#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-৩২

0
389

#বিষাক্তফুলের_আসক্তি পর্ব-৩২
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা

সবার ডিনার শেষে টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে মৌ। দু’তালায় দাঁড়িয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে শান। মৌ আর স্বাভাবিক হয়নি। অনেক খোঁজেও শায়িনীকে না পেয়ে মৌ দিনদিন আরো অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছিলো। শান বাধ্য হয়ে তাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যায়, আগের বাসা চেঞ্জ করে, এতে একটু স্বাভাবিক হলেও পুরোপুরি হয়নি। ডক্টর শানকে পরামর্শ দেয় আরেকটা বাচ্চা নেওয়ার। তারপর তাদের কোল আলো করে আবার আসে এক পুত্র সন্তান মাহিম আহমেদ। মৌ আরো একটু স্বাভাবিক হয়, নিজের সন্তান, সংসার হসপিটাল সব আবার সামলাতে শুরু করে। তবে হয়ে যায় এক যন্ত্রমানবী। হয়তো এভাবেই কাটবে তার বাকি জীবন। সন্তান হারানোর ক্ষত যে শুকাবার নয়।

শান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ছেলের রুমে গেলো। মাহিম ঘুমিয়ে পড়েছে, শান তার গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বের হয়ে গেলো তার রুম থেকে। তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর এলো মৌ। কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো ছেলের দিকে। ছেলেটার মুখ দেখলে বুকটা খা খা করে মৌয়ের। ছেলের মুখের আদুল মেয়েটার মতোই হয়েছে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো মৌ। এখন আর তাজের কথা ভেবে কষ্ট পাওয়ার সময় হয় না মৌয়ের। মেয়ের কথা ভেবে কেঁদেই দিন কাটে তার। অনেকটা সময় ছেলের কাছে থেকে নিজের রুমে গেলো মৌ।

শান বেডে বসে একটা রোগীর ফাইল দেখছে আগামীকাল তার অপারেশন। মৌ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়ে নিচ্ছে।

শান ফাইল রেখে মৌয়ের দিকে তাকালো, এবার কী স্বাভাবিক হওয়া যায় না মৌ ?

মৌ শান্ত চোখে তাকালো শানের দিকে, আপনার কাছে স্বাভাবিক হওয়া মানে আমার মেয়েটাকে ভুলে যাওয়া। যার মুখে প্রথম মা ডাক শুনেছি তাকে কীভাবে ভুলে যাবো শান ? আপনি ভুলতে পেরেছেন সেই আধো আধো বুলির বাবা ডাক ?

চোখ ঝাপসা হলো শানের। হ্যাঁ সেও পারেনি সেই ডাক ভুলতে, কোনোদিন পারবেও না। এখনো ঘুমালে মনে হয় কেউ তুলতুলে হাতে তার গাল স্পর্শ করবে আর সে মুচকি হেসে সেই হাতে শ’খানেক চুমু খাবে। সে ঘুমায় ঠিকই কিন্তু গালে আর সেই তুলতুলে স্পর্শ পায় না।

চোখ মুছলো মৌ, যা নিজে পারছেন না তা আমাকে করতে বলছেন ?

শানের উত্তরের অপেক্ষা না করে মৌ বেলকনিতে চলে গেলো। শান চোখ বন্ধ করে বালিশে মাথা এলিয়ে দিলো। তার চোখের কোণ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়লো বালিশে। আজ আর দু’জনের কারো ঘুমানো হবে না বোধহয়।

৩৯.
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরেছে সবাই। দুপুরে অসহায় মানুষদের হাতে খাবার তুলে দিয়েছে ধ্রুব নিজ হাতে। এই কাজটা করতে তার অসম্ভব ভালো লাগে। এমনিতেও সবসময় চেষ্টা করে মানুষকে সাহায্য করার। ধ্রুবর জন্মদিনে কেক কাটা হয় না কিংবা কোনো পার্টি করাও হয় না। জন্মদিনের সকাল শুরু হয় দাদুমণি আর গ্র্যানির হাতে পায়েস খেয়ে। দুপুরে শাহজালাল মাজারের সামনে অসহায় মানুষদের খাবারের ব্যবস্থা করে, সবাই সেখানেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। ধ্রুবর প্রত্যেকটা জন্মদিন কাটে সিলেটে। আজও সবাই মাজারে গিয়েছিলো, ফিরে এসে যে যার রুমে চলে গেলো রেস্ট নিতে। আহান গেলো নিজের রুমে। আলমারি খোলে সযত্নে আগলে রাখা ডায়েরিটা বের করলো। ডায়েরিতে আলতো করে হাত বুলিয়ে চশমা খোলে নিজের চোখ মুছে নিলো। ধ্রুবর রুমের দিকে পা বাড়ালো।

দরজায় নক করলো, বাবাই আসবো ?

