#তুমিময়_বসন্তপর্ব২১.
#writer_Mousumi_Akter
আরহীর গাল চেপে ভীষণ হাসির কারণ বোঝার জন্য আরহীর হাত চেপে ধরলাম আর বললাম,
” কি করছিস তুই আমার দেবরের সাথে।”
আরহী এবার হো হো করে হেসে উঠে বললো,
“আরে শোন না কি মজা হয়েছে।তোর দেবর আস্ত একটা বুদ্ধু।আমি হাসতে হাসতে শে*ষ মুগ্ধ।আমি বাস থেকে নেমেই দেখি অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। আমি একটা এসি রুমে বসে বারবার অয়ন কে মেসেজ দিচ্ছি কই আপনি খুজে পাইনা তো?
আয়ন বার বার বলতেছে সে সাদা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি অয়ন কে বলেছি আমি হারিয়ে গিয়েছি আপনাকে খুজেই পাচ্ছিনা অয়ন ভাইয়া।আমি এখন হারিয়ে গেলে আমার কি হবে অয়ন ভাইয়া।
ছেলেটা রোদে দাঁড়িয়ে আমাকে খুজতে হয়রান।একবার এদিক একবার সেদিক।ছেলেটা যখন ভীষণ ক্লান্ত তখন তার কাছে গিয়ে বললাম,
“এইযে এক্সকিউজ মি!”
“হুম।”
“গরম নাকি খুব আজ। ”
“হুম।”
“কাউকে খুজছেন।”
“হুম।”
“পাচ্ছেন না। ”
“না।”
“না আর হুম বলছেন কেনো?”
সে বেশ বিরক্ত কন্ঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কে আপনি? আর কি বলবো আপনাকে।”
“আপনার বউ আমি।আমার সাথে যাবেন।”
“আপনার সাথে যাবো মানে কে আপনি?আশ্চর্যজনক মেয়ে তো আপনি?”
“রেগে যাচ্ছেন কেনো?”
“তো রাগবো না।”
“এখানে কেনো এসছেন আপনি?”
“আমার এক আত্মীয়কে পিক করতে।”
“গাড়ি থেকে তো সবাই নেমে গিয়েছে তো আপনি কাকে পিক করতে এসছেন।”
“উনি আসলে আমার কাছে আসবেন,আর জানেন আমি অপেক্ষা করছি।”
“তাকে দেখলে চিনবেন।”
“চিনবো?”
“আমার দিকে ভালোভাবে দেখুন।”
“মেয়েমানুষ এর দিকে তাকাই না।
”
“কেনো?বউ এর নিষেধ। ”
“কি সমস্যা আপনার?আজে বাজে প্রশ্ন করছেন কেনো?”
“লুক এট মি!এইযে আমি আরহী।আমাকে দেখেও চেনা যায় না।”
“আপনি সিরিয়াসলি আপনি।”
“হ্যাঁ সিরিয়াসলি আমি।ওই এসি রুমে তখন থেকে বসে আপনাকে দেখছি।কিভাবে খুজছেন আমাকে।আবার চোখের সামনে দেখেও চিনছেন না।”
“মানে বসে থেকে আমাকে এই রোদে হয়রান করেছেন।”
“তো কি করবো।আপনি নাকি আমাকে দেখলে চিনবেন।এই হলো তার নমুনা।”
“আজকাল মেয়েরা যেভাবে সেল্ফি তোলে বাস্তব আর ছবির অবস্থা দেখে বোঝার কি কোনো উপায় আছে।চলুন এবার।”
“আমার ব্যাগ টা ধরুন।”
“এত ভারী কি আছে এতে।”
“খুব একটা ভারী না চলুন।”
“আরহীকে বললাম,আমার দেবর এমনিতেই অনেক শান্তশিষ্ট ছেলে।সে মেয়েদের সাথে বেশী কথা বলেনা।শান্তশিষ্ট ছেলেটার এই হাল করেছিস।”
“করবোই তো বিয়াইসাব বলে কথা।”
“চল,ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবি।”
আম্মু আর খালামনি দুই বস্তা ভরে জিনিসপত্র পাঠিয়েছে আমাদের জন্য।
অয়ন,আরহী দুজনেই ফ্রেশ হয়ে ডায়নিং এ এলো।খাবার দিতে দিতে বললাম,
“অয়ন আরহী কি অনেক ঘুরিয়েছে তোমাকে।”
“আগে জানলে আমি যেতাম না ভাবি।”
“বিয়াইসাহেব খুব কষ্ট দিয়েছি বুঝি।”
“না। ”
“আপনার কিন্তু বউ টিকবে না।”
“কেনো?”
