে ওর হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
উম্মে বুশরা
————-
সময় যে কীভাবে চোখের পলকের সাথে চলে যায় তা কেউ বুঝতে পারে না।
এর মাঝে চলে গেছে আরো ৪ মাস।করো জীবনে এসেছে নতুন পরিচয়।আবার কারো জীবন চলছে ঠিক আগের মতো।কিন্তু সবাই সবার জীবনে সুখী।নিজের মতো চলে যাচ্ছে সবাই।
মারিয়া আর রাফসান চুটিয়ে সংসার করছে।সাথে মারিয়ার মাস্টার্সে পড়ালেখা চলছে।মারিয়া স্বামী,সংসার,পড়াশোনা নিয়ে দিব্বি দিন পার করছে।
এর মাঝে তন্নির জীবনে এসেছে নতুন অধ্যায়।তন্নি ২ মাসের প্রেগন্যান্ট।এই খবর শোনার পর সবার খুশির সীমা নেই।অনিম আর তন্নিতো খুশিতে কেঁদেই ফেলেছে।তন্নির বিশ্বাস হচ্ছে না ওর আর অনিমের ভালোবাসার অংশ ওর ভিতরে বেড়ে উঠছে।আর কিছু মাসের অপেক্ষা।তারপর সে দুনিয়ায় আলো দেখবে ওকে মা আর অনিমকে বাবা বলে ডাকবে।তন্নির এই খবর শোনার পর আরুর মা তন্নির সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।তন্নি এখন লেখাপড়া আর অবসরে ওর দিন কাটছে।আর কিছুক্ষন পর পর এটা খা ওটা খা এসব বলে কতোনকী ওর সামনে হাজির করে।আর তন্নি তা খেতে থাকে।আবার মাঝে বমির জন্য খেতে পারে না।কিন্তু তাও কিছু করার নেই।
আরু আর আয়ান সেই আগের মতে।না ওদের জীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে না দুজন দু-জনের থেকে দূরে সড়ে এসেছ।কিন্তু আরু ইদানীং সেই আগের মতো হয়ে যাচ্ছে।আয়ানকে ছাড়া ওর কিছুই ভালো লাগে না।সবসময় আয়ানকে ওর পাশে চায়।কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারে না।আরু যেদিন প্রথম তন্নির প্রেগন্যান্টের লথা শুনেছে তখন আরুর সুপ্ত মনের কোথাও নাড়া দিয়েছে ও মা হতে চায়।ওদের ভালোবাসার একটা অস্তিত্ব ওর ভিতরে বেরে উঠুক ও এটাই চায়।মা হওয়ার স্বাদ ও গ্রহন করতে চায়।কিন্তু এই কথা আয়ানকে ও বলতে পারেনি।
কিন্তু আরু একটা জিনিস লক্ষ করেছে ১ সপ্তাহের মতো আয়ান কেমন যেনে হয়ে গেছে।একটু চুপচাপ।আরুর থেকে একটু দূরে দূরে থাকা।আরুর ভেবেছে হয়তো অফিসে কোনো ঝামেলা তাই এমন অফসেট।
কিন্তু আরু আজ ঠিক করেছে আয়ানের কী হয়েছে তা জানবে।এবং আস্তে আস্তে ওদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করবে।
————-
আয়ান অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে।আরু আয়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে আয়ান শুয়ে আছে।আরু আয়ানের কাছে গিয়ে বললো,
আরুঃ শরীর খারাপ?
আয়ানঃ না।
আরুঃ তাহলে শুয়ে আছেন যে?
আয়ানঃ এমনি।
আরুঃ ওহ।উঠুন ডিনার করবেন।
আয়ানঃ খিদে নেই।
আরুঃ এটা আবার কেমন কথা।উঠুন।আমি খাবার আনছি।
বলে আরু চলে যেতে নিতেই আয়ান উঠে বসে আরুকে বলে,
আয়ানঃ যেতে হবে না।আমার জন্য অনেক কিছু করেছো তুমি।তার জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।
আরুঃ কী বলছেন এসব?
আয়ানঃ ঠিকি বলছি।আমি যা করেছি তার ক্ষমা হয়না।তারপরও বলবো পারলে ক্ষমা করে দিও।….এবার তুমি যা চাও তাই হবে।
আরুঃ আমি যা চাই মানে?
আয়ানঃ আমার থেকে ডির্ভোস চেয়েছিলে মনে আছে?
সেটাই হবে এখন।তোমাকে মুক্তি দেবো।এই আয়ান নামক জেলখানায় তোমাকে আর থাকতে হবে না।এতো দিন আমার এক্সিডেন্টের জন্য তুমি পরে ছিলে কিন্তু এখন আর না।আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি।
আরুঃ……..
আয়ানঃ আমি সাইন করে দিবো।তারপর তুমি তোমার মতো স্বাধীন।
বলেই আয়ান চলে গেলো।আর আরু ধপ করে নিচে বসে পরলো।ওর কথা বলার শক্তি হারিয়ে গেছে।কিছু বলতে চায় ও।শুধু বলতে না চিৎকার করে বলতে চায় কিন্তু পারছে না।
চলবে……