ধ্রুব বেডে শুয়ে ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। দরজার দিকে তাকিয়ে আহানকে দেখে ফোন রেখে উঠে বসলো।

ব্যস্ত গলায় বললো, পাপা তুমি আমার রুমে আসতে অনুমতি নিচ্ছো কেনো ?

আহান মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করে ধ্রুবর পাশে বসে মাথায় হাত রাখলো, আমার বাবাই তো এখন আর ছোট্টটি নেই। সে বড় হয়েছে তাই তার রুমে আসতে এখন অনুমতি নিতে হয়।

আহানের কথা শুনে ধ্রুব মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো, আমি তোমার আর বাবার কাছে সবসময় ছোট ধ্রুবই থাকতে চাই পাপা।

আহান ধ্রুবর কথা শুনে তার কপালে চুমু খেলো, তুমি সবসময় আমার কাছে সেই ধ্রুবই থাকবে। যে ধ্রুবকে শুভ্র তোয়ালে মোড়ানো অবস্থায় তুতুলের বুক থেকে নিজের বুকে তুলে নিয়েছিলাম।

চোখ ঝাপসা হলো আহানের সাথে ধ্রুবরও। আহানের নিজের দুই সন্তান আছে এখন, তবু ধ্রুবর জায়গা তার জীবনে সম্পূর্ণ আলাদা। ধ্রুবকে যতটা ভালোবাসে নিজের সন্তানদের ততটা ভালোবাসতে পেরেছে কিনা জানে না আহান।

আহান ডায়েরিটা এগিয়ে দিলো ধ্রুবর দিকে, তোমার জন্মদিনের উপহার।

ডায়েরিটা দেখে খুশিতে চকচক করে উঠলো ধ্রুবর চোখমুখ। ধ্রুব কাঁপা হাতে ডায়েরিটা নিলো। আহান ডায়েরি দিয়ে ধ্রুবর গালে হাতে রেখে আদর করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। ধ্রুব ডায়েরি নিয়ে বাড়ি থেকে বের পুকুরপাড়ে চলে গেলো।

উত্তেজনায় এখনো হাত কাঁপছে ধ্রুবর। প্রত্যেকটা জন্মদিনে সে অনেক অনেক উপহার পেয়েছে সবার থেকে। লক্ষ লক্ষ টাকার সেসব উপহারের চেয়ে আজ হাতে থাকা সামান্য একটা ডায়েরি তার কাছে অধিক মূল্যবান মনে হচ্ছে। যেদিন এই ডায়েরির কথা শুনেছে সেদিন থেকে এটা হাতে পাওয়ার প্রহর গুনছে সে। এই ডায়েরিটাতে তার মায়ের স্পর্শ আছে ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠছে তার। সাদা আর সোনালী রঙের ডায়েরির উপর ধ্রুবতারা লেখাটায় হাত বুলালো ধ্রুব। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার, হয়তো তার মাও এখানে হাতে রেখেছে অসংখ্য বার। ধ্রুব ডায়েরিটা বুকে জড়িয়ে লম্বা শ্বাস টেনে নিলো। ধ্রুব নিজের অজান্তে পুকুরের সেই একই সিঁড়িতে বসেছে যেখানে অনেকগুলো বছর আগে তাজ বসে পড়েছিল “বিষাক্তফুলের_আসক্তি” আর আজ একই জায়গায় ধ্রুব পড়ছে “ধ্রুবতারা।”

কম্পিত হাতে ধ্রুব ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টালো। তার চোখে পড়লো সাদা পৃষ্ঠার উপর পেন্সিলে আঁকা এক ছবি। একটা বাচ্চাকে পরম আদরে বুকে জড়িয়ে রেখেছে তার মা। ধ্রুব হাত রাখলো সেই ছবিতে। তার মা হয়তো এভাবেই তাকে কোলে তুলে নিতে চেয়েছিলো। চোখ ঝাপসা হলো ধ্রুবর। ডায়েরির পাতায় এক ফোটা নোনাজল পড়তেই ধ্রুব নিজের চোখ মুছে নিলো। পৃষ্ঠা উল্টে পরের পৃষ্ঠা বের করলো।