“কথা এত কম বললে বউ বোবা ভাববে।”
“বিয়ে কে করছে যে বউ টিকবে না।”
“বিয়েই করবেন না ওমা।”
“হুম।”
“হুম কি আপনার জাতীয় ভাষা।”
“হুম।”
“আপনার একটা কিউট নেইম দিয়ে দিলাম আমি সে হলো হুম সাহেব।এখন থেকে হুম সাহেব ই আপনার নাম।”
“এত কথা বলেন গরম লাগেনা।”
“টাকা তো লাগেনা।টাকা লাগলে বাধ্য হয়েই কম কথা বলতাম মিষ্টার হুম সাহেব।”
খাওয়া শেষ করে আরহী বললো,
“দুলাভাই কোথায় মুগ্ধ।”
“উনি অফিসে?”
“অনেক্ষণ দেখিস না পরাণ পুড়ছে না।”
“অনেক্ষণ কোথায় সে তো অফিসে গিয়ে সারাক্ষণ ভিডিওকল দিয়ে রাখে।মানে আমি বুঝিনা তার কি একটুও বিরক্ত লাগেনা আমার মুখ দেখতে। সারাক্ষণ কি দেখেন উনি।”
“মুগ্ধ হয়ে মুগ্ধতার রূপ দেখেন উনি?কি দারুণ না।”
“আমার নাম নিয়ে সবাই প্রাঙ্ক করো তাইনা।”
“সন্ধ্যার পরপর ই আয়াস ভিডিও কল দিলো।আরহী বললো,মুগ্ধ তোর জানেমান ফোন দিয়েছে আমার অফিসার দুলাভাই।”
“আরহীর কথা শুনে মৃদু হাসলাম আর বললাম,তোর দুলাভাই এর জব কবে চলে যাবে শুধুমাত্র এই ফোন করার জন্য।সারাক্ষণ তার এই একটায় কাজ পাঁচ মিনিট পর পর ফোন করা।”
“নে ফোনটা রিসিভ কর।”
ফোনটা রিসিভ করে বেলকনির দিকে গেলাম।কেননা আয়াস যে ফাজিল আরহীর সামনে কি না কি বলে ফেলবে তার ঠিক নেই।আরহী আমাকে ক্ষেপাবে।
ফাঁকা বেলকনিতে লাইট অন করে ফোনের দিকে তাকালাম।আয়াস চেয়ার হেলান দিয়ে বসে আছে।শার্টের বোতাম দুইটা খোলা রাখা।হাতা গোটানো, মনে হচ্ছে প্রচন্ড গরম লাগছে তার।আমার দিকে তাকিয়ে জিভ দিয়ে ভেঙাচ্ছে আয়াস আর মৃদু মৃদু হাসছে।সে ফোন করলে আমার ভীষণ ভালো লাগে কিন্তু তার সামনে এমন ভাব করি যেনো সে ফোন করাতে আমি ভীষণ বিরক্ত আমি।বেশ ভাব নিয়ে বলি বারবার ফোন করার কি প্রয়োজন।কিন্তু আমি সারাক্ষণ তার ই ফোনের অপেক্ষা করি।আজ ও তাই করলাম।তাকে বললাম,
“কি হয়েছে মাত্র ই ফোন কাটলাম। আবার ফোন দিয়েছেন কেনো?”
আমার এমন বিরক্তিমাখা কথার তোয়াক্কা না করে মুগ্ধ আর আকৃষ্ট করা সুরে আমায় ডাকলেন,
“মুগ্ধতা।”
তার কন্ঠে কিছু তো আছে।বিশেষ কিছু আছে।তার কন্ঠে আমার নাম উচ্চারণ টা আমাকে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে তার দিকে।আমার ভেতরে তাকে নিয়ে অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়।আমি মিহি কন্ঠে বললাম,
“বলুন।”
সে আবার আমাকে সেই একই সুরে ডাকলো,
“এই মুগ্ধতা এই।”
“শুধু ডাকছেন কিছুই তো বলেন না।”
“এই মুগ্ধ শোনো না।”
“বলুন না।”
“মুগ্ধতা মেরি জান,আই লাভ ইউ।”
সে কি এইভাবে ডেকে ডেকে আমাকে তার প্রেমের জোয়ারে ভাষাতে চাইছে।এত আকৃষ্ট করা কন্ঠে ডাকার কি প্রয়োজন।আমি সিওর শুধু আমি নয় যে কোনো নারী ই এমন ভাবে ডাকলে প্রেমে পড়ে যাবে।ধীরে ধীরে দিনে দিনে সময়ের সাথে সাথে আমি কখন কিভাবে তাকে ভালবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।আর এমন চমৎকার ভাবে যে মানুষ টা কারণে অকারণে প্রেম নিবেদন করতে থাকে।তাকে ভাল না বেসে থাকা যায়।অভির সাথে আমার ভালবাসা ছিলো কিনা জানিনা।কিন্তু সেদিনের মুগ্ধতা অভির জন্য পা* গল ছিলো।কিন্তু আজকের মুগ্ধতার বেঁচে থাকার কারণ আয়াস।আজ আমি বুঝি স্বামি নামক মানুষের থেকে প্রিয় আর কেউ হতে পারেনা।তার সাথে ভালবাসা উপর থেকেই জুড়ে দেওয়া হয়।দুই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।আয়াস শিষ বাজিয়ে গানের সুর তুললো,
“চোখের স্বপন তুমি
বুকের কাঁপণ তুমি
কত আপণ তুমি জানা নাই।
তোমাকে চাই শুধু তোমাকেই চাই
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।”
একটা মানুষের শিষ দিয়ে তোলা গানের সুর ও এতটা সুন্দর হতে পারে।নিজের অনুভূতি আড়াল করতে বললাম,
“বিরক্ত হচ্ছি আমি।”
“আমি তাহলে সাকসেস।আমি তো সে চেষ্টায় করছি বেবিডল।বিরক্ত হয়ে বাসা ছুটে আমার অফিসে চলে এসো।ক্লান্ত শরীরে প্রিয়তমার মুখ দেখলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে ফুল এনার্জি ফিরে পাবো।”
“খেয়ে আমার কাজ নেই।আমি ছুটে যাবো উনার অফিসে।”
“আসতে হবে না বাট তাকাও আমার দিকে।”
“তার দিকে তাকিয়ে বললাম কি?”
ভীষণ লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরে তাকালাম আমি।আয়াস দুই ঠোঁট এক জায়গা করে উচ্চারণ করলো,
“উম্মম্মম্মম্মম্মম্মমাহ।”
ঠোঁটে শব্দ করে ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিলো।মনে হচ্ছে লজ্জায় এক্ষুণি ফোনটা পড়ে যাবে আমার হাত থেকে।মাথা নিচু করে বললাম,
“ছিঃআশে পাশে যদি কেউ থাকতো।”
“আবার দেই তাহলে।”
লজ্জায় দ্রুত ফোন কেটে দিলাম
ইস উনার কি একটুও লজ্জা নেই।হুট হাট এসব করেন।
এরই মাঝে কলিং বেল বেজে উঠলো।দরজা খুলে দেখি একটা ছেলে।আমার হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললো,
আয়াস স্যার দিয়েছেন।আয়াসের ফোন এক্ষুনি কাটলাম।তাহলে কার্ড কিসের।কার্ড টা খুলে দেখি লেখা আছে।
“বেবিডল,
না আজ তোমার জন্মদিন,না ভ্যালেন্টাইন্স ডে,না কোনো স্পেশাল ডে।এটা জাস্ট একটা লাভ কার্ড আমার পক্ষ থেকে আমার লাভের জন্য।হঠাত এটা হাতে পেয়ে তোমার মুখে যে হাসি ফুটবে সেটা দেখার জন্য আমার এটা পাঠানো।এই কার্ডের একটায় মানে এটা আমার ভালবাসার বার্তা তোমার জন্য।আমি জানি তুমি এটা পড়ার সময় মৃদু হাসবে।এক লাইন বারবার পড়বে।ভীষণ ভাল অনুভূতি হবে আমার জন্য। আই লাভ ইউ মুগ্ধপরী,আই রিয়েলি লাভ ইউ।এখনো তোমার মুখে ভালবাসি কথাটা আমি শুনতে পাইনি।তবে আমি জানি তুমি বলবে,খুব শিঘ্রই বলবে।তোমার মনের কথা আমি বুঝে গিয়েছি।”
(খুব কি অগোছালো হয়েছে।মাঝে মাঝে হয়ে যায় অগোছালো।)