#তুমিময়_বসন্ত পর্ব১২.
#writer_Mousumi_Akter
–আয়াসের অফিস কক্ষে নক না করেই লম্বা, ফর্সা,সুন্দরী একটা মেয়ে প্রবেশ করলো।মেয়েটি আয়াসের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।আয়াস ও স্বভাবসুলভ হাসলো।মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সর্বপ্রথম নজর গেলো নেইম প্লেটের দিকে।স্পষ্ট আর ক্লিয়ার ভাবে লেখা আছে সারিকা।নাম টা পড়া মাত্র মেয়েটি আমার অপছন্দের লিস্টে চলে গেলো কিন্তু কেনো সেটা জানিনা।আমি কোনো কথা বলছিনা চুপচাপ বসে আছি চেয়ারে।
সারিকা রুমে প্রবেশ করেই আয়াসের হাত ধরে বললো,
“তুমি আর এত কাজের চাপ নিও না আয়াস। তোমার জন্য চিন্তা হয় আমার। তুমি অসুস্হ হয়ে পড়লে আমি ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।প্লিজ আয়াস নিজের কথা ভাবো।নিজের জন্য না হোক অন্য কারো জন্য তো ভাবো।কেউ না কেউ তো আছে যে তোমার সুস্থতায় হাসে,তোমার অসুস্থতায় কাঁদে।অন্তত তাদের কথা নিজের খেয়াল রেখো।তোমার কিছু হলে তার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় আয়াস।”
আয়াস আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কথা কেউ ভাবে কই আগে তো জানতাম না।”
“আশে পাশে তাকালেই বুঝতে পারবে কেউ ভাবে কিনা।”
আয়াস আবার ও আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে সারিকার থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আশে পাশেই তো তাকিয়ে আছি। তার চোখ তো কিছুই দেখছি না।”
“আমার চোখের দিকে তাকাও আয়াস।”
আয়াস সারিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইম সারিকা তোমার চোখের মনি দুটো একটু বাদামী।আরেক টু কালো হলে বেশী বেটার লাগতো।”
“আয়াস তুমি সব সময় কথা ঘুরাও কিন্তু।”
তাদের এসব দেখে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার।কিন্তু রাগ টা প্রকাশ করতে পারছিনা।কিভাবে প্রকাশ করবো।আয়াস ভাববে আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছি।ব্যাপার টা মোটেও এমন নয়।আমার জাস্ট রাগ হচ্ছে, আর সেটা অকারণ রাগ।মাঝে মাঝে মেয়েদের এমন হয় নিজে ভাল বাসুক আর না বাসুক তার পাশে অন্য কাউকে দেখলে ব্যাপার টা কেউ মেনে নিতে পারেনা।আমার ও সেইম অনুভূতি হচ্ছে।আমি ভালবাসি না ঠিক আছে তাই বলে কি আয়াসের পাশে অন্য মেয়ে এসে ঘুরঘুর করবে।আমি কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ালাম চট করে।
“আর বললাম আমি এখন আসি,বাসায় যাবো।”
সারিকা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“মুগ্ধতা রাইট।আসলে আয়াসের জন্য একটু চিন্তিত ছিলাম তাই তোমাকে দেখেও কথা বলা হয়ে ওঠেনি।তারপর কেমন আছো বলো মুগ্ধতা?নিশ্চয় ই অনেক ভালো।”
সত্যি বলতে আমার কোনোপ্রকার হাসি পাচ্ছেনা।আমার হাসি পাওয়ার কথা ও না।মনে প্রচন্ড রাগ নিয়ে আমি অনিচ্ছাকৃত একটা হাসি দিয়ে বললাম,
“কেনো অনেক ভালো থাকার কথা কেনো?”
“আয়াসের মতো ভালো স্বামি আছে যার তার তো এমনিতেই ভালো থাকার কথা।”
“ওহ ধন্যবাদ। আমাকে এখন যেতে হবে।বাসায় একটু কাজ আছে। ভালো থাকবেন কথাটা বলেই দরজা খূব জোরে খুলে বেরিয়ে এলাম।”
বাইরে আসতেই কানে আয়াসের কথা ভেষে এলো।আয়াস দাঁতে দাঁত চেপে বলছে,
“আমার হাত ধরার কি প্রয়োজন ছিলো সারিকা।”
“কেনো মুগ্ধতা ছিলো বলে।”
“মুগ্ধতা থাকা আর না থাকা ফ্যাক্ট নয়।”
“তাহলে কি মুগ্ধতার মাঝে জেলাসি এসেছে।”
“জাস্ট সাট আপ সারিকা। এখানে মুগ্ধতার জেলাসি ও ফ্যাক্ট নয়,মুগ্ধতার আমার সামনে থাকাটাও ফ্যাক্ট নয়।ফ্যাক্ট আমার হাত কেনো ধরেছো তুমি।মুগ্ধতার সামনে হোক,আর আড়ালে হোক অন্য কোনো মেয়ে আমার হাত ধরুক আমি সেটা মেনে নিবোনা।এই রাইট শুধু মুগ্ধতার ই আছে।মুগ্ধতা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের আমাকে স্পর্শ করার অধিকার নেই।মুগ্ধতা আর আমার পবিত্র সম্পর্ক নষ্ট হতে আমি দিবোনা।”
“কিন্তু আয়াস তুমি কেনো মুগ্ধতার জন্য এতটা পাগল।ও তোমায় ভালবাসে না আয়াস,আর কখনো বাসবে ও না।তোমাকে একদিন হলেও আমার কাছে ফিরে আসতে হবে।”
“মুগ্ধতা আমায় ভালবাসবে। ”
আমি আর না দাঁড়িয়ে সোজা হেঁটে চলে এলাম।মনের মাঝে এটুকু শোনার পর কিছুটা ভালো লাগলো তবুও রাগ হচ্ছে।আমার রাগের কোনো কারণ নেই তবুও রাগ হয় মাঝে মাঝে।অকারণ রাগ কেনো হয় জানিনা।রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি অটো বা রিক্সার জন্য। কিছুক্ষণের মাঝেই দেখি আয়াস আমার পিছু পিছু আসছে।পুরুষ মানুষের হাঁটা দু’লাফে আমাকে ধরে ফেলেছে।
আমি আয়াস কে বললাম,
” কি ব্যাপার চলে এলেন যে অফিস শেষ। ”
আয়াস বললো,
“হুম উপরের অফিসার নিজে থেকেই ছুটি দিয়েছেন।”
“এখন কি বাসায় যাবেন।। ”
“না। ”
“তাহলে?”
“তোমাকে নিয়ে একটু শপিং যাবো।”
“আমি কোনো শপিং টপিং যেতে পারবো না।”
আয়াস বেশ ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি কি রেগে আছো মুগ্ধতা।”
আমার আয়াসের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম,
“নাতো। ”
“তোমার মুখ দেখে তেমন মনে হচ্ছে।”
“না গরমে অস্হির লাগছে সেজন্য।”
আমার আসলেই ভীষণ রাগ হচ্ছে কিন্তু বলতে পারছি না।রাগে সব কিছু ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা।কিভাবে প্রকাশ করবো।এই রাগ প্রকাশের কোনো অধিকার আমার নেই।এখনি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিতে মন চাচ্ছে আমার।
আয়াস আমাকে বললো,
“চলো রিক্সায় একটু ঘুরি।দুজনের রিক্সায় ঘোরার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের।”
এক বাক্য বলে দিলাম “না আমি যাবোনা।”
“আহা!চলোনা ভালো লাগবে।”
আয়াস একটা রিক্সা ডাকলো।রিক্সাওয়ালা আয়াসের ডাকে ভয়ে ভয়ে আসলো।রিক্সাওয়ালার চোখে মুখে ভীষণ ভয়।ভাবছে আয়াস হয়তো অন্য কিছু বলবে।আয়াস রিক্সাওয়ালার মুখ দেখে হেসে দিয়ে বললো আমাদের একটু নিয়ে চলুন।যেদিকে যেতে চায় নিয়ে যাবেন।ভাড়া নিয়ে ভাববেন না ঠিক আছে।রিক্সাওয়ালা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললো চলুন স্যার।আয়াস আমার হাত ধরে টেনে রিক্সায় উঠালো।রিক্সায় ওঠার পর আয়াস বললো,
“হুডি তুলে দিবো।”
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললাম,
“জানি না।”
“এবার ও কি অসহ্য গরমের জন্য বলছো।”
“জানি না।”
“আয়াস রিক্সার হুডি তুলে বললো,মনিহারের দিকে চলুন সিনেমা দেখবো।”
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমি কোনো সিনেমা দেখবোনা।”
“পোড়ামন মুভি চলছে দেখে আসি।মন পুড়ার মতো যন্ত্রণা আর কোনো কিছুতে নেই তাইনা মুগ্ধতা।”
“আমি কিভাবে জানবো আমার কি কখনো মন পুড়েছে নাকি।”
“ওহ আচ্ছা এই হচ্ছে কাহিনী তোমার তাহলে কখনো মন পোড়ে নি।”
“না।”
“তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ড তার জন্য মন পোড়েনি।”
“না মন পুড়বে কেনো?সেকি আমায় রেখে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করেছে নাকি।মন পুড়লে তার পুড়বে বিকজ আমি তাকে রেখে আপনাকে বিয়ে করেছি।”
“পোড়ামন এর বিশ্লেষণ টা জানতে পেরে ভালো লাগলো।”
সারিকাকে নিয়ে কিছু বলতে না পারলে ভালো লাগছে না।আবার আয়াস ভাববে আমি তার প্রেমে পড়েছি।কি মুশকিল।অথচ সারিকাকে নিয়ে কিছু বলতে না পারলে রাগ কমছে না।দম নিয়ে চুপচাপ বসে৷ আছি।
কিছুক্ষণ পরে বললাম,
“আপনার ফ্রেন্ড সারিকা একটু গায়ে পড়া টাইপ আছে তাইনা?”
“কেনো?”
“আপনি খাইয়ে দিতে চাইলেন সে রাজি হয়ে গেলো।”
“ফ্রেন্ড না এইজন্য।”
“আমরা বুঝি কারো ফ্রেন্ড না।আমাদের বুঝি কোনো ফ্রেন্ড ট্রেন্ড নেই।”
“আমার একটু বেশী ক্লোজ।”
আমাদের তো আর ক্লোজ ফ্রেন্ড নেই।আমরা এসব বুঝিনা তাইনা।আমাদের ফ্রেন্ডরা তো এসব বলে না আর বললেও জীবনেও রাজী হতাম না।”
“ওহ আচ্ছা!”
“সারিকা একটু গায়ে পড়া আছে আপনি যায় বলুন না কেনো?”
আয়াস ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আয়াসে চাহনি একটু সুবিধার লাগছে না।এক্ষুনি বলে উঠবে তুমি কি জেলাস ফিল করছো।আয়াসের ঠোঁট কাটা এক্ষুনি বলে উঠবে আমাকে আবাত ভালবেসে ফেলোনিতো।কি অসহ্য একটা মানুষের পাশে বসে আছি।
আয়াস একটু মৃদু হেসে বললো,হঠাত সারিকা কে নিয়ে পড়লে কেনো?তোমার সাথে তো খারাপ ব্যাবহার করেনি।বরং আরো ভালো ব্যবহার করেছে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বললাম,
“কোনো মুভি দেখতে ইচ্ছা করছেনা।অন্য একদিন দেখবো।ভালো লাগছেনা কিছু।রিক্সাওয়ালাকে বললাম রিক্সা ঘুরান প্লিজ।”
আয়াস আর জোরাজুরি করলো না।রাস্তার মোড় থেকে কাশন দিয়ে আমড়া আর পেয়ারা মাখা বেশী করে কিনলো আয়াস।কিছুক্ষণের মাঝেই আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় এসে রিক্সা থামলো।আয়াস রিক্সাওয়ালা কে টাকা দিয়ে বিদায় করে দিলো।মাত্র এতটুকু রাস্তা ঘুরলাম ১৫০ টাকা দিয়ে দিলো।দেখে মনে হচ্ছে আয়াসের গরীব মানুষের উপর ভালোই মায়াদয়া আছে।
যে দোকান থেকে ফোন করেছিলাম দোকানদার আমাকে ডাকলো,
“আপা।”
আমি চমকে গিয়ে তাকালাম।সাথে আয়াস আছে।দোকানদার কি আয়াসের সামনে বলে দিবে আমি ফোন করতে এসছিলাম।বেশ ভয় পেয়ে গেলাম।চোখে মুখে ঘাবড়ে যাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট আমার।আয়াস কিছু বলার আগেই বললাম,শুনুন না যাওয়ার সময় টাকা নিতে ভুলে গেছিলাম উনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম।
“আয়াস দোকানদার এর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,কি ব্যাপার সুমন কেমন আছো?তোমার ভাবী কত টাকা নিয়েছিলো।”
দোকানদার কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম, “একশ টাকা নিয়েছিলাম।”
আয়াস একশ টাকা দিয়ে বললো”, তোমার ভাবী যা চায় দিয়ে দিবে টাকা নিয়ে ভাববে না কেমন।যা নিতে আসুক তুমি দিয়ে দিবে।আমি টাকা দিয়ে দিবো।”
“ঠিক আছে স্যার।”
আসলে মিথ্যা কথা কখনো গুছিয়ে বলা যায়না।হাতে এক টাকা থাকতেও টাকার কথা বললাম।ভাজ্ঞিস আয়াস খেয়াল করেনি।কিন্তু এই ছেলেটা আমাকে ডাকলো কেনো?আমি যে অভিকে মেসেজ করে গিয়েছিলাম তার কি কোনো উত্তর দিয়েছে।মনের মাঝে আবার ও তোলপাড় শুরু হলো ভীষণ ভাবে।আমাকে যে ভাবেই হোক জানতেই হবে।
চলবে,,