আমি যখন এই ডায়েরিটা লিখছি তখন তুমি আমার মধ্যে অবস্থান করা একটা ভ্রুণ আর তুমি যখন এই ডায়েরিটা পড়ছো আমি তখন কেবল সবার স্মৃতি মাত্র। আমি এখন এটাও জানি না তুমি আমার তাহিয়ান খান ধ্রুব নাকি তাহিয়া খান তারা। তুমি ধ্রুব হও কিংবা তারা, তুমি আমার জীবনের ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারা দিক হারানো মানুষকে দিক ঠিক করতে সাহায্য করে। আমি যখন জীবন গোলকধাঁধায় আঁটকে গেলাম, তুমি আমাকে বাঁচার একটা পথ হয়ে দেখা দিলে। তাই তুমি আমার জীবনের ধ্রুবতারা। তোমাকে আজ একটা গল্প বলবো। কখনো তো তোমাকে রাজা-রানির গল্প শোনানো হয়নি। জানি এখন তুমি বড় হয়ে গেছো রাজা-রানির গল্প শোনার আগ্রহ নেই। তবু আমি আজকে তোমাকে এক ধোঁকাবাজ রাজকন্যার গল্প শুনাবো।

এক রাজ্যে অনেক হাসিখুশি এক রাজকন্যা ছিলো। বাবা-মাকে নিয়ে সে খুব ভালো ছিলো। কিন্তু একরাতে রাক্ষসদের আক্রমন হলো রাজা-রানি আর রাজকন্যার উপর। রাজা-রানি মারা গেলো আর রাজকন্যা একরাতের ব্যবধানে এতিম হয়ে গেলো। রাজ্য দখল করে নিলো রাক্ষসরা, রানী মারা যাওয়ার আগে আরো এক রাজকন্যা দিয়ে গেলো বড় রাজকন্যার কাছে। রাজকন্যা নিজেই তখন ছোট আবার তার কাঁধে এলো ছোট বোনের দ্বায়িত্ব। ধীরে ধীরে সব মানিয়ে বড় হতে থাকলো রাজকন্যারা। তাদের আগলে রাখলো রাজ্যের বিশ্বস্ত সেনাপতি। কিন্তু একদিন সেনাপতিও মারা গেলো। আবার একা হয়ে গেলো দুই রাজকন্যা। বড় রাজকন্যা দ্বায়িত্ব নিলো ছোট রাজকন্যার। ছোট রাজকন্যা যে অসুস্থ, বড় হয়েও সে ছোট। বড় রাজকন্যা যখন অসহায় তখন এক রাজপুত্রের সাথে দেখা। রাজপুত্র তাদের অন্ধকার জীবন আলোকিত করে দিলো। ভালো চলছিলো রাজকন্যার জীবন কিন্তু আবার সেই রাক্ষসদের আগমন হলো রাজকন্যাদের জীবনে। ছোট রাজকন্যার জীবন বাঁচাতে বড় রাজকন্যা ধোঁকা দিলো রাজপুত্রকে। রাজপুত্রের সবকিছু ধ্বংস করে দিলো বড় রাজকন্যা, অপবাদের কালিমা লেপন করে দিলো রাজপুত্রের মাথায়। রাজপুত্র ঘৃণা করতে শুরু করলো রাজকন্যাকে। কিন্তু রাজকন্যার কিছুই করার ছিলো না। এভাবেই চলতে থাকলো দিন, রাজপুত্রের ঘৃণা বাড়তে লাগলো রাজকন্যার উপর। তখনই আরেক রাজপুত্র ফেরেস্তার মতো এলো রাজকন্যাদের জীবনে। তার সাহায্যে রাজকন্যা সবার কাছে রাজপুত্রকে নির্দোষ প্রমাণ করে তার থেকে দূরে চলে গেলো ছোট রাজকন্যাকে নিয়ে। রাজপুত্র জানতে পারলো না রাজকন্যা তাকে কতটা ভালোবাসে, রাজপুত্র এটাও জানতে পারলো না রাজকন্যা একা যায়নি সাথে নিয়ে গেছে রাজপুত্রের সন্তানকে। রাজপুত্র যে রাজকন্যাকে প্রচন্ড ঘৃণা করতো তাই রাজকন্যার সাহস হয়নি রাজপুত্রকে তার সন্তানের কথা জানানোর।

গল্পের সেই ধোঁকাবাজ রাজকন্যাটাই ছিলো তোমার মা আর তোমার বাবা সেই রাজপুত্র। আচ্ছা তুমিও কী আমাকে ঘৃণা করবে মিষ্টি বাচ্চা আমার ? তুমি জানো, ডক্টর যখন জানালো আমার ভেতরে আরো একটা প্রাণ একটু একটু করে বেড়ে উঠছে। সেই অনুভূতি আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না। আনন্দ, ভয় সব মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। এরপর ডক্টর যখন বললো তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে গেলে আমার জীবনের ঝুঁকি আছে, তখন আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। চোখের সামনে কোনো পথ দেখতে পাচ্ছিলাম না। তোমার খালামণিকে তুমি জানো, আমি না থাকলে তাকে কে দেখে রাখবে আর তোমারই বা কী হবে ? আমি চারদিকে কেবল অন্ধকার দেখতে পাচ্ছিলাম। তোমার বাবার চোখে আমার জন্য তখন সীমাহীন ঘৃণা। একবার সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে আমি পৃথিবীর আলো দেখাবো না। এই কথা জানার পর হয়তো তুমি আমাকে ঘৃণা করবে। তোমার মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে সোনা। কিন্তু সেদিন আর কোনো পথ খোলা পায়নি সে। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে যখন আমি ডুকরে কাঁদছি তখন ফেরেস্তার মতো হাজির হলো আহান। তাকে বোধহয় তুমি পাপা বলে চিনো। সে তো বলতো তোমাকে সে পাপা ডাকতে শেখাবে। তোমার পাপা আলাদীনের জিনির মতো আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে এসেছিলো। তোমার মাম্মামকে দেখে রাখার চিন্তা আমার আর ছিলো না তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তুমি পৃথিবীর আলো দেখবে।

এতটুকু পড়ে ধ্রুব ডায়েরি বন্ধ করে নিজের চোখ মুছলো। দাদুমণির কাছে অনেকটা শুনেছে সে। তবু মায়ের ডায়েরি পড়ে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে তার। না সে নিজের মাকে ঘৃণা করার কথা ভাবতেও পারছে না। তাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সিদ্ধান্ত না নিলে আজ তার মা বেঁচে থাকতো।

ধ্রুব ডায়েরি বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো, আমি তোমাকে ঘৃণা করার কথা ভাবতেও পারি না মা। আমি তোমাকে খুব খুব, খুব বেশি ভালোবাসি।

চোখ মুছে আবার পড়তে লাগলো ধ্রুব। এরপরে তিতির ধ্রুবকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেছে সব লেখা। প্রতি মাসের পরিবর্তনে ধ্রুব তিতিরকে কত জ্বালিয়েছে, ধ্রুব কবে ফাস্ট কিক করেছে সেটাও লেখা। অনেক জায়গার লেখা ছড়িয়ে গেছে, কালার চেঞ্জ হয়ে গেছে, হয়তো তিতিরের চোখের পানি পড়েছিলো। তিতির যেদিন জানতে পারে তারা নয় ধ্রুব আসছে সেদিনটার কথাও লেখা। তিতির ধ্রুবর সাথে একা একা যা কথা বলতো সবই লিখে রেখেছে। ধ্রুব সেসব পড়ে কখনো হাসছে তো কখনো কাঁদছে। কতই না কষ্ট দিয়েছে সে তার মাকে।

এক পৃষ্ঠায় লিখেছে, তোমার জীবনটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান ধ্রুব। কখনো ভুল পথে পা রেখে আমার কষ্টগুলো বৃথা হতে দিও না। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সৎ পথে থেকো। তোমার জন্য যেনো আমি পরকালেও গর্বিত হতে পারি।

ধ্রুব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো সে তার মায়ের কষ্ট বৃথা যেতে দিবে না। আবার পড়তে লাগলো।

তোমার আগমনের সময় ঘনিয়ে আসছে আর হয়তো আমার বিদায়ের। আজকাল শরীরটা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তোমার বাবা এখনো জানে না তোমার কথা। হয়তো একদিন জানতে পারবে, ফিরিয়ে নিতে আসবে তোমাকে। আমি তোমার বাবার জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছি।

গল্পের শেষের পাতায় আমি প্রথমবারের মতো কিছু দিতে চাই তাজকে। সেটা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ, আমার ধ্রুব। আমার ধ্রুব সোনা কী রাখবে না তার মায়ের কথা ? সেও কী সবার মতো তার স্বার্থপর মাকে ঘৃণা করে ? যদি এই স্বার্থপর মাকে ঘৃণা না করো, তবে ফিরে যাও বাবার কাছে, এতোটা ভালোবাসো যাতে তোমার মায়ের প্রতি থাকা তার ঘৃণা ভুলে যায় সে। ভালোবাসতে না পারলেও ঘৃণা যেনো আর না করে। তোমার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ ধ্রুব। কখনো তার মনে কষ্ট দিও না। তার যেনো কখনো মনে না হয়, আমার মতো আমার অংশও তার জীবনের অভিশাপ। নিজের বাবাকে ভালো রেখো আর তুমিও অনেক ভালো থেকো আমার সোনা বাচ্চা। পারলে আমার প্রতি তোমার বাবার ঘৃণা মুছে দিও তার মন থেকে।

এরপরে বড় একটা সমাপ্ত লিখে শেষ করেছে “ধ্রুবতারা” ডায়েরির লেখা।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here