#তুমিময়_বসন্তপর্ব২৭
.
#Mousumi_Akter
রৌদ্রজ্জ্বল দুপুর চারদিকে ভীষণ উত্তাপ,ঝলমলে রোদ এ বাতাসেও যেনো গরম হাওয়া দিচ্ছে বন্দি ঘরের ভেতরে।উঠানে বালতিতে পানি রাখা আছে।কোথা থেকে দুইটা শালিক উড়ে এসে বালতির উপর বসলো।তাদের মনে হয় ভীষণ পানি তেষ্টা পেয়েছে।শালিক দুইটা পানি একবার ঠোঁটে নিয়ে আর নিলো না।কেননা রোদের তাপে পানি আগুনের মতো গরম হয়ে আছে।ইস শালিক দুইটার বোধহয় ভীষণ পানির পিপাসা পেয়েছে।আমি দ্রুত একটা মাটির বাসন ঘর থেকে নিয়ে তাতে একটু ঠান্ডা পানি নিয়ে আমগাছের নিচে ছায়ায় রাখলাম।কিন্তু ভীষণ মুশকিল শালিক সে পানি চোখেই দেখছে না।শালিকের নজরে পানি দেখানোর ভীষণ চেষ্টা করলাম কিন্তু শালিক তা দেখছেই না।পরে গিয়ে যেদিকে পানি রেখেছি শালিক দুটোকে সেদিকে তাড়া দিলাম।কিন্তু তাতে শালিক উড়ে গিয়ে আমগাছের উঁচু ডালে বসলো।চেষ্টা করেও আর তাদের নামানো গেলো না।
“বারান্দা থেকে আয়াসের আম্মা অয়ন কে বলছে দেখ তোর ভাবি কি করছে।পাখিদের খাওয়ানোর জন্য নিজে রোদে দাঁড়িয়ে আছে।”
“আরহী বলছে,এটা ওর ছোট বেলার অভ্যাস।পাখিদের খাবার খাওয়াতে ওর খুব ভালো লাগে।”
“অয়ন আমাকে ডেকে বললো,ভাবি রোদে থেকো না। গরম লেগে যাবে। চলে এসো শালিখ পাখি আমি তোমাকে কিনে এনে দিবো। ”
“আয়াস এসে বললো,মা মুগ্ধতার মন কত ভালো দেখো।পাখির কষ্ট দেখেও ও সহ্য করতে পারেনা।”
“এইজন্যই তো তুই বিয়ে করতে চাস নি।”
“মা আমাকে এখন এসব বলে মুগ্ধতার সামনে ফাঁসিয়ে দিও না।আমি সব সময় চেয়েছি বিয়ে করতে।”
মা ছেলের মজার ঝগড়া দেখে আমি হাসছি।
শালিক পাখির জন্য অপেক্ষা না করে বারান্দায় চলে এলাম।গরমে চুলে কখনো তেল ইউজ না করতে করতে চুল কেমন উস্কো খুসকো হয়ে গিয়েছে।মাথার অবস্থা একদম কাকের বাসা।সামনে কিছু ছোট চুল গজিয়ে সে গুলো বার বার উড়ে সামনে আসাতে বেশী গরম লাগছে আমার।বার বার হাত দিয়ে সামনে আসা চুল গুলো উচিয়ে মাথার উপরে দিচ্ছি।শ্বাশুড়ি আম্মা মাথার এমন অবস্থা দেখে আমার হাত ধরে টেনে এনে নিচের সিঁড়িতে বসিয়ে দিলেন আর নিজে উপর সিঁড়িতে বসলেন।শ্বাশুড়ির হাতে একটা স্টিলের বাটি যার মধ্য তেল রাখা আছে।এই দিকে তেল দেখলে ভয় পাওয়া আমি।কিছুতেই তেল ব্যবহার করিনা গরমকালে।তেলে যেনো গরম আরো বেশী লাগে।
“শ্বাশুড়ি মাকে বললাম,আম্মা তেল দিয়ে কি হবে।”
আম্মা মাথায় তেল দেওয়া অলরেডি শুরু করে বললেন,
“তোমার মাথায় লাগিয়ে দিবো।তাহলে চুল গুলো আর উড়ে বেড়াবে না।মাথায় নিয়মিত তেল লাগালে মাথা ঠান্ডা থাকে।”
“এটা কিসের তেল আম্মা।”
“এটা খাঁটি নারকেল তেল মা।গাছের নারকেল থেকে তেল।”
“আমাদের বাড়ি তো নারকেল গাছ নেই আম্মা।তাহলে খাঁটি নারকেল তেল কোথায় পেলেন।”
“আমার বাবার বাড়ি নারকেল গাছের অভাব নেই।বিশাল বড় বাড়ি,নারকেল বাগান,সুপারি বাগান।আমার বাবার অনেক সম্পত্তি ছিলো।”
“এখন ও বাড়িতে কে থাকে আম্মা।”
আয়াসের আম্মা ভীষণ দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।এখনি যেনো কেঁদে ফেলবেন।কষ্টে যেনো বুক ফেঁটে যাচ্ছে উনার।কিছুক্ষণ দম নিয়ে বললেন,
কেউ নেই মা ওখানে।একটা দূর্ঘটনা সব কিছু তছনছ করে ফেলেছে।
মামা আর মামিকে খু*/ ন কেনো করেছিলো আম্মা।কিসের শ/ত্রু/তা ছিলো।
আমার ভাই ছিলো অত্যান্ত ভালো একটা ছেলে।কারো সাথে কোনো ঝামেলা ছিলো না।ভাই রিলেশন করে নিজে পছন্দ করে বাড়িতে না জানিয়ে দুজনে বিয়ে করেছিলো।আমার বাবা এলাকার চেয়ারম্যান ছিলো।বাবা একজন সম্মানীয় মানুষ।জানোই তো মানুষ একটু বদনাম এর সুযোগ পেলে আর ছাড়ে না।এলাকায় বাবার সম্মানের একটা ব্যাপার ছিলো।মানুষ জন ছিঃ ছি করছিলো।হঠাত বাবা ব্যাপার টা মেনে নিতে পারেনি।ভাই কে বাড়িতে উঠতে দেয় নি।তবে আমার সাথে যোগাযোগ ছিলো।ভাই এর বিয়ের বছরেই নির্বচন ছিলো।বিরোধী পক্ষ হেরে যায় নির্বচন এ।বাবা জিতে যাবার পরেই আমাকে বলেছিলো আমার ভাই আরমান শরীফ কে আবার ও ধুমধামের সাথে বিয়ে দিবে।সেরকম ই কথা বার্তা এগোচ্ছিলো।ভাই এর শ্বশুর বাড়িতে বাবা-মা আমরা সবাই যাওয়ার জন্য দিন তারিখ ঠিক করলাম।তার আগের দিন রাতেই কেউ একজন আমার ভাই কে খবর দেয় আমার ভাই যেনো তার বউ কে নিয়ে বাবার সাথে দেখা করে।বাবা দেখা করতে চাইছে তবে কেউ যেনো না আসে।আমার ভাই অত্যান্ত খুশী মনে তার বউ কে নিয়ে সন্ধ্যার পরে দেখা করার উদ্দেশ্য রওনা হয়।কিন্তু আমার কোনো খবর দেয় নি।সে রাতেই ভাই আর ভাই এর বউ কে নির্মম ভাবে খু*৷ ন করা হয়।পরের দিন এলাকার লোক জড় হয়ে যায় চেয়ারম্যান এর ছেলের লা* শ দেখে।সেদিনের পর থেকে চোখের পানি আজ ও মুছে নি আমার।আমার বাবা আর মা ভাই এর মৃ* ত্যুর এক বছরের মাঝেই মারা যান স্ট্রোক করে।একমাত্র ছেলের মৃ* ত্যুর আঘাত সহ্য করতে না পেরে আমার মা বাবা মা*রা যান।বাবার শুধু একটায় আফসোস ছিলো কেনো মানুষ, সমাজ আর সম্মানের কথা ভাবলাম।আজ যদি ছেলের ভালোবাসা মেনে নিতাম তাহলে ছেলেকে হারাতে হতো না।মা সারাক্ষণ বাবাকে দোষারোপ করে গিয়েছেন।বাবা নিজেও অনুশোচনায় ভুগেছেন।নিজ চোখে আমার বাবা-মা ভাইকে ধ্বং *স হতে দেখেছি।জানো মুগ্ধতা আজ এতগুলো বছরে আমি আজ ও স্বাভাবিক হতে পারিনি।চোখের সামনে এক এক করে সবাইকে শে*ষ হতে দেখেছি।আমি বাবার বাড়িতে যায় তিনবার।ভাই আর ভাই এর বউ এর মৃত্যু বার্ষিকী তে আর মা -বাবার।এই দিন গুলো আমার জীবনের সব থেকে কষ্টের মুহুর্ত।আপণ জন হারানোর মতো যন্ত্রণা এই পৃথিবীতে কোথাও নেই। বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হয়।রাত হলেই আমি ঘুমোতে পারিনা।তোমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে ভয়ে থাকতেন আমি নিজের কোনো ক্ষতি না করে ফেলি সেই ভয়।
এতক্ষণ আমি যেনো কোনো গভীর ভাবনায় ছিলাম।ভাবনার অতলে হারিয়ে গিয়েছিলাম আয়াসের আম্মার কথা শুনে।এতটা কষ্ট সহ্য করে কিভাবে বেঁচে আছেন তাহলে আম্মা।গভীর ভাবে ভেবে আমার নিজের ই কাঁন্না চলে এসছে।খুব কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” আম্মা ওরা কারা ছিলো?”
“বাবার বিরোধী দলে যারা ছিলো তারা ই।”
“তাদের কোনো শাস্তি হয় নি।”
“এখানেই বড় কষ্ট মা।আমরা জানি অপরাধী কারা কিন্তু উপযুক্ত প্রমানের অভাবে কিছুই করতে পারিনি।”
“কি বললেন আম্মা।এত বড় পাপের পরেও অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“ঘুরুক মা।ইহকালে মানুষ কে ফাঁকি দিতে পারবে।কিন্তু পরকালে কি হবে।সেখানে কেউ ছাড় পাবে না।এই কালের হিসাব সেই কালে হবেই।”
ভীষণ খারাপ লাগলো আয়াসের আম্মার কথা শুনে।উনার জীবনে কত কষ্ট।নিজেকে কিভাবে সামলান উনি।বেশ মন খারাপ করেই বসে আছি আমি আর আয়াসের মামা-মামির ঘটনা ভেবে যাচ্ছি।এরই মাঝে অয়ন টিউশনি থেকে ফিরে এলো।হাতে কয়েক টা চকবার।অয়ন আমার হাতে আইসক্রিম এর প্যাকেট দিয়ে বললো,
“ভাবি তোমার বোন কে দুইটা দিও।”
“দুইটা কেনো?”
“সে দুইটা চেয়েছে।”
“চেয়েছে?”
“আমি টিউশনি যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম কি খাবেন।উনি বললেন দুইটা চকবার খাবেন।তাই আর কি।”
“অয়নের হাতে তিনটা চকবার দিয়ে বললাম,তোমার উনিকে তুমি তোমার নিজ হাতে দিয়ে এসো ভাই যাও।”
“অয়ন আইসক্রিম নিয়ে বেশ লজ্জামাখা সুরে বললো,আমার উনি মানে ভাবি ব্যাপার টা মোটেও তা নয়।”
“তাহলে কি অয়ন ব্যাপার টা।আরু টা কী?”
“কোন আরু।”
“দেখলাম খাতায় ছবি একে লিখেছো আরু।”
“ওহ ওইটা!ওইটা আমার এক পাড়াতো ফুপ্পি ভাবি।ফুপ্পি বলেছিলো একে দিতে তাই।”
“ওহ আচ্ছা!যাও চকবার গলে যাচ্ছে।”
অয়ন কে তাড়া দিয়ে আমি চকবার নিয়ে আমাদের রুমে এলাম।রুমে ঢুকেই দেখি আয়াস গায়ের গেঞ্জি খুলছে।আমাকে দেখেই বললো,
“ঠিক এই টাইমেই তোমাকে আসতে হলো।”
“কোন টাইমে।”
“আমার জামা কাপড় খোলার টাইমে।এসেই যখন পড়েছো কাম ফার্স্ট ডিয়ার মিসেস।উন্মুক্ত বুক তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।হাগ মি বেবিডল।”
চলবে…,?
(একবার পুরা গল্প কেটে গেছিলো আবার লিখেছি ভীষণ কষ্ট হয়েছে লিখতে।)