#তুমিময়_বসন্ত পর্ব১৮.
#writer_Mousumi_Akter
আমি আমার মা-বাবার বিয়ের আগে হয়েছি কথাটা আমি সহজ ভাবে নিতে পারলাম না।চরম অপমানে লাগলো আমার কথাটা।এটা কোনো ছোট মোট কথা নয় যে আমি কেয়ার করবো না।আমার জন্ম নিয়ে কথা উঠেছে।দুই ফ্ল্যাটের মাঝের গলি গিয়ে একভাবে পায়চারী করে যাচ্ছি আমি।হাতের মুঠোয় ওড়না নিয়ে কচলাতে কচলাতে এক মুড়ো থেকে আরেক মুড়ো পর্যন্ত হাঁটছি আমি।অস্হির লাগছে ভীষন যে কেনো ওই মহিলা কে ডেকে তখন জিজ্ঞেস করলাম না।উনাকে আমার দুই চার টা কথা শুনিয়ে দেওয়ায় উচিত ছিলো।এর ই মাঝে আরহীর কথা মনে পড়লো।অয়নের এনে দেওয়া ফোন থেকে আরহীকে কল করলাম।আরহী ফোন রিসিভ করতেই আমার কন্ঠ শুনে স্পষ্ট ডাকলো,
‘মুগ্ধতা।’
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
‘যাক তাহলে চেনা গেলো।’
‘এইভাবে বলছিস কেনো মুগ্ধ। ‘
‘অভিনেত্রী দের সাথে অভিনয় এর সুরেই বলতে হয়।তাহলে তাদের বুঝতে ভীষণ সুবিধা হয়।’
‘এখনো রেগে আছিস।’
‘কেনো রাগ মেটার মতো কিছু হয়েছে।’
‘মুগ্ধ প্লিজ রাগ করিস না।
আয়াসের সাথে কেমন চলছে।’
‘আয়াসের ব্যাপারে পরে কথা বলছি।আগে তোর আর আমার ব্যাপারের কথা শেষ হওয়া প্রয়োজন।আচ্ছা আরহী কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে বল আমায় প্লিজ।কেনো মানে কেনো এত প্লান প্রগ্রাম করে আয়াসের সাথে আমার বিয়ে টা দিলি প্লিজ বল আমায় আরহী।নয়তো চিন্তায় চিন্তায় পা★/ গ*/ ল হয়ে যাবো আমি।আমার ঘুম হয়না রাতে চিন্তায়। কি কারণ আরহী?কিসের রিভেঞ্জ।’
‘কেনো এত কিছু জানতে চাস মুগ্ধ।তোর কিসের এত রাগ আমার উপর।অভির জন্য?অভিকে নিজের জীবনে পাস নি বলে।’
‘আগে হয়তো এটাই কারণ ছিলো।কিন্তু এখন এটা কোনো কারণ নয়।এখন জাস্ট কিওরিসিটি থেকে জানতে চাইছি।’
‘আগে কারণ ছিলো এখন কি হলো মুগ্ধ।’
‘তুই জানিস না আরহী অভি কত বড় প্রতারক। অভি বিবাহিত হয়েও আমার সাথে অভিনয় করেছে।ছিঃভাবলেও ঘৃনা করে আমার।এমন একটা ছেলেকে ভালবাসতাম আমি।আমি ভীষণ ঘৃনা করি অভিকে।’
‘আয়াসের থেকেও বেশী ঘৃনা করিস।’
‘আয়াস এর প্রতি যে ঘৃনা ছিলো সেটা অভির উপর চলে গিয়েছে আর অভির…’
‘কি মুগ্ধ আর অভির প্রতি যে ভালবাসা ছিলো সেটা আয়াসের প্রতি চলে গিয়েছে তাইনা?’
‘না না তেমন ব্যাপার না।’
‘তাহলে ব্যাপার টা।’
‘ওই রকম ফাজিল লোক আমি জীবনে দেখিনি আরহী।’
‘কেনো?খুব ফাইজলামি করে বুঝি আমার জিজাজি।’
‘আরে ধ্যাত। ‘
‘না না তোকে বলতেই হবে।চুমু টুমু দিয়েছে তো।দিনে কয়টা দেয় আর রাতে কয়টা দেয়।’
‘আরহী আমি ফোন রাখছি।কিসব অসভ্য কথা বলছিস তুই।উনি আমায় চুমু দিবেন কেনো?’
‘উনি ছাড়া আর কে দিবেন শুনি।যায় বলিস আয়াস কিন্তু অভির থেকে অনেক ভালো।’
‘আরহী আমি রিকুয়েষ্ট করছি আয়াসের সাথে অভির তুলনা করবি না কখনো।অভির সে যোগ্যতা নেই যে আয়াসের সাথে তুলনায় আসবে।আমার সাময়িক রাগ ছিলো এটা ঠিক আমি ভুল বুঝেছিলাম।তবে আয়াসের সাথে মাত্র কদিন থেকেই আমি বুঝেছি অভির মাঝে সেসব কোনো গুন ই ছিলো না যা আয়াসের মাঝে আছে।আয়াস মুখে একটু ফাজিল আছে আমাকে রাগানোর জন্য সেটা করে তবে আসলে ও অমন নয়।আয়াসের প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।’
‘আর আমার প্রতি আছে।’
‘হুম আছে কি লুকিয়েছিস আমাকে বল।’
আরহী এবার ভীষণ জোরে কেঁদে দিয়ে বললো,
‘আই লাভ ইউ মুগ্ধতা।আমি আর আয়াস বা পরিবার যা করেছি তোর ভালোর জন্য করেছি।বসন্ত উৎসব এ আয়াস তোকে দেখেছিলো সেখান থেকে তোকে ভাল লেগেছিলো।আয়াসের এক পলকেই ভালবাসা হয়ে গেছিলো।এইদিকে তুই অভির সাথে পালিয়ে যাবি আমি কিভাবে মেনে নিতাম অভির মতো একটা খারাপ ছেলের সাথে তোর বিয়ে হোক।পরিবারের কেউ ই তোর ক্ষতি হোক সেটা মেনে নিতে পারেনি।তাই তো সবাই প্লান করেই তোর বিয়েটা আয়াসের সাথেই দিলাম।’
আরহীর কাঁন্না দেখে আমিও কেঁদে দিয়ে বললাম,
‘কিসের রিভেঞ্জ এর কথা বলছিলি তুই বল আমাকে।আমি ফোনে কথা বলতে শুনেছিলাম।’
‘ওইযে অভি মিথ্যা বলতো তোকে।ওইটায় ছিলো রিভেঞ্জ।’
আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে অন্য কারণ আছে।আরহী কিছু লুকাচ্ছে।আমি আর প্রেসার দিলাম না।যেহেতু বলতে চাইছেনা প্রেসার না দেওয়াটায় ভালো হবে।
‘কোনো কারণ নেই মুগ্ধ।এবার বল মাফ করেছিস তো আমায়।’
‘মাফ করবো কিন্তু তোকে কাল ই যশোর আসতে হবে।আমার একা একা বোরিং লাগে।বল আসবি।’
‘আচ্ছা আসবো বাট চিনিনা।’
‘আয়াস তোকে এগিয়ে নিয়ে আসবে আয়াস না গেলেও অয়ন যাবে।আমার হ্যান্ডসাম দেবর আছে দেখলে ক্রাশ খেয়ে ফেলবি কিন্তু।’
‘তাহলে তোর দেবর কেই পাঠাস।’
ফোনে কথা শেষ করে ফোন কাটতেই দেখি আয়াস দুষ্টুদের মতো হাসছে।আমি আয়াসের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম সে হাসছে কেনো এইভাবে।কাহিনী কি?আয়াস ধীরে ধীরে আমার কাছে চলে এলো।এবার আয়াস আমার পুরোপুরি কাছে এসে বললো,
‘শুনলাম কিসব চুমুটুমু দেওয়ার কথা হচ্ছিলো ফোনে।কেউ কি আমায় চুমু দিবে।’
কেউ কি আমায় চুমু দিবে তারা কথার মাঝে ভীষন কিউটনেস ছিলো।তবে মারাত্মক ফাজিল এই আয়াস।
কি ফাজিল এই লোকটা ভাবা যায় মুখে কি কিছুই বাঁধেনা।বেশ লজ্জা ও পেলাম তার কথায়।আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।
উনি ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বললেন,
‘কেউ চুমু দিতে চাইলে দিক। চুমু দেওয়ার ফিলিংস হচ্ছে অথচ চুমু দিবে না কেনো?ব্যাপার টা বড়ই কষ্টকর।’
এবার আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
‘কে আপনাকে চুমু দিতে চাইছে যতসব বাজে কথা।কিভাবে পারেন মনগড়া কথা বলতে।’
‘তার মানে তুমি হচ্ছো সেই লোক চুমু দেওয়ার ফিলিংস হচ্ছে হোক তবুও চুমু দিবানা।’
হাতের আঙুল উঁচু করে উনার দিকে চোখ রাঙাতেই উনি আমার হাত ধরে ওয়ালের সাথে চেপে ধরে ডান গালে ওষ্ট ডুবালেন, তারপর বাম গালে ওষ্ট ডুবিয়ে ছেড়ে দিলেন।সময় টা ছিলো মাত্র কয়েক সেকেন্ড।কিন্তু আমার কাছে মনে হলো কয়েক ঘন্টার তুফান বয়ে গেলো।অদ্ভুত ভাবে কেঁপে উঠলাম।দ্বীতীয়বারের মতো উনি এমন করলেন।আমি হাত দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললাম,
‘এটা কি হলো।’
‘যেটায় হলো জানি তোমার ভালো লেগেছে।তুমি স্বীকার করছোনা লজ্জায়।’
‘কচু ভালো লেগেছে।একটুও লজ্জা নেই আপনার।’
‘তোমাকে দেখলে লজ্জা নামক কোনো অনুভূতি যে আছে সেটায় ভুলে যায়।’
‘নাম্বার ওয়ান নির্লজ্জ।’
‘নিজের বোন কে শুনলাম ফোন দিয়ে বলছো উনি আমায় চুমু টুমু দেন না তাই দিলাম।তোমার ফ্যামিলি যদি জানে তাদের মেয়েকে না খাইয়ে রেখেছি ব্যাপার টা খুউউউউউউউব ই বাজে দেখাবে।আমি তাদের কথা দিয়েছিলাম তাদের মেয়েকে কখনো না খাইয়ে রাখবো না।’
আয়াসের কথা শুনে সিরিয়াসলি প্রচন্ড হাসি পেয়েছে আমার।হাসিতে পেট ফেটে যাবার উপক্রম।হাসি আটকে রাখতে না পেরে দ্রুত আয়াসের সামনে থেকে চলে এলাম।রুমে এসে খানিক্ষন হেসে নিলাম।মানে উনি পারেন ও বটে।এরই মাঝে আয়াস রুমে প্রবেশ করলো।আয়াস কে দেখে বেশ স্বাভাবিক ভাবে বসলাম মুড অফ করে।
‘আয়াস আমাকে দেখে বললো মুড অফ কেনো?’
‘আপনাদের ওই ডারলিং যাকে আদর করে ডারলিং ডাকছিলেন।উনি আমাকে বলেছে আমি নাকি আমার মা বাবার বিয়ের আগে হয়েছি।আমি যদি কিছু বলতাম তাহলে রটিয়ে বেড়াতো আয়াসের নতুন বউ ঝগড়ুটে।’
‘উনি এটা বলেছেন,নিজ কানে শুনেছো।’
‘না শুনলে কি আর বলছি।’
‘চলো আমার সাথে।’
‘কোথায়?’
‘আহা চলোতো।’
চলবে?